জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সোশ্যাল মিডিয়ায় অযাচিত মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন

সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী

[গত কিছু দিন পূর্বে আমাদের জামিয়ায় মাসিক আত-তাওহীদের সম্পাদক মহোদয় ড. আ ফ ম খালেদ হোসাইন (হাফি.) জামিয়া পটিয়ার একটি অনুষ্ঠানে তশরীফ আনেন। সেখানে তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ নসীহত পেশ করেন। এক পর্যায়ে তিনি এক ছাত্রের ফেইসবুকের অযাচিত মন্তব্যের কথা তুলে ধরেন। একজন ছাত্র তাঁর পোষ্টে অভদ্র ভাষায় মন্তব্য করে। তাতে তিনি ব্যথিত হন। তিনি বলেন, তারপরও আমি তাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করলাম। সম্পাদক মহোদয়ের বক্তব্য থেকে অনুভূত হলো, আমাদের ছাত্রদের অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার আদব ও শিষ্টাচার সম্পর্কে অবগত নয়। অতএব এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কিছু দিকনির্দেশনা প্রকাশ করা জরুরি মনে করছি—সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী।]প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা!বিগত কয়েক দশকে মিডিয়া জগতে অস্বাভাবিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। সংবাদপত্র-ম্যাগাজিনের যুগ পেরিয়ে রেডিও-টেলিভিশনের যুগ এসেছিল। অতঃপর ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আগমনে মিডিয়া জগত এত দ্রুততম হয়ে উঠেছে, যা কয়েক দশক পূর্বে কল্পনাতীত ছিল। মিডিয়ার এই উৎকর্ষতায় মানুষের কিছু সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পেলেও ক্ষতির দিকটিও কম লক্ষণীয় নয়। তাই আমরা আজ এর উভয়দিক নিয়ে আলোচনা করবো।মিডিয়ার উৎকর্ষতায় কিছুসুযোগ-সুবিধা ও উপকারমিডিয়ার দ্রুততম উন্নয়নে অবশ্যই অনেকগুলো সুযোগ-সুবিধা ও উপকার অর্জিত হয়েছে। যেমন- যে তথ্যগুলো অর্জন করতে অনেক দিন, অনেক সপ্তাহ, অনেক মাস, এমনকি অনেক বছরের প্রয়োজন হতো, তা এখন মিডিয়ার কল্যাণে কয়েক ঘন্টা, কয়েক মিনিট বা কয়েক পলকে সংগ্রহ করা এবং সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। অবশ্যই এটি একটি দুর্দান্ত বিপ্লব। এর ফলে বিভিন্ন কাজ-কর্মে অনেক শক্তি ও সময়ের সাশ্রয় হয়। গণমাধ্যমের বিকাশ দাওয়াতের ক্ষেত্রকেও অনেক সহজ করে দিয়েছে। ইসলামের সার্বজনীন বার্তা সর্বোত্তম উপায়ে মানুষের নিকট পৌঁছে দেওয়া খুব সহজ হয়ে গেছে। তেমনি নাস্তিক-মুরতাদ ও ইসলামবিরোধী অপশক্তিগুলোর পক্ষ থেকে বিশ্বময় ইসলাম ও মুসলমান সম্পর্কে যে সন্দেহ ও প্রশ্ন উত্থাপন করা হচ্ছে, সেগুলোর গবেষণাধর্মী জবাব দেওয়া, প্রয়োজনে সেগুলোর দাঁতভাঙ্গা উত্তর প্রদান করা এবং বৃহৎ আকারে জনগণের নিকট তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। অনুরূপ জ্ঞান-বিজ্ঞান নিয়ে যারা গবেষণা করে, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান ও তথ্য সংগ্রহ করা সহজ করে দিয়েছে। তারা এ বিষয়ে অন্যান্য গবেষণা, বিশেষজ্ঞের মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা উপকৃত হয়ে নিজের কাজকে সুদৃঢ় ও সুচারুরূপে পেশ করতে পারছে এবং এ ধরণের গবেষণাকর্মকে বৃহৎ আকারে সকলের জন্য সম্প্রচার করতে পারছে।