জঙ্গিবাদ: মুসলমানরা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার
গাজী মুহাম্মদ শওকত আলী
জঙ্গি হামলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আজ অস্থির বিশ্ব। দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়, মহাসঙ্কটে পড়েছে আধুনিক সভ্যতা। ঘটেই চলেছে প্রযুক্তির উন্নয়ন তবুও বেকারত্ব দেখা দিয়েছে অভিশাপ আকারে আর বেড়েই চলেছে বৈষম্য। কর্মমুখী ও সঠিক শিক্ষার অভাব ও সামাজিক, রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে হতাশায় ডুবছে যুব সমাজ। কিংকর্তব্যবিমূঢ় অভিভাবকেরা আজ খুবই অসহায়। ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা, ভুল ব্যাখ্যা আর ইসলাম বিদ্বেষের কারণে জঙ্গিবাদের অপবাদ দিয়ে ইসলাম ধ্বংসের মহড়া চলছে। রাষ্ট্রক্ষমতা আর বিশ্ব মোড়লদের কর্তৃত্ব ও ভুলনীতির কারণে জঙ্গিবাদের উত্থান।
রাষ্ট্রক্ষমতা, ভুলনীতি ও কর্তৃত্বের কারণে জঙ্গিবাদের জন্ম। বর্তমান শতকের শুরুতে বিশ্ব মোড়লদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ইরাকে মিথ্যা অভিযোগের ওপর ভিত্তিতে হামলার মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদের জন্ম হয়েছে। তার পূর্বে আফগানিস্তানে সোভিয়েত হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের তত্ত্বাবধানে জন্ম হয়েছিল তালেবান আর লাদেন বাহিনীর। এমনি করে মুসলিমবিশ্বে মার্কিনীদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য চলতে থাকে আক্রমণ ও প্রতি-আক্রমণের অনভিপ্রেত ঘটনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইরাক আক্রমণ পুরো বিশ্বকে ভিন্ন অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দেয়। বিশ্ব রাজনীতিতে হতে থাকে অভাবনীয় নতুন মেরুকরণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইরাক আক্রমণ ও সাদ্দামের শাসনের অবসান ঘটানোর পর পরই জঙ্গি সংগঠন আইএস বা ইসলামি স্টেট এর জন্ম হয়। এই ইসলামি স্টেট বা আইএস মূলত ইসরাইলি ইহুদিদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও ইসলাম বিদ্বেষীদের অর্থায়নে পরিচালিত বিশ্বব্যাপী একটি সন্ত্রাসী সংগঠন।
আইএসের জন্ম
আইএসের জন্ম মূলত ইরাকে, হেড কোয়াটার সিরিয়ায়। ৭ জুলাই ২০১৬ বৃহস্পতিবার ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামল্ড হাউজ অব কমন্সে ফরেন অ্যাফেয়ারর্স কমিটিতে দেয়া বক্তব্যে দাবি করেছেন যে, ইরাকী সেনাবাহিনী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বনাশা সিদ্ধান্তের ফসল আইএস। তিনি বলেছেন যে, ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক পল ব্লেমার ইরাক পরিচালনার দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে দেশটির সেনাবাহিনীকে ভেঙে ফেলেন, যার ফলে সাদ্দাম হোসেনের বাথপার্টি সমর্থিত প্রায় চার লাখ সেনা সদস্য চাকরি হারিয়ে পথে বসে। ব্লেমার ওই ভুল সিদ্ধান্তের কারণে পরবর্তীতে তারাই আইএস গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আবদুল আজিজ আল-শায়েখ গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর দেশটির জাতীয় দৈনিক সৌদী গেজেটকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, জঙ্গি সংগঠনটি ইসলামি স্টেট বা আইএস ইসরাইলি সেনাদের সৃষ্টি। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ‘ইসলামকে ধ্বংস করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে আইএস সৃষ্টি করা হয়েছে।
২০১৪ সালের ৮ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদবিষয়ক ওয়েবসাইট ভেটেরানস টুডেতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইরাকের আইএসআইএল নেতা এবং সন্ত্রাসী এ দলের স্বঘোষিত খলিফা আবু বকর আল-বাগদাদী জায়নবাদী ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার (মোসাদের) সক্রিয় সদস্য। ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থায় সে ‘এলিয়ট শিমন’ নামে পরিচিত। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আল-বাগদাদী ইহুদি দম্পতির সন্তান। মোসাদের কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলি ইহুদিদের অনুপ্রবেশ ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ক্ষেত্র তৈরি করাই হচ্ছে আইএসআইএল নেতা আবু-বকর আল-বাগদাদীর কাজ। ‘ভেটেরানস টুডের ভাষ্যমতে ‘আবু-বকর আল-বাগদাদী ইবরাহিম ইবনে আওন ইবনে ইবরাহিম আল-বাদরি’ ছদ্মনামে ইসরাইলি গোয়েন্দা হিসেবে মোসাদের পরিকল্পণা বাস্তবায়নে দায়িত্ব পালন করছে। প্রমাণ হিসেবে ইতঃপূর্বে প্রকাশিত মার্কিন গোয়েন্দা এডওয়ার্ড স্লোডেনের মন্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিষয়ক ওয়েব সাইড ভেটেরানস টুডেতে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের সত্যতার কথা আহলে বাইত বার্তা সংস্থা (আবনা) নিশ্চিত করেছে।
স্লোডেনের গোপন নথি প্রকাশ
আইএস ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সৃষ্টি। বিশ্বব্যাপী ‘ইসলামি খেলাফত’ প্রতিষ্ঠা যুদ্ধের স্বঘোষিত খলিফা ও সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নেতা খলিফা আবুবকর আল-বাগদাদী মুসলমান নন। তিনি একজন ইহুদি। তার আসল নাম আকা ইলিয়ট শিমন। এর চেয়ে বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী ‘ইসলামি শাসনব্যবস্থা’ কায়েমের আদর্শে মত্ত আইএস ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সৃষ্টি। এ জঙ্গিগোষ্ঠীর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রত্যকেই মোসাদের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। মোসাদের প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতেই আইএস জঙ্গিদের ‘যুদ্ধকৌশল’ শেখানো হয়েছে।সুসংগঠিত এ জঙ্গিগোষ্ঠীটি ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস নামে আত্মপ্রকাশ করার আগে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের সিনিয়র সিনেটর ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী জন ম্যাককেইনের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা বৈঠক করেছে। প্রথম দিকের ওই গোপন বৈঠকগুলোতে মোসাদের বেশ কয়েকজন সদস্য ও আইএস প্রধান আবু-বকর আল-বাগদাদী উপস্থিত ছিলেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম ও গবেষণা প্রতিবেদন ঘেঁটে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক সৃষ্টি করা ইসলামিক স্টেট ও এর প্রধান খলিফা আবু-বকর আল-বাগদাদীর পরিচয় নিয়ে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা এডওয়ার্ড স্লোডেনের ফাঁস করা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) গোপন নথিতেও এ ব্যাপারে উল্লেখ আছে বলে জানিয়েছে ‘আমেরিকান ফ্রি প্রেস’ নামের একটি ওয়েবসাইট। সন্ত্রাসবাদের ইতিহাসে সবচেয়ে ধনী সংগঠন বলে পরিচিত আইএসের উত্থানে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ দখলে নিয়ে ইসলামিক স্টেট নাম দিয়ে খেলাফত ঘোষণা করেন আবু-বকর আল-বাগদাদী।
প্যারিসে ভয়াবহ হামলার পর একই কথা বলেছেন কিউবার সাবেক নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো ও মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথির মোহাম্মদ। সংবাদ সম্মেলন করে দু’জনই বলেছেন, আইএস ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী অস্ত্র। বিশ্বব্যাপী নিজেদের আধিপত্য বিস্তার ও স্বার্থসিদ্ধির জন্য আইএস নামের এ ভয়ানক কালসাপ মাঠে নামিয়েছে তারা।ইসলামিক স্টেট বা আইএস সৃষ্টির এক বছর আগে ২০১৩ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন সিরিয়ায় আবু-বকর আল-বাগদাদীসহ অর্ধডজন শীর্ষ জঙ্গি নেতার সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। সমপ্রতি সেই বৈঠকের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে ইউটিউবে। মার্কিন প্রচারমাধ্যম এবিসি নিউজ ও সিএনএনের একটি ভিডিও স্নাপশটে এ ছবির ব্যাপারে প্রমাণ পাওয়া গেছে।আমেরিকান ফ্রি প্রেসের প্রতিবেদন জানানো হয়েছে, ইহুদি পিতা-মাতার কোলে জন্ম নেন বাগদাদী। এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা তথ্যানুযায়ী, বাগদাদীকে টানা এক বছর সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে মোসাদ। একই সময়ে আরবি ভাষা ও ইসলামি শরিয়ার ওপর কোর্স করেছেন বাগদাদী। এ সময় তিনি ইবরাহিম ইবনে আওয়াদ ইবনে ইবরাহিম আল-বদরি নাম ধারণ করেন। তবে বাগদাদীর পরিচয় সম্পর্কে ছড়ানো হয়েছে, তিনি ১৯৭১ সালের ২৮ জুলাই ইরাকের সামারায় জন্মগ্রহণ করেন। বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আক্রমণের সময় সামারায় একটি মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করেন বাগদাদী। পরে তিনি ‘আমিরে দায়েশ’ উপাধি গ্রহণ করেন।এডওয়ার্ড স্লোডেন প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের গোপন দলিলের বাগদাদীর তথ্য প্রথম প্রকাশ করে মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় ইন্টারনেট রেডিও আজিয়াল ডটকম। পরবর্তী সময়ে ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে। ইরানী গোয়েন্দা সংস্থার পর্যালোচনা নিয়ে এ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় আরবি পত্রিকা ইজিপ্রেসে। যুক্তরাষ্ট্রের এবিসি নিউজ প্রচারিত একটি ভিডিওর বরাত দিয়ে সোশিও-ইকোনমিক হিস্ট্রি নামের একটি ওয়েবসাইট দাবি করেছে, মার্কিন প্রভাবশালী সিনেটর জন ম্যাককেইন আবু-বকর আল-বাগদাদীসহ কয়েকজন আইএস কর্মকর্তা ও সিরিয়ার বিদ্রোহী কয়েকজন নেতার সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন। ২০১৩ সালের জুনে যখন এ বৈঠকটি হয়, তখন বাগদাদীর মুখে লম্বা দাড়ি ছিল না। ওই বৈঠকে বাগদাদীর সহযোগী আইএসের শীর্ষ সন্ত্রাসী মোহাম্মদ নূরও উপস্থিত ছিলেন। উইকিপিডিয়ায় প্রদর্শিত আবু-বকর আল-বাগদাদীর ছবির সঙ্গে ওই ছবির মিল পাওয়া গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী গণমাধ্যম আল-আরাবিয়াও ওই ছবিটি প্রকাশ করেছে। সিএনএনের একটি ভিডিওতেও বাগদাদীর সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলতে দেখা যায় জন ম্যাককেইনকে। গ্লোবাল রিসার্চ নামের একটি গবেষণা ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে, ২০০৪ সাল থেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে আবু-বকর আল-বাগদাদী। ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বুস্কা কারাগারে ছিলেন তিনি। পলিটিসাইট ডটকমের তথ্যানুযায়ী, সিআইএর তত্ত্বাবধানেও বাগদাদী সামরিক প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ইরাকের উম কাসর এলাকায় মার্কিন কারাগারে সিআইএ তাকে নিয়ে আসে। সেখান থেকে ২০১২ সালে জর্ডানের একটি গোপন ক্যাম্পে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ফোর্স কমান্ড বাগদাদীসহ তার সহযোগী অনেককে প্রশিক্ষণ দেয়।আইএসের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক সহিংসতার মাধ্যমে ইসরাইলের ভূখণ্ড বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে মোসাদের। আল-কায়দার সাবেক শীর্ষ কমান্ডার ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক জিহাদ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা নাবিল নাইম বৈরুতের টিভি চ্যানেল আল-মাইদিনকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আল-কায়দার বর্তমান নেতারা ও আইএস সিআইএ’র হয়ে কাজ করছে। এ উদ্দেশ্যে শিয়া-সুন্নি বিরোধ তারাই উসকে দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আইএসের জন্ম যেভাবেই হোক আর যেখানেই হোক, তারা হামলা করেছে ইরাকে, তুরস্কে, মিসরে, সিরিয়ায়, পাকিস্তানে, আফগানিস্তানে, বাংলাদেশে, সৌদি আরবে ও ইয়েমেনে। হামলার হুমকি দেয়া হয়েছে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতে। এমনকি পৃথিবীর প্রথম ভূখণ্ড ও কেন্দ্রবিন্দু ইসলামের সূতিকাগার মুসলমানদের কলিজা সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত কাবা ঘর ধ্বংস করারও হুমকি দেয়া হয়েছে আইএসের পক্ষ থেকে। তারপরও মুসলাম যুবকেরা কেন আইএস, আনসারুল্লা বাংলাটিম বা জেএমবির মতো জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিচ্ছে? স্বভাবত কারণেই প্রশ্ন আসে এই আইএসের প্রধান টার্গেট শুধুমাত্র মুসলিম দেশগুলো কেন হবে? আর এ কারণেই প্রশ্ন দেখা দেয়, আইএস তুমি কার? কার স্বার্থে কে ও কেন আইএস সৃষ্টি করা হলো? আইএসের কর্মকাণ্ডে কে লাভবান হচ্ছে? আর কে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে?
