তালিবুল ইলম ভাইদের জন্য বিক্ষিপ্ত কিছু তথ্য
মাহফুয আহমদ
এক. আরববিশ্বের স্বনামখ্যাত একটি প্রকাশনা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান দারুত তা’সীল (دار التأصيل)| ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের বহু প্রাচীন গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করত তাহকীক তথা যুৎসই সম্পাদনা ও নিরীক্ষণের মাধ্যমে সেগুলোর বিশুদ্ধ সংস্করণ বের করেছে দারুত তা’সীল। সমকালীন অনেক আরব স্কলারের জবানে ও কলমে তাদের স্তুতি ও স্বীকৃতি প্রকাশ পেয়েছে।
সম্প্রতি তারা আরেকটি চমৎকার কাজ করেছে। সাধারণ পাঠকদের জন্য তারা সহীহ আল-বুখারী ও সহীহ মুসলিম গ্রন্থদ্বয়কে পকেট বা ছোট সাইজের ৩০ খণ্ডে ছেপেছে। ঝকঝকে ছাপা, উন্নত কাগজ, স্পষ্ট লেখা এবং হারাকাতযুক্ত। নতুন এই সংস্করণের উদ্দেশ্য হলো, যেসব পাঠক সহীহ আল-বুখারী কিংবা সহীহ মুসলিমের দীর্ঘ কলেবর দেখে ঘাবড়ে যান অথবা হাজার হাজার হাদীস একযাত্রায় পড়ে শেষ করেবন কীভাবে তা ভেবে বীতশ্রদ্ধ হয়ে যান; তারা যেনছোট্ট ছোট্ট এক একটি খণ্ড করে পড়ে শেষ করতে পারেন। একটি খণ্ড সমাপ্ত হওয়ার পর পাঠক হৃদয়ে একরকম স্বস্তি ও প্রশান্তি অনুভব করতে পারবেন। বরং কেউ চাইলে দৈনিক এক খণ্ড করে পাঠ করলে প্রতি মাসে পুরো একটি কিতাব পড়ে শেষ করে নিতে পারবেন।
বস্তুত সাহসী ও উদ্যমী একজন তালিবুল ইলম ইচ্ছে করলে দৈনন্দিন ন্যূনতম এক পারা কুরআন তেলাওয়াতের পাশাপাশি বুখারী কিংবা মুসলিমের এক খণ্ড পাঠ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। বরং উচ্চাভিলাষী প্রখরস্মৃতিশক্তির অধিকারী কোনো তালিবুল ইলম বন্ধু সময়কে কাজে লাগিয়ে এই সংকল্প করে নিতে পারেন যে, ছোট্ট ছোট্ট এই খণ্ডগুলো ধীরে ধীরে একটি একটি করে হিফয বা মুখস্থ করে নিবেন। প্রকৃতপক্ষে সেটা একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ হবে।
দুই. ইসলামে হাদীস ও সুন্নাহর গুরুত্ব অপরিসীম। বস্তুত হাদীস হচ্ছে ইসলামী জ্ঞানের দ্বিতীয় মৌলিক উৎস। হাদীসের প্রামাণিকতা স্বয়ং আল্লাহর কিতাব ‘কোরআন’ দ্বারা সাব্যস্ত। সুতরাং হাদীস অস্বীকার করে কেউকোরআনে বিশ্বাসী হতে পারে না। আরও স্পষ্ট করে বলা যায়, মুমিন থাকতে পারে না।
কিন্তু বর্তমান দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, অনেক মডার্ন মুসলিম হাদীস নিয়ে সংশয়ে লিপ্ত! হাদীস মেনে চলতে হবে; সেটা তারা বিশ্বাস করেন না! উপরন্তু তাদের কেউ কেউ এই বলে বেড়াচ্ছেন যে, হাদীস সঠিকভাবে সংরক্ষিত হয়নি!! ইত্যাকার কতগুলো অহেতুক অভিযোগ তারা আজকাল প্রচার করছে জোরেশোরে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এজাতীয় লোকের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে!
এহেন পরিস্থিতি মোকাবেলায় হাদীস ও সুন্নাহর প্রামাণিকতা, সেসব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সংরক্ষণের ইতিবৃত্ত ও ইতিহাস, সেক্ষেত্রে মুহাদ্দিস ও অন্যান্য শাস্ত্রীয় আলেমগণের অকল্পনীয় ত্যাগ ও সতর্কতা এবং এতে তাঁদের অভাবনীয়কৃতিত্ব ও সফলতা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আমাদের প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে এবং সমাজের সর্বত্র তা ছড়িয়ে দিতে হবে। উম্মাহ বিভ্রান্ত হওয়ার আগেই এই গুরুদায়িত্ব আঞ্জাম দেওয়া ঈমানের দাবি।
এক্ষেত্রে একটি কথা বলে রাখা দরকার। সহীহ আল-বুখারীকে আমরা কুরআনের পর সর্বাধিক বিশুদ্ধ গ্রন্থ বলে দাবি করি। এই দাবি যথার্থ। সেজন্য হাদীস অস্বীকারকারী দল সহীহ আল-বুখারী নিয়ে কতেক অভিযোগ প্রচার করে চলছে। সেসবের খণ্ডনও আমাদের করতে হবে।
আল-হামদু লিল্লাহ! সহীহ আল-বুখারী মুসলিম উম্মাহর নিকট এমনভাবে সমাদৃত হয়েছে যে, শুধু আরবী ভাষায় সহীহ বোখারির ওপর রচিত ব্যাখ্যা, প্রাসঙ্গিক ও সহযোগী গ্রন্থের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতে এই সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতেই থাকবে ইনশাআল্লাহ। অন্যান্য ভাষায় কৃত কাজগুলোর কথা আপাতত না হয় বাদই দিলাম!
তিন. তালিবুল ইলম তো বটেই, ধর্মীয় জ্ঞান বিষয়ে খবর রাখেন এবং পড়াশোনা করেন এমন যে কারো ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহিমাহুল্লাহ (মৃ. ৯১১ হি.) সম্পর্কে জানা থাকার কথা। বিস্ময়কর এক প্রতিভা ছিলেন তিনি। দীনী জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় সবকটি শাখায় তাঁর ছোটবড় কোনো না কোনো কাজ পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা তাঁকে বিচিত্র যোগ্যতা ও গভীর জ্ঞান দান করেছিলেন।
দুর্লভ ব্যাপার হলো, হাদীসের প্রসিদ্ধ ৬টি গ্রন্থেরই ব্যাখ্যাগ্রন্থ লেখার সৌভাগ্য ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতীর হয়েছিল। তাঁর লেখা সবকটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ প্রকাশিত ও সমাদৃত। গ্রন্থগুলোর কাগুজে সংস্করণ পাওয়া গেলেও অনলাইন পাঠকবন্ধুগণের জন্য পিডিএফ ডাউনলোডের লিংকসহ নিম্নে সেগুলোর নাম উল্লেখ করা হলো:
- আত-তাওশীহ শারহুল জামিয়িস সাহীহ (التوشيح شرح الجامع الصحيح) (৯ খণ্ড, মাকতাবাতুর রুশদ, ১৪১৯ হি. = ১৯৯৮ খ্রি.)।[1]
- আদ-দউবাজ আলা সাহউহি মুসলিম ইবনিল হাজ্জাজ (الديباج علىٰ صحيح مسلم بن الحجاج) (৬ খণ্ড, দারু ইবনি আফফান, ১৪১৬ হি. = ১৯৯৬ খ্রি.)।[2]
- মিরকাতুস সুউদ ইলা সুনানি আবী দাউদ (مرقاة الصعود إلىٰ سنن أبي داود) (৩ খণ্ড, দারু ইবনি হাযম, ১৪৩৩ হি. = ২০১২ খ্রি.)।[3]
- কুতুল মুগতাযী আলা জামিয়িত তিরমিযী (قوت المغتذي على جامع الترمذي) (১ খণ্ড, জামিয়া উম্মুল লংরা, ১৪২৪ হি. = ২০০৪ খ্রি.)।[4]
- যাহরুর রুবা আলাল মুজতাবা (زهر الربى على المجتبى) (কোনো কোনো ছাপায় সুনানে নাসায়ির সঙ্গে এটা সংযুক্ত)।[5]
- মিসবাহুয যুজাজাহ আলা ইবনি মাজাহ (مصباح الزجاجة على سنن ابن ماجه) (২ খণ্ড, দারুন নাওয়াদির, ১৪৩৩ হি. = ২০১২ খ্রি.)।[6]
চার. ইসলামী আইনশাস্ত্রে ফুকাহায়ে কেরামের মধ্যকার সংঘটিত ইখতিলাফ বা মতপার্থক্যের কারণ ও প্রেক্ষাপট বর্ণনার ক্ষেত্রে যুগে যুগে গবেষক আলেমগণ গ্রন্থ রচনা করেছেন। ইসলামী গ্রন্থালয়সমূহ ওইসব রচনা দ্বারা সমৃদ্ধ। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি গ্রন্থের নাম:
