কাদিয়ানি মতবাদ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে
কাদিয়ানি আন্দোলন মূলত সৃষ্টি হয়েছে সাম্রাজ্যবাদের গর্ভে। লালিত, পালিত ও বর্ধিত হয়েছে ইংরেজদের অর্থায়নে। কাদিয়ানি মতবাদ হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর খতমে নবুওয়তের প্রতি একটি প্রতারণা। এ মতাদর্শ উম্মাহর ঈমানী চেতনা ও শাশ্বত মূল্যবোধের প্রতি এক সুগভীর ষড়যন্ত্র। এক কথায় আমাদের ইতিহাসে যত ইসলাম বিরোধী আন্দোলন মাথা ছাড়া দিয়ে উঠেছে, কাদিয়ানি মতবাদ হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম তাৎপর্যবহুল ফিৎনা। কারণ অন্যান্য আন্দোলন সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে পরিচালিত; এটা খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ।
কাদিয়ানিদের মতাদর্শ ঈমানের জন্য বিপদজনক মনে করে উপমহাদেশের বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম বক্তৃতা, লেখনী ও জ্ঞানের অস্ত্র নিয়ে কাদিয়ানিদের মোকাবেলায় জিহাদের ময়দানে ঝাপিয়ে পড়েন। এদের মধ্যে মাওলানা মোহাম্মদ হোসাইন বাটালভী (রহ.) মাওলানা মুহাম্মদ আলী মোঙ্গেরী (রহ.), মাওলানা সানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহ.) আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী (রহ.), মাওলানা আতাউল্লা শাহ বুখারী (রহ.) , মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শফী (রহ.), মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী (রহ.), খতীবে আযম মাওলানা সিদ্দিক আহমদ (রহ.), মাওলানা আতহার আলী (রহ.), মুফতী মাহমুদ আহমদ (রহ.), আল্লামা ইউসুফ বিন্নুরী (রহ.), আল্লামা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.), ফখরে বাংলা আল্লামা তাজুল ইসলাম (রহ.), আল্লামা মুহাম্মদ ইউনুস (রহ.), বি. বাড়িয়ার নাম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার মতো। কাদিয়ানি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর আল্লামা ইহসান ইলাহী যহির শহীদ দুনিয়ার মুসলমানদের কাদিয়ানি ফিৎনার মোকাবিলায় এগিয়ে আসার জন্য যে দরদভরা আহ্বান জানিয়েছেন আমরা হুবহু তা উদ্ধৃতি করছি,
‘অতএব হে মুসলমানগণ! জাগ্রত হও এবং সাবধান হয়ে যাও। এর চেয়ে দুঃখের ও অশ্রুবিসর্জনের ব্যাপার আর কি হতে পারে যে, মুসলিম বিশ্বের বহু জনপদ এ কাদিয়ানি সমপ্রদায়ের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। অথচ মুসলমানগণ অতীতে নিজ নিজ দেশে প্রতিটি শত্রুর মোকাবিলায় জাগ্রত এবং প্রতিটি গোমরাহি ফ্যাসাদের বিরুদ্ধে ফায়সালা করার জন্য যুদ্ধরত ছিল। এ দায়িত্বটি প্রত্যেকের ওপর তার সামর্থ অনুযায়ী প্রযোজ্য এবং কাদিয়ানিদের মুকাবিলায় তাদের বিপদ ঠেকাবার জন্য কাজ করা এমন একটি বিষয় যা ধর্মীয় রাজনৈতিক এবং দেশাত্মবোধের দৃষ্টিকোণ থেকে সকলের পক্ষে অত্যন্ত জরুরি ও অপরিহার্য। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এ জন্য যে, কাদিয়ানি দীনের আকিদাসমূহকে বিকৃত করছে এবং ইসলামের বুনিয়াদকে ধ্বংস করছে। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এজন্য যে, সাম্রাজ্যবাদীরা যখনই দলটিকে তৈরি করেছে এবং তাদের সহযোগিতার চুক্তিতে আবদ্ধ করেছে, তখন থেকেই তারা বিজিত দেশ সমূহে আধিপত্য বিস্তারের জন্য এদেরকে সেতুরূপে ব্যবহার করে চলেছে। দেশাত্মবোধের দৃষ্টিকোণ থেকে কাদিয়ানিদের অস্তিত্ব যে, কতটুকু মারাত্মক তা অখণ্ড ভারতের বিখ্যাত লেখক এবং ইসলামি রেনেসোঁর কবি ড. মুহাম্মদ ইকবাল স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন, তিনি জওহার লাল নেহেরু কর্তৃক এ দলকে সমর্থন দানের সময় প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন (শহীদ ইহসান ইলাহী জহীর, কাদিয়ানি মতবাদ, রিয়াদ, ১৯৯৬, পৃ. ৩০-৩১)।
আফসোসের ব্যাপার হচ্ছে আলিম ওলামা ছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে কাদিয়ানি মতবাদ সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা নেই। অনেকে মনে করেন হানাফী, শাফেয়ী, দেওবন্দী বেরলভীর মত একটি ধর্মীয় চিন্তাধারার নাম। খতমে নবুয়তের নামে বেশ ক’টি সংগঠন মাঠে ময়দানে সক্রিয় ছিল। তাঁদের অনেক খিদমত রয়েছে। কিন্তু আন্দোলেনের ধারাবাহিকতা স্থায়িত্ব লাভ করেনি। বায়তুল মুকার্রমের খতীব হযরত ওবায়দুল হক (রহ.) তাঁর জীবদ্দশায় কাদিয়ানি বিরোধী আন্দোলন যৌক্তিক পর্যায়ে উন্নীত করতে সক্ষম হন। আন্তর্জাতিক তাহাফফুযে খতমে নবুয়তের ব্যানারে কাদিয়ানিদের স্বরূপ উদ্ঘাটন করে বাংলা ভাষায় বিপুল সংখ্যক ডক্যুমেন্টারি লিটারেচার প্রকাশিত হয়। এসব দালিলিক গ্রন্থাদি তিনি সচিবালয়, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও ডিসি এসপিদের দফতরে পাঠাবার ব্যবস্থা করেন। তাঁর ইন্তেকালের পর এ জাতীয় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আমরা নীরবতা পালন করছি। অপর দিকে কাদিয়ানিরা সংগঠিত হচ্ছে এবং প্রকাশ্য ইজতেমা করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। খতমে নবুয়ত আন্দোলন আবার চালু করতে হবে। দলমত নির্বিশেষে নবীপ্রেমিক ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এটা সময়ের দাবি।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন