বিরল প্রতিভাধর চৌকস ইসলামি ব্যক্তিত্ব হাকীমুল ইসলাম আল্লামা মুফতি আবদুল হালীম বোখারী (রহ.)
আল্লামা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ
[তানজীমে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত আনোয়ারা। এটি আনোয়ারা উপজেলার কওমী ওলামায়ে কেরামে অরাজনৈতিক, ইসলাহী ও দাওয়াতী সংগঠন। সমাজকে সুন্নতে রসুলের আলোকে ঢেলে সাজানোর জন্য একদল দক্ষ, ত্যাগী, যোগ্য ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মী গঠনের লক্ষ্যে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে এবং সাহাবায়ে কিরামের জীবন আদর্শের ভিত্তিতে শিরিক, বিদআত ও কুসংস্কারমুক্ত একটি আদর্শ সমাজ গঠন করা সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ৪ দফা (দাওয়াত, সংগঠন, প্রশিক্ষণ ও মানবসেবা) কর্মসূচির ভিত্তিতে তানজীমের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিগত ১৩ যিলহজ ১৪৪৩ হিজরী মোতাবেক ১৩ জুলাই ২০২২ খ্রিস্টাব্দ (বৃস্পতিবার) তানজীমের ব্যবস্থাপনায় আয়োজন করা হয় একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান। ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত যেকোনো জামিয়া থেকে ফারিগ হয়েছেন, আনোয়ারা নিবাসী এমন আলেমগণকে দস্তারে ফযীলতের মাধ্যমে সম্মানিত করেছে তানজীম এবং আনোয়ারা উপজেলার প্রবীণ ও বিশিষ্ট আলেমগণকে লাঠি ও পাগড়ি প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করেছে। আনোয়ারা উপজেলার বিশিষ্ট আলেম-ওলামা ও গুণীজনদেরকে একমঞ্চে একত্রিত করে প্রসংশিত হয়েছে এ সংগঠন। আনোয়ারার প্রবীণ বিশিষ্ট আলেম-ওলামা, কলামিস্ট-সাহিত্যিক, মুহাদ্দিস-মুফতি, মাদরাসার পরিচালকগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে আনন্দে মন উচ্ছ্বাসিত হয়েছিলো। বিশেষত ‘আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার সম্মানিত মুহতামিম আল্লামা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ (হাফি.)-এর উপস্থিতি এবং তাঁর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা অনুষ্ঠানের মান-মর্যাদা এবং সৌন্দর্যকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে দিয়েছে। তাঁর জ্ঞানগর্ভ আলোচনার চুম্বুকাংশ পাঠকের সমীপে পেশ করা হলো।—সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমি]
আনোয়ারা উপজেলার ওলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ ফ্লাটফর্ম তানজীমে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত আনোয়ারার উদ্যোগে ও ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত আজকের ‘গুণীসংর্বধনা ও ২২ বছরের ফাযেলদের দস্তারবন্দি অনুষ্ঠান’ এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দীনী দরসেগাহ, আপনাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠান ও হৃদয়ের স্পন্দন আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ (কওমী মাদরসাসা শিক্ষা বোর্ড)-এর চার দশকের অত্যন্ত সুযোগ্য সুদক্ষ মহাসচিব, বাংলাদেশ তাহফীজুল কুরআন সংস্থার সম্মানিত সভাপতি, মাসিক আত-তাওহীদ ও বালাগুশ শারকের মতো দুটি পত্রিকার প্রধান সম্পাদক, বিশ্ববরেণ্য আলেমে দীন হাকীমুল ইসলাম আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ আবদুল হালীম বোখারী (রহ.)-এর জীবন, কর্ম ও অবদান শীর্ষক এ সুন্দর গোছালো চমৎকার আয়োজনের সম্মানিত সভাপতি, উপস্থিত মুহতারম ওলামায়ে কেরাম, বিশেষ করে আজকের সংবর্ধিত ফুযালায়ে এযাম, সম্মানিত সুধীমণ্ডলী!
আমার অত্যন্ত হিতাকাঙ্ক্ষী, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার মুহাদ্দিস, বন্ধুবর হজরত মাওলানা আখতার হোসেন আনোয়ারী (হাফি.) গতকাল আমাকে এ আয়োজনের কথা বলেছেন। যেহেতু আমাদের হজরতের আলোচনা, তাই আমি প্রথম ফোনেই সাঁড়া এবং সায় দিয়েছি। অংশ গ্রহণের উদ্দেশ্যেই এখানে উপস্থিত হওয়া। অন্যথায় আমি মঞ্চে অনেক প্রবীণদেরকে দেখতে পাচ্ছি। তাঁরা হজরত বোখারী সাহেব (রহ.)-কে শৈশবকাল থেকেই দেখেছেন, অনেকে যৌবনকালে দেখেছেন, হয়ত অনেকে খুব কাছে থেকেও দেখেছেন; তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করবেন।
মুহতারম হাজিরীন, আমি আজকের এই আয়োজন ও আপনাদের অংশগ্রহণ দেখে খুবই আনন্দিত। কারণ এ ধরনের ঐক্যবদ্ধ ফ্লাটফর্ম খুব একটা নজারে পড়ে না। এখানে দ্বিধা-বিভক্তি নেই। সকলে মিলেমিশে একটি সংস্থার ছায়াতলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এটি আল্লাহ পাকের মেহেরবানি, আপনাদের ইখলাস ও নিষ্ঠা এবং দায়িত্বশীলদের দূরদর্শিতার ফসল মনে করি। আগামী দিনেও আপনাদের পথচালা সফল ও মসৃণ হোক, এই দুআ মহান রব্বুল আলামীনের দরবারে করি।
মুহতারম হাজিরীন, আসমানের নীচে এবং যমীনের উপরে সর্বোৎকৃষ্ট ও সেরা মানুষ হলো ওলামায়ে কেরাম। মানুষ তা স্বীকার করুক বা না-ই করুক। আল্লাহ তাআলা বলেন,
شَهِدَ اللّٰهُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ١ۙ وَالْمَلٰٓىِٕكَةُ وَاُولُوا الْعِلْمِ قَآىِٕمًۢا بِالْقِسْطِ١ؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُؕ۰۰۱۸
‘আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। ফেরেশতাগণ এবং ন্যায়নিষ্ঠ ওলামায়ে কেরামও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’[1]
আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আল্লাহ পাক ফেরেশতাদের পাশাপাশি আপনাদেরকে-ওলামায়ে কেরামকে বেঁচে নিয়েছেন। ওলামায়ে কেরাম হলেন সেরা মানুষ, তাই আল্লাহ সাক্ষ্যের ক্ষেত্রে তাদের কথা উল্লেখ করেছেন। এ পৃথিবীতে দীনের অতন্দ্রপ্রহরী হলেন ওলামায়ে কেরাম। ওলামায়ে কেরাম দীনের ঠিকাদার নন, দীনের পাহারাদার। কাজেই এই দীন নিয়ে পৃথিবীতে কেবল আপনারাই ভাবেন। অন্য কেউ দীন নিয়ে ভাবে না। ব্যাংক কখনো তার ক্লাইন্ডের দীনের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয় না। ডাক্তার কখনো তার রোগীর দীনের ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখে না। যারা রাজনীতি করে তারাও তাদের অনুসারীদের দীনের ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখে না। কিন্তু ওলামায়ে কেরাম গোটা জাতির দীনের ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখেন। ওলামায়ে কেরাম দীনের পাহারাদারি করেন। এ জন্য ওলামায়ে কেরামকে নবীদের উত্তরসূরি বলা হয়েছে।
«الْعُلَمَاءُ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ».
নবীগণ হলেন আল্লাহর শ্রেষ্ঠ মখলুক। সুতরাং যাঁরা নবীদের উত্তরসূরি তারাও শ্রেষ্ঠ মখলুক হবেন। এ জন্য আপনারা হলেন সৃষ্টির সেরা। সুতরাং আপনাদের এই সভায় অংশ গ্রহণ আমার জন্য কম সৌভাগ্যের নয়।
আপনাদের এই মর্যাদা ইলমের কারণে। আদম (আ.)-এর মর্যাদা নিঃসন্দেহে ইলমের কারণে। অন্যথায় মানুষ ফেরেশতাদের চেয়ে বেশী তাসবীহ পাঠ করার ক্ষমতা রাখে না। মানুষ ফেরেশদের চেয়ে অধিক ইবাদতের ক্ষমতা রাখে না। কিন্তু ইলমের ক্ষেত্রে মানুষ ফেরেশতাদের চেয়েও এগিয়ে আছে। ফেরেশতারা নিজেরাই স্বীকার করেছেন,
قَالُوْا سُبْحٰنَكَ لَا عِلْمَ لَنَاۤ اِلَّا مَا عَلَّمْتَنَا١ؕ اِنَّكَ اَنْتَ الْعَلِيْمُ الْحَكِيْمُ۰۰۳۲{البقرة: 32}
আজকে আমরা যাঁর আলোচনা করছি, হজরত বোখারী সাহেব (রহ.) তাঁর মর্যাদাও ইলমের কারণে। ইলম এমন একটি বস্তু যার পেঁছনে সময় দিলে মানুষ যুগ যুগ ধরে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তাঁকে স্মরণ করবে।
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার সাবেক সফল মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি আবদুল হালিম বোখারী (রহ.)। তিনি ছিলেন বিরল প্রতিভাধর একজন চৌকস ইসলামি ব্যক্তিত্ব। একাধারে বহু প্রতিভার অধিকারী অনন্য মনীষী। প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন ও প্রাজ্ঞ হাদীস বিশারদ। বিশিষ্ট ফকীহ হিসেবে বিজ্ঞ মহলে তিনি ছিলেন ব্যাপকভাবে সমাদৃত। আকাবিরে দেওবন্দের প্রকৃত উত্তরসূরি হিসেবে সুন্নতে নববীর যথার্থ বাস্তবায়ন, ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে আদর্শ জাতি গঠন, আলোকিত সমাজবিনির্মাণে তিনি যে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন তা চিরঅম্লান হয়ে থাকবে।
বিনয়, ভদ্রতা, আমানতদারিতা, সামাজিক শিষ্টাচারিতা, সময়ানুবর্তিতা, মার্জিত ভাষা ইত্যাদি ছিলো আল্লামা বোখারী (রহ.)-এর অনন্য চারিত্রিক ভূষণ। মাদরাসার প্রত্যক্ষ দরস-তাদরীস ছাড়াও তিনি ঈমানের প্রয়োজনে মাঠে-ময়দানেও পরোক্ষভাবে বুদ্ধিদীপ্ত, সাহসী ভূমিকা পালন করে গেছেন। সর্বোপরি দেশ ও উম্মাহর যেকোনো দুঃসময়ে তিনি ছিলেন একজন দরদি অভিভাবক ও চৌকস কাণ্ডারী। জীবন সায়াহ্নকাল পর্যন্ত শিরক-বিদআত এবং খোদাদ্রোহী অপশক্তির বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন।অনেক মানীষী আছেন, যাদের তুলনা খোঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু বোখারী সাহেব হযূর (রহ.)-এর তুলনা তিনি নিজেই। তাঁর তুলনা খোঁজে পাওয়া যায় না। তাঁর সমকক্ষ বা সমগুণের কাউকে খোঁজে পাওয়া যায় না। আল্লামা বোখারী সাহেব (রহ.)-এর ইন্তেকালে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। হজরত হাসান বসরী (রহ.) বলেন,
عَنِ الْـحَسَنِ قَالَ: «مَوْتُ الْعَالِـمِ ثُلْمَةٌ فِي الْإِسْلَامِ لَا يَسُدُّهَا شَيْءٌ مَا طُرِدَ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ».
‘আলেমের মৃত্যু মানে ইসলামের একটি শূন্যতা সৃষ্টি হওয়া, যা কেয়ামত পর্যন্ত কেউ পূর্ণ করতে পারে না।’[2]
লক্ষ্যণীয় হলো, আমরা যাঁদেরকে হারিয়েছি, হাটহাজারীতে হোক বা পটিয়ায়, ভেতরে হোক বা বাইরে; তাঁদের কারে কোনো বিকল্প খোঁজে পাওয়া যায় না।
ওলামায়ে কেরামে মৃত্যুতে কান্না এটি মূলত ইসলামের জন্যই কান্না। হজরত ওমর (রাযি.)-এর শাহাদাতে পর প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হজরত সাইদ ইবনে যোবাইর (রহ.) কাঁদছেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনি কেন কাঁদছেন? তখন তিনি বলেন, ইসলামে জন্যই কাঁদছি। ওলামায়ে কেরামকে দাফন করা মানে কোনো একজন ব্যক্তিকে দাফন করা নয়, বরং ইলমের একটি জাহাজ সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়া, ইলমের এক পাহাড় মাটির নীচে চাপিয়ে দেওয়া, ইলমের এক বিশাল সাগরের ওপর মাটি ঢেলে দেওয়া।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, কিয়ামতের আলামত হলো, ইলমের শূন্যতা দেখা দেবে, ইলমের সঙ্কট দেখা দেবে।
প্রশ্ন হতে পারে, এখন তো আগের তুলনায় মাদরাসার সংখ্যা বেড়েছে। ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফুযালার সংখ্যাও অধিক হয়েছে। তাহলে ইলমে সঙ্কট কীভাবে হলো?
