বুধবার-২১শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি-২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সমস্যা-সমাধান

সমস্যা-সমাধান ফতওয়া বিভাগ- আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া,চট্টগ্রাম

সমস্যা: যে সকল নাপাকি কাপড়ে লাগার পর শুকিয়ে গেলে দেখা যায় না, যেমনÑ প্রস্রাব সেগুলো পবিত্র করার পদ্ধতি কী? যদি কেউ পুকুরের পানিতে অথবা কলের পানিতে ভালভাবে নাড়াচাড়া করে একবার নিঙড়িয়ে নেয় এবং সে নিশ্চিত হয় যে, একবারেই নাপাকি দূর হয়ে গেছে, তাহলে তা পবিত্র হবে কি না?

মুহাম্মদ আবদুল্লাহ

চকরিয়া, কক্সবাজার

শরয়ী সমাধান: যে সকল নাপাকি কাপড়ে লাগার পর শুকিয়ে গেলে দেখা যায় না, যেমন প্রস্রাব ইত্যাদি সেগুলো থেকে পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি হল, ওই কাপড় তিনবার ধুইয়ে প্রত্যেক বার নিঙড়িয়ে নেবে। তবে অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরামের রায় হল, একবার ভালোভাবে ধোয়ার দ্বারা যদি নাপাকি দূর হয়ে যাওয়ার প্রবল ধারণা হয়, তখন তা পাক হয়ে যাবে। সুতরাং উল্লিখিত পদ্ধতিতে কাপড় পবিত্র হয়ে যাবে। তবে সতর্কতা হল, তিনবার ধোয়া এবং প্রত্যেকবার নিঙড়িয়ে নেওয়া। সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৬৫; কিফায়া ১/১৮৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪২

 

সমস্যা: আমরা জানি, শরীরে এমন কিছু লাগা যার কারণে চামড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছায় না তার দ্বারা অযু গোসল শুদ্ধ হয় না। বর্তমান মেয়েরা হাত-পায়ের নখে যে নেইলপালিশ ব্যবহার করে, তার কারণে অযু-গোসল শুদ্ধ হবে কি না? এবং বর্তমান বাজারে বিভিন্ন কেমিক্যালমিশ্রিত মেহেদি পাওয়া যায় যা ব্যবহারের দুয়েকদিন পর পাতলা আবরণ উঠতে দেখা যায়, এ ধরনের মেহেদি ব্যবহার করলে অযু-গোসল শুদ্ধ হবে কি না?

জুনাইদুল হক

সেনের হাট, সাতকানিয়া

শরয়ী সমাধান: ইসলামি শরীয়তে মেয়েদের সাজসজ্জার অনুমতি রয়েছে। তবে এমন সাজসজ্জা করা হারাম যা শরয়ী ফরায়েয পালনের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। তাই মেয়েদের জন্য নেইলপালিশ ইত্যাদি ব্যবহার করা সম্পূর্ণ হারাম। তা সত্ত্বেও যদি কোনো মেয়ে তা ব্যবহার করে, তাহলে অযু-গোসলের পূর্বে অবশ্যই তা উঠিয়ে নিতে হবে। কারণ তা পানি শরীরে পৌঁছাতে বাধা প্রদান করে। মেহেদি পাতা দ্বার তৈরিকৃত মেহেদি ব্যবহার করা শরীয়তকর্তৃক প্রবর্তিত। তাই তা ব্যবহার করা উত্তম। আর বর্তমান কেমিক্যালযুক্ত যে সমস্ত মেহেদি পাওয়া যায়, তা ব্যবহার করা বৈধ এবং অযু-গোসল শুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ, এগুলো শরীরে পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে বাধা হয় না। এক্ষেত্রে যে চামড়া উঠতে দেখা যায়, তা মেহেদির আবরণ নয়, বরং ওই মেহেদিতে অতিমাত্রায় অ্যাসিড ইত্যাদি থাকার কারণে হাত-পায়ের চামড়া উঠে যায়।  তাতারখানিয়া ১/২০০; আল-মুহীতুল বুরহানী ১/৮৬; আহসানুল ফাতাওয়া ২/২৬

 

সমস্যা: আমরা জানি, গোসলের পূর্বে অযু করা সুন্নাত। কিন্তু সাধারণ জনগণ গোসলের পর অযু করে থাকে। একজন আলেম বলেছেন, গোসলের পর অযু করা বিদআত। তাই আমার জানার বিষয় হল, কোনো ব্যক্তি যদি গোসলের পর নাপাক কাপড় ধোয়ার কারণে সতর্কতামূলক অযু করে, তা বিদআত হবে কি না?

ওয়ায়েজুদ্দীন

কুতুবদিয়া, কক্সবাজার

শরয়ী সমাধান: সর্বসম্মতিক্রমে গোসলের পূর্বে অযু করা সুন্নাত। কেননা, রাসূল সা. গোসলের পূর্বে অযু করতেন। কিন্তু গোসলের পর রাসূল (সা.) কখনো অযু করেননি। তাই গোসলের পর অযু করার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে কেউ যদি সুন্নাত বা আবশ্যকীয় মনে না করে কখনো গোসলের পর অযু করে, তখন তা বিদআত হবে না। তাই নাপার কাপড়চোপড় ধোয়ার কারণে সন্দেহযুক্ত জায়গা ধুয়ে ফেললে যথেষ্ট হবে। পুনরায় অযু করার প্রয়োজন নেই। ফাতাওয়া শামী ১/২৯৩; আল বাহরুর রায়েক ১/৯৩; ফাতাওয়া উসমানী ১/৩৪৮

 

সমস্যা: আমি একজন সওদাগর। দোকানের বেচাকেনার ব্যস্ততায় অনেক সময় জামাতে আসতে দেরি হয়ে যায়। তাই প্রায় নামাযে মাসবুক হতে হয়। এখন আমার জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় ইমাম যখন শেষ বৈঠকে থাকেন, তখন আমি কী কী দোয়া পড়ব? শুধু তাশাহুদ পড়ব, না দরূদ শরীফ আর দোয়ায়ে মাসুরাও পড়ব?

মামুনুর রশীদ

খৈয়াছড়া, মিরসরাই

শরয়ী সমাধান: ইসলামি শরীয়তে ঈমানের পর নামাযের স্থান, তাই সবসময় খেয়াল রাখতে হবে, আপনার কোনো ধরনের ব্যস্ততা যেন নামাযে গাফলতির কারণ না হয়। তারপরও যদি কখনো আপনি মাসবুক হয়ে যান, তখন ইমাম সাহেবের শেষ বৈঠকে আপনি শুধু তাশাহুদ পড়বেন। দরূদ এবং দোয়ায়ে মাসুরা পড়বেন না। এক্ষেত্রে তাশাহুদকে খুব ধীরে ধীরে পড়া বা তাশাহুদ কয়েকবার পড়া উত্তম। অবশ্য একবার পড়ে চুপ করে থাকলেও কোনো অসুবিধা নেই। ফাতাওয়া শামী ২/২২০; খুলাছাতুল ফাতাওয়া ১/১৬৫; ফাতওয়া দারুল উলুম দেউবন্দ ৩/২৫২

 

সমস্যা: গর্ভধারণের পর অসম্পূর্ণ বাচ্চা প্রসব করলে বা কোনো সমস্যার কারণে মাংসপি- বেরিয়ে আসলে বা গর্ভধারণের দুই-তিন মাসের মাথায় গজ করার মাধ্যমে গর্ভের বস্তুগুলোকে বের করে ফেলা হয়। উল্লেখিত অবস্থাগুলোতে পরবর্তী সময়ে যে রক্ত বের হয়, তাকে নেফাস বলা হবে কি না? রক্ত বের হওয়াকালীন তার নামায-রোযার বিধান কী হবে?

