জামেয়া ওয়েবসাইট

সোমবার-৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি-২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ-১০ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আমাদের গর্বের কওমি মাদরাসা- উৎপত্তি, প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও অবদান

আমাদের গর্বের কওমি মাদরাসা-উৎপত্তি, প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য অবদান

মুহাম্মদ নূরুল্লাহ

ভূমিকা

পরাধীন আমলে যখন বাঙালি মুসলমানের সামাজিক, রাজনৈতিক ও আর্থিক ভিত্তি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দেওয়া হয়, সেই সঙ্গে মাদরাসাও গুড়িয়ে দেওয়া হয়। ইতিহাস পাঠ করে জানা যায়, সেই চতুর্মুখী জাতীয় অন্ধকারের মধ্যেও কিছু মাদরাসা চালু ছিল। কিন্তু ১৮৩০ সালের মধ্যে সমস্ত মাদরাসাই ইংরেজ সরকার বন্ধ করতে সক্ষম হয়।

অতঃপর ১৮৫৭ খ্রি. সিপাহি বিপ্লবের পূর্ব পর্যন্ত যে কয়েকটি মাদরাসা ব্যক্তি-সহযোগিতায় চালু ছিল বিপ্লবের পর সেসব মাদরাসাও ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর ১৮৬৬ খ্রি. দেওবন্দ পল্লীর ছাত্তা মসজিদের সামনে ডালিম গাছের নিচে সূচিত হয় নতুন ধারার মাদরাসার। যার ব্যয়ভার কোনো ব্যক্তি, সংগঠন ও সরকারের ওপর রাখা হয়নি। বিশেষ কোনো স্থায়ী সম্পত্তির ওপরও নির্ভর করা হয়নি। ওয়াকফ সিস্টেম যা প্রধানত তালিম ও শিক্ষা চালু রাখার জন্য প্রবর্তিত হতো, তার ওপরও কোনো আস্থা রাখা সম্ভব হয়নি।

দেওবন্দ মাদরাসার ইতিহাস হতে জানা যায়, স্বপ্নযোগে এ মাদরাসার ভিত্তি রাখেন জনাব রসুলে করীম (সা.)। মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহ.) বলেন, এর আর্থিক ভিত্তি শূন্যে ঝুলন্ত হাড়ি যা আমাকে দেখানো হয়েছে। দুনিয়ার কারও ওপর এর ভিত্তি বা ভরসা রাখা হবে না। এভাবে সম্পূর্ণ অলৌকিক দিকনির্দেশনায় জাতীয় হতাশার চরম দুঃসময়ে উপমহাদেশের শিক্ষাধারায় দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসার সূচনা হয় এবং এর মাধ্যমে বিরাট এক শিক্ষা ও সামাজিক আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।

কওমি মাদরাসা সৃষ্টির প্রেক্ষাপট

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শোষণ ও কলিকাতার বাবু আধিপত্যের একশো বছর পূর্ণ হলো। বাঙালি মুসলমানসহ ভারতবর্ষের সমস্ত মুসলমানের জীবনেই ততদিনে বিরাট দুর্দশা নেমে এলো। এর আগে ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে শাহ আবদুল আজীজ (রহ.) ভারত স্বাধীন করার জিহাদে শামিল হতে ডাক দিয়েছিলেন। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সবচে বেশি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাংলার যুবকগণ। তারা আজাদি আন্দোলনের বীরসেনানী হিসেবে মুজাহিদ নামে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।

বাংলা ছিল এ মুজাহিদদের অন্যতম ঘাঁটি। বাংলাদেশের দক্ষিণে সমুদ্রের তীর হতে উত্তর দিনাজপুর পর্যন্ত সড়কটি শুধু মুজাহিদরাই ব্যবহার করতেন। বাংলার মায়েরা এক মুষ্ঠি করে চাল সঞ্চয় করে মুজাহিদদের রসদস্বরূপ পাঠাতেন। বাঙালি মুজাহিদ যুবকরা অসংখ্য গোয়েন্দা চৌকি ফাঁকি দিয়ে ১২০০ মাইল পাড়ি দিয়ে সীমান্ত প্রদেশে যাত্রা করতেন।

সাইয়েদ আহমদ শহীদ (রহ.) যখন সীমান্তে লড়াই আরম্ভ করলেন তখন তারই ইঙ্গিতে বাংলার পশ্চিম অংশে তারই খলীফা শহীদ নিসার আলী তিতুমীর জিহাদের পতাকা উত্তোলন করলেন। বিশ্বাসঘাতকদের কারণে পশ্চিমে সাইয়েদ সাহেব দল-বল নিয়ে শহীদ হলেন, বাংলার বীর তিতুমীর তার সঙ্গী-সাথীসহ বাঁশের কেল্লায় লড়তে লড়তে শাহাদাতের মদিরা পান করলেন। ১৮৩১ সালের মধ্যে ঘটনা দুটি ঘটলো। বাংলায় তিতুমীরের আন্দোলন ছাড়াও হাজী শরীয়তুল্লাহ (রহ.) এর আন্দোলন (ও পরবর্তীতে খিলাফত আন্দোলন) বিরাট তরঙ্গ সৃষ্টি করলো।

এদিকে সাইয়েদ সাহেবের মহান আত্মত্যাগ দুর্বার আগুনে কোটি প্রাণে আছড়ে পড়লো। মুজাহিদ কাফিলা তৈরি হলো এবং ভারতবর্ষ থেকে বেনিয়া হঠানোর চূড়ান্ত লড়াই শুরু হলো। ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে প্রথম বুলেটটি বাংলার পাটনা ও গোয়ালিয়র দূর্গ হতে নিক্ষিপ্ত হলো। শুরু হলো আজাদির আন্দোলন। হিন্দু মুসলমান সকলেই যোগ দিলেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় শাহী মহলের বিশ্বাসঘাতকদের কারণে এবারও জনতার সংগ্রাম ব্যর্থ হলো। বিপ্লবের পর সংগ্রামের সমস্ত দায় মুসলমানদের ওপর এসে পড়লো। কলিকাতা হতে প্রকাশিত সমস্ত খবরের কাগজে এর দায় মুসলমানের কাঁধে চাপানো হলো। শুরু হলো মুসলিম নিধন। বিশেষ করে তাদের আলেম সমাজ-শত বছর ধরে যারা আন্দোলনের আগুন জ্বেলে রেখেছিলেন।

২ লক্ষ মুসলিম তরুণ মৃত্যুবরণ করলেন। ৫ হাজার বিশিষ্ট আলেমের ফাঁসি হলো। গণহারে ওলামা হত্যা চললো। দেশের আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পার্কে ও আগ্রা হতে পেশোয়ার পর্যন্ত বিশাল সড়কের প্রতিটি গাছে একজন করে বিপ্লবীর লাশ ঝুলিয়ে রাখা হলো।[1] দেখা গেলো, বাংলা ও ভারতবর্ষে আলেম যারা ছিলেন তারা হয় শহীদ হয়েছেন নয়তো হিজরত করেছেন অথবা ইংরেজের জেলে ধুঁকে ধুঁকে মরেছেন কিংবা মাল্টার নির্বাসন তাদের কপালে জুটেছে। ১৮৫৭ সাল থেকে ১৮৬৮-এ পর্যন্ত মুজাহিদদের সঙ্গে শেষ বুলেটটি অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত দখলদার ব্রিটিশের মুকাবিলা চললো। এর মধ্যে প্রায় সমস্ত আলেম ভারতবর্ষ হতে বিদায় হলেন। ভারতজুড়ে মৃত্যুর বিভীষিকা! যেনও মনুষ্যবসতি নয় মৃত্যুপুরী! শুধু দিল্লিতেই ২৭ হাজার মুসলমানকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়। নির্বিচার গণহত্যা চলতে থাকে। কতজন নিহত হয়েছিল তার হিসাব নেই। মুসলমানের নামনিশানা মুছে দিতেই এ হত্যাকা-পরিচালনা হয়েছিল। নারী ও শিশুদেরও হত্যা করা হয়। নারীদের প্রতি এমন আচরণ করেছে যা কল্পনা করলেও হৃদয় কেঁপে ওঠে।

বিপ্লবপরবর্তী সরকারি নৃশংসতা চলে কয়েক মাস। যখন প্রতিরোধী শক্তি নিস্প্রভ হয়ে পড়ে তখন ব্রিটিশ সরকার জনগণকে কৌশলে খ্রিস্টান বানানোর প্রয়াস নেয়। উচ্ছৃঙ্খল পাদরিরা স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হয়। বেড়ে যায় অনৈতিকতা, অধর্ম, অনাচার। অনাচারী পাদরিদের দুর্বিত্তপনা বেড়েই চলে।[2]

বিশেষ আইনের বলে খ্রিস্টান মিশনারিরা উপমহাদেশে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচার করতে আরম্ভ করে। তৈরি করে অসংখ্য মিশনারি স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল। গড়ে তোলে বাইবেল সোসাইটি নামের সামাজিক ধর্মান্তরিত সংগঠন। নানান কর্মসূচি উপলক্ষ্যে ছিটানো শুরু করে টাকার বাণ্ডিল। …১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে গোটা ভারত সফর করেন বিশপ হেভার। সফর শেষে তিনি বলেন, গোটা ভারতবর্ষে আমাদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মুসলমানদের শক্তি চূড়ান্তভাবে খর্ব। শিখ ও হিন্দুরা আমাদের শক্তির পুজা করছে। এখন থেকে হিন্দুস্তানে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারের আর কোনো বাধা রইলো না।[3]

এদিকে ইংরেজদের অত্যাচার ও শত্রুতায় অতীষ্ট হয়ে দিল্লির মাওলানা শাহ মুহাম্মদ ইসহাক ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে মক্কা শরীফ হিজরত করেন। এরপর ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের আজাদি আন্দোলন যখন হলো তার পরের অবস্থা খুবই ভয়াবহ হওয়ায় শাহ আবদুল গনী মুজাদ্দিদী (রহ.) হিজরত করে মদীনা মুনাওরায় আশ্রয় নিলেন। এদিকে দিল্লিতে যে দীনি দরসগাহ ৬০০ বছর চলমান ছিল শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.) যেখানে ইলমে হাদীসের গোলাপ ফুটিয়েছিলেন তার মৃত্যু হলো।[4]

বিপ্লব-পরবর্তী ঘটনা বিশ্লেষণ করে জানা যায়, বিপ্লবের পর ব্রিটিশ ও তাদের সহযোগী শক্তি আলেমগণের রক্ত নিয়ে এমন নৃশংসতায় মেতে ওঠে যে, দেশ আলেমশূন্য হয়ে পড়ে। নতুন আলেম সৃষ্টির রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। যে দুয়েকটি মাদরাসা তখনও ছিল বিপ্লবের পর তাও গুড়িয়ে দেওয়া হয়। এবার খোলাখুলি ভারতবর্ষকে খ্রিস্টান ধর্মের আওতায় আনার পরিকল্পনা ঘোষণা করে সরকার। সবচে মারাত্মক হলো বিপ্লবের পর শহীদগণের এতিম সন্তানদের পাদরিরা তুলে নিতে লাগলো। এ বিশ্বাস থেকে যে, এদের রক্তে ইংরেজ বিরোধিতা প্রচণ্ড হবে এবং তা ভবিষ্যত সাম্রাজ্যের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠবে। তারা বিনামূল্যে শিক্ষা, ফ্রি পুস্তক ও খরচ বহনের কথা বলে দরদির ভান করে এসব করছিল। এর আগেই হিন্দুস্তানের ওয়াকফ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। ইংরেজের আগ্রাসী মূর্তি এতই মারাত্মক অমানবিক রূপ ধারন করেছিল যে, এ অন্ধকার মুহূর্তে এদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করা সহজ ছিল না, প্রতিবাদ করার লোকও ছিল না। আর পাদরিদের প্রোপাগাণ্ডা এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, পুরাতনরাই ইসলাম ছাড়বে এমন অবস্থা তো নতুন করে কে মুসলমান হবে? তাই দীন শিক্ষা বন্ধ করে নতুন মুসলমান সৃষ্টির পথ বন্ধের ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকার প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। হিন্দুস্তানের কঠিন দুর্দিন এলো, যেনও ভারতের বুক থেকে দীন ইসলাম যায় যায়…।[5]

এমন সময় বিপ্লবের অন্যতম সংগঠক শক্তি শামেলির রণাঙ্গনে মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহ.)-এর নেতৃত্বে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ পরিচালনাকারী বেঁচে থাকা বীরদের শ্রেষ্ঠ কীর্তিই হলো দারুল উলূম দেওবন্দ নামের নতুন ধারার মাদরাসার সূচনা। যা দখলদার বেনিয়া শাসকের সমস্ত আশার গুড়ে বালি ফেলে দেয়। অত্যাচারী দুস্কৃতি শাসকের সামনে দুর্লঙ্ঘ প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।

এখানে দেওবন্দ মাদরাসার ভিত্তি রাখবার পূর্বে বাংলা ও ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শিক্ষার নামে কী ধরনের চক্রান্তে মত্ত হয়েছিল তারও একটা খতিয়ান বোধ করি পাঠকের সামনে আসা দরকার। গবেষক মুহীবুল আজীজ লিখেন, ক্ষমতা দখলের চার দশকেরও কম সময়ের মধ্যে ভারতবর্ষের প্রচলিত নিয়ম-কানুন সব তারা বদলে দিল। ভারতবর্ষে দৃশ্যমান একমাত্র সম্পদের উৎস ভূমির ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাল তারা। প্রাচীনকাল থেকে বা মোঘল আমলেও ভূমির সঙ্গে দেশবাসীর যে সম্পর্ক ছিল তাকে আমূল বদলে দিয়ে একে ব্যক্তি মালিকানার বিষয় করতে সক্ষম হল ব্রিটিশরা। ভূমিসংস্কারের এ সাফল্য থেকেই তারা দৃষ্টি ফেরাল শিক্ষার দিকে। উনিশ শতকের একেবারে গোড়ার দিক থেকে শুরু করে গোটা শতাব্দী জুড়ে এবং শতাব্দী পেরিয়েও চলতে লাগল তাদের শিক্ষাতৎপরতা। ১৭৯৩ এর চিরস্থায়ী বন্দোবন্তের পূর্বে ব্রিটিশ প্রণীত আইন-কানুনের পক্ষে বলা হয় যে, তারা আসলে প্রচলিত ভূমি ব্যবস্থাকে সংস্কার সাধনের মাধ্যমে একে উন্নততর রূপ দিতে আগ্রহী। কিন্তু কার্যত ঘটল অন্য ঘটনা। শিক্ষা প্রসঙ্গেও একই কথা।[6]

… প্রকৃত কথাটা বললেন দুবছর পর উইলিয়াম অ্যাডাম। তার মতে ভারতে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচার প্রসারের আয়োজন সুচারুভাবে করা দরকার। সেজন্য যে মিশনারি স্কুলগুলো রয়েছে তাদের মাধ্যমে ইউরোপীয় শিক্ষা, ইংরেজিতে খ্রিস্ট-নীতিধর্মের প্রচারণায় পরোক্ষভাবে প্রভাব খাটানো যায়। অ্যাডাম দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে শিক্ষাকে বিপুল আয়োজনে সমৃদ্ধ করার মাধ্যমেই কেবল দেশীয়দের নতুন ধর্মের দিকে নিয়ে যাওয়া যাবে।

১৮৩৫ সনে টমাস ব্যাবিংটন ম্যাকলে তার ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনেরও দুই বছর আগে স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। তিনি স্পষ্ট কণ্ঠে জানান যে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে একবার যদি কেউ ইংরেজিতে লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছে তবে নিশ্চিত যে সে আর তার ধর্মে আবদ্ধ থাকেনি।

১৮৩৫ সনের ৭ মার্চ বাংলার গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিক জানালেন যে, ব্রিটিশ সরকারের উদ্দেশ্য ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে উইরোপীয় জ্ঞানবিজ্ঞানসাহিত্য প্রভৃতির সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আর ফারসি সরকারি ভাষা হিসেবে উঠিয়ে দিয়ে ইংরেজিকে তার জাগায় বসিয়ে একটা বড় ধাপ পার হওয়া গেল।[7] দেশের ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা শিক্ষা ধ্বংস করে মিশনারি স্কুল বিকশিত হতে দেওয়া হয়। লম্বা সময় দেশীয় ও ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু না থাকায় কয়েক প্রজন্ম প্রায় শিক্ষাবঞ্চিত রয়ে গেলো।

এ সুযোগে পাদরিরা একক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ার সুযোগ পায়। বাংলার অসংখ্য মাদরাসা, খানকা ও জনহিতকর প্রতিষ্ঠান নির্মমভাবে অনেক আগেই নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়। অবশেষে যখন কোম্পানি ভারতবর্ষের শিক্ষার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়, তখন শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে টমাস মেকেলে বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের এমন একটি শ্রেণি গড়ে তুলতে হবে, সমাজে যারা শাসক ও শাসিতের মধ্যে দোভাষির কাজ করবে। তারা গড়নে ভারতীয় তবে রুচি, মতামত ও বুদ্ধির দিক দিয়ে হবে খাঁটি ইংরেজ।’[8]

মাল্টার বন্দী আজাদি আন্দোলনের অমর শহীদ মাওলানা ফজলে হক খায়রাবাদী (রহ.) লিখেন, ‘তারা শিক্ষা মাধ্যমকে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচার ও ইউরোপীয় সংশয়বাদ ভারতের মগজে প্রম্নথিত করতে ব্যবহার করেছিল।’ (আস-সাওরাতুল হিন্দিয়া, পৃ. ৩৫৬)

এরা লক্ষ বানিয়েছিল কোমলমতি শিশুদেরকে। এদের ধর্ম ও ভাষা শিখিয়ে হিন্দুস্তানের সর্বস্তরে সাম্রাজ্যবাদের শেকড় গেড়ে বসতে চেয়েছিল। এ দেশের জাতিসত্তা বিলোপের প্রয়াস চালিয়েছিল।’[9]

ঐতিহাসিক সাইয়েদ মাহবুব রেজভী উল্লেখ করেন, ‘প্রবীণ ব্যক্তিগণ লক্ষ করলেন, বিলেতি তালিম (শিক্ষা) এদেশে আসার পর হতেই মুসলমানদের পূর্ব ইলমী আমলী ধরনটাই নষ্ট হয়ে যায়। চিন্তাধারা, আকিদা-বিশ্বাস, দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আরম্ভ করে আমল ও কীর্তি সকল কিছুই এর দ্বারা প্রভাবিত হয়।’

মোটকথা মুসলমানের সাম্রাজ্য যখন হাতছাড়া হলো সেই সঙ্গে ইসলামি জীবনপদ্ধতির মূল্যায়নেরও মৃত্যু ঘটানো হলো। ইসলামের সাদাসিধে প্রাকৃতিক রীতিনীতির স্থানে শিরিক বিদআত রুসম খুরাফাত জায়গা পেলো। তওহীদবাদী চেতনার মর্মমূলে রাষ্ট্রীয় মদদে কুঠার হামলা করা হলো। অন্যদিকে ১৮৫৭ সালের আজাদি আন্দোলন ও জিহাদের পর ভারতীয় উপমহাদেশ ওলামায়ে কেরাম শূন্য হয়ে গেলো। মুসলমানদের মধ্যে হীনমন্যতা, পরাজয়ের গ্লানি ও হাতশার ব্যাপক লক্ষণ দৃষ্ট হলো। খ্রিস্টধর্মীয় ইংরেজ সরকারের সফলতার পর খ্রিস্টান মিশনারি ও ধর্মযাজকরা অনেক সাহসী হয়ে ওঠলো। তারা প্রকাশ্যে দম্ভ করে বেড়াতে থাকলো। মাঠে ময়দানে খোলা স্থানে বক্তৃতা করতে শুরু করলো। খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে তারা প্রতিপক্ষকে বহস-মুনাজারার চ্যালেঞ্জ করতে থাকলো। ইসলাম ও তার মহান পয়গম্বরের পবিত্রতার ওপর ভয়ঙ্কর আঘাত হানতে শুরু করে।

অপরদিকে মুসলমানদের মাঝে পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থা, জীবন দর্শন ও সংস্কৃতির প্রভাবে ধর্মীয় ও চারিত্রিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। দীন ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার বিস্মৃতি ঘটতে আরম্ভ করে। অবস্থা বিচারে স্পষ্ট হয় যে, আগামী প্রজন্ম নিশ্চিতভাবে দীন আকিদা সভ্যতা সংস্কৃতি, তাহযীব ও শরীয়া থেকে সম্পূর্ণতই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

এমন পরিস্থিতিতে ভারতবর্ষের ওলামায়ে কেরাম ধর্মীয় ও শিক্ষাগত সম্পদের সুরক্ষা ও মুসলমানদের ধর্মীয় বন্ধন হিফাজত ও চেতনাবোধ সংরক্ষণের প্রত্যয়ে এমন এটি দীনি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অনুভব করলেন যা মুসলমানের রাজনৈতিক বিপর্যয়ের পর ধর্মীয় ও চারিত্রিক পতনকে রুখতে সক্ষম হবে এবং এ শিক্ষাঙ্গন থেকে এমন সব মনীষী সৃষ্টি হবেন যারা ইসলামি শরীয়ার বিভিন্ন বিষয়ে গভীর ব্যুৎপত্তির অধিকারী হবেন। যাদের মধ্যে এক সঙ্গে দাওয়াতী হৃদয়, সৈনিকসুলভ খেদমত ও ইসলামি জ্ঞানের বিকাশ ও মানসিকতা বিদ্যমান থাকবে। যারা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই এদেশে মুসলমানদের ধর্মীয় খেদমত পথনির্দেশনা জ্ঞানের প্রসার ও সংরক্ষণের গুরুদায়িত্ব আঞ্জাম দিতে সক্ষম হবেন।[10] উনিশ শতকে বিশ্বের শিক্ষা ইতিহাসে কওমি মাদরাসার সূচনা যারা করলেন তারা সবাই বিপ্লবের পর বেঁচে যাওয়া হিন্দুস্তানের কয়েকজন তরুণ আলেম; সম্পূর্ণ গায়েবি ইশারায় কাজটি তারা করলেন।

দারুল উলূম দেওবন্দ সৃষ্টি: কীর্তি অবদান

১২৮৩ হিজরি / ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দ। এ বছর উত্তর ভারতের প্রাচীন ঐতিহাসিক এক জনপদে মুসলমানদের জাতীয়, ধর্মীয়, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক জীবনে নবজাগরণের সূচনা হয়। ১৫ মুহাররম ১২৮৩ হিজরী মোতাবেক ৩০ মে ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দ বৃহস্পতিবার, ছোট একটি ডালিম গাছের ছায়ায় নিতান্ত অনাড়ম্বর কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ইসলামি বিদ্যাপীঠ দারুল উলুমের সূচনা হয়। উস্তাদ মাওলানা মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী বসলেন, তার সামনে শাগরিদ মাহমুদুল হাসান কিতাব খুলে বসে পড়লেন।[11] মাদরাসা শুরু হয়ে গেলো।

আল্লাহর কী কারিশমা! একদিকে দিল্লির দরসগাহ বিলুপ্ত হলো অন্যদিকে দেওবন্দ পল্লী আবাদ হলো। কঠিন সময়, নানান সঙ্কট ও বাস্তবতাকে সামনে রেখেই দারুল উলুম দেওবন্দের ঐতিহাসিক যাত্রা সূচিত হয়। দারুল উলুম যখন প্রতিষ্ঠিত হলো তখন মুসলমান সাম্রাজ্য ছিল না। যে ইসলামি হুকুমত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় তা আর থাকলো না। (তারিখে দারুল উলুম দেওবন্দ ১৫০)

ইতিপূর্বে ব্রিটিশ সরকার সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিল। সুতরাং পূর্ব ওয়াকফ পন্থায় নতুন করে মাদরাসা গড়ার সুযোগ ছিল না। তাই প্রয়োজন দেখা দিল তালিমের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নতুন উপায় উদ্ভাবন করা। সম্পূর্ণ নতুন এক পন্থায় দারুল উলুমের ভিত্তি রাখা হলো।

এসময় কয়েকটি ঘটনা ঘটে। মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা হযরত নানুতভী (রহ.) ও প্রথমদিককার দায়িত্ব পালনকারী মুহতামিম মাওলানা রফিউদ্দিন (রহ.)-কে রসুলুল্লাহ (সা.) স্বপ্নযোগে দেওবন্দ এসে সরাসরি দিকনির্দেশনা দেন। এমন ঘটনা একাধিকবার ঘটে। মাদরাসার বার্ষিক মাহফিলে উপস্থিত লোকজনের অনেকে স্বপ্নে দেখেন দেওবন্দ মাদরাসার মাহফিলে রসুলুল্লাহ (সা.) উপস্থিত হয়েছেন।

হযরত নানুতভী (রহ.) বলেছিলেন, আলমে মিছালে আমাকে এই মাদরাসা শূন্যে ঝুলানো একটি হাড়ি হিসেবে দেখানো হয়েছে। এর মর্ম ছিল, এ মাদরাসার বাহ্যিক উপায় উপকরণের চেয়ে তাওয়াক্কুল ও আল্লাহর প্রতি ভরসাটাই বড় করে দেখতে হবে। অদৃশ্য সাহায্য চালাবে মাদরাসা। যতদিন আল্লাহর রহমতের ওপর ভরসা ও গায়েবি মদদের আশা পরিপূর্ণভাবে থাকবে তত দিন মাদরাসা চলবে পূর্ণ স্বস্তিতে।[12]

আল্লামা গঙ্গুহী (রহ.) যখন পৃষ্ঠপোষক, তখন প্রিন্সিপাল নিয়োগের সময় বলেন, বিষয়টিকে আমি তিনবার আল্লাহতাআলার সামনে উত্থাপন করেছি। প্রতিবারই অমুকের নাম এসেছে।

মহান রব্বুল আলামীন বিশ্বের কওমি মাদরাসাসমূহের আধার দারুল উলুম দেওবন্দের সূচনালগ্ন থেকেই এর যাবতীয় ব্যবস্থাপনা অভাবনীয় গতিময়তার সঙ্গে সফল করেছেন। কোনো বাঁধা ও সঙ্কট এর গতি আজও রুখে দিতে পারে নি। মাদরাসার কার্যক্রম দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে নি; আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশান্ত গতিতে সেটি আজও ধাবমান।

মূলত শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.)-এর পর সাইয়েদ আহমদ শহীদ (রহ.) ইসমাইল শহীদ (রহ.) গঙ্গুহী (রহ.) ও নানুতভী (রহ.) ইসলামি আত্মা জিইয়ে রাখা ও ঈমানী আন্দোলনকে সামনে নিয়ে অগ্রসর হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করলেন। হযরত নানুতভী আকিদাগত ও সামাজিক কুসংস্কারের বেদিমূলে আঘাত করলেন। বুদ্ধিবৃত্তিক অস্ত্র প্রয়োগ করে তার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে দেন। ধ্বংসাত্মক রসম রেওয়াজের মুকাবিলা করেন। বিধবা বিয়ে, পৈতৃক সম্পত্তিতে নারির অধিকার বাস্তবায়ন ও সামাজিক উঁচুনীচুভেদকে সমূলে ধ্বংস করতে তার আন্দোলন ও অভিযান সফল হয়। পাদরি ও পণ্ডিত মিশনারিদের মাঠে ময়দানে গণমঞ্চে প্রতিহত ও নাজেহাল করেন। (প্রাগুক্ত ১৪১)

তার কর্মকাণ্ড সারা হিন্দুস্তানে সাড়া ফেলে দেয়। মুসলমান সমাজের বেশিরভাগ মানুষ প্রভাবিত হয়। এরপর তিনি তার জীবনের সেরা কাজটি করলেন। ভারতবর্ষের সমাজ সভ্যতা ও সংস্কৃতির মর্মমূলে ইসলামি চেতনার বাণীকে প্রতিষ্ঠিত রাখতে মাদরাসা গড়লেন। পশ্চিমা আগ্রাসী শক্তি ও সভ্যতার মুখে, পুঁজিবাদী জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতার সামনে যেনও ইসলাম সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে সেজন্য তিনি মাদরাসা নামের ইসলামি দূর্গ তৈরি করলেন। ইসলামি তালিম ও তাহযিব তাতে আশ্রয় পেলো।

উল্লেখ্য যে, শায়খ নানুতভী (রহ.)-এর সময়ে শুধু ভারতবর্ষই নয় গোটা ইসলামি দুনিয়ায় দীনি শিক্ষা অবক্ষয়ের সর্বশেষ পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল। রশিদ রেজা মিসরী বলেন, হিন্দুস্তানে আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম আলিম সমাজ ইলমে হাদীসের প্রতি মনোনিবেশ না করলে প্রাচ্যের দেশগুলো থেকে এই ইলম চিরতরে নিঃশেষ হয়ে যেতো। কেননা মিসর, সিরিয়া, ইরাক ও হিজাযে এই ইলম অবনতির দিকে যাচ্ছিল দশম হিজরি শতক থেকে। ত্রয়োদশ শতকে এসে তা চূড়ান্ত অবনতিতে পৌঁছে।[13]

মাদরাসার প্রকৃতি দর্শন

মাদরাসার দর্শন ও মূলনীতি হচ্ছে, জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইত্তিবায়ে সুন্নাহ, সুন্নাহর প্রচার প্রসার ও দীনের সংরক্ষণ। এ মাদরাসা সম্পূর্ণ ইলহামী দিকনির্দেশনায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ মাদরাসা গড়ে তোলা হয়েছে দীনের সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দানে সক্ষম হয় এমন ওলামায়ে রাসেখীন সৃষ্টির জন্য। সূচনা হতেই এ মাদরাসার অসিত্মত্ব, কার্যক্রম, বাহ্যিক আকার-আকৃতি সবই ইলহাম দ্বারা হয়েছে। সূচনা, নির্মাণকার্য, অবকাঠামো সবই ইলহামী। [প্রাগুক্ত, ভূমিকা, কারী তাইয়িব (রহ.)]

হযরত শায়খুল হিন্দ (রহ.)এর মতে দারুল উলুম প্রতিষ্ঠা করা হয়, কওমি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল আঠারো সাতান্নর বিপ্লবের ব্যর্থতার মোড় ঘুরিয়ে দিতে। পূর্বের জিহাদী সশস্ত্র সংগ্রামকে রাজনৈতিক ও শিক্ষা আন্দোলনের রূপ দিয়ে তার মাধ্যমে ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ এবং ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার জন্যই দারুল উলুম দেওবন্দ ও কওমি মাদরাসাসমূহ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, যতটুকু আমি জানি, ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের ব্যর্থতার পর এ মাদরাসা প্রতিষ্ঠা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে উদ্দেশ্য ছিল এমন এক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা যার ছত্রছায়ায় বিপ্লবের ব্যর্থতার প্রতিকার সাধনের জন্য লোকদেরকে তৈরি করা যেন সম্ভব হয়। এ কারণে তিনি মাদরাসার চতুঃসীমার অভ্যন্তরে ছাত্রদেরকে যুদ্ধবিদ্যার প্রশিক্ষণদানেরও ব্যবস্থা করেছিলেন, যাতে ছাত্রদের মাঝে শিক্ষার সাথে সাথে সৈনিকসুলভ চেতনাও অম্লান থাকে। বিচারবিভাগও তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যাতে শরীয়তের বিধিবিধান কার্যকর করার অভ্যাসও তাদের মধ্যে জাগ্রত থাকে। তৎকালীন তুরস্কের তিনি সাহায্য করেছেন এবং তুর্কি খলীফাদের প্রশংসায় তিনি কবিতা লিখেছেন। ইংরেজের আধিপত্য বিস্তারের পর এমনসব সামাজিক সংগঠনের তিনি আনুকূল্য ও সাহায্য করেছেন যা ইংরেজ হঠিয়ে দেশ স্বাধীন করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।[14]

শিক্ষার প্রসার জাতিরক্ষায় কওমি মাদরাসাসমূহের কীর্তি

দারুল উলুম দেওবন্দ উনিশ শতকের শেষার্ধে নবজোয়ার আনলো। জাতীয় অন্ধকার-দুর্দশার রাত্রিতে দিলো আলোর দিশা। ইসলামি উলুম ও জ্ঞানচর্চায় রাজধানী দিল্লির পতনের পর দেওবন্দই আলোর মশাল জ্বাললো। [15] পরিশুদ্ধতায় আলোকময়তায় উদ্ভাসিত হলো ভারতীয় মুসলমান।

এখান থেকে বেরিয়ে এলেন হাজার হাজার উলামা, ফকিহ, মুহাদ্দিস, লেখক, বাগ্মী, তার্কিক, ধর্মতাত্ত্বিক, সাহিত্যিক, সম্পাদক। ভারতীয় চিন্তাধারায় নতুন স্রোত তারা আনলেন। স্বাধীকার চেতনা বিনির্মাণে ও স্বাধীনতার অগ্নিঝড়া গতিমান সংগ্রামকে কোটি প্রাণে আছড়ে ফেলে তন্দ্রাবিভোর জাতির নিদ ভাঙতে তাদের তুলনা ছিল না। বস্তুত দারুল উলুম দেওবন্দ যে আন্দোলনের সূচনা করে হিন্দুস্তানে, ভারত হয়ে এ আন্দোলন হেজায, মিশর, আফ্রিকা ও পূর্ব ইউরোপে ছড়িয়ে পড়লো।

‘ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও প্রতিবেশি দেশসমূহের প্রচুর সংখ্যক জ্ঞানপিপাসু ছাত্র জ্ঞানার্জনের মহান লক্ষ নিয়ে দারুল উলুমে ভর্তি হয়। দাগিস্তান, আফগানিস্তান, কীব, বুখারা, কাজান, রাশিয়া, আজারবাইজান, ম্যধ এশিয়া, এশিয়া মাইনর, তিব্বত, চীন, ভারত সাগর উপকুলীয় রাষ্ট্রসমূহ সহ অন্যান্য দেশের ছাত্র রয়েছে।[16] ইউরোপর আফ্রিকা আরববিশ্ব চীন রাশিয়া ও আমেরিকা হতেও ছাত্ররা পড়ছে।’

বাংলা-পাক-ভারতীয় মুসলমানদের জীবনধারায় দারুল উলুম দেওবন্দের সন্তানদের সংস্কারধর্মী কর্মকাণ্ডের সুদূরপ্রসারী প্রভাব সুস্পষ্ট। বিদআত কুসংস্কারের মূলোৎপাটন, আকিদা-বিশ্বাসের সংস্কার, তাবলীগে দীন ও ভ্রান্ত সম্প্রদায়সমূহের সাথে জ্ঞানগর্ভ বিতর্কে সফলতা ইত্যাদি তাদের ঐতিহাসিক অবদানের সোনালি অধ্যায়। তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তিত্ব রাজনীতির ময়দানে এবং প্রিয় স্বদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তারা সত্য উচ্চারণ ও নির্ভিক ভূমিকা পালনে পূর্বযুগের ওলামায়ে কেরামের স্মৃতিকে কর্ম দ্বারা জীবন্ত করে তুলেছেন।

ইসলামের ওপর অবিচল-দৃঢ়পদ, হানাফী মাযহাবের ওপর বলিষ্ঠ ও অনঢ় অবস্থান, পূর্বসূরিদের বর্ণনার সযত্ন সংরক্ষণ ও সুন্নাহবিরোধি ক্রিয়াকাণ্ডের প্রতিরোধ দারুল উলুমের অনন্য সাধারণ কীর্তি হিসেবে যুগ যুগ ধরে ভাস্বর হয়ে থাকবে।[17]

যুগশ্রেষ্ঠ অনন্য সাধারণ প্রতিভার অধিকারী বিপ্লবী মহাপুরুষদের লালনক্ষেত্র এই দেওবন্দ মাদরসা। এখান থেকে সৃষ্টি হয়েছেন হযরত মাওলানা শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী, হযরত মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী, হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী, হযরত মাওলানা খলিল আহমদ সাহরানপুরী, মুফতি কিফায়াতুল্লাহ, ওবাইদুল্লাহ সিন্দি, শাব্বীর আহমদ ওসমানী, আতহার আলী ও শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.) প্রমুখ। ধর্মবিমুখতার পাশ্চাত্য বলয় হতে মুসলমানদের ঈমান ও আকীদা সংরক্ষণে এসব মহান ব্যক্তিত্বের কুরবানির নজির নেই।[18]

দারুল উলুম দেওবন্দের ইলমী শিক্ষাগত জাগরণ সৃষ্টির অন্যতম দিক হলো

কুরআন-সুন্নাহে বিশেষজ্ঞ পরিপূর্ণ আলেম তৈরির জন্য যোগ্য শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে সফল শিক্ষাকারিকুলাম চালু করা; শিক্ষায়, যোগ্যতায়, কর্মে উদ্যমে, আধ্যাত্মিকতায়, আদর্শে উদ্বুদ্ধ হাজার হাজার কর্মী সৃষ্টি করে পৃথিবির দিকে দিকে ছড়িয়ে দেওয়া। শিক্ষাক্ষেত্রে পূর্বের মুসলিম আদর্শের প্রতিফলন ঘটানো। এখানে স্মরণ করা যায়: ১১২৪ হি./১৭১৪ খ্রি. হতে ভারতবর্ষে শিক্ষাকারিকুলামে উলুমে শরীয়া বিলুপ্তির পথে যায়। তৎকালীন মাদরাসাগুলোতে মানতিক ও ফালসাফা প্রাধান্য পেতে থাকে। পতনের এই সময়টিতে ইলমে দীনের সামান্য চর্চা শুধু ফিকহের কিতাবগুলোতে হতো। [19] এ অবস্থায় ভারতবর্ষে শিক্ষা সংস্কার ও পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিলেন শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.)। দীনি শিক্ষাক্ষেত্রে আজও গোটা ভারতবর্ষে তার চিন্তাধারাই চর্চা হচ্ছে।

কথিত মদীনা শরীফ থেকে খাল কেটে এনে তিনি হিন্দুস্তানের মাটিতে প্রবাহিত করলেন। এ ধারা চলছিল। কিন্তু ইংরেজ আমলের নানা অত্যাচারে জর্জড়িত হয়ে অত্যন্ত নিরূপায় হয়ে শাহ আবদুল গণী মুজাদ্দিদী (রহ.) যখন ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের পর ভারতবর্ষ থেকে হিজরত করেন তখন দিল্লির মসনদ ও দরসগাহ লুটিয়ে পড়ে। ১৮৫৭ সালের পর দিল্লির রহিমিয়া মাদরাসাটি ব্রিটিশ নিজ হাতে ধ্বংস করে দেয়।[20] উপমহাদেশের একটিও প্রাণকেন্দ্র মুসলমানরা রক্ষা করতে পারেনি। এরপর দারুল উলুম দেওবন্দই শাহ ওয়ালিউল্লাহী ফিকর ও দরসগাহের প্রবাহ পূর্ণতরভাবে হিফাজত করে ও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়। দিল্লির দরসগাহ বন্ধ করলো ইংরেজ কিন্তু দেওবন্দ পল্লী হয়ে কালের প্রবাহে তা বিশ্বপরিগ্রহ করলো।

দারুল উলূম দেওবন্দ মুসলিম উম্মার চিন্তাচেতনা পরিশুদ্ধ করলো। নেতিয়ে পড়া মন ও জমাট চিন্তাধারায় ঈমানের উত্তাপ ও জাগরণী শাণ দিলো। তাদের আত্মিক শক্তিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলো। তার কল্যাণে অতি অল্প সময়ে এমন বিপুল মানুষ জ্ঞানার্জন করতে পারলো বাস্তবে এ ছাড়া যাদের জ্ঞানসাধনার বস্তুগত কোনো উপকরণ বিদ্যমান ছিল না।

দারুল উলুমের আকাবিরগণ লক্ষ করলেন যে, ইসলামি আকিদা-বিশ্বাস ও সংস্কৃতির হেফাজত ও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শেকড় গেঁড়ে বসা রসমরেওয়াজ কুসংস্কারের মূলোৎপাটন দীনি তালিম তারবিয়া ও রাজনৈতিক সংগ্রামকে বেগবান করতে উপমহাদেশব্যাপী এই মডেলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছড়িয়ে দেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। দারুল উলুম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তারা এই ধারার সূচনা করলেন।

