জামেয়া ওয়েবসাইট

বুধবার-৯ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রীয় আইনে আমার পারদর্শিতা এলএলবি’র নয়, হিদায়ার অবদান

রাষ্ট্রীয় আইনে আমার পারদর্শিতা এলএলবি’র নয়, হিদায়ার অবদান

বিচারপতি তকী উসমানী

 

ফিকহে হানাফির অমর গ্রন্থ আল-হিদায়া সম্পর্কে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শায়খুল ইসলাম আল্লামা তকী উসমানী হাফিযাহুল্লাহু এক অদ্ভুত অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমি সতের বছর পাকিস্থানের সুপ্রিম কোর্টের শরীয়া আপিল বেঞ্চের বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছি। সম্ভবত আমি ব্যতীত অন্য কোন বিচারক সুপ্রিম কোর্টের আপিল বেঞ্চে এত লম্বা সময় বিচারকের জন্য দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পায়নি।

সুপ্রিম কোর্টে স্বল্পসংখ্যক বিচারক ছিলেন আমার মত দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত আর অধিকাংশই ছিলেন পেশাগত এ্যাডভোকেট ও আইনজীবী।

সুপ্রিম কোর্টে আমাদের দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনের প্রত্যেকটি ধারা-উপধারা সুক্ষ দৃষ্টিতে অনুধাবন করা ও তার সঠিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা এবং পর্যালোচনা করা।

ছাত্রজীবনে আমি দরসে নিজামীতে যে লেখাপড়া করেছি তার ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্রীয় আইনের এই ধারা-উপধারাগুলো খুব দ্রুত বুঝতে সক্ষম হতাম। সুপ্রিম কোর্টের অনেক বিচারককে দেখতাম তারা আইনজীবি হওয়া সত্ত্বেও আইনের এসব ধারা-উপধারাগুলো সহজে বুঝতেন না।

একবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন চিফ জাস্টিস সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বিচারকদের সাথে মতবিনিময়ের লক্ষ্যে একটি বৈঠকের আয়োজন করলেন। আমিও উপস্থিত ছিলাম সেই বৈঠকে।

চিফ জাস্টিস একটি আইনের ব্যাখ্যা নিয়ে বিচারকদের সাথে মাঝে মতবিনিময় শুরু করলেন। তখন আমি সেই আইনের ব্যাখ্যা পেশ করলাম। আমার ব্যাখ্যা শুনে চিফ জাস্টিস বললেন, আমি উনার ব্যাপারে অনেক আশ্চর্যবোধ করছি যে, ইনি পেশায় কোন আইনজীবি না হয়েও কিভাবে এত নিখুঁতভাবে যে কোন আইনের এত সুন্দর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে পারেন এবং কিভাবে এত দ্রুত আইনের সুক্ষতা বুঝতে সক্ষম হন!

চিফ জাস্টিসের এই বক্তব্য শুনে একজন বিচারক বললেন, ইনি তো এলএলবি ডিগ্রিধারী, তাই আইনের ব্যাখ্যাপ্রদানে তিনি এত পারদর্শী। আমি ওই বিচারকের প্রতিউত্তরে বললাম, আইনের ব্যাপারে আমার এত পারদর্শী হওয়ার কারণ এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করা নয় বরং হেদায়া নামক গ্রন্থ অধ্যয়ন করা। আলহামদুলিল্লাহ! আমি হেদায়া বুঝে বুঝেই অধ্যয়ন করেছি। আমার এই দক্ষতার পিছনে রয়েছে হেদায়ার অবদান, এলএলবির অবদান নয়।

আমার এলএলবি পড়ার ইতিহাস হলো, আমি দারুল উলুম করাচি থেকে এলএলবি ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পরীক্ষার একমাস আগে ছুটি নিই এবং এলএলবি পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করি। যেহেতু পরীক্ষার মাত্র একমাস সময় হাতে ছিল, তাই বেশ টেনশনে ছিলাম যে, অন্যান্য ছাত্ররা সারা বছর প্রস্তুতি নিয়েছে। আর আমি মাত্র একমাস প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি কিভাবে পাস করবো। এরপর যখন পরীক্ষার সময় এলো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে ছাত্ররা পরীক্ষার বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করছিল তখন আমি লক্ষ করলাম, তারা সারা বছর প্রস্তুতি নিয়েও অনেক এমন বিষয় ভালভাবে বোঝেনি যা আল্লাহ তা’আলা আমাকে একমাসের প্রস্তুতির বদৌলতে বুঝার তাওফিক দিয়েছেন।

যখন পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলো তখন দেখলাম আমি এলএলবির পরীক্ষায় দ্বিতীয় ক্লাসে উত্তীর্ণ হয়েছি।

এই সফলতার অন্যতম কারণ হলো, আমার হেদায়া অধ্যয়ন এবং ফিকহ-উসূলে ফিকহের সাথে আমার বিশেষ সম্পর্ক।

আমি যখন উসূলে ফিকহ এবং Interpretation of Status (আইনের বিশ্লেষন) এর মাঝে তুলনা করি তখন আমার নিকট উসূলে ফিকহের সামনে Interpretation of Status (আইনের বিশ্লেষণ) শিশু খেলনার মতো সহজ মনে হয়।

কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, উসূলে ফিকহের মত এই অমূল্য সম্পদ এবং গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্রের ওপর আমাদের অধিকাংশ ওলামা-তুলাবার তেমন কোন দক্ষতা নেই।

ভাষান্তর: তাওহীদুল ইসলাম

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