মিডিয়ার উৎকর্ষতায় কিছু ক্ষতিকর দিকঅন্যান্য অনেক সুবিধাগুলির পাশাপাশি মিডিয়ার দ্রুত বিকাশ; বিশেষত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যাপক ব্যবহার এবং প্রত্যেক সাধারণ ও বিশেষ ব্যক্তির সহজ পদচারণার কারণে ধর্মীয় ও সামাজিক পরিবেশে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে এবং নীতি-নৈতিকতার বিরুদ্ধে যে চ্যালেঞ্জ উত্থাপন করছে, তা কয়েক দশক পূর্বে অকল্পনীয় ছিল। মিডিয়ার এই দ্রুততম উত্থান, বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়ায় সহজেই বড়-ছোট সকলের অংশ গ্রহণ; বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে, যেমনটি অজ্ঞ শিশুদের হাতে খেলনা হিসেবে চাকু-ছুরি ইত্যাদি দেওয়া হলে হয়ে থাকে। অবশ্যই চাকু-ছুরিকে সঠিকভাবেও ব্যবহার করা যায় এবং প্রয়োজনে মানুষ তা করেও থাকে। কিন্তু চাকু-ছুরি অজ্ঞ শিশুদের হাতে থাকাটাই হলো ক্ষতিকর। কেননা এগুলো শিশুদেরকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে।বিভিন্ন জরিপ ও আশ-পাশের অবস্থা পর্যবেক্ষণকারী ব্যক্তিরা অবগত আছেন যে, ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগ লোক, গড়ে প্রায় ৯০% মানুষ লক্ষ্যহীনভাবে এবং কখনও কখনও ধ্বংসাত্মকভাবে এগুলো ব্যবহার করছে। অনেকে প্রতিদিন জীবনের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করছে। তবে কেউ যদি একটু বিবেচনা করে দেখত! বস্তুত জীবন তো আসলে সময়ের নাম। জন্মের পর থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত যে সময় পাওয়া যায়, তারই নাম হলো জীবন। সুতরাং সময় নষ্ট করা মানে জীবন নষ্ট করা। আহ! এটি যদি আমাদের বোধগম্য হতো!প্রিয় ছাত্র বন্ধুরা!সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই (দীন-ধর্ম, সমাজ-রাষ্ট্র, নীতি-নৈতিকতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইতিহাস-ঐতিহ্যসহ) বিভিন্ন বিষয়ে নিজেকে সংস্কারক এবং চিন্তাবিদ মনে করে থাকে। তাই তারা নিজেদের ধারণা মতে সংস্কারের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিপ্লব চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের কর্মকাণ্ড দেখে হতচকিত হতে হয়। প্রিয় বন্ধুরা, আপনাদের নিকট কড়জোড় অনুরোধ করছি, আপনাদের কেউ যেন এমন কর্মকাণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকেন। জামিয়া কর্তৃপক্ষ স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার ছাত্রদের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তা থেকে বিরত থাকুন। জামিয়ার বাইরে গিয়েও এমন কর্মকাণ্ড পরিহার করুন। বিশেষত স্বঘোষিত সংস্কারকদের কাজে আপনিও যেন জড়িয়ে না যান। আশা করি নিম্নের বিষয়গুলোর প্রতি যত্মবান হবেন।1. প্রাসঙ্গিক-অপ্রাসঙ্গিক; যে কোনো বিষয়ে অর্থহীন আজে-বাজে কথাবার্তা কপি-পেস্ট করা এবং অন্যদের জন্য তা শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।2. সব বিষয়ে যৌক্তিক-অযৌক্তিক মতামত এবং বিশ্লেষণ উপস্থাপন করাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এবং কর্তৃব্য বিবেচনা করবেন না। বড়দের পোষ্টে মন্তব্য করার পূর্বে অবশ্যই চিন্তা করবেন। প্রতিটি বাক্য ও কথা যেন শিষ্টাচারপূর্ণ হয়।3. অবজ্ঞাপূর্ণ বাজে কথা এবং মানুষের সম্মানহানির সাথে জড়িত বিষয়সমূহ; যেমন মানুষকে বিদ্রূপ ও উপহাস করা হয়েছে, এমন বিষয়গুলোকে নিজেদের ধারণাপ্রসূত সংস্কারের জন্য জনগণের মধ্যে সযত্নে প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন।4. অশ্লীল ও অযৌক্তিক বাক্যগুলির অশুভ ব্যবহারকে একেবারেই পরিহার করুন। 5. নিজেদের গবেষণাকেই সত্যিকারের গবেষণা মনে না করে অন্যের গবেষণাকেও গুরুত্ব দিতে শিখুন। যথাযথ অনুসন্ধানের ভিত্তিতে সত্য উদ্ঘাটন করার পরিবর্তে অধিক পরিমাণে সন্দেহ ও খারাপ ধারণাই করা থেকে বেঁচে থাকুন।6. মিথ্যা ও প্রতারণা এবং সত্যের বিকৃতি থেকে মুক্ত থাকুন। অন্যের লেখাকে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।7. আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক ব্যক্তিকে সম্মান ও মর্যাদা দান করেছেন। নিজেদের আচরণ দ্বারা অন্যকে অপমান করার চেষ্টা করবেন না। বিশেষত নিজেদের নিম্নমানের চিন্তা-চেতনা প্রকাশ করে নিজেদেরকে অসম্মান করবেন না।8. কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি কিংবা ঘোষণা অথবা প্রতিবেদনে মন্তব্য করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যে, যেন আমার কোনো মতামত কিংবা মন্তব্যে প্রাতিষ্ঠানিক ঐতিহ্য কিংবা মানহানি না হয়। উত্তম হলো, এ ধরণের বিষয়গুলোতে একেবারেই মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা। প্রিয় ছাত্ররা!দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, এমন সব কার্যকলাপ দিনদিন বেড়েই চলছে। অথচ দীন ও শরীয়তের দৃষ্টি এটি মহা অপরাধ এবং সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এ সবের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। কেননা-প্রথমত এটি একটি সামাজিক ও যৌক্তিকভাবে স্বীকৃত বিষয় যে, যে ব্যক্তি তার নিকট আগত সকল তথ্য, কথা ও সংবাদ অন্যের নিকট পৌঁছায়, অন্যকে শেয়ার করে, সে অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যা প্রচারকারীর অন্যতম হাতিয়ার হয়ে যায়। এই সত্যটি সর্বশেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.) এভাবে বর্ণনা করেছেন যে,«كَفَىٰ بِالْـمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ».‘যা শুনে তা বর্ণনা করা, একজন ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’[1]তেমনি লক্ষণীয় বিষয় হলো, as received কেউ কোনো বিষয় পেয়েছে, তাই লিখে দিয়েছে। এমন ব্যক্তি মিথ্যাবাদীর গণ্ডি থেকে মুক্ত হতে পারে না। কারণ এটি একটি খুব সাধারণ প্রশ্ন যে, কোনো ব্যক্তি যা কিছু শুনেছে, কিংবা তার নিকট পৌঁছেছে, তার সবকিছুই কি অন্যের নিকট পৌঁছানো জরুরি?!দ্বিতীয়ত ইন্টারনেটে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় এই জাতীয় পোস্ট এবং পোস্ট সম্পর্কে মন্তব্য করা অথবা তাদের সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত কিংবা বিশদ বিশ্লেষণমূলক নিবন্ধ রচনা করা; যাতে কোনো দীনী বা পার্থিব উপকার হয় না, বরং অনর্থক কাজ, যেখানে সময় নষ্ট করা একজন মুসলমান, ভালো চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তির জন্য কখনো শোভা পায় না। তাই আল্লাহ তাআলা ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, তারা নিরর্থক কাজ থেকে দূরে সরে যায়:وَاِذَا مَرُّوْا بِاللَّغْوِ مَرُّوْا كِرَامًا۰۰۷۲[2]আর রাসুলুল্লাহ (সা.) একজন ভালো মুমিনের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন যে, যিনি অর্থহীন ও অকেজো কাজ থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকে।«مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ الْـمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيْهِ».[3]তৃতীয়ত বাজে কথা এবং অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেওয়া কোনো মুমিনকে শোভিত করে না এবং এটি নৈতিকতার সঙ্গেও যায় না। পবিত্র কুরআন বাজে কথা-বার্তা ও অশ্লীলতা ছড়ানোর ব্যাপারে বেদনাদায়ক শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে,اِنَّ الَّذِيْنَ يُحِبُّوْنَ اَنْ تَشِيْعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ١ۙ فِي الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِؕ ۰۰۱۹‘যারা ঈমানদারদের মাঝে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিতে পছন্দ করে, তাদরের জন্য দুনিয়া-আখেরাতে বেদনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।’