অস্তমিত সূর্যের ঝিলিক: আল্লামা মুফতী আমীমুল ইহসান মুজাদ্দেদী বারাকাতী (রহ.)
ড. মোহাম্মদ খলিলুর রহমান
[পূর্ব প্রকাশিতের পর]
১০ সনামধন্য ছাত্রবৃন্দ
মুফতী সাহেবের পাঠে বসে অগণিত লোক উপকৃত হন। দেশ-বিদেশে তাঁর অসংখ্য ছাত্র রয়েছেন। এঁরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নানাভাবে নিয়োজিত আছেন। তাঁর ছাত্রগণ দেশের শীর্ষস্থানীয় আলিম, চিন্তাবিদ, মুহাদ্দিস, মুফাসরির, মুফতী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, রাজনীতিবিদ এবং উচ্চপদস্থ সরকারী আমলা হিসেবে বেশ সুনাম ও সুখ্যাতির সাথে দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত আছেন। নিম্নে বিভিন্ন সম্মানজনক পেশায় নিয়োজিত তাঁর উল্লেখযোগ্য ছাত্রের নামের পরিচিতি দেওয়া গেল। তাঁর উল্লেখযোগ্য ছাত্রগণের নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচিত নিম্নে উল্লেখ করা হলো:[1]
১. ড. এমএ. গফুর (১৯৩১-১৯৯৪) এমএম (কলকাতা), এমএ (ঢাকা), পিএইচ-ডি (হামবুর্গ), প্রাক্তন প্রফেসর, আরবি ও ফার্সি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। কৃতি শিক্ষাবিদ।
২. ড. মুহাম্মদ আবদুল্লাহ (জন্ম ১৯৩২ খ্রি.), এমএম (কলকাতা), এমএ (উর্দু, ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি), পিএইচ-ডি (ঢাকা)। প্রাক্তন প্রফেসর উর্দু ও ফার্সি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথিতযশা গবেষক, সাহিত্যিক ও কৃতি শিক্ষাবিদ।
৩. ড. মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান (জন্ম- ১৯৩৬ খ্রি.), এমএম (ঢাকা), এমএ (আরবি-লাহোর), পিএইচ-ডি (লাহোর)। প্রফেসর, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। উঁচুদরের গবেষক, গ্রন্থকার, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ।
৪. ড. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, এমএম. (ঢাকা), এমএ. (আরবি-ঢাকা), পিএইচ-ডি (লন্ডন)। প্রফেসর, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। উন্নতমানের গবেষক, গ্রন্থকার, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ। বর্তমানে (২০০১ খ্রি.), ভাইস চ্যান্সেলর, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
- ড. এবিএম হাবীবুর রহমান চৌধুরী, এমএম (ঢাকা), এমএ ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি (ঢাকা), পিএইচ-ডি (লন্ডন)। বিশিষ্ট গবেষক, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ।
- মাওলানা মুহাম্মদ আমীনুল ইসলাম এমএম (ঢাকা)। খতীব, লালবাগ শাহী মসজিদ, বিশিষ্ট আলিম, মুফাসসির, ইসলামী গ্রন্থপ্রণেতা, অনুবাদক, ওয়ায়েয ও শিক্ষাবিদ।
- মাওলানা মুফাজ্জল হোসাইন খান, এমএম (ঢাকা), এমএ (ইসলামিক স্টাডিজ, ঢাকা), প্রাক্তন পরিচালক, গবেষণা বিভাগ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-ঢাকা, বিশিষ্ট গবেষক, অনুবাদক, বেতার ও টিভি ভাষ্যকার, মুফাসসির ও শিক্ষাবিদ।
- মাওলানা নযরে ইমাম এমএম (ঢাকা), পীর সাহেব নারিন্দা, ঢাকা।
