জামেয়া ওয়েবসাইট

শুক্রবার-২৯শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফতওয়া বিভাগ – আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

دَارُ الافتاء جامعہ اسلاميہ پٹیہ، چاٹگام

ফতওয়া বিভাগ

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

ইমেইল: daruliftapatiya@gmail.com

পেইজলিংক: Facebook.com/Darul-ifta-Jamia-Patiya

সালাত-নামাজ

সমস্যা: অনেক হাফেজ সাহেবকে সেজদায়ে তেলাওয়াত রুকুর মাধ্যমে আদায় করতে দেখা যায়। এভাবে সেজদায়ে তেলাওয়াত রুকুর মাধ্যমে আদায় করা কি শরীয়তসম্মত?

হাফেজ মুহাম্মদ

জিরি, চট্টগ্রাম

সমাধান: ইমাম সাহেব সেজদার আয়াত পড়ার সাথে সাথে বা তারপর দুই আয়াত পড়ে যদি রুকুতে চলে যায় এবং রুকুতে সেজদায়ে তেলাওয়াতের নিয়ত করে নেয় তাহলে সেজদায়ে তেলাওয়াত আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু যদি মুক্তাদি রুকুতে সেজদায়ে তেলাওয়াতের নিয়ত না করে তাহলে মুক্তাদির পক্ষ থেকে সেজদায়ে তেলাওয়াত আদায় হবে না। তাই ইমামের জন্য রুকুতে সেজদায়ে তেলাওয়াতের নিয়ত না করা উচিত। (মুসান্নাফে ইবনে আবু শায়বা: ১/৪৭২, রদ্দুল মুহতার: ২/৫৮০-৫৮৮, আল-বাহরুর রায়েক: ২/২১৬, কিতাবুল আসল: ১/২৭৫, খোলাসাতুল ফাতাওয়া: ১/১৮৭)

সমস্যা: অনেক সময় শেষ বৈঠকে দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাসুরা শেষ করার আগেই ইমাম সাহেব সালাম ফিরিয়ে ফেলে। জানার বিষয় হলো, এক্ষেত্রে কী করণীয়? জানালে উপকৃত হবো।

আবু তলহা

নওগা

সমাধান: উক্ত প্রশ্নের ক্ষেত্রে মুক্তাদির দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাসুরা শেষ না হলেও ইমামের সাথে সালাম ফেরাবে। দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাসুরা পড়া সুন্নত, আর ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। তবে ইমামের উচিত একটু ধীরগতিতে পড়া। যাতে মুসল্লিরা দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাসুরা শেষ করতে পারে। (আদ-দররুল মুখতার: ২/২৪৪, শরহুল মুনিয়া: ২/৩৯৯, হাশিয়াতুত তাহতাভী: ৩০৯, ফাতহুল কদীর: ১/৫০১, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১৪৮, খোলাসাতুল ফাতাওয়া: ১/১৫৯, আল-বাহরুর রায়েক: ১/৫৩০)

সমস্যা: সম্মানিত মুফতি সাহেব! আমরা অনেক সময় নামাজে মাসবুক হই, তখন ইমামের শেষ বৈঠকে আমরা শুধু তাশাহহুদ পড়ি। এরপর ইমাম সাহেব দরুদ ও দোয়া পড়লে আমরা বসে থাকি। জানার বিষয় হল সে সময় মাসবুক কী করবে?

