সমস্যা ও সমাধান
ফতওয়া বিভাগ
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
মোবাইল: ০১৮৫৬-৬১৮৩৬৭
ইমেইল: daruliftapatiya@gmail.com
পেইজলিংক: facebook.com/DarulIftaJamiaPatiyaOfficial/
বিদ’আত-কুসংস্কার
সমস্যা: মৃত ব্যক্তির ওপর ফুল ছিটিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা শরীয়তের দৃষ্টিতে কেমন? ইসলামী শরীয়ার আলোকে সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
মু. মুস্তাকীম হায়দার
পটিয়া, চট্টগ্রাম
শরয়ী সমাধান: মৃত ব্যক্তির ওপর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন বা ফুলের তোড়া অর্পণ করা ইসলামের সোনালি যুগ তথা সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবেতাবেঈনসহ উলামায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত নয়। তাই মৃত ব্যক্তির ওপর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা জায়েয হবে না। তাছাড়া এটি একটি বিধর্মীয় অপসংস্কৃতি, যা মুসলমানদের জন্য বর্জনীয়। আল-মাদখাল: ৩/২৫৫, কিফয়াতুল মুফতী: ৪/১৯৪
সমস্যা: বিভিন্ন মাযারের ওরসে যেসব প্রাণী মান্নত ও হাদিয়াস্বরূপ আসে সেসব প্রাণী ও গোশতের হুকুম কী? ওরসে যারা টাকা বা গরু-ছাগল দিয়ে অংশগ্রহণ করে আর যারা দেখার জন্য যায় তাদের হুকুম কী?
বদিউল আলম
রাউজান, চট্টগ্রাম
শরয়ী সমাধান: ওরসে আগত মান্নত বা হাদিয়ার প্রাণী যদি মাজারের ওলী বা বুজর্গের সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা হয় তাহলে সেসব প্রাণীর গোশত হারাম। উক্ত মান্নতকারী বা হাদিয়দাতা ফাসিক ও বিদ’আতী। আর শুধু অনুষ্ঠান দেখার জন্য ওরসে যাওয়া নাজায়েয। সহীহ মুসলিম: হাদিস নং-১৯৭৮, রদ্দুল মুহতার: ২/৪৩৯, আযীযুল ফাতাওয়া: ১৩
সমস্যা: আমাদের এলাকায় শুধু আমি ও আমার পরিবার-পরিজন দেওবন্দী, বাকি অন্যান্য পরিবারের লোকজন মাজারপূজারী ও বিদ’আতী। তারা প্রতি বছর এলাকাবাসী থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন করে থাকে। কেউ যদি চাঁদা দিতে অস্বীকার করে তার বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে বয়কট ঘোষণা করা হয়। তাই আমি বাধ্য হয়ে ঐ মাহফিলে চাঁদা দিয়ে থাকি। এক্ষেত্রে আমার জানার বিষয় হলো, সামাজিক ফিতনা থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে এধরণের মাহফিলে চাঁদা দেওয়া ও তাতে অংশগ্রহণ করা বৈধ হবে কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মুঈনুল ইসলাম
ফুলগাজী, ফেনী
শরয়ী সমাধান: ইসলামের সোনালি যুগে প্রচলিত মিলাদ ও কিয়ামের কোন অস্তিত্ব ছিল না। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন এবং হক্কানী উলামাগণ একাজ কখনো করেননি। শরয়ী কোন দলিল দ্বারাও এ কাজ প্রমাণিত নয়। সুতরাং শরীয়তের দৃষ্টিতে একাজ ভিত্তিহীন। কোথাও ফিতনার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে অন্তরে এ কাজের প্রতি ঘৃণা রেখে ফিতনা থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে সাময়িকভাবে চাঁদা দেওয়া ও তাতে শরীক হওয়া গোনাহ হবে না বলে আশা করা যায়। আল মাদখাল: ২/৩, এমাদাদুল আহকাম: ২/২১৩
তাহারাত-পবিত্রতা
সমস্যা: বিনীত নিবেদন এই যে, আমরা জানি মিসওয়াক করা সুন্নাত। তবে তার পরিমাণ কতটুকু? অর্থাৎ কতবার মিসওয়াক করা সুন্নাত? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মু. রমজান আলী
ইদগাহ, কক্সবাজার
শরয়ী সমাধান: মিসওয়াক করার নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা সুন্নাত হিসেবে প্রমাণিত নেই; বরং দাঁতের ময়লা এবং দূর্গন্ধ দূর হওয়া পর্যন্ত মিসওয়াক করা সুন্নাত। তবে, ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন, উপরের অংশে তিনবার এবং নিচের অংশে তিনবার মিসওয়াক করা মুস্তাহাব এবং প্রত্যেকবার নতুন পানি দিয়ে কুলি করা উত্তম। আল-মুহিতুল বুরহানি: ১/২৪, রদ্দুল মুহতার: ১/২৩৪, বিনায়াহ: ১/২০৬, ফতওয়ায়ে আলমগিরী: ১/৭
সমস্যা: জনাব! বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে যেকোন গর্ভকে নষ্ট করে বের করে ফেলা যায়। সে হিসেবে কোন গর্ভবতী মহিলা গর্ভধারণের চার মাস পর যদি ওষুধের মাধ্যমে গর্ভকে নষ্ট করে ফেলার পর কোন ধরনের রক্তক্ষরণ ছাড়া নষ্ট অংশ বেরিয়ে আসে তখন তার ওপর গোসল ফরয হবে কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
আলী ওবাইদ
বায়েজিদ, চট্টগ্রাম
শরয়ী সমাধান: সাধারণত রক্তক্ষরণ ছাড়া বাচ্ছা ভূমিষ্ট হয় না। এমনকি আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমেও যদি গর্ভপাত ঘটানো হয় তখনও কিছু না কিছু রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে; চাই তা এক মাস পরেও হোক না কেন, কিছু না কিছু রক্ত বের হবেই। এর পরও কখনো সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যদি কোন রক্ত দেখা না যায় বিশুদ্ধ মতানুসারে গোসল ফরয হবে। ফতওয়াতা তারখানিয়া: ১/২৯, আদ-দুররুল মুখতার: ১৮/৫৪, ফতওয়ায়ে আলমগীরী: ১/১৬, আল-হাওয়ী: ১/১২
সমস্যা: রোযার দুই দিন পূর্বে আমার মেয়ের প্রথম ঋতুস্রাব শুরু হয়। রমযানের দ্বিতীয় দিন রক্ত বন্ধ হয়ে যায়। এরপর রমাযানের ষষ্ঠ দিন পুনরায় রক্ত দেখা যায়। অতঃপর ১২ই রমযান রক্ত বন্ধ হয়। এমতাবস্থায় কয়দিন হায়েয হিসাবে গণ্য হবে? এবং নামায-রোযার হুকুম কী হবে?
বি. দ্র. যে দিনগুলোতে রক্ত দেখ দিয়েছে সে দিনগুলোতে নামযও পড়ে নাই রোযাও রাখেনি।
আবুল খাইর
রামু, কক্সবাজার
শরয়ী সমাধান: দুই ঋতুস্রাবের মধ্যবর্তী সময়ে যে পবিত্রতা দেখা দেয় এই পবিত্রতা যদি পনের দিনের কম হয় তখন ঋতুস্রাবের শুরু থেকে দশ দিন পর্যন্ত ঋতুস্রাব গণনা করা হবে যদি এটা মহিলার প্রথম ঋতুস্রাব হয়, দশ দিনের পরের দিন গুলোকে ইস্তেহাযা বা রোগজনীত রক্ত ক্ষরণ বলে গণ্য করা হবে। সুতরাং আপনার মেয়ের প্রথম দশ দিন অর্থাৎ ৮ রমযান পর্যন্ত ঋতুস্রাব গণনা করা হবে। পরের দিনগুলো অর্থাৎ ৯ রমযান থেকে ১২ রমযান পর্যন্ত ইস্তেহাযা ধরা হবে। অতএব, প্রথম দশ দিনের বিধান হলো, তাতে নামায রোযা আদায় করা যাবে না। কিন্তু রোযা পরে কাযা করে দিতে হবে। পরের দিনগুলোর নামায ও রোযা আদায় করা তার ওপর ওয়াজিব ছিল। কিন্তু সে আদায় করতে পারে নাই বিধায় শেষের চার দিনের নামায ও রোযা উভয়টাই কাযা করতে হবে। বাদায়ে উস্সানায়ে: ১/১৬৬, ওয়ালয়ালিজিয়াহ: ১৮/৫৮, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৩৭
সমস্যা: বিনীত নিবেদন এই যে, ব্যান্ডেজের ওপর মাসেহ করার পর ডাক্তার সাহেব ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করেছে। এমতাবস্থায় নামায পড়তে হলে অযু বা ব্যান্ডেজের ওপর পুনরায় মাসেহ করতে হবে কি?
আবদুল হামিদ
কিশোরগঞ্জ
শরয়ী সমাধান: ব্যান্ডেজের ওপর মাসেহ করার পর উক্ত ব্যান্ডেজ খুলে ফেললে বা তা পরিবর্তন করলে যদি ক্ষত বাকি থাকে তাহলে ব্যান্ডেজের ওপর পুনরায় মাসেহ করতে হবে না। তবে, ক্ষত ভালো হয়ে যাওয়ার কারণে যদি ব্যান্ডেজ খুলে ফেলা হয় তখন শুধু ওই অংশ ধুইলে হয়ে যাবে। পুনরায় অযু করতে হবে না। মাবসুতে সারাখসী: ১/২৪০, তাতারখানিয়া: ১/৪২৬, ফতহুল কদীর: ১/১৪১ম, হিন্দিয়া: ১/৩৫
সালাত-নামায
সমস্যা: রুকুতে কী পরিমাণ সময় অবস্থান করলে রুকু আদায় হয়েছে বলে গণ্য হবে? বিশেষ করে কোন ব্যক্তি যদি রুকুতে গিয়ে কোন প্রকারের তাসবীহ না পড়ে সাথে সাথে উঠে যায় তখন তার নামায শুদ্ধ হবে কি?
নিমরান
বরঘোনা, বরিশাল
শরয়ী সমাধান: রুকুর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ঝুকা। যে পরিমাণ ঝুকলে সাধারণত মানুষ রুকু করেছে বলে মনে করে, সেই পরিমাণ ঝুকলে রুকু আদায় হয়েছে বলে গণ্য হবে এবং ঐ পরিমাণ ঝুকা ফরয। আর পরিপূর্ণ রুকু হলো, এ পরিমাণ ঝুকা যার ফলে হাতকে হাঁটুর ওপর রাখা যায়, রুকুতে গিয়ে হাত হাঁটুর ওপর রাখলে ওয়াজিবও আদায় হয়ে যাবে। তাই প্রশ্নে উল্লিখিত ক্ষেত্রে হাঁটুর ওপর হাত রাখার পর তাসবীহ না পড়ে সাথে সাথে উঠে গেলেও রুকুর ফরয ও ওয়াজিব উভয়টি আদায় হয়ে যাবে এবং নামাযও শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে সম্পূর্ণরূপে তাসবীহ ছেড়ে দেওয়ার কারণে তা মাকরুহ হবে। মুসান্নাফে ইবনে আবিশাইবা: ২/৪৫৩, মাবসুতে সারাখসী: ১/৪, ফতওয়ায়ে
সমস্যা: অনেক সময় মহিলারা বড় ওড়না না থাকার কারণে ছোট ওড়না পরিধান করে নামায আদায় করার কারণে রুকু-সিজদার সময় হাতের কিছু অংশ ওড়না থেকে বের হয়ে যায়। এভাবে নামাায আদায় করলে নামায শুদ্ধ হবে কি?
সাইফা জন্নাত
চকরিয়া, কক্সবাজার
শরয়ী সমাধান: নামাযের মধ্যে যেসব অঙ্গ ঢাকা ফরয তা থেকে যদি কোন অঙ্গের এক চতুর্থাংশ তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় খোলা থাকে তাহলে নামায শুদ্ধ হবে না। ফুকাহায়ে কেরামের মতে হাতের কব্জি থেকে কুনুই পর্যন্ত এক অঙ্গ এবং কুনুইর ওপর থেকে কাঁধ পর্যন্ত ভিন্ন অঙ্গ। সুতরাং কোন মহিলার যদি হাতের কোন অংশের এক চতুর্থাংশ তিন তাসবীহ পরিমাণ খোলা থাকে তার নামায শুদ্ধ হবে না। তাই সতর্কতার জন্য অবশ্যই বড় ওড়না বা এরাবিয়ান হিজাব পরে নামায আদায় করা উচিত। ফতওয়ায়ে কাজীখান: ১/২৩, বাদায়েউস্ সানায়ে: ১/৩০৬, রদ্দুল মুহতার: ২/৮৩ ও ৭৯
সমস্যা: কোন প্রকারের নামাযে নিয়তকে নির্দৃষ্ট করা জরুরি এবং কোন প্রকারের নামাযে জরুরি নয়? বিশেষ করে ভিতিরের নামাযের ক্ষেত্রে করনীয় কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
নসীমুদ্দীন
চাঁদপুর
শরয়ী সমাধা: নামাযের মধ্যে নিয়ত করার ক্ষেত্রে ফুকাহায়ে কেরাম নামাযকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন: প্রথমত ফরয বা ওয়াজিব, দ্বিতীয়ত সুন্নাত বা নফল। প্রথম প্রকারের নামাযের জন্য নির্দিষ্টভাবে নিয়ত করা জরুরি। আর দ্বিতীয় প্রকারের নামাযের জন্য শুধু নামাযের নিয়ত যথেষ্ট সুনির্দিষ্ট নিয়তের প্রয়োজন নেই। তবে ভিতির ওয়াজিব বা সুন্নাত নিয়ে যেহেতু ফুকাহায়ে কেরামের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে, তাই এর নিয়ত করার ক্ষেত্রে ভিন্ন পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন। অথাৎ মুসল্লী এই মর্মে নিয়ত করবে যে, আমি ভিতিরের নামায আদায় করছি, ওয়াজিব বা সুন্নাতের নিয়ত করা জরুরি নয়। এছাড়া অন্যান্য নামাযের ক্ষেত্রে উক্ত নামাযের ফরয বা ওয়াজিবের নিয়ত করতে হবে। মাবসুতে সারাখসী: ১/৮২, আল-বাহরুর রায়েক: ১/২৮২, রদ্দুল মুহতার: ২/৯৫
সমস্যা: আমাদের হানাফী মাযহাব মতে আছরের ওয়াক্ত শুরু হয় দ্বিতীয় মিসিল থেকে অথচ হারামাইন শরীফাইনে প্রথম মিসিলে আসরের নামায আদায় করে থাকে। আমরা যারা হানাফী মাযহাবের অনূসারী তারা হজ্বে কিংবা ওমরাতে গেলে হারামাইনের জামা’ত ছেড়ে সময় মতো একাকী আদায় করবো? না তাদের সাথে প্রথম মিসিলে জামাতের সহিত আদায় করবো? বিস্তারিত জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
সাফাআতুল্লাহ
ঢাকা
শরয়ী সমাধান: আসরের নামাযের সময় ঠিক দুপুর থেকে ছায়ায়ে আসলী (মূল ছায়া) বাদ দিয়ে প্রত্যেক জিনিষের ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর থেকে শুরু হয়। এটি হচ্ছে ইমাম আবু হানিফ (রহ.)-সহ জমহুরে আহনাফের মত। আর সাহেবাইন তথা ইমাম আবু ইউসুফ এবং ইমাম মুহাম্মদ (রহ.)-সহ অনেকের মতামত হচ্ছে, আছরের নামাযের সময় আসলী ছায়া (মূল ছায়া) ব্যতীত প্রত্যেক জিনিষের ছায়া একগুণ হওয়ার পর শুরু হয়। জমহুর তথা অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরাম সতর্কতামূলক প্রথম মতটি গ্রহণ করেছেন। তবে হানাফী মাযহাবের অনুসারীগণও হজ কিংবা ওমরাতে গেলে প্রথম মিসিলে হারামাইন শরীফাইনে জামায়াতে শরীক হওয়া উত্তম হবে। কেননা একদিকে হারামাইনের জামা’তের ফযীলত, অপর দিকে যোহরের ওয়াক্তের ব্যাপারে আমাদের উলামায়ে আহনাফের মধ্য হতে অনেকেই ওই মত পোষণ করেছেন। সহীহুল বোখারী: ১/৭৯, জামিউত তিরমীযী: ১/৪০, ফতওয়ায়ে শামী: ২/১৫
যাকাত-সাদাকা
সমস্যা: কোন ব্যক্তির ওপর যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পর যাকাত আদায় করার পূর্বে যদি সে গরিব হয়ে যায়, তখন তার ওপর যাকাত আদায়ের আবশ্যকীয়তা বাকি থাকবে? নাকি যাকাত আদায়ের আবশ্যকীয়তা রহিত হয়ে যাবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
ইবরাহিম
মুরাদাবাদ, চন্দনাইশ
শরয়ী সমাধান: ফিকহ ফতওয়ার কিতাবাদি দ্বারা একথা প্রতীয়মান হয় যে, হানাফী মাযহাব মতে যদি কোন ব্যক্তির ওপর যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পর আদায় করার পূর্বে সমস্ত সম্পদ ধ্বংস হওয়ার কারণে সে গরিব হয়ে যায় তখন তার ওপর যাকাত আদায়ের আবশ্যকীয়তা বাকি থাকবে না। তার যাকাত মাফ হয়ে যাবে। আর যদি সমস্ত সম্পদ ধ্বংস না হয় তখন অবশিষ্ট সম্পদের এক চল্লিশাংশের যাকাত আদায় করতে হবে। কেননা হানাফী মাযহাবের ফুকাহায়ে কেরামের ভাষ্যমতে যাকাত মানুষের সম্পদের ওপর ফরয হয়; তার যিম্মায় ফরয হয় না। কিতাবুল হুজ্জাহ: ১/৪৯২ ও ৪৯৩, বাদায়েউস সানায়ে: ২/১৬৭, আল-বাহরুর রায়েক: ২/২১৮
সমস্যা: বছরের শুরুতে আমার দোকানে পাঁচ লক্ষ টাকার মাল সরবরাহ করি। এরপর প্রতিমাসে কিছু না কিছু মাল বৃদ্ধি করা হয়। একপর্যায়ে বছরের শেষে এসে দেখাগেল দোকানে দশলক্ষ টাকার মাল আছে। এমতাবস্থায় কত টাকার যাকাত আদায় করতে হবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
হুমাইদ
আনোয়ারা, চট্টগ্রাম
শরয়ী সমাধান: যাকাত ফরয হওয়ার জন্য যাকাতের মূল নেসাবের ওপর বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত। যাকাতের সমস্ত মালের ওপর বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়। আর বছরের মাধ্যবর্তী সময়ে বৃদ্ধি হওয়া মালের ওপরও বছর অতিবাহিত হওযা শর্ত নয়; তা যেভাবেই বৃদ্ধি হোক না কেন। অতএব প্রশ্নোক্ত বর্ণনা মতে আপনার দোকানের নেসাব সমপরিমাণ পণ্যের ওপর বছর অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে বছর শেষে দশলক্ষ টাকার মাল মজুদ আছে। সুতরাং দশ লক্ষ টাকার শতকরা ২.৫০% হারে ২৫০০০ (পঁচিশ হাজার) টাকার মাল অথবা পঁচিশ হাজার টাকা যাকাত দিতে হবে। মাবসুতে সারাখসী: ২/৮০, বাদয়েউস সানায়ে: ২/৯৭ ও ৪০৯, মারাকিউল ফালাহ: ৫৮৮, রদ্দুল মুহতার: ৩/২৪, আল-ফিকহুল হানাফী: ১/৩১৮
সমস্যা: আমরা জানি, মুসাফির ব্যক্তি ধনী হোক বা গরিব হোক তাকে যাকাত দেওয়া জায়েয আছে। এক্ষেত্রে আমার জানার বিষয় হলো, তাকে কী পরিমাণ যাকাত দেওয়া যাবে? তার প্রয়োজণ পরিমাণ নাকি যত ইচ্ছা যাকাত দিতে পারবে?
তাওহীদুল ইসলাম
দাউদকান্দি, কুমিল্লা
শরয়ী সমাধা: যদি মুসাফির ব্যক্তি ধনী হয়, তাকে তার প্রয়োজনের অধিক যাকাত দেওয়া এবং সে নিজে তা গ্রহণ করা জায়েয ও বৈধ হবে না। আর যদি মুসাফির ব্যক্তি গরিব হয়, তাকে তার প্রয়োজনের অধিক যাকাত দেওয়া এবং তার জন্য তা গ্রহণ করা জায়েয ও বৈধ হবে। বাদায়েউস সানায়ে: ২/১৫৫, ফতওয়া তাতার খানিয়া: ৩/২১৮, আল-মাউসুআতুল ফিকহিয়া: ২৩/২৩৪
নেকাহ-তালাক
সমস্যা: আমি আমার স্ত্রীর সাথে ফোনে কথা বলছিলাম। স্ত্রী খারাপ ব্যবহার করার কারণে এক পর্যায়ে আমার প্রচণ্ড রাগ উঠে যায়। তখন আমার স্ত্রীকে বললাম, ফোনটা আম্মুকে দাও। আম্মুকে দেওয়া মাত্রই আমি আম্মুকে বললাম, আপনি ওকে বলে দিন, আমি ওকে তিন তালাক দিয়েছি। তখন আম্মু তাকে বলল, বউমা তোমাকে আমার ছেলে ছেড়ে দিয়েছে। এখন আমার করণীয় কী? আমি কী স্ত্রীর সাথে নেকাহে থাকতে পারব, নাকি আলাদা হয়ে যাব? এবং তালাক পড়েছে কি না? কুরআন হাদিসের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।
মু.আলমগীর
লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম
শরয়ী সমাধান: প্রশ্নে উল্লিখিত ঘটনায় আপনি আপনার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মোবাইলের মাধ্যমে তিন তালাক দিয়েছেন এবং আপনার মাকে তাকে মোবাইলের মাধ্যমে তা জানিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছেন। তার দ্বারা আপনার স্ত্রীর ওপর তিন তালাক পতিত হয়ে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে গেছে। তালাক দেওয়ার পর থেকে আপনাদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেলা-মেশা ও ঘর-সংসার করা পরিষ্কার হারাম ও নাজায়েয এবং আপনার স্ত্রী দ্বিতীয় স্বামীর সংসার করা ব্যতীত আপনাদের পুনরায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য যে, স্ত্রীকে একসাথে তিন তালাক দিলে স্ত্রীর ওপর তিন তালাক পতিত হওয়ার ব্যপারে আমাদের চার ইমামের ইজমা’ এবং ইমাম বুখারীর ঐক্যমত রয়েছে। ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ৪/৪৮৭, ইবনে মাজাহ শরীফ: ১/১৪৭, রদ্দুল মুহতার: ৪/৫৭৩, জামেউল ফুসুলাইন: ১/২৯৬, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৩৯১
সমস্যা: আমি নিম্নে স্বাক্ষরকারী মুকিমা জান্নাত। আমার স্বামীকে দেওয়া তালাকনামা আপনাদের কাছে ইতিপূর্বে পাঠিয়েছি শরয়ী সমাধান জানার জন্য। তালাক নামায় আমার স্বামী নামরদ তথা পুরুষত্বহীন বলে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে সে নামরদ নয়। মূল সমস্যা হল আমাদের বৈবাহিক সম্পর্কের পর কোন বাচ্চা হচ্ছে না। তাই শুধু প্রচলিত আইন অনুযায়ী তালাকনামায় নামরদ লেখা হয়েছে।
এখন আমি পুনরায় তার সাথে সংসার করতে ইচ্ছুক বিধায় উক্ত বিষয়টি বিবেচনা করে আমাকে শরয়ী সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
মুকিমা জন্নাত
বহদ্দারহাট, চট্টগ্রাম
শরয়ী সমাধান প্রশ্নে উল্লেখিত ঘটনায় স্ত্রীর স্বীকারোক্তি মোতাবেক বিবাহের কাবিননামার ১৭ ও ১৮ নাম্বার কলামে যে সমস্ত শর্তের ওপর ভিত্তি করে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে, তা যেহতু লঙ্ঘন হয়নি; বরং শুধু সরকারী আইনের ধারা মোতাবেক শর্ত লঙ্ঘন হওয়ার কথা লিখা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে শর্ত লঙ্ঘন হয়নি। সুতরাং স্ত্রীর প্রতি তালাক দেওয়ার ক্ষমতা অর্পিত হয়নি এবং তার তালাক দেওয়াও সহীহ হয়নি বিধায় তাদের সাবেক নিকাহ বহাল রয়েছে। এখন তাদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেলামেশা ও ঘর-সংসার করতে ইসলামী শরীয়তে কোন অসুবিধা নাই। বরং পুনরায় স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেলামেশা ও ঘর-সংসার করা জায়েজ ও বৈধ হবে। কাওয়াঈদুল ফিকাহ: ৬৩, হিদায়া: ২/৩৬৫, বাদায়েঊস সানায়ে: ৩/২০০, ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম: ২/৫২, আল-আশবাহ ওয়ান-নাজায়ের: ১০৬
সমস্যা: আমার স্ত্রীকে নিয়ে দুই মাস পর্যন্ত একটা খারাপ স্বপ্ন দেখার পর তার ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। কেননা, আমরা দুই বন্ধু একটা ফ্যামিলি বাসা নিয়ে যৌথভাবে বসবাস করে আসছি। কিছুদিন যাওয়ার পর বারবার স্বপ্নে দেখি, লোকটার সাথে আমার স্ত্রী অবৈধ কাজে লিপ্ত হচ্ছে। এমনকি স্বপ্নে অসময়ে গোসল করতেও দেখি। এই অসময়ে গোসল করা আবার দুইদিন পর বাস্তবে দেখি, যার কারণে সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। আরো কিছু আলামত যেমন: রাত ১১/১২ টা পর্যন্ত রান্না ঘরে কাজ করা, কাজ করতে গিয়ে অন্ধকার রুম থেকে বের হতে দেখা ইত্যাদি। এমনকি স্বপ্ন দেখার পর আমাকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সহবাস করতে না দেওয়ায় সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। সন্দেহ দূর করার জন্য আমার স্ত্রীকে আমি কোরআন নিয়ে শপথ করাই যে, এই লোকটা যদি তোমাকে স্পর্শ করে থাকে তোমার ওপর তিন তালাক পতিত হবে। আমার স্ত্রী শপথ করে বলে যে, আমাকে যদি স্পর্শ করে থাকে আমি তিন তালাক। এখন আমার স্ত্রীর শপথ যদি মিথ্যা হয় তখন শরয়ী হুকুম কী হবে? অতীতে আমার স্ত্রী অনেক বিষয়ে মিথ্যা কথা বলার কারণে আমার স্ত্রীর শপথ বিশ্বাস করতে পারছি না বিধায় শরয়ী ফায়সালার মুখাপেক্ষী হলাম। বিস্তারিত জানালে চিরকৃতজ্ঞ থকব
ছুরত আলী
মহেশখালী, কক্সবাজার
শরয়ী সমাধান: প্রশ্নপত্রে আপনার স্ত্রীকে শর্ত সাপেক্ষে যে তিন তালাক দিয়েছেন, সে তালাক বাক্যের শর্ত যদি বাস্তবে লঙ্ঘন হয়ে থাকে; অর্থাৎ আপনার স্ত্রীর সাথে উক্ত অভিযুক্ত ব্যক্তির দৈহিক মিলন বা স্পর্সকরা বা চুমু দেয়া ইত্যাদি হয়ে থাকে, তখন আপনার স্ত্রীর ওপর তিন তালাক পতিত হয়েগেছে। যার কারণে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্র্ণরূপে ছিন্ন হয়ে গেছে। আর যদি বাস্তবে উক্ত ব্যক্তির সাথে কোন মিলন বা স্পর্শ না হয় তাহলে শুধু আপনার সন্দেহের দ্বারা তালাক পতিত হবে না। হিদায়া: ২/৩৬৫, কাওয়াঈদুল ফিকাহ: ৬, ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম: ২/৫২, বাদায়েঊস সানায়ে: ৩/২০০
ওয়াক্ফ-হেবা
সমস্যা: জনৈক ধনী ব্যক্তি নিজ মালিকানাধীন জায়গা মসজিদের জন্য ওয়াক্ফ করে ওই জায়গায় একটি জামে মসজিদ নির্মাণ করেন। ওই ব্যক্তি ওয়াক্ফনামায় উল্লেখ করেন যে, তার মৃত্যুর পর তার সন্তানগণ ওই মসজিদের মুতাওয়াল্লী হবেন। ওয়াক্ফনামায় লিখিত শর্তানুসারে পর্যায়ক্রমে তার সন্তানেরা উক্ত মসজিদের মুতায়াল্লী হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। প্রতিষ্ঠাতার এক ছেলের সাথে জনৈক মুসল্লীর ঝগড়া হলে ওই মুসল্লীকে উক্ত মসজিদে নামায আদায়ে বাধা প্রদান করে। মুতায়াল্লীগণ প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের দূরাচরণের প্রতিবাদ কেউ করতে সাহস করে না। জানার বিষয় হলো, উক্ত মসজিদে নামাজ আদায় করা সহীহ হবে কি? শরয়ী সমাধান দিয়ে বাধিত করবেন।
আবদুল হামীদ
বি-বাড়িয়, ঢাকা
