জামেয়া ওয়েবসাইট

বৃহস্পতিবার-২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি-৭ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ-২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

করোনার পর এবার আসছে মাঙ্কিপক্স

করোনার পর এবার আসছে মাঙ্কিপক্স

. আবদুল্লাহ ফাহিম

মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ নিয়ে ধীরে ধীরে উদ্বেগ বাড়ছে গোটা বিশ্বে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইতিমধ্যেই এই রোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে আমেরিকার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই রোগ নিয়ে এখনই খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কারণ দেখছেন না। তাঁদের মতে, এই রোগ কোভিডের মতো অতিমারির আকার নেবে না। তবে এ রোগ যন্ত্রণাদায়ক।

চিকিৎসক ফাহিম ইউনুস, ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ কোয়ালিটি অফিসার এই বিষয়ে বলেছেন, ‘মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেটা উদ্বেগজনক হলেও এই রোগে কোভিডের মতো অতিমারি হওয়ার ঝুঁকি শূন্য শতাংশ। এই ভাইরাস কোভিডের মতো প্রাণঘাতী নয়।’ প্রতি ১০০ জনে ১০ জন মারা যায়।

ফাহিমের মতে, এই ভাইরাস মানুষের কাছে নতুন নয়। এটি ‘স্মলপক্স’-এর সমগোত্রীয়। কোভিডের মতো এই ভাইরাস ততটাও সংক্রমক নয়। এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর আশঙ্কাও কম। সর্বোপরি এই ভাইরাসের জন্য বাজারে টিকা রয়েছে। স্মলপক্সের টিকা দিয়েই এই ভাইরাসকে জব্দ করা সম্ভব। কোভিডের ক্ষেত্রে ভাইরাসের প্রজাতিটি অচেনা ছিল। তাই টিকা নিয়ে আসতে প্রায় বছরখানেক লেগে গিয়েছিল। আর এই কারণেই কোভিড অতিমারির আকার ধারণ করেছিল।

ইতিমধ্যেই বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থা (হু)-এর তরফেও এই ভাইরাস নিয়ে ইতিবাচক কথা জানানো হয়েছে। হু-এর তরফে চলা মাঙ্কিপক্স নিয়ে গবেষণার নেতৃত্বে থাকা মারিয়া ভ্যানকে রখোভ বলেন, ‘মূলত ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার দেশগুলিতে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে পারি। অতিমারিতে আক্রান্ত নয় এমন দেশগুলিতে এটি করা সম্ভব। আমরা এমন পরিস্থিতিতে আছি, যেখানে প্রাথমিকভাবে এই রোগ শনাক্ত করে আক্রান্তদের নিভৃত বাসে পাঠাতে পারি। একজন অন্যজনের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে, বিশেষ করে ত্বকের সংস্পর্শে এলে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। তাই নিভৃত বাসই এই রোগের প্রকোপ কমাতে পারে।’

মাঙ্কিপক্স রোগটা নতুন নয়। তবে এই রোগ সম্পর্কে খুব একটা স্পষ্ট ধারণা ছিল না বিশ্ববাসীর। আফ্রিকাতে এই রোগের হদিস আগে মিললেও, ইদানীং এমন কিছু দেশে এই রোগ ছড়াচ্ছে, যা নিয়ে বিস্মিত গবেষকরা। কোভিডের হানা এখনও পুরোপুরি কাটেনি, তারই মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় চিন্তায় পড়ে গিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।

২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ব্রিটেনে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত সাতজন নিয়ে গবেষণা চালানো হয়। গবেষণার সমীক্ষা সম্প্রতি ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। এই গবেষণা অনুযায়ী, এমন কিছু ‘অ্যান্টি ভাইরাল’ ওষুধ আছে যা প্রয়োগ করলে মাঙ্কিপক্সের উপসর্গগুলিকে প্রশমিত করা সম্ভব। শুধু তা-ই নয়, এসব ওষুধের প্রয়োগ করে রোগীরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছেন—এমনই দাবি গবেষকদের। এক্ষেত্রে রোগীদের ওপর দুটি ভিন্ন অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ—ব্রিনসিডোফোভির এবং টেকোভিরিমাট প্রয়োগ করেই আশানুরূপ ফলাফল পেয়েছেন গবেষকরা।

মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ঠেকাতে গবেষকরা ব্রিনসিডোফোভির নামক ওষুধটির কার্যকারিতা সম্পর্কে অনেকটা নিশ্চিত হলেও টেকোভিরিমাটের বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন। গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, রক্ত এবং লালা রসের নমুনা পরীক্ষা করলেই শরীরে মাঙ্কিপক্সের উপস্থিতি টের পাওয়া সম্ভব।

এই ভাইরাসে আক্রান্তদের শরীরে প্রাথমিক উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথা যন্ত্রণা, পিঠ ও গায়ে ব্যথার মতো লক্ষণ। হতে পারে কাঁপুনি ও ক্লান্তিও। এরপর দেহের বিভিন্ন লসিকাগ্রন্থি ফুলে ওঠে। সঙ্গে ছোট ছোট ক্ষত চিহ্ন দেখা দিতে থাকে মুখে। ধীরে ধীরে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে ফোস্কার মতো ক্ষত। বিশেষজ্ঞদের দাবি, আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি থাকলে বেড়ে যেতে পারে সংক্রমণের আশঙ্কা। শ্বাসনালি, ক্ষত স্থান, নাক, মুখ কিংবা চোখের মাধ্যমে এই ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে সুস্থ ব্যক্তির দেহে। সমকামিতা ও যৌনমিলনের মাধ্যমেও এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে।

আমেরিকার একদল বিশেষজ্ঞের মতে, স্মলপক্সের টিকার মাধ্যমেও এই রোগের সংক্রমণ ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব। দিন দিন মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গবেষকরা খুঁজে বার করার চেষ্টা করছেন এই সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে রাখার পথ।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