মুহাম্মদ মিযান

ধানমন্ডি, ঢাকা

শরয়ী সমাধান: ইসলামি শরীয়তে চার মাস বা ১২০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর গর্ভপাত ঘটানো জায়েয নেই। চার মাস পূর্বেও একান্ত প্রয়োজনীয়তা ছাড়া তা করা বৈধ নয়। তা সত্ত্বেও যদি কেউ করে ফেলে, তার হুকুম হল, যদি মহিলা গর্ভধারণের পর অসম্পূর্ণ বাচ্চা প্রসব করে বা কোনো সমস্যার কারণে মাংসের টুকরার ন্যায় কিছু বেরিয়ে আসে, এমতাবস্থায় তারপর যে রক্ত বের হয়, তা নেফাস হিসেবে গণ্য হবে না। যদি তা ধারাবাহিক তিন দিন বা তার অধিক আসে, তাহলে হায়েযের রক্ত বলে গণ্য হবে। অন্যথায় ইস্তেহাযা (রোগ) বলে গণ্য হবে। যদি গর্ভধারণের দুই-তিন মাসের মাথায় গজ করার মাধ্যমে গর্ভের বস্তুগুলো বের করে ফেলা হয়, তার মধ্যে যদি হাত, পা, নখ প্রভৃতি মানবের কোনো অঙ্গ তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে এরপর বের হওয়া রক্তগুলো নেফাস বলে গণ্য করা হবে। হায়েয ও নেফাসের সময় নামায-রোযার বিধান হল, নামায পড়া যাবে না, পরবর্তী সময়ে কাযাও করতে হবে না। আর রোযা রাখা যাবে না, তবে পরবর্তী সময়ে তা কাযা করে দিতে হবে। সূরা তাকভীর ৭-৮; সহীহ বুখারী ১/৪৫; মাবসূতে সারাখসী ১/২২৪; ফাতহুল কাদীর ১/১৬৫; আহসানুল ফাতাওয়া ২/৭১

সমস্যা: এ বছর ইজতেমার ময়দানে আমি জুমার নামায আদায় করার জন্য গিয়েছিলাম। মানুষের অতিরিক্ত ভিড় হওয়ার কারণে মাঠ পর্যন্ত পৌঁছা সম্ভব হয়নি। যার ফলে অনেকেই রাস্তার দাঁড়িয়ে জামাতে শরিক হয়। সেখানে দেখলাম, অনেকে দৈনিক পত্রিকার ওপর নামায আদায় করেছে। বর্তমান আমাদের দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলো এমন যে, কোনো পৃষ্ঠা ছবিবিহীন থাকে না। এখন প্রশ্ন হল, ছবিসংশ্লিষ্ট পত্রিকার ওপর নামায পড়লে নামায আদায় হবে কি না?

ইযাযুল হক

২ নং গেইট, চট্টগ্রাম

শরয়ী সমাধান: যে কোনো ধরনের জীবজন্তুর ছবিবিশিষ্ট জিনিসের ওপর নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী। তবে ছবিগুলো যদি এত ছোট হয় যে, দাঁড়ানো অবস্থায় তা সুস্পষ্টভাবে দেখা যায় না। অথবা ছবির ওপর পা রেখে নামায আদায় করলে মাকরূহ হবে না। তাই প্রশ্নে উল্লেখিত অবস্থায় যারা ইজতেমার ময়দানে মানুষের অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে জায়গা না পেয়ে রাস্তার ওপর ছবিসংবলিত পত্রিকার ওপর নামায পড়েছে, তাদের নামায কারাহাতের সাথে আদায় হয়ে যাবে। দৈনিক পত্রিকাসহ যে কোনো কাগজের ওপর পা দিয়ে দাঁড়ানো জায়েয নেই। কারণ এটা ইলমের সাথে বেয়াদবি। তাই তা থেকে সর্বাবস্থায় বাঁচতে হবে। সহীহ বুখারী ১/৫৪; মাবসূতে সারাখসী ১/২৭৪; ফাতহুল কাদীর ১/৩৬২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৬৬; আহসানুল ফাতাওয়া ৩/৪২৭

 

সমস্যা: কোনো মুসলমান সামনে পড়লে আমি সালাম দেওয়ার চেষ্টা করি। অনেক সময় এমন হয় যে, একসাথে দুইজনই সালাম দিয়ে দেয়। এমতাবস্থায় সালামের জবাব কে দেবে? কীভাবে দেবে?

শেখ তারেক

টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ

শরয়ী সমাধান: এমন হলে উভয়জন ‘ওয়ালাইকুমুস সালাম’ বলে সালামের জবাব দেবে। রদ্দুল মুহতার ৬/৪১৬; আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল ৮/১৫৮

 

সমস্যা: আমি একজন মাদরাসার ছাত্র। গ্রামের সকল ছেলেমেয়ে আমাকে শ্রদ্ধা করে। তাই রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় স্কুলের সাবালিকা মেয়েরাও আমাকে সালাম করে। আমি তাদের সালামের জবাব দিতে পারব কি না?

আশিক ইলাহী

পালংখালী, উখিয়া

শরয়ী সমাধান: বেগানা যুবতি মেয়েরা সালাম দিলে মনে মনে সালামের জবাব দিবেন। বড় আওয়াজে জবাব দেওয়া জায়েয নেই। ফাতাওয়া শামী ৬/৩৬৯; আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল ৮/১৬১

 

সমস্যা: আমাদের গ্রামে জানাযার নামাযের সালাম ফেরানোর পর সূরা ফাতিহা, দরূদ শরীফ ইত্যাদি পড়ে রাসূল (সা.), চার খলীফা (রাযি.) এবং উপস্থিত মৃতের প্রতি ঈসালে সওয়াব করা হয় এবং মোনাজাত করা হয়। এটা শরীয়তসম্মত কি না?

আবদুল আযীয

হাইদগাঁও, পটিয়া

শরয়ী সমাধান: ইসলামি শরীয়তে জানাযার নামাযের পর অন্য কোনো দোয়া নেই। সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত পদ্ধতি সম্পূর্ণ বিদআত। জানাযার নামাযের পর মৃতব্যক্তিকে দ্রুত দাফন করতে হবে। মিরকাত ২/৩২৯; ফাতাওয়া দারুল উলুম দেউবন্দ ৫/২০১

 

সমস্যা: আমাদের গ্রামে এক মহিলার জানাযা নামায অনুষ্ঠিত হয়। ভুলে লাশকে ইমামের সামনে দক্ষিণমুখী করে মাথা রাখা হয়। জানাযার ওপর মোটা চাদর থাকায় কেউ তা টের পায়নি। এভাবে জানাযার নামায পড়া হয়। পরে দেখা গেল, মরদেহ উল্টোমুখী করে রাখা হয়েছে। তখন স্থানীয় নেতৃস্থানীয় একজন পুনরায় জানাযা পড়াতে বললে মসজিদের ইমাম সাহেব বললেন, সুন্নাতের খেলাফ হলেও জানাযার নামায শুদ্ধ হয়ে গেছে। এখন জানতে চাই, ইমাম সাহেবের কথা শুদ্ধ কি না? উক্ত নামাযে জানাযা সহীহ হয়েছে কি না?

আমীমুল করীম

রাজস্থলী, চট্টগ্রাম

শরয়ী সমাধান: হ্যাঁ, ইমাম সাহেবের কথা ঠিক আছে। লাশ উল্টো রাখার কারণে সুন্নাতের খেলাফ হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে লাশ যেহেতু ইমামের সামনেই ছিল তাই নামায সহীহ হয়ে গেছে। উল্লেখ্য যে, জানাযার নামায শুরু হওয়ার পূর্বে ইমামের কর্তব্য হল, লাশ সঠিকভাবে সুন্নাত পদ্ধতিতে রাখা হয়েছে কি না তা দেখে নেয়া। মাবসূতে সারাখসী ২/৬৮; শরহুল মুনয়া পৃ: ৫৮৮; আদ-দুররুল মুখতার ২/২০৯

 

সমস্যা: গ্রামে মহিলারা শুকনো কাঠ বা কঞ্চির ওপর গোবর লেপ্টে এক ধরনের লাকড়ি তৈরি করে, সেগুলো দিয়ে রুটিও সেঁক দেয়, তখন রুটির সাথে গোবরের ছাই লাগে। এখন আমার প্রশ্ন হল, ওই রুটিগুলো খাওয়া যাবে কি না?