[4]হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘একজন মুসলমান বাজে কথাবার্তা বলতে পারে না এবং কারও নিন্দা করতে পারে না।’ (সুনানে তিরমিযী: ২০১)তেমনি কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত যে, কারও সাথে টাট্টা-বিদ্রূপ করা সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ ও অবিচার। (সূরা আল-হুজুরাত: ১১, সুনানে আবু দাউদ: ৪৮৭৫, সহীহ আল-বুখারী: ৩০)চতুর্থ বিষয় হলো, সন্দেহ-খারাপ ধারণা করা সবচেয়ে মন্দ বিশেষণ। তাই আল্লাহ তাআলা খারাপ ধারণা তো দূরে থাক, অত্যধিক সন্দেহ করা থেকেও বিরত থাকতে বলেছেন।يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اجْتَنِبُوْا كَثِيْرًا مِّنَ الظَّنِّ١ٞ اِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ اِثْمٌ ؕ ۰۰۱۲‘হে ঈমানদারগণ! অতিরিক্ত জল্পনা এড়িয়ে চলুন, কিছু কিছু অনুমান-ধারণা অবশ্যই পাপের অন্তর্ভুক্ত।’[5]পঞ্চম বিষয় হলো, মিথ্যা বলা সবচেয়ে খারাপ কাজ, যা বিবেক-বুদ্ধি, শরিয়াত ও সমাজের দৃষ্টিতে নিন্দনীয়। কুরআন-সুন্নাহর বিভিন্ন স্থানে এর উল্লেখ রয়েছে। (যেমন– সূরা আল-হজ: ৩০, সহীহ আল-বুখারী: ৩৩)ষষ্ঠ কথাটি হলো, মানুষ হিসেবে আল্লাহ প্রতিটি মানুষকে সম্মান ও মর্যাদা দান করেছেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِيْۤ اٰدَمَ ؒ۰۰۷۰‘এবং আমি মানুষকে সম্মানিত করেছি’[6] এবং সেই সম্মান ও লাঞ্ছনা সর্বশক্তিমান আল্লাহর হাতে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,وَتُعِزُّ مَنْ تَشَآءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَآءُ١ؕ بِيَدِكَ الْخَيْرُؕ ۰۰۲۶‘এবং আপনি যাকে চান সম্মান দান করেন এবং আপনি যাকে চান অপমান করেন, সফলতা আপনারই হাতে রয়েছে।’[7]সুতরাং কথা ও কর্মের মাধ্যমে কাউকে অসম্মান করার চেষ্টা করা অত্যন্ত জঘন্য ও মন্দ কাজ। এছাড়াও মিথ্যা বলা, খারাপ ধারণা করা, ছলনা, বিদ্রূপ, অযৌক্তিক মতামত এবং অশ্লীলতার মাধ্যমে অন্যের অসম্মান করার চেষ্টা করা; আসলে নিজেকে অসম্মান করা এবং নিজেকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করা। বিবেক-বুদ্ধি ও শরিয়ত; উভয়ের দৃষ্টিতে এটি একটি বোকার কাজ বৈ কিছু নয়।সর্বশেষ কথা হলো, মহান আল্লাহ তায়ালা মহানবী (সা.)-কে মানবজাতির হিদায়েতের জন্য প্রেরণ করেছিলেন। আর পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন জায়গায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, মহানবী (সা.)-এর দায়িত্ব হলো, উত্তম পন্থায় আল্লাহ তাআলার বাণী মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়া। জোর করে মানুষকে দীনের পথে নিয়ে আসা এবং জোর করে তাদেরকে নীতি-নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়া; তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।لَسْتَ عَلَيْهِمْ بِمُصَۜيْطِرٍۙ۰۰۲۲[8]আর আপনি ও আমরা হলাম রসুলুল্লাহ (সা.)-এর নায়েব বা স্থলাভিষিক্ত। সুতরাং আমাদের দায়িত্ব এতটুকু যে, আমরা মানুষের কাছে সঠিক বাণী পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবো। কিন্তু উম্মতের ইসলাহ ও সংস্কার করার জন্য আমাদেরকে ইসলামিক পদ্ধতি ও উত্তম পন্থা অবলম্বন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংস্কার ও সংশোধনের নামে অনৈতিক কৌশল অবলম্বন করার কোনো সুযোগ নেই। আসলে এটি সংশোধন করার পদ্ধতিও নয়; বরং এটি প্রবৃত্তির অনুসরণ, শয়তানের অনুকরণ এবং নিজের ভিতরের অনৈতিক অভিলাষকে সন্তুষ্ট করার একটি মাধ্যম মাত্র।

পরিশেষে প্রিয় শিক্ষার্থীদের নিকট নিবেদন থাকবে যে, সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারের পূর্বে তা ব্যবহারের আদব ও শিষ্টাচার অর্জন করুন। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে আমল করার তাওফীক দান করুন, আমীন।

ঘোষণা

(সমস্যা নিয়ে আর নয় অস্থিরতা, সমাধানই হোক আমাদের অগ্রযাত্রা)

শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আপনাদের সহযোগিতা ও দিক-নির্দেশনার লক্ষ্যে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার মুখপাত্র, ইসলামী গবেষণা ও সৃজনশীল সাহিত্য পত্রিকা মাসিক আত-তাওহীদে নিয়মিত বিভাগ ‘শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পমার্শ’ চালু করা হয়েছে। উক্ত বিভাগে একদিকে থাকবে আপনাদের জন্য নিয়মিত দিক-নির্দেশনামূলক প্রবন্ধ। অপরদিকে থাকবে আপনাদের সমস্যা-সমধান নিয়ে শিক্ষা পরামর্শ।

অতএব এখন থেকে সমস্যা নিয়ে আর নয় অস্থিরতা, সমাধানই হোক আমাদের অগ্রযাত্রা’ শ্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাবো উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে। সুতরাং শিক্ষা বিষয়ক যে কোন সমস্যা আমাদের নিকট লিখুন এবং টেনশানমুক্ত জীবন গড়ুন। আমরা আপনার সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট থাকবো এবং অতিদ্রুত সময়ে যথার্থ সমাধান পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ইনশা আল্লাহ। আল্লাহই তাওফীকদাতা।

যোগাযোগের ঠিকানা

বিভাগীয় সম্পাদক

শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পরামর্শ বিভাগ, মাসিক আত-তাওহীদ

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

ই-মেইল: hmsalimuddin22@gamil.com

[1] মুসলিম, আস-সহীহ, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরবী, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৩৭৪ হি. = ১৯৫৫ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ১০, হাদীস: ৫

[2] আল-কুরআন, সূরা আল-ফুরকান, ২৫:৭২

[3] আত-তিরমিযী, আল-জামিউস সহীহ = আস-সুনান, মুস্তফা আলবাবী অ্যান্ড সন্স পাবলিশিং অ্যান্ড প্রিন্টিং গ্রুপ, কায়রো, মিসর (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৩৯৫ হি. = ১৯৭৫ খ্রি.), খ. 4, পৃ. ৫58, হাদীস: 2317

[4] আল-কুরআন, সূরা আন-নূর, ২৪:১৯

[5] আল-কুরআন, সূরা আল-হুজারাত, ৪৯:১২

[6] আল-কুরআন, সূরা আল-ইসরা, ১৭:৭০

[7] আল-কুরআন, সূরা আলে ইমরান, ৩:২৬

[8] আল-কুরআন, সূরা আল-গাশিয়া, ৮৮:২২, আরও দেখুন: সূরা আল-কাহাফ, ১৮:৬

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