মুমিনুল ইসলাম

বগুড়া

সমাধান: ইমামের আখেরী বৈঠকে মাসবুক শুধু তাশাহহুদ পাঠ করবে এবং কিছুটা ধীর গতিতে পড়বে। যাতে ইমাম সালাম ফেরানো পর্যন্ত তাশাহহুদ পড়া চলতে থাকে। আর যদি ইমামের সালামের আগে তাশাহহুদ শেষ হয়ে যায় তাহলে এক্ষেত্রে বাকি সময় তাশাহহুদের শেষের কালিমায়ে শাহাদাত বারবার পড়তে থাকবে। (কিতাবুল আসল: ১/২১৬, ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ২/১৯৭, শরহুল মুনিয়া: ২/২৯৯, আল-বাহরুর রায়েক: ১/৫৭৫)

যাকাত

সমস্যা: আমার বাড়িতে পুরাতন অনেক আসবাবপত্র আছে। আমি চাচ্ছি সেসব পুরাতন জিনিস গরিব-মিসকিনদেরকে যাকাত হিসেবে আদায় করতে। জানার বিষয় হল, টাকার পরিবর্তে জিনিস দ্বারা এবং বাড়ির পুরাতন জিনিস দ্বারা যাকাত আদায় হবে কি না?

সাহাল

বান্দরবান

সমাধান: যাকাত নগদ অর্থ দ্বারা আদায় করাই শ্রেয়। তবে জিনিসপত্র বা কাপড়চোপড় দ্বারা আদায় করতে চাইলে ফকির-মিসকিনদের উপকারের দিকটি নিশ্চিত হতে হবে। তদ্রূপ পুরাতন কাপড়-জিনিসপত্র দ্বারাও নিম্নোক্ত শর্তসাপেক্ষে যাকাত আদায় করার অবকাশ আছে। শর্তগুলো হচ্ছে,

  1. পুরাতন বস্তু দিয়ে যাকাত দিলেও ফকির-মিসকিনদের উপকার ও লাভের দিকটি নিশ্চিত হতে হবে। অর্থাৎ টাকা দিয়ে যাকাত আদায় করলে যে পরিমাণ উপকৃত হত তার চেয়ে অন্তত কম লাভবান না হতে হবে।
  2. সেই কাপড়চোপড় ও দ্রব্যাদি ফকিরদের ব্যবহারের উপযোগী হতে হবে।
  3. যাকাতদাতা ব্যবহৃত কাপড়চোপড় বাজারে বিক্রি করতে গেলে যে দাম পাবে এর চেয়ে বেশি মূল্য ধরতে পারবে না। অর্থাৎ যাকাত আদায়ের সময় সেই বস্তুর দাম ধরতে হবে।

(সূরা আলে ইমরান: ৯২, ফতওয়ায়ে ওয়ালওয়ালিজিয়া: ১/১৯৫, আদ-দররুল মুখতার: ৩/৩৭৬, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২৪০, আহসানুল ফতওয়া: ৪/২৯১)

সমস্যা: হযরত! আমি ইটের ব্যবসা করি। শীতের মৌসুমে অনেক ইট তৈরি করি। সারাবছর তা বিক্রি করি এবং অনেক মাটিও ক্রয় করে রাখি। এখন আমার জানার বিষয় হলো, সেই মাটির যাকাত দিতে হবে কি না?

মুহাম্মদ খুবাইব

চট্টগ্রাম

সমাধান: কাঁচা, পাকা ইটি ও যে ইট পুড়ছে সবগুলির যাকাত দিতে হবে। তদ্রূপ ইট তৈরির জন্য যে মাটি মজুদ রাখা হয় তারও যাকাত দিতে হবে। এ সবগুলির পাইকারি বিক্রি করে দিলে যে দাম পাওয়া যায় সে হিসেবে যাকাত দিতে হবে। (সুনানে আবু দাউদ: ১/২১৮, সুনানে কুবরা: ৪/৪২৬, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, রদ্দুল মুহতার: ৩/২৭০, ফতওয়ায়ে কাযীখান: ১/২২১)

সওম

সমস্যা: রোজা অবস্থায় যদি দাঁত থেকে রক্ত বের হয় আর তা যদি থুথুর সাথে পেটে চলে যায় এর দ্বারা কি রোজা নষ্ট হয়ে যাবে?