মুহিব্বুল্লাহ

কুটাপাড়া, বি-বাড়িয়া

শরয়ী সমাধান: ফুকাহায়ে কেরাম উম্মাতের সহজীকরণের জন্য এ ধরনের গোবরের ছাইকে পবিত্র বলেছেন। গোবরের ছাই রুটিতে লাগলেও তাতে কোনো অসুবিধা নেই। আল-আশবাহু ওয়ান নাযায়ের পৃ: ২২৯; তাতারখানিয়া ১/৪৬১; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ৮/২৫৮

 

সমস্যা: ক. পাগড়ি কোন রঙের হওয়া উত্তম? খ. পাগড়ি কোন নিয়মে পরা উত্তম? গ. পাগড়ির দৈর্ঘ্য কতটুকু হতে হবে? অনেককে দেখা যায় যে, রুমাল দিয়ে পাগড়ি বাঁধে। তা দ্বারা সুন্নত আদায় হবে কি না? ঘ. পাগড়ি বেঁধে নামায আদায় করার বিশেষ ফজিলত আছে কি না? এবং সবসময় পাগড়ি পরিধান করার হুকুম কী?

শরয়ী সমাধান: ক. রাসূল (সা.) বিভিন্ন রঙের পাগড়ি পরিধান করেছেন। কিছু হাদিসে কালা পাগড়ির কথা এসেছে। আবার কিছু হাদিসে সাদা, লাল, নীল, সবুজ, হলুদ প্রভৃতি রঙের কথাও বর্ণিত হয়েছে। তবে রাসূল (সা.) সাদা রঙের পাগড়ি সবসময় পছন্দ করতেন। কেননা নবী করিম (সা.) একবার আবদুর রহমান ইবনে আউফের মাথা থেকে কালা পাগড়ি খুলে স্বহস্তে সাদা পাগড়ি পরিয়ে দেন। এটার প্রশংসাও করেছেন। এছাড়াও অন্য হাদিসের মধ্যে নবী করিম সা. সাদা পাগড়ির প্রশংসা করেছেন। তাই সাদা পাগড়ি পরিধান করা উত্তম হবে বলে আশা করা যায়। খ. হাদিসের মধ্যে পাগড়ি বিভিন্নভাবে বাঁধার কথা পাওয়া যায়। এক: সম্পূর্ণ পাগড়ি মাথার ওপর প্যাঁচিয়ে প্যাচিয়ে বাঁধা। পিছনে কোন ধরনের ঝুল না রাখা এবং টুপির ওপর বাঁধা। দুই: পিছনে ঝুল রাখবে। তবে পরিমাণ সম্পর্কে চার আঙ্গুল, এক বিঘত, এবং এক হাতের বর্ণনা পাওয়া যায়। অতএব ঝুলের মধ্যে কোন একটা অবলম্বন করা যাবে। আর ঝুলের দুই কাঁধের মাঝখানে পিঠের ওপরে ছেড়ে দিবে। অথবা ডান ক্াধে সামনের দিকে ছেড়ে দিবে। তবে মাথার মাঝখান ঢাকা না ঢাকার ব্যাপারে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। কিন্তু ফকিগণ পাগড়ি দিয়ে মাথার মাঝখানটা ঢাকার কথা বলেছেন।

গ. হাদিস এবং আসারের মধ্যে পাওয়া যায় যে, রাসূল (সা.)-এর পাগড়ি সাতহাত, তিনহাত, বারহাত ছিল। পাগড়ির জন্য কোন নির্দিষ্ট কাপড় নেই, তাই রুমাল দ্বারা পাগড়ি বাঁধা জায়েয আছে। এতে পাগড়ির সুন্নত আদায় হবে।

ঘ. পাগড়ি সবসময় পরিধান করা সুন্নত। বিশেষত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়। অতএব, কেউ যদি পাগড়ি পরিধান করে নামায আদায় করে তাহলে সে রাসূলের আনুগত্যের কারণে বিশেষ সাওয়াবের অধিকারী হবে। তবে পাগড়ি পরিধান করে নামায আদায় করলে ফজিলতের ব্যাপারে যে হাদিসসমূহ রয়েছে,তা জাল এবং বানোয়াট। তা দ্বারা ফজিলত প্রমাণ করা যাবে না। আর জুমার নামাজে পাগড়ি পরার কথা যেহেতু হাদিসে রয়েছে, তাই পাগড়ি পরে জুমা আদায় করলে সে বিশেষ ফজিলতের অধিকারী হবে। শামায়েলে তিরমিযী পৃ: ৫; শামায়েলে মুহাম্মদিয়্যাহ হাদীস: ১১৫; শুয়াবুল ঈমান হাদীস: ৫৮৫৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা হাদীস: ২৫৪৫৫

