জামেয়া ওয়েবসাইট

শুক্রবার-২৯শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কওমি মাদরাসা: পরিচিতি ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য

হাকীমুল ইসলাম আল্লামা মুফতী আবদুল হালীম বোখারী

[আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ায় দাওরায়ে হাদীসের সূচনা হয় ১৩৬৬ হিজরীতে। আজ থেকে কয়েক দশক পূর্বে এক ঐতিহাসিক স্বপ্নের ব্যাখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স সমমান) শ্রেণির পাঠদান আরম্ভ হয়। দশ-বারোজন শিক্ষার্থী নিয়ে দারুল উলুম দেওবন্দের শায়খুল মাকূল ওয়াল মানকূল আল্লামা ইবরাহীম বলিয়াভী (রহ.) দাওরায়ে হাদীসের দরসের সূচনা করেন। দাওরায়ে হাদীসের দরস আরম্ভ হওয়ার পূর্বে এক ব্যক্তি স্বপ্ন দেখেন যে, চট্টগ্রাম মোজাহেরুল উলুম মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা মুহাম্মদ ইসমাইল সাহেব (রহ.) জামিয়া পটিয়ায় এসে বলেন যে, এখানে নবী করীম (সা.) হাদীস শরীফের দরস দিয়েছেন। সুতরাং আমরাও এখানে হাদীসের দরস প্রদান করবো।

সেই ১৩৬৬ হিজরী থেকে আজ অবধি দাওরায়ে হাদীসের দরস অব্যাহত আছে প্রতি বছর একদল আলেম ফারেগ হয়ে চলে যান দেশ-বিদেশে দরস-তাদরীস, ইমামতি-মুয়াজ্জিনি, খেতাবত-কেতাবত, হালাল ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হয়ে যান জামিয়ার প্রতি তাঁদের ভালোবাসা-মহব্বত থাকা সত্ত্বেও পারিবারিক ব্যবস্থা ও প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতা এবং পরিপার্শ্বিক প্রতিবন্ধকতার কারণে একত্রে এসে জড়ো হওয়া অনেক মুশকিল তাই মাতৃক্রোড়ে এসে শিক্ষকমণ্ডলীর সোহবত গ্রহণ করা কিংবা জামিয়ার উন্নয়নে যৌথভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না তবে এবার ব্যতিক্রমী সাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করলেন ১৪২২ হিজরী মোতাবেক ২০০১ ইংরেজি সালের ফারেগীন নিজ উদ্যোগে জামিয়া কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলেন এবং সাথী-সঙ্গীদের সাথে সম্পর্ক প্রতিস্থাপন করলেন

পরিশেষে তাদের উদ্যোগে বিগত ২২ ডিসেম্বর ২০২১ (বুধবার) বাদে মাগরিব একটি পুর্নমিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো সেখানে ওই শিক্ষাবর্ষের গ্রাজুয়েট-ফাযেলরা উপস্থিত হলেন তাঁদের পদচারণায় মুখরিত হলো জামিয়া প্রাঙ্গণ তাঁরা তাঁদের উস্তাদ ও প্রিয় মানুষগুলোর সান্নিধ্য অর্জন করলেন জামিয়ার মুরব্বিগণ তাঁদেরকে গুরুত্বপূর্ণ নসীহত পেশ করলেন বিশেষত জামিয়া প্রধান হাকীমুল ইসলাম আল্লামা শাহ মুফতী আবদুল হালীম বোখারী (হাফি.) গুরুত্বপূর্ণ নসীহত পেশ করেন তেমনি জামিয়ার বার্ষিক মাহফিলের সমাপনী বক্তব্য রাখেন জামিয়া প্রধান (হাফি.)। তাঁর উভয় বয়ানের সারসংক্ষেপ মাসিক আত-তাওহীদ পাঠকের সমীপে পেশ করা হলোসলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী]

 

نحمد الله و نشكره علىٰ رسوله الكريم. أما بعد! فأعوذ بالله من الشيطان الرجيم، بسم الله الرحمٰن الرحيم. [اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ١ۙ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُؕ۰۰۲] {آل عمران: 3}. صدق الله العظيم.

সম্মানিত আসাতেযায়ে কেরাম ও আমার প্রিয় ফাযেলানে জামিয়া!

আমরা আজ একটি পুনর্মিলনী ইজতেমায় একত্রিত হয়েছি। এটি আমাদের জামিয়া পটিয়ার ফাযেলদের পুনর্মিলন অনুষ্ঠান। আমরা হলাম কওমি মাদরাসার সন্তান। দীর্ঘদিন যাবৎ একত্রে এ জামিয়ায় ছিলাম। বর্তমানে অনেকেই জামিয়া থেকে দূরে আছি। তবে মনে রাখতে হবে আমরা হলাম কওমি মাদরাসার সন্তান। তাই আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন, আমাদেরকে যে প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছি, তার ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে। আমাদের প্রত্যেকটি কাজ-কর্মে যেন কওমিয়ত উদ্ভাসিত হয়। কওমি মাদরাসাসমূহ সূচনালগ্ন থেকে সমাজের যাবতীয় কুসংস্কার অপসারিত করে নিখুঁত ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রবর্তনের ক্ষেত্রে এক বিস্ময়কর বিপ্লবের সূচনা করে আসছে। এ মাদরাসাসমূহ সর্বদা জনসাধারণকে খেলাফতে রাশেদার স্বর্ণযুগের দিকে ধাবিত করে আসছে। যুগের অনৈসলামিক রীতিনীতি ও অপসংস্কৃতির ধ্বংসাত্মক সয়লাবের মাঝে এখনো সমাজে যেটুকু দীনী তাহযীব-তমাদ্দুনের নির্দশন পরিলক্ষিত হচ্ছে তা এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মতৎপরতা ও ত্যাগ তিতীক্ষার ফলশ্রুতি বৈ কি? এদেশ থেকে শিরক, বিদআত, বিজাতীয় কালচার তথা খ্রিস্টান ও ইহুদি আচার-অনুষ্ঠানকে চিরতরে বিদায় দিয়ে বিশ্বনবী (সা.)-এর আদর্শভিত্তিক সমাজ গঠনে তাঁরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন সর্বকালে।

কিন্তু মনে রাখবেন, বিল্ডিংয়ের নাম মাদরাসা নয়, দুবাইয়ে একটি বিল্ডিং আছে ২০০ তলা। কিন্তু সেটি মাদরাসা নয়। শিক্ষক-ছাত্রের নামও মাদরাসা নয়। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ৪৩০০০ শিক্ষার্থী আছে এবং কয়েক হাজার শিক্ষক আছে। কিন্তু তার নামও মাদরাসা নয়। অনুরূপভাবে স্কুল-কলেজে হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষক আছে, সেখানে বিল্ডিংও অনেক বেশি, তা সত্ত্বেও সেগুলোকে মাদরাসা বলা যায় না। তাহলে মাদরাসা কাকে বলে? আমাদের মুরুব্বিরা বলেন, চারটি জিনিসের নাম হলো, কওমি মাদরাসা।

(۱) توحيد خالص، (۲) اتباع سنت، (۳) تعلق مع الله، (۴) اعلاء كلمۃ الله۔

(১) তাওহীদে খালেস

কওমি মাদরাসার প্রথম উদ্দেশ্য ‘তাওহীদে খালেস’ তথা নির্ভেজাল তাওহীদ। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে এমন আকীদা-বিশ্বাস পোষণ করা যে, তিনি এক ও একক; তাঁর কোনো অংশীদার নেই। এটি এমন তাওহীদ যার সাথে শিরকের কোনো সংমিশ্রণ থাকবে না। এটি হলো, কওমি মাদরাসার বুনিয়াদ ও ভিত্তি। আমাদের জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কুতুবে জামান হযরত মুফতি আযীযুল হক (রহ.) বলেন,

مزہ توحید کا مجھ چکھا دے
تیرے اغیار کو دل سے مٹا دے
تیرے اغیار سے ہم کو چھڑا کر
عطا اپنی معیت کر خدایا

ওহে আল্লাহ! তাওহীদের স্বাদ আমাকে আস্বাদন করুন। আপনি ব্যতীত অন্য সবকিছুর মহব্বত-ভালোবাসা অন্তর থেকে দূরিভূত করুন। অন্যদের ভালোবাসা থেকে মুক্তি দিয়ে আপনার সাহচর্য এবং সান্নিধ্য দান করুন।

আমাদের আকাবির এভাবে আল্লাহর নিটক তাওহীদ প্রার্থনা করতেন। কারণ মুসলমানদের বড় শক্তি হলো, তাওহীদ। যার তাওহীদ সুদৃঢ় হলো, সে বিপদমুক্ত হলো। আল্লামা ইকবাল (রহ.) বলেন,

توحید کی امانت سینوں میں ہے ہمارا
آساں نہیں مٹانا نام ونشاں ہمارا
باطل سے دنبے والے اے آسماں نہیں ہم
سو بار کر چکا ہے تو امتحاں ہمارا

তাওহীদের বিশ্বাস আমাদের অন্তরে আছে। সুতরাং আমাদের নাম-নিশান মিটিয়ে দেয়া সহজ নয়। বাতিলকে ভয় করার মতো লোক মোরা নয়, শতবার তো আমাদের পরীক্ষা নেওয়া হলো।

কবি বলেন,

موحد چہ درپای ریزی زرش
چہ شمشیر ہندی نہی بر سرش
امید و ہراسش نباشد ز کس
بر ایں است بنیاد توحید و بس

যারা একত্ববাদে বিশ্বাসী তাদের যদি লক্ষ-কোটি টাকা দেওয়া হয়, তারা তাওহীদ থেকে এক কদমও সরে যায় না। আর যদি তাদের মাথার ওপর তরবারি রাখা হয়, তখনও তারা তাওহীদের ওপর অটল থাকে। তারা কারও কাছ থেকে কোনো কিছু পাওয়ার আশাও করে না, কোনো ব্যক্তিকে, কোনো শক্তিকে ভয়ও করে না। এটাই হলো তাওহীদের শক্তি। এর নাম হলো তাওহীদে খালেস।

তাওহীদে খালেস যদি আমাদের মধ্যে থাকে তাহলে মাদরাসায় কোনো ঝগড়া-বিবাদ হবে না। কোনো অভিযোগ-অনুযোগ থাকবে না। মুহতামিম সাহেব বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেন না। মনে করতে হবে, এটা আল্লাহ পাকের মর্জি এবং আল্লাহর ফয়সালা। আর যদি বেতন বাড়ায়, তাহলে তাতেও সন্তুষ্ট থাকবো। جدہر مولا ادہر شاہ دولہ।

বহুল প্রচারিত একটি জনশ্রুতি আছে যে, প্রচণ্ড বাতাসের কারণে এক লোকের ঘর নড়াছড়া করছে। তখন তার স্ত্রী এসে বললো, আপনি একটা লাঠি নিয়ে ঘরে একটু ঠেস দিয়ে দেন। যেন ঘরটি পরে না যায়। উনি একটি বাঁশ নিয়ে এলেন এবং যে দিকে থেকে বাতাস বইছে, সেদিকেই ঠেলে দিচ্ছেন। তখন তাঁর স্ত্রী বলেন, এমন কেন করছেন? তখন তিনি বলেন, جدہر مولا ادہر شاہ دولہ অর্থাৎ আল্লাহ যেদিকে আমিও সেদিকে।

বস্তুত তাওহীদে যারা বিশ্বাসী, আল্লাহ পাকের কাজা ও সিদ্ধান্তকে যারা মেনে চলেন, তাদের কোনো কাজে দুঃখ নেই, পেরেশানি নেই। আমি যদি কোনো মাদরাসায় শিক্ষকতা করি, আর তখন আমাকে যদি কোনো কল্যাণে বিদায় করে দেওয়া হয়, তাহলে আমাকে মনে করতে হবে যে, মুহতামিমের দিলে যে আমাকে বের করে দেওয়ার কথাটা এসেছে, এটা আল্লাহ পাকের ফয়সালা। তাই আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও ভরসা রাখতে হবে। লাভ-ক্ষতির মালিক একমাত্র আল্লাহকে মনে করতে হবে। আল্লাহর খালিস একত্ববাদে বিশ্বাসী হতে হবে। আর এ খালেস তাওহীদ ও একত্ববাদের শিক্ষা-দীক্ষা ও প্রচার-প্রসারই কওমি মাদরাসার অন্যতম লক্ষ্য। তাই আমাদেরকে এ লক্ষ্য অর্জনে সদা সচেষ্ট থাকতে হবে।

(২) ইত্তেবায়ে সুন্নত তথা সুন্নতের অনুসরণ

আমাদের কওমি মাদরাসাসমূহের দ্বিতীয় নম্বরের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হলো, ইত্তেবায়ে সুন্নত, তথা রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নতের পুর্ণাঙ্গ অনুসরণ করা। আমাদের কওমি মাদরাসায় পড়ুয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং ওলামায়ে কেরামের বৈশিষ্ট্য হলো, তাঁরা সুন্নতের পাবন্ধ হয়ে চলেন। তাঁরা জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নতের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করেন। কেননা রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,

«مَنْ أَحْيَا سُنَّتِيْ فَقَدْ أَحَبَّنِيْ، وَمَنْ أَحَبَّنِيْ كَانَ مَعِيْ فِي الْـجَنَّةِ».

‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে পুনরুজ্জীবিত করে, সে আমাকে ভালোবাসে। আর যে আমাকে ভালোবাসে, সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে।’[1]

অতএব আমারা যারা কওমি মাদরাসা থেকে ফারেগ হয়েছি, আমাদের লেবাস-পোশাক, চলা-ফেরা, মাথা থেকে নিয়ে পা পর্যন্ত শরীরের সর্বাঙ্গে, স্বভাব-চরিত্র; সবকিছুতেই সুন্নত থাকতে হবে। আমাদেরকে মসজিদে প্রবেশ করার সময় সুন্নতের সাথে প্রবেশ করতে হবে। মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়ও সুন্নতের অনুসরণ করতে হবে। তেমনি পেশাব-পায়খানায় যাতায়তের সুন্নতের আছে। এমনকি স্ত্রীর সাথে সহবাস করার সময়ও সুন্নত আছে। তখন নিম্নের দোয়াটি পড়া সুন্নত:

«بِسْمِ اللهِ، اللّٰهُمَّ، جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا».[2]

বস্তুত তাওহীদে খালেস পর্যন্ত পৌঁছার় একমাত্র মাধ্যম হলো, ইত্তেবায়ে সুন্নত। তাই আমাদের জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা আযীযুল হক (রহ.) বলেন,

اتباع سنت احمدؐ ہو اسکی رنگ وبو
حق تعالیٰ کے خریداروں کا یہ بازار ہو

রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নতের অনুসরণ যেন হয় এই জামিয়ার রূপ-সৌন্দর্য। এটি যেন আল্লাহঅলাদের বাজারে পরিণত হয়।

بزرگی کی نہیں ہم کو ضرورت
غلام اپنا بنا ہم کو خدایا
جسے چاہے دے تو دنیا کی دولت
ہمیں مست عبادت کر خدایا

বুজুর্গ হতে চাই না। হে আল্লাহ! আমাকে তোমার গোলাম-দাসে পরিণত করো। যাকে চাও, তুমি দুনিয়ার সম্পদ দান করো। তবে আমাকে ইবাদতের পাগল বানিয়ে দিয়ো।

(৩) আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন

তিন নম্বরে ‘তাআল্লুক মা আল্লাহ’ তথা আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা। তাই আমাদের ফাযেল ও ফারেগীন ছাত্রদেরকে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক মজবুত করতে হবে। কোনো মুরুব্বির সাথে সম্পর্ক স্থাপন করার মাধ্যমে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصّٰدِقِيْنَ۰۰۱۱۹

‘হে ঈমানদারা! তোমরা তাকওয়া অর্জন করো এবং নেক ও সৎ বান্দাদের সোহবত গ্রহণ করো।’[3]

সুতরাং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করার জন্য সেসব বুর্জুগানে দীনের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে, যাদের সাথে আল্লাহর সম্পর্ক আছে, যাঁরা অন্য বুর্জুগের কাছ থেকে খেলাফতপ্রাপ্ত হয়েছেন কিংবা যাঁদের নিকট নিসবত আছে। এমন বুজুর্গদের সাথে সম্পর্ক করতে হবে। আমার চেরাগে তো আলো নেই। তাই যেখানে চেরাগ জ্বলছে, সেখান থেকে আলো নিতে হবে। খাঁজা আযীযুল হাসান (রহ.) বলেন,

تو ہو کسی بہی حال میں
مولی سے دل لگائے جا
قدرت ذوا لجلال میں
کیا نہیں گڑ گڑائے جا
بیٹھے گا چین سے اگر
کام کے کیا رہیں گے پر
گو نہ نکل سکے مگر
پنجرہ میں پھڑ پھڑائے جا

অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা দরজা না খুললেও তুমি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতে থাকো। তাতে আল্লাহ তাআলার দ্বার খুলে যাবে। আত্মার পরিশুদ্ধি অত্যাধিক জরুরি। তাই হযরত শায়খুল হিন্দ (রহ.)-এর ভাষ্য মতে, দারুল উলুম দেওবন্দে মুহতামিম থেকে শুরু করে দারোয়ান পর্যন্ত সকলেই সাহেবে নিসবত এবং আত্মশুদ্ধির মানদণ্ডে উত্তীর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

বিগত দুই দশক পূর্বে ২০০০ সালে আমরা দারুল উলুম দেওবন্দ পরিদর্শন করতে গেলাম। আমাদের সঙ্গে মুফতি শামসুদ্দীন সাহেব (হাফি.)ও ছিলেন। সেখানে আমরা দেখলাম, একজন বৃদ্ধ লোক হাতে তাসবীহ নিয়ে যিকর করছেন এবং দারুল উলুমের পাহাদারির দায়িত্ব পালন করছেন, সুবহানাল্লাহ! তাই আমি আমার আযীয ফাযেলদেরকে আহ্বান করবো, আপনারাও আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করার চেষ্টা করবেন। যারা এখনো কোনো বুজুর্গের হাতে হাত দিয়ে বায়আত গ্রহণ করেননি, তারা অতি সত্ত্বর বায়আত গ্রহণ করবেন। আর যারা পূর্বে থেকে বায়আত গ্রহণ করেছেন, তারা আধ্যাত্মিকতার সবকগুলো আদায় করে পূর্ণতা অর্জনের চেষ্টা করবেন। আল্লাহ সকলকে তাওফীক দান করুন, আমীন।

(৪) এ’লায়ে কালিমাতুল্লাহ তথা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা করা

চার নম্বরে, এ’লায়ে কালিমাতুল্লাহ তথা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা করা। ইসলামের বড় শক্র সম্প্রসারণবাদী ব্রিটিশের শাসনামলে যখন এ দেশে আল্লাহর জমিন থেকে আল্লাহর খেলাফত ও হুকুমত খতম করে তাওহীদের স্থলে শিরকের পতাকা উড়ানো হয়। আর রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ বিলুপ্ত করে পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির শ্রোত প্রবাহিত হতে থাকে এবং মানুষ স্রষ্টাকে ভুলে সৃষ্টির পুঁজা আরম্ভ করে। তখন একমাত্র এলায়ে কালিমাতুল্লাহর লক্ষ্যে দারুল উলুম দেওবন্দ কেন্দ্রিক দুর্দম্য আজাদি আন্দোলন শুরু হয়। সে সময় এ দেশের কওমি মাদরাসাগুলো সমস্ত ছাত্র-শিক্ষক কাল বিলম্ব না করে এ জিহাদে অংশ গ্রহণ করেন এবং শত জুলুম অত্যাচার; এমনকি শাহাদত বরণ করে শত্রুশক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে ভারতের স্বাধীনতা অর্জন করেন।

ইতিহাসের গভীরতায় উপনীত হলে এ সত্য উদ্ভাসিত হয়ে উঠে যে, আজাদি আন্দোলনে কওমি মাদরাসার ওলামায়ে কেরামই প্রথম সারির মুজাহিদের ভূমিকা পালন করেছেন। আর তাঁদেরই তাওহীদী কণ্ঠ ও সংগ্রামী লিখনীর প্রভাবে সেদিন জনগণের মধ্যে জাতীয় চেতনাবোধ ও আজাদির অনুপ্রেরণা জেগে উঠেছিল। ‘তারিখে দারুল উলুম দেওবন্দে’ বলা হয়েছে, ১৮৫৭ সালের পর এ দলই স্বাধীনতার ধারণাকে পৃথিবীতে জীবিত রেখেছে। আজাদির উদ্দীপনায় যে উত্তাপ, শক্তি ও ব্যাপকতা সৃষ্টি হয়েছে, তা একমাত্র এ দলের কৃতিত্ব।

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করাই পূর্ণ সফলতা

দীনের জন্য কুরবানি দেওয়া এবং ইসলামের জন্য আত্মত্যাগ সদা প্রস্তুত থাকা; কওমি ওলামায়ে কেরামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অনেক সময় এ ধরণের আত্মত্যাগের মাধ্যমে ইসলামের কাজ করতে গিয়ে মা-বাবা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে অসন্তুষ্ট হয়। সমাজ ও বন্ধু-বান্ধব নারাজ হয়। কিন্তু তাতে আল্লাহ তাআলা রাজি হন, আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হন। তাই সেই কাজ আমাকে করতে হবে। সেটিই আমার দায়িত্ব। আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড় জিনিস। আল্লাহ নিজেই বলেন,

وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللّٰهِ اَكْبَرُؕ ۰۰۷۲[4]

বস্তুত জান্নাতিরা জান্নাতে যাওয়ার পর, জাহান্নামীরা জাহন্নামে যাওয়ার পর; জুমার দিন আল্লাহ পাক এসে বলবেন, হে জান্নাতবাসীগণ! আমি তোমাদেরকে দেখার জন্য এসেছি, সুবহানাল্লাহ। তোমরা আমার কাছে কিছু চাও। বেহেশতীর বলবেন, ওহে আল্লাহ! আমরা তো সবকিছুই পেয়েছি, কোনো কিছুর অভাব নেই। তখন আল্লাহ বলবেন, আমি যখন এসেছি, কিছু চাও আমার কাছে। তখনও বেহেশতীরা বলবেন, আমরা কী চাইবো? কোনো কিছুর তো অভাব নেই। তখন তারা পরস্পর বলবে, আলেমদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে ভালো হবে। তারা বলতে পারবে যে, এখন আমরাদের কী চাইতে হবে? অতঃপর তারা আলেমদের কাছে গিয়ে বলবেন, আমরা আল্লাহর কাছে কী চাইবো? আলেমরা বলবেন, হে লোক সকল! তোমরা যে জান্নাতে আছো, জান্নাতের এত নিয়ামত-অনুগ্রহ ভোগ করছো, এটি তো আল্লাহ পাক রাজি আছে, তাই সম্ভব হচ্ছে। কোনো কারণে যদি আল্লাহ পাক নারাজ হয়ে যান, তাহলে তোমাদেরকে বেহেশত থেকে বের করে দেবেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কাছে একটি আবেদন পেশ করো যে, হে আল্লাহ আপনি স্থায়ীভাবে আমাদের ওপর রাজি হয়ে যান, কোনো দিন যেন নারাজ না হন। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে জান্নাতবাসী! তোমরা স্থায়ীভাবে জান্নাতে বসবাস করো। আমি তোমাদের ওপর স্থায়ীভাবে রাজি হয়ে গেলাম, আর কোনো দিন নারাজ হবো না, সুবহানাল্লাহ।

সুতরাং ‘তাওহীদে খালেস’, ‘ইত্তেবায়ে সুন্নত’, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক এবং এ’লায়ে কালিমাতুল্লাহ; এ চারটি বস্তুর নাম হলো কওমি মাদরাসা। যদি এ চারটি জিনিস একটি গাছের নিচে থাকে, তাহলে সেটি হবে কওমি মাদরাসা। আর যদি বিল্ডিং, বিদ্যুৎ সবকিছু আছে, কিন্তু এ চারটি জিনিস নেই, তাহলে সেটি কখনো কওমি মাদরাসা হতে পারে না।

অতএব আমরা যে যেখানে আছি, ফাযেলানে জামিয়া; কেউ মাদরাসায় অধ্যাপনা করছি, আর কেউ অন্য কাজ করছি, আমরা যে অবস্থায় থাকি না কেন, সব সময় আল্লাহ তাআলার সাথে সম্পর্ক রাখবো। আল্লাহর কাছে কী নেই? সবকিছুই তো তাঁর কাছে আছে। তাহলে আমাদেরকে কেন অস্থির হতে হবে? তাঁর কাছে পার্থনা করুন। তাঁর দরবারে কান্নাকাটি করুন। দেখবেন, তিনি সব সমস্যার সমাধান করে দেবেন, ইনশা আল্লাহ। কবি বলেন,

تو ہو کسی بہی حال میں اللہ سے دل لگائے جا۔

 

জামিয়া পটিয়ার আর্ন্তজাতিক ইসলামি মহাসম্মেলন ২০২১ জামিয়া প্রধানের প্রদত্ত বক্তব্যের সারসংক্ষেপ

সম্মানিত বেরাদারানে ইসলাম! উপস্থিত উলামায়ে কেরাম!

আল্লাহর মেহেরবানি, গতকাল বারোটা থেকে আজ পর্যন্ত জলসা চলে আসছে। সামনে পাটিয়া উপজেলায় ইউপি নির্বাচন। তাই ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর তারিখে মাহফিল না করার একটি নির্দেশনা এসেছিল। যেহেতু সরকারি একটা আইন আছে যে, ২০ তারিখের পর অন্য এলাকার মানুষ এই এলাকায় আসতে পারবে না। পরবর্তীতে আমরা টিএনও সাহেবকে দাওয়াত দিয়েছি। তিনি বলেন, ২০ তারিখের পর কোনো মাহফিল হবে না। ডিসি সাহেবের পক্ষ থেকে অর্ডার এসেছে। আমি তো যেতে পারিনি। আমি অসুস্থ। আমাদের জামিয়ার প্রতিনিধিদল ডিসি সাহেবের সাথে দেখা করেন। ডিসি সাহেব বলেন, ২০ তারিখের পর কোনো মাহফিল হতে পারবে না। এটি সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা আসছে। তবে এমপি সাহেব যদি দায়িত্ব নিয়ে অনুমতি দেন এবং ওসি সাহেবকে বলেন আর ওসি সাহেব আমার কাছে আবেদন করেন, তাহলে আমি অনুমতি দিতে পারি। তারপর আরেক দল জামিয়ার প্রতিনিধি এমপি সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে সবকিছু খুলে বলেন। ঘটনাক্রমে সেখানে এসপি ও ওসি উভয়জনই উপস্থিত ছিলেন। আল্লাহর মেহেরবানি যে, যাদেরকে ফোন করতে হবে, তাদেরকেও আল্লাহ তাআলা সেখানে উপস্থিত করে দিয়েছেন। তখন এমপি সাহেব বললেন, এই মাহফিল ফেব্রুয়ারিতে হওয়ার কথা ছিল, পিছিয়ে ডিসেম্বরে নিয়ে আসা হয়েছে। আর পিছানোর সুযোগ নেই। তাই এই তারিখেই মাহফিলের অনুমতি দিতে হবে। এভাবে আমরা মাহফিলের অনুমতি পেয়ে যাই। তাই আমরা সবাই এমপি সাহেবসহ সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য দোয়া করছি, আল্লাহ পাক তাঁকে দীর্ঘায়ু করুন।

জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠা ও নামের রূপান্তর

‘আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া (জমিরিয়া কাসেমুল উলুম) পটিয়া’ দেশের একটি খ্যাতিনামা দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান বয়স আরবি হিসেবে ৮৫ বছর। আর ইংরেজি হিসেবে ৮৩ বছর। কুতুবে জামান হযরত আল্লামা শাহ মুফতি আযীযুল হক (রহ.) আরো বুযুর্গানেদীনকে নিয়ে এই মাদরাসার ভিত্তি স্থাপন করেছেন। যখন ভিত্তি স্থাপন করা হয়, তখন তিনি জিরি মাদরাসার মুফতি ছিলেন। ভিত্তিস্থাপন করার পরে হুযুর জিরি মাদরাসা থেকে এসে মূল নামের সাথে ‘জমিরিয়া’ নাম শব্দটি সংযোজন করেন। পূর্বে এর নাম ছিল ‘কাসেমুল উলুম’। হুযুরের পীর ও মুরশিদ আল্লামা জমির উদ্দিন সাহেব (রহ.)-এর নামে নামকরণ করে ‘জমিরিয়া কাসেমুল উলুম মাদরাসা’ করা হয়। জামিয়ার দ্বিতীয় মুহতামিম, কুতুবে জাহান হযরত শাহ মোহাম্মদ ইউনুস সাহেব (রহ.) [যাকে আমরা হাজী সাহেব হুযুর হিসেবে চিনি] তাঁর পরিচালনাকালীন সময়ে এই মাদরাসা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। তাই এর নাম হয়েছে ‘আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া’ অর্থাৎ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশ সরকার ছয়টা কওমি শিক্ষা বোর্ডকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তার মধ্যে একটা হল আমাদের ‘আনজুমনে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ’। এর প্রধান কার্যালয় হলো আমাদের এই জামিয়ায়। আমাদের ছাত্রদের মধ্যে যারা দাওরা হাদীস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে, সরকারের সাথে চুক্তি হয়েছে, তারা তাদের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির মান দেবেন। এখন যারা ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স পড়ছে, আমাদের ছেলেরা দাওরা হাদীস পড়ে কলেজ-ভার্সিটিতে প্রফেসর হতে পারবেন। দাওরার সনদের মান এমএ ডিগ্রির সমমান করা হয়েছে। যখন স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তখন সেখানে এটাও লেখা আছে, যে দাওরা হাদীসকে এমএ ডিগ্রির সমমান দেওয়া হচ্ছে। তবে সরকার কওমি মাদরাসা পরিচালনায় কোনো হস্তক্ষেপ করবে না এবং দেওবন্দের নিয়ম অনুসারে এ মাদরাসাসূমহ চলবে। দেওবন্দের আটটি মৌলিক নীতিমালা আছে। সেই নীতিমালা অনুযায়ী কওমি মাদরাসা চলবে। তাদের ওপর সরকার হস্তক্ষেপ করবে না। তাদের পরীক্ষা তারা নিবে, সরকার তাদেরকে এম এ ডিগ্রির সমমান স্বীকৃতি দেবে। এ পর্যন্ত চার-পাঁচটি পরীক্ষা হয়েছে। আল-হামদু লিল্লাহ, আমাদের জামিয়া পটিয়ার ছাত্ররা প্রতি বছর ভালো ফলাফল অর্জন করে আসছে। দেশ-বিদেশে জামিয়ার খ্যাতি ও খেদমাত ছড়িয়ে পড়ছে। এটি জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা হযরত মুফতি সাহেব (রহ.)-এর রুহানি তাওয়াজ্জুহ ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টির ফসল। কিতাবে আছে, আল্লাহঅলারা যখন ইন্তেকাল করেন, তখন তাদের আত্মার পাওয়ার বেড়ে যায়। হযরত মুফতি সাহেব (রহ.)-এর খাস দৃষ্টি ও তাওয়াজ্জুহের কারণে জামিয়া দিন দিন উন্নতি করছে, আল-হামদু লিল্লাহ।

কওমি মাদরাসা চলে আল্লাহর বিশেষ রহমতে

আমরা একটি ৫ম তলা বিশিষ্ট বিল্ডিংয়ের কাজ আরম্ভ করেছি। এরপর আমি সফরে যাচ্ছি। তখন আমাদের ক্যাশিয়ার সাহেব বলেন, আপনি সফরে চলে যাছেন, ক্যাশে তো টাকা নেই! পাঁচ তলা বিল্ডিংয়ের কাজ চলছে। ঠিকাদার বারবার টাকা চাইছেন। ফান্ডে তো টাকা নেই। আমি বললাম, মাদরাসা তো আল্লাহর রসুলের ঘর। আর টাকা দেনেঅলা তো আল্লাহ! সুতরাং আমারও চিন্তা করতে হবে না, আপনারও চিন্তা করতে হবে না। এই বলে আমি আরব-আমিরাতের উদ্দেশে সফরে বের হয়ে গেলাম।

আমি আবুধাবিতে আমার ছেলের বাসায় অবস্থান করছি। তিন দিন পর আমার সহকারী মুহতামিম হযরত মাওলানা আবু তাহের নদভী (হাফি.) আমাকে ফোন করে বলেন, হুযুর! দুইজন মানুষ এসেছেন। আপনার সাথে দেখা করতে চান। তাঁদের সাথে ফোনে একটু কথা বললে ভালো হয়। আমি আবুধাবি থেকে তাঁদের সাথে ফোনে কথা বললাম। তাঁরা বলল, হুযুর! আমরা আপনার কাছে এসেছিলাম। আমি বললাম, কী জন্য এসেছেন? তখন তাঁরা বললেন, কিছু টাকার চেক নিয়ে এসেছিলাম। কত টাকার চেক? তাঁরা বললেন, এক কোটি টাকার চেক। তাদের সাথে আমার কোনো জানা-শোনা নেই। আমি আবুধাবিতে অবস্থান করছি। আর আল্লাহ তাআলা মাদরাসার জরুরত পূরণ করে দিয়েছেন।

মূলত এভাবে আল্লাহ তাআলা তাঁর বিশেষ রহমতের মাধ্যমে কওমি মাদরাসা পরিচালনা করে থাকেন। তাঁর দরবারে সবকিছু রয়েছে। আমাদেরকে তাঁর কাছ থেকে নিতে হবে। এ রকম সারাদেশে ২৫ হাজারের মতো কওমি মাদরাসা আছে। এগুলো দেশীয় সরকারের সাহায্য ছাড়া কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার তথা সরাসরি আল্লাহর রহমতেই চলছে। এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তাঁর দীনকে হেফাজত করবেন এবং তাঁর কুরআনকে হেফাজত করবেন। আল্লাহ বলেন,

اِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَاِنَّا لَهٗ لَحٰفِظُوْنَ۰۰۹[5]

তেমনি আল্লাহ তাআলাই বান্দার জন্য যথেষ্ট, আল্লাহ বলেন,

اَلَيْسَ اللّٰهُ بِكَافٍ عَبْدَهٗؕ ۰۰۳۶[6]

বিশেষ ক্ষমা পার্থনা!

পরিশেষে বলতে চাই, আপনারা দুদিন যাবৎ এখানে কষ্ট করে সময় দিয়েছেন। আপনাদের যেভাবে মেহমানদারি করার দরকার ছিল, সেভাবে করতে পারিনি। অনেক কষ্ট পেয়েছেন। অনেক ব্যাস্ততার মধ্যে এখানে এসেছেন, কিন্তু আমরা যথাযথভাবে আপনাদের খেদমত করতে পারিনি। সেজন্য আমাদেরকে মাফ করবেন। আজকে যেরকম আপনারা এই দীনী দরসেগাহে এসেছেন, ভবিষ্যতেও এ দীনী দরসেগাহে আপনারা আসবেন, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আপনাদের আসা-যাওয়া, দান-দক্ষিণা; সবকিছু কবুল করুন এবং দুনিয়া-আখিরাতে উত্তম প্রতিদান দান করুন, আমীন।

وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.

অনুলিখন: শরীফুল হাসান

জামায়াতে দুয়াম

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

 

[1] আত-তিরমিযী, আল-জামিউস সহীহ = আস-সুনান, মুস্তফা আলবাবী অ্যান্ড সন্স পাবলিশিং অ্যান্ড প্রিন্টিং গ্রুপ, কায়রো, মিসর (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৩৯৫ হি. = ১৯৭৫ খ্রি.), খ. ৫, পৃ. ৪৬, হাদীস: ২৬৭৮

[2] আবদুর রাযযাক, আল-মুসান্নাফ, আল-মাকতাবুল ইসলামী লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর, বয়রুত, লেবনান (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৪০৩ হি. = ১৯৮২ খ্রি.), খ. ৬, পৃ. ১৯৩-১৯৪, হাদীস: ১০৪৬০৫

[3] আল-কুরআন, সুরা আত-তাওবা, ৯:১১৯

[4] আল-কুরআন, সুরা আত-তাওবা, ৯:৭২

[5] আল-কুরআন, সুরা আল-হাজর, ১৫:৯

[6] আল-কুরআন, সুরা আয-যুমার, ৩৯:৩৬

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