জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বদেশের প্রতি খোলা চিঠি প্রিয় স্বদেশ

স্বদেশের প্রতি খোলা চিঠি

প্রিয় স্বদেশ

কেমন আছো? আশাকরি কুশলেই আছো! পত্রের প্রারম্ভে লাখো মানুষের ব্যথিত চিত্তের অজস্র ‘আহ’ নিও! কী অবাক হচ্ছো? ভাবছো, আশ্চর্য! এ কেমন পত্র! প্রারম্ভেই অভিযোগের অবতারণা! আক্রোশের তীব্র ধারালো ফলা! শুভেচ্ছার নাম-গন্ধও নেই! দেশে সৌজন্যতা বলতে আর এতটুকুও অবশিষ্ট নেই!

আজ্ঞে হ্যাঁ। এতটুকুও আর অবশিষ্ট নেই। হারিয়ে ফেলেছি সব। সবকিছু বিস্মৃত হয়ে গেছে। কী করে থাকবে বলো। স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশত বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও যদি পরাধীনতার বেড়ি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে, সৌজন্যতা কি আর বাকি থাকে? আর কিছু পারুক আর না পারুক এ দেশের স্বাধীন মানুষ অন্তত দুটো সত্য কথাও যদি নির্ভয়ে মুখফুটে বলতে না পারে শিষ্টতা কি আর অবশিষ্ট রয়? হাজারো বাগ্মীকে যদি মূক হয়ে থাকতে হয় তোমার স্বাধীন ভূখণ্ড, স্বৈরচারীর বিরুদ্ধে কলম ধরার কারণে যদি নিক্ষেপ হতে হয় হাজারো কলমযোদ্ধাকে অন্ধকারের আস্তাকুঁড়ে! শিষ্টাচার কি আর পাওয়া যাবে? বলো, তুমিই বলো! তদুপরি যদি দেখি, আকণ্ঠ ঋণ নিয়ে দু’টুকরো গোস্ত খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে তোমারই বুকে জন্ম নেওয়া কিছু চাটুকার! পরে যে ঋণের ভারে দু’বিঘে জমিটির ইয়ত্তা থাকবেনা সে ব্যাপারে তাদের চিন্তার ঘিলু একেবারে শূন্যের কোঠায়! আচ্ছা তুমি বলোতো, বস্তা বস্তা ঋণের বোঝা ঘাড়ে না তুলে পুড়া মরিচ দিয়ে দু’মুঠো পান্তা খেয়ে জীবন যাপন করা কি মন্দ ছিলো?

সৌজন্যতার সিকিভাগ যা ছিলো তাও উবে গেছে। যখন দেখলাম, ধর্ষণের মাধ্যমেই নতুন বছরে আমাদের পদার্পণ! বর্ষ শুরু হয়ে এখনো একপক্ষ যায়নি। ধর্ষণের সংখ্যা দশের কোঠা পেরিয়ে গেছে! এ যেন দিনের সাথে পাল্লা দিয়েই ধর্ষণ কার্য চালানো হচ্ছে! রাষ্ট্রপক্ষ হয়তো নিজ সোনার ছেলেদের কর্ম দেখে গর্বে…!!

প্রিয় মাতৃভূমি!

এসব বলছি বলে রেগে মুখ ভার করছো নাতো? জানি, তুমি এমনটি করবেনা। কারণ তুমি যে মায়ের মতো। শত অভিযোগে তুমি থাকো শান্ত, নিরব। অসংখ্য অনুযোগেও তোমার মুখে বিরক্তির সামান্য চাপটুকুও ভেসে উঠে না। আসলে তোমাকেই বা কী বলব! দোষ তো সব আমাদের। আমারাই পারিনি স্বাধীন তোমাকে অক্ষুন্ন রাখতে। পারিনি তোমার প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে। তুমি নিশ্চয় জানো, এখানে শিক্ষিত ব্যক্তিরা সবাই এক একজন ‘বিশেষজ্ঞ বোকা’! স্বনামধন্য নির্বোধ!! ভাবছো, কিভাবে?

কেন তুমি দেখনি? প্রতি বছরের ন্যায় এবছরেও গত বিজয়ের মাসে এরা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছে নিরেট প্রস্তরখণ্ডে পুষ্পমাল্যের স্তূপ বানিয়ে! সামনে আবার দেখবে, বাংলা ভাষা দিবস পালন করবে ইংরেজির একুশে ফেব্রুয়ারিতে!! আরো বলবো? না, থাক। তোমার মাথা আবার চক্কর দিয়ে উঠবে! আরো মজার ব্যাপার কী জানো? সংবিধানের মতো জঠিল বিষয়ে এগারতম সংশোধনী থাকলেও এগুলোর সংশোধন নাকি সম্ভব না!

বিস্ময় জাগে। যখন দেখি, এরা বিজ্ঞানের কঠিন কঠিন থিওরি বুঝে। কিন্তু বুঝেনা শুধু সাটামাটা এবিষয়গুলো!

নাকি….!!

প্রিয় জন্মভূমি!

তুমি কি জানো, এসবের মাঝেও আমি এক টুকরো সুখ খুঁজে পাই?

কখন জানো? যখন তুমি আমাকে নিঃস্বার্থে স্নিগ্ধ ভোরের আলোয় পুলকিত করো। ঝিরঝির শিশিরে ভেজা মোহিনী সকালে অনুভবের মৃত নদীতেও যখন তুমি তরঙ্গ তোলো, শঠতার মায়াজালে আবদ্ধ ক্ষিতিতে থেকেও তখন আমি একমুঠো সুখ খুঁজে পাই। দিগন্ত বিস্তৃত, অবারিত তোমার সবুজের সমারোহ সত্যি আমায় মুগ্ধ করে প্রতিনিয়ত। সারাদিনে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি শুনতে শুনতে কালা হয়ে যাওয়া আমি শ্রবনশক্তি ফিরে পাই তোমার সন্ধ্যায় নীড়ে ফেরা পাক-পাখালীর সুর শুনে। চতুর্দশী রাতে জোসনার আবগাহনে আমার ক্লান্ত শরীরটা একটু প্রসন্ন উঠে। শীতের সকালে কুয়াশার আচ্ছাদনে আবৃত তোমাকে দেখে আমার অন্তরা তোমার নাম কি দেয় জানো? তুমি নাকি বসুন্ধরার ‘কুহেলিকা কানন’। সত্যি তুমি অপূর্ব, অনন্য।

খুব দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে বুঝি? আজ এতটুকুই থাক। কোনো সময় তোমাকে নিয়ে না হয় আবার লিখব। ভালো থেকো, তুমি সমীপে আবান চিঠি লেখা অবধি। এ কামনায়…।

ইতি

তোমারই এক নগণ্য বাসিন্দা

হামীদ সরফরাজ

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