- মাওলানা মুহীউদ্দীন খান, এমএম (ঢাকা)। সম্পাদক, মাসিক মদীনা, ইসলামী রাজনীতিবিদ, গবেষক, অনুবাদক, বক্তা ও গ্রন্থপ্রণেতা।
- মাওলানা একেএম মাহবুবুল হক এমএম (ঢাকা), প্রাক্তন হেড মাওলানা মাদরাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা।
- মাওলানা আবদুল মান্নান, এমএম (ঢাকা), সভাপতি, বাংলাদেশ জামিআতুল মুদারিরসীন, প্রাক্তন ধর্ম ন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার; মহাপরিচালক ইনকিলাব গ্রুপ অব পাবলিকেশন্স।
- মাওলানা ফরীদুদ্দীন আত্তার, এমএম (ঢাকা), এমএ (ইসলামের ইতিহাস, ঢাকা), খতীব, আমীনবাগ মসজিদ, ঢাকা, অনুবাদক, পুস্তক সম্পাদক, বক্তা ও আলিম।
- মাওলানা সালেম ওয়াহিদী, এমএম (ঢাকা), এমএ (ঢাকা), কাযী সূত্রাপুর, বক্তা ও আলিম।
- মাওলানা লোকমান আহমদ আমীমী, এমএম (ঢাকা), ভাষা সৈনিক (৫২), খতীব, মুহাম্মদ পুর জামে মসজিদ, ধর্মশিক্ষক, ঢাকা রেসিডিনসিয়াল মডেল কলেজ, জীবনীকার, গ্রন্থকার, বক্তা ও আলিম।
- ড. আ. র. ম. আলী হায়দার, এমএফ (ঢাকা), এমএ (ইসলামিক স্টাডিজ-ঢাকা), পিএইচ-ডি (ঢাকা), প্রফেসর, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষক, লিখক, গ্রন্থপ্রণেতা, পীর, কৃতী শিক্ষাবিদ।
- ড. আনওয়ারুল হক খতীবী, এমএম (ঢাকা), ডিপ-ইন উর্দু (ঢাকা), এমএ (ঢাকা), পিএইচ-ডি (চট্টগ্রাম), প্রফেসর, আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষক, অনুবাদ, গ্রন্থ প্রণেতা ও শিক্ষাবিদ।
- প্রফেসর মাওলানা মোহাম্মদ সালাহদ্দীন, এমএম (ঢাকা), প্রধান- তাফসীর বিভাগ, মাদরাসা আলিয়া- ঢাকা, মুফাসসির বক্তা, টিভি ও বেতার ভাষ্যকার ও শিক্ষাবিদ বর্তমান জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমের খতীব।
১১. বৈবাহিক জীবন
মুফতী সাহেব ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মুরশিদ (আধ্যাত্মিক শিক্ষক) সাইয়্যিদ বারাকাত আলী শাহের জ্যেষ্ঠ কন্যা সাইয়েদা মায়মুনার সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। এ স্ত্রীর গর্ভে তাঁর একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তাঁর এ সন্তান খুব অল্প বয়সে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করে। ১৯২৯ সালে প্রথমা স্ত্রী মৃত্যুবরণ করার পর মুফতী সাহেব ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। তাঁর দ্বিতীয়া স্ত্রী সাইয়েদা ফাতিমার গর্ভে এক কন্যা ও এক পুত্র জন্ম লাভ করে। পুত্র সন্তান সাইয়েদ মুনয়িম জন্মের কিছুদিন পর মারা যায়। একমাত্র কন্যা সাইয়েদা আমিনা বয়প্রাপ্তা হন ও তাঁর মৃত্যু অবধি জীবিত ছিলেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে মুফতী সাহেবের দ্বিতীয়া স্ত্রীও ইন্তিকাল করেন। অতঃপর তিনি দ্বিতীয় স্ত্রীর বোন সাইয়েদা খাদিজার পাণি গ্রহণ করে তৃতীয় বার বিয়ে করেন। তাঁর এ বেগম নিঃসন্তান ছিলেন। মুফতী সাহেবের ইন্তিকালের দশ বছর পর ১৯৮৪ সালে তিনি মৃত্যুবরণ হন। মুফতী সাহেব তাঁর একমাত্র জীবিত সন্তান সাইয়েদা আমিনাকে সাইয়েদ মুসলিম নামক এক ভক্তের নিকট বিয়ে দিয়ে নিজ বাড়িতেই রাখেন এবং মৃত্যুর পূর্বে তাঁর নামে নকশেবন্দী মসজিদ, তাসবীহখানা, রচিত কিছু গ্রন্থ ও পাণ্ডুলিপি এবং স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির তত্ত্বাবধানের অধিকার সংরক্ষণ করে যান। তিনি ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে ইন্তিকাল করেন। তাঁর গর্ভে মুসলিম সাহেব শুধুমাত্র একটি কন্যা সন্তান লাভ করেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর উক্ত সম্পত্তি ও মুফতী মনযিল তাঁর তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত আছে। তিনি বিপত্নীক অবস্থায় কন্যা ও জামাতাসহ মুফতী মনযিলে অবস্থান করছেন।
১২. আধ্যাত্মিক জীবন
মুফতী সাহেব স্বর্গীয় সুষমামণ্ডিত এক আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেন। তাঁর পূর্বপুরুষগণ সবাই ছিলেন আধ্যাত্মিক সাধনায় মশগুল, তাই বলা যায় যে, তিনি বংশসূত্রে সুফিমত ও আত্মশুদ্ধির অনুপ্রেরণা লাভ করেন। মুফতী সাহেব সর্বপ্রথম সুফি মতে দীক্ষা লাভ করেন ১২২১ সালে। তাঁর পিতার মুরশিদ আবু মুহাম্মদ বারাকাত আলী শাহ তাঁকে সর্বপ্রথম এ মতে দীক্ষিত করেন। তাঁর তিরোধানের পর ১৯২৬-৩০ খ্রিস্টাব্দে মধ্যবর্তী সময় তিনি পাঞ্জাবের কুন্দিয়ানের পীর মাওলানা সাদ আহমদ শাহের হাতে দ্বিতীয় বার বায়আত হন। তাঁর চাচা সাইয়িদ আবদুদ দাইয়ানের হাতেও তিনি আধ্যাত্মিক দীক্ষা লাভ করেন। এসব দীক্ষাগুরুর নিকট তিনি মুজাদ্দেদিয়া ও নকশেবন্দিয়া সুফি মতে দীক্ষিত হন। তাঁর অনুসৃত সুফিমত সিলসিলা-এখাজেগাঁ নামেও অভিহিত। এ ধারাটি প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাযি.) ও প্রসিদ্ধ সাহাবা সালমান ফারসী (রাযি.) হতে উদগত হয়ে খাজা বাহাউদ্দীন নকশেবন্দী (রহ.) পর্যন্ত পূর্ণতা লাভ করে।
১৩. মুফতী সাহেবের রচনাবলি
আরবি ও উর্দু ভাষায় মুফতি সাহেবের প্রায় ২৫০টি গ্রন্থ রয়েছে। তবে প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা খুব বেশি নয়। কারো কারো মতে তাঁর প্রায় ১৩টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।[2] তবে সর্বশেষ অনুসন্ধানের পর এ পর্যন্ত মোট ২৭টি মুদ্রিত গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া যায়। এ গ্রন্থাবলি সংকলন, গবেষণা ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এই তিন প্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত। ফলে তাঁর রচনাকর্মকে পাণ্ডুলিপি ও প্রকাশিত এই দুভাগে ভাগ করা যায়।
১৩. ১ পাণ্ডুলিপি আকারে
মুফতী সাহেবের অধিকাংশ গ্রন্থই অপ্রকাশিত। এর মাঝে কিছু কিছু পাণ্ডুলিপি তাঁর পারিবারিক লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত রয়েছে। তাঁর মৃত্যু হতে অদ্যাবধি (১৯৭৪-৯৬ খ্রি.) নানা কারণে এ পাণ্ডুলিপিগুলোর বেশির ভাগই খোয়া যায় অথবা নষ্ট হয়ে যায়। ব্যাপক অনুসন্ধানের মাধ্যমে এ পর্যন্ত যেসব পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে তন্মধ্যে কিছু তাৎপর্যপূর্ণ পাণ্ডুলিপি (উপর্যুক্ত প্রধান তিন শ্রেণির আলোকে) নিম্নরূপে আলোচনা করা গেল:
