জামেয়া ওয়েবসাইট

শনিবার-৩০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যৌনশক্তি বৃদ্ধির মহৌষধ মেথি

যৌনশক্তি বৃদ্ধির মহৌষধ মেথি

যৌনশক্তি বৃদ্ধির মহৌষধ মেথি

মেথি (বৈজ্ঞানিক নাম: Trigonella foenum-graecum) একটি মৌসুমী গাছ। এর পাতা শাক হিসেবে খাওয়া হয়। মেথি শাক গ্রাম বাংলার মানুষের প্রিয় খাদ্য। ইউনানি, কবিরাজি ও লোকজ চিকিৎসায় বহুবিধ ব্যবহার হয়। মশলা হিসেবেও এটি প্রচুর ব্যবহার হয়।। এটি পাঁচ ফোড়নের একটি উপাদান। মেথি থেকে ষ্টেরয়েডের উপাদান তৈরি হয়। মেথি একটি বর্ষজীবী গাছ। একবার মাত্র ফুল ও ফল হয়। তিনটি করে পাতা একসাথে জন্মায়। ফুলে ও তিনটা করে পাপড়ি থাকে। স্ত্রী এবং পুরুষ দুই ধরণের ফুল হয়। রঙ সাধারণত সাদা ও হলুদ হয়ে থাকে। বাদামি-হলুদ বর্ণের প্রায় চারকোনা আকৃতির বীজ হয়। মেথিকে মসলা, খাবার, পথ্য্ততিনটাই বলা চলে। মেথির স্বাদ তিতা ধরনের। এতে রয়েছে রক্তের চিনির মাত্রা কমানোর বিস্ময়কর শক্তি। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে বা এক গ্লাস পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই পানি খেলে শরীরের রোগ-জীবাণু মরে, বিশেষত কৃমি মরে, রক্তের চিনির মাত্রা কমে। রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা চর্বির মাত্রা কমে যায়। গরমে ত্বকে যে ঘা, ফোড়া, গরমজনিত ত্বকের অসুখ হয়, এই অসুখগুলো দূর করে মেথি। বার্ধক্যকে দূরে ঠেলে দিয়ে তারুণ্যকে দীর্ঘস্থায়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে মেথি। গবেষণা করে দেখা গেছে, যে ডায়াবেটিক রোগীরা নিয়মিত মেথি খান, তাঁদের ডায়াবেটিসজনিত অসুখগুলো কম হয় এবং স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য মেথি শ্রেষ্ঠ পথ্য। ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, ইরান, নেপাল ইত্যাদি দেশে ব্যবহার করা হয়।

মেথিকে সাধারণত মশলা হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। কিন্তু মেথি শুধুমাত্র মশলা নয়, এটি খাবার ও পথ্য। রক্তে কোলেস্টেরল বা চর্বির মাত্রা কমানো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে মেথি বেশ কার্যকরি ভূমিকা রাখে। রক্তে চিনির মাত্রা কমানোরও বিস্ময়কর শক্তি রয়েছে মেথিতে। আর পুরুষদের যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে মেথির রস এক মহৌষধ!

আনুমানিক ৩০টি দেশের ২৫ হাজার পুরুষের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। যেসব পুরুষ তাদের যৌনশক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের মেথির রস দিনে দু’বার পরিমাণ মতো সেবন করতে দেওয়া হয় ওই পরীক্ষায়। এতে আশ্চর্য রকম সুফল পাওয়া যায়। প্রতিদিন পরিমিত মেথির রস সেবনে তাদের দাম্পত্য জীবন সুখময় হয়ে উঠে।

হতাশা বা অবসাদ, অতিরিক্ত শারীরিক ওজন ও অ্যালকোহল পানে অসুস্থতা, ডায়াবেটিস ইত্যাদি বহু অসুখ ও শারীরিক সমস্যার জন্যও মেথির রস বেশ উপকারি।

মেথির রসে ‘সাপোনিস’ বা ‘ডাইওসজেনিন’ নামে এক ধরনের যৌগ পদার্থ আছে, যা মানবদেহের হরমোন স্তর বা এর পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে বা এক গ্লাস পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই পানি পান করলে শরীরের রোগ জীবাণু দূর হয়। বিশেষত কৃমি মরে যায় এবং রক্তে চিনির মাত্রা কমে, রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা চর্বির মাত্রা কমে যায়। বার্ধক্যকে দূরে ঠেলে দিয়ে তারুণ্যকে দীর্ঘস্থায়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে মেথি।

গবেষণায় দেখা গেছে, যে ডায়াবেটিক রোগীরা নিয়মিত মেথি খান, তাদের ডায়াবেটিসজনিত অসুখগুলো কম হয় এবং স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম। এক কথায় ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য মেথি শ্রেষ্ঠ পথ্য।