শরয়ী সমাধান: ওয়াক্ফকারী যেহেতু আল্লাহর জন্য ও সৎ উদ্দেশ্যে মসজিদের জন্য জায়গা ওয়াক্ফ করে তাতে মসজিদ নির্মাণ করেছেন এবং প্রতিষ্ঠার পর থেকে ওই মসজিদে জুমা ও অন্যান্য নামায রীতিমত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বিধায় ওই মসজিদটি শরয়ী মসজিদ হিসাবে গণ্য হওয়ার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই । সুতরাং ওই মসজিদে জুমা ও অন্যান্য নামায সহীহ হবে। অবশ্য মুসল্লীদের সাথে খারাপ আচরণ এবং তাদেরকে অন্যায়ভাবে মসজিদে আসতে নিষেধ করা মারাত্মক অন্যায় এবং পবিত্র কুরআনের ঘোষণা অনুসারে মুতায়াল্লীগণ মসজিদে আসতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় আল্লাহর নিকট অপরাধী হিসাবে গণ্য। তাই তাদের কর্তব্য হলো, খাঁটি তাওবা করা এবং যাদের সাথে খারাপ আচরণ করেছে তাদের কাছে ক্ষমা চাওয়া। সুরা আল-বাকারা: ১১৪, রিয়যুস-সালেহীন: ২৪০, এমদাদুল ফাতাওয়া: ২/৭০০
সমস্যা: আমার ব্যক্তিগত কিছু টাকা জমা ছিল। আমার তত্ত্বাবধানে একটি মসজিদ ও হেফজখানা আছে বিধায় প্রথমে আমি নিয়ত করেছিলাম যে, মসজিদ ও হেফজখানায় আর্থিক কোন সংকট হলে তখন ওই টাকাগুলো খরচ করবো। ওয়াক্ফ বা ছদকা হিসাবে মসজিদ বা হেফজখানার জন্য খরচ করার দৃঢ় সংকল্প বা নিয়ত করিনি। পরে অন্য একটি ভাল কাজ সমপন্ন করা আমার জন্য আবশ্যক হয়ে পড়ে। কাজটি সম্পন্ন করার জন্য ওই টাকা ব্যতীত আমার আর কোন টাকা ছিল না। তাই টাকাগুলি কাজটি সমাধান করার পিছনে ব্যয় করে ফেলি। উক্ত কাজে টাকাগুলো ব্যয় করার কারণে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন অসুবিধা হয়েছে কি না? জানালে চির কৃতজ্ঞ থাকবো।
মাওলানা আমীন
খরনা, পটিয়া
শরয়ী সমাধান: হেবা, ওয়াক্ফ বা মান্নত ইত্যাদি মুখে উচ্চারণ করা ছাড়া শুধু নিয়ত করলে তা ওয়াজিব ও জরুরি হয় না। সুতরাং প্রশ্নে বর্ণিত ঘটনায় আপনি যে টাকাগুলো হেফজখানা বা মসজিদের জন্য খরচ করার নিয়ত করেছেন সে টাকাগুলো উক্ত খাতে ব্যয় করা ওয়াজিব হয়নি। অতএব উক্ত টাকাগুলো আপনি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যয় করাতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন অসুবিধা হয়নি। শামী: ৪/৩৩৫, আল-আশবাহ: ২৪, আহসানুল ফাতাওয়া: ৫/৯৯৯
বিবিধ প্রসঙ্গ
সমস্যা: কোন ব্যক্তি যদি তার মায়ের মাথায় হাত রেখে শপথ করে বলে যে, আম্মু আমি আপনার মাথায় হাত দিয়ে বলছি, আমি এই কাজটি করব না’’ আর যদি ওই ব্যক্তি সে শপথ ভেঙে ফেলে বা রাখতে না পারে তখন ইসলামী শরীয়তের বিধান অনুযায়ী তার কী করা উচিৎ? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
আবরার
দোহাজারী, চট্টগ্রাম
শরয়ী সমাধান: স্মরণ রাখতে হবে যে, ইসলামী শরীয়তে নিজের মাথায় হাত রেখে বা অন্য কারো মাথায় হাত রেখে কোন ওয়াদা করাকে শপথ হিসেবে গণ্য করে হয় না। বরং তা দেশীয় রেওয়াজ ও প্রথামাত্র। তাই তা ভঙ্গ করলে ইসলামী শপথ ভঙ্গ করার হুকুম জারি হবে না। যদিও ওয়াদাভঙ্গ করার কারণে কবিরা গুনাহ হবে। তাই ওই গুনাহ থেকে আল্লাহ তাআলার নিকট লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে খাঁটি তাওবা করতে হবে। উল্লেখ্য যে, ইসলামী শপথ হওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলা বা তার গুণাবলি যথা কোরআন শরীফ ইত্যাদির সাথে শপথ করতে হয়। অন্য কিছুর সাথে শপথ করলে সে শপথ সহীহ হবে না। বুখারী: ২/৯৮৩, ফতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ২০/২০৭, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল: ৪/১৮৭
সমস্যা: আমার পাঁচ মেয়ে ও চার ছেলে। আমার প্রায় ৩৫০০০০ (পয়ত্রিশ লক্ষ ) টাকার একটি দ্বিতল বিশিষ্ট ভাড়াঘর আছে। আমার ছেলেদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে আমি ঐ ঘর ছেলেদের নামে রেজিস্ট্্ির করে দিয়েছি, যেন আমার মৃত্যুর পর মেয়েরা ওই ঘর দাবি করতে না পারে। এমতাবস্থায় আমার কাজটি শরীয়তসম্মত হয়েছে কি না? যদি না হয় তা হলে এখন আমার করণীয় কী? ইসলামি শরীয়ত অনুযায়ী উদ্ধৃতিসহ সামাধান জানালে কৃতজ্ঞ হবো?
