জামেয়া ওয়েবসাইট

সোমবার-৯ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-১৪ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইতিহাসে হাফজে আবুল বারাকাত

ইতিহাসে হাফজে আবুল বারাকাত

ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এর রাজধানীর নাম মালে। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ দেশ বিশ্বের সবচেয়ে নীচু দেশ। পর্যটনের জন্য বিখ্যাত এ দেশের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ উচ্চতা মাত্র দুই দশমিক তিন মিটার এবং গড় উচ্চতা মাত্র এক দশমিক পাঁচ মিটার। ১ হাজার দুইশয়েরও বেশি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপ। মালদ্বীপের সংবিধান বলে যে ইসলাম হল মালদ্বীপের নাগরিকত্বের একটি শর্ত। ফলে কোনো অমুসলিম নাগরিক হওয়ার সুযোগ নেই।

ইতিহাস তত্ত্বমতে আরব বণিকদের হাত ধরেই সর্বপ্রথম মালদ্বীপে ইসলামের আগমন ঘটে, মিসরের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ মাহমুদ শাকির তাঁর কিতাব আত-তারিখুল ইসলামীতে বলেন হিজরি ৮৫ তথা খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান এর শাসন আমলে সর্বপ্রথম আরব বণিকদল ইসলামের আলো ছড়াতে মালদ্বীপ আগমন করেন, তবে ব্যাপকহারে মুসলিম গোড়াপত্তন গড়ে উঠেছে এর আরও অনেক পরে আর এর পিছনে রয়েছে এক অলৌকিক ঘটনা, বিশ্বখ্যাত ইতিহাসবেত্তা মুসলিম পর্যটক ইবনে বতুতা তার সফরনামায় তার বর্ণনা দেন, তিনি ১১৮৩ খ্রিস্টাব্দে মালদ্বীপ ভ্রমণ করেন, তবে তার গমনের বহুকাল আগ হতেই মালদ্বীপে ইসলামী শাসন শুরু হয়ে ছিল, ইতিহাস তথ্য মতে জানা যায় ১১৫৩ থেকে ১৯৫৩ পর্যন্ত (৮০০ বছর) প্রায় ৯২জন সুলতান মালদ্বীপ শাসন করেন।

ইবনে বতুতা যখন মালদ্বীপে এসে পৌঁছালেন, তখন তাকে যে জিনিস সবচেয়ে আশ্চর্য করলো তা হল কীভাবে মালদ্বীপে মুসলিমদের গোড়াপত্তন গড়ে উঠেছে অথচ তার আশপাশে কোনো মুসলিম দেশ নেই আবার ব্যাপকহারে মুসলিমদের আগমন ঘটেছে বলেও জানা যায় না, এর পিছনের রহস্যটা জানতে তার প্রবণতা জাগে আর সেই প্রবণতা থেকেই তিনি সেখানের অধিবাসীদের জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন এক অলৌকিক ঘটনা তার সফর নামায় যার জানান দেন।

১১৪০ সাল মালদ্বীপে তখন সানুরাজার শাসন চলছে আরবের একটা জাহাজ মালদ্বীপ হয়ে পূর্বদিকে ছুটে চলছে পথিমধ্যে সমুদ্র তরঙ্গ পেয়ে বসে! মুহূর্তের মধ্যে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেয় বিশাল আকৃতির জাহাজকে! জাহাজের সব যাত্রী মারা যায় তবে একজন ভাঙা জাহাজ টুকরোর আশ্রয়ে কোন রকম এই দ্বীপে এসে পৌঁছায়, ইতিহাস বলে সে ছিল মরক্কো বা সোমালিয়ান এবং পবিত্র কুরআনের হাফিয তার নাম হাফিয আবুল বারাকাত আল-বারবারী আল-মাগরিবী, সেখানে তিনি এক বৃদ্ধার ঘরে আশ্রয় পান।

একদিনের ঘটনা: আবুল বারাকাত একদিন সন্ধ্যাবেলা বাইরে থেকে বাড়ি ফিরে দেখে তাকে আশ্রয়দানকারী বৃদ্ধা কাঁদছে সাথে তার মেয়েটাও কাঁদছে! কারণ জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন মালদ্বীপের এক বর্বর প্রথা সম্পর্কে! তা হল এই দ্বীপে প্রতি বছর এক নির্দিষ্ট তারিখে এক সমুদ্র বিপদ ধেয়ে আসে তার থেকে রক্ষা পেতে দ্বীপবাসীর পক্ষ হতে এক সুন্দরী তরুণীকে দ্বীপের উপকূলে অবস্থিত মন্দিরে সূর্যাস্তের পর রেখে আসতে হয় আর প্রতিবছর লটারি দিয়ে তরুণী নির্বাচন করা হয়! তবে দুর্ভাগ্যক্রমে এবছর লটারিতে বৃদ্ধার মেয়ের নাম আসে আর তাকে নেওয়ার জন্য বাদশার সৈন্যবাহিনী চলে আসছে তাই এই ক্রন্দন…! বৃদ্ধার এমন বেদনাবিধুর ক্ষণে পরোপকারীতে তুষ্ট তরুণ একটা বুদ্ধি আঁটে সে অস্ফুটে স্বরে বৃদ্ধাকে বলে আপনার মেয়েকে পাঠানোর দরকার নেই, বরং আমিই আজ সেখানে যাবো দেখি কি হয়? প্রয়োজনে আমি জীবন দেব, রাজার সৈন্যরা চিনতে না পারে মতো করে আপনার মেয়ের পোশাক আমাকে পরিয়ে দেন! ভিনদেশি এক কিশোরকে এভাবে মৃত্যুর মুখে ঢেলে দিতে বৃদ্ধা কিছুতেই রাজি নয়! কিন্তু আবুল বারাকাত বললেন, আমি মুসলিম। এক আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় পাই না। আর জীবন-মৃত্যু আল্লাহর হাতে। আল্লাহর হুকুম না হলে কেউ কাউকে মারতে পারে না। তা ছাড়া আমি হাফেজে কুরআন। তাই আমার বিশ্বাস আল কুরআনের বরকতে মহান আল্লাহ তাআলা আমাকে রক্ষা করবেন! আবুল বারাকাতের পীড়াপীড়িতে বৃদ্ধা রাজি হল! হাফিয আবুল বারাকাত সবে কৈশোরে পা দিয়েছে ঠিক মত দাঁড়িও গজায়নি সুন্দর অবয়বেও ছিল মাশাআল্লাহ যার কারণে বাদশার সৈন্যদল চিনতেই পারেনি যে, তারা কি বৃদ্ধার মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছে নাকি আবুল বারাকাতকে? সূর্যাস্তের পর সৈকতে অবস্থিত মন্দিরে আবুল বারাকাতকে রেখে আসা হয়! সমুদ্র কোণে অবস্থিত ভয়ংকর মন্দিরে এশার নামাজ আদায় করে উচ্চস্বরে কালামুল্লাহর সুর ধরল হাফিয আবুল বারাকাত! তিলাওয়াতের মূর্ছনা ছড়াতে ছড়াতে সমুদ্র ঢেউ দেখতে থাকেন! প্রাকৃতিক ঘুমের চাপ ঢেলে আসছে আস্তে আস্তে রাত গভীর হচ্ছে চারিদিক নিস্তব্ধতা ছেয়ে যায়! হঠাৎ আবুল বারাকাত লক্ষ করলো সমুদ্র-দিগন্তে বিশাল আকৃতির এক দৈত্যর উদয় হল সে আস্তে আস্তে মন্দিরের দিকে ধেয়ে আসছে! কিন্তু মন্দিরের কাছাকাছি আসতেই আচমকা থেমে গেল, এই