ক. সংকলন গ্রন্থাবলি
মুফতী সাহেবের সংকলিত যেসব পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করা হয়েছে অথবা খোঁজ পাওয়া গেছে সেসবের তালিকা নিম্নরূপ:[3]
১. الخطبات للجمعات (জুমুআর খুতবা),
২. الأربعين فى الصلاة (নামায সংক্রান্ত চল্লিশ হাদীস),
৩. الاشتبشار بمعجزات النبى المختار صلى الله عليه وسلم (মনোনীত নবী (সা.)-এর অলৌকিক কর্মের সুখবর),
৪. العشرة المهدية فى ما ورد فيها الكلمة الطيبة (যেসব বর্ণনায় কালিমা তাইয়েবা উক্ত আছে এমন দশটি হাদীস),
৫. آيات نصر (সাহায্যের নিদর্শনাবলি),
৬. جامع الكلم (অর্থপূর্ণ বাক্যবলির সংগ্রহ),
৭. حسن الخطاب في ما ورد في الخضاب (খিযাবের বিষয়ে বর্ণিত উত্তম ভাষণ),
৮. مناهج السعداء (সৌভাগ্যবানগণের জীবনপদ্ধতি)।
খ. গবেষণা গ্রন্থাবলি
ব্যাপক অনুসন্ধানের মাধ্যমে পাওয়া ও তথ্যলব্ধ মুফতী সাহেবের গবেষণা কর্মের পাণ্ডুলিপিগুলো নিম্নরূপ:
১. প্রাপ্ত গ্রন্থাবলি:[4]
(ক) الاستهلال بمسائل الهلال (নতুন চাঁদ সম্পর্কে মতামত প্রদান),
(খ) علم حديث كے مباديات (হাদীস শাস্ত্রের প্রাথমিক আলোচনা)
(গ) فتوى بركتيه (কল্যাণময় ফাতওয়াসমূহ)।
২. তথ্যলব্ধ গ্রন্থাবলি
(ক) اسماء المدلسين (তাদলীস হাদীস বর্ণনাকারীদের পরিচয়),
(খ) التنبيه للقفيه (ফকীহর জন্য সাবধান বাণী),
(গ) القرة في الكرة (ফুটবল খেলায় প্রশান্তি),
(ঘ) الإيذان والتبشير (ঘোষণা ও সুসংবাদ),
(ঙ) عمدة المجانى (উত্তম চয়নিকা),
(চ) كتاب الواضعين (বানোয়াট হাদীস বর্ণনাকারীদের গ্রন্থ)।
৩. নিখোঁজ, তবে তথ্য
মাধ্যমে শিরোনাম প্রাপ্ত
(ক) آداب المساجد (মসজিদসমূহের আদব),
(খ) الحاوي في ذكر الطحاوي (তাহাবীর স্মরণে),
(গ) المسئلة في قيام عند الحيعلة (হাইয়্যা আলাসসালাত বলার সময় নামাযের জন্য দাঁড়ানো বিষয়ক সমস্যা),
(ঘ) أنفع السير (সুফলপ্রদ জীবন চরিত),
(ঙ) حقيقت اسلام (ইসলামের তাৎপর্য),
(চ) دستور استخراج الأوقات (সময় নির্ধারণ পদ্ধতি),
(ছ) دهوب هري (সৌরঘড়ি),
(জ) رسالة طريقة (তরীকা সম্পর্কীয় পুস্তিকা),
(ঝ) رساله الرتم (লগারিদম পুস্তিকা),
(ট) معلم الميقات (সময় শিক্ষক),
(ঠ) مقدمة النحو (নাহুশাস্ত্রের ভূমিকা),
(ড) نفع عميم (সার্বজনীন কল্যাণ),
(ণ) بضاعة الفقير।
৪. ব্যাখ্যা বিশ্লষণমূলক গ্রন্থাবলি
মুফতী সাহেব কিছু মূল্যবান (ইসলামী জ্ঞান বিষয়ক) গ্রন্থের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও টীকা-টিপ্পনী রচনা করেন। তাঁর এ ব্যাখ্যা ও টীকা-টিপ্পনীগুলো পরবর্তী সময় খুবই উপাদেয় প্রমাণিত হয়েছে। নিম্নে এরূপ কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাখ্যা ও টীকা-টিপ্পনী গ্রন্থের তালিকা ও পরিচিতি দেওয়া হলো:[5]
১. الإحسان الساري بتوضيح تفسير البخاري (তাফসীর সাহিত্যে আল-বুখারী গ্রন্থের মনোরম ব্যাখ্যা),
২. الإفصاح عن نور الإيضاح (নূরুল ইযাহের বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা),
৩. نخريج مسائل المجلة (আল-মাজাল্লার মাসআলাসমূহের উৎস নিম্নরূপ),
৪. تلخيص مراسيل أبي حاتم (আবু হাতিমের মারাসিল গ্রন্থের সার সংক্ষেপ),
৫. شرح آداب المفتي (আদাবুল মুফতীর ব্যাখ্যা),
৬. شرح تحفة بركتيه (তুহফাহ বারাকাতিয়ার ব্যাখ্যা),
৭. اتحاف الأشراف (শ্রেষ্ঠ উপঢৌকন),
৮. حواشي السعدي (সৌভাগ্যের প্রান্ত ভাগসমূহ),
৯. شكوة وجواب شكوة (শিকওয়া ও জাওয়াবে শিকওয়ার ব্যাখ্যা),
১০. مقدمة سنن (সুনানে আবু দাউদের ভূমিকা)।
এর মধ্যে অনুসন্ধানের পর ২য় পাণ্ডুলিপির উদ্ধার করা সম্ভব হয় এবং অবশিষ্ট পাণ্ডুলিপিগুলোর শিরোনাম বিভিন্ন তথ্যমাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে।৫৪ নিম্নে প্রাপ্ত পাণ্ডুলিপিটির পরিচিত পেশ করা হলো:
৫. মৌলিক কর্ম
মুফতী সাহেবের মুদ্রিত ও প্রকাশিত মৌলিক কর্মগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো:[6]
১) آداب المفتي (মুফতীর পালনীয় রীতি-নীতি),
২) أوجز السير (সীরাত কণিকা),
৩) التشرف لأداب التصوف (সুফিতত্ত্বের প্রশংনীয় রীতি-নীতি),
৪) التنصيد في التجويد (তাজভীদের সুন্দর প্রকাশ),
৫) التنوير في أصول التفسير (তাফসীরশাস্ত্রের মূলনীতিবিষয়ক পুস্তক),
৬) تاريخ إسلام (ইসলামের ইতিহাস),
৭) تاريخ علم حديث (হাদীসশাস্ত্রের ইতিহাস),
৮) تاريخ علم فقه (ফিকহশাস্ত্রের ইতিকথা),
৯) راج منير ميلاد نامه (দীপ্তিমান আলোকবর্তিকার জন্মকাহিনী),
১০) طريقة حج (হজ্জের নিয়ম-পদ্ধতি),
১১) لب الأصول (মূলনীতিসমূহের সংক্ষিপ্তসার),
১২) مشق فرائض (ফারাইয অনুশীলন),
১৩) منة الباري (সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ),
১৪) ميزان الأخبار (হাদীসসমূহের মানদণ্ড),
১৫) نظام الأوقات (সময়ের প্রচলিত রীতি-নীতি),
১৬) وصيت نامه (অন্তিম উপদেশ পত্র),
১৭) هداية المصلين (নামাযীদের পথনির্দেশ)।
মুফতী সাহেবের পরলোক গমন
রূহানিয়্যাতের প্রোজ্জ্বল নক্ষত্র, জ্ঞানসমুদ্রের এ মহান ব্যক্তিত্ব পরিশেষে বহুমুখী সেবার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে ঢাকা শহরের কলুটোলাস্থনিজ গৃহে ১০ শওয়াল, ১৩৯৪ হি./২৭ অক্টোবর, ১৯৭৪ খ্রি. রফীকে আলার সান্নিধ্যে গমন করেন। মৃত্যুকালে তিনি তিন পুত্র, তিন কন্যা ও লক্ষ লক্ষ ভক্ত-অনুরক্ত, গুণগ্রাহী ও শিক্ষার্থী রেখে যান এবং কলুটোলা মসজিদের দক্ষিণ পার্শ্বে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।
লেখক: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও উপাধ্যক্ষ, ফয়জুলবারী ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসা, কর্ণফুলী, চট্টগ্রাম
[1] আবুল কাশেম ভূঞা, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৮৬
[2] ড. এএফএম আমীমুল হক, প্রাগুক্ত, পৃ. ৭১
[3] (ক) ড. এএফএম আমীমুল হক, প্রাগুক্ত, পৃ. ৯৭; (খ) সম্পাদনা পরিষদ, ইসলামী বিশ্বকোষ, (ঢাকা: ইফাবা প্রথম সংস্করণ ১৯৮৬), খ. ২, পৃ. ৪৬১
[4] ড. এএফএম আমীমুল হক, প্রাগুক্ত, পৃ. 111-112
[5] ড. এএফএম আমীমুল হক, প্রাগুক্ত, পৃ. 127
[6] ড. এএফএম আমীমুল হক, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৬৪-১৬৫