মুহাম্মদ রাসেল

টেকনাফ

সমাধান: দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে তা যদি থুথুর সাথে ভেতরে চলে যায় তাহলে এ ক্ষেত্রে রক্তের পরিমাণ থুথুর সমান বা বেশি হলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। আর যদি রক্তের পরিমাণ কম হয় তবে রোজা ভাঙবে না। (আদ-দররুল মুখতার: ৩/৩৬৮, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২৬৬)

সমস্যা: রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট দ্বারা ব্রাশ করার কী হুকুম?

 হাবীবুল্লাহ

বাঁশখালী, চট্টগ্রাম

সমাধান: রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট বা মাজন ইত্যাদি দ্বারা ব্রাশ করা মকরুহ। আর টুথপেস্ট যদি গলার ভেতর পৌঁছে যায় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। তাই রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট বা মাজন দিয়ে ব্রাশ করা যাবে না। টুথপেস্ট বা মাজন দিয়ে ব্রাশ করতে হলে সেহরির সময় শেষ হওয়ার আগেই করে নেবে। (ফতওয়ায়ে শামী: ৩/৪৫৩, খোলাসাতুল ফতওয়া: ১/২৬৬, আল-বাহরুর রায়েক: ২/৪৮৯, ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ৩/৩৯৫)

হজ-ওমরা

সমস্যা: হুজুর আমার ওপর হজ ফরজ হয়েছিল। আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। হজ করার শারিরীক সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাই এক হুজুরের মাধ্যমে আমার পক্ষ থেকে বদলি হজ করিয়েছি। এখন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। হজ করার মতো সক্ষমতা আমার আছে। আমার কি পুনরায় হজ করতে হবে?

মুহাম্মদ নুমান

সমাধান: আপনি যেহেতু সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছেন তাই আপনার ওপর পুনরায় হজ করা জরুরি। কেননা শারীরিক অসুস্থততার কারণে হজ করতে অক্ষম কোনো ব্যক্তির পক্ষ থেকে বদলি হজ তখনই যথেষ্ট হবে যখন উক্ত ব্যক্তি মৃত্যু পর্যন্ত আর সুস্থতা ফিরে পাবে না। সুতরাং কেউ বদলি হজ করানোর পর যদি সুস্থতা ফিরে পায় এবং আবার হজ করার সামর্থ্য রাখে তাহলে কৃত বদলি হজ যথেষ্ট হবে না। এক্ষেত্রে তাকে পুনরায় ফরজ হজ আদায় করতে হবে। (ফতওয়ায়ে কাযীখান: ১/১৮৮, খোলাসাতুল ফতওয়া: ১/২৭৮, ফতওয়ায়ে শামী: ৩/৫২৩)

সমস্যা: আমরা পুরো পরিবার উমরায় যেতে চাচ্ছি, এ ক্ষেত্রে আমার নাবালেগ সন্তানকেও কি ইহরাম বাঁধতে হবে?

মুহাম্মদ আবদুল্লাহ

সমাধান: নাবালেগ বোধসম্পন্ন হলে বালেগদের মতো তারাও যথানিয়মে ইহরাম বাঁধবে এবং হজের কার্যাদি আদায় করবে। আর বুঝমান না হলে তাদের পক্ষ থেকে অভিভাবক ইহরাম করবে। তবে নাবালেগ অবস্থায় আদায়কৃত হজ তাদের জন্য নফল হবে। তাই বালেগ হওয়ার পর হজের সামর্থ্য হলে পুনরায় তাদের ওপর হজ করা ফরজ হবে। (জামিউ আহকামিস সিগার: ১/৬০, ফাতহুল কদীর: ২/৪২৯, ফতওয়ায়ে শামী, আল-বাহরুর রায়েক: ২/২৪৫, ফতওয়ায়ে কাযীখান: ১/১৮২)

মানত-কসম 

সমস্যা: আমি একটি গুনাহর কাজ থেকে তাওবার নিয়তে এভাবে কসম করি যে, আল্লাহর কসম আমি আর এই কাজ করব না। কখনো বলি, আল্লাহর কসম আমি আর করব না। কখনো বলি, আল্লাহর জালালিয়াতের কসম, আমি আর এই কাজ করব না। তবে কি করব না তা মুখে উল্লেখ করিনি। কিন্তু অন্তরে সেই কাজের নিয়ত ছিল। শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে প্রতি বারই আমার দ্বারা সেই কাজ সংঘটিত হয়ে যায় এবং একবার কসম করে ভঙ্গ করার মাঝে কয়েকবার এভাবে কসম করি। এখন প্রশ্ন হল, আমি কসম ভঙ্গকারী হয়েছি কি না? হলে কয়টি কাফফারা আদায় করতে হবে? যে কয়বার ভঙ্গ হয়েছে সে কয়টি নাকি যে কয়বার কসম করেছি সে কয়টি। জানিয়ে বাধিত করবেন। উল্লেখ্য, আমি এভাবে কতবার যে কসম করে ভঙ্গ করেছি তা জানা নেই। এখন কী করতে পারি? সুপরামর্শ চাই।

মুহাম্মাদুল্লাহ

বরিশাল

সমাধান: উক্ত ক্ষেত্রে কসম ভঙ্গ করার কারণে আপনাকে কাফফারা আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে একবার কসম করে তা ভাঙ্গার পূর্বে সেই বিষয়ের কসম বারবার পুনরাবৃত্তি করার দ্বারা যদি আপনি ভিন্ন করে কসমের উদ্দেশ্য না নিয়ে থাকেন; বরং পূর্বের কসমেরই পুনরাবৃত্তি করা এবং তা দৃঢ় করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে এক্ষেত্রে প্রতি কসমের ওপর কাফফারা আসবে না। বরং এভাবে কসমগুলো করার পর যখন কসম ভঙ্গ হয়েছে তখন একটি কাফফারা দিতে হবে। এরপর যদি আবার কসম করা হয় এবং তা ভঙ্গ করা হয় তাহলে পুনরায় কাফফারা দিতে হবে।

একটি কসমের কাফফারা হল, দশজন গরীব মিসকিনকে দুবেলা তৃপ্তিসহ খানা খাওয়ানো। অথবা তাদের প্রত্যেককে এক জোড়া করে কাপড় দেওয়া। এ দুটির সমার্থ্য না থাকলে এক নাগাড়ে তিনটি রোজা রাখা।

এখন আপনার কর্তব্য হল, উপরোক্ত মাসআলা অনুযায়ী কতবার কসম ভঙ্গ করেছেন যথাসম্ভব তার সঠিক হিসাব বের করার চেষ্টা করা। সঠিক হিসাব বের করা না গেলে প্রবল ধারণার ভিত্তিতে কাফফারার সংখ্যা নির্ধারণ করে তা আদায় করবেন এবং আল্লাহ তাআলার নিকট ভুলভ্রান্তির জন্য ইস্তিগফার করবেন।

প্রকাশ থাকে যে, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার সংকল্পের ক্ষেত্রে বান্দার দায়িত্ব হল বারবার কসম না করে বরং আল্লাহ তাআলার প্রতি মুতাওয়াজ্জেহ হওয়া এবং তার তাওফীক কামনা করা এবং কোনো আল্লাহঅলা বুজুর্গের সংশ্রব অবলম্বন করা ও বেশি বেশি দোয়া করতে থাকা। (সূরা মায়েদা: ৮৯; কিতাবুল আসল: ৩/২৩৮ ও ১৯৬; আল-মাবসূত, সারখসী: ৮/১৫৭; ইলাউস সুনান: ১১/৪২৬; রুহুল মাআনী: ৭/১৪)

সমস্যা: আমাদের এলাকায় প্রচলন আছে যে, কোনো কথা বিশ্বাস আশ্বস্ত করানোর জন্য কালিমায়ে তাইয়িবা পড়ে কথা বলে। আমাদের এলাকাতে সেটিকে শপথ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। জানার বিষয় হলো, শরীয়তের দৃষ্টিতে এটিকে কসম বলা হবে কি না?

