বুধবার-২১শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি-২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফতওয়া বিভাগ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

ফতওয়া বিভাগ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

دَارُ الافتاء جامعہ اسلاميہ پٹیہ، چاٹگام

ফতওয়া বিভাগ

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

ইমেইল: daruliftapatiya@gmail.com

পেইজলিংক: Facebook.com/Darul-ifta-Jamia-Patiya

পবিত্রতা-তহারাত
সমস্যা: প্লেনে দীর্ঘ সফরের কারণে অনেক সময় টয়লেট-বাথরুমে ব্যবহারের জন্য স্টককৃত পানি শেষ হয়ে যায়, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যবহৃত পানিগুলো রিসাইকেল তথা পুনঃশোধনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ পরিষ্কার পানি করে নেওয়া হয়। অতঃপর টয়লেট-বাথরুমে তা পুণরায় ব্যবহার করা হয়। জানার বিষয় হলো, এ পানি কি পাক? এর দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা যাবে কি?
হাম্মাদ
ডলুকুল, সাতকানিয়া
সমাধান: টয়লেট-বাথরুমে ব্যবহৃত পানিগুলো শরীয়তের দৃষ্টিতে নাপাক। সুতরাং তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা জায়েয নেই। কেননা, প্রশ্নোল্লিখিত রিসাইকেল্ড পানি শরীয়ত কর্তৃক পানি পবিত্র করার নীতিমালার অন্তর্ভূক্ত নয়। তাই উক্ত রিসাইকেল্ড পানি যদিও পরিষ্কার হয়ে যায়; কিন্তু পবিত্র হয় না বিধায় তা দ্বারা ইসতিনজা ও পবিত্রতা অর্জন করা জায়েয হবে না।
– বুখারী: হাদীস নং-২৩৯; কিতাবুল আসল: ১/২০, শরহু মুখতাসারিত তাহাভী: ১/২২৯, জাদীদ ফিকহি তাহকীকাত: ১০/৩২৯।

