পবিত্র জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা: মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উগ্রবাদ ও সহিংসতা ছড়াবে
গত ৬ ডিসেম্বর’১৭ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায় ৭০ বছরের মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি লঙ্ঘন করে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি দিয়েছেন। এর নেপথ্যে রয়েছে ইহুদী তোষণ এবং মার্কিন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সমর্থন আদায়। ১৯৪৮ সালে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রই জেরুজালেমকে তাদের রাজধানীর স্বীকৃতি দিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে বর্তমানে প্রায় ৫ কোটি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীর মানুষের বসবাস। বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীর উপর তাঁদের অগাধ বিশ্বাস। এক পরিসংখ্যান মতে, ৮২ ভাগ শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টান বিশ্বাস করে যে, ইসরাইলের ব্যাপারে প্রভু ইহুদিদের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মাত্র ৪০ ভাগ মার্কিন ইহুদি বাইবেলের এই বাণীকে বিশ্বাস করে। মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের কাছে পবিত্র নগরী জেরুজালেম। এটাকে রাজধানী হিসেবে চায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয়ই।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে জেরুজালেমে মুসলমানদের পবিত্র স্থানগুলোর জিম্মাদার জর্ডান, সৌদি আরব, ফিলিস্তিন ও তুরস্ক এ বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সতর্ক করে বলেছে, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির পরিণতি হবে ‘মরণ ছোবল’ ও ‘ভয়াবহ’। এই সিদ্ধান্ত ‘চরম সীমা’ অতিক্রম করবে এবং মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে ।
এ ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূমিকা স্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন ও মুসলিম উম্মাহর স্বার্থের অনুকুলে। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ওআইসির বিশেষ সম্মেলনে বাংলাদেশের মাননীয় রাষ্ট্রপতি এডভোকেট মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্রের ওই বৈরী সিদ্ধান্তের পর ওআইসি চুপ করে বসে থাকতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের ওই সিদ্ধান্ত ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। মুসলিম বিশ্বে নতুন করে ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হলে তা সহিংস উগ্রবাদকে আরও উসকে দিতে পারে, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।’
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত ৪৬৭ নম্বর প্রস্তাবে জেরুজালেমের রাষ্ট্রীয় পরিচয় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল। আর ৪৭৮ নম্বর প্রস্তাবে ইসরায়েলকে ওই ভূখণ্ডে বসতি স্থাপন বন্ধ করে জেরুজালেমের আইনি পরিচয় এবং জনমিতিক বৈশিষ্ট্য বদলে দেওয়ার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল। আমেরিকা ও ইসরাইল এই সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করে চলেছে।
বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান যারা আমেরিকার অন্যতম মিত্র হিসেবে পরিচিত বিশেষভাবে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও পোপ ফ্রান্সিস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ফোন করে এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান এবং জাতিসংঘ প্রস্তাবনা অনুসারে জেরুজালেমের মর্যাদা সমুন্নত রাখার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন।
জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। ওই স্বীকৃতি ‘অকার্যকর’ এবং তা বাতিল করা হোক লেখা ওই প্রস্তাবের ওপর সাধারণ পরিষদে ভোট হয়। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন ১২৮টি দেশের প্রতিনিধিরা, ভোটদানে বিরত থেকেছে ৩৫টি দেশ, আর বিপক্ষে ভোট পড়েছে নয়টি। ভোটাভুটির আগেই যুক্তরাষ্ট্র হুমকি দিয়ে বলেছে, এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়া দেশগুলোকে দেখে নেওয়া হবে।
আমেরিকাকে বুঝতে হবে গোটা দুনিয়ার মানুষ তাদের পক্ষে নেই। আমরা অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাধ্য করার জন্য বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের প্রতি জোর আহ্বান জানাই। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ এ নীতি কার্যকর থাকলে বিশ্বে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ নিয়ে শান্তিপূর্ণ সহবস্থান ও প্রীতিময় সমাজ প্রতিষ্ঠা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন