জামেয়া ওয়েবসাইট

সোমবার-৭ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-১১ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৬শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাদকসন্ত্রাস থেকে মুক্তি চাই

মাদকসন্ত্রাস থেকে মুক্তি চাই

আজহার মাহমুদ

দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মাদক প্রবণতা। মাদকের বেড়াজালে আবদ্ধ হচ্ছে তরুণ সমাজ। মানুষ মাদকাসক্তির প্রভাবে জড়িয়ে পড়ছে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে। মানুষ পরিণত হচ্ছে হিংস্র পশুতে। মাদকের কারণে ধ্বংস হচ্ছে একটি সুন্দর সমাজ। সমাজের প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষের উপর এর কু-প্রভাব পড়ছে। এসব কিছু বলার আগে বলতে হয়, মাদক মানে কী? মাদক হচ্ছে এমন একটি পদার্থ যা মানুষের শরীরে একবার গেলে মানুষ তাতে আসক্ত হয়ে পড়ে। আর সে তা বার বার গ্রহণ করতে চায়। এভাবে সে মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। নিয়মিত সে মাদক গ্রহণ করতে থাকে। হঠাৎ যদি সে মাদক না পায় তখন সে পাগলের মতো আচরণ করে এবং সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। মাদকে রয়েছে নিকোটিন নামক পদার্থ। যা মানুষের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। মাদক একটি সুস্থ মানুষের হাসি ছিনিয়ে নেয়। মাদকের কুফল বলতে গেলে তা শেষ করা যাবে না।

কারণ এটি নানামুখী সমস্যা তৈরির মাধ্যমে নিজের পরিচয় দিয়েছে। এটি নিজেই নিজের কর্মকাণ্ডে কারণে সমাজে পরিচিত। তবে কিছু মানুষ হয়তো এখনো তা জানতে পারেনি নিজেরা অচেতন থাকার কারণে। না হলে হতে পারে তারা সমাজের বাইরে বসবাস করে। না হয়তো এটাও নয়। হতে পারে তারা জানে কিন্তু না জানার ভান করছে। আমি তাদের কথা বলছি যারা মাদক ব্যবসায়ী। সমাজের মানুষ সুস্থ সবলভাবে জীবন যাপন করলে সবাই সুণ্দর ভাবে সামনে এগিয়ে যাবে। এরকমটা কেমনে তারা হতে দিতে পারে। এটা হলে তো তারা রাজপ্রাসাদে চড়ে রাজত্ব করতে পারবে না। তাদের শাসন করার ক্ষমতা কমে যাবে। সাধারণ মানুষকে তারা আর নিজেদের আয়ত্বে রাখতে পারবেনা। কমে যাবে তাদের টাকার বস্তা। যা তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাদক বিক্রি করে উপার্জন করেছিল। আমাদের যদি সমাজকে মাদকাসক্তির করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতে হয় তাহলে বন্ধ করতে হবে মাদক ব্যবসা। তা নাহলে আমি মনে করি মাদকের রাজত্ব আজীবন থেকে যাবে। আর সমাজে অনৈতিকতার প্রসার বৃদ্ধি পাবে। আমাদের দেশে আনুমানিক মাদক সেবীর সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখের উপরে। প্রতি বছর কয়েক লাখ তরুণ তরুণী মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকাসক্তির ৫৫ ভাগই বেকার এবং শিক্ষার্থী। যারা মাদকের অর্থ যোগাতে পরিবারের উপর নির্ভরশীল। আর এর কারণে পরিবারে নেমে আসে চরম অশান্তি। এরাই করে সমাজে নানান কুকর্ম। ছিনতাই সহ চুরি ডাকাতির কাজও করে এসব মাদকসেবীরা। সিমান্ত এলাকায় মাদক প্রতিরোধের নামে যেসব কমিটি গড়ে উঠেছে, সেগুলোর ৮০ ভাগ সদস্য নিজেরাই মাদক ব্যবসায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

মাদকের বড় একটা অংশ আসে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাফ নদে মাছ ধরা জেলেদের মাধ্যমে। মিয়ানমার থেকে এভাবে চোরা পথে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক এসে নষ্ট করে দেয় যুবসমাজের জীবন। আর এই ব্যবসায় জেলেরাও অতিরিক্ত আগ্রহ দেখায়, কারণ নিষিদ্ধ জগতে অস্ত্রের পরে মাদকই সবচেয়ে লাভজনত ব্যবসা। অনেকের মতে মাদক থেকে মাফিয়াদের আয়ের একটি অংশ বিভিন্ন দেশের কর্ণধারদের পকেটে যায় সরাসরি অথবা নানান ছদ্মবরণে। একারণে বিশ্বব্যাপী মাদকের বিরুদ্ধে কেবল ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলে। এ ব্যাপারে সাধারণেরও উপলব্ধি হচ্ছে, বাংলাদেশে মাদক দমনের নামে কেবল ‘বেগুন তোলা হয়, মুলা তোলা হয় না।’ তাই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে সকলের। রাষ্ট্রকে হতে হবে উন্নয়নবান্ধব। দেশ উন্নয়ণ করে কি লাভ? যদি দেশের মানুষ ধ্বংস হয়ে যায় মাদকের আগ্রাসনে। তাই মাদক থেকে রক্ষা করারা জন্য রাষ্ট্রকে হতে হবে দায়িত্বশীল। মাদককে ‘না’ বলার সময় এখন শেষ, এখন প্রয়াজন গণপ্রতিরোধ। দেশের সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে মাদকের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। মাদকে বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আমি বিশ্বাস করি রাষ্ট্রের চেয়ে মাদক সিন্ডিকেট মোটেও শক্তিশালী নয়। মাদকের নেটওয়ার্ক নির্মূল করা দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য অসম্ভব কিছু নয়। এছাড়া মাদক এবং ধূমপন একই সূত্রে গাঁথা। আর এই গবেষণা জার্মানীর ক্যান্সার রিচার্স সেন্টার করে প্রমাণ পেয়েছে। তাই ধূমপান আর মাদকের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই।

আমাদের দেশে তামাক চাষ বন্ধ করা যাচ্ছে না বরং দিনদিন তামাক চাষ বেড়েই চলছে। নিকট অতীতে কোনো এক খবরের কাগজে পড়েছিলাম রংপুরের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্টানের বিরুদ্ধে দিয়ে চাষিকে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগ। রংপুরে যেনো তামাকের চাষ থামবেই না। রংপুরে ১৯০৮ সালে স্থাপিত হয় তামাক গবেষণাকেন্দ্র, যার কারণে আজও থামওছে না সেখানে তামাকের আবাদ। আর এর জন্য ধূমপানের সামগ্রী বাজারে দিন দিন বেড়েই চলছে। মাদকের মতো যদি তামাক চাষ বা সিগারেট আইনিভাবে নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে ধূমপান করা অনেকটাই কমে যেতো। আর এসব কিছুর মূলে প্রয়োজন জনসচেতনতা। আমি বিশ্বাস করি নিজে ঠিক থাকলে সবকিছুই ঠিক। এখন আমরাই ঠিক নেই তাই রাষ্ট্র ঠিক কীভাবে থাকবে। তাই আসুন মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই এক হয়ে। আমরা যদি এক হয়ে সচেতন ভাবে কাজ করি তবে এই মাদক সন্ত্রাসকে থামানো বিরাট কিছু নয়। তাই আসুন সকলে এক হয়ে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি। তবেই আমরা পারবো এই মাদক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিরাট একটি জয় আনতে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