ওরাও মানুষ
কবি শিখর চৌধুরী
আমি মানবতার কথা বলতে এসেছি
রক্ত-শ্বাপদের পদতলে পৃষ্ঠ—
মানুষের সত্য কবিতার জয়গান করছি।
কালো রাতের অভিশাপে,
নিত্যকার পাখি ডাকা গ্রামগুলোর এমন
স্তদ্ধ অবস্থা কেউ কল্পনাও করেনি ,
পাখিসদৃশ প্রাণীরা কেবল নীরব চেয়ে আছে,
ভাঙা বালতিতে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত
তাতে ভিড় জমেছে ঝাঁক ঝাঁক মাছিগুলোর
ভাদ্র-আশ্বিনের রোদে শুকোচ্ছে প্রামাণ চিন্থগুলো।
স্যাটেলাইটে ফুটে উঠেছে নির্মম জ্বালাও-পোড়াও চিত্র
পুতুল শিশুরা শুনছি না কি ঘুমন্ত অবস্থাতেই ছাই হয়েছে,
অনেক অনেক মা-বোনেরা প্রথমে ধর্ষিত;
পরে বুলেটের ক্ষত নিয়ে পড়ে আছে
সেনাবাহিনীর নির্মম আঘাতে পড়ে থাকা পুরুষ মৃতরা
এখন অজ্ঞাত গণকবরের অপেক্ষায় স্তূপাকৃত,
যারা জীবিত দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আসতে চেয়েছে
কেউবা পুতে রাখা ’মাইনে’ বিস্ফোরিত হয়ে
চির পঙ্গুত্ব বরণ করে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষারত
বাংলাদেশের মাুনষ মানবতার হাত বাড়িয়েছে
প্রতিটি উপসনালয়ে-বন্দরে-বিশ্ববিদ্যালয়ে
তোলা হচ্ছে ত্রাণ।
আন্তজার্তিক মহল নিন্দিত করেছে এ পৈশাচিকতাকে
কিছু পরাশক্তি আবার কূটনীতির কূটচালে
জলাঞ্জলি দিয়ে ফেলেছে মানবতাকে!
কিন্তু মৃত্যুস্মৃতি নিয়ে—
যে মানবশিশুটির সামনে ছাই হয়েছে তাঁর পরিবার;
বিশ্ব-মানবতাও কী ছাই হয়নি;
সেই পরিবারের সাথে সাথে।
সুখ-আনন্দ
হ. ম. সাইফুল ইসলাম মনজু
ভোর না হতেই করছে শুরু খোকা তাহার কাজ,
যে করেই হোক ঘুড়িটা তার উড়তে হবে আজ।
কোলে’কে এক বাঁশের ফালি কাল এনেছে ঘরে,
কে জানে এক পলিথিনও আনলো কেমন করে!
দা,পলিথিন,বাঁশের ফালি সব করেছে জমা,
কসরতে তার একটা ঘুড়ি হয়েই গেলো অ মা!
ডাকছে মা তার পা›হা খেতে তার সে খবর নাই,
উড়বে ঘুড়ি সেই খুশিতে ছুটছে খোকা তাই।
লম্বা লেজের ঘুড়ি এ যে অল্প খানিক সূতা,
এতেই খুশি ঘুড়ির শিল্পী ছোট্ট খোকা তোতা।
নাটাই তো নেই,সূতায় ধরে দৌঁড়ছে ক্ষেতের আ’লে,
এইতো তাহার সুখ-আনন্দ কি হবে মা’র গালে!
ভার
মাহমুদুল হাসান নিজামী
কে দিয়েছে তব বুকের গহীনে
পাহাড়ের সব ভার
শব্দহীন চিতকারে রক্তাক্ত
হৃদয় চৌচির কার।
যমুনার ভাংগন এখন ছুয়েছে
মধুমতির তীর
অশান্ত অধীর কোন অবলা সুন্দর
অক্ষি নীড়।
বৈশাখী ঝড় ভাঙে কোন ঘর
কেই বা জানে
শিহরিত কম্পন বিরহী ভারে
দহন কোন প্রাণে।
সবার আপন
গোফরান উদ্দীন টিটু
ও ফুল তুমি কেন এতো সুন্দর
ও পাখি তুমি কেন আর নও পর!
ও মেঘ তুমি কেন দূর দেশে যাও
ও পাহাড় তুমি কেন শুধুই তাকাও!
ও সাগর তুমি কেন বিশাল বড়
ও আকাশ তুমি এসে হাতটা ধরো।
আমি আর পাড়ছি না থাকতে একা
সবাইকে ভালোবাসি চাই যে দেখা।
আমি এক ছোট শিশু সবার প্রিয়
চাই যে আপন হতে করেই নিও।
যত ছোট হই আমি নয় ছোট মন
চাই হতে চাই হতে সবার আপন।
কেন অশান্তি বিস্মিত?
হিফজুর রহমান তুহিন
আর কত আর কত যে ভাঙবে ঘর বাড়বে ক্ষত?
আর কত আর কত যে কাঁদবে মন চলনায় অবিরত?
আর কত আর কত যে দেখব যুদ্ধ ঝড়ছে রক্তিম রক্ত?
আর কত আর কত যে বিভীষণ হবে হানাহানি ?
আর কত আর কত যে কাদে পিঠে মৃত?
আর কত আর কত ধূ-ধূ ধ্বংসে প্রলয় বসন্ত?
আর কত আর কত যে রাখাল নৃত্য?
আর কত আর কত যে প্রশ্ন?
আমার সোনার দেশে কেন অশান্তি বিস্মিত?
(মাসিক আত তাওহীদ, নভেম্বর ২০১৭)