সালাত-নামায
সমস্যা: আমাদের গ্র্রামের মসজিদে কিছু লোককে দেখা যায়, ওজরের কারণে চেয়ারে বসে নামায আদায় করে। জানার বিষয় হচ্ছে,
১. চেয়ারে বসে নামায আদায়কারী কাতারের মাঝে চেয়ারের কোন খুঁটিগুলো রাখবে, সামনের দুই খুঁটি না পিছনের দুই খুঁটি?
২. চেয়ার কাতারের কোন স্থানে রাখবে? মধ্যখানে না এক পাশে, না পিছনের কাতারে?
৩. কোনো কোনো মানুষকে দেখা যায় যে, নামাযের শুরুতে এবং কেরাত ইত্যাদি ইমামের সাথে দাঁড়িয়ে আদায় করে, কিন্তু রুকু ও সেজদা চেয়ারে বসে আদায় করে, এভাবে নামায আদায় করলে নামায আদায় হবে কি না? বিষয়গুলো স্পষ্ট করে জানালে উপকৃত হবো।
মাওলানা ইউনুস সাহেব
লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: ১. যে সমস্ত মাজুর ব্যক্তি চেয়ারে বসে নামায আদায় করে তারা চেয়ারের পিছনের দুই খুঁটি কাতারের সাথে সমান করে বসাবে, যাতে পিছনের কাতারের মুসল্লিদের সিজদা করতে অসুবিধা না হয়, সে অবস্থায় চেয়ার কাতারের একটু আগে হলেও অসুবিধা হবে না, কেননা সেটা ওজর হিসেবে গন্য হবে।
২. কাতারের মধ্যখানে অথবা একপাশে চেয়ার রেখে নামায আদায় করা জায়েয আছে; কিন্তু একপাশে রাখা উত্তম।
৩. বিশেষ ওজরের কারণে যদি মাটিতে সেজদা করতে অক্ষম হয় এবং কোনোভাবেই মাটিতে সেজদা করতে না পারে এবং মাটিতে বসতেও খুব কষ্ট হয়, তখন চেয়ারে বসে রুকু-সিজদা মাথার ইশারার মাধ্যমে আদায় করলে আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু যদি কোনো রকম মাটিতে সেজদা করতে পারে, সে অবস্থায় চেয়ারে বসে ইশারা করে রুকু-সেজদা করলে নামায আদায় হবে না। আর দাঁড়িয়ে নামায পড়া অবস্থায় কোনো কারণে মাটিতে বসতে কষ্ট হলে চেয়ারে বসতে পারবে; কিন্তু সেজদা মাটিতে করতে হবে।
-সহীহ বুখারী: ১/১৫০, রূহুল মাআনী: ৪/৫০০, রদ্দুল মুহতার: ২/১৩৪, মারাকিল ফালাহ: ৪৩১
সমস্যা: আমাদের জামিয়ার জামে মসজিদে নামাযের ইকামতের অল্পক্ষণ পূর্বে ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করতে বলেন এবং এ ব্যাপারে জোর তাকিদ দিতে থাকেন। জানার বিষয় হলো, ইকামতের পূর্বে ইমাম সাহেব কর্তৃক এভাবে কাতার সোজা করার হুকুম কী? বিস্তারিত দলিল সহকারে জানিয়ে বাধিত করবেন।
মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
পটিয়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: নামাযের জন্য দাঁড়ানোর নির্দিষ্ট কোনো সময় নির্ধারিত নেই। আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহ. বলেন, ‘ইমাম মালেক এবং জুমহুর উলামায়ে কেরামের মতে নামাযের জন্য দাঁড়ানোর নির্দিষ্ট কোনো নির্ধারিত সময় নেই।’ তবে নামাযের সময় কাতার সোজা করা গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাহ। রাসূল ﷺ বলেন,
‘তোমরা কাতার সোজা করো, অন্যথায় আল্লাহ তাআলা তোমাদের চেহারা প্রকৃত অবস্থা থেকে পরিবর্তন করে দিবেন।’ (সহীহ বুখারী: ৭১৭)
আর রাসূল ﷺ যে ইকামতের পর سووا صفوفكم ইত্যাদি শব্দাবলি বলতেন তার উদ্দেশ্যও কাতার সোজা করা। তাই কাতার সোজা করার জন্য ইমাম সাহেব যেকোনো সময় কাতার সোজা করার কথা বলতে পারেন; এতে কোনো অসুবিধা নেই। বিশেষ করে বড় জামাতের ক্ষেত্রে একটু আগে কাতার সোজা করলে কাতারের মাঝখানে ফাঁকা থাকার সম্ভাবনা থাকে না। তবে ছোট জামাতের ক্ষেত্রে ইকামতের পরে বলা উত্তম হবে।
-সহীহ বুখারী: ১/১০০, সুনানু আবি দাউদ: ১/৯৭, সুনানু তিরমিযী: ১/৫৩, আদ দুররুল মুখতার: ২/৩৭০, জাওয়াহিরুল ফিকহ: ২/৪৩৮।
সমস্যা: পবিত্র কুরআনে যেসকল আয়াতে সিজদা আছে, তা পাঠ করলে সিজদা ওয়াজিব হয়। তবে প্রশ্ন হলো, কেউ যদি নামাযে আয়াতে সিজদায় প্রথমাংশ বা শুধু শেষাংশ তেলাওয়াত করে তার ওপর কি সিজদা ওয়াজিব হবে?
সমাধান: এ ক্ষেত্রে শরয়ী মূলনীতি হলো, নামাযে সিজদার প্রতি ইঙ্গিত বহন করে এমন কোনো অংশ শুনলে বা তেলাওয়াত করলেই সিজদা ওয়াজিব হয়ে যায়, চাই তা প্রথমাংশ হোক বা শেষাংশ হোক। হ্যাঁ, যদি পঠিত বা শ্রুত অংশে সিজদা বিষয়ক কোনো কথা না থাকে তাহলে সিজদা ওয়াজিব হবে না। -ফাতাওয়ায়ে শামী:২/১১০

যাকাত
সমস্যা: আমার আপন ভাই-বোনরা খুব অসহায়। এখন আমি আমার আপন ভাই-বোনকে যাকাত দিতে পারব?
মুহাম্মদ আনাস
রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।
সমাধান: আপন ভাই-বোন যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হলে অবশ্যই তাদের যাকাত দেওয়া যাবে এবং তাদের যাকাত দেওয়া উত্তমও বটে। কেননা তাদের যাকাত দিলে দু’ধরণের সাওয়াব পাওয়া যায়। সাদাকার সাওয়াব ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার সাওয়াব। -মুসনাদে আহমাদ: ১৫৭৯৪; সুনানে নাসায়ী: ২৫৮২।
সমস্যা: জনৈক ব্যক্তি রমজানে মাদরাসার জন্য চাঁদা (যাকাত, ফিতরা) কালেকশন করে মাদরাসার ফান্ডে জমা না দিয়ে উক্ত যাকাত ফিতরা থেকে কমিশন বলে শতকরা ২০% করে কমিটির কাউকে না জানিয়ে রেখে দেয়।
এখন আমার জানার বিষয় হল: এভাবে বিনা অনুমতিতে কমিশন নেওয়া; তাও আবার যাকাত, ফিতরার টাকা থেকে! এ-সব শরীয়ার দৃষ্টিতে কতটুকু বৈধ? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মুহাম্মদ হারেস
মহেশখালী, কক্সবাজার
সমাধান: মাদরাসার পক্ষ থেকে যারা কালেকশনে যায়, তাদের কর্তব্য হল: যাকাত-ফিতরার টাকা হুবহু মাদরাসায় বুঝিয়ে দেওয়া এবং সেখান থেকে প্রয়োজন ছাড়া কোনো ধরনের খরচ না-করা। কারণ প্রত্যেক কালেকশনকারী যাকাতদাতার পক্ষ থেকে একথার উকিল হয়েই কাজ করে যে, যাকাতের টাকাগুলো মাদরাসায় মুসহাহিকদের খাতে ব্যয়ের জন্য নিয়ে যাবে। তবে যদি একান্ত প্রয়োজন হয় যেমন: গাড়ি ভাড়া ইত্যাদি, তাহলে তা সেখান থেকে ম্যানেজ করবে। কিন্তু এ-কথার অনুমতি নেই যে, সেখান থেকে নিজের বেতন বা কমিশন নিবে, কারণ যাকাতের টাকা থেকে এভাবে বেতন বা কমিশন নেওয়া জয়েয নেই।
অতএব, যদি কেউ যাকাত-ফিতরা থেকে বেতন বা কমিশন নিয়ে থাকে তাহলে খিয়ানতের গুনাহ হবে এবং টাকাগুলোও হারাম হিসেবে গণ্য হবে।
তাই প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির জন্য যাকাত-ফিতরা থেকে পার্সেন্ট হিসেবে টাকা নেওয়া খিয়ানত হয়েছে। তাই অতিদ্রুত তা মাদরাসা ফান্ডে জমা দিয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাদরাসার চাঁদাফান্ড থেকে বেতন-ভাতা গ্রহণ করবে।
সূরা বাকারা: ২৮৩; সূরা তাওবা: ৬০; মুসনাদে আহমাদ: ১৯/৩৭৬; ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৪/৩৩৮

ইতেকাফ
সমস্যা: আমার বাড়ি থেকে সাহরি-ইফতারি আনার জন্য বাড়িতে কোনো পুরুষ নেই। এখন আমি ইতিকাফ অবস্থায় বাড়ি থেকে ইফতার ও সাহরি খেয়ে আসতে পারবো কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।
মুহাম্মদ আরশদ
রাউজান, চট্টগ্রাম।
সমাধান: ইতিকাফকারী বাড়ি থেকে ইফতার ও সাহরি খেয়ে আসতে পারবে না। তবে ইতিকাফকারীকে মসজিদে খাবার পৌঁছে দেওয়ার মতো কেউ না থাকলে খাবার আনার জন্য বাসায় যেতে পারবে। এ কারণে ইতিকাফ ভাঙবে না। তখন খাবার আনার জন্য মসজিদ থেকে বের হয়ে অন্য কোনো কাজে বিলম্ব করা যাবে না। অন্য কাজে অল্প সময় ব্যয় করলেও ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে। অবশ্য ঘটনাক্রমে খাবার প্রস্তুত না হলে সেজন্য অপেক্ষা করতে পারবে। -আল বাহরুর রায়েক: ২/৩০৩
সমস্যা: সুন্নত ইতিকাফকারী জানাযার নামাযের জন্য মসজিদের বাইরে যেতে পারবে কী?
কারী বেলাল
রাউজান, চট্টগ্রাম।
সমাধান: সুন্নত ইতিকাফকারী জানাযার নামাযের জন্য মসজিদের বাইরে গেলে তার ইতিকাফ ভেঙে যাবে। তবে ইতিকাফকারীর জন্য জানাযায় শরিক হওয়া আবশ্যক হলে সে যেতে পারবে কিন্তু এ কারণে তার ওই দিনের ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে এবং সুন্নত ইতিকাফও থাকবে না। এক্ষেত্রে তাকে একদিন রোযা অবস্থায় ইতিকাফের কাযা করতে হবে। – সুনানে আবু দাউদ: হাদীস ২৪৬৫, আল বাহরুর রায়েক: ২/৩০৪