আবদুচ্ছালাম
ইদগাহ, কক্সবাজার
শরয়ী সমাধান: প্রশ্নে উল্লিখিত ঘটনায় আপনার যদি উক্ত ঘর ব্যতীত অন্য জায়গা-জমি এবং সম্পদ থাকে যা থেকে আপনার মৃত্যুর পর আপনার মেয়েরা মিরাস পেতে পারে, সে জন্য আপনার ছেলেদের ভবিষ্যত-কল্যাণের দিকে লক্ষ্য করে ঐ ঘরটা ছেলেদের নামে রেজিস্ট্রি করে তাদের ভোগ দখলে দিয়ে দেন, তাহলে তা জায়েয ও সহিহ হবে এবং আশা করি আপনি আল্লাহর নিকট গুনাহগার হবেন না। কিন্তু মেয়েদেরকে আপনার মিরাস থেকে একেবারে বঞ্চিত করা জায়েয হবে না। যদি করে থাকেন তাহলে আপনি আল্লাহর নিকট কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবেন। আস-সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী: ৯/১৫৮, ফতওয়ায়ে আলমগিরী: ৪/৩৯১, বাহরুর রায়েক: ৭/২৮৮
সমস্যা: জিলহজের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে চুল, নখ, পশম ইত্যাদি না কাটলে কোরবানির সমতূল্য সাওয়াব পাওয়া যাবে। এ হুকুমে ধনী-গরীব সবাই শরীক, নাকি কেবল ধনীরা সাওয়াব পাবে, গরীবরা পাবে না? বিস্তারিত জানালে চির কৃতজ্ঞ হবো।
নাসিম সিদ্দীন
উত্তর আইলা, ভোলা
শরয়ী সমাধান: স্মরণ রাখতে হবে যে, এই বিষয়ে ধনী-গরীবের মাঝে কোন ভেদাভেদ নাই। কিন্তু কিছু হাদিসের দ্বারা বুঝা যায়, যারা কুরবানী করে থাকে তাদের জন্যই জিলহাজ্বের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে কুরবানীর পশু যবাহ করা পর্যন্ত চুল, গোফ, নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব। কিন্তু আরো কিছু হাদিসের দ্বারা বুঝা যায়, যারা কুরবানী করতে সক্ষম নয় তারাও যদি এই হুকুম পালন করে অর্থাৎ জিলহাজ্বের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে ঈদের নামায আদায় করা পর্যন্ত চুল, গোফ, নখ ইত্যাদি কর্তন না করে তারা কুরবানীর সাওয়াব পাবে। আর যারা কুরবানী করবে তারা যদি এই সুন্নাত মতে আমল করে তারা হাজীদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার সাওয়াব পাবে। মা‘আরিফুস সুনান: ২/৪৯৮, রুহুল মা‘আনী: ২/১৩, তাফসীরে বাগওয়ী: ১/৩১৪, সুরায়ে মায়িদা: ৪৪, আহকামুল কুরআন লিল জাস্সাস: ৪/৯৩ তিরমিযী শরীফ: ১/৫৯
সমস্যা: সবিনয় নিবেদন এই যে, ক. তাগুত কাকে বলা হয়? খ. মানব রচিত সংবিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা যাবে কী না? গ. রাফউল ইয়াদাইন মানসুখ কী না? উল্লিখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন।
জনাব আবদুর রহমান
কুসুমপরা, চট্টগ্রাম
শরয়ী সমাধান: আপনার উত্তাপিত প্রশ্নের উত্তর নিম্নে ক্রমিক নাম্বার অনুসারে দেওয়া হচ্ছে। ক. কুরআন শরীফের ব্যাখ্যা দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় যে, তাগুত শব্দের অর্থ ব্যাপক, এটা শুধু শয়তান, মূর্তি, গণক ও জাদুকর ইত্যাদি অর্থেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত প্রত্যেক ওই বস্তু যেগুলোর উপাসনা করা হয় তা তাগুতের পরিভাষার অন্তভূর্ক্ত।
খ. মানবরচিত বিধান যদি শরীয়ত পরিপন্থী হয়, তা দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করা জায়েয ও বৈধ হবে না বরং ধংস হয়ে যাবে। আর যদি শরীয়ত পরিপন্থী না হয়, তা দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করা জায়েয ও বৈধ হবে।
গ. সহীহ হাদীস শরীফের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় (رفع اليدين) রাফউল ইয়াদাইনের কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-থেকে বর্ণিত হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, শুধু তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত অন্য সব জায়গায় ( رفع اليدين) রাফউল ইয়াদাইন বাদ দেওয়া হয়েছে। কেননা, (رفع اليدين) রাফউল ইয়াদাইন (سكون صلاة) অর্থাৎ নামাযের স্থীরতার পরিপন্থী যা অনেক সাহাবায়ে কেরাম থেকে এমনকি খোলাফায়ে রাশেদীন থেকেও বর্ণিত হয়েছে। রুহুল মা‘আনী: ২/১৩, তাফসীরে বাগওয়ী: ১/৩১৪সূরায়ে মায়িদা: ৪৪, আহকামুল কুরআন লিল জাস্সাস: ৪/৯৩, তিরমিযী শরীফ: ১/৫ মা‘আরিফুস সুনান: ২/৪৯৮
বিভাগীয় নোটিশ
দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো সমস্যার শরয়ী সমাধান জানতে আল-জামিয়া আল- ইসলামিয়া পটিয়ার ফতওয়া বিভাগে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। এজন্য সরাসরি যোগাযোগ বা বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট ফোনে যোগাযোগ করুন। প্রশ্ন পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল বা ফেসবুক ফ্যান-পেইজেও।
সমস্যা ও সমাধান
ফতওয়া বিভাগ
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
মোবাইল: ০১৮৫৬-৬১৮৩৬৭
ইমেইল: daruliftapatiya@gmail.com