সিপাহি বিপ্লবের পরের সময়টি কত কঠিন ছিল ভাবা যায় না। একদিকে চলছে মুসলিম নিধন, অপরদিকে ইসলাম ধ্বংসের জন্য নতুন নবী ও নতুন নতুন ফিরকার জন্ম দিচ্ছিল মানবতার দুশমন ইংরেজ সরকার। ভারতীয় মুসলমানদের চরম অন্ধকার দিনগুলোর মধ্যেই ফিতনার ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছিল প্রত্যেক হিন্দুস্তানির ঘরে ঘরে। তারা একদিকে সাধু-পণ্ডিত ও দুষ্টু পাদরিদের লেলিয়ে দেয় ইসলামের বিরুদ্ধে, অপরদিকে মুসলমানের ঘরেই তৈরি করে গায়রে মুকাল্লিদ ফিরকা, আহলে কুরআন ফিরকা, বেরেলভী, বিদআতী দল-উপদল ও কাদিয়ানি সম্প্রদায় জাতীয় নব্য ফিরকাবাজ গোষ্ঠী। এরা এমনই ভয়াল আগ্রাসন সৃষ্টি করেছিল যে, এ অবস্থায় ভারতবর্ষে সত্যিকারের ইসলাম টিকে যাওয়া ছিল সবচে আশ্চর্য ব্যাপার। কিন্তু ভারতবাসী খুশি হতে পারে এই ভেবে যে, জাতীয় দুর্দশার এই চরম সময়ে কওমি মাদরাসাগুলো দীন হিফাজতের দুর্ভেদ্য দুর্গরূপ ভূমিকা পালন করে। তাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, অন্তিম বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রামের মুখে এই সর্বগ্রাসী ফিতনা দমিত হয়, শত্রুর সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে যায়। এই দুঃসময়ের ইতিহাস রচনা করলে কয়েক খ-গ্রন্থ তৈরি হতে পারে যা দেশের কওমি মাদরাসাগুলোর অবদানকে জাতির সামনে স্পষ্ট করে তুলতে সহায়তা করবে। আজ একথা সত্য যে, দারুল উলুম দেওবন্দ ও তার শাখা মাদরাসাগুলো যদি ভারতবর্ষে না থাকতো তাহলে বাংলা-পাক-ভারতভূমিতে মুসলমান খুঁজে পাওয়া যেতো না; ইসলামের সঠিক চর্চা ও ব্যাখ্যা, দীন-শরীয়ার জ্ঞান ও ভাষ্যের সংরক্ষণ হতো না, মানুষের মধ্যে ইসলামি চেতনা ও সত্যিকার জীবনধারার চিহ্নও থাকতো না।

১৩২৫ হিজরি সালে আরিয়া সমাজের শুদ্ধি আন্দোলন ও হিন্দুমহাসভার মিথ্যাপ্রচারনা ও কদর্য রাজনীতির মুকাবিলায় তাবলীগ শাখা খোলে দারুল উলুম দেওবন্দ। সারা দেশে দাওয়াতি কাফেলা বের করে। এ কাজ এতো সুফল বয়ে আনে যে, তৎকালীন পত্রপত্রিকার রিপোর্টে দেখা যায়, এই কাফেলাগুলো যেখানেই গিয়েছে তাদের অল্পদিনের প্রচেষ্টায় হাজার ধর্মান্তরিত মুসলমান ইসলামে ফিরে এসেছে; যাদের অন্তর দুর্বল হয়ে গিয়েছিল খ্রিস্টান পাদরি ও পণ্ডিত সাধুদের অপপ্রচার ও অপকথা শুনে তাদের অন্তর ইসলামের ওপর জমে গিয়েছে। ভারতজুড়ে ইরতিদাদ ও নাসিত্মকতার যে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল দেখা যায় দারুল উলুমের কর্ম পরিকল্পনার সামনে সবই নিস্প্রভ হয়ে যায়, ভারতীয় মুসলমানের অসিত্মত্ব ও পরিচয় রক্ষা পায়। দারুল উলুম কর্তৃক পরিচালিত এই মিশন আজও বিশ্বজুড়ে চালু আছে, যার সঙ্গে দারুল উলুমের এক সন্তান মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) এর কুরবানি ও কর্মনিষ্ঠা যুক্ত হয়ে অসাধারণ উজ্জ্বলতায় গোটা বিশ্বে দ্যুতি বিলাচ্ছে। বিশ্ব তাবলীগ জামাত নামে এই মেহনত দুনিয়ার সকল প্রান্তে ইসলামের দাওয়াত সমস্ত মানুষের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে দিচ্ছে।[21]

হযরত নানুতভী (রহ.) ওয়ালিউল্লাহি দস্তরখানের সর্বশেষ ব্যক্তিত্ব। জন্ম: ১২৪৮ হি. ১৮৩২ খ্রি.। সাহরানপুর জেলার নানুতা কসবায়। হিন্দুস্তানের অদ্বিতীয় প্রতিভা যার আলোকস্পর্শে প্রতিভার ছোঁয়ায় হিন্দুস্তানের উনিশ শতকের শেষার্ধ উদ্ভাসিত হলো। ওয়ালিউল্লাহি ফিকর ও দর্শন, তালিম ও সংস্কার গতি ও স্থিতি পেলো তার হাত ধরে। যার ধারা আজও মহাগতিতে দেশ মহাদেশের সীমানা অতিক্রম করে যাচ্ছে। তিনি ছিলেন মুজতাহিদ আলেম, সূক্ষ্মদর্শী, আকলমন্দ, হুনরমন্দ। যামানার গতিবেগ পাল্টে দেওয়ার ধাত ছিল তার সত্তায়।

তার এক সময়ের সাথী সৈয়দ আহমদ সাহেব তার ইন্তেকালের পর যে প্রাণস্পর্শী ভাষায় তার কীর্তি ও প্রতিভার স্বীকৃতি দেন তার তুলনা হয় না। আলীগড় গেজেটে প্রকাশিত সেই শোকবাণীতে হযরত নানুতভীকে তিনি হিন্দুস্তানের শ্রেষ্ঠ প্রতিভা, মুজতাহিদ, সুফী ও যুগের অদ্বিতীয় সফল আলেম, সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরেন।

অসাধারণ প্রতিভাধর যুগসংস্কারক ও সমকালকে গভীরভাবে প্রভাবিত করার অশেষ ক্ষমতায় পূর্ণ ব্যক্তিত্ব হযরত নানুতাভির জীবনের বড় কৃতিত্ব হিন্দুস্তানে তিনি ইলমী জাগরণ সৃষ্টি ও ইসলামি শিক্ষা আন্দোলনকে নতুন প্রাণ দেন। দীনি মাদরাসাগুলোর জন্য নজিরবিহীন মূলনীতি ও গঠনতন্ত্র উপহার দেন। ব্রিটিশের রাজনীতির মুকাবিলায় উপমহাদেশ মাদরাসার জাল দিয়ে বেষ্টন করে ফেলেন ও সমস্ত ষড়যন্ত্র রুখে দিতে তিনি সফল হন।[22] শিক্ষাক্ষেত্রে ব্রিটিশ আমলের কায়েমী বর্ণবাদী ধারণা ও সাম্প্রদায়িক কূপমুণ্ডুকতার গুড়ায় আঘাত করেন। উপনিবেশ আমলের প্রচলিত সিস্টেমের বাইরে দেওবন্দ মাদরাসায় তিনি মাতৃভাষায় পাঠদানপদ্ধতি বেছে নেন। প্রচলিত দীনি কারিকুলাম পঠনের শেষে উচ্চতর ইসলামি গবেষণা ও চিকিৎসা, কারিগরি নানা বিষয়ের ডিপ্লোমা বিভাগ চালু করেন।

[১] মাওলানা নদভীর ভাষায়: বিপ্লবের পর ঢালাওভাবে আলেমদের হত্যা করতে শুরু করে। ১২৮১ হি./১৮৬৪ খ্রি. পাটনা, থানেশ^র ও লাহোরের বহু ওলামায়ে কেরাম, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অগণিত মামলা চালু করা হয়। (ভারতবর্ষে মুসলমানদের অবদান ১১৮) এরপর শুরু হয়, ফাঁসির কালো অধ্যায়। প্রায় মহাসড়ক ও রাস্তায় ফাঁসির কাষ্ঠ ঝুলিয়ে রাখা হয়। গণ্য-মান্য বড় বড় ব্যক্তিদেরও একসঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। একদিকে ফাঁসির কার্যক্রম অন্যদিকে ইংরেজের হাসিতামাশা, মশকরা। তারা ধুমপানের আসর জমাতো ও খুশগল্পে মেতে উঠতো। কোনো কোনো পল্লীতে এমনভাবে নৃশয়ংসতা চালানো হয় যে, তাদের একজন মানুষও বাঁচতে পারেনি। পৃ. ১১৪-১১৫, আরও দেখুন: প্রাগুক্ত, পৃ. ১১৪, ১২০

[২] এ বিষয়ে তৎকালীন ঐতিহাসিক বিবরণগুলো পড়–ন।

[৩] তারিখে দারুল উলুম দেওবন্দ, পৃ. ৪৩৩

[৪] তারিখে দারুল উলুম দেওবন্দ, পৃ. ১৩৯

[৫] দ্র. মুসলমানো কা নেযামে তালীম ওয়া তরবিয়াত, ১/৩৯২

[৬] ঔপনিবেশিক আমলের শিক্ষা-সাহিত্য, মুহীবুল আজিজ, পৃ. ১১

[৭] ঔপনিবেশিক আমলের শিক্ষা-সাহিত্য, মুহীবুল আজিজ, পৃ. ১৫

[৮] ম্যাকেলিস মিনুটাস অন এডুকেশন ইন ইন্ডিয়া, পৃ. ১৮৬২

[৯] ম্যাকেলিস মিনুটাস অন এডুকেশন ইন ইন্ডিয়া, পৃ. ৩৫৭

[১০] ভারতবর্ষে মুসলমানদের অবদান, আল্লামা নদভী, পৃ. ৭৭

[১১] তারিখে দারুল উলুম দেওবন্দ, পৃ. ১৪৯

[১২] তারিখে দারুল উলুম দেওবন্দ, পৃ. ৩২

[১৩] তারিখে দারুল উলুম দেওবন্দ, পৃ. ১৪২

[১৪] আমরা দেখতে পাই হযরত শায়খুল হিন্দ (রহ.) সারাজীবন উসতাযের দেখানো পথে হেঁটেছেন। উসতাযের মৃত্যুর পর শোকাগ্রস্ত হয়ে কয়েক মাস তিনি বিছানাশায়ী ছিলেন। এরপর সুস্থ হয়ে ওসতাযের অপূর্ণ স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে ভারতবর্ষ স্বাধীন করার নেশায় বিভোর হয়ে ওঠেন। ভারতকে পরাধীনতামুক্ত করতে তিনি তুরস্কের উসমানী সালতানাত, রাশিয়া ও কাবুলের সহযোগিতা চান। তার সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক শক্তি ওয়াদা করেছিল ও প্রস্তুতিও নিয়েছিল। কাবুলে তার ইঙ্গিতে ব্রিটিশ সেনাদের ডেকে নেওয়া হয়েছিল ও পর্যদুস্ত করা হয়েছিল। অবশেষে একদল গাদ্দার মানুষের কারণে তার রেশমি রুমাল পরিকল্পনার কথা ফাঁস হয়ে যায়। এবং তিনি অত্যন্ত বৃদ্ধ বয়সে মাল্টার জেলে নির্মম নির্যাতন ভোগ করলেন। জেল থেকে মুক্ত হয়ে তিনি তৎকালীন খিলাফত আন্দোলনকে সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা দিলেন। বাংলার সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, হাকীম আজমল, মুহাম্মাদ আলী জওহর, মাহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল, মাওলানা আযাদ ও ডা. আনসারীসহ সকল জাতীয়তাবাদী নেতা তার প্রত্যক্ষ দীক্ষা গ্রহণ করেছেন। তার সাংগঠনিকতা, মুরুব্বিয়ানা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলো ক্রমে ক্রমে স্বাধীনতার দাবি উচ্চকিত করলো এবং এক পর্যায়ে ব্রিটিশকে রাজনৈতিকভাবে মুকাবিলা করে ভারত ছেড়ে যেতে বাধ্য করলো। (বিস্তারিত দেখুন: বৈচিত্রের মাঝে ঐক্যের সুর, নকশে হায়াত, ওলামায়ে হিন্দ কা শানদার মাযি ও মাওলানা আযাদের আত্মজীবনী)

[১৫] তারিখে দারুল উলুম দেওবন্দ, পৃ. ৬১

[১৬] সূচনা থেকে দারুল উলুমে সুবে বাংলার শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচে বেশি ছিল। দারুল উলুমের প্রথম ঘাঁটি হিসেবেও প্রথম স্বীকৃত হয়েছিল বাংলা।

[১৭] ভারতে মুসলমানের অবদান, পৃ. ৭৯

[১৮] ভারতে মুসলমানের অবদান, পৃ.

[১৯] তারিখে দারুল উলুম দেওবন্দ, পৃ. ৮৪

[২০] ব্রিটিশ সরকার দিল্লির মাদরাসা ধ্বংস করে বিভিন্ন লোকের বসতি বসায়। তবুও এখনও এলাকাটি শাহ আব্দুল আযীয মাদরাসা বলেই পরিচিত।

[২১] তারিখে দারুল উলুম দেওবন্দ, পৃ. ২১৫

[২২] তারিখে দারুল উলুম দেওবন্দ, পৃ. ১০৬

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