জামেয়া ওয়েবসাইট

বৃহস্পতিবার-২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি-৭ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ-২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ঈমানে সমতার মাসআলা

 

মূল: শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী (রহ.)

তাসহীল ও তারতীব

শায়খুল হাদীস মুফতি সাইদ আহমদ পালনপুরী (রহ.)

মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আমীন পালনপুরী

 

 

     অনুবাদ: মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী

        অনুবাদক: লেখক, গবেষক ও পীর সাহেব বায়তুশ শরফ, চট্টগ্রাম

 

ইমাম আযম w থেকে দুটি কথা বর্ণিত আছে,

  1. إِيمَانِيْ كَإِيْمَانِ جَبْرَئِيْلَ (আমার ঈমান হযরত জিবরাইল -এর ঈমানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।)[1]
  2. إِيْمَانُ أَهْلِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَإِيْمَانُ الْأَوَّلِيْنَ وَالْآخَرِيْنَ وَالْأَنْبِيَاءِ وَاحِدٌ (আসমান ও জমিনঅলাদের ঈমান, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ও নবীদের ঈমান একই।)[2]

ইমাম আযম w-এর এসব বক্তব্যের মর্ম অজ্ঞ-মুর্খরা বুঝতে পারেনি অথবা গল্পকে বিভ্রান্তিকর[3] বানানোর উদ্দেশ্যে ভুল অর্থ গ্রহণ করে অবিবেচকের মতো ঝড় তুলেছে। আল্লাহর পানাহ, কিছু লোক তো ইমাম সাহেবের ওপর মুরজিয়া হওয়ার অপবাদ দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু যখন তাঁর এসব বক্তব্যের সঠিক মর্ম মানুষের সামনে চলে এসেছে, তখন ইনসাফপ্রিয় মানুষ নীরব হয়ে গেছেন। তবে অন্তর খারাম মানুষ এখনও এসব বক্তব্যকে ভুলভাবে প্রচার করে নিজের (অসুস্থ) হৃদয়ের ফোস্কা ফেটে যাচ্ছে।

যেহেতু আহলে হাদীস হযরাতের বেশ বড় একজন আলেম মৌলভী মুহাম্মদ হুসাইন বাটালভী সাহেব ভারতবর্ষের সকল হানাফীদেরকে যে চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন এবং বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে যে ১০টি প্রশ্ন করেছেন তার মধ্যে এই প্রশ্নটিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এটি ঈমানের সমতার মাসআলার নামে পরিচিত। আর এর ভিত্তি হচ্ছে ঈমানের সংজ্ঞার ওপর। অতএব আগে ঈমানের প্রকৃতি বুঝে নেওয়া আবশ্যক।

ঈমানের সংজ্ঞা নিয়ে মতপার্থক্য

ঈমানের সংজ্ঞা নিয়ে ইসলামি ফেরকাসমূহের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য পাওয়া যায়। স্বয়ং হকপন্থিদের মধ্যেও মতপার্থক্য রয়েছে। মুহাদ্দিসরা ঈমানের সংজ্ঞা দিয়েছেন এক রকম আর হানাফীরা সংজ্ঞা দিয়েছেন অন্য রকম। কিন্তু যখন একে অপরের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে তখন জানা গেল যে, হকপন্থিদের মধ্যে ঝগড়া (মতবিরোধ) নিছক শব্দগত, প্রকৃত ঝগড়া তো শুধু বাতিল ফেরকাগুলোর সাথেই।

শব্দগত মতবিরোধ

শব্দগত মতবিরোধ কয়েক প্রকার হতে পারে। উদাহরণত দুই বিরোধপূর্ণ কথার উদিষ্ট[4] বিষয় ভিন্ন ভিন্ন হওয়া। যেমন যায়েদের দুই সন্তান; একজন বড় আলেম, অন্যজন বড্ড মূর্খ। অতএব যদি কোনো ব্যক্তি বলে থাকে যে, যায়েদের ছেলে বেশ বড় আলেম, আর অন্য কেউ সেই কথা প্রত্যাখ্যান করে বলল, সে তো সম্পূর্ণ মূর্খ। বস্তুত তাদের দুজনের দৃষ্টিতে (বিচারের বিষয়) যায়েদের ভিন্ন ভিন্ন সন্তানরা। তখন এটাকে শব্দগত পার্থক্য বলা হয়। কেননা যখন প্রকৃত অবস্থা জানা যায় যে, যায়েদের দুই সন্তান; একজন আলেম, আরেকজন মূর্খ তখন বিরোধ শেষ হয়ে যায়।

অথবা একটি শব্দের দুটি অর্থ; এ দুই অর্থের মধ্যে কারও দৃষ্টিভঙ্গিতে এক অর্থ এবং অন্যজনের দৃষ্টিতে ভিন্ন অর্থ। আর তারা পরস্পরের মধ্যে তর্ক-বির্তক করে তাহলে এটা নিছক শাব্দিক মতবিরোধ। যখন প্রকৃত অবস্থা সামনে এসে যায় যে, এ শব্দের দুটো অর্থ রয়েছে তখন বিরোধের পরিসমাপ্তি হয়ে যায়।

অথবা একটি জিনিসের দুটি প্রকার; কিছু মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে এক প্রকার এবং অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গিতে ভিন্ন প্রকার। আর তারা পরস্পর মতবিরোধ করে, তা হলে এটাও শব্দগত মতবিরোধ।

ঈমানের দুই অর্থ

ঈমানের দুই অর্থ অথবা এও বলা যায় যে, ঈমান দুই প্রকার। এক. স্বয়ং ঈমান ও দুই. পরিপূর্ণ ঈমান। যেমন মানুষ দুই প্রকার হয়ে থাকে। (১) স্রেফ মানুষ ও (২) পরিপূর্ণ মানুষ। শুধু মানুষ হচ্ছে যাকে বাক্শক্তিসম্পন্ন প্রাণী বলা যায়। হোক না তার দুই হাত না থাকে, দুই পা না থাকে, অত্যন্ত কুশ্রী এবং প্রথম শ্রেণির বেকুব। তারপরও সে মানুষ। পক্ষান্তরে পরিপূর্ণ মানুষ হচ্ছেন যিনি পরিপূর্ণ চরিত্রের অধিকারী, বুদ্ধি-বিচারে অনন্য হবেন, সতত-সৌন্দর্যে যুগের ইউসুফ হবেন, শক্তি ও সামথ্যে সময়ের রুস্তম হবেন, পরিচ্ছন্নতা-পবিত্রতায় ফেরেশতাবৈশিষ্ট্যের অধিকারী হবেন। তা হলে তিনিও মানুষ, তবে তিনি পরিপূর্ণ মানুষ।

এভাবেই বুঝতে হবে যে, ঈমানও দুই ধরনের। প্রথমত স্বয়ং ঈমান, যার ওপর আখেরাতের মুক্তি নির্ভর করে। দ্বিতীয়ত পরিপূর্ণ ঈমান, যা মুক্তিতে অগ্রাধিকারের গ্যারান্টি দেয়। সুতরাং অনেকে স্বয়ং ঈমানের সংজ্ঞা করেছেন, আর অনেকে করেছেন পরিপূর্ণ ঈমানের সংজ্ঞা। যার কারণে ঈমানের সংজ্ঞা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে। কিন্তু যখন প্রকৃত অবস্থা স্পষ্ট হয় যে, সংজ্ঞায়িত[5] বিষয় ভিন্ন ভিন্ন, তখন ইনসাফপ্রিয় মানুষ মেনে নেন যে, এটি নিছক শাব্দিক মতবিরোধ।

ঈমানের প্রথম সংজ্ঞা

মাতুরীদী ও জুমহুর মুহাক্কিকগণ শুধু তাসদীকে কালবী (অন্তরের সত্যায়ন)-কে ঈমান বলে থাকেন এবং মৌখিক স্বীকৃতিকে দীনী বিধি-বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে শর্ত বলে সাব্যস্ত করেন। সারাখসী[6], বাযদাভী[7] এবং আরও অনেক হানাফীদের মতে, তাসদীকে কালবী (আন্তরিক বিশ্বাস) ও ইকরারে লিসানী (মৌখিক স্বীকৃতি)-এর সমন্বিত রূপের নাম ঈমান। অতঃপর তাঁদের মাঝে মতপার্থক্য হচ্ছে, স্বীকৃতি ঈমানের মৌলিক রুকন নাকি অতিরিক্ত বিষয়? ইমাম আযম ফিকহুল আকবরে বলেন,

الْإِيْمَانُ: هُوَ الْإِقْرَارُ وَالتَّصْدِيْقُ.

‘ঈমান হচ্ছে স্বীকৃতি ও সত্যায়নের নাম।’[8]

তবে ইমাম আযম (w) একথা স্পষ্ট করেননি যে, স্বীকৃতি ঈমানের প্রকৃত অংশ নাকি অতিরিক্ত? মুহাক্কিকদের মত হচ্ছে, অতিরিক্ত অংশ, ইহকালে কাউকে মুসলিম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য স্বীকারোক্তি শর্ত। নতুবা ঈমান হচ্ছে একক, এর কোনো অংশ নেই। সুতরাং মাতুরীদীদের সংজ্ঞা এবং অন্যান্য হানাফীদের সংজ্ঞায় প্রকৃতপক্ষে কোনো মতবিরোধ নেই।

এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা হচ্ছে, মুমিন হওয়ার জন্য যেসব জিনিসের ওপর ঈমান আনা জরুরি সেসব জিনিসকে আন্তরিকভাবে মেনে নেওয়ার নাম ঈমান। হাদীসে জিবরাইলে যা মিশকাত শরীফের একদম শুরুতে এসেছে, তাতে হযরত জিবরাইল n হুযুর আকরম D-কে জিজ্ঞাসা করেছেন যে, ঈমান কী? হুযুর আকরম D ইরশাদ করেছেন যে,

«أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ».

‘ঈমান হচ্ছে, আপনি আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবেন, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রসুলগণের, ইহ-পাকালকের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবেন এবং তাকদীরের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবেন।’[9]

হযরত জিবরাইল n নববী জবাবকে সমর্থন করে বলেছেন, صَدَقْتَ (আপনি সত্য বলেছেন)। নববী এ জবাব ও জিবরাইলের সমর্থন থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, ঈমান শুধু আন্তরিক বিশ্বাসের নাম। কেননা এ হাদীসে ঈমানের সম্বন্ধ بَ-এর সাথে এসেছে। এ অবস্থার ঈমানের অর্থ তাসদীক অর্থাৎ ইয়কীন (দৃঢ় বিশ্বাস) করতে হবে।

আর এই ছয়টি জিনিস; যেসব মেনে নেওয়াকে ঈমান বলে ঘোষণা করা হয়েছে, সেসবকে مُؤْمَنٌ بِهِمُصَدَّقٌ بِهِ (সেসব জিনিস যেসবের প্রতি ঈমান আনা এবং যেসবকে মেনে নেওয়া আবশ্যক) বলা হয়। এর আরও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা হচ্ছে, الْإِيْمَانُ بِمَا جَاءَ بِهِ الرَّسُوْلُ ﷺ অর্থাৎ আল্লাহর রসুল সা.-এর নিয়ে আসা সকল শিক্ষাকে সাচ্চা দিলে মেনে নেওয়ার নাম ঈমান।

মোটকথা মুমিন হওয়ার জন্য হুযুর আকরম D-এর নিয়ে আসা সকল শিক্ষাকে আন্তরিকভাবে মেনে নেওয়া আবশ্যক। যদি এর মধ্যে কোনো একটি জিনিসকেও মেনে না নেয় তবে সে মুমিন হবে পারবে না, বরং কাফের হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে যদি কোনো ব্যক্তি ঈমান আনার পর مُؤْمَنٌ بِهِ (ঈমান আনা আবশ্যক জিনিসের মধ্যে) কোনো একটি অন্তরে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে তাহলে সে মুমিন থাকবে না, কাফের হয়ে যাবে।

ঈমান একক হওয়ার প্রমাণ

মুফাসসিরে কুরআন কাযী বায়যাভী w তাঁর তাফসীরগ্রন্থে সূরা বাকারার শুরুতে ঈমান একক হওয়ার ওপর বেশকিছু প্রমাণ দিয়েছেন। যার মধ্যে দুটি হচ্ছে নিম্নরূপ:

  1. প্রথম দলিল হচ্ছে, বিভিন্ন আয়াতে অন্তরকে ঈমানের জায়গা আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমন- اُولٰٓىِٕكَ كَتَبَ فِيْ قُلُوْبِهِمُ الْاِيْمَانَ ؕ ۰۰۲۲ (সেসব লোকের অন্তরে আল্লাহ তাআলা ঈমান প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন।)[10] আর একথা তো স্পষ্ট যে, অন্তরে শুধু তাসদীকই (সত্যায়ন) পাওয়া যায়। সুতরাং এর নামই হচ্ছে ঈমান।
  2. দ্বিতীয় দলিল হচ্ছে, কোনো কোনো আয়াতে ঈমানকে অন্তরের দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ ঈমানকে অন্তরের ক্রিয়া হিসেবে বলা হয়েছে। যেমন- قَالُوْۤا اٰمَنَّا بِاَفْوَاهِهِمْ وَلَمْ تُؤْمِنْ قُلُوْبُهُمْ١ۛۚ ۰۰۴۱ (তারা মুখে বলে যে, আমরা ঈমান এনেছি, কিন্তু তাদের অন্তর আস্থা রাখে না।)[11] এ ধরনের আয়াত থেকেও একথা স্পষ্ট হয় যে, ঈমান অন্তরের ক্রিয়া এবং অন্তরের ক্রিয়া হচ্ছে বিশ্বাস। সুতরাং সেটিই ঈমান।[12]

ঈমানের দ্বিতীয় সংজ্ঞা

এ বিপরীতে জুমহুরে মুহাদ্দিসীন, আশআরী, মুতাযিলা ও খারেজিদের নিকট ঈমান হচ্ছে আন্তরিক বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি ও দৈহিক ক্রিয়া সম্পাদনের সমষ্টিগত নাম। এসব হযরাত তাদের অবস্থানকে কুরআন-হাদীস থেকে প্রমাণপুষ্ট করার জন্য পা-মাথার বেশ জোর লাগিয়েছে। যার বিস্তারিত বিবরণ বড় বড় কিতাবে বর্ণিত আছে।

ঈমানে হ্রাস-বৃদ্ধি হয় কি না?

এসব হযরাত যখন আমলকে ঈমানের অঙ্গ সাব্যস্ত করায় স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন দাঁড়ায় ঈমান কমে-বাড়ে কি না? সকল মুমিনের ঈমান কি সমান না কি পার্থক্য আছে?

হানাফীদের নিকট যেহেতু আমল ঈমানের অঙ্গ নয়, তাই তাঁরা এটা অস্বীকার করেছেন এবং একথা বলেছেন যে, إِيمَانِيْ كَإِيْمَانِ جَبْرَئِيْلَ (আমার ঈমান হযরত জিবরাইল n-এর ঈমানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।)[13] আর الْـمُؤْمِنُوْنَ مُسْتَوُوْنَ فِي الْإِيْمَانِ অর্থাৎ ঈমানে হ্রাস-বৃদ্ধি হয় না এবং সকল মুমিন, এমনকি একজন সাধারণ মানুষ আর বড় বড় ফেরেশতাদের ঈমান সমান।[14] কেননা আমল ঈমানের অংশ নয়। আর মূল তাসদীকে (সত্যায়ন) হ্রাস-বৃদ্ধি সম্ভব নয়। কেননা তাসদীক ‘কেমন’-এর জবাবে বিবৃত হয়, ‘কত’-এর জবাবে বিবৃত হয় না। অর্থাৎ তাসদীক হচ্ছে একটি অন্তরের অবস্থার নাম এবং অবস্থার মধ্যে বলিষ্ঠতা ও দুর্বলতা হতে পারে, কিন্তু হ্রাস-বৃদ্ধি হতে পারে না। কেননা হ্রাস-বৃদ্ধি পরিমাণের বৈশিষ্ট্য, অবস্থায় হ্রাস-বৃদ্ধি হয় না।

যা হোক, হ্রাস-বৃদ্ধির দুই অর্থ। এক. প্রকৃত ও দুই. রূপক। প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, দুটো জিনিসের পরিমাণ-পারিমাপ ভিন্ন ভিন্ন হওয়া। আর রূপক অর্থ হচ্ছে, দুটো জিনিসের অবস্থায় অর্থাৎ শক্তিশালিতা ও দুর্বলতার দিক থেকে ভিন্ন ভিন্ন হওয়া। প্রকৃত অর্থের দিক থেকে ঈমানে হ্রাস-বৃদ্ধি হতে পারে না আর রূপক অর্থের দিক থেকে ঈমানে হ্রাস-বৃদ্ধি হওয়া এটি এতটা স্পষ্ট যে, যেকোনো জ্ঞানী তা অস্বীকার করতে পারে না।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যখন ঈমান ‘কেমন’-এর জবাবে বিবৃত হওয়ার বিষয় এবং এতে হ্রাস-বৃদ্ধি হতে না পারে তাহলে সমতা কীভাবে হবে? কেননা সমতা সেসব জিনিসেই হতে পারে যেখানে হ্রাস-বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। আর ঈমানে হ্রাস-বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই, এ কারণে সমতাও হতে পারে না। কাজেই হানাফীদের একথা বলা যে, সকল মুমিন ঈমানে সমান এবং একই কীভাবে যথার্থ হতে পারে?

তার জবাব হচ্ছে, ঈমানে যদিও প্রকৃতভাবে কোনো সমতা হতে পারে না, কিন্তু ঈমানের কেন্দ্রস্থল অর্থাৎ مُؤْمَنٌ بِهِ (যেসব বিষয়ের ওপর ঈমান আনা আবশ্যক)-এর দিক থেকে সমতা হতে পারে। আর হানাফীরা مُؤْمَنٌ بِهِ-এর বিচারে সমতা প্রমাণ করেছেন। হযরত (শায়খুল হিন্দ) u ঈযাহুল আদিল্লায় লিখেছেন যে,

حضرت امام صاحب جو جملہ مؤمنین کو مُساوی فی الایمان فرماتے ہیں، تو اس کا مطلب یہ نہیں کہ یہ مساوات باعتبار ذات ایمان ہے، بلکہ بوجہ تساوی مُؤمَنْ بِہٖ ایمان کو مُساوی کہتے ہیں، اور ایمان میں جوکہ مقولۂ کیف سے ہے اگر کمی وبیشی اور مساوات ممنوع تھی تو بالذات ممنوع تھی، کما ہو ظاہرٌ، بواسطۂ امور آخر کون ممنوع کہتا ہے؟

‘ইমাম সাহেব যে সকল মুমিনকে ঈমানে সমান বলেছেন এর উদ্দেশ্য এই নয় যে, এ সমতা প্রকৃত ঈমান বিবেচনায়, বরং مُؤْمَنٌ بِهِ (যেসব বিষয়ের ওপর ঈমান আনা আবশ্যক)-এর সমতার বিবেচনায়। আর ঈমানে যা ‘কেমন’-এর জবাবে বিবৃত হয় যদি হ্রাস-বৃদ্ধি ও সমতা নিষিদ্ধ ছিল, তা হলে তা প্রকৃত (ঈমান বিবেচনায়) নিষিদ্ধ ছিল। এটি তো স্পষ্টই, অন্যান্য বিবেচনায় কে নিষিদ্ধ বলে?’[15]

হানাফীদেরকে অহেতুক বদনাম করা হয়

ইমাম আযম w ও হানাফীদেরকে তাঁদের এই বক্তব্য: إِيمَانِيْ كَإِيْمَانِ جَبْرَئِيْلَ (আমার ঈমান হযরত জিবরাইল n-এর ঈমানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।)[16] আর الْـمُؤْمِنُوْنَ مُسْتَوُوْنَ فِي الْإِيْمَانِ (মুমিনরা সবাই ঈমানে সমান)[17]-এর কারণে তাঁদের বেশ বদনাম করা হয়েছে এবং তাঁদের ওপর এ অভিযোগ আনা হয়েছে যে, তাঁরা আমলের কোনো গুরুত্ব দেন না, যেমনটা মুরজিয়ারা বলে থাকে যে, নেক আমল পরকালে পরকালে উপকারী হবে, কিন্তু আর খারাপ কাজ মানুষের কোনো ক্ষতি করবে না। বরং মুমিনদের সকল গোনাহ (খারাপ কাজ) ক্ষমা করে দেওয়া হবে। অনেক হযরাত তো খোলাখুলিভাবে ইমাম আযম w ও হানাফীদেরকে মুরজিয়া আখ্যা দিয়ে থাকে। فَإِلَى اللهِ الْـمَشْتَكَىٰ (অতএব আল্লাহর কাছে অভিযোগ করছি)। অথচ হানাফীদের নিম্নোক্ত স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়।

  1. আল-ফিকহুল আকবরে খোদ ইমাম আযম লিখেছেন যে,

وَلَا نَقُوْلُ: إِنَّ حَسَنَاتِنَا مَقْبُوْلَةٌ وَسَيِّئَاتُنَا مَغْفُوْرَةٌ، كَقَوْلِ الْـمُرْجِئَةِ.

‘আর আমরা একথা বলি না যে, আমাদের সকল নেক আমল গৃহীত এবং আমাদের পাপ কাজসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। যেমনটা মুরজিয়ারা বলে থাকে।’[18]

এরপর ইমাম সাহেব আরও স্পষ্ট করে লিখেন যে,

وَلَكِنْ نقُوْلُ: مَنْ عَمِلَ حَسَنَةً بِجَمِيْعِ شَرَائِطِهَا خَالِيَةً عَنِ الْعُيُوْبِ الْـمُفْسِدَةِ، وَلَـمْ يُبْطِلْهَا بِالْكُفْرِ وَالرِّدَّةِ وَالْأَخْلَاقِ السَّيِّئَةِ حَتَّىٰ خَرَجَ مِنَ الدُّنْيَا مُؤْمِنًا، فَإِن اللهَ تَعَالَىٰ لَا يَضِيْعُهَا بَلْ يَقْبَلُهَا مِنْهُ وَيُثِيبُهُ عَلَيْهَا، وَمَا كَانَ مِنَ السَّيِّئَاتِ دُوْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ وَلَـمْ يَتُبْ عَنْهَا صَاحَبُهَا حَتَّىٰ مَاتَ مُؤْمِنًا، فَإِنَّهُ مُؤْمنٌ فِيْ مَشِيئَة اللهِ تَعَالَىٰ إِن شَاءَ عَذَّبَهُ بِالنَّارِ وَإِن شَاءَ عَفا عَنْهُ وَلَـمْ يُعَذِّبْ بِالنَّارِ أَصْلًا.

‘বরং আমরা বলে থাকি যে, যে ব্যক্তি কোনো নেক আমল করবে এর সকল শর্ত বজায় রেখে এবং সেই নেকি সেসব ত্রুটি থেকে পবিত্র থাকে যা নেকিকে ধ্বংস করে দেয় আর ওই ব্যক্তি তার নেকিকে কুফর ও ধর্মত্যাগের মাধ্যমে আর খারাপ চরিত্রের মাধ্যমে ধ্বংস না করে থাকে। এ অবস্থায় দুনিয়া থেকে ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করে। তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তার এ নেকিকে নষ্ট করবেন না। বরং তার সেই নেক আমল গ্রহণ করবেন এবং তাকে এর ওপর সওয়াব দান করবেন। যারা যেসব খারাপ কাজ কুফর ও শিরক থেকে নিম্নস্তরের এবং যা থেকে খারাপ কাজে লিপ্ত ব্যক্তি তওবা করেনি। এমনকি সে দুনিয়া থেকে ঈমানের অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে। তা হলে তার ব্যাপারটা আল্লাহর ইচ্ছাধীন, যদি আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করেন দোজখের শান্তি দেবন, আর যদি ইচ্ছা করেন ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে দোজখের কোনোই শান্তি না দেবেন।’[19]

  1. আল-ফিকহুল আকবরের অন্য জায়গায় এসেছে যে,

إيْمَانُ أَهْلِ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ لَا يَزِيْدُ وَلَا يَنْقُصُ مِنْ جِهَةِ الْـمُؤْمَنِ بِهِ، وَيَزِيْدُ وَيَنْقُصُ مِنْ جِهَةِ الْيَقِيْنِ وَالتَّصْدِيْقِ، وَالْـمُؤْمِنُوْنَ مُسْتَوُوْنَ فِي الْإِيْمَانِ وَالتَّوْحِيْدِ مُتَفَاضِلُوْنَ فِي الْأَعْمَالِ.

مُؤْمَنٌ بِهِ (যেসব বিষয়ের ওপর ঈমান আনা আবশ্যক)-এর বিবেচনায় আসমানবাসী ও জমিনের অধিবাসীদের ঈমান বাড়েও না, হ্রাসও পায় না। তবে আস্থা ও বিশ্বাসের বিবেচনায় বাড়ে ও হ্রাস পায়। ঈমান ও তাওহীদে সকল মুমিন সমান, আমলেই হ্রাস-বৃদ্ধি হয়।’[20]

উপর্যুক্ত বক্তব্য দ্বারা বোঝা গেল যে, ঈমান হ্রাস-বৃদ্ধি না হওয়া এবং সকল মুমিনের ঈমান এক হওয়া তা কেবলই مُؤْمَنٌ بِهِ (যেসব বিষয়ের ওপর ঈমান আনা আবশ্যক)-এর বিবেচনায়। কেননা যেসব বিষয়ের ওপর ঈমান আনা আবশ্যক তা বিধিবদ্ধ ও সুনির্ধারিত। তাতে বেশ-কম হয় না। আর তা হচ্ছে, جَمِيْعُ مَا جَاءَ بِهِ الرَّسُوْلُ ﷺ (রসুলুল্লাহ D-এর নিয়ে আসা সকল শিক্ষা)। তবে দুই কারণে ঈমানে হ্রাস-বৃদ্ধি হয়:

(ক) مُؤْمَنٌ بِهِ (যেসব বিষয়ের ওপর ঈমান আনা আবশ্যক)-এর তাসদীক ও ইয়কীন (আস্থা ও বিশ্বাস) বিবেচনায়। কেননা সবার ইয়কীন (আস্থা) এক হয় না। আমার-আপনার এক ইয়াকীন আর আউলিয়ায়ে কেরামের এক ইয়কীন ও আম্বিয়ায়ে ইযামের এক ইয়কীন। সাধারণ ফেরেশতাদের এক ইয়কীন এবং নৈকট্যশীল ফেরেশতাদের এক ইয়কীন। তাঁদের সকলের ইয়াকীনকে সমান ও এক কোনো পাগলেও বলবে না।

(খ) আমল বিবেনায় মুমিনদের স্তরের উচ্চ-নিম্ন হওয়াও একটি সাবর্জনীন বিধিত বিষয়। এক তো আম্বিয়ায়ে কেরামের আমল, দ্বিতীয়ত সাধারণ উম্মতরে আমল। অতঃপর উম্মতের আমলেও পার্থ্য রয়েছে। সুতরাং আমল বিবেচনায় সমতার দাবি কোনো বেক্কলই করতে পারে।

  1. আল-ফিকহুল আকবরের ব্যাখ্যায় এসেছে যে,

وَرُوِيَ عَنْ أَبِيْ حَنِيفَةَ r، أَنَّهُ قَالَ: إِيْمَانِيْ كَإِيْمَانِ جِبْرَائِيْلْ m، وَلَا أَقُوْلُ: مِثْلَ إِيْمَانِ جِبْرَائِيْلْ m، لِأَنَّ الْـمِثْلِيَّةَ تَقْتَضِي الْـمُسَاوَاةِ فِيْ كُلِّ الصِّفَاتِ، وَالتَّشْبِيْهُ لَا يَقْتَضِيْهِ، بَلْ يَكْفِيْ لِإِطْلَاقِهِ الْـمُسَاوَاةُ فِيْ بَعْضِهِ، فَلَا أَحَدٌ يُسَاوِيْ بَيْنَ إِيْمَانِ آحَادِ النَّاسِ وَإِيْمَانِ الْـمَلَائِكَةِ وَالْأَنْبِيَاءِ m مِنْ كُلِّ وَجْهٍ.

‘ইমাম আবু হানিফা w থেকে বর্ণনা করা হয়, তিনি বলেন, আমার ঈমান জিবরাইল (m)-এর ঈমানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আমি একথা বলছি না যে, আমার ঈমান জিবরাইল n-এর অনুরূপ। কেননা উদাহরণ (অনুরূপ হওয়া)-এর অর্থ হচ্ছে, সকল বৈশিষ্ট্যে সমান হওয়া। তবে সাদৃশ্য হওয়ার জন্য এটি জরুরি নয়, বরং কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যে সমান হওয়ার ভিত্তিতে সাদৃশ্যপূর্ণ বলা যায়। ভালো, এমন কে হতে পারে যে সর্বদিক থেকে উম্মতের (সাধারণ) সদস্য, ফেরেশতা ও আম্বিয়া p-এর ঈমানকে সমান বলবে?[21]

ইমাম সাহেবের এই ব্যাখ্যা দ্বারা বোঝা গেল যে, তাঁর বক্তব্য দ্বারা অনেকের মাঝে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। ইমাম সাহেব যার ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেছেন। কিন্তু এরপরও মানুষে বুঝেনি এবং তারা বরাবরই ইমাম সাহেবের বক্তব্যের ভুল অর্থ বর্ণনা করে ইমাম সাহেবের বদনাম করতে থাকে।

এজন্য তাঁরই প্রিয় শিষ্য ইমাম মুহাম্মদ w বলেছেন যে, আমি إِيمَانِيْ كَإِيْمَانِ جَبْرَئِيْلَ (আমার ঈমান হযরত জিবরাইল n-এর ঈমানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।) বলা অপছন্দ করি, বরং এর পরিবর্তে آمَنْت بِمَا آمَنَ بِهِ جِبْرَئِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ (হযরত জিবরাইল n যেসব বিষয়ে ঈমান এনেছেন আমিও সেসব বিষয়ে প্রতি ঈমান এনেছি) বলা পছন্দ করি।[22]

ইমাম মুহাম্মদ w-এর এই বক্তব্য ছিল লোকদেরকে ভুল বোঝাবুঝি থেকে রক্ষার জন্য। নতুবা প্রকৃতপক্ষে ইমাম আযম w-এর বক্তব্যের তাৎপর্যও ঠিক তা-ই, যা ইমাম মুহাম্মদ w-এর পেশ করা নতুন বাক্যের উদ্দেশ্য।

মতপার্থক্য রহস্যজট খোলে

কিন্তু যখন মানুষের সামনে এই মাসআলা আসে যে, গুনাহর শিকার (কবীরা গুনাহে লিপ্ত) ব্যক্তি মুমিন না কাফের? তখন মুতাযিলা ও খারেজিরা এ অবস্থান গ্রহণ করে যে, এমন ব্যক্তি ঈমানের গণ্ডি থেকে বের হয়ে গেছে। কেননা ঈমান তিনটি অংশের সমষ্টি। সমষ্টির যেকোনো অংশ ছুটে গেলে তা আর সমষ্টি থাকে না। সুতরাং যখন নেক আমল রইল না, বরং গুনাহে কবীরায় লিপ্ত হয়ে গেল তখন সে ঈমানের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে গেছে। অতঃপর কী হবে? কাফের হল কিনা? এ নিয়েও মুতাযিলা ও খারেজিদের মধ্যে মতবিরোধ হয়ে যায়। খারেজিদের নিকট সে কাফের হয়ে গেছে এবং মুতাযিলাদের নিকট সে কাফের হয়নি, বরং মধবর্তী অবস্থানে অবস্থান করল। (وَهِيَ مَنْزَلَةٌ بَيْنَ الْـمَنْزَلَيْنِ অর্থাৎ সেটা দুই জায়গার মধ্যবর্তী এক জায়গা)।

পক্ষান্তরে হানাফীরা গুনাহে কবীরায় লিপ্ত ব্যক্তিকে মুমিন আখ্যা দিয়েছেন। ইমাম আযম w আল-ফিকহুল আকবরে লিখেছেন যে,

وَلَا نُكَفِّرُ مُسْلِمًا بِذَنْبٍ مِنْ الذُّنُوْبِ، وَإِنْ كَانَتْ كَبِيْرَةً إذَا لَـمْ يَسْتَحِلَّهَا وَلَا نُزِيْلُ عَنْهُ اسْمَ الْإِيْمَانِ، وَنُسَمِّيهِ مُؤْمِنًا حَقِيْقَةً، وَيَجُوْزُ أَنْ يَّكُوْنَ مُؤْمِنًا فَاسِقًا غَيْرَ كَافِرٍ.

‘আমরা কোনো মুসলমানকে কোনো গুনাহর কারণেই কাফের আখ্যায়িত করি না, সেটা কবীরা গুনাহ হলেও। যতক্ষণ গুনাহকারী এটাকে হালাল মনে না করে। আমরা তার থেকে ঈমানের প্রয়োগ শেষ করি না। বরং তাকে প্রকৃত মুমিন বলে মনে করি। হ্যাঁ, সে মুমিন ফাসেক হতে পারে, কিন্তু কাফের হতে পারে না।’[23]

এভাবে মুহাদ্দিসবর্গ গুনাহে কবীরায় লিপ্ত ব্যক্তিকে মুমিন আখ্যায়িত করেছেন, ঈমান থেকে খারিজ করেননি। আর যখন তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, গুনাহে কবীরায় লিপ্ত ব্যক্তি কীভাবে মুমিন হতে পারে? ঈমান তো সমষ্টি অর্থাৎ আমল ঈমানের অংশ। কাজেই আমল ছুটে গেলে ঈমান চলে যাওয়া উচিত? তখন তাঁরা জবাব দিয়েছেন যে, আমল ঈমানের প্রকৃত অংশ নয়, বরং সম্পূর্ণতা ও সৌন্দর্যের অংশ। সুতরাং তা না থাকলে ঈমান চলে যাবে না।

মোদ্দাকথা এখানে এসে মুহাদ্দিসরা মুতাযিলা ও খারেজিদের সঙ্গ ছেড়ে দেন এবং হানাফীদের সাথে একাত্ম হয়ে গেছেন। আর স্পষ্ট হয়ে গেল যে, মুহাদ্দিসরা আমলকে যে ঈমানের অংশ বানিয়েছিলেন তা ছিল পরিপূর্ণ ঈমান এবং হানাফী ও মুহাদ্দিসগণের মধ্যকার মতবিরোধ যা লাখো পৃষ্ঠা কালো করেছিল তা ছিল স্রেফ ভুল বোঝাবুঝির পরিণতি। সকল ইনসাফপ্রিয় মানুষ জেনে গেছেন যে, হানাফীরা ঈমানের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন এবং আমলকে যার অংশ বানাননি সেটি ছিল মূল ঈমান। আর মুহাদ্দিসবর্গ ঈমানের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন এবং আমলকে যে ঈমানের অংশ বানিয়েছেন সেটি ছিল পরিপূর্ণ ঈমান।

বস্তুত যখন বাস্তব অবস্থা মানুষের সামনে আসে তখন জানা গেল যে, হকপন্থিদের মধ্যে মূলত কোনো মতবিরোধ নেই, নিছক শাব্দিক মতপার্থক্য সেটি। এজন্য মোল্লাহ আলী কারী w বলেন,

وَلِذَا ذَهَبَ الْإِمَامُ الرَّازِيُّ وَكَثِيْرٌ مِنَ الْـمُتَكَلِّمِيْنَ إِلَىٰ أَنَّ هَذَا الْـخِلَافَ لَفْظِيٌّ.

‘কাজেই ইমাম (ফখরুদ্দীন) আর-রাযী ও অনেক দার্শনিক বলেছেন যে, এ মতানৈক্য শব্দগত।’[24]

হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ (মুহাদ্দিসে দেহলভী) uও (বিষয়টি) এভাবেই স্পষ্ট করেছেন।[25] অনুরূপভাবে নবাব সিদ্দীক হাসান খান সাহেব ভুপালী (গায়রে মুকাল্লেদ)ও তাঁর بُغْيَةُ الرَّائِدِ فِيْ شَرْحِ الْعَقَائِدِ-এ লিখেছেন যে,

ونزدِ اہلِ تحقیق این نزاع لفظی است۔

‘মুহাক্কিকদের নিকট এই মতপার্থক্য শাব্দিক।’[26]

ইমাম নববী wও লিখেছেন যে,

قَالَ الْـمُحَقِّقُوْنَ مِنْ أَصْحَابِنَا الْـمُتَكَلِّمِيْنَ نَفْسُ التَّصْدِيْقِ لَا يَزِيْدُ وَلَا يَنْقُصُ، وَالْإِيْمَانُ الشَّرْعِيُّ يَزِيْدُ وَيَنْقُصُ بِزِيَادَةِ ثَمَرَاتِهِ وَهِيَ الْأَعْمَالُ وَنُقْصَانِهَا، قَالُوْا: وَفِيْ هَذَا تَوْفِيْقٌ بَيْنَ ظَوَاهِرِ النُّصُوْصِ الَّتِيْ جَاءَتْ بِالزِّيَادَةِ وَأَقَاوِيْلِ السَّلَفِ وَبَيْنَ أَصْلِ وَضْعِهِ فِي اللُّغَةِ، وَمَا عَلَيْهِ الْـمُتَكَلِّمُوْنَ.

‘আমাদের মাযহাবের মুহাক্কিক ও দার্শনিকগণ বলেছেন যে, স্বয়ং তাসদীক বাড়েও না, কমেও না। আর শরয়ী ঈমান (পরিপূর্ণ ঈমান) বৃদ্ধি-হ্রাস পায় এর ফলাফল বৃদ্ধির কারণে আর এর ফলাফল হচ্ছে আমল এবং ফলাফল হ্রাস পাওয়ার কারণে। তাঁরা বলেছেন যে, এভাবে নসসমূহের বাহ্যিক অর্থের মাঝে যেখানে বৃদ্ধির আলোচনা এসেছে, সলফদের বক্তব্যের মাঝে, ঈমান শব্দের আভিধানিক অর্থের মাঝে এবং দার্শনিকদের যে চিন্তাধারা এর মাঝে সমন্বয় ও সামঞ্জস্য বিধান হয়ে যায়।’[27]

ঈমান বৃদ্ধিবিষয়ক নসসমূহের তাৎপর্য

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কুরআন পাকর অনেক আয়াতে ঈমান বৃদ্ধির কথা সাব্যস্ত হয়েছে। যেমন- আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

وَاِذَا مَاۤ اُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ فَمِنْهُمْ مَّنْ يَّقُوْلُ اَيُّكُمْ زَادَتْهُ هٰذِهٖۤ اِيْمَانًا١ۚ فَاَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فَزَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّهُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ۠۰۰۱۲۴

‘আর যখনই কোনো (নতুন) সূরা নাযিল হয় তখন কিছু মুনাফেক (গরিব মুসলমানদেরকে ঠাট্টা করে) বলত, বল! এই সূরা তোমাদের কার ঈমান বাড়িয়েছে? অতএব (শোন), যেসব ব্যক্তি ঈমানদার এই সূরা তাঁদের ঈমান বাড়িয়ে দিয়েছে এবং তাঁরা আনন্দিত।’[28]

তো এর জবাব হচ্ছে, এই আয়াতে একথা স্পষ্টভাবে এসেছে যে, ঈমানের এই বৃদ্ধি বিধান ও সংবাদের নবসংযোজনের কারণে। অর্থাৎ যখন আল্লাহ তাআলার নতুন বাণী নাযিল হত এবং নতুন বিধান আসত তখন مُؤْمَنٌ بِهِ (যেসব বিষয়ের ওপর ঈমান আনা আবশ্যক)-এ বৃদ্ধি হত। যাতে মুমিনদের ঈমানের পরিধিতেও বৃদ্ধি পেত এবং তাঁদের ঈমানী অবস্থা অর্থাৎ আনন্দ বেড়ে যেত। مُؤْمَنٌ بِهِ-এ বৃদ্ধি অহী নাযিলের যুগে হত, এখন অহী (নাযিলের যুগ) পরিসমাপ্ত হয়েছে, কাজেই مُؤْمَنٌ بِهِ-এ বৃদ্ধির কোনো অবকাশ নেই।

এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা হচ্ছে এই যে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে কুরআন পাক যতটুকু নাযিল হত, ব্যাস ততটুকুর ওপর ঈমান ঈমান আনা আবশ্য ছিল। আর যেসব হুকুম-আহকাম ইতঃপূর্বে নাযিল হয়েছিল সেগুলোর প্রতি ঈমান আনা ছিল পরিপূর্ণ ঈমান। অতঃপর নতুন নতুন যে অহী আসত এবং নতুন বিধান নাযিল হত তখন সেসব নতুন হুকুম-আহকামের প্রতি ঈমান আনা আবশ্যক হয়ে পড়ত। এভাবে তাঁদের ঈমান বৃদ্ধি পেত। তবে বৃদ্ধি প্রকৃত ঈমানে হত না, বরং مُؤْمَنٌ بِهِ-এ (বৃদ্ধি) হত। অর্থাৎ সেসব জিনিসের মধ্যে (বৃদ্ধি) হত, যার ওপর ঈমান আনা আবশ্যক। مُؤْمَنٌ بِهِ-এর এই বৃদ্ধিকে (আল-কুরআনে) ঈমান বৃদ্ধি বলে বর্ণনা করা হয়েছে। অতঃপর যখন নুবুওয়াতের যুগ শেষ হল এবং অহী পরিপূর্ণতা পায়, তখন مُؤْمَنٌ بِهِ বিধিবদ্ধ ও সুনির্ধারিত হয়ে যায় যে, এতটুকু মানা ঈমানের জন্য আবশ্যক এবং সকল মানুষের জন্য সেসব বিষয়ের প্রতি ঈমান আনা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। এখন এতে না বৃদ্ধি হতে পারে, না কমতে পারে। সুতরাং مُؤْمَنٌ بِهِ-এর হিসেবে ঈমানে বাড়া ও হ্রাসের প্রশ্নের অবকাশ নেই।

হ্যাঁ, তাসদীকের (সত্যায়ন) পরিপূর্ণতা অর্থাৎ আমল বিবেচনায় ঈমানে হ্রাস-বৃদ্ধি হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে তাসদীকের অবস্থা অর্থাৎ শক্তিশালিতা ও দুর্বলতা বিবেচনায়ও ঈমানে হ্রাস-বৃদ্ধি স্বীকৃত। কিন্তু পরিমাণ অর্থাৎ সংখ্যা বিবেচনায় ঈমানে হ্রাস-বৃদ্ধি হতে পারে না। কেননা ঈমান চায় যতই শক্তিশালী হোক না কেন এতে কোনো অংশ বৃদ্ধি পায় না। হযরত (শায়খুল হিন্দ) u ঈযাহুল আদিল্লায় লিখেছেন যে,

یہ امر محقق ہو چکا ہے کہ حقیقتِ ایمان عند المحقِّقِین فقط تصدیق قلبی ہے، اور یہ امر بھی سب کے نزدیک عقلًا ونقلًا بدیہی ہے کہ اس تصدیق سے مراد تصدیق جَمِيْعُ مَا جَاءَ بِهِ الرَّسُوْلُ ہے، سو اب ظاہر ہے جس زمانہ میں جَمِيْعُ مَا جَاءَ بِهِ الرَّسُوْلُ دو امر تھے، تو اُن کی تصدیق کا نام ایمان تھا، اور جب پانچ چار ہوگئے تو اُن کی تصدیق کا نام ایمان ہوا، علیٰ ہذا لقیاس وقتًا فوقتًا جوں جوں تَزَایُدِ احکام بوجہ نزول ہوتا گیا احاطۂ تصدیق میں بھی وسعت وزیادتی ہوتی گئی۔

غایۃ ما فی الباب یہ تزایدِ تصدیق باعتبارِ ذاتِ تصدیق نہ سہی، باعتبارِ تعلق سہی، مگر اس زیادتی کو زیادتِ تصدیق وزیادتِ ایمان کہنا کسی طرح خلافِ عقل نہیں ہو سکتا، ظاہر ہے کہ جس قدر مُصَدَّق بہ یعنی مَا جَاءَ بِهِ الرَّسُوْلُ میں زیادتی ہوئی جائے گی، اِسی قدر تصدیق میں باعتبارِ تعلق زیادتی ماننی پڑے گی، اور ہم جمیع اوصاف میں بداہۃً مشاہدۃ کرتے ہیں کہ تَکَثُّرِ تعلقات کی وجہ سے اصلی وصف پر اطلاقِ زیادت برابر سب اہلِ عقل کرتے ہیں۔ دیکھئے! اگر زید کسی سائل کو دینار عطا کرے، اور عَمرو درہم، تو یہ کہنا صحیح ہے کہ زید نے عمرو سے زیادہ سخاوت کی، یا مثلًا کسی کی زیرِ حکومت دس شخص یا ایک شہر ہو، اور دوسرے شخص کی زیرِ حکومت بیس آدمی یا چند شہر ہوں، تو کہہ سکتے ہیں کہ اس کی حکومت بہ نسبت اس کی حکومت کے زائد ہے، یا کسی کو کسی علم کے سو مسئلے معلوم ہوں، اور کسی دوسرے شخص کو ہزار مسئلے اس علم کے معلوم ہوں، تو اِس کے علم کو اُس کے علم سے بے شک زائد کہہ سکتے ہیں۔

اب دیکھئے! امثلۂ مذکورہ میں ایک کی سخاوت وحکومت وعلم کو دوسرے شخص کی سخاوت یا حکومت یا علم سے زائد کہنے کے یہ معنیٰ نہیں ہیں کہ حقیقۃً علم وغیرہ میں جوکہ منجملۂ کیفیات واوصاف ہیں کوئی جزو گھٹ بڑھ گیا ہے، بلکہ محض تزاید متعلقات کی وجہ سے اوصافِ مذکورہ کو زائد کہتے ہیں، تو جیسے امثلۂ مذکورہ میں بوجہ تزایدِ معلوم ومحکوم وغیرہ جو علم وحکومت کو زائد کہہ دیا ہے، بعینہ اسی طرح نصوصِ معلومہ میں بوجہ تزایدِ مُؤْمَنْ بہٖ ایمان کو زائد فرما دیا ہے۔

‘একথা নিরীক্ষিত যে, মুহাক্কিকদের নিকট প্রকৃত ঈমান হচ্ছে অন্তরের সত্যায়ন। আর এ বিষয়টিও সবার নিকট যৌক্তিক ও প্রত্যাদেশগতভাবে স্পষ্ট যে, এই সত্যায়ন দ্বারা দ্বারা جَمِيْعُ مَا جَاءَ بِهِ الرَّسُوْلُ (রসুলের নিয়ে আস সকল শিক্ষা)-কে সত্যায়ন করা। অতএব এখন স্পষ্ট যে যুগে جَمِيْعُ مَا جَاءَ بِهِ الرَّسُوْلُ ছিল দুটো, তখন তার তাসদীকের নাম ছিল ঈমান। আর যখন চার-পাঁচটি হয়ে গেল, তখন তার তাসদীকের নাম ঈমান হয়ে গেল। এভাবে সময়ে সময়ে অহী নাযিলের কারণে যা যা আহকাম বৃদ্ধি হয়েছে তাসদীকেও প্রশস্ততা ও পরিবৃদ্ধি হয়েছে।

এ অধ্যয়ের অন্তর্ভুক্ত বিষয়ের সংক্ষিপ্তসার হচ্ছে[29], তাসদীকের এ পরিবৃদ্ধি স্বয়ং তাসদীক বিবেচনায় নয় বটে, তবে ঠিক প্রাসঙ্গিক বিষয় বিবেচনায় অবশ্যই। কিন্তু এই পরিবৃদ্ধিকে তাসদীকের পরিবৃদ্ধি ও ঈমানের পরিবৃদ্ধি আখ্যা দেওয়া কোনোভাবে যুক্তির পরিপন্থী হতে পারে না। একথা স্পষ্ট যে, সত্যায়ন-আবশ্যক অর্থাৎ مَا جَاءَ بِهِ الرَّسُوْلُ (রসুলের নিয়ে আস শিক্ষা)-এ যে পরিমাণ বৃদ্ধি হবে সেই পরিমাণ তাসদীকেও প্রাসঙ্গিকভাবে পরিবৃদ্ধি মেনে নিতে হবে। আর সকল বৈশিষ্ট্যে স্পষ্টভাবে একথা লক্ষ করি যে, প্রাসঙ্গিকতার আধিক্যের কারণে মূল বৈশিষ্ট্যের ওপর পরিবৃদ্ধির প্রয়োগ সকল বিদ্বান ব্যক্তি বরারবই করে থাকেন।

দেখুন, যদি যায়েদ কোনো ভিক্ষুককে দিনার দান করে এবং আমার দিরহাম। তবে একথা বলা সঠিক যে, যায়েদ আমর থেকে বেশি দানশীল। অথবা উদারণত কারও শাসনাধীন ১০ ব্যক্তি বা একটি শহর রয়েছে এবং অন্য ব্যক্তির শাসনাধীন ২০জন মানুষ বা বেশ কয়েকটি শহর রয়েছ। তা হলে বলতে পারেন, এর শাসন তার শাসনের তুলনায় বিস্তৃত। কিংবা কারও কোনো শাস্ত্রে একশ মাসআলা জানা আছে, আর অন্য ব্যক্তির ওই শাস্ত্রে এক হাজার মাসআলা জানা আছে। কাজেই এই ব্যক্তির জ্ঞান ওই ব্যক্তির জ্ঞান থেকে অবশ্যই বেশি বলতে পারেন।

এবার দেখুন, উপর্যুক্ত উদাহরণসমূহে একজনের দানশীলতা, রাজত্ব ও জ্ঞান অন্য ব্যক্তির দানশীলতা, রাজত্ব ও জ্ঞান থেকে বেশি বলার এই অর্থ নয় যে, প্রকৃতপক্ষে জ্ঞান ইত্যাদিতে যা গুণমান ও বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে কোনো অংশ অংশ হ্রাস-বৃদ্ধি পেয়েছে। বরং স্রেফ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরিবৃদ্ধির কারণে উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যকে বেশি বলে। অতএব উপর্যুক্ত উদাহরণসমূহে তথ্য ও রাজ্যের ব্যাপকতার কারণে যে জ্ঞান ও রাজ্যকে বেশি বলে দিয়েছে, একইভাবে জ্ঞাত নসূসে (শরয়ী টেক্সটে) পরিবৃদ্ধির কারণে مُؤْمَنٌ بِهِ (যেসব বিষয়ের ওপর ঈমান আনা আবশ্যক) ঈমানকে বৃদ্ধি করে দিয়েছে।’[30]

সপ্তম দফার সারাংশ

হযরত (শায়খুল হিন্দ) u-এর বক্তব্যের সারাংশ হচ্ছে যে, সকল মুমিনের ঈমানের সমান ও একীভাব হওয়ার অর্থ যদি কেউ একথা বুঝে যে, গুণমান অর্থাৎ শক্তিশালী ও দুর্বল হওয়ার মধ্যে সকল মুমিনের ঈমান সমান তবে এটা হানাফীদের মত নয়। আর যদি কেউ হানাফীদের মাথার ওপর এই অপবাদ আরোপ করে তাহলে দলিল উপস্থাপন করে, নতুবা এমন ভিত্তিহীন অপবাদ থেকে ফিরে আসে যেন।

ইমাম আযম w-এর বক্তব্যের সঠিক অর্থ হচ্ছে যে, সকল মুমিন এমনকি তিনি আম্বিয়ায়ে কেরাম হন বা ফেরেশতা কিংবা সাধারণ মুসলমান সকলের ঈমান مُؤْمَنٌ بِهِ (যেসব বিষয়ের ওপর ঈমান আনা আবশ্যক)-এর দিক বিবেচনায় একই। আর একথা সকল মানুষের কাছে স্বীকৃত এবং এর কারণ হচ্ছে যে, ঈমান ‘কেমন’-এর জবাবে বিবৃত হয়, ‘কত’-এর জবাবে বিবৃত হয় না। অর্থাৎ ঈমান একটি হৃদয়ের অবস্থার নাম, সেটি কোনো পরিমাণ নয় যাকে ভাগ করা যেতে পারে এবং তা হ্রাস-বৃদ্ধি হতে পারে। কাজেই মূল ঈমানের দিক বিবেচনায় ঈমানে হ্রাস-বৃদ্ধি ও সমান হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

আর যেসব আয়াত ঈমানের পরিবৃদ্ধির প্রতি নির্দেশ করে সেসবে مُؤْمَنٌ بِهِ-এর বৃদ্ধির কারণেই ঈমানের পরিবৃদ্ধি উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। মূল ঈমানে সেখানেও পরিবৃদ্ধি হয় না। বরং مُؤْمَنٌ بِهِ-এর সাথে সম্পর্ক রাখার কারণেই পরিবৃদ্ধি হয়ে থাকে। অতঃপর (শায়খুল হিন্দ w)-এর বিবৃতি পড়ুন:

[متن ادلۂ کاملہ]

دفعۂ سابع: تَسَاوئ ایمان کے اگر یہ معنیٰ ہیں کہ شدت وضعف وقوت میں برابر ہو، تو آپ ہی فرماویں کہ یہ کون کہتا ہے[31]))؟ اور اس کی کیا سند ہے؟ اگر ہو تو لایئے، اور دس نہیں بیس لے جایئے، ورنہ اس تہمتِ بے اصل سے باز آیئے، کچھ تو خدا سے شرمایئے—اور اگر یہ مطلب ہے کہ جن باتوں پر انبیاء اور ملائک کو[32])) ایمان ہے، اُنھیں باتوں پر عوام کو)2) بھی ایمان ہے، اِس باب میں عوام اُنھیں کے قدم بقدم ہیں، تو پھر سوا آپ کے اس کا مُنکر ہی کون ہوگا؟ اگر حنفیوں[33])) میں سے اس کا کوئی منکر ہو تو بتلایئے، اور سند دکھلایئے، اور دس نہیں بیس لے جایئے، ورنہ تہمتِ بے جا سے باز آیئے، کچھ تو خدا سے شرمایئے۔

زیادہ کیا عرض کروں، اگر یوں کہوں کہ ایمان مقولۂ کیف[34])) سے ہے، اور کَیْف قابلِ قسمت ونسبت بذاتِ خود نہیں ہوتا، جو کمی بیشی (اور) مساوات کا امکان ہو، تو آپ بےوجہ آیات واحادیث  مُشْعِرَۂ[35])) زیادت کو پیش کرکے اوقات خراب کریں گے، حالانکہ اُن آیات واحادیث میں جہاں زیادتی پر دلالت ہے، وہاں یہ بھی دلالت ہے کہ وہ زیادتی باعتبار تزایدِ احکام واَخبار تھی، جو اُس وقت بوجہ تَجَدُّدِ نزولِ وحی ہوتی رہتی تھی، اور اب کسی طرح مُتَصَوَّر نہیں، باعتبار اصل ایمان نہ تھی—یہ میری گذارش اُن صاحبوں کی خدمت میں ہے، جو اس مَشْرَبْ سے بھی واقف[36])) ہیں، اور فہم وانصاف بھی رکھتے ہیں، ورنہ اُن صاحبوں کی خدمت کے لئے جیسے اکثر غیر مقلدین ہوتے ہیں، وہ اول ہی مضمون کافی ہے، وہ صاحب اس مضمون کے جواب کی تکلیف نہ اُٹھائیں، مفت حیران ہوں گے، اور کچھ کام نہ چلے گا۔

সপ্তম দফা: ঈমান সমান হওয়ার অর্থ যদি এই হয় যে, সবলতা, দুর্বলতা ও বলিষ্ঠতায় বরাবর হবে, তো আপনিই বলুন! একথা কে বলেছে? আর এর সনদইবা কী? যদি থাকে তো দেখান! দশের পরিবর্তে ২০ নিয়ে যান। নতুবা এ ধরনের ভিত্তিহীন অপবাদ থেকে ফিরে আসুন। খোদাকে একটু হলেও লজ্জা করুন।

আর যদি এর উদ্দেশ্য হয় যে, যেসব বিষয়ে নবী ও ফেরেশতাদের ঈমান রয়েছে সেসবের বিষয়ে সাধারণ লোকদেরও ঈমান আছে। এ ব্যাপারে সাধারণ লোক তাঁদেরই পদাঙ্ক অনুসারী। তা হলে একথা আপনারা ছাড়া আর কে অস্বীকার করে? যদি হানাফীদের মধ্যে কেউ এটি অস্বীকার করে থাকে তাহলে বলুন, সনদ দেখান এবং ১০ নয়, ২০ নিয়ে যান। নতুবা অযথা অপবাদ আরোপ থেকে ফিরে আসুন। খোদাকে একটু হলেও লজ্জা করুন।

বেশি আর কি বলব, যদি বলি যে, ঈমান ‘কেমন’-এর জবাবে বিবৃত প্রবচন এবং ‘কেমন’ (এই প্রবচন) স্বয়ং বিভক্তি ও সম্বন্ধযোগ্য হয় না, যা হ্রাস-বৃদ্ধি (ও) সমমতার সম্ভবনা রাখে তখন আপনি অযথা পরিবৃদ্ধি নির্দেশক আয়াত ও হাদীসসমূহ উপস্থাপন করে সময় নষ্ট করবেন। কেননা এসব আয়াত ও হাদীসে যেখানে পরিবৃদ্ধি নির্দেশ করে সেখানে একথাও নির্দেশ করে যে, এই পরিবৃদ্ধি বিধি-বিধান ও প্রত্যাদেশের ক্রমবৃদ্ধির কারণে ছিল। যা সেই সময় নিত্য-নতুন অহী নাযিলের প্রেক্ষাপটে হয়ে থাকত। যা এখন কোনোভাবে কল্পনা করা যায় না। এটি মূল ঈমানের দিক বিবেচনায় ছিল না।—আমার এই আবেদন সেসকল মহোদয়গণের সমীপে, যারা এ বিতর্ক সম্পর্কেও অবহিত এবং বিচার-বুদ্ধি ও ইনসাফের যোগ্যতাও যাদের আছে। নতুবা সেসব ভদ্র মহোদয়ের জন্য যেমন অধিকাংশ গায়রে মুকাল্লিদ হয়ে থাকে তাদের জন্য প্রথম প্রবন্ধই যথেষ্ট। সেই ভদ্র লোক ওই প্রবন্ধের জবাবের কষ্ট নেবেন না, অহেতুক বিব্রতবোধ করবেন, আর কোনো কাজ হবে না।’

[1] আল-হাসকফী, আদ-দুররুল মুখতার, পৃ. ২১০

[2] আল-কারদারী, মানাকিবুল ইমাম আল-আ’যম রাযিয়াল্লাহু আনহু, মজলিস দায়িরাতুল মাআরিফ আন-নিযামিয়া হায়দরাবাদ, দাক্ষিণাত্য, ব্রিটিশ ভারত (প্রথম সংস্করণ: ১৩২১ হি. = ১৯০৩), খ. পৃ. ১৪১

[3] آشفتہ تر: বেশ বিভ্রান্তিকর।

[4] محکوم علیہ: যে বিষয়ে বিধান আরোপ করা হয়।

[5] مُعَرَّف: যে বিষয়ের সংজ্ঞা করা হয়েছে।

[6] শামসুল আইম্মা আস-সারাখসী, আল-উসূল, দারুল মা’রিফা লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর, বয়রুত, লেবনান, খ. ১, পৃ. ৬০

[7] সদরুল ইসলাম আল-বাযদাভী, উসূলুদ দীন, আল-মাকতাবাতুল আযহারিয়া লিত-তুরাস, কায়রো, মিসর (প্রথম সংস্করণ: ১৪২৪ হি. = ২০০৩ খ্রি.), পৃ. ১৪৮, মাসআলা: ৩৭

[8] ইমাম আবু হানিফা, আল-ফিকহুল আকবর, মাকতাবাতুল ফুরকান, আজমান, সংযুক্ত আরব-আমিরাত (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৪১৯ হি. = ১৯৯ খ্রি.), পৃ. ৫৫

[9] (ক) আত-তাবরীযী, মিশকাতুল মাসাবীহ, খ. 1, পৃ. ৯, হাদীস: ২; (খ) মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ৩৭, হাদীস: ৮

[10] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আল-মুজাদালা, ৫৮:২২

[11] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আল-মায়িদা, ৫:৪১

[12] কাযী আল-বায়যাওয়ী, আনওয়ারুত তানযীল ওয়া আসরারুত তাওয়ীল, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরবী, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৮ হি. = ১৯৮৪ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ৩৭-৩৮

[13] আল-হাসকফী, আদ-দুররুল মুখতার, পৃ. ২১০

[14] ইমাম আবু হানিফা, আল-ফিকহুল আকবর, পৃ. ৫৫

[15] মাহমুদ হাসান দেওবন্দী, ঈযাহুল আদিল্লা, মাতবায়ে কাসেমি দেওবন্দ, ইউপি, ব্রিটিশ ভারত (প্রথম সংস্করণ: ১৩৩০ হি. = ১৯১২ খ্রি.), পৃ. ১৭৭

[16] আল-হাসকফী, আদ-দুররুল মুখতার, পৃ. ২১০

[17] ইমাম আবু হানিফা, আল-ফিকহুল আকবর, পৃ. ৫৫

[18] ইমাম আবু হানিফা, আল-ফিকহুল আকবর, পৃ. ৪৭

[19] ইমাম আবু হানিফা, আল-ফিকহুল আকবর, পৃ. ৪৭-৪৮

[20] ইমাম আবু হানিফা, আল-ফিকহুল আকবর, পৃ. ৫৫

[21] (ক) মাহমুদ হাসান দেওবন্দী, ঈযাহুল আদিল্লা, মাতবায়ে কাসেমি দেওবন্দ, ইউপি, ব্রিটিশ ভারত (প্রথম সংস্করণ: ১৩৩০ হি. = ১৯১২ খ্রি.), পৃ. ১৭৭; (খ) মোল্লা আলী আল-কারী, শরহুল ফিকহিল আকবর, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৬ হি. = ১৯৯৫ খ্রি.), পৃ. ২৩৪

[22] মোল্লা আলী আল-কারী, শরহুল ফিকহিল আকবর, পৃ. ১৪৫, তিনি বর্ণনা করেন,

وَمِنْ هُنَا قَالَ الْإِمَامُ مُحَمَّدْ r عَلَىٰ مَا ذَكَرَهُ فِي الْـخُلَاصَةِ عَنْهُ: أَكْرَهُ أَنْ يَقُوْلَ: إِيْمَانِيْ كَإِيْمَانِ جِبْرَائِيْلَ n، وَلَكِنْ يَقُوْلُ: أَمَّنَتْ بِمَا آمَنَ بِهِ جِبْرَائِيْلُ n، انْتَهَىٰ.

[23] ইমাম আবু হানিফা, আল-ফিকহুল আকবর, পৃ. ৪৩

[24] (ক) মাহমুদ হাসান দেওবন্দী, ঈযাহুল আদিল্লা, কুতুবখানায়ে ফখরিয়া মুরাদাবাদ, ইউপি, ভারত, পৃ. ১৬৪; (খ) মোল্লা আলী আল-কারী, শরহুল ফিকহিল আকবর, পৃ. ২৩৩

[25] (ক) মাহমুদ হাসান দেওবন্দী, ঈযাহুল আদিল্লা, কুতুবখানায়ে ফখরিয়া মুরাদাবাদ, ইউপি, ভারত, পৃ. ১৬৪; (খ) শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী, হুজ্জাতুল্লাহ আল-বালিগা, খ. ১, পৃ. ২৭৭

[26] (ক) মাহমুদ হাসান দেওবন্দী, ঈযাহুল আদিল্লা, কুতুবখানায়ে ফখরিয়া মুরাদাবাদ, ইউপি, ভারত, পৃ. ১৬৪; (খ) সিদ্দীক হাসান খান, বুগয়াতুর রায়িদ ফী শারহিল আকায়িদ, মাতবাআয়ে সিদ্দীকী ভুপাল, মধ্য প্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত (প্রথম সংস্করণ: ১৩০১ হি. = ১৮৮৩ খ্রি.), পৃ. ৭২

[27] (ক) মাহমুদ হাসান দেওবন্দী, ঈযাহুল আদিল্লা, কুতুবখানায়ে ফখরিয়া মুরাদাবাদ, ইউপি, ভারত, পৃ. ১৭০; (খ) আন-নাওয়াওয়ী, আল-মিনহাজ শরহু সহীহহি মুসলিম ইবনিল হাজ্জাজ, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরাবী, বয়রুত, লেবনান (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৩৯২ হি. = ১৯৭২ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ১৪৮

[28] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আত-তওবা, ৯:১২৪

[29] এখান থেকে হযরত (শায়খুল হিন্দ) u একটি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন যে, مُؤْمَنٌ بِهِ (যেসব বিষয়ের ওপর ঈমান আনা আবশ্যক)-এর বৃদ্ধির কারণে স্বয়ং ঈমানে তো বৃদ্ধি হয় না, তাহলে আয়াতে করীমায় مُؤْمَنٌ بِهِ-এর বৃদ্ধিকে ঈমানের বৃদ্ধি কেন স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে? হযরতের জবাবের সারাংশ হচ্ছে, ঈমানের সম্পর্ক যেহেতু مُؤْمَنٌ بِهِ-এর সাথে, সেজন্য সম্পর্কিত বিষয়ের বৃদ্ধির কারণে স্বয়ং ঈমানের পরিবৃদ্ধি বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কেননা আমরা লক্ষ করি যে, বিদ্বানরা সকল বৈশিষ্ট্যে সম্পর্কিত বিষয়ের বৃদ্ধির জন্য মূল বৈশিষ্ট্যের ওপরও পরিবৃদ্ধির প্রয়োগ করেন, যদিও প্রকৃতপক্ষে মূল বৈশিষ্ট্যে বৃদ্ধি নাও হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে আয়াতে করীমায়ও সম্পর্কিত বিষয়ের বৃদ্ধির কারণে স্বয়ং ঈমানে পরিবৃদ্ধির প্রয়োগ করা হয়েছে।

[30] মাহমুদ হাসান দেওবন্দী, ঈযাহুল আদিল্লা, মাতবায়ে কাসেমি দেওবন্দ, ইউপি, ব্রিটিশ ভারত (প্রথম সংস্করণ: ১৩৩০ হি. = ১৯১২ খ্রি.), পৃ. ১৭২-১৭৩

[31] অর্থাৎ হানাফীরা এমন সমতার বক্তব্য কবে দিয়েছেন?

[32] کو অর্থাৎ এর।

[33] হানাফীদের কথা বিশেষভাবে এজন্য বলা হয়েছে যে, লাহোরী সাহেব চ্যালেঞ্জ হানাফীদেরকে দিয়েছিল। নতুবা এটি সম্মিলিত মাসআলা। কারও এতে মতবিরোধ নেই যে, مُؤْمَنٌ بِهِ একই সমান। যেসব বিষয়ে নবী ও ফেরেশতাদের ঈমান আনা জরুরি সেই সকল বিষয়ে সাধারণ মুসলমানদের জন্যও ঈমান আনা জরুরি।

[34] দার্শনিকরা সৃষ্টিকে ১০টি উচ্চতর শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। যাকে ‘দশ প্রবচন’ বলা হয়ে থাকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘কেমন’-এর জবাবে বিবৃত প্রবচন, যার সংজ্ঞা হচ্ছে, عَرْضٌ لَا يَقْتَضِيْ لِذَاتِهِ قِسْمَةٌ وَلَا نِسْبَةٌ (‘কেমন’ এমন এক অবস্থা যা নিজের পক্ষ থেকে না বিভক্তির দাবি করে, না সম্বন্ধের)*। ‘বিভক্তি দাবি না করা’-এর শর্ত দ্বারা ‘কত’-এর জবাবে বিবৃত প্রবচন থেকে সতর্কতা নির্দেশ উদ্দেশ্য। কেননা ‘কত’ (এই প্রবচনটি) স্বয়ং বিভক্তি দাবি করে। শরীর ‘কত’-এর জবাবে বিবৃত প্রবচনের অন্তর্ভুক্ত। এজন্য সেটি ভাগ করা যায়। আর ‘সম্বন্ধ দাবি না করা’-এর শর্ত দ্বারা অন্যান্য প্রবচনসমূহ থেকে সতর্কতা নির্দেশ উদ্দেশ্য। কেননা أُبُوَّةٌ (পিতা হওয়া) أَبٌ (পিতা)-এর প্রতি সম্বন্ধের দাবি করে। কিন্তু ‘কেমন’ প্রবচনকে বোঝার জন্য কোনো জিনিসের প্রতি সম্বন্ধের প্রয়োজন নেই। আর لِذَاتِهِ –এর শর্ত এই কারণে যে, অবস্থাসমূহ স্বীয় অবস্থাগত প্রেক্ষাপটে বিভক্তি ও সম্বন্ধের দাবি করে সেটি যেন সংজ্ঞা থেকে বাদ পড়ে না যায়। যেমন- ঈমান স্বয়ং বিভক্তি দাবি করে না, কিন্তু নিজের অবস্থানগত প্রেক্ষাপট অর্থাৎ مُؤْمَنٌ بِهِ-এর দিক বিবেচনায় বিভক্তি দাবি করে। এজন্য সকল মুমিনের ঈমানে مُؤْمَنٌ بِهِ-এর দিক বিবেচনায় সমতা বিদ্যমান।

* দেখুন: আবদুন নবী আহমদ নগরী, দস্তূরুল উলামা = জামিউল উলূমি ফী ইসতিলাহাতিল ফুনূন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২১ হি. = ২০০০ খ্রি.), খ. ৩, পৃ. ১১০।—স. চৌ.

[35] مُشْعِرَہ: সংবাদদাতা, অবহিতকারী, প্রকাশকারী।

[36] অর্থাৎ যেসব হযরাতের মধ্যে প্রকৃত ঘটনা বোঝার যোগ্যতা আছে এবং যারা মুজতাহিদ ইমামদের চিন্তাধারা সম্পর্কে অবহিত, জাহিরিপন্থিদের মতো নুসূসের (শরয়ী টেক্সেটের) বাহ্যিক উদ্দেশ্যই গ্রহণ করেন না।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