অভিন্ন গন্তব্য বিভিন্ন পথ
খন্দকার মুহাম্মদ হামিদুল্লাহ
ভারতের একজন নন্দিত ইতিহাসবিদ ও খ্যাতিমান গবেষক তাঁর আত্মজীবনীতে একটি কথা লিখেছেন, যার সারমর্ম হলো- আমাদের প্রত্যেকের একটি ছোট ও একটি বড় ঘর আছে। ছোট ঘরটি হলো যেটাকে আমরা প্রত্যেকেই ঘর, নিবাস কিংবা বাসা-বাড়ি বলে থাকি। অন্যদিকে ‘বড় ঘর’ হলো মাতৃভূমি ও নিজের আবাসভূমি- যে ভূখণ্ডকে আধুনিক রাজনীতিবিজ্ঞানে রাষ্ট্র বলে পরিচয় দেওয়া হয়। তিনি বলেছেন, ছোট ঘরটাকে নিরাপদ রাখতে হলে আগে বড় ঘরের কথা ভাবতে হবে। বড় ঘর আক্রান্ত হলে ছোট ঘর নিরাপদ থাকবে এমন আশা করা অবাস্তব ও অবৌদ্ধিক।
আজকের লেখার কেন্দ্রে যদিও ইসলাম আর মুসলমান থাকবে কিন্তু মানুষ, মানবতা, সমাজ ও রাষ্ট্র প্রসঙ্গকে সাথে নিয়েই এগুতে হবে।
কিছু মানুষের ভাবনা ও সোজাসাপ্টা দৃষ্টিভঙ্গি- যারা ‘রাজনীতির মানুষ’ না- তারা রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলা, লেখাঝোকা কিংবা তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ থেকেও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখো। অবশ্য সব বিষয়েই একটি মাত্রা ও পরিমিতি মেনে চলা উচিত। কিন্তু মানুষ চাইলেও কিছু বাস্তবতা পাশ কাটানো যায় না। অধিকন্তু জমি জমিদারের হাতে, সমাজটা সমাজপতির মালিকানায় এবং রাষ্ট্রটা রাজনীতিকের পকেটে তুলে দিয়ে আম জনতার কর্তব্য হলো নিশ্চিন্তে ‘আপন চরকায় তেল দেওয়া’ এরূপ ভাবনার সঙ্গে এ লেখক অনেকাংশে সহমত পোষণ করে না।
এ কারণে রাজনীতির সাতপাঁচে না থেকেও জীবন, সমাজ, সংস্কৃতি, নৈতিকতা, মানুষ, মানবতা, শিক্ষা-দীক্ষা, শিল্প-সাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ের মতো দেশ, রাষ্ট্র ও উম্মাহর ভালো-মন্দ বিষয়ে নিজের চিন্তা-ভাবনাগুলো পাঠকের সামনে মেলে ধরার তাগাদা অনুভব করি।
পাঠকের ধৈর্যচ্যুতির ঝুঁকি না নিয়ে ভূমিকার এ পর্যায়ে আজকের লেখার বিষয়বস্তুর পর্দাটা তুলে দেওয়া দরকার। আমাদের স্বদেশ একটি শান্তি-সুখের জনপদ কীভাবে হতে পারে। যেখানে দুধের নহর না বইলেও মানুষ জীবনের নিরাপত্তা ফিরে পাবে। সবল-দুর্বল নির্বিশেষে সকলের ন্যায্য অধিকার সমুন্নত থাকবে; প্রতিষ্ঠিত হবে ন্যায়তন্ত্র। ব্যক্তি ইহ ও পরকালীন জীবনের সমৃদ্ধি ও সার্থকতায় তৃপ্ত হবেন। সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে বিদায় নেবে, জুলুম, শোষণ, বঞ্চণা, অনাচার ও সকল উদ্বেগ-আতঙ্ক। কথাগুলো অনেকটা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ইশতেহার বয়ানের মতো শোনাচ্ছে। কবুল করছি; উপস্থাপনায় কোনো অভিনবত্ব আনতে না পারার জন্য পাঠক দয়াপরবশ হয়ে মাফ করবেন।
জীবন, সমাজ ও দেশের জন্য উপর্যুক্ত সোনালি দিন ফিরিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন দলের বাহারী কর্মসূচি রয়েছে- সেটা আমাদের কমবেশি জানা। ওসবে মানুষের আগ্রহ আর কৌতুহল আছে কি নাই সে তর্কে আমরা যাবো না। আজকের আলোচনার অভিমুখ কিছু সংক্ষিপ্ত প্রস্তাবনার দিকে। যা খুব সংক্ষিপ্তভাবে পাঠকের সমীপে পেশ করতে চাই। প্রস্তাবনাগুলো কেবল তাদের কাছেই প্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে যারা- মাতৃভূমির ‘বিরাণদশা’ দৃষ্টে যারপরনাই ক্ষুব্ধ, বিরক্ত, হতাশ ও খানিকটা নৈরাশ্যে ঝিম মেরে আছেন। মানুষ প্রখর অনুভুতিসম্পন্ন জীব। মানুষে মানুষে নানা বৈশিষ্ট্যে তফাৎ আর বৈচিত্র্য থাকলেও মোটাদাগে কিছু অনুভূতি সবাইকে সমান ছুঁয়ে যায়।
সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক কাণ্ডকারখানা ও তৎপূর্ববর্তী এক দশকের ‘পাথালযাত্রা’ সমাজে একটি দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তার যন্ত্রণাময় আবহ তৈরি করেছে। আঘাতে আঘাতে আধমরা গরিষ্ঠসংখ্যক মানুষের অনুভূতি যদিও ক্রমেই নিস্তেজ ও অসাড় হয়ে এসেছে কিন্তু এখনও মুক্তির তাড়নায় তড়পাচ্ছে এমন মানুষের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। তাদের জিজ্ঞাসাগুলো ইথারে-বিথারে আর অন্তর্জালে কেবল ভেসেই বেড়াচ্ছে না বরং সুযোগে-অবকাশে এখানে ওখানে বারুদের মতো উত্তাপও ছড়াচ্ছে। জিজ্ঞাসাগুলোকে যদি একবাক্যে প্রকাশ করতে হয় তাহলে এভাবে হতে পারে-‘মানুষের বিজয় কোন পথে’।
লেখার শুরুতেই বলেছিলাম, লেখার কেন্দ্রে থাকবে ইসলাম আর মুসলমান থাকবে।… নতুনভাবে বলার দরকার নাই, আজকের বিশ্বে ইসলাম ক্রমপ্রসারমান জীবনাদর্শ হলেও মুসলমানরা যে কারণেই হোক সবচেয়ে কঠিন দুঃসময় অতিক্রম করছে।
সংকট উত্তরণে গবেষক ও চিন্তাবিদগণ নানান উপায় বাতলেছেন। বিবিধ তত্ত্ব হাজির করেছেন। ধর্মতত্ত্ববিদগণ ধর্মগ্রন্থ থেকে সমাধানসূত্র তুলে এনেছেন। এই লেখক গবেষণা ও চিন্তাশীলতার উচ্চতায় আরোহনের যোগ্যতাই রাখেন না বরং তিনি খুব ছোট পৃথিবীর নিতান্ত সাধারণ বাসিন্দা।
আবারও মূল কথায় ফিরছি। বাংলাদেশের একজন লব্ধপ্রতিষ্ঠা কবি ও জনপ্রিয় সংগীত ব্যক্তিত্ব লিখেছেন, কৌশল প্রকাশ না করাটাও কৌশলের অংশ। প্রকাশিত হয়ে গেলে তা আর কৌশল থাকে না। দেশে ও বিশ্বে ইসলামি জীবনাদর্শের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তায় শয়তানি শক্তি স্বভাবতেই বিচলিত বোধ করে। এ কারণে ‘দুনিয়ার তাবৎ মন্দ বিষয় ইসলাম ও মুসলমানের সৃষ্ট’ এমন মিথ্যা ধারণাকে মানুষের মগজে গেঁথে দেবার জন্য অমুসলিমদের ক্ষমতাবান গোষ্ঠী ও তাদের দোসর বিভিন্ন অশুভ শক্তি সম্ভাব্য সব উপায়-উপকরণ ব্যবহার করছে। কাজেই নিছক ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পরিসরের বাইরে সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলামের নাম ও ব্যানার যেখানেই দৃশ্যমান হয় সেখানেই শক্ত বাধার মুখে পড়ছে। অন্যদিকে আজকের পৃথিবীতে ‘দৃশ্যমান অভিভাবক’হারা মুসলমানদের জন্য এই মুহূর্তে সম্মুখ সমরে বিজয়ী হওয়া সম্ভব নয়। তাই ইসলামের নাম, টাইটেল, ব্যানার ও স্লোগান আপাতত আড়ালে থাকলে ক্ষতি কী ?
এ বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনা রেখে আজকের লেখা শেষ করার ইচ্ছে আছে। তার আগে বলে নিই যারা ইসলামপন্থা নিয়ে বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক পরিসর ও মাঠে-ময়দানে কাজ করছেন; তাদের একটি অংশ শিক্ষা, আরেকটি দাওয়াত ও সমাজসংস্কার, তৃতীয় অংশটি সমাজবিপ্লবের গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করছেন বলে দাবি করা হয়। প্রত্যেকের নিয়ত, প্রতীতি, প্রত্যয় ও ¯^cœ অবশ্যই মহৎ ও কল্যাণঅভিসারী। তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলছি- আমরা অনেকেই অপরের প্রত্যক্ষভাবে সহকর্মী না হলেও সহমর্মী। সহযাত্রী না হলেও বৈরী নই। নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, সততা, দক্ষতা এমনকি নৈতিকতার তারতম্য সত্ত্বেও আমরা বিশ্বাস করতে চাই গন্তব্য অভিন্ন পথ যদিও বিভিন্ন। আজকের লেখার আলোকসম্পাত ও কেন্দ্রীয় উপজীব্য হলো- পথ, পন্থা বা কর্মকৌশল ঢেলে সাজানো কিংবা কর্মপদ্ধতির ভিন্নতা বিষয়ে খোলামনে চিন্তা করা।
এ জন্য আমাদের সামনে সাম্প্রতিক নমুনা হিসেবে আরব উপদ্বীপ, তুরস্ক ও উপমহাদেশকে রাখা যেতে পারে। এই তিন জনপদের বিশেষ একটি কালপর্বকে টেবিলে রেখে পর্যালোচনা চালিয়ে যাওয়া সুবিধেজনক বোধ করি। আলোচনাকে তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের ভারে ন্যুব্জ করার চাইতে যথাসাধ্য সাবলীল ও সংক্ষিপ্ত রেখে এগুতে চেষ্টা করছি।
তাতারীদের হাতে পর্যুদস্ত মুসলমানরা যখন শোচনীয়ভাবে পরাজিত; তখন ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বিজয়ী শক্তির ভেতের ইসলামের সোনালি পয়গাম ছড়িয়ে দেবার কর্মসূচি বাস্তবায়নে মনোনিবেশ করেন এবং এতে সফলতাও আসে। দীনে এলাহী নামে সম্রাট আকবর যখন ক্ষমতার কেন্দ্র থেকেই ধর্মবিকৃতির ষোলোকলা পূর্ণ করেছেন তখন বিপন্ন ইসলামের মাঝে নতুন শক্তিসঞ্চারের জন্য মুজাদ্দিদে আলফে সানী শাইখ আহমদ সারহিন্দি আকবরের উত্তরসূরী শাসকগোষ্ঠীর কাছে বিশুদ্ধ ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিয়ে পুনরায় বিজয়ের ফসল ঘরে তুলেছেন। তুরস্কের মহান সংস্কারক ও বিচক্ষণ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব বদিউজ্জামান সাঈদ নুরসী সাধারণ মানুষের মাঝে ইসলামের চেতনা ও জীবনাদর্শ পুরুজ্জীবনে এই দাওয়াতি কৌশলকে কাজে লাগিয়েছেন এবং দীর্ঘ পৌনে এক শতকের মাথায় আমরা সেই কৌশলের সাফল্য প্রত্যক্ষ করছি।
উমাইয়া-আব্বাসী যুগ ও ওসমানী খেলাফতকালে মুসলিম অধ্যুষিত ভূখণ্ডগুলোর শাসকদের ভালোমন্দ বৈশিষ্ট্য যাই থাকুক তাদের ধর্মীয় চেতনার মাত্রা নিকট অতীত ও বর্তমানকালের চাইতে শতগুণ উপরে ছিলো। তাদের অসদাচরণ ও অত্যাচার ইতিহাসে একেকটি মন্দ দৃষ্টান্ত হয়ে আছে- এমন কথাও কেউ বলতে পারেন। কিন্তু তাদের ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন, চর্চা, লালন, ইসলামি সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও পৃষ্ঠপোষকতা এমনকি প্রাত্যহিক কাজকারবারে ইসলামি পরিভাষার বহুল প্রচলন ছিলো সর্বব্যাপী। পৃথিবীর গর্ভে তখনও সেক্যুলারিজমের ভ্রুণ জমাট বাঁধে নি। জাতীয়তাবাদী, সেক্যুলার, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির আলাদা অস্তিত্ব তখনও ছিলো মানুষের চিন্তার অতীত। ‘রাজনৈতিক ইসলাম’ ও ‘মডারেট মুসলিম’ ধরনের পরিভাষাগুলো তখনও সৃষ্টি হয় নি। সমগ্র বিশ্বে ইসলামের চাইতে বড়, গৌরবমণ্ডিত ও বিজয়ী কোনো সভ্যতা থাকতে পারে এমন ধারণা ছিলো সর্বৈব অসার ও হাস্যকর। ফলে ‘রাজনীতিতে ইসলামকে টেনে আনছেন কেন ?’ ধর্ম পবিত্র জিনিস ও ব্যক্তিগত বিষয়-এর সঙ্গে রাজনীতির কী সম্পর্ক ? ইসলামের নামে রাজনীতি কেন ? ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’ প্রভৃতি আরোপিত (ও বস্তাপঁচা) তত্ত্বগুলো আওড়ানোর মতো বিকৃত চিন্তার উদ্ভব ঘটে নি। কিন্তু আজকের চিত্রটা সম্পূর্ণ বিপরীত। আজকের দুনিয়ায় উপর্যুক্ত থিউরিগুলোর বিপক্ষে অবস্থান নিলে আপনি নিজেই একঘরে, হঠকারী ও অপাংক্তেয় হয়ে যাবেন।
কাজেই সময়ের শিরা ও সমাজের নার্ভ বুঝে এখনকার কর্মকৌশল পুনর্বিন্যাস করতে হবে। কাজগুলো এভাবে হতে পারে:
- ঈমানের নবায়ন ও আমল সংস্কারের পাশাপাশি ইসলামের খণ্ডিত নয় পূর্ণাঙ্গ রূপ জীবনে ও সমাজে রূপায়িত করা। তৃণমূল মানুষের মাঝে প্রয়োজনীয় ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ও চিন্তার পুনর্গঠনে সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা।
- আলেম ও সাধারণ শিক্ষিতদের মাঝে কল্পিত শ্রেয়বোধ আর শ্রেণিবৈষম্যের দেয়াল অপসারণে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ।
- শুধু ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়ে সীমাবদ্ধ না রেখে ইসলামের বিশ্বজনীন সর্বমানবিক রূপ উপস্থাপনের প্রয়াস চালানো। প্রাচ্যবিদ ও ইসলামবিদ্বেষীদের প্রচারণার বিপরীতে ইসলামের শুধু দণ্ডবিধি নয় মানবকল্যাণ, ইনসাফ, মানবাধিকার, বৈষম্য বিলোপ, উন্নয়ন এবং অমুসলিমদের প্রতি উদারতার বিষয়গুলোকে ফোকাস করা।
- শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সমাজের সকল স্তরে সেবা ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচির সহায়তায় ইসলামের পয়গাম পরোক্ষভাবে তুলে ধরা।
- সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মতৎপরতায় ইসলামের নাম-ধাম, ব্যানার-শিরোনাম পুরোপুরি এড়িয়ে চলা।
- সরাসরি ইসলামি সমাজ, ইসলামি রাজনীতি, ইসলামি সরকার ধারণার বাইরে ইসলামবান্ধব কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার তত্ত্বকে সামনে নিয়ে আসা। আজকের তুরস্ক এ পদ্ধতি অবলম্বন করে তুলনামূলক সুফল পাচ্ছে বলে অনেক পর্যবেক্ষকের মত।
- সেক্যুলার ও জাতীয়তাবাদী শক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ন্যুনতম যোগাযোগ, সামাজিক সম্পর্ক এবং সংলাপের দুয়ার সবসময় উন্মুক্ত রাখা।
- দাওয়াত, প্রচার ও যোগাযোগের শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে মিডিয়া ও প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা।
- তাবলীগ জামাআতের মতো বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর সংস্কারে ও পুনর্গঠনে সহযোগিতামূলক অবস্থান গ্রহণ।
প্রস্তাবগুলো ইসলামপন্থী সংগঠনগুলোর কারও যদি অপছন্দ হয়- বিনয়ের সঙ্গে নিবেদন থাকবে- লেখার শিরোনামটি- অভিন্ন গন্তব্য বিভিন্ন পথ।
পুনশ্চ
- তুরস্কে কামাল পাশার নেতৃত্বে সংঘটিত কথিত বিপ্লবের ফলে রাষ্ট্রের সকল স্তরে সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা ও বিচারবিভাগ সেক্যুলার পাশ্চাত্য মতাদর্শীদের নিরঙ্কুশভাবে আধিপত্য ও শক্ত নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। বিশেষত সেনাবাহিনী সাংবিধানিক আদালতকে সেক্যুলারিজমের রক্ষাকবচ মনে করা হয়। রজব তৈয়ব এরদুগান ধীরে ধীরে যার একেকটি ইট বদলাচ্ছেন।
- বাংলাদেশের ’৭১ পূর্বাপর প্রায় সত্তর বছর যাবৎ গণতন্ত্রের গোড়ায় পানি ঢালার পরও তাতে মাকাল ফল ছাড়া উপাদেয় কিছু উৎপন্ন হয় নি। তাছাড়া গণতন্ত্রেরও দুটি সংস্করণ আছে। একটি ইউরোপ-আমেরিকা ও পাশ্চাত্যের জন্য আরেকটি ‘মুসলিম জাহানের’ জন্য। এর যেটুকু ভালো ও গ্রহণযোগ্য তা নিজেরা রেখে মুসলমানদের জন্য বাকল, খোলস বরং বর্জ্যটা দান করা হয়েছে। কাজেই ‘খেলাফত হন্তারক’ এই গণতন্ত্র মানুষের মুক্তি ও বিজয় এনে দেবে-এমন দূরাশা ত্যাগ করে যারা খেলাফত প্রতিষ্ঠার বিপ্লবী আহ্বান জানাচ্ছেন তাদের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণের জোরালো যুক্তি আপাতত নাই।
- গবেষক ও চিন্তাবিদ ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কোন বিপ্লব সফল হয় না।’ এটা ঠিক গণতন্ত্র না হলেও গণতন্ত্রে এই মূল্যবোধটি অধিকতর সমাদৃত।
***