মীরাজুল হক

ঠাকুরগাঁও

সমাধান: কসমের উদ্দেশ্যে কোনো শব্দ বললে তা দ্বারা কসম সংঘটিত হয়ে যায়। তেমনিভাবে কোনো শব্দ কসম হিসেবে ব্যবহার হওয়ার প্রচলন থাকলে কসমের নিয়ত না করলেও তা দ্বারা কসম সংঘটিত হয়ে যায়। (রদ্দুল মুহতার: ৩/৫৫)

নিকাহ-বিয়ে

সমস্যা: আমাদের এক আত্মীয়ার বিয়ে হয় গত বছর। মেয়েটির গর্ভে সন্তান আসার পর তার স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দেয়। এ দুঃখে ও ক্ষোভে মেয়েটি ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে তার গর্ভস্থ সন্তানকে নষ্ট করে দেয়। এখন সে ইদ্দত কীভাবে পালন করবে? এই গর্ভপাতের দ্বারা কি ইদ্দত শেষ হয়ে গেছে? নাকি ঋতুস্রাবের মাধ্যমে ইদ্দত পালন করতে হবে?

নজীরুল ইসলাম

এনায়তপুর

সমাধান: গর্ভস্থ সন্তানের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন- হাত-পা, নখ, চুল ইত্যাদি হয়ে থাকলে তা ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে ফেলে দিলেও ইদ্দত পূর্ণ হয়ে যায়।

عَنِ الْـحَارِثِ، أَنَّهُ قَالَ فِي الْـمُطَلَّقَةِ، وَالْـمُتَوَفَّىٰ عَنْهَا، إِذَا رَمَتْ بِوَلَدِهَا قَبْلَ أَنْ يَتِمَّ خَلْقُهُ، قَالَ: إِذَا اسْتَبَانَ مِنْهُ شَيْءٌ حَلَّتْ لِلزَّوْجِ.

তালাকপ্রাপ্তা ও স্বামী মৃত্যুবরণ করেছে এমন মহিলা যদি তার গর্ভস্থ সন্তানের আকৃতি পূর্ণতা লাভ করার আগে তা ফেলে নষ্ট করে তার সম্পর্কে তাবেয়ী হারেস (রহ.) বলেন, তার যদি কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হয়ে থাকে তাহলে সেই মহিলার ইদ্দত পূর্ণ হয়ে যাবে এবং সে অন্য স্বামীর জন্য হালাল হয়ে যাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবু শায়বা: ১৯৬২৩)

আর গর্ভস্থ সন্তানের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ না হয়ে থাকলে তা ফেলে দেওয়ার দ্বারা ইদ্দত পূর্ণ হবে না। এক্ষেত্রে তাকে নতুন করে তিনটি পূর্ণ ঋতুস্রাবের মাধ্যমে ইদ্দত পালন করতে হবে।

উল্লেখ্য যে, গর্ভস্থ সন্তানের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হোক বা না হোক মায়ের মৃত্যু বা শারীরিক মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা ছাড়া গর্ভ নষ্ট করে ফেলা নাজায়েয। আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হয়ে গেলে, রূহ সঞ্চার হওয়ার পর হলে তা নষ্ট কর ফেলা আরও বড় গুনাহ এবং মানুষ হত্যার শামিল। জেনে রাখা দরকার যে, তালাক হয়ে যাওয়ার কারণে গর্ভ নষ্ট করা বৈধ হয়ে যায় না। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/১৬১; আল-বাহরুর রায়েক: ১/২১৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ৫/৩৫৬; আদ-দররুলমখতার: ১/১৭৬)

সমস্যা: আমার মামা তার সৎ খালাকে বিয়ে করেছে। আমার নিজের নানী অর্থাৎ মামার আপন মা মারা যাওয়ার পর, নানা আরেকটি বিয়ে করেন এবং সেই নানীর আপন ছোট বোনকে মামা বিয়ে করেন। উল্লেখ্য, সে নানা মারা যাওয়ার পর তারা বিয়ে করে। এখন আমি জানতে চাচ্ছি যে, তাদের এই বিয়ে শরীয়তসম্মত হয়েছে কি না?

তাদের ঘরে দুটি সন্তান হয়েছে। তাদের বিয়ে যদি শরীয়তসম্মত না হয় তবে (ক) তাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রাখা যাবে কি না? (খ) তাদের ভুল হয়েছে বলে তাদের জানানোর পরও যদি তারা বিয়ে বিচ্ছেদ না করে তবে তাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করব কি না? (গ) তাদের বিয়ে নাজায়েয হলে তাদের সঙ্গে কিভাবে এটা উপস্থাপন করব। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন আর এ অবস্থায় তারা ইবাদত-বন্দেগি করলে তা কবুল হবে কি? তাদের সন্তানদের বয়স ১০ ও ৪ বছর। তাদের সৎভাবে চলতে আমাদের করণীয় কী?

মুহাম্মাদ আলম

বগুড়া

সমাধান: সৎ মায়ের বোন মাহরম নয়। তাকে বিয়ে করা জায়েযের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ফতওয়ার কিতাবে লেখা রয়েছে। তাই আপনার মামার জন্য সৎ মার বোনকে বিয়ে করা জায়েয হয়েছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। তবে আপনার আত্মীয় ও পার্শ্ববর্তী লোকদের মধ্যে যারা এই মাসআলা নিয়ে বিভ্রান্তিতে আছে তাদেরকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া আপনাদের কর্তব্য। যাতে এ নিয়ে কোনো প্রকার ঝামেলার সৃষ্টি না হয়। (সূর নিসা: ২৪; আহকামুল কুরআন: ২/১৩৯; রদ্দুল মুহতার: ৩/৩১; ইমদাদুল আহকাম: ২/২৪৭)

ক্রয় বিক্রয়

সমস্যা: আমি এমরানের কাছ থেকে ২৭ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু ক্রয় করলাম। এরপর আমি সেই গরু এমরানের কাছে ৪ মাসে বাকিতে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে বিক্রয় করলাম, এটা কি ঠিক আছে? অতঃপর এমরান চার মাস পর টাকা দিতে না পারাই আরও মেয়াদ বাড়িয়ে নেয় আরও তিন হাজার টাকা দিয়ে এটা কি জায়েজ হবে? জানালে খুব উপকৃত হবো।

সমাধান: নগদ বিক্রির তুলনায় বাকিতে বিক্রি করলে বেশিতে বিক্রি করা জায়েয। সে হিসেবে ২৭ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করে বাকিতে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে বিক্রি করা জায়েয হয়েছে। তবে মেয়াদ বৃদ্ধি করার কারণে টাকা বাড়িয়ে দেয়া জায়েয হয়নি। এটা সুদ হিসেবে গণ্য হবে।

সমস্যা: ঈদ ও বিভিন্ন ছুটির দিনগুলোতে দেখা যায়, একশ্রেণির ব্যবসায়ী ট্রেনের আগাম টিকেট ক্রয় করে তা ক্রয়মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে যাত্রীদের কাছে বিক্রি করে। আবার কখনো এমন হয় যে, কোনো যাত্রী ট্রেনের আগাম টিকেট ক্রয়ের পর সফরের সিদ্ধান্ত বাদ দেওয়ার কারণে তা অন্যত্র বিক্রি করতে বাধ্য হন। এখন আমার জানার বিষয় হল, এই উভয় ক্ষেত্রে টিকেট অন্যত্র বিক্রি করা যাবে কি না? আর বিক্রি করা গেলে ক্রয়মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি করতে পারবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

