জামেয়া ওয়েবসাইট

শনিবার-৩০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলা ভাষার চর্চা: প্রসঙ্গ কথা

বাংলা ভাষার চর্চা: প্রসঙ্গ কথা

আমরা সর্বদা বুলি আওড়াতে জানি কেবল। বাস্তবতার ধারে কাছে নেই বললেই চলে। চলছে এখন ভাষার মাস। আমাদের কাছে ফেব্রুয়ারি মাস (যদিও বাংলা মাস লোকায়িত) ভাষার মাস হিসেবে পরিচিত। শুধু তাই নয় রক্তমাখা ইতিহাসও তার সাথে জড়িত। যা পৃথিবী ইতিহাসে বিরল। রফিক, সালাম, জব্বার আমাদের মুখে বাংলাকে রাখার জন্য নিজেরদের প্রিয় জীবনটাই উৎসর্গ করেছে। যদিও আমরা মানির মান সাময়িক মুখে দিই কর্মে দিই না।

তারা কিন্তু কর্মে দিয়েছে। ভাষা আল্লাহর এক অসাধারণ নিয়ামত, তাইতো তিনি সকল নবী-রাসুল (আ.)-কে স্বজাতির ভাষাতে প্রেরণ করেছেন, যেন স্বীয় মনের ভাবকে বোঝাতে সক্ষম হন যার সাক্ষী মহাপবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআন। আল্লাহ তাআলা কুরআনে গবেষকদের উদ্দেশ্যে ছয়টি আয়াতের বিষয়-নিদর্শন নিয়ে গবেষণার আহ্বান জানিয়েছেন। তন্মধ্যে একটি হল ভাষাজ্ঞানের কথা তথা তা আল্লাহর এক অপরূপ সৃজন বলা হয়েছে। আমাদের কুরআন-হাদিস স্বদেশপ্রেম, ভাষা-প্রেম সবকিছু শিখিয়েছে তবে আমাদের আহরণ শক্তির অভাব আছে বলে সর্বদা বাঁকা দৃষ্টিভঙ্গি রাখি, যেহেতু আমরা কলুর বলদ ব্রিটিশের কিংবা পুরো পশ্চিমাদের।

সময় টিভির রিপোর্ট দেখে রীতিমত হতভম্ব অকৃত্রিমতার অধিকারী সাধারণ দেশ প্রেমিকগণ। টকশোর প্রেমিক, লোক দেখানো দেশ প্রেমিকদের বাংলা স্বরবর্ণ ৫টি ব্যঞ্জনবর্ণ ১০ টি আবার ১৯৫২ কি হয়েছে অজানা, যেহেতু ইংলিশে পড়ে! যেমন-তেমন কথা!

আমাদের দেশে লাভারের দাম বেশি প্রেমিক আশিকের দাম নেই। প্রায়ত মরহুম কবি আল-মাহমুদ বিবিসি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যারা ১৯৭১ এ যুদ্ধকে বাঁকা চোখ কিংবা নিরবতার ঘুমে নিমগ্ন ছিল তারাই পরবর্তীকালে বড় বড় শিরোনাম করে ‘টাকার নেশায়’ বই লিপিবদ্ধ করেন। আর মুক্তিযোদ্ধা কবিকে শহিদ মিনারে নিতে দেওয়া হয়নি। তাতে অবশ্য একজন মুসলিম হিসেবে আমি আর কবির কাছে দুঃখের কিছু নেই। কারণ আত্মা ত্যাগের পর এ কৃতির প্রয়োজন আমাদের নেই। যাহোক বলছিলাম ভাষার কথা কেন আজ বাংলা ভাষা এত এতিমের ভুমিকায়?এর জবাব কি সালাম রফিকরা সকলের কাছে চায় না? একসময় কওমি মাদরাসার বদনাম করা হত সেখানে নাকি মাতৃভাষার চর্চা হয় না। যা না দেখে না শুনে অন্ধের হাতি দেখা বৈকি? আল-হামদু লিল্লাহ কওমি জনতা বাংলার হাল ধরে রাখবে ইনশা আল্লাহ। মাহফিলে আল্লামা ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইন (হাফি.)-কে প্রায়ই বলতে শুনি একজন তালিবে ইলমকে বাংলা-আরবি সাথে ইংরেজির দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আরও বলেন একসময় বাংলার আলিম সমাজ বাংলা ভাষার রক্ষাকবচ হবে ইনশা আল্লাহ। ইসলামের বাণী ভাষাভাষীর মধ্যে ছড়ানো বাংলাই উত্তম মাধ্যম। এ সময়ে ছেলেরা স্মার্টনেসের ভারে আব্বু আম্মু ডাকতে লজ্জাবোধ করে তাদের কথা কি বলব আমাদের মন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কথায় কথায় বিদেশি ভাষার প্রীতির প্রমাণ রাখছে যা একজন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে লজ্জা লাগে। আলিমদের ভাষার প্রেমের আরেকটি নজির হলো আল্লামা ড. ছানাউল্লাহ ব্যারিস্টার (রহ.) পাকিস্তানের পার্লামেন্টে দাড়িয়ে মাতৃভাষায় কবিতা পাঠের সাহস দেখানো অথচ তখন উর্দুর পরিবর্তে বাংলা ব্যবহার দণ্ডনীয় ছিল। আমরা নিজেদের প্রগতিবাদী ভাবতে ভাবতে নিজেদের পোশাক খুলে ফেলাটাকে প্রগতীর শেষ স্তর মনে করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন যে, আমাদের মাতৃভাষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক!এবং সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন করা হোক যা হবে চলন, বলন, লিখন সবখানে।

এবার বলি ইংরেজি ভাষার কথা আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে অবশ্যই তা শিখতে হবে। এর গুরুত্বও কম নয় বর্তমান পৃথিবীতে, তবে কোকিলের ডাক শিখতে গিয়ে কাকের স্বডাক যেন ভুলে না যায় তা সদা মনে রাখতে হবে। কওমিদের মাতৃভাষার নজিরের আরেকটি অনুপম দৃষ্টান্ত যাকে বর্তমানে নিরবে কলমে-কাগজে-সংস্কৃতিতে ইসলামি বিপ্লবী স্বপ্নের প্রবর্তক বলা যায়, তিনি হলেন আল্লামা আবু তাহের মেসবাহ (হাফি.) হযরত সর্বদা ছাত্র ও ভক্ত অনুরুক্তদের উৎসাহিত করেন এই বলে যখন বাংলায় কথা বলবেন শুধু বাংলা বলবেন আর যখন ইংরেজি তখন ইংরেজি আর যখন আরবি তখন আরবি এভাবে প্রত্যেক ভাষাতে এটিই আপনাদের দক্ষতার প্রমাণ বহন করবে সাথে শ্রুতি মাধুর্যতা, শ্রোতামুগ্ধতা পাবে চমৎকার উৎসাহ প্রদান এ দেশপ্রেমিকের প্রেম কি রাবিশ-ডেডি-মাম্মিতে পাওয়া যাবে?যত বেশি ভাষা শিখা যায় তা গর্বের বিষয় যা আল্লাহ প্রদত্ত্ব নেয়ামত বলে গণ্য কেননা সবিই তো তারই দান। তিনিই মানব জাতিকে ভাব বিনিময়ের প্রকাশভঙ্গি শিখিয়েছেন তথা বাকশক্তি দিয়েছেন। তাই ভাষা শিখুন আল্লাহ অনুগ্রহের কথা স্মরণ করুন এটিই ইসলামের শিক্ষা।

আগের প্রায় কবি সাত্যিহিক বিশেষ করে মুসলিম কবিদের সকলের কাছে বাংলা, আরবি উর্দু, ফারসি, ইংরেজি ভাষা রপ্ত থাকত ফলে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধির পেছনে এসবের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আলহামদুলিল্লাহ আজও সেই ঐতিহ্যবহন করে কওমি শিক্ষার্থীরা কেননা তারা সময়ের বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয়তাকে মাথায় রেখে এগিয়ে চলার চেষ্টা করে।। ব্রিটিশের জম আল্লামা সাইয়েদ হুসাইন আহমদ (রহ.) বলতেন আমি আর কিছুদিন হয়াত পেলে ইংরেজি শিখে ইউরোপে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে যেতাম। আল্লাহু আকবর হযরতের আশা তার রুহানি সন্তানের মাধ্যমে পুরুণ হচ্ছে, হবে ইনশা আল্লাহ। পরিশেষে বলব আসুন ছেলেদেরকে প্রাথমিক থেকে বাংলা ভাষার প্রতি ভালবাসা বিধে দেওয়ার চেষ্টা করি নয়লে একদিন তারাই বলে উঠবে অ, ই, ঈ ইত্যাদিই এদের ভাষা হবে।

ভালবাসার সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন সচেতনতা আর সঠিক উপলব্ধি। যা কুরআন হাদিস থেকে পাওয়া সম্ভব। তাই মাননীয় সরকার মহোদয়ের কাছে আকুল আবেদন হলো স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আরবি ভাষার প্রচলন ঘটাতে হবে। কারণ এর সাথে রয়েছে মুসলিমসহ সকল মানুষের মুক্তির হাতছানির কথা। তাই বাংলার পাশাপাশি আরবি ইংরেজির গুরুত্বও অপরিসীম।

শেখ খালেদ

বিএ (অনার্স) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