রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জটিলতা
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় ইতোমধ্যে ৮ হাজার ৩২জনের একটি তালিকা মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লে. জেনারেল কিয়াও সোয়ে-এর হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। তালিকা যাচাই বাছাইয়ের কথা বলা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সময়ক্ষেপণের কৌশল অবলম্বন করছেন। ইতোমধ্যে আরাকানে অব্যাহত নির্যাতন ও অস্থির পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গাদের ঢল বাংলাদেশে আসা অব্যাহত রয়েছে। এপারে আসার জন্য নাইক্ষংছড়ি থানার শুণ্য রেখায় (নোম্যান্স ল্যান্ডে) অপেক্ষায় আছে আরো ৭ হাজার রোহিঙ্গা।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৯০ শতাংশ রোহিঙ্গা পৈত্রিক বাস্তুভিটা হারিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। বর্তমানে আরাকানে মাত্র ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৭৯ হাজার ৩৮জন রোহিংঙ্গা রয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা এসেছে ৪ লাখ। ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে এ পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছে আরো ৭ লাখ। সবমিলিয়ে মোট ১১ লাখ কক্সবাজারের ৫ হাজার একর বনভূমিতে ১২টি অস্থায়ী ক্যাম্পে ১ লাখ ৬৫ হাজার ঝুপড়ি নির্মান করে বসবাস করছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের সহায়তায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, ওষুধ ও চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। দেশের আলিমসমাজও ত্রাণবিতরণ ও অন্যান্য মানবিক সেবা কার্যক্রমে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে আছে, যারা স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে চাইবে তাদেরই মিয়ানমারে ফেরৎ পাাঠানো হবে। কিন্তু আশ্রয় শিবির ঘুরে আসা সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা যায় কোন রোহিঙ্গা অরক্ষিত ও অনিশ্চিত অবস্থায় স্বদেশের বধ্যভূমিতে ফিরে যেতে আগ্রহী নন। তাঁদের অবস্থান পরিষ্কার। ২০১২ সালে চুক্তির আওতায় যাঁরা ফিরে গেছেন তাঁরা এখনো আশ্রয় শিবিরে দিনাতিপাত করছেন; নিজ ভিটায় ফিরতে পারেননি। প্রত্যাবাসনের পূর্বে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেনায় রাখা প্রয়োজন।
(ক) রোহিঙ্গাদের নিজ ভিটায় পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
(খ) নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
(গ) জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
(ঘ) ভিটা-বাড়ি, গবাদী পশু, দোকান-পাট, ব্যবসা-বাণিজ্য ও ফসলাদি যেগুলো পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
(ঙ) কসভোর মত জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আরাকানকে নিরাপদ অঞ্চল (ঝধভব তড়হব) ঘোষণা করতে হবে।
(চ) হত্যাকাণ্ডের আন্তর্জাতিক তদন্ত এবং দোষীদের মানবতাবিরোধী অপরাধে শাস্তি বিধান করতে হবে।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ ক্যাম্প থেকে নিয়ে আরাকানের আশ্রয় ক্যাম্পে রাখা সমাধান নয়। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সাথে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাকে (টঘঐঈজ) যুক্ত করা একান্ত জরুরি।
মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির কূটনৈতিক প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে। ইতোমধ্যে আরাকানের বিভিন্ন স্থানে ৫টি গণকবর আবিস্কৃত হয়েছে। প্রতিটি কবরে রয়েছে ২৫০টি লাশ। এ পর্যন্ত সাংবাদিক ও জাতিসংঘসহ কোন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আরাকানে ঢুকতে দেয়া হয়নি। প্রবেশাধিকার দিলে এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিলে জাতিনিধনযজ্ঞের নৃশংস ও ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠবে।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন