খন্দকার মুহাম্মদ হামিদুল্লাহ
লেখক: বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক
ভাষার সঙ্গে সাহিত্যের সম্পর্কটা গাছের সঙ্গে ফুলের, ফলের সঙ্গে রসের কিংবা গোশতের সঙ্গে মগজের সম্বন্ধের মতো। পরস্পরের অস্তিত্ব একেবারে নির্ভরশীলতার। ভাষার শরীরে সাহিত্যের সুবাস, রঙ ও সৌন্দর্য-সুষমা আকার-অবয়বে মূর্ত হয়ে ওঠে। তবে অন্যান্য দৃশ্যবস্তুর মতো এটা ধরাছোঁয়া ও দৃষ্টিগ্রাহ্য হওয়ার মতো ব্যাপার নয়। মন, মগজ ও রুচির জগতে তার অধিবাস।
***
হাটবাজার ও বিপণী বিতানে ভাষা আর সাহিত্যের দেখা মিলবে না। বইয়ের পাতায় ফিরতে হবে আমাদের। সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরীর মজার কথাটি দিয়ে আলাপ শুরু করা যায়। তিনি ‘বই পড়া’ শিরোনামের রচনার শুরুটাই করেছেন এ বাক্যগুলো দিয়ে:
‘বই পড়া শখটা মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ শখ হলেও আমি কাউকে শখ হিসেবে বই পড়তে পরামর্শ দিতে চাইনে। প্রথমত সে পরামর্শ কেউ গ্রাহ্য করবেন না, কেননা আমরা জাত হিসেবে শৌখিন নই। দ্বিতীয়ত অনেকে তা কুপরামর্শ মনে করবেন, কেননা আমাদের এখন ঠিক শখ করবার সময় নয়। আমাদের এই রোগ-শোক, দুঃখ-দারিদ্র্যের দেশে সুন্দর জীবন ধারণ করাই যখন হয়েছে প্রধান সমস্যা, তখন সেই জীবনকেই সুন্দর করা, মহৎ করার প্রস্তাব অনেকের কাছে নিরর্থক এবং নির্মমও ঠেকবে। আমরা সাহিত্যের রস উপভোগ করতে প্রস্তুত নই; কিন্তু শিক্ষার ফল লাভের জন্য আমরা সকলে উদ্বাহু। আমাদের বিশ্বাস, শিক্ষা আমাদের গায়ের জ্বালা ও চোখের জল দুই-ই দূর করবে। এ আশা সম্ভবত দুরাশা…।’
এক.
আমরা নিজের প্রিয় ও পছন্দের বিষয়ে মনের সুখে মজে থাকি, ডুবে যাই। চাইলেও সহজে কেউ সেখান থেকে আমাদের মনোযোগ সরাতে পারে না। জোর করে সরাতে চাইলে আমরা বিরক্ত হই, ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠি। এই যে তীব্র আকর্ষণে আঠার মতো লেগে থাকাকে আসক্তিও বলা চলে। এ ব্যাপারগুলো সচরাচর বিদ্যালয়ের ধরাবাঁধা পাঠ্যসূচির বেলায় ঘটে না। গড়পড়তা দুচারটি লেখায় নানান স্বাদের সম্মিলন দেখা গেলেও অধিকাংশ পাঠে সেই রসকষের দেখা পায় না অন্তত শিক্ষার্থীরা। সিলেবাস তো সিলেবাসই। সেখানে কেবল রসের হাড়িঁ নিয়ে পসরা সাজালে তো চলবে না!
এখানে ‘রস’ কথাটি কিশোর-কিশোরীদের সহজাত আনন্দ-আকর্ষণের বিষয়বস্তু গল্প ও নানান স্বাদের ছড়া-কবিতা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। যা পবিত্র, নির্মল এবং পরস্পরের মধ্যে ভাগভাটোয়ারা করার মতো উন্মুক্ত ও সর্বজনীন। ছাত্রজীবনে নিজেদের কিশোরকাল ও শিক্ষকের নিত্য অভিজ্ঞতা এ দুটি ছবি সামনে রাখা হলে আমরা দেখবো, যে শিক্ষার্থীটি দৈনন্দিন বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ্যভুক্ত বিষয়ে নিজের আগ্রহে ততোটা যত্নবান নয়; সে-ই গল্প, কবিতা কিংবা কৌতুকের বইটি একমনে, গভীর ধ্যানে পড়ছে। পরীক্ষার সময় লুকিয়ে, আড়ালে-আবডালে পাঠ্যসূচি বহির্ভূত ‘আউট বই’ পড়ার দায়ে মা-বাবা কিংবা শিক্ষকের বকুনি খাওয়ার ঘটনা তো সকল যুগে অহরহ, বিস্তর।
দুই.
ঠিক এই জায়গাটিতে আজকে দৃষ্টিপাত করবো আমরা; অনুসন্ধানের কেন্দ্রবিন্দু এটাই। শিক্ষার্থীর নিজস্ব আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে তার চাহিদাকে আমরা পূরণ করবো কিছু সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনাসহ। যেখানে কোনো চাপ ও জবরদস্তি থাকবে না। সাহিত্য আসলে চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। তবে আমরা তার সামনে সত্য ও সুন্দরের পর্দা উন্মোচন করবো। অন্ধকারের পরিবর্তে আলোর পথটি বাতলে দেবো। কিশোর নবীনদের হাতটি একেবারে ছেড়েও দেওয়া যাবে না; তাদেরকে এটুকু তো শেখাতে হবে, কীভাবে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত সাহিত্যকে পাশ কাটিয়ে সুসাহিত্যের সুবাসটুকু নিতে হয়। কারণ বাইরের চাকচিক্যের মোহে পড়ে তারা পথ হারাতেই পারে। কাজটি সুচিন্তা, পরিকল্পনা, নিষ্ঠা ও রুচিবোধের সমন্বয়ে হতে হবে। এভাবে আগামী প্রজন্মকে পরিচ্ছন্ন ও শুদ্ধ ও জীবনমুখী সাহিত্যের আলো ঝলমল পৃথিটার সঙ্গে আমরা পরিচিত করাতে পারি। সহজ ও অল্পকথায় ভালো-মন্দের বাছ-বিচারটি হবে মহান আল্লাহর নির্দেশনার আলোকে, চারিত্রিক মূল্যবোধের বিচারে ও সুস্থ চিন্তার মাপকাঠিতে।
তিন.
তত্ত্বকথা আপাতত এখানে শেষ করে দুয়েকটি ব্যবহারিক উদাহরণে আসা যাক। কিশোরকালে গল্প-উপন্যাস, ম্যাগাজিন-সাময়িকী ও জাতীয় পত্রিকার সাহিত্য পাতা ইত্যাদির পড়ার দিকে একটা ঝোঁক তৈরি হয় আমাদের। এটা আল্লাহর একান্ত দয়া ও ভালোবাসায়। এটা ধীরে ধীরে অভ্যাসে পরিণত হয়। কারো ক্ষেত্রে শুরুর দিকেই পথ দেখানোর মতো কেউ থাকে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কারো হয়তো থাকে না। শিক্ষা ও সাহিত্যচর্চার একটা অনুকূল আবহ-পরিবেশ কেউ পায় পারিবারিক উত্তরাধিকার হিসেবে। আমরা নব্বইয়ের দশকে বেড়েওঠা অনেকেই এমন আছি, যারা সেই সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী, মীর মশাররফ হোসেন, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, নজরুল-ফররুখ, ইয়াকুব আলী, মুজতবা আলী ছাড়াও একেবারে এ-সময়ের দুর্দান্ত লেখক সাহিত্যিক, সৈয়দ শামসুল হক, হুমায়ুন আহমেদ, শফিউদ্দীন সরদার, আবু তাহের মিসবাহ, যাইনুল আবেদীন থেকে শরীফ মুহাম্মদ পর্যন্ত অনেকের লেখা থেকে ভাষার কলকব্জার সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। বাংলা সাহিত্যের পাঠ শিখেছি। সেসব পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও বইপত্রের নামধাম আলাদাভাবে উল্লেখ করা না গেলেও ভালো লেখকদের লেখা ছাপে এমন প্রতিশ্রুতিশীল সাহিত্য সাময়িকীগুলোর ঋণ স্বীকার করছি মনেপ্রাণে।
চার.
আলোকিত কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিকের সরাসরি সান্নিধ্য, সহযোগিতা ও নির্দেশনা যারা পেয়েছেন তাদের সৌভাগ্য নিঃসন্দেহে ঈর্ষণীয়। এ সময়ে বিশ্বাসী ধারার সাড়াজাগানো সাহিত্যিক ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভীর মতো অনেকেই আবু তাহের মিসবাহ নামের নিভৃতচারী ও সাহিত্যসাধকের কারখানায় নির্মিত হয়েছেন। তাদের পরবর্তী কয়েক প্রজন্মের তরুণরা সাহিত্যের নতুন রাজধানী ঢাকায় অন্তত দুইযুগ ধরে সাহিত্যের ফুলবাগানে সুরভি বিলিয়ে যাচ্ছেন। চলতি ও বিগত এক দশকে এমন বহু সফল চাষীর সোনালি ফসল আমরা বছরজুড়ে ঘরে তুলছি।
সিঁড়ির কথা: ধাপে ধাপে উত্তরণ
পাঁচ.
আমরা যখন ছাত্র-ছাত্রীদের কথা ভাবছি, তখন কিছু বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। তাদের উপযোগিতার দিক আর স্তর মাথায় রাখতে হবে। একেবারে কোলের শিশু যেভাবে প্রথমদিকে দুধ-জাতীয় তরল খাবারের জন্য উপযুক্ত থাকলেও বয়স বাড়ার সঙ্গেসঙ্গে তার খাবার গ্রহণের একেকটি ধাপের উন্নতি হয়। ধীরে ধীরে তুলনামূলক গাঢ় ও শক্ত খাবারের জন্য তার পেট প্রস্তুত হতে থাকে। এমন পরিপক্বতার উদাহরণটি শিক্ষা ও সাহিত্যের জন্যও প্রযোজ্য। পাঠক যেন সাহিত্যের সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে উপরের দিকে উঠতে থাকে। কাজেই শুরুটা খুবই সহজ, সরল ও ছোট ছোট শিশুতোষ বিষয় দিয়ে হবে আর দিনে দিনে তার অগ্রগতি সাধিত হবে। একসময়ের ‘কঠিন’ ও ‘ভারী’ লেখাগুলো তার কাছে আর জটিল কিংবা দুর্বোধ্য থাকবে না। এর বিপরীত হলে বিপত্তি ঘটবে।
পাঠক/শিক্ষার্থীভেদে রুচি ও পছন্দের ভিন্নতা স্বাভাবিক। কারো ঝোঁকটা গল্প-উপন্যাসের দিকে, কারও আসক্তি গোয়েন্দা সিরিজ ও কল্প-কাহিনিতে। কেউ মেতে থাকে কবিতা-ছড়ায় আবার কারো আগ্রহ রম্য রচনা এমনকি গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ-নিবন্ধে। এই স্বাধীনতা শিক্ষার্থী আর পাঠকের থাকতে হবে। আপনার বয়স যাই হোক, আপনার সাহিত্য পাঠ ও ভাষার সময়পর্ব যদি শুরুর দিকে হয় আপনি চট করে কালি ও কলম পড়তে ঝাপ দেওয়া ঠিক নয়। একইভাবে আপনার ছাত্র-ছাত্রীদেরও এমন উঁচুমাপের ও ওজস্বি ভাষা-আঙ্গিকের বইপত্র পড়তে দেওয়ার সুফলদায়ক না-ও হতে পারে।
ছয়.
আমি জানি, নিজেকে দিয়ে উদাহরণ দেওয়া বেমানান। এটা যত কম হয় তত ভালো। আমার জীবন ও বিচরণ সাধারণ সমতলে, দৃষ্টান্তের উচ্চতায় নয়। প্রাসঙ্গিক আলোচনার সুবিধার্থে শ্রেণিকক্ষে ও লেখায় মাঝেমধ্যে কথা চলে আসে। বহুবার এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে আমাকে। কনিষ্ঠজন, শিক্ষার্থী আর নবীন লেখকরা শুধু জানতে চায় এমন নয় বরং অনেক জ্যেষ্ঠ, বিজ্ঞ ও মর্যাদাবান ব্যক্তিবর্গের এ ধরনেরই প্রশ্নে ‘জেরবার’ হয়েছি বহুবার ‘আপনার পটভূমি তো ভিন্ন, এ চর্চার সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হলেন? বৃত্তান্তটি একেবারে সাদামাটা! খুব ছোটবেলায় যখন বাংলা শব্দ ও ছোটোছোটে বাক্য অল্পস্বল্প পড়তে পারি (হয়তো অন্য অনেকের মতো) মফসসল এলাকায় সাইনবোর্ড দেখলে কৌতুহল নিয়ে পড়তাম। এরপর এখান ওখান থেকে চলে নাস্তা মোড়ানো কাগজ ও ঠোঙ্গার গায়ে লেখাগুলো পড়া অভ্যেসে পরিণত হলো। গল্প, কবিতা, উপন্যাস, পত্রিকা, ম্যাগাজিনের সাহিত্য ও প্রবন্ধ-নিবন্ধের প্রতি দিনদিন ঝোঁক আর অনুরাগ বৃদ্ধিটা আরও পরে। এভাবে বহুদিন, সপ্তাহ, মাস ও বছর গড়িয়েছে। পড়তে পড়তে একসময় মনের ভাবগুলো অল্প অল্প করে খাতায়, কাগজে, ডায়রিতে এমনকি শেষ পর্যন্ত ১৯৯৭-‘৯৮-এর দিকে ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক মুসলিম জাহানে খোদিত হলো। এ নিয়ে স্বভাবতই কিছুটা আবেগ-উত্তেজনায় প্রথমদিকে বিহ্বল হলেও তা কখনও মাত্রা ছাড়িয়ে আত্মপ্রদর্শনীর বারান্দায় বেরিয়ে আসেনি। তারপর যখন যা মনে ধরেছে; বিশেষত সমসাময়িক ও চলমান ঘটনাপ্রবাহের উত্তাপে আলোড়িত হয়েছি। উর্দু থেকে শীর্ষস্থানীয় ঝানু লেখক বিদ্বৎজনের প্রবন্ধ মাসে দুয়েকটি অনুবাদ করেছি। একসময় জাতীয় দৈনিকে যৎকিঞ্চিৎ লেখার সুযোগ হাতে এলো। সব হয়ে হয়তো হবে কুড়ি-৩০টি বিবিধ লেখা।
থাক ও সব কথা। পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটনার আগে আলাপের ইতি টানতে চাই।
বইপড়া ও লেখার উপাদান
সাত.
বিশ্বসমাজে খ্যাতিসম্পন্ন ও নোবেল বিজয়ী লেখক ঔপন্যাসিক আবদুলরাজাজক গুরনাহ ঢাকায় ‘আ ওয়ার্ল্ড উইদাউদ আ কান্ট্রি’ শিরোনামের এক আলোচনায় বলেন, ‘লেখার সময় লেখক মূলত নিজেরই মুখোমুখি হয়। চারপাশে দেখা মানুষ ও চেনা পরিবেশের গল্প থেকেই সে উপাদান খুঁজে পায়। তবে একই প্রসঙ্গ এক একজনের কাছে ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দেয়। প্রকাশও ভিন্ন ভিন্ন হয় আর সেটাই লেখকের বৈশিষ্ট্য।’ বইপড়া নিয়ে ছকবাঁধা কথার বাইরে কিছুর মজাদার উক্তিও শোনা যায় মাঝে মাঝে। নামিদামি লোকদের কেউ কেউ বইকে একেবারে ‘নিদ্রাকুসুমের’ কাছাকাছি ‘মর্যাদা’ (নাকি অমর্যাদা) দিয়েছেন। পরামর্শ দিয়েছেন ঘুম না হলে বই খুলে শুয়ে পড়ার। তবে তিতা-মিটা যাই মনে হোক, বই আমাদের জ্ঞান, আত্মবিশ্বাস ও কল্পনাশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি চিন্তার দিগন্ত খুলে দেয়। আজকাল বিভিন্ন কাজের প্রস্তুতি গ্রহণে সহায়ক হিসেবেও বইয়ের বিচিত্র ভূমিকা লক্ষণীয়।
এক পৃষ্ঠা লিখতে হলে দশ পৃষ্ঠা এমনকি কারও মতে একশ পৃষ্ঠা পড়তে হয়, এ-কথা তো আমার নয়, জ্ঞানী ও চিন্তাবিদদের। কেবল বইপড়া নিয়ে ভালোমতো লিখতে গেলে পুরোদস্তুর একটি বই দাঁড়িয়ে যাবে। লেখকরা সাধারণত, তার বিষয়কে সামনে রেখে প্রাসঙ্গিক লেখার উপাদানগুলো সংগ্রহ করে প্রয়োজন ও প্রেক্ষাপট অনুসারে বিন্যাস ও বিশ্লেষণ করেন। কাজেই যেকোনো লেখা তৈরি হবার জন্য লেখকের কাছে উপাদান থাকতে হবে। এই উপাদান আহরনের জন্য বইয়ের রাজ্যে বিচরণ করতে হবে।
অনলাইন পত্রিকা আওয়ার ইসলামকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দুইজন গবেষক ও সাহিত্যিক যথাক্রমে ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ও শরীফ মুহাম্মদ বইপড়া বিষয়ে খুবই দরকারি ও সুন্দর পরামর্শ দিয়েছেন। ড আ ফ ম খালিদ বলেন, নজরুল ফররুখ, কায়কোবাদ, ইসমাইল হোসেন সিরাজীর বইয়ের কথা তো আর বিশেষভাবে বলতে হয় না। তারা বাঙালি পাঠকের হৃদয়ে বাস করছেন বহু যুগ ধরে। তিনি সিরাতের রাসুল (সা.)-এর পর ইতিহাস নির্ভর বই কেনার পরামর্শ দেন। ‘এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ তাদের যারা আমাদের জাতিসত্তার নির্মাতা। এদের মধ্যে রয়েছেন হাজী শরীয়তুল্লাহ, শহীদ তিতুমীর, দুদুমিয়া প্রমুখ।
সাহিত্যিক ও সম্পাদক শরীফ মুহাম্মদ মনে বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন, ‘ধর্মীয় বিষয় পালন করে চললে হয়তো আমাকে শুধু ইসলামের বিধানগত বইগুলো পড়তে হবে। অন্য বই পড়া যাবে না। বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। ধর্মীয়ভাবে দৃষ্টিকটু এমন বই ছাড়া সাহিত্যমানে উত্তীর্ণ বই কিন্তু সংগ্রহ করা যেতেই পারে। এছাড়া এমনকিছু বই আছে যেগুলো সরাসরি ধর্মীয় বই নয়, আবার ধর্মবিরোধীও নয়। বলা যায় মাঝামাঝি। এর মধ্যে থাকতে পারে, গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প ইত্যাদি। বই সম্পর্কে তার পর্যবেক্ষণও পূর্বোক্ত কথার সঙ্গে মিলে যায়:
বই মনোযোগ ও স্মরণশক্তি বাড়ায়, তৈরি করে উদ্দীপনা। ফিরিয়ে আনে মনোযোগ, সমৃদ্ধ করে আমাদের শব্দভাণ্ডার। মানসিক চাপ কমিয়ে অন্তরে প্রশান্তি আনার কাজটিও বই করতে পারে। জ্ঞান বৃদ্ধি ও লেখার যোগ্যতা সৃষ্টি তো অবশ্যই আছে।
প্রিয় পাঠক, দুশ্চিন্তার কারণ নেই, বই আপনাকে আনন্দে রাখবে বলে বই-বিশারদগণ অনেক আগেই জানিয়েছেন। আপনি বইয়ের সঙ্গে বসবাস করছেন বলে নিঃসঙ্গ হয়ে যাবার ভয় নেই বরং খোশমেজাজেই থাকবেন বিজনে-নির্জনেও। বই অনন্ত যৌবনা। বয়সের ছাপে ও সময়ের ধাপে প্রিয়ার কালোচোখ ঘোলাটে হয়ে এলেও বইয়ের চোখ থাকবে কাজলকালো।
পেতে হলে সুখ
মিজানুর রহমান
দুনিয়ার রঙে মোরা
হয়েছি রঙিন
কবরের কথা ভুলে
গেছি রাতদিন।
হামেশাই গুনা করে
কেটে যায় বেলা
জীবনের দামি কাল
করি অবহেলা।
দুনিয়ার হায়াতের
নিভে গেলে বাতি
কবরে একা যাবো
রবে নাকো সাথী।
এসো তাই পরপারে
পেতে হলে সুখ
আখেরাত মুখী হই
ছেড়ে যত ভোগ।