- ইবনুসসিদ আল-বাতালইয়াওসী রাহিমাহুল্লাহ (মৃ. ৫২১ হি.) রচিত আল-ইনসাফ ফিত তাম্বিহি আলাল মা‘আনী ওয়াল আসবাব আল্লাতী আওজাবাতিল ইখতিলাফ।[7]
- ইবনে রুশদ আল হাফীদ রাহিমাহুল্লাহ (মৃ. ৫৯৫ হি.) রচিত বিদায়াতুল মুজতাহিদ ওয়া নিহায়াতুল মুকতাসিদ।
- শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ (মৃ. ৭২৮ হি.) রচিত রাফউল মালাম আনিল আইম্মাতিল আ’লাম।
- শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী রাহিমাহুল্লাহ (মৃ. ১১৭৬ হি.) রচিত আল-ইনসাফ ফী বায়ানি আসবাবিল ইখতিলাফ।
- শায়খ মুসতাফা আলখিন্ন রাহিমাহুল্লাহ (মৃ. ২০০৮ খ্রি.) রচিত আসারুল ইখতিলাফ ফিল কাওয়াইদিল উসূলিয়া ফিখতিলাফিল ফুকাহা।[8]
তাছাড়া এযুগে শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা হাফিযাহুল্লাহ (জন্ম: ১৩৫৮ হি. = ১৯৪০ খ্রি.) এবিষয়ে আসারুল হাদিসিশ শারিফ ফিখতিলাফিল আইম্মাতিল ফুকাহা নামে চমৎকার একটি গ্রন্থ সংকলন করেছেন। গ্রন্থটি চিন্তা ও গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছে।
অবশ্য এইসব মনীষীর অনেক আগেই আল্লামা ইবনে হাযম আন্দালুসী রাহিমাহুল্লাহ (মৃ. ৪৫৬ হি.) তদীয় আল-ইহকাম ফী উসূলিল আহকাম গ্রন্থে ফকিহগণের মতবিরোধের কারণ সমূহ নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন। সেখানে ১০টি কারণ দর্শানো হয়েছে। অন্যদিকে এসম্পর্কিত সবচেয়ে বিশদ ও বিস্তারিত আলোচনা পেশ করেছেন ইমাম আবুল হাসান আলী ইবনে সাঈদ আররাজরাজী রাহিমাহুল্লাহ (মৃ. ৬৩৩ হি.) তাঁর মানাহিজুত তা’সীল ওয়া নাতায়িজু লাতায়িফিত তাওয়ীল[9] নামক গ্রন্থে। ১০ খণ্ডে প্রকাশিত এই বিরাট গ্রন্থটি সম্পর্কে এখনও অনেকে অবগত হননি।
পাঁচ. প্রখ্যাত ফকীহ আল্লামা বদরুদ্দীন আয যারকাশী রাহিমাহুল্লাহ (৭৯৪ হি.) এর জীবনালেখ্যে হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী রাহিমাহুল্লাহ (৮৫২ হি.) বলেন, ‘তিনি সবসময় ঘরে বসে (অধ্যয়নে লিপ্ত) থাকতেন। কোথাও বেরহয়ে যেতেন না। মাঝেমধ্যে শুধু বইয়ের বাজারে যেতেন। সেখানে গিয়ে বই কিনতেন না। সারাদিন বইয়ের দোকানে বসে অধ্যয়নে মগ্ন থাকতেন। তাঁর সঙ্গে কয়েকটি কাগজও থাকতো। উপকারী ও চমৎকার তথ্য পেলে সেটা কাগজে নোট করে রাখতেন। অতঃপর ঘরে ফিরে নিজের কোনো রচনায় সেই তথ্যগুলো সংযোজন করে দিতেন।’ (আদ দুরারুল কামিনা; ইবনে হাজার, ৫/১৩৪, দায়িরাতুল মাআরিফিল ইসলামীয়া, হিন্দুস্তান, ১৩৯২ হি. = ১৯৭২ খ্রি.)।
আল্লাহ তাআলা আল্লামা বদরুদ্দীন যারকাশী এর ওপর রহম করুন এবং তাঁর রেখে যাওয়া ইলমী তুরাস থেকে আমাদের উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।
ছয়. আল্লামা শামসুদ্দীন যাহাবী রাহিমাহুল্লাহ উদ্ধৃত করেন যে, ইবনে ওয়াহব বর্ণনা করেছেন, ইমাম মালিক ইবনে আনাস রাহিমাহুল্লাহর বোনকে জিজ্ঞেস করা হলো, ঘরের ভেতর ইমাম মালিকের কাজ বা ব্যস্ততা কী? ইমামমালিক রাহিমাহুল্লাহ এর বোন সংক্ষেপে বলে দিলেন, মুসহাফ (কুরআনের কপি) ও তেলাওয়াত। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, যাহাবী, ৮/১১১)
সাত. আপনি যদি নির্দিষ্ট একটা বিষয় নিয়ে প্রতিদিন ১ ঘণ্টা করে পড়তে পারেন তাহলে কী হবে জানেন?!
