জামেয়া ওয়েবসাইট

বুধবার-৯ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জীবনের শুদ্ধতায় রমজান

জীবনের শুদ্ধতায় রমজান

 

পবিত্র মাহে রমজানের এক মাস সিয়াম সাধনা মানব জীবনে শুদ্ধতা লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। মহত্তর চারিত্রিক গুণাবলি অর্জন ও সত্যবোধকে জাগ্রত করার জন্য সংযম ও কৃচ্ছতার ভূমিকা ব্যাপক। সওম মানে বিরত থাকা। কুকর্ম ও কুচিন্তা ও ইন্দ্রিয় পরিচর্যা পরিহার করে সংযমী হওয়াই রোজার শিক্ষা। রমজান-এর শাব্দিক অর্থ দগ্ধ করা। সিয়াম সাধনার উত্তাপে; ধৈর্যের অগ্নিদহনে মুসলমান মাত্রই এ মাসে কুপ্রবৃত্তিকে দগ্ধ করে শুদ্ধ পরিশোধিত মানুষে পরিণত হয়। তাই রমজানুল মুবারক দৈহিক, আত্মিক, নৈতিক ও সামাজিক পরিশুদ্ধির প্রশিক্ষণের মাস। দিনের বেলা রোজা ও রাতের বেলা ইবাদতের মাধ্যমে মানুষ দেহ-মনকে পরিশুদ্ধ করতে পারে এ রমজান মাসে। পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধতার জন্য সিয়াম পালিত হয়ে থাকে। সিয়াম পালিত হয়; (১) চিত্তশুদ্ধির জন্য, (২) পরিচ্ছন্নতার জন্য, (৩) সত্যবোধকে জাগ্রত রাখবার জন্য, (৪) পার্থিব আকঙ্ক্ষাকে নিবৃত্ত রাখার জন্য, (৫) বিনয় এবং নম্রতা প্রতিষ্ঠার জন্য, সহমর্মিতার ও সৌহার্দ্যের চেতনা উজ্জীবনের জন্য  এবং (৬) সর্বোপরি মহান প্রভু আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য।

অতি ভোজন স্নায়ুকোষে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। রোজা দেহের জন্য প্রতিষেধকের কাজ করে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে উপবাসব্রতের কারণে দেহভ্যন্তরে এন্টি বায়োটিক এক বিরাট শক্তি সৃষ্টি হয় যার মাধ্যমে বহু ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও জীবাণু মারা পড়ে। এক মাসের সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্যে দিনের বেলা যখন পানাহার বন্ধ থাকে, তখন পাকস্থলী ও অন্ত্রের ঝিল্লি দেহযন্ত্র থেকে জীর্ণ পদার্থগুলোকে বের (Purgation) করে দেয়। সারা বছর জৈব রসজাত যে বিষ দেহে জমা হয়, সিয়ামের আগুনে তা পুড়ে নিঃশেষে রক্ত বিশুদ্ধ হয়, বিষমুক্ত হয়। একজন রোজাদার রমজান মাসে তার প্রতিটি অঙ্গ বিশেষত হাত, পা, চোখ, মুখ, উদরকে অবৈধ ও গর্হিত কাজ হতে বিরত রেখে সংযমী হয়। দেহের ওপর রোজার প্রভাব সুদুরপ্রসারী। ইচ্ছাশক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে দৈহিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে পরিচালিত করার শিক্ষা দেয় মাহে রমজান।

‘যখন রমজান মাস শুরু হয়, মহান আল্লাহ জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করে দেন, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেন এবং শয়তানকে শৃঙ্খলিত করে রাখেন।’ যার কারণে ইবাদত, যিকির, তেলাওয়াত, কৃচ্ছতা সাধন ও আল্লাহর একনিষ্ঠ আনুগত্যের স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কেবল মাত্র পানাহার ও পাপাচার ত্যাগ করলেই রোজা পালন হয় না। সে সাথে সর্বপ্রকার অন্যায় ও পাপ কাজ হতে বিরত থাকতে হবে এবং অন্তরকে করতে হবে পরিচ্ছন্ন, তবেই রোজা মুমিনের জীবনে নিয়ে আসবে অফুরন্ত রহমত ও বরকত। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রোজা রাখে সে যেন কোনো রকম অশ্লীলতা ও হৈ-হুল্লোড় না করে। কেউ যদি তাকে গালাগাল করে বা তার সাথে ঝগড়া করে সে যেন বলে, আমি রোজাদার’ (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)। রোজা ধৈর্য, সংযম, ও নৈতিক উৎকর্ষের জন্ম দেয়। শিষ্টাচারের মাধ্যমে নৈতিক চরিত্র গঠন রমজানের সিয়াম সাধনার একটি মৌলিক শিক্ষা।

শুদ্ধতার এ অমোঘ মাসটিতে সাধনায় সিদ্ধি লাভ করার সুযোগ অবারিত হয়। সিয়ামের অর্থ হচ্ছে তাকওয়ার অনুশীলন আর তাকওয়ার অনুশীলনই অপরাধমুক্ত সমাজ তৈরির অন্যতম হাতিয়ার। রমজান মানুষের মধ্যে মানবিকতাবোধের উন্মেষ ঘটায়। মহানবী (সা.)-এর ভাষায় ‘সহমর্মিতা ও সৌহার্দের মাস মাহে রমজান (বায়হাকী)। কেননা ধনী ও বিত্তশালীগণ সারা দিন রোজা রেখে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জটর জ্বালার দহন-বেদনা বুঝতে সক্ষম হন, ফলে তাদের মধ্যে সমাজের বঞ্চিত ও অবহেলিত মানুষের প্রতি সহমর্মিতার অনুভূতি জাগ্রত হয়। রমজান মাসে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্থ মানুষের কল্যাণের অর্থ ব্যয় করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। সমাজের প্রতিটি সদস্য সিয়াম সাধনার ফলে অর্জিত সহমর্মিতার শিক্ষা বছরের বাকি ১১ মাস যদি অনুশীলন করতে পারে তাহলে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবী গড়া সম্ভব। রমজান মাস আসলে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যসামগ্রী মওজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি করে অত্যধিক মুনাফা লাভের আশায়। এটা অত্যন্ত গর্হিত ও অন্যায় কাজ। মহানবী (সা.) বলেন, ‘মওজুদদার অভিশপ্ত।’ অতএব মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা আল্লাহ পাকের এক অপূর্ব নিয়ামত, যা অফুরন্ত কল্যাণের পথ উন্মোচিত করে।

ড. খালিদ হোসেন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