ইসলামী চেতনা বৃদ্ধি, উম্মাহর ঐক্য ও সামরিকশক্তি অর্জন ছাড়া মসজিদে আকসা পুনরুদ্ধার ও ইহুদি আগ্রাসন বন্ধ অসম্ভব
ঈমানী চেতনাকে শাণিত করা গেলে, মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হলে এবং মুসলিম দেশে বৈশ্বিক মানের উন্নততর অস্ত্রশস্ত্র তৈরির কারখানা স্থাপন করতে পারলে একদিনেই মসজিদে আকসা উদ্ধার হয়ে যাবে, অন্যথায় এটা স্বপ্ন থেকে যাবে। মুসলমানদের মাঝে বিভেদের কারণে আজ ইহুদিরা মুসলমানদের প্রাণের নগরী জেরুজালেম দখল করে নিয়েছে। জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী বানিয়ে ফেলেছে। মুসলমানরা যদি ঐক্যবদ্ধ না হয়, সেদিন বেশি দূরে নয় তারা মসজিদে আকসা গুড়িয়ে দেবে এবং কাবাগৃহও দখলের চেষ্টা করবে। মুসলমানরা ইহুদি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে নিজেরা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। এক অপরকে হত্যা করছে। সংকীর্ণতা পরিহার করে দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করতে হবে। দৃষ্টিশক্তি বড় না করলে নেতৃত্ব দেয়া যায় না। মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধের উপলব্ধিকে বেগবান করতে হবে।
আরব দেশসহ গোটা মুসলিম বিশ্বে দু’চারটি ব্যতিক্রম ছাড়া জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নেই। রাজতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক, সামরিক সরকার ক্ষমতায়। জনসম্পৃক্ততার অভাবে এসব সরকার স্বাভাবিকভাবে মেরুদণ্ডহীন, দুর্বল ও ভীতু। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুঠেপুটে খাওয়ার প্রতিযোগিতা সর্বত্র। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য তারা বৈরী ও শত্রুশক্তির সাথে হাত মেলায়। তারা নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে নিজেরা যুদ্ধ করে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত। তাদের কাছে ক্ষমতার মসনদ মুখ্য, ইসলামের প্রতি মায়া, উম্মাহ চেতনা, মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ গৌণ।
দেড় হাজার বছর আগে মহানবী (সা.) ঘোষণা করেন যে,
أَلَا إِنَّ الْقُوَّةَ الرَّمْيُ، مَنْ عَلِمَ الرَّمْيَ، ثُمَّ تَرَكَهُ، فَلَيْسَ مِنَّا
‘জেনে রেখো দূর নিক্ষেপণ হচ্ছে শক্তি। দূর নিক্ষেপণ প্রযুক্তি যে শিখলো, অতঃপর ছেড়ে দিল সে আমার উম্মত নয়।’ [সহীহ মুসলিম, ১৯১৭ ও ১৯১৯]
হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বাণী অত্যন্ত তাৎপর্যবহ। বর্তমান বিশ্বে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র যেসব দেশের আছে, সেসব দেশ সুপার পাওয়ার।
বিশ্বখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন শায়খ ইবনে কাছিরের ভাষ্য মতে রাসুল (সা.) দু’জন সাহাবী গায়লান ইবনে আসলাম ও উরওয়াহ ইবনে মাসউদ রা.কে দামেস্কে পাঠিয়েছিলেন ট্যাংক (দাব্বাবা) কিভাবে বানায়, হাতেকলমে তার প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য। দীর্ঘ দিন প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় হুনায়েনের যুদ্ধে তাঁরা অংশ নিতে পারেননি। সুতরাং উন্নততর অস্ত্র নির্মাণের প্রশিক্ষণ নেয়া সুন্নাতে রাসূলে। এজন্য মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের এগিয়ে আসতে হবে। মুসলমানরা আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র উদ্ভাবন করতে পারলে বিশ্বে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি হতে মোটেই সময় লাগবে না। মুসলমানরা আমেরিকা-ব্রিটেন-ফ্রান্স থেকে অস্ত্র কিনে জেরুজালেম জয় করতে পারবে না, নিজেদেরকে অস্ত্র তৈরি করতে হবে। শত্রুশক্তির আগ্রাসন প্রতিরোধ, অখণ্ডতা ও স্বার্বভৌমত্ব সুসংহতকরণ এবং নিরবচ্ছিন্ন শান্তির জন্য সামরিক শক্তি অর্জন অপরিহার্য। সামরিক শক্তির কারণে ১ কোটি ইহুদি ২০০ কোটি মুসলমানকে পাত্তা দিতে চাচ্ছে না।
এ কথা আমাদের মানতে হবে যে, কেবল সামরিক শক্তি থাকলে বিজয় নিশ্চিত হবে এ কথা সত্য নয়। অবশ্য মুসলমানদেরকে ঈমান ও আমলকে সুদৃঢ় করতে হবে। এটা পূর্বশর্ত। তাই বলে সামরিক শক্তির প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবাগণ আল্লাওয়ালা হওয়া সত্ত্বেও প্রতিটি যুদ্ধাভিযানে অস্ত্র হাতে নিয়েছেন। যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে সিজদাবনত হয়ে আল্লাহ তায়ালার দরবারে প্রার্থনা করেন। মিনজানিক নামক অস্ত্র আবিস্কার করেন। সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালার রহমতের উপর ভরসা করেছেন। আল্লাহ তায়ালার দয়া ও সামরিক শক্তির সমন্বয় ঘটাতে পারলে বিজয় সুনিশ্চিত। ঐতিহাসিক হুনায়েনের যুদ্ধ তার স্পষ্ট প্রমাণ।
আমাদের হতাশ হলে চলবে না। মুসলমানদের সব কিছু আছে। আছে দক্ষ ও অদক্ষ বিপুল মানবসম্পদ। তেল, গ্যাস, স্বর্ণ, রোহা, কয়লা, তামাসহ অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ। একা সৌদি আরব প্রাকৃতিক সম্পদের মজুদের দিক দিয়ে গোটা বিশ্বে দ্বিতীয়। এর পরিমাণ ৩৪.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। তুরস্কের রয়েছে কৃষ্ণসাগর জুড়ে তেল ও গ্যাসের মজুদ।
গোটা দুনিয়ায় মোট ৮০ ভাগ তেল ও গ্যাস, ৬০ ভাগ কয়লা, ৬৫ ভাগ স্বর্ণ, ৭৫ ভাগ রাবার ও পাটের এবং ১০০ ভাগ খেজুরের মজুদ মুসলিম দেশের হাতে। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বসের পরিসংখ্যাণ অনুযায়ী কাতার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ। তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের সুবাদে ১৭ লাখ জনসংখ্যার দেশটি মাথাপিছু আয় ৮৮ হাজার ডলার। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব-আমিরাত ৪৭ হাজার ৫০০ ডলার জিডিপি নিয়ে ষষ্ঠ এবং কুয়েত ছিল ১৫তম অবস্থানে।
কেবল সম্পদ থাকলে হয় না। সম্পদকে ইতিবাচক পন্থায় কাজে লাগাতে হয়। মুসলমানরা যদি আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে প্রযুক্তির সাহায্যে প্রাকৃতিক সম্পদকে নিজেদের স্বার্থে এবং মুসলিম বিশ্বের কল্যাণে কাজে লাগায় এবং সামরিক শক্তি অর্জনে পাশ্চাত্য নির্ভরশীলতা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনতে পারে, সফলতা আসতে দেরি হবে না।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন