জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন: সেক্যুলারদের আহাজারিতে নতুন বছর শুরু!

মাসিক আত তাওহীদ- সংখ্যা: ফেব্রুয়ারি ২০১৮

পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন: সেক্যুলারদের আহাজারিতে নতুন বছর শুরু!

তারেকুল ইসলাম

বাংলা ট্রিবিউন গত ১ ও ৪ জানুয়ারী ধারাবাহিক দুটো রিপোর্ট করেছে। রিপোর্ট দু’টোর শিরোনাম যথাক্রমে: ‘পাঠ্যবইয়ে হেফাজতের দাবি অক্ষুণ, ভুলত্রুটি সংশোধন’ এবং ‘পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন: স্বেচ্ছায়, না চাপে, নেই কোনও ব্যাখ্যা’।

রিপোর্ট দুটো পড়ে বুঝলাম, নতুন বছরটা হেফাজতের কাছে সেক্যুলারদের পরাজয় দিয়ে শুরু হয়েছে। রিপোর্টজুড়ে সেক্যুলারদের আহাজারি ও হাহাকার—কেন পাঠ্যবইয়ে ‘হেফাজতিকরণ’ এ বছরও বহাল থাকলো!!

এই ইস্যুতে অনেকদিন ধরে সেক্যুলার প্রগতিশীলরা হাউমাউ করে কান্নাকাটি করেছে। অথচ হেফাজত তো নিজের পছন্দের নতুন কোনো রচনা পাঠ্যবইয়ে সংযোজনের প্রেসক্রিপশন দেয়নি, বরং পাঠ্যবইকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি তুলেছিল মাত্র। এর বেশি কিছু নয়। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার জিগির তুলে সেক্যুলাররাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই ইস্যুটিকে অতিরঞ্জিত করেছে।

অথচ যখন জাতীয় পাঠ্যবইয়ের হিন্দুত্বায়ন করা হলো, তখন কি সেটা সাম্প্রদায়িক হয়নি? দেশের ওলামায়ে কেরাম এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ তৌহিদি জনগণ পাঠ্যবইয়ের হিন্দুত্বায়ন বা হিন্দুত্বকরণ ঠেকিয়ে দিয়েছে বলেই ইসলামবিদ্বেষী সেক্যুলার মৌলবাদীদের গায়ে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি হয়েছে।

প্রথম রিপোর্টে লেখা হয়েছে, ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবই থেকে প্রগতিশীল লেখকদের পদ্য ও গদ্য বাদ দিয়ে অন্য লেখকদের পদ্য ও গদ্য যুক্ত করা হয়।’ (১ জানুয়ারি)

কিন্তু ‘প্রগতিশীল লেখক’ আর ‘অন্য লেখক’—এ দুইয়ের মধ্যে এমন কী পার্থক্য রয়েছে, যার কারণে কেউ ‘প্রগতিশীল লেখক’ আর কেউ ‘অন্য লেখক’ (অ-প্রগতিশীল লেখক) হিসেবে বিবেচিত হতে পারে? এই পার্থক্য বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা রিপোর্টটিতে নেই।

ব্যাখ্যা না দিলেও আমরা এখন বুঝি এবং জানি—কিছু পারুক বা না পারুক, অন্ততপক্ষে ইসলামী ভাবধারা থেকে যে যতবেশি বিচ্ছিন্ন হতে পারবে, সে ততবেশি প্রগতিশীল লেখক। ইসলাম ও মুসলমানদের সমালোচনা বা নিন্দা যতবেশি করা যায়, সেক্যুলার পরিচিতি ততবেশি বাড়ে। প্রগতিশীল ও সেক্যুলারদের ভণ্ডামি সম্পর্কে মানুষ এখন যথেষ্ট ওয়াকিফহাল। সাধারণ মানুষ খুব ভালো করেই জানে, ইসলাম কোপানোর নামই আজ প্রগতিশীলতা। মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর নামই যেন সেক্যুলারিটি ও নাস্তিকতা!

বস্তুতপক্ষে, প্রগতিশীলতা, এনলাইটেনমেন্ট ও সেক্যুলারিটির মুখোশ পরে এদেশে ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতিরোধ করার জন্য সাংস্কৃতিক আবরণে হিন্দুত্বকে খাঁটি বাঙালিয়ানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস সেই ঊনবিংশ শতকের হিন্দু রেনেসাঁস থেকে আজ অব্দি চলমান।

ভারতবর্ষে মুসলমানি শাসনের পতনপূর্বক ইংরেজদের ঔপনিবেশিক দখলদারিত্ব কায়েমের পর ব্রিটিশদের দালাল ও সেবাদাস অভিজাত ব্রাহ্মণ হিন্দুরা মুসলিম ভাবাদর্শ ও সংস্কৃতিকে নিশ্চিহ্ন করতে ইউরোপীয় রেনেসাঁসের অনুকরণে বাংলায় হিন্দু রেনেসাঁসের সূচনা করে। ঊনবিংশ শতক থেকে বিংশ শতক পর্যন্ত চলমান বাংলার এই রেনেসাঁসের ভিত্তি হয়ে ওঠে হিন্দুত্ববাদ। এই হিন্দু রেনেসাঁস কোনোভাবেই সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ ছিলনা, বরং ছিল প্রবলভাবে মুসলিমবিদ্বেষী। রাজা রামমোহন রায়, বঙ্কিমচন্দ্র থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত প্রত্যেকেই ইউরোপীয় রেনেসাঁর অনুপ্রেরণায় ধর্মীয় হিন্দুত্বকে বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিকভাবে প্রভাবশালী করে বাংলায় এক নব জাগরণ সৃষ্টি করেন।

আর বিশেষত ‘হিন্দুত্ববাদ’-এর প্রবক্তা হিসেবে তখন আবির্ভূত হন কট্টর মুসলিমবিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তার ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাস হচ্ছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দু-জঙ্গিবাদ উস্কে দেওয়া উগ্র হিন্দুত্ববাদের পলিটিকাল ডকট্রিন। সেইসাথে তার রচিত ‘বন্দে মাতরম’ গানটি হচ্ছে হিন্দুত্ববাদের মূল মন্ত্র! আজ ভারতের হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি, শিবসেনা, আরএসএস, বজরং ও হিন্দু মহাসভা এই ‘বন্দে মাতরম’ গানটি সংখ্যালঘু মুসলমানদের গাইতে জোরজবরদস্তি করছে।

বঙ্কিমচন্দ্র তার উপন্যাসগুলোতে মোঘল আমলের মুসলিম বাদশাহ ও সম্রাটদের চরিত্র হননপূর্বক চরম মিথ্যাচারের মাধ্যমে কুৎসা গেয়েছেন। এমনকি যবন, নেঁড়ে, স্বেচ্ছ, পাতকী, পাষন্ড, পাপিষ্ঠ, পাপাত্মা, দুরাত্মা, দুরাশয়, নরাধম, নরপিশাচ ইত্যাদি নিকৃষ্ট ভাষায় গালাগালি করে তিনি মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়েছিলেন। এছাড়া বঙ্কিম তার উপন্যাসের একটি চরিত্র দিয়ে বলিয়েছিলেন, “কেহ চিৎকার করিতে লাগিল, “মার, মার নেড়ে মার।” কেহ গাহিল, “হরে মুরারে মধুকৈটভারে!” কেহ গাহিল, “বন্দে মাতরম।” কেহ বলে, “ভাই, এমন দিন কি হইবে, মসজিদ ভাঙ্গিয়া রাধা-মাধবের মন্দির গড়িব?” (আনন্দমঠ, তৃতীয় খণ্ড, অষ্টম পরিচ্ছেদ) এখন নিশ্চয়ই আপনাদের মনে পড়েছে, ভারতে হিন্দুত্ববাদীরা বাবরি মসজিদ ভেঙেছিল রাম মন্দির গড়ার জন্য!

অন্যদিকে, রবীন্দ্রনাথের হিন্দু জাতিবাদী সাম্প্রদায়িক দর্শন হলো: ধর্মে মুসলিম কিংবা খ্রিস্টান হোক, কিন্তু জাতি-পরিচয়ে ভারতবর্ষের প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীকে ‘হিন্দু’ পরিচয় ধারণ করতে হবে। এককথায় রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন মুসলমান ও খ্রিস্টানদেরও হিন্দু জাতিবাদী হতে হবে। কী, বিশ্বাস হচ্ছে না?

তাহলে আসুন, রবীন্দ্রনাথ তার ‘আত্মপরিচয়’ নামক প্রবন্ধে এ বিষয়ে কী লিখেছেন, তা কোট-আনকোট তুলে ধরছি:

“তবে কি মুসলমান অথবা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ে যোগ দিলেও তুমি হিন্দু থাকিতে পার? নিশ্চয়ই পারি। ইহার মধ্যে পারাপারির তর্কমাত্রই নাই। হিন্দুসমাজের লোকেরা কী বলে সে কথায় কান দিতে আমরা বাধ্য নই; কিন্তু ইহা সত্য যে কালীচরণ বাঁড়–জ্যে মশাই হিন্দু খ্রিস্টান ছিলেন। তাঁহার পূর্বে জ্ঞানেন্দ্রমোহন ঠাকুর হিন্দু খ্রিস্টান ছিলেন। তাঁহারও পূর্বে কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দু খ্রিস্টান ছিলেন। অর্থাৎ তাঁহারা জাতিতে হিন্দু, ধর্মে খ্রিস্টান। খ্রিস্টান তাঁহাদের রঙ, হিন্দুই তাঁহাদের বস্তু। বাংলাদেশে হাজার হাজার মুসলমান আছে। হিন্দুরা অহর্নিশি তাহাদিগকে ‘হিন্দু নও হিন্দু নও’ বলিয়াছে এবং তাহারাও নিজেদিগকে ‘হিন্দু নই হিন্দু নই’ শুনাইয়া আসিয়াছে; কিন্তু তৎসত্ত্বেও তাহারা প্রকৃতই হিন্দুমুসলমান। কোনো হিন্দু পরিবারে এক ভাই খ্রিস্টান, এক ভাই মুসলমান ও এক ভাই বৈষ্ণব এক পিতামাতার স্নেহে একত্রে বাস করিতেছে—এই কথা কল্পনা করা কখনোই দুঃসাধ্য নহে, বরঞ্চ ইহাই কল্পনা করা সহজÑকারণ ইহাই যথার্থ সত্য, সুতরাং মঙ্গল এবং সুন্দর।” (আত্মপরিচয়, রবীন্দ্র রচনাবলী)

সুতরাং, এই হিন্দু জাতিবাদী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পক্ষেই বলা সম্ভব: ‘মুসলমানরা একমাত্র বেয়াদব, যাহারা হিন্দু পরিচয় স্বীকার করিবে না।’ (সূত্র: ড. সলিমুল্লাহ খান, সাম্প্রদায়িকতা, ২০ অক্টো. ২০১২, সিল্করুট, দৈনিক বণিক বার্তা)

এছাড়া গত শতকের প্রারম্ভে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদীদের সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের সময় গুরু বঙ্কিমের উগ্র সাম্প্রদায়িক আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রবীন্দ্রনাথ ‘শিবাজী উৎসব’ নামক মুসলিমবিদ্বেষী কবিতা লিখে ব্যাপকভাবে সমালোচিত ও নিন্দিত হয়েছিলেন।

ইউরোপীয় রেনেসাঁ দ্বারা অনুপ্রাণিত হিন্দু রেনেসাঁস শেষপর্যন্ত বঙ্কিমের উগ্র হিন্দুত্ববাদের আদর্শে পর্যবসিত হয়ে ধর্মীয় রিফর্মেশন বা রিভাইভালিজমে পতিত হয়। হিন্দুত্ববাদের পুনর্জাগরণই হয়ে ওঠে হিন্দু রেনেসাঁসের কেন্দ্রকোরক! ভারতবর্ষকে ‘শুদ্ধ হিন্দু’র দেশ বানানোই হয়ে ওঠে মূল এজেন্ডা!

দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরবর্তীতে বাংলার সেক্যুলার মুসলিম প্রগতিশীল মননেও হিন্দু রেনেসাঁসপ্রসূত হিন্দু-মৌলবাদের প্রভাব বেশ রয়ে গিয়েছিল। আজ অব্দি তা রয়ে গেছে। যার তীক্ষ্ম প্রভাব ও প্রকাশ আজও আমরা দেখি এদেশের বর্তমান সেক্যুলার মুসলিম প্রগতিশীল মননেও। যারা প্রায়ই প্রগতিশীলতা ও মুক্তমনার নামে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ান। সুতরাং বুঝতে হবে, এর ঐতিহাসিক সম্পর্কসূত্র সেই হিন্দু রেনেসাঁস, যা একদিকে ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপের গোলামির মেজাজ ধারণ করে, আরেকদিকে আধুনিকতা, সেক্যুলারিজম ও প্রগতিশীলতার ধুয়া তুলে বিশেষত ইসলাম ও মুসলমানদের দমন করার প্রেরণা দেয়। ফলে দিল্লির এদেশীয় দালাল সেক্যুলার প্রগতিশীলদের কাছে ‘হিন্দুত্ববাদ’ কোনো সমস্যা নয়, বরং এটি আজও ইসলাম ও মুসলমান কোপানোর মোক্ষম অস্ত্র! এই ফ্যাসিবাদের যুগে দিল্লির মদদপুষ্ট হয়ে এদেশে হিন্দুত্ববাদের বীজ বপণের লোকাল পেইড এজেন্ট সেক্যুলার শিবসেনারা আজ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

যাই হোক, হিন্দু মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক বঙ্কিমচন্দ্রের রচনা আমাদের পাঠ্যবইয়ে থাকতে পারলে ইসলামপন্থি শক্তিমান সাহিত্যিক ইসমাইল হোসেন সিরাজীর কোনো রচনা নেই কেন? এই প্রশ্ন কি আমাদের দেশের ওলামায়ে কেরাম কখনো তুলেছেন? সেক্যুলার প্রগতিশীল মুসলিমদের কথা নাহয় বাদই দিলাম। ওলামায়ে কেরাম সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী ও ইসলামবিরোধী রচনাসমূহ বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছেন ভালো কথা; কিন্তু একই সাথে ইসলামপন্থি কবি-সাহিত্যিকদের রচনা পাঠ্যবইয়ে সংযুক্ত করার দাবি কেন তুলছেন না? আশ্চর্য!

না বললেই নয়, জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও ছিলেন কট্টর হিন্দুত্ববাদী। এমনকি তার বক্তব্যে উগ্রসাম্প্রদায়িকতা ও মুসলিমবিদ্বেষের সুস্পষ্ট উপাদান আছে। অথচ আমাদের পাঠ্যবইয়ে সাম্প্রদায়িক শরৎচন্দ্রের গল্প রয়েছে। শরতের ‘লালু’ নামক পাঁঠাবলির নিয়ম-কানুন শেখানো এবং গরুর প্রতি মাতৃভক্তিবাদ শিক্ষা দেওয়ার মতো গল্প থাকলেও মুসলমানদের কোরবানির গরু-জবেহের নিয়ম-কানুন শেখানোর কোনো গল্প বা রচনা কিন্তু নেই!! বরং কোরবানির নিয়ম-কানুন শেখানোর রচনা বা গল্প থাকলে সেক্যুলার প্রগতিশীলরা বহু আগেই ‘জাত গেলো, জাত গেলো’ বলে রৈ-রৈ করে উঠতো। শরৎচন্দ্র একজন ব্রাহ্মণ গোত্রীয় হিন্দু। শরৎ সম্পর্কে বাংলাদেশের বিখ্যাত ইন্টালেকচুয়াল আহমদ ছফা লিখেছিলেন, ‘এই রকম সাম্প্রদায়িক রচনা শরৎবাবুও লিখতে পারেন আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছে।’ (যদ্যপি আমার গুরু, আহমদ ছফা, পৃ. ৫৬) একই বইতে তিনি সাত চল্লিশে বাংলা ভাগের জন্য বঙ্কিমের উগ্র হিন্দুত্ববাদ ও মুসলিমবিদ্বেষী প্রেরণাকে দায়ী করেছিলেন।

এবার আসুন, বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্রের সাম্প্রদায়িক ও মুসলিমবিদ্বেষী চেহারাটা একটু পরখ করে দেখি। ১৯২৬ সালে বাঙলা প্রাদেশিক সম্মেলনে শরৎচন্দ্র ‘বর্তমান হিন্দু-মুসলমান সমস্যা’ শীর্ষক একটি ভাষণ দেন। এই ভাষণ পরবর্তীতে ১৯৩৩ সালে হিন্দু সংঘ পত্রিকায় বাংলা ১৯ শে আশ্বিন সংখ্যায় ছাপা হয়।

উক্ত ভাষণে শরৎচন্দ্র বলেছিলেন, “বস্তুতঃ, মুসলমান যদি কখনও বলে—হিন্দুর সহিত মিলন করিতে চাই, সে যে ছলনা ছাড়া আর কি হইতে পারে, ভাবিয়া পাওয়া কঠিন। একদিন মুসলমান লুণ্ঠনের জন্যই ভারতে প্রবেশ করিয়াছিল, রাজ্য প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য আসে নাই। সেদিন কেবল লুঠ করিয়াই ক্ষান্ত হয় নাই, মন্দির ধ্বংস করিয়াছে, প্রতিমা চূর্ণ করিয়াছে, নারীর সতীত্ব হানি করিয়াছে, বস্তুত অপরের ধর্ম ও মনুষ্যত্বের উপরে যতখানি আঘাত ও অপমান করা যায়, কোথাও কোন সঙ্কোচ মানে নাই।”

তিনি আরো বলেছিলেন, “হিন্দু-মুসলমান-মিলন একটা গালভরা শব্দ, যুগে যুগে এমন অনেক গালভরা বাক্যই উদ্ভাবিত হইয়াছে, কিন্তু ঐ গাল-ভরানোর অতিরিক্ত সে আর কোন কাজেই আসে নাই। এ মোহ আমাদিগকে ত্যাগ করিতেই হইবে।”

তিনি আরও বলেন, “হিন্দুস্থান হিন্দুর দেশ। সুতরাং এ দেশকে অধীনতার শৃঙ্খল হইতে মুক্ত করিবার দায়িত্ব একা হিন্দুরই। মুসলমান মুখ ফিরাইয়া আছে তুরস্ক ও আরবের দিকে,Ñএ দেশে চিত্ত তাহার নাই। যাহা নাই তাহার জন্য আক্ষেপ করিয়াই বা লাভ কি এবং তাহাদের বিমুখ কর্ণের পিছু পিছু ভারতের জলবায়ু ও খানিকটা মাটির দোহাই পাড়িয়াই বা কি হইবে! আজ এই কথাটাই একান্ত করিয়া বুঝিবার প্রয়োজন হইয়াছে যে, এ কাজ শুধু হিন্দুর,—আর কাহারও নয়।” (শরৎ-রচনাসমগ্র, মূলধারা)

শরৎচন্দ্র ও বঙ্কিমচন্দ্রের মতো কট্টর সাম্প্রদায়িক ও মুসলিমবিদ্বেষী সাহিত্যিকদের রচনা আমাদের পাঠ্যবইয়ে রেখে মুসলিম কবি কায়কোবাদের কবিতা, মহানবী (সা.)-এর জীবনী, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর গল্প, কাজী নজরুল ইসলামের ‘উমর ফারুক’ কবিতাসহ মুসলিম ভাবধারার রচনাসমূহ বাদ দিয়ে একতরফা হিন্দু লেখকদের রচনাসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে পাঠ্যবইয়ের হিন্দুত্বায়ন কেন করা হয়েছিল? এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্য খলনায়কদের পরিচয় একদিন ঠিকই জাতি জানতে পারবে, ইন শা আল্লাহ। এদেশের ওলামায়ে কেরাম পাঠ্যবইয়ের হিন্দুত্বায়ন কোনোদিনই মেনে নেবে না।

 

লেখক: পলিটিক্যাল এনালিস্ট, দ্যা ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