মনে রাখতে হবে, মহান আল্লাহ যে আলেমের কথা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, তাঁরা ছিলেন বক্ষদেশ ছিলো জ্ঞান ও হিকমাহ দ্বারা পরিপূর্ণ। আল-কুরআনে যাঁদের সম্পর্কে বলা হয়েছে,
بَلْ هُوَ اٰيٰتٌۢ بَيِّنٰتٌ فِيْ صُدُوْرِ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَؕ ۰۰۴۹
‘যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, তাদের অন্তরে কুরআনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সুস্পষ্ট।’[3]
অর্থাৎ যাদের সীনায় ইলম রয়েছে। আজকাল মানুষের সীনায় ইলম দেখা যায় না। কারো মোবাইলে ইলম আছে। কারো মেমোরিতে আছে। কারো হার্ডিস্কে আছে। কারো ল্যাপটপে আছে। গুগল আনেক বড় আলেম। চার্চ দিলে অনেক কিছু পাওয়া যায়। প্রযুক্তির সব জায়গায় ইলম আছে। কিন্তু সীনায় তেমন ইলম নেই। আমরা যাঁদেরকে হারিয়েছি তাঁদের ইলম কম্পিউটার ও হার্ড ডিস্কে ছিলো না। তাঁদের ইলম ছিলো তাঁদের সীনায়। তাঁদেরই অন্যতম ছিলেন আল্লামা বোখারী (রহ.)। এমন ব্যক্তিবর্গের জন্য গুগল ও ইন্টেরনেটের প্রয়োজন ছিলো না। তাঁদের বক্ষদেশ ছিলো জ্ঞান-বিজ্ঞানের অতুল সমুদ্র। তাঁরা চলে যাওয়া মানে জ্ঞানের এক মহাসাগর চলে যাওয়া। মূলত এমন আলেম-ওলামার ইন্তেকালের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা ইলম উঠিয়ে নিয়ে যান। لكن يقبض العلم بقبض العلماء।
হজরত বোখারী সাহেব হুজুর (রহ.) জীবনের প্রথম পরীক্ষা নিয়েছিলেন ১৯৮৬ সালে কানযুদ দাকায়িকের। শেষ পরীক্ষা নিয়েছেন মৃত্যুর দুয়েকদিন আগে জামিয়ার নায়েবে ইহতিমামির। প্রথম পরীক্ষার ফলাফলস্বরূপ ১০০ নাম্বার প্রদান করে হজরত ফকীহুল মিল্লাত (রহ.)-এর তা’লীমী কলমে সোপর্দ করেছিলেন। শেষ পরীক্ষার ফলাফলস্বরূপ হজরত (রহ.)-এর জীবদ্দশায় প্রায় ৫০ টিরও অধিক গুরুত্বপূর্ণ শূরার বৈঠকে আমাকে সঙ্গে নিয়ে গেছেন। সে সুবাদে হজরত (রহ.) এর সুষ্ঠু মেজায, ইখলাস, আমানতদারি এবং বিরল বুদ্ধির নিমিত্তে পরিচালিত এশিয়ার বিখ্যাত শিক্ষানিকেতন আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়াসহ সংশ্লিষ্ট প্রায় সাড়ে চৌদ্দশত মাদরাসা পরিচালনার ক্ষুদ্র কিছু অভিজ্ঞতা এবং সুদৃষ্টি আমার অর্জিত হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। যার ফলে আমার অগোচরে জামিয়ার সিনিয়র আসাতিযায়ে কেরাম এবং সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক মজলিসে শূরার নিকট আমার সম্পর্কে হজরত রহ. সুধারণা প্রকাশ করেছেন। এসব বলার উদ্দেশ্য কেবল হজরত (রহ.) কে স্মরণ এবং আপনাদের ভোর রাতের চোখের পানিতে আমি গোনাহগারকে ইয়াদ করা।
পরিশেষে আল্লাহ তাআলার দরবারে ফরিয়াদ করি রাব্বুল আলামীন যেন কুতবে যমান হজরত মুফতী সাহেব হুজুর রহ থেকে হজরত বোখারী সাহেব হুজুর (রহ.) পর্যন্ত সকলকে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করেন এবং আমাদেরকে তাঁদের রুহানি তাওযাজ্জু দান করেন এবং জামিয়ার ইহতিমামির মতো এই মোবারক জিম্মাদারি ইখলাস এবং নিষ্ঠার সাথে পরিচালনা করার তওফিক দান করেন। আমিন।
[1] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আলে ইমরান, ৩:১৮
[2] ইবনে আবদুল বারর, জামিউ বয়ানিল ইলমি ওয়া ফযলিহি, দারু ইবনিল জাওযী, দাম্মাম, সৌদি আরব (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৪ হি. = ১৯৯৪ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ৫৯৫, হাদীস: ১০২১
[3] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আল-আনকাবূত, ২৯:৪৯