 

সমস্যা: আমাদের দেশে বাচ্চারা কথা বলতে শিখলেই তাদেরকে সাক্ষাত ও বিদায়ের সময় সালামের পরিবর্তে টাটা, বাই বাই, গুড মর্নিং, গুড আফটারনুন ইত্যাদি শব্দ শিখানো হয়। এমনকি বড়রাও এ শব্দগুলো ব্যবহার করে থাকে। শরীয়তে এ শব্দগুলোর ব্যবহারের বিধান কী?

শরয়ী সমাধান: সাক্ষাত এবং বিদায়ে উপরোক্ত শব্দগুলো ব্যবহার করা বিজাতিদের সভ্যতা। আর রাসূল (সা.) বিজাতিদের সভ্যতা অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। কেননা রাসূল (সা.)-এর পূর্বে আরবরা সাক্ষাতে

أَنْعَمَ اللهُ بِكَ عَيْنًا، وَأَنْعِمْ صَبَاحًا ইত্যাদি বলত। কিন্তু নবী করীম (সা.) সেটা থেকে সাহাবাদের নিষেধ করেছেন। বরং সালামের শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং উল্লেখিত শব্দগুলো বিজাতিদের সংস্কৃতি হওয়ার কারণে বলা যাবে না। সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৮৮২; মাজমাউয যাউয়ায়েদ, হাদীস ২/৩০; মাসায়েলে মুহিম্মাহ ১/১৬২

 

সমস্যা: আমাদের দেশে সন্তান জন্মের পর তাকে নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। যাতে তার আত্মীয়-স্বজন অংশগ্রহণ করে থাকে এবং তাকে বিভিন্ন প্রকারের হাদিয়া ও উপঢৌকন দিয়ে থাকে। যার মধ্যে টাকা-পয়সা ও অন্যান্য সামগ্রী থাকে। এগুলো সন্তানের পিতা-মাতার জন্য ব্যবহার করা বৈধ হবে?

শরয়ী সমাধান: সন্তানদেরকে বিভিন্ন সময় যে সমস্ত জিনিস হাদিয়া বা উপঢৌকন হিসাবে দেওয়া হয়, তা যদি খাদ্যদ্রব্য হয়, তাহলে পিতা-মাতার জন্য সেখান থেকে খাওয়া জায়েয আছে। আর খাদ্যদ্রব্য না হলে, শুধু প্রয়োজনের খাতিরে ব্যবহার করতে পারবে। তবে পিতা যদি সন্তানের খতনা উপলক্ষে কিছু আয়োজন করে, সেখানে যদি মানুষ কিছু হাদিয় পেশ করে, এবং সেগুলো যদি পিতা-মাতার হাতে দেয়, তখন দেখতে হবে, হাদিয়াগুলো সন্তানের ব্যবহারের উপযোগী কি না? যদি উপযোগি হয়, তাহলে সেগুলো বাচ্ছার জন্য। আর যদি টাকা অথবা এমন বস্তু হয়, যা বাচ্ছার জন্য উপযোগী নয়, তখন যদি পিতার আত্মীয়-স্বজন দিয়ে থাকে, তাহলে পিতার জন্য হবে। আর যদি মাতার আত্মীয়স্বজন দিয়ে থাকে, তাহলে মাতার জন্য হবে। হাদিয়াদাতা কিছু বলুক বা না বলুক। মাজমাউল আনহুর ৩/৪৯৭; খুলাছাতুল ফাতাওয়া ৪/৪০০; ফাতাওয়া শামী ৮/৫০০

 

বিভাগীয় নোটিশ

দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো সমস্যার শরয়ী সমাধান জানতে আল-জামিয়া আল- ইসলামিয়া পটিয়ার ফতওয়া বিভাগে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। এজন্য সরাসরি যোগাযোগ বা বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট ফোনে যোগাযোগ করুন। প্রশ্ন পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল বা ফেসবুক ফ্যান-পেইজেও।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