- সপ্তাহে আপনি একটি বই পড়ে শেষ করতে পারবেন!
- বছরে আপনি ৫০ টি বইয়ের পাঠ সমাপ্ত করতে পারবেন!
- তিন বছর পর আপনি ওই নির্দিষ্ট বিষয়ের একজন বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠবেন!
- পাঁচ বছর পর আপনি স্থানীয়ভাবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের একজন আশ্রয়স্থলে পরিণত হবেন তথা স্থানীয় লোকজন আপনার শরণাপন্ন হয়ে উপকৃত হতে পারবে!
- সাত বছর পর আপনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের একজন আশ্রয়স্থলে পরিণত হবেন তথা দেশবিদেশের লোকজন আপনার শরণাপন্ন হয়ে উপকৃত হতে পারবে!
- দশ বছরে আপনি এভাবে ৫ শত বই পড়ে ফেলতে সক্ষম হবেন! [আরবি থেকে অনূদিত]
আট. তালিবুল ইলমদের ভুল সংশোধন এবং অলসতা দূরীকরণে কিংবা আরও বেশি ত্যাগস্বীকারে উদ্বুদ্ধকরণের জন্য আসাতিযায়ে কেরামের পক্ষ থেকে অন্যান্য উপকরণ অবলম্বনের পাশাপাশি শরিয়তের গণ্ডির ভেতরে থেকে কিছু মৃদুশাসন (বেত্রাঘাত) করাও শিক্ষাদান পদ্ধতির একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত! প্রায় প্রতিজন তালিবুল ইলমই এই প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। অতঃপর ছাত্রজীবন সমাপ্তির পর আসাতিযায়ে কেরামের স্মৃতিচারণের সময় ওই উত্তমমাধ্যমের কথাও স্মরণ করা হয়। কিন্তু এই স্মৃতিচারণের জন্য সাধারণত ‘মারপিট’, ‘থাপ্পড় লাগানো’, ‘লাথি মারা’, ‘ধোলাই দেওয়া’ ইত্যাকার রেওয়াজি শব্দগুলোই চয়ন করা হয়ে থাকে!
অবশ্য এজাতীয় ঘটনা যদি ভবিষ্যতে শায়খুল ইসলাম হবেন এমন কারো সঙ্গে সংঘটিত হয় তবে তিনি কোন শব্দে ওই স্মৃতি মন্থন করেন তা দেখার জন্য শায়খুল ইসলাম আল্লামা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী সাহেব হাফিযাহুল্লাহর স্বহস্তে লিখিত আত্মজীবনী ‘ইয়াদেঁ’ থেকে একটি উদ্ধৃতি পেশ করা হলো: হযরত (মাওলানা মুফতী সাহবান মাহমুদ রাহিমাহুল্লাহ) এর নিকট একটা লম্বা ছড়ি থাকতো; ছাত্রদের কেবল ভয় দেখানোর জন্য। সাধারণত সেটা খুব কমই ব্যবহার করা হতো। তবে মাঝেমধ্যে কাজেও লাগানো হতো। আর এক/দুবার ওটার প্রয়োগকৃত হওয়ার সৌভাগ্য আমিও অর্জন করি।’ (ইয়াদেঁ, নবম পর্ব, মাসিক আল বালাগ, শাওয়াল, ১৪৩৯ হিজরী)
[1] www.waqfeya.com/book.php?bid=1354
[2] www.waqfeya.com/book.php?bid=1355
[3]www.ar.islamway.net/book/19960/%D9%85%D8%B1%D9%82%D8%A7%D8%A9-%D8%A7%D9%84%D8%B5%D8%B9%D9%88%D8%AF-%D8%A5%D9%84%D9%89-%D8%B3%D9%86%D9%86-%D8%A3%D8%A8%D9%8A-%D8%AF%D8%A7%D9%88%D8%AF
[4] www.waqfeya.com/book.php?bid=8920
[5] www.al-mostafa.info/data/arabic/depot3/gap.php?file=i002534.pdf
[6]www.daralnawader.com/%D9%85%D8%B5%D8%A8%D8%A7%D8%AD-%D8%A7%D9%84%D8%B2%D8%AC%D8%A7%D8%AC%D9%87-%D8%B9%D9%84%D9%89-%D8%B3%D9%86%D9%86-%D8%A7%D8%A8%D9%86-%D9%85%D8%A7%D8%AC%D9%87
[7] www.archive.org/details/65764_20170406