বৃহস্পতিবার-২২শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি-২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাতীয় সীরাত পুরস্কার প্রদান করুন

জাতীয় সীরাত পুরস্কার প্রদান করুন

সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসূল মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমন বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহ তাআলার রহমত-স্বরূপ। জাহিলী যুগে আবির্ভূত হয়ে তিনি সত্য ও আলোর বন্ধনা করেন। তিনি গোঁড়ামি, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা, নিপীড়ন, বঞ্চনা, বৈষম্যের শৃঙ্খল ভেঙে মানবাধিকারের মুক্তিবার্তা বহন করেন। শ্বেতাঙ্গ-কৃঞ্চাঙ্গ, ধনী-নির্ধন, প্রভু-ভৃত্য, আমীর-ফকীরের জাত্যাভিমানের ভেদাভেদ গুছিয়ে মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদীনায় হিজরতের অব্যাবহিত পর মহানবী (সা.) পারস্পরিক দ্বন্ধে লিপ্ত বিভিন্ন গোত্র-উপগোত্র ও ধর্মমতের জনগোষ্ঠীকে একই বিধিবদ্ধ আইনের অধীনে আনার জন্য প্রণয়ন করেন মদীনা সনদ (The Charter of Madinah)। এটিই ইতিহাসের প্রথম লিখিত সংবিধান। এর পূর্বে শাসকের মুখোচ্চারিত কথাই ছিল রাষ্ট্রীয় আইন। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ এটাই ছিল রাষ্ট্র ও সমাজের শাসননীতি। ইতিহাস প্রমাণ করে এই ঐতিহাসিক সনদ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবদমান কলহ ও অন্তর্ঘাতের অবসান ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সম্প্রীতি, প্রগতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের পরিবেশ সৃষ্টি করে। উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, গোত্রীয় দম্ভ, ধর্মবিদ্বেষ ও অঞ্চলপ্রীতি মানবতার শত্রু ও প্রগতির অন্তরায়। মদীনা সনদ এ দুষ্ট ক্ষতগুলোকে মুছে ফেলে এবং সামাজিক নিরাপত্তা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করে। সনদের প্রতিটি ধারা পর্যালোচনা করলে মহানবী (সা.)-এর মানবাধিকার ঘোষণার প্রকৃষ্ট পরিচয় প্রতিভাত হয়। ১২১৫ সালের ম্যাগনা কার্টা, ১৬২৮ সালের পিটিশন অব রাইট, ১৬৭৯ সালের হেবিয়াস কর্পাস অ্যাক্ট, ১৬৮৯ সালের বিল অব রাইটস এবং ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা (Universal Declaration of Human Rights)-এর চৌদ্দশ’ বছর আগে মানবতার ঝান্ডাবাহী মহানবী (সা.) সর্বপ্রথম মানুষের আর্থ-সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনীতিক অধিকার ঘোষণা করেন। পরস্পর বিরোধী ধর্ম সম্প্রদায়ের মধ্যে মহানবী (সা.) কর্তৃক সম্পাদিত এ সনদ সমগ্র মানবমণ্ডলী ও অখণ্ড মানবতার এক চূড়ান্ত উত্তরণ।

পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তর মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশ। এ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর হৃদয়ের স্পন্দন মহানবী (সা.)। প্রাণের চেয়ে তাঁরা হযরতকে ভালোবাসেন। তাঁদের জীবনধারায় প্রিয় রাসূল (সা.)-এর সুন্নাত ও আদর্শ অনুসরণ লক্ষ করার মতো। আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে অনেক পুরস্কার ও জাতীয় পদক প্রদানের রেওয়াজ চালু আছে। অনেক কবি, সাহিত্যিক ও বরেণ্য মনীষীদের জীবনচরিত রাষ্ট্রীয়ভাবে সাড়ম্বরে আলোচিত হয়। আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে নিয়ে ১২ রবিউল আউওয়াল গতবাঁধা কিছু কর্মসূচি পালন করা হয় যা কোনোক্রমে ব্যাপক নয় এবং যথেষ্টও নয়। পুরো রবিউল আউওয়াল মাসব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ, জাতীয় সীরাত কনফারেন্সের আয়োজন, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শ সিলেবাসে অন্তর্ভুক্তকরণ এবং বাংলাদেশি লেখক ও বাংলা ভাষায় লিখিত সীরাত-বিষয়ক গ্রন্থের জন্য ‘রাষ্ট্রীয় সীরাত অ্যাওয়ার্ড’ প্রদানের জন্য রাষ্ট্রের হাই কমান্ডের নিকট আবেদন জানাই। নবীপ্রেমিক বেসরকারি উদ্যোক্তাগণও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। মহানবী (সা.)-এর আদর্শ যতো বেশি আলোচিত হবে ততো বেশি নবীন ও প্রবীন প্রজন্মের মাঝে নৈতিকতা ও মানবতা বিকশিত হবে এবং সন্ত্রাসের অবসান ঘটবে।

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