আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসেম্মলন ২০১৭
নেক আমল কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত
আল্লামা জামিল আহমদ (দা. বা.) সিনিয়র মুহাদ্দিস, দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত
الْـحَمْدُ للهِ وَكَفَىٰ، وَسَلَامٌ عَلَىٰ عِبَادِهِ الَّذِيْنَ اصْطَفَىٰ.
أَمَّا بَعْدُ! فَأَعُوْذُ بِاللهِ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ، بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ، [وَمَاۤ اُمِرُوْۤا اِلَّا لِيَعْبُدُوا اللّٰهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَۙ۬ ۰۰۵] {البينة: 5}.
সম্মানিত হাযিরীন! সর্বপ্রথম মহান আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করে আপনাদের সামনে একটি কুরআনে করীমের আয়াত তিলাওয়াত করেছি, সে আয়াতটি হচ্ছে,
وَمَاۤ اُمِرُوْۤا اِلَّا لِيَعْبُدُوا اللّٰهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَۙ۬ ۰۰۵
মহান আল্লাহ যদি তাওফীক দান করেন তাহলে এ আয়াতে কারিমার আলোকে কিছু কথা বলব ইনশাআল্লাহ
প্রিয় উপস্থিতি! মহান রাব্বুল আলামীন এ মহাবিশ্বে হাজার হাজার লাখো লাখো মাখলুক সৃষ্টি করেছেন, তার মধ্যে দু’প্রকারের মাখলুক হল, (১) জিনজাতি ও (২) মানবজাতি। এ দুটি জাতিকে মহান আল্লাহ মুকাল্লাফ বানিয়েছেন। মুকাল্লাফ বানানোর অর্থ হলো এ দু’মাখলুককে মহান আল্লাহ সৃষ্টি করে কিছু বিধান দান করেছেন সে বিধানসমূহ যদি তারা পালন করে তাহলে মহান আল্লাহর কাছে সাওয়াব ও প্রতিদানের উপযোগী হবে, আর যদি তারা আল্লাহর বিধান পালন না করে তাহলে জিন ও মানবজাতি মহান আল্লাহর কাছে ধর পাকড়ের যোগ্য হবে অর্থাৎ আল্লাহ পাক তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। যদি তারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বিধান মেনে চলে তাহলে পরকালে জান্নাত দান করবেন, আর যদি আল্লাহর বিধান মেনে না চলে তাহলে আল্লাহ তাআলা মানবজাতি ও জিনজাতিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
সম্মানিত উপস্থিতি! সমস্ত জিন ও ইনসানের অন্তরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বন্দেগি করার ও বিধি-বিধান মেনে চলার একটা জযবা বা আবেগ রয়েছে, যদি আবেগকে ইসলামের পথে ব্যবহার করে তাহলে জিন ও ইনসানজাতি জান্নাতে যাবে।
মানবজাতি ও জিনজাতির ইবাদত আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত আছে,
১. إخلاص نيت তথা মানব-দানব যত নেক আমল করবে এ আমল আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য ইখলাসে নিয়ত শর্ত। ইখলাসে নিয়তের অর্থ হলো যত নেক আমল তারা করবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করবে, অন্য কাউকে সন্তুষ্ট করার জন্য কিংবা অন্য কোন নিয়তে করবে না।
২. إتباع سنت অর্থাৎ সমস্ত আমলের মধ্যে রাসূল (সা.)-এর সুন্নাতের অনুসরণ পাওয়া যেতে হবে, রাসূলের সুন্নাত তরীকায় আমল করতে হবে, তখন সে আমল আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে।
৩. إيمان بالله তথা আল্লাহ তাআলার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস তথা ইয়াকিন ও পূর্ণ আস্তা অন্তরে থাকতে হবে।
এ তিন শর্ত যদি পাওয়া যায় তখন ওই আমল আল্লাহর দরবারে কবুল হবে এবং এর বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা পরকালে জান্নাত দান করবেন, আর যদি আমরা আল্লাহ পাকের ইবাদত না করি, যদিওবা করি কিন্তু শর্ত সাপেক্ষে না করি অর্থাৎ ইবাদত করলাম ইখলাসের সাথে করলাম না, ইত্তেবায়ে সুন্নাতের সাথে করলাম না, আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ আস্তা ও এয়াকিন রাখলাম না, উপর্যুক্ত তিন শর্তের মধ্য থেকে সবটাই কিংবা যে কোন একটাও না থাকে তাহলে সে সব আমল আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে না।
আমল কবুল হওয়ার প্রথম শর্ত হলো ইখলাসে নিয়ত, তথা বিশুদ্ধ নিয়তে একনিষ্টভাবে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য নেক আমল করতে হবে, (আল্লাহ! আমাদেরকে তাওফীক দান করুন)।
সম্মানিত হাজিরিন! বান্দা যদি নিজের বড় বড় আমলগুলো করে তথা পাহাড়ের সমপরিমাণ বড় আমলও যদি করে তাতে যদি إخلاص نيت না থাকে তা আল্লাহর দরবারে গ্রহণযেযাগ্য হবে না যদি إخلاص نيت-এর সাথে ছোট আমল করা হয় তা আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে।
আবার ইখলাসের তিনটি স্তর রয়েছে,
১. ইখলাসের সর্বনিম্ন স্তর হলো আল্লাহর বান্দা যদি একমাত্র ইখলাসের সাথে নেক আমল করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ও নেক আমলের পরিবর্তে তাকে দশগুণ দান করবেন। তিনি প্রমাণ স্বরূপ এ আয়াত পাঠ করেন,
مَنْ جَآءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهٗ عَشْرُ اَمْثَالِهَاۚ ۰۰۱۶۰ {الأنعام: 160}.
২. ইখলাসের মধ্যম স্তর হলো কোন আল্লাহর বান্দা যদি মধ্যম স্তরের ইখলাসের সাথে নেক আমল করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে সাতশতগুণ সাওয়াব দান করবেন। প্রমাণ স্বরূপ তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন,
كَمَثَلِ حَبَّةٍ اَنْۢبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِيْ كُلِّ سُنْۢبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍؕ ۰۰۲۶۱ {البقرة: 261}.
অর্থাৎ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এভাবে উদাহরণ দিয়েছেন যে এমন একটি শষ্য দানা যার মধ্যে সাতটি শিষ রয়েছে, আর প্রতিটি শিষের মধ্যে রয়েছে একশটি করে দানা রয়েছে। এ আয়াত দিয়ে প্রমাণ স্বরূপ তিনি বলেন কোন আল্লাহর বান্দা যদি মধ্যম স্তরের ইখলাসের সাথে নেক আমল করে আল্লাহ পাক তাকে ৭ শতগুণ সাওয়াব দান করবেন।
৩. ইখলাসের সর্বোচ্চ স্তর হলো, আল্লাহর কোন বান্দা যদি সর্বোচ্চ স্তরের ইখলাসের সাথে নেক আমল করে আল্লাহ পাক তাকে সাতশতগুণ থেকে আরো বেশি সাওয়াব দান করবেন। উক্ত কথার প্রমাণ-স্বরূপ বলেন,
يُضٰعِفُ لِمَنْ يَّشَآءُؕ ۰۰۲۶۱ {البقرة: 261}.
অর্থাৎ তিনি যাকে চান এর চেয়ে কয়েকগুণ সাওয়াব দান করবেন। অর্থাৎ সর্বোচ্চ স্তরের মুখলিস ব্যক্তিকে ৭ শতগুণ থেকে আরো বেশি সাওয়াব আল্লাহ পাক ওই নেক আমলের পরিবর্তে দান করবেন।
যদি নেক আমলগুলো ইখলাসের সাথে না করে তাহলে ও নেক আমলের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলার কাছে কোন প্রতিদান পাওয়া যাবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, সর্বপ্রথম জাহান্নামে যাবে তিনশ্রেণীর মানুষ। ১. আলেম। ২. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী। ৩.আল্লাহর রাস্তায় লক্ষ কোটি টাকা ব্যয়কারী মানুষ।
১. সেই আলেম জাহান্নামে যাবে যে আলেম ইলমে দীন অর্জন করেছে দুনিয়া কামাই করার জন্য মানুষের মাঝে খ্যাতি অর্জন করার জন্য বা মানুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য সে আমলকে আল্লাহ পাক জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
২. সেই মুজাহিদকেও আল্লাহ তাআলা জাহান্নামে দিবেন যে আল্লাহর রাস্তায় নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছে এ নিয়তে যে মানুষ তাকে শহীদ বলবে, বীর বাহাদুর বলবে কিংবা মানুষ আমার নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে, এসব খারাপ উদ্দেশ্যে মুজাহিদ নিজের জীবনকে আল্লাহর রাস্তায় বিলীন করে দিলেও সে মুজাহিদের ইখলাস না থাকার কারণে আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
৩. সেই ব্যক্তি যে নিজের লাখো টাকা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করল মানুষ তাকে দানবীর বলার জন্য, দান-খায়রাতকারী বলার জন্য আল্লাহ পাক তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
যদি কোন মানুষ ছোট বড় কোন আমল একমাত্র আল্লাহ পাককে সন্তুষ্ট করার জন্য করে আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে তাকে জান্নাত দান করবেন। এ সম্পর্কে একটি ঘটনা বর্ণনা করা হচ্ছে যে, কিফ নামক একজন আল্লাহর ওলী যিনি অত্যন্ত দুনিয়ামুখী এবং বিলাসিতাপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। অত্যন্ত বিলাসিতার মাঝে তিনি জীবন যাপন করতেন এবং সদা রং তামাশায় লিপ্ত থাকতেন। একদিন ওই ব্যক্তি জনৈক এক মহিলাকে টাকা দিয়ে ভাড়া করলেন তার সাথে নিজের শাহওয়াত (যৌন চাহিদা) পূরণ করার জন্য। দুজনই গোনাহ করার জন্য চুক্তি করলেন এবং ওই মহিলাকে বিনিময় প্রদান করে নির্জনে চলে গেলেন এবং সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে গেলেন। একজন স্বামী তার স্ত্রীর শরীরের ওপর সহবাস করার জন্য যেভাবে বসে ওই মহিলার শরীরের ওপর একইভাবে বসলেন, অতঃপর গুনাহ করার জন্য যখন প্রস্তুতি নিলেন তখন ওই মেয়েটা কান্না আরম্ভ করলেন, তখন কিফ তাকে বলল তুমি কান্না করছ কেন? কিফ তাকে বললেন, আমি তোমাকে বাধ্য করে এ কাজের জন্য তোমাকে নিয়ে আসিনি বরং তোমাকে টাকা দিয়ে ভাড়া করেছি এবং তুমি রাজি খুশি হয়ে এ কাজের জন্য এসেছ। তখন ওই মহিলাটি বলল, আমি জীবনে কোন সময় এ গোনাহ করিনি, আল্লাহ পাক আমাকে দেখছেন কিয়ামতের দিন যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন তখন আমি কী উত্তর দেব? এ কথা শুনে কিফ নামক ব্যক্তিটি গুনাহ না করে ফিরে এলেন, অথচ পুরা শহরে তিনি একজন গুনাহগার ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। কয়েকদিন পর কিফ ব্যক্তিটি মৃত্যুবরণ করলে জনৈক ব্যক্তি স্বপ্নে দেখলেন যে তিনি জান্নাতবাসী হয়ে গেলেন। কিফকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনি একজন গুনাহগার ব্যক্তি, কিভাবে জান্নাতে প্রবেশ করলেন? তখন কিফ এ ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, আমি এরকম এক পাপ কাজের দিকে ধাবিত হয়েছিলাম কিন্তু আল্লাহর ভয় আমাকে ঐ পাপ কাজ থেকে বিরত রেখেছে, আল্লাহ তাআলার কাছে সে আমল কবুল হয়েছে এবং এর বিনিময়ে জান্নাত দান করেছেন।
আমরা যদি একটি ছোট নেক আমলও করি ইখলাসের সাথে আল্লাহ তাআলা ওই আমলের সাওয়াব দান করেন, এ প্রসঙ্গে আরেকটি ঘটনা বর্ণনা করা যায় যে, একজন মানুষ কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর সামনে হাজির হওয়ার পর আল্লাহ পাক তাকে কয়েকটি পাহাড়ের সমপরিমাণ সাওয়াব দান করবেন। কয়েকটি পাহাড় সমপরিমাণ ¯¦র্ণ আল্লাহর রাস্তায় দান করলে আল্লাহ একজন মানুষকে দিতে পারেন সে পরিমাণ সাওয়াব। কিফ নামক ব্যক্তিটি জান্নাতে যাওয়ার পর আল্লাহর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এতগুলো সাওয়াব কিভাবে দান করে জান্নাত দিলেন? এধরনের কোন নেক আমল তো আমি দুনিয়াতে করিনি, তখন আল্লাহ পাক তাকে বললেন তুমি একটি পাহাড়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মনে মনে এ কল্পনা করছিলে যদি এ পাহাড় ¯র্ণের পাহাড় হত আর এ পাহাড়ের মালিক আমি হতাম তাহলে আমি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য আল্লাহর রাস্তায় সবটুকু বিলীন করে দিতাম। আমি তোমার এ নেক আমলের নিয়তকে কবুল করেছি এবং এর বিনিময়ে এ সাওয়াবগুলো দিয়ে জান্নাত দান করেছি। নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেন যে, কেউ যদি কোন নেক আমল একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ঠ করার জন্য করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ওই নেক আমল কবুল করে এর বিনিময়ে জান্নাত দান করবেন।
সম্মানিত হাযিরীন! আমল আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার জন্য দ্বিতীয় শর্ত হলো ইত্তেবায়ে সুন্নাত তথা সব কাজের মধ্যে নবী করীম (সা.)-এর সুন্নাতের অনুসরণ করা। সুন্নাতের অনুসরণ করে আমল করলে সে আমল আল্লাহর দরবারে কবুল হবে অন্যথায় কবুল হবে না। নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেন,
«مَنْ تَرَكَ سُنَّتِي لَـمْ يَنَلْ شَفَاعَتِي»
অর্থাৎ যে আমার সুন্নাত বর্জন করবে সে আমার সুপারিশ থেকে বঞ্চিত হবে।
রাসূলের সুন্নাত অনুযায়ী যদি আমরা আমল করি সে আমল আল্লাহর দরবারে কবুল হবে। তেমনিভাবে রাসূলের সুন্নাতের ওপর আমল করে বিসমিল্লাহ পড়ে যদি ডান হাত দিয়ে আহার করে তার মধ্যে আল্লাহ বরকত দান করবেন। যদি বাথরুমে প্রবেশ করার সময় দুআ পড়ে এবং রাসূলের সুন্নাত অনুযায়ী বাম পা দিয়ে প্রবেশ করে তখনও আল্লাহ পাক সাওয়াব দান করবেন, মসজিদে যদি দুআ ও ডান পা দিয়ে প্রবেশ করি তখনও সাওয়াব দান করবেন।
মোটকথা রাসূল (সা.)-এর সুন্নাতের অনুসরণ করে আমল করলে আল্লাহ তাআলা প্রত্যেকটা আমলের সাওয়াব দান করবেন। যদি কোন মুসলমান বাম পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করে যদিও বা মসজিদে প্রবেশ করা সাওয়াব কিন্তু নবী করীম (সা.)-এর সুন্নাতের অনুসরণ না থাকার কারণে তাকে সাওয়াব দিবেন না। সুন্নাতের অনুসরণে সাওয়াব বিদ্যমান যে অবস্থায়ই হোক না কেন। কুরআনে করীমে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَا تَمْشِ فِي الْاَرْضِ مَرَحًاۚ ۰۰۳۷ {الإسراء: 261}.
অর্থাৎ তোমরা জমিনের ওপর দম্ভভরে চলো না। এটা হযরত লোকমান হাকীমের উপদেশ তার সন্তানের প্রতি তিনি তার ছেলেকে বলেছিলেন তুমি পৃথিবীতে দম্ভভরে চলো না। এ আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে জমিনের ওপর অহংকার করে, বুক টেনে চলাফেরা করা নিষেধ এবং তা গোনাহের কাজ। কিন্তু আমরা জানি যখন আমরা হজ ও ওমরায় তাওয়াফ করতে যাই সে তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করতে হয় অর্থাৎ বুক টেনে বাহাদুরের ন্যায় অহংকার করে চলতে হয়, কিন্তু নবী করীম (সা.) এ রকম করেছেন তাই যদি আমরাও রাসূলের অনুসরণ করি তাহলে সেখানে সাওয়াব রয়েছে অথচ হজ ও ওমরার সময় ব্যতীত অন্য সময়ে এরকম চলা নাজায়েয ও গোনাহের কাজ। আল্লাহ পাক কুরআনে করীমে ইরশাদ করেন,
قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللّٰهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ۠ يُحْبِبْكُمُ اللّٰهُؕ ۰۰۳۱ {آل عمران: 31}.
অর্থাৎ হে নবী! আপনি বলে দিন তোমরা যদি আমার প্রিয় বান্দা হতে চাও তাহলে আমার সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণ কর। রাসূলের সুন্নাতের ওপর যদি আমরা আমাদের জীবনকে পরিচালনা করতে পারি তখন আমাদের মর্যাদা বেহেশতের চেয়ে আরো বৃদ্ধি হয়ে যাবে। অন্যথায় আমাদের মর্যাদা কুকুর ও শুকরের চেয়েও নিম্নমানের হবে।
ইখলাসের তৃতীয় স্তর হচ্ছে, إيمان بالله তথা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ওপর একমাত্র ঈমান রাখা। আমল করার সাথে সাথে আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখা। যদি আল্লাহ তাআলা কোন আমলের মধ্যে প্রভাব সৃষ্টি না করেন সে আমল কোন ফায়দা দিতে পারে না, যদি আল্লাহ তাআলা ফায়দা না দেন। হযরত মুসা (আ.)-এর একটি ঘটনা বর্ণিত আছে যে একদিন মুসা (আ.) অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তখন তিনি আল্লাহ পাকের কাছে ফরিয়াদ করলেন, হে আল্লাহ! আমাকে শেফা দান করুন, আমি অসুস্থ, তখন আল্লাহ পাক জিবরাঈল (আ.)-কে পাঠালেন মুসা এর কাছে, তখন তিনি এসে বলেন, পাহাড়ের মধ্যে একটি গাছ আছে যার পাতা এনে পানিতে গুলিয়ে যদি আপনি পান করেন তাহলে আপনার রোগ দূরিভূত হয়ে যাবে। তখন মুসা (আ.) সে গাছের পাতা পাহাড়ে গিয়ে নিয়ে এনে সিদ্ধ করে পান করলেন, তিনবার পান করার পর আল্লাহ তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে দিলেন, দুয়েক বছর পর আবার তিনি এ রোগে আক্রান্ত হলে চিন্তা করলেন যে অমুক গাছের পাতা সিদ্ধ করে খেলেই তো আরোগ্য লাভ করবেন, তাই তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা না করে সরাসরি পাহাড়ে গিয়ে ওই গাছের পাতা এনে পূর্বের নিয়মে আহার করলেন, কিন্তু আরোগ্য লাভ করেননি, এভাবে তিনি ১৫ বার পর্যন্ত আহার করলেন কিন্তু সুস্থ হয়ে উঠেননি, অতঃপর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহ! প্রথম পর্যায়ে ৩ বার ওই ওষুধ আহার করার ফলে সুস্থ হয়েছি, পক্ষান্তরে এবারে ১৫ বার সেবন করেও কেন সুস্থ হলাম না? আল্লাহ তাআলা প্রত্যুত্তরে বলেন, প্রথম বার রোগ হওয়ার পর আমাকে ডেকে ওষুধ খেয়েছো, আর দ্বিতীয় বার রোগ হওয়ার পর আমাকে না ডেকে ওষুধ খেয়েছো, তাই প্রথম বার আমি ওই গাছের মধ্যে প্রভাব সৃষ্টি করার ফলে তোমার রোগ ভালো হয়েছিল, দ্বিতীয় বার তুমি আমাকে না বলার কারণে আমি সে গাছে প্রভাব সৃষ্টি করিনি। তাই আমাদের উচিত যে সদা সর্বদা আল্লাহর ওপর পূর্ণ ইয়াকিন ও দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা। এটাই হলো ইখলাসের তৃতীয় স্তর। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পর্যায়ক্রমে ইখলাসের সর্বোচ্চ স্তরে উপনীত হওয়ার তাওফীক দান করুন, আমীন।
অনুলিখন: আকরাম বিন হোসাইন
ছাত্র: আদব বিভাগ, জামিয়া পটিয়া-২০১৭