খন্দকার মহিউদ্দীন

ত্রিশাল

সমাধান: প্রশ্নে উল্লিখিত উভয় ক্ষেত্রে ক্রয়মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে টিকেট বিক্রি করা যাবে না। অবশ্য প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ক্রয়মূল্যে বা তার চেয়ে কমে বিক্রি করা যাবে। আর অন্যের কাছে বেশি মূল্যে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে টিকেট ক্রয় করা এবং এ ধরনের কারবারকে পেশা বানানো জায়েয নয়। তাই স্বাভাবিক অবস্থায় এদের থেকে কেনাও ঠিক নয়। তবে প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার জন্য তা ক্রয় করা বৈধ হয়েছে। এছাড়া অন্যের কাছে বেশি দামে বিক্রির নিয়তে কাউন্টার থেকে আগেভাগে টিকিট কিনে নেওয়া চরম অনৈতিকতা। জেনেশুনে এমন ব্যক্তিদের নিকট টিকিট বিক্রি করা কর্তৃপক্ষের জন্যও নাজায়েয। (মুসান্নাফে ইবনে আবু শায়বা, হাদীস: ২৩৭৬০, ২৩৭৫৩; আল-মাবসূত, সারাখসী ১৫/১৩০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৫০; আদ-দররুল মুখতার ৬/৯১, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস: ১৪৯৭৩; মুসান্নাফ ইবনে আবু শায়বা ১৩/৬৯৩, হাদীস: ২৩৭৬০; আল-মুহীতুল বুরহানী ১১/২৬৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৯১)

হেবা-মীরাস

সমস্যা: এক ব্যক্তির সন্তানরা তার দেখাশোনা করে না এবং তাকে খরচাদিও দেয় না। তাই সে চাচ্ছে তার সম্পদ থেকে সন্তানদেরকে বঞ্চিত করে সমুদয় সম্পত্তি স্ত্রীর নামে লিখে দিতে। এটা জায়েয হবে কি না?

ইলিয়াস হুসাইন

মনিরামপুর

সমাধান: সম্ভাব্য কোনো ওয়ারিসকে বঞ্চিত করে সমুদয় সম্পত্তি কাউকে দিয়ে দেওয়া অবৈধ। সন্তানরা বাবার খোঁজ না নেওয়া ও তাকে না মানা অন্যায়। কিন্তু এ কারণে তাদেরকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করে দেওয়া যাবে না। সন্তানদের কর্তব্য, পিতামাতার দেখাশোনা করা ও খোঁজখবর রাখা এবং তাদের অবাধ্য না হওয়া। পিতামাতার অবাধ্যতাকে হাদীসে কবীরা গুনাহ বলা হয়েছে। হযরত আবু বাকরা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন,

«أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِر»؟ قُلْنَا: بَلَىٰ يَا رَسُوْلَ اللهِ، قَالَ: «الْإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ».

“আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহর কথা বলে দেবো না?’ আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসুল! অবশ্যই (বলে দিন)। বললেন, ‘আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতামাতার অবাধ্য হওয়া।” (সহীহ বুখারী: ৫৯৭৬)

উল্লেখ্য, মীরাস হচ্ছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দার মৃত্যুপরবর্তী সম্পদ বণ্টনের পদ্ধতি। বান্দার উচিত এতে নিজ থেকে হস্তক্ষেপ না করা এবং এমন কিছু না করা, যাতে তার সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী পুরোপুরি বঞ্চিত হয়ে যায়। অবশ্য কখনো কোনো সন্তানের ফাসেকী বা অবাধ্যতা চরম পর্যায়ে চলে গেলে সেক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার পূর্বে ভুক্তভোগী নিজে কোনো ফতোয়া বিভাগে গিয়ে অবস্থা বর্ণনা করে তাদের মাসআলা অনুযায়ী আমল করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবু শায়বা, হাদীস ৩১৬৮৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া: ৪/৪০০; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৩৭)

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