দিকে আবুল বারাকাত ও উচ্চস্বরে কুরআন তেলাওয়াত করেই যাচ্ছিলো! বুঝতে আর বাকি নেই কুরআন তেলাওয়াতের বরকতে কোন এক অলৌকিক শক্তি তাকে বাধা দিচ্ছিল! অবশেষে ভয়ংকর দৈত্যটি হার মেনে চলে গেল! রাত পেরিয়ে সকাল হলে রাজার সৈন্যরা আসে মরদেহ নিয়ে যেতে তারা সেখানে আবুল বারাকাতকে দেখতে পেয়ে তাকে রাজার দরবারে নিয়ে যায় আবুল বারাকাত রাজার কাছে সবকিছু খুলে বলেন রাজা এতে খুবই বিস্মিত হয়! নিশ্চিত হতে বৃদ্ধা এবং তার মেয়েকে ডেকে পাঠান, এই ঘটনায় রাজা খুবই প্রভাবিত হন! রাজা জানতে চান কীভাবে তিনি একাই এই বিপদের মোকাবিলা করলেন? তিনি অকপটে উত্তর দিলেন যে আমি মুসলিম! এক আল্লাহ তাআলাকে ছাড়া আর কাউকে ভয় পাই না এবং আমি বিশ্বাস করি জীবন-মৃত্যু আল্লাহর হুকুমে হয় আর আমার রবের পক্ষ হতে প্রেরিত ঐশীবাণীর আমি হাফিয যার বরকতে আল্লাহ তাআলা আমাকে রক্ষা করেছেন! রাজার বিস্ময় যেন থামছে না, সে বলল তুমি কি আগামী বছরও এভাবে একা মোকাবিলা করতে পারবে? আবুল বারাকাত বলল ইনশাআল্লাহ আল্লাহর হুকুমে পারবো, রাজার পক্ষ থেকে তার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, পরবর্তী বছর নির্দিষ্ট তারিখে তাকে সেখানে রেখে আসা হয় এবারও সাগর দানব ব্যর্থ  হয়ে ফিরে যায়! তবুও রাজার বিস্ময় থামছে না সে বলল আগামী বছরও তুমি তার মোকাবিলা করবে আর আমরা সেটা দূর থেকে প্রত্যক্ষ করবো আবুল বারাকাত বলল আমি এক শর্তে থাকতে রাজি আছি আমি যদি এবারও সাগর দানবের মোকাবিলায় সফল হই তাহলে আপনারা ইসলামের সততার সামনে মাথা নত করবেন? রাজা দেরি না করে মাথা নুয়ে হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিল! অতঃপর পরবর্তী বছর নির্ধারিত তারিখে রাজার জন্য দূরে ক্যাম্প বানানো হয় তারা সেখানে অবস্থান করছিল আর আবুল বারাকাতকে সৈকতের মন্দিরে রেখে আসা হয় আল্লাহর হুকুমে এবারও সাগরদানব ব্যর্থ হয়, এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে রাজা আবুল বারাকাতের হাতে ইসলাম গ্রহণ করে এবং ঘোষণা দেয় যাতে রাজ্যের সকলে তিন দিনের ভিতর ইসলাম গ্রহণ করে নেয়, ইতিহাস বলে প্রথম দিনেই ৬৫ হাজার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে এরপর থেকে দলে দলে মানুষ ইসলামের ছায়া তলে আসতে থাকে আর একসময় দেখা যায় পুরা মালদ্বীপের সকল মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে নেয়।

এই ঘটনার পর থেকে এই বিপদ আর আসেনি!

মালদ্বীপের রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে, আবুল-বারাকাত ইউসুফ আল-বারবারির সমাধি রয়েছে।

সাখাওয়াত হোসাইন

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা ও ঢাকা পোস্ট ডটকম

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও রোজাদারদের মিতব্যয়ী হতে হবে

ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রমজান মাসের রোজা অন্যতম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় হিজরিতে কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা উম্মতের উপর রোজা ফরজ করেছেন। কয়েকদিন পরেই শুরু হচ্ছে রমজান মাস। গত বছর এ সময় চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কম থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছিল সাধারণ মানুষ। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সেচ মৌসুম শুরু হয়ে মে মাস পর্যন্ত চালু থাকে। এ সময় বিদ্যুৎ এর চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। এ সময়টাতেই থাকে গ্রীষ্মকাল। এর মধ্যেই রোজা শুরু হচ্ছে। সে হিসাবে মার্চ এবং এপ্রিল মাসে সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা থাকবে সর্বোচ্চ। জ্বালানির অভাবে গত বছর টানা কয়েক মাস লোডশেডিং চলেছে। গত বছর এপ্রিল মাসে বিদ্যুৎ এর সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। আগামী সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ এর সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। চাহিদা বেশি থাকলেও গত বছর গড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে জানা যায়, গ্রীষ্মে তারা চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আশা করা হচ্ছে গ্যাস থেকে ৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট, ফার্নেস অয়েল থেকে ৫ হাজার মেগাওয়াট, কয়লা থেকে ৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট এবং অন্যান্য উৎস থেকে ১ হাজার মেগাওয়াটসহ মোট ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। এতে চাহিদা মিটবে। তবে এ লক্ষ্যপূরণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ না করতে পারলে সেচ কাজ ব্যাহত হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং শিল্প উৎপাদন ঠিক রাখতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের বিকল্প নেই। এছাড়া রমজানে ঠিকমতো বিদ্যুৎ সরবরাহ না হলে রোজাদারদের জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত পর্যাপ্ত জ্বালানির সংস্থান করতে না পারলে লোডশেডিং এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। দেশে এখন বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ২৫ হাজার মেগাওয়াট। এবার গ্রীষ্ম মৌসুমে ১৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ এর প্রয়োজন হবে। বর্তমানে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এখনই উৎপাদন বাড়িয়ে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিশ্বব্যাপী ডলার সংকটের কারণে যে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে উত্তরণে সরকারের সদিচ্ছা ও চেষ্টা রয়েছে। আমরা আশা করি এমন পরিস্থিতি থেকে দ্রুতই বেরিয়ে আসবে দেশ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় বাধা জ্বালানি সংকট। এছাড়া ডলার সংকটের কারণে সময়মতো পর্যাপ্ত জ্বালানি আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। গ্রীষ্মে লোডশেডিং মোকাবিলায় সরকার ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে রাখার যে পরিকল্পনা করেছিল তার মধ্যে রয়েছে পায়রা ও রামপাল কেন্দ্র। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা, কয়লার অভাবে এই দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। অন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কেবল তেল, গ্যাস ও কয়লার ওপর নির্ভর করলে চলবে না; জলবিদ্যুৎ, বায়ুকল, সৌরবিদ্যুৎ, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ সহ অন্যান্য সম্ভাব্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্র নিয়ে ভাবতে হবে সরকারকে। দিন দিন বিদ্যুৎ এর চাহিদা যেভাবে বাড়ছে তাতে বিকল্প এসব ক্ষেত্র কাজে লাগানো ছাড়া উপায় নেই। জনসাধারণেরও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন ও মিতব্যয়ী হওয়া দরকার। বিদ্যুৎ এর অপচয় বন্ধ হলে তা সবার জন্যই সুফল বয়ে আনবে। রমজানে জনভোগান্তি নিরসনে শহর ও গ্রাম পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হবে। এজন্য এখনই বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে সরকারকে সুপরিকল্পিতভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

এবার রমজানের আগেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। রোজায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে ক্রেতাদের কেনাকাটায় অধিক মিতব্যয়ী ও আরও বেশি সহনশীল ভূমিকা রাখতে হবে। নিজ নিজ জায়গা থেকে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। যদিও বিগত করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকট, ব্যাংকে এলসি খোলা নিয়ে জটিলতা- এ ধরনের নানা অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এ ধরনের সিন্ডিকেটের হাতেই জিম্মি সাধারণ ক্রেতা। রমজানের পণ্য আনতে যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য সরকার বাকিতে পণ্য আমদানির সুযোগ করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে এ সংক্রান্ত এলসি খোলার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর সুফল ব্যবসায়ীরা ভোগ করছেন। কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। নিত্যপণ্যের দাম শুধু বাড়ছেই। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামের প্রভাব আরও প্রকট। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কৌশল পাল্টেছে। আগে রোজা শুরু হলে দাম বাড়ত। তখন চারদিক থেকে রব উঠত। সরকারের তৎপরতা আরও বেড়ে যেত। ফলে সিন্ডিকেট বেশিদূর যেতে পারত না। এসব কারণে এখন তারা রোজার দেড়-দুই মাস আগে থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে থাকে। প্রথম রোজা পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকে। ব্যবসায়ীদের কৌশলের কারণে ক্রেতাদের সাবধান হতে বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা অনুরোধ জানিয়েছেন, কেউ যেন একসঙ্গে অনেক বেশি পণ্য না কেনে। তাদের মতে, ক্রেতারা সাবধান হলেও এখন থেকেই কঠোরভাবে বাজার তদারকি করতে হবে। অন্যথায় রোজার আগে পণ্যের দাম আরও বাড়বে। সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের রমজান কাটবে অস্বস্তিতে।

অপরদিকে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এবার রোজায় আমদানি করা পণ্যের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি থাকবে বলে জানিয়েছে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। তবে সরকারের আরেকটি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, রোজার এক মাস ১৭ দিন আগেই গত বছরের তুলনায় আমদানি করা পণ্যের দাম গড়ে ৫৯ শতাংশ বেশি। তবে আদা সর্বোচ্চ ১১১ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানিতে এলসি জটিলতা দূর করা না গেলে রমজানে পণ্যের দাম আরও বাড়বে।

এদিকে এমন পরিস্থিতিতে ক্রেতার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। তারা বলছে, রোজা এলেই সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ে। এবারো সেটাই করা হচ্ছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার সব ধরনের পণ্যের দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বেড়েছে। কিন্তু আয় বাড়েনি। রমজানের আগেই সিন্ডিকেটের কবলে দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। একাধিক সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এখানে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। এরই মধ্যে বাড়ানো হয়েছে ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্য তেল ও মুরগির দাম। সরবরাহ ঘাটতি না থাকলেও দাম বাড়ানো হচ্ছে। এদিকে সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও বিক্রি হচ্ছে না ভোজ্যতেল। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় এসব পণ্যের দাম আরও বেশি।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, পূর্বে প্রশাসনের বাজার মনিটরিংয়ের কারণে গত কয়েক বছর ধরে রমজানে দ্রব্যমূল্য তেমন একটা বাড়ানোর সুযোগ পান না পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তারা এখন কৌশল পাল্টেছেন। রমজান আসার আগেই তারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দেন, যাতে পরে এ নিয়ে আর প্রশ্নের মুখে পড়তে না হয়। এবারো রমজানের ঠিক আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। যা কাম্য নয়। দাম বৃদ্ধির পেছনে ভোক্তাদেরও দায় আছে। অনেকের অভিযোগ, অনেক ক্রেতাই রমজানের আগে পুরো এক মাসের বাজার করেন। এতেই সৃষ্টি হয় কৃত্রিম সংকট।

সহমর্মিতা ও আত্মসংযমের মহান শিক্ষার মাস পবিত্র রমজান। কিন্তু এ মাসেই সবচেয়ে অসহিষ্ণু আচরণ করেন অনেকে। সপ্তাহ নয় বরং পরিবারের জন্য পুরো রমজান মাসের নিত্যপণ্য ক্রয় করেন তারা। বিক্রেতাদের অভিযোগ, কেনাকাটায় এমন অধৈর্য আচরণ পণ্যের দামবৃদ্ধিকে উসকে দেয়। তারা বলছেন, অনেকে এক মাসের বাজার একত্রে করায় পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেয়।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে যদি ভোক্তারা বাজার না করেন, যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই যদি কিনে তাহলে পণ্যের দাম কোনোভাবেই বাড়ার সম্ভাবনা থাকে না। বিআইআইএসএসের গবেষণায় বলা হয়েছে, বাজারে যদিও পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। তারপরও পুরো ব্যবস্থাকে ঠিক রাখতে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সুতরাং এই অবস্থায় যেন আমরা মিতব্যয়ী হই। আমরা যেন বুঝেশুনে কেনাকাটা করি।

একই পরামর্শ জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ইফতারিতে বেগুন কিংবা শসা খেতেই হবে, সেক্ষেত্রে আমরা ভোক্তারাই বাজারে হামলে পড়ি, বাজারকে অস্থির করে তুলি। আমাদের আরও সচেতন হওয়ার সুযোগ আছে। রমজানের প্রথম সপ্তাহের পরেই পণ্যের দাম অনেকটা স্থিতিশীল থাকে। তাই আমাদের একটু ধৈর্যশীল থাকতে হবে। পাশাপাশি রমজানের চাহিদা বিবেচনা করে ব্যবসায়ীদের আগেভাগেই পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি করা জরুরি বলে মনে করি।

সর্বোপরি রোজার বাজার স্থিতিশীল রাখতে ক্রেতাদের অধিক মিতব্যয়ী হওয়াটা অধিক জরুরি বলে মনে করি। পাশাপাশি বাজার সিন্ডিকেটদের অপতৎপরতা রুখতে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে এমনটিই কাম্য। পবিত্র রমজান মাসে বিদ্যুৎ সরবরাহ জনস্বার্থে নিরবচ্ছিন্ন করতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ তদারকি এবং নিত্যপণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত ভাবে রাখতে হবে। রমজানকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ী যেন জনভোগান্তি বৃদ্ধি করতে না পারে বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখতে হবে।

মাহমুদুল হক আনসারী

সংগঠক, গবেষক, কলামিষ্ট

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