হজ-ওমরা
সমস্যা: আমার আম্মা জীবদ্দশায় হজ করতে পারেননি। তাঁর ওপর হজ ফরয হয়েছিলো; কিন্তু কোনো মাহরাম না পাওয়ার কারণে হজ করতে পারেননি। তাঁর পক্ষ থেকে যেন আমি হজ করি তা তিনি বলে গিয়েছেন/ওসিয়ত করে গিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় অর্থও রেখে গিয়েছেন। অর্থাৎ আমার আম্মা আমার ছোট ভাইকে বলেছেন, ‘এই টাকাগুলো কুতুব-এর কাছে পাঠিয়ে দাও, সে হজ করবে।’ আমি এখনো হজ করিনি (আমার ওপর এখনো হজ ফরয হয়নি)। আম্মার পক্ষ থেকে আমি বদলি হজ করতে ইচ্ছুক।
এমতাবস্থায় আমি আমার আম্মার পক্ষ থেকে বদলি হজ আদায় করতে পারব কি? অনুগ্রহপূর্বক এ বিষয়ে একটি ফাতওয়া প্রদান করে বাধিত করবেন।
ড. মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন
অনুষদ সদস্য, ইসলামিক স্টাডিজ
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর।
সমাধান: যদি মায়্যিত নির্দিষ্ট কাউকে বদলি হজ করার জন্য অসিয়ত করে যান এবং হজ আদায় করার জন্য পর্যাপ্ত সম্পদও রেখে যান, তাহলে তাকেই উক্ত অসিয়ত পূরণ করতে হবে।
সুতরাং আপনার মা যেহেতু আপনাকে তাঁর পক্ষ থেকে বদলি হজ করার জন্য অসিয়ত করে গেছেন এবং প্রয়োজনীয় অর্থও রেখে গেছেন, তাই আপনার ওপর হজ ফরয না হওয়া সত্ত্বেও এবং পূর্বে আপনি হজ আদায় না করা সত্ত্বেও আপনার জন্য বদলি হজ করা যথাযথ হবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৪/৪২৯, হাদীস নং-১৪৭২৫, ১৪৭২৬, ফাতাওয়ায়ে শামী: ৪/২০

নেকাহ-তালাক
সমস্যা: রাগের কারণে আমি আমার স্ত্রীকে বলেছি যে, ‘আই তোরে (অর্থাত আমি তোমাকে দুই তালাক দিয়েছি আবারো বলছি আমি তোমাকে এক তালাক দিয়ে দিয়েছি, দুই তালাক দিয়ে দিয়েছি) দুই তালাক দিইয়ী। ভালো করে শুন, আবারও বলছি, ‘আই তোরে এক তালাক দিফেলাই, দুই তালাক দিফেলাই।’ মহোদয়ের কাছে বিনীত নিবেদন এই যে, এখন কি তালাক দুইটি পড়ছে না আরও বেশি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
হাফেজ মাওলানা ওসমান গণী
আনোয়ারা, চট্টগ্রাম
সমাধান: প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী বাস্তবেই যদি আপনার দুই তালাক দেওয়া এবং পরবর্তীতে উক্ত তালাকদ্বয় ভালো করে শুনিয়ে দেওয়া উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে আপনার স্ত্রীর ওপর দুই তালাকে রজয়ী পতিত হয়েছে। এখন আপনারা পুনরায় ঘর-সংসার করতে চাইলে ইদ্দতের মধ্যে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারবেন। অন্যথায় ইদ্দত শেষ হওয়ার সাথে সাথে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে আবার ঘর-সংসার করতে চাইলে নতুন মহর ধার্য করে যথানিয়মে বিবাহ নবায়ন করতে হবে। -সুরা বাকারা: ২২৮; আল মুহিতুল বুরহানী: ৩/৪৯৭; বাদায়েয়ুস সানায়ে: ৩/১০২; ফাতাওয়ায়ে শামী: ৩/২৯৩

ওয়াকফ
সমস্যা: ওয়াকফকারী একটি জায়গা মসজিদের জন্য ওয়াকফ করেছেন এবং ওয়াকফনামায় লিখেছেন, উক্ত জায়গাটির আয় দিয়ে মসজিদের মেরামত, ছাউনি ও ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন আদায় করা হবে। প্রশ্ন হলো, উক্ত জায়গায় কি কবরস্থান করা যাবে? দলিল সহকারে জানিয়ে বাধিত করবেন।
মুস্তাফিজুর রহমান
সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: ওয়াকফনামার বর্ণনা অনুযায়ী ওয়াকফকারী উক্ত জায়গাটি ওয়াকফ করেছেন যেন তার আয় দিয়ে মসজিদের মেরামত, ছাউনি ও ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন আদায় করা হয়। তাই উক্ত জায়গাটি উপরোক্ত উদ্দেশ্য ব্যতীত ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা অর্থাৎ তাতে কবরস্থান বা ঈদগাহ বানানো জায়েয হবে না; বরং তা ওয়াকফকারী যে উদ্দেশ্যে ওয়াকফ করেছেন সে উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করতে হবে। কেননা ওয়াকফিয়া জিনিসের ক্ষেত্রে ওয়াকফকারীর বৈধ উদ্দেশ্য ও শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন করা আবশ্যক। -ফাতাওয়ায়ে শামী: ৬/৬৬৪; মিনহাতুল খালেক আলাল বাহরির রায়েক: ৫/২৬৬; ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ২১/১২৩

মিরাস
সমস্যা: একজন ব্যক্তির দুটি স্ত্রী রয়েছে। প্রথম স্ত্রী স্বচ্ছল, তার কাছে স¤পদ রয়েছে, কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রীর কোনো স¤পদ নেই। এমতাবস্থায় যদি প্রথম স্ত্রী স্বামীর জীবদ্দশায় ইন্তেকাল করেন, তাহলে শরীয়তের ওয়ারাসাতের নিয়ম অনুসারে স্বামী তার নির্ধারিত অংশের ওয়ারিশ হবেন। পরবর্তী সময়ে যদি সেই স্বামীও ইন্তেকাল করেন, তাহলে তার ওয়ারিশদের মধ্যে দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানরাও থাকবেন। ফলে স্বামী প্রথম স্ত্রীর স¤পত্তি থেকে যে অংশ পাবেন, সেটাও তার সকল ওয়ারিশদের মধ্যে বণ্টিত হবে।
এই আশঙ্কায় প্রথম স্ত্রী ইন্তেকালের আগে নিজের সমস্ত স¤পত্তি স্বামীকে বাদ দিয়ে কেবল নিজের সন্তানদের নামে লিখে দেন, যাতে তার সতীন অর্থাৎ স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানরা সেই সম্পদের কোনো অংশ না পায়। এমন পরিস্থিতিতে, উক্ত স্ত্রীর এই পদক্ষেপ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
মাওলানা রিদওয়ান
বাহারছড়া, সাবরাং, টেকনাফ
সমাধান: শরয়ী কোনো কারণ ছাড়া কোনো ওয়ারিশকে সমুদয় সম্পদ থেকে বঞ্চিত করা জায়েয নেই। হাদীসে আছে, আনাস (রা.) বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
مَنْ فَرَّ مِنْ مِيرَاثِ وَارِثِهِ، ‌قَطَعَ ‌اللَّهُ ‌مِيرَاثَهُ ‌مِنْ ‌الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
‘যে ব্যক্তি তার ওয়ারিশদের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করে, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তাকে জান্নাতের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন।’ ইবনে মাজাহ: ২৭০৩
তাই প্রশ্নে উল্লিখিত ক্ষেত্রে সতীনের সন্তানদের বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে স্বামীকে বঞ্চিত করে সমুদয় সম্পদ নিজ সন্তানদেরকে দিয়ে দিলে বা হেবা করলে সে গুনাহগার হবে। তবে হেবা করে তাদের ভোগদখলে দিয়ে দিলে তারা মালিক হয়ে যাবে। -সূরা নিসা: ১৩-১৪, আত তাইসির শারহু জামে সগির: ২/৪৩৩, ফায়যুল কাদীর: ৬/১৮৬

মুআমালা-লেনদেন
সমস্যা: একজন আলেম একটি মাদরাসায় খেদমত করেন এবং তিনি মাদরাসা থেকে খানা খান। ফলে তিনি মাদরাসার কোনো জরুরি কাজে কোথাও গেলে ওই শিক্ষকের খাবার তার সন্তান বা খাদেমদের জন্য ওঠানো বা খাওয়া জায়েয আছে কি? বিশেষভাবে জানতে চাই, ওই উস্তাদ নিজের খাবার অন্য কোনো ছাত্রকে বিক্রি করলে তখন ওই উস্তাদ যতদিন মাদরাসায় না থাকে, মাদরাসার কাজের কারণে কিংবা ব্যক্তিগত কারণে, ততদিন তার খাবার ওঠানো জায়েয আছে কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মুহা. নুরুল হক
বাঁশখালী, চট্টগ্রাম
সমাধান: প্রশ্নে উল্লিখিত বিষয়টি সম্পূর্ণ উক্ত মাদরাসার উরফ তথা প্রথা, মুহতামিমের অনুমতি ও মাদরাসার কানুনের ওপর নির্ভরশীল। যেসব মাদরাসায় উপরোক্ত অবস্থায় খানা ওঠানোর প্রথা ও বৈধতা আছে সেখানে জায়েয ও বৈধ হবে। আর যেখানে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আছে, সেখানে নাজায়েয ও অবৈধ হবে।
ফাতাওয়ায়ে শামী: ৪/৪১৯, ৪/৪৪৫, আল আশবাহ ওয়ান নাযায়ের: ৭৯, মাদারেস: ২৭৮
সমস্যা: আমার সাড়ে ৪ মাস বয়সে আমার বাবা আমাকে অন্যজনের কাছ থেকে ১৬/১১/৭২ ইংরেজিতে সাড়ে ৫ গন্ডা জমি সাব কবলা মূলে খরিদ করে দেন, ওই দলিলে আমার বাবা কিনে দিছে তাও লিখা নাই। আমার বাবা মৃত্যু বরণ করেণ ২০১৫ ইংরেজিতে, মৃত্যুবরণ করার আগে বলে যায় ওই জায়গাটি আমার নামে কিনে দিছে।
আমার বাবা জীবিত থাকাবস্থায় আমার নামে খতিয়ানও জারি করে দিয়ে যায় এবং জায়গাটি আমি বড় হওয়ার পর আমার বাবার মৃত্যুর আগ থেকে এই পর্যন্ত আমার দখলে রয়েছে। বর্তমানে আমার ভাই-বোনেরা ওই জায়গার অংশিদারিত্ব দাবি করতেছে, অতএব আমাকে জানাবেন আমার ভাই-বোনেরা সেই জায়গা থেকে অংশ পাবে কিনা? ইসলামী শরীয়া মোতাবেক জানিয়ে বাধিত করবেন।
মোঃ নজরুল ইসলাম
পটিয়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: কোনো ব্যক্তি যদি তার ছেলে-মেয়ে অথবা অন্য কাউকে জমি ইত্যাদি জিম্মায় দিয়ে যেতে চায়, তাহলে উক্ত জমিখানা তার কব্জায় অর্থাৎ তার দখলে দিয়ে দিতে হবে। দখলে না দিয়ে শুধু কাগজ-পত্র করে দেওয়া যথেষ্ট নয়। কারণ ফুকাহায়ে কেরাম “হেবা” অর্থাৎ দান সঠিক হওয়ার জন্য “কব্জ” অর্থাৎ দখলকে শর্তারোপ করেছেন। অর্থাৎ মৃত্যুর আগে বলে যাওয়া বা কাগজপত্র করে দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো দখলে দিয়ে দেওয়া।
অতএব, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অপনার বাবা আপনার নামে ৭২ ইংরেজিতে আপনার ছোট বেলায় জমিখানা কাগজ-কলমে লিখে দেয়ার পর যখন আপনি বড় হয়েছেন, তখন যদি আপনার দখলে দিয়ে থাকেন এবং আপনার বাবার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপনার দখলে থেকে থাকে তাহলে জমির মালিক শুধু আপনিই হবেন, আপনার ভাই-বোনেরা কোনো অংশ পাবে না।
কিন্তু আপনার বাবা যদি মৃত্যুর আগে জমিখানা আপনার দখলে না দিয়ে শুধু কাগজ-পত্রে অথবা মুখে বলে যায় তাহলে আপনি ওই জমির মালিক হননি তাই আপনার ভাই-বোনরাও অংশ পাবে।
-ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৪/৩৭৪; ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম: ১৫/২৩৬
সমস্যা: কিছু মুসলমান নারী ও পুরুষ আছে যাদের আনসার, ভিডিবি এর ট্রেনিং আছে। সরকার তাদের ইলেকশনের এবং পূঁজার ডিউটির জন্য নিয়োগ দিয়েছে। শর্ত হলো, পূঁজার ডিউটি পালন না করলে ইলেকশন বা ভোটের ডিউটি করতে পারবে না। জানার বিষয় হলো, পূঁজার ডিউটি মুসলমান পুরুষ এবং মহিলা পালন করতে পারবেন কিনা?
বিশেষ করে জানতে চাই, এমন ব্যক্তির একজন আলেম সন্তান রয়েছে যিনি মসজিদে ইমামতি করে, এখন মুসল্লিরা তার পিতার পূঁজামন্ডপ পাহারা দেওয়ার কথা জানতে পেরে তার পিছনে নামাজ পড়তে অসম্মতি প্রকাশ করে। জানার বিষয় হলো এক্ষেত্রে ওই আলেম সন্তানের পিছনে নামাজ আদায় করার ব্যাপারে শরয়ী কোনো বিধি নিষেধ আসবে কি? আর ওই পিতার এমন কর্মের জন্য আলেম সন্তানের করণীয় কী ? কুরআন-হাদীসের আলোকে সঠিক পরামর্শ দিলে উপকৃত হতাম।
মোঃ মুইনুল ইসলাম
রাঙামাটি, চট্টগ্রাম।
সমাধান: কুরআন-হাদীসের আলোকে পরিচালিত ইসলামী রাষ্ট্রে কোনো অমুসলিম জিযিয়া, খেরাজ ও টেক্স আদায় করে বসবাস করলে তার জান-মালের নিরাপত্তার দায়িত্ব মুসলিম সরকারের; কিন্তু আমাদের দেশ সেরকম মুসলিম রাষ্ট্র নয় বিধায় তার হুকুম ভিন্ন। আর আমাদের দেশে অমুসলিমরা যেহেতু জিম্মি হিসেবে বসবাস করে না, তাই তাদের দায়িত্ব মুসলমানদের ওপর নয়। আর একজন মুসলমানের জন্য কোনো শিরক-কুফরি কাজে বা তাদের কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সাহায্য করা হারাম, অনেক ক্ষেত্রে কুফরিও বটে। তাই যদি কোনো মুসলামন জেনে-বুঝে তাতে শরিক হয় তাহলে সে গুনাহগার হবে। ক্ষেত্রবিশেষ ঈমান চলে যাওয়ার সম্ভাবনাও আছে।
সুতরাং আনসার, ভিডিবি যারা সদস্য আছেন তাদের যদি সরকার কর্তৃক আদেশ করা হয় পূঁজার ডিউটির জন্য তাহলে তাদের জন্য মুসলমান হিসেবে ওই সমস্ত দায়িত্ব পালন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আর সরকারের উচিৎ ওই সকল ক্ষেত্রে অমুসলিম আনসার বা পুলিশ ব্যবহার করা। এক্ষেত্রে আলেম সন্তানের উচিৎ হলো, তার পিতাকে সেই গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখা। আর পিতার অপরাধের জন্য তার পিছনে নামায আদায় করতে কোনো সমস্যা নেই।
সূরা মায়িদা: ২; সুনানু তিরমিযী: ১৭০৭; আল বাহরুর রায়েক: ৮/৩৪৬; শামী: ৬/৩৩০

অন্যান্য
সমস্যা: চকরিয়াস্থ ডুলাহাজারা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি একটি সুপ্রাচীন মসজিদ। যা ডুলাহাজারার প্রাণকেন্দ্র এবং বাজারের পাশের্^ অবস্থিত। বেশ কিছুদিন ধরে প্রতিনিয়ত মসজিদের দানবক্স ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির ঘটনা ঘটছে এবং কিছুতেই তা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। মসজিদ কমিটি চুরি প্রতিরোধের নিমিত্তে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মতামত প্রদান করছে। কিন্তু ইসলামী শরীয়তে তার গ্রহণযোগ্যতা/বৈধতা কিংবা জায়েয আছে কি-না তা জানা খুবই জরুরি। এখানে উল্লেখ্য যে, সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ক্ষেত্রে তার প্রধান তিনটি অংশ- (১) ক্যামেরা, (২) ডিভিআর (ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার), (৩) মনিটর ইত্যাদি মসজিদের বাইরে স্থাপনের আবশ্যকতা থাকলে তার ব্যাপারেও মতামত প্রদানের বিনীত অনুরোধ রইল।
আব্দুল কুদ্দুছ
খতিব ও ইমাম, ডুলাহাজারা, চকরিয়া, কক্সবাজার
সমাধান: বর্তমান উলামায়ে কেরাম প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজন অনুপাতে মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয় মতো সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করেছেন। কারণ তা দ্বারা সাধারণত ভিডিও বা ছবি তোলা উদ্দেশ্য হয় না; বরং নিরাপত্তা ও সেইফটি মূল উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মসজিদ কমিটি মসজিদের নিরাপত্তার স্বার্থে, বিশেষ করে চুরি প্রতিরোধের নিমিত্তে শুধু প্রয়োজন অনুপাতে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করতে পারবে। প্রয়োজনাতিরিক্ত কোনোভাবেই ব্যবহারের অনুমতি নেই। কেননা ইসলামের দৃষ্টিতে ছবি তোলা বা ভিডিও করা জঘন্যতম অন্যায়।
মসজিদের ভেতর ভিডিআর আর মনিটরের কোনো প্রয়োজন নেই। অতএব, মসজিদের ভেতর তা স্থাপন করা যাবে না। ভেতরে ক্যামেরার যদি বিশেষ কোনো প্রয়োজন না থাকে, তাহলে তাও ভেতরে লাগানো যাবে না। আর যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে শুধু প্রয়োজন অনুযায়ী লাগাতে পারবে।
সূরা হুজরাত: ১২; সহীহ বুখারী: ৫২০৬; সহীহ মুসলিম: ২১০৯, ২১৮৫; বেনায়া: ১০/২৭০; ফাতাওয়ায়ে কাসিমিয়্যা: ২৪/৬১৩

সমস্যা: আমি কিছুদিন পূর্বে একটা জায়গা বিক্রির ঘোষণা দিলে একজনের সাথে আমাদের জমিখানার মূল্য প্রতি কড়া ৫০ হাজার করে মূল্য ধার্য করা হয় এবং বায়নানামা করার দিনও ধার্য করা হয়। ইতোমধ্যে বায়না করার পূর্বে ক্রেতারা বলল, আমরা তোমার জমিখানা দাগের সাথে মিল আছে কিনা দেখব। ফলে আমরা বললাম ঠিক আছে, তোমাদের আগে আমি যাচাই বাচাই করে দেখি। পরে আমরা একজন সার্ভেয়ারের সাথে দেখা করে জানতে পারি যে, আমার জমিতে দাগজনিত একটি সমস্য আছে। তাই আমরা উক্ত ক্রেতাকে বললাম, ভাই আমার জমিতে সমস্যা আছে। আপনারা কি নিবেন? তারা আমাদের জানালেন, তারা জমি নিবেন না। আমরা একাধিকবার জিজ্ঞাসা করার পরও তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় তারা জমি নিবে না। এতটুকুতেই তাদের সাথে আমাদের লেন-দেনের কথা শেষ হয়ে যায়। ফলে আমরা অন্য একজনের কাছে জমিটি বিক্রির পর প্রথম ক্রেতা পক্ষ যাদের বিবরণ আমরা উপরে দিয়েছি তারা আমাদের কাছে ৬০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি করে। কারণ হিসেবে তারা বলে, আমরা আপনাদেরকে বায়না করার জন্য স্বর্ণ বিক্রি করি, ওই স্বর্ণ ২য় বার বানানোর জন্য আমাদের ৬০ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। যেহেতু স্বর্ণের দাম বাড়তি। অথচ তারা আমাদেরকে বায়না করেনি; বরং তারা জমি ক্রয় থেকে সরে দাড়িয়েছিল এবং স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল জমি নিবে না।
সুতরাং মুহতারাম মুফতি সাহেবের কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা হলো:
১. কখন কার ওপর কোনো বিষয়ের ক্ষতিপূরণ আবশ্যক হয়?
২. পূর্বের পূর্ণ বিবরণ বিবেচনায় আমাদের ওপর কি প্রথম ক্রেতা পক্ষের দাবি করা ক্ষাতিপূরণ আবশ্যক হবে? হলে কিসের ভিত্তিতে দলিলের আলোকে সবিস্তারে জানিয়ে বাধিত করবেন।
মাওলানা হুসাইন
টেকনাফ
সমাধান: ক্ষতিপূরণ কখন বা কী কারণে আবশ্যক হবে- এ সংক্রান্ত ফুকাহায়ে কেরাম কিছু মূলনীতি বর্ণনা করেছেন।
الضمانات تجب إما بأخذ أو بشرط وإلا لم تجب
অর্থ: “জরিমানা আবশ্যক হবে হয়তো হস্তগত করার করণে অথবা শর্ত (চুক্তি গ্রহণ)-এর কারণে। অন্যথায় কোনো জরিমানা নেই”
يجب الضمان عند االاستهلاك بعد القبض
অর্থ: কব্জা বা হস্তগত করার পরে ধ্বংস বা নষ্ট হয়ে গেলে ক্ষতিপূরণ ওয়াজিব হবে”
উল্লেখিত মূলনীতিদ্বয়ের আলোকে আপনাদের ওপর কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণ আবশ্যক হবে না। কারণ প্রথম ব্যাক্তি যেহেতু জমিটি ক্রয় করবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে করে দিয়েছে, তাই ওই জমি ক্রয় বা বিক্রির সাথে তার আর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তার স্বর্ণ বিক্রি করা এবং এক্ষেত্রে সে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সাথে আপনাদের কোনো সম্পর্ক নেই এবং সে আপনাদের কাছে কোনো প্রকারের ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে না। বরং স্বর্ণ বিক্রি বাবদ তার ৬০ হাজার টাকা ক্ষতি হওয়া এটা একান্ত তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
-ফাতাওয়ায়ে শামী: ৯/৩০১, ৩৫৫, মাজমাউজ জিমানাত: ১/৩০৫; কাওয়ায়িদুল ফিকহ: ৬১

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