যাদের ডায়াবেটিস নেই মেথি তাদের জন্যও জরুরি। মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধির জন্য কালো জিরার মতো মেথি পিষে খাওয়াটাও যথেষ্ট উপকার।

তবে খেয়াল রাখতে হবে, মেথি ভেজে পিষলে পুষ্টি সব নষ্ট হয়ে যাবে। রৌদ্রে শুকিয়ে নিয়ে খেতে মচমচে লাগবে। তবে মেথির স্বাদ তিতা ধরনের।

মেথি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শরীরকে রাখে সতেজ। রক্তের উপাদানগুলোকে করে কর্মক্ষম। ফলে মানুষের কর্মোদ্দীপনাও বৃদ্ধি পায়।

তবে ছয় সপ্তাহে অন্তত দিনে দু’বার করে এর রস নিয়মিত পান না করলে তেমন উপকারিতা পাওয়া যাবে না। আপনি যদি মেথি সরাসরি খেয়ে ফেলেন তবে এটি আপনার ডায়েটে সহায়তা করবে।

এছাড়া প্রতিদিনের ফেসপ্যাকে মেথি গাছের নির্যাস ব্যবহার করলে মুখের ব্রণ, কালো দাগ এবং ফুসকুড়ি নিরাময় হয়।

কোলেস্টেরল কমে

মেথির শরীরে থাকা স্টেরিওডাল সেপোনিনস নামক একটি উপাদান কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই মেথি ভেজানো পানি পান করলে হার্টের আর্টারি আটকে গিয়ে হঠাৎ করে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমে পায়।

এছাড়া গ্লেকটোম্যানান নামক একটি উপাদানের খোঁজ পাওয়া যায় মেথির শরীরে। এই উপাদানটি হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে এই উপদানে উপস্থিত পটাশিয়াম, রক্তে লবনের পরিমাণ কমায়। ফলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে হার্ট অ্যাটাক এবং অন্যান্য হার্টের রোগ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে শূন্যে এসে দাঁড়ায়।

সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে

কম বয়সেই ব্লাড সুগার যদি ঊর্ধ্বমুখী থাকে তাহলে নিয়মিত মেথি ভেজানো পানি খাওয়া উচিত। এমনটা করলে শরীরে গ্লেকটোমেনানের পরিমাণ বাড়তে থাকে, যা শর্করার শোষণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ফলে সুগার লেভেল বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। মেথিতে উপস্থিত অ্যামাইনো অ্যাসিড ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এই কারণেও ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না।

হজমের উন্নতি

ভোজন-রসিক বাঙালি অল্প-বিস্তর পেটের রোগে আক্রান্ত এটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই গ্যাস-অম্বল রোজের বন্ধু হবে, এ আর নতুন কথা কী! কিন্তু একটা সহজ উপায়ে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটাতে পারেন। মেথি বীজ গ্রহণ করলে বাওয়েল মুভমেন্টে উন্নতি ঘটে। ফলে পেট সংক্রান্ত আর কোনো সমস্যাই থাকে না। আসলে মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা হজমের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিয়মিত সকালে খালি পেটে মেথি ভেজানো পানি খেলে কনস্টিপেশনের সমস্যাও অনেকাংশে দূর হয়।

ওজন কমায়

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে, পানিতে ভেজানো মেথি বীজ খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরে ফাইবারের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষিদে কমে যায়। এমনটা হওয়ার কারণে খাওয়ার পরিমাণেও লাগাম পরে। ফলে ওজন কমতে শুরু করে।

জ্বরের প্রকোপ কমায়

আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শরীর ভেঙেছে? সেই সঙ্গে জ্বরের এমন ঠেলা যে বিছানা ছাড়তে পারছেন না? তাহলে এক গ্লাস করে মেথি বীজের পানি পান করা শুরু করুন, দেখবেন দারুন উপকার মিলবে। মেথিতে থাকা বেশ কিছু উপকারি উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এতটাই শক্তিশালী করে তোলে যে জ্বরের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। সর্দি-কাশি সারাতেও এই ঘরোয়া চিকিৎসাটির কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে।

ক্যান্সার রোগ দূরে থাকে

রক্তে জমতে থাকা টক্সিক উপাদানের মাত্রা বাড়তে থাকলে শরীরের অন্দরে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। আর এখানেই মেথি বীজের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না। এই প্রকৃতিক উপাদানটি রক্তে ভেসে বেরানো টক্সিক উপাদানগুলোকে শরীর থেকে বার করে দেয়। ফলে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনাই থাকে না। সূত্র: বোল্ড স্কাই

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