জঙ্গিবাদে যুবসমাজের আকর্ষণ
মুসলমান যুবকগণ ও ধনীর দুলালেরা পারিবারিক বন্ধনের ত্রুটি, ব্যক্তি জীবনের হতাশা, বৈষম্য ও ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা বা সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে ইসলামি বিদ্বেষী ও ইহুদি চক্রের দ্বারা প্রতারিত হয়ে, ইসলামের ভুল ব্যাখ্যাকেই সঠিক মনে করে এরই মধ্যে জীবনের সফলতা নিহীত ভেবে ইসলামি স্টেট বা আইএস, আনসারুল্লা বাংলা টিম ও জেএমবির মতো সংগঠনে যোগ দিচ্ছে।
প্রতিকার
আধুনিক ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে নিজেদের সভ্য বলে দাবি করা সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ মানুষেরা বর্তমান বিশ্বে কিভাবে যে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগতভাবে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে সেটি অনুধাবন করা এবং শিক্ষা ও সমাজের দায়-দায়িত্বের প্রসঙ্গটি বিবেচনায় আনা খুবই জরুরি। মানব সভ্যতায় শিক্ষার অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি হচ্ছে ব্যক্তির মানবীয় মূল্যবোধের বিকাশ ঘটানোর চেষ্টা করা। এই শিক্ষা যেমন আনুষ্ঠানিক হতে পারে, তেমনি অনানুষ্ঠানিকও হতে পারে। আনুষ্ঠানিক শিক্ষার দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের, আর অনানুষ্ঠানিকের শিক্ষার দায়িত্ব থাকে পরিবার ও সমাজের। রাষ্ট্রীয় শিক্ষাব্যবস্থায় সেক্যুলার শিক্ষানীতির পরিবর্তে বাস্তব ও কর্মমুখী শিক্ষার সাথে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়া প্রয়োজন।
সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থায় আধুনিক সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের মূল্যবোধ আর মানবিকতা ক্রমেই ফিকে হয়ে যাচ্ছে, আমরা দিনে দিনে আমাদের মূল্যবোধ নষ্ট করে ফেলছি। আমাদের পারিবারিক বন্ধন ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে, টুটে যাচ্ছে। আমরা সবাই ভুক্তভোগী কিন্তু অনুধাবন করতে পারছি না। আমাদের ব্যস্ত জীবনে আর আধুনিকতার প্রভাবে সন্তানেরা পিতা-মাতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের এটি একটি অন্যতম কারণ। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বেকারত্ব গুছানোর আশাজাগানির কোনো সুযোগ নেই আর না আছে নৈতিক বা ধর্মীয় শিক্ষা, যুব সমাজের হতাশা অন্যতম কারণ এটাই। এই বিষয়টি নিয়ে সর্বাগ্রে ভাবতে হবে রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারকে। পরিবারকে সর্ব প্রথম এগিয়ে আসতে হবে পারিবারিক ও নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি বাড়াতে হবে ধর্মীয় শিক্ষা ও অনুশাসন। সন্তানের চাওয়া-পাওয়ার বিষয় একেবারেই উদাসীন হওয়া যাবে না। তাদেরকে সময় দিতে হবে, বাড়াতে হবে সন্তানের সাথে বন্ধুত্বের আচরণ।