মাহমুদুল হক আনসারী
ড্রেনে পড়ে মৃত্যু কারো কাম্য নয়। চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সময়ে ড্রেনে পড়ে দুটি তাজা প্রাণ ঝড়ে পড়েছে। মাসখানিক পূর্বে একজন ব্যবসায়ী চট্টগ্রামের মুরাদপুরে ড্রেনের পানিতে পড়ে নিখোঁজ রয়েছে। এই লেখাটি লেখার সময় আরও একজন নারী শিক্ষার্থীর ড্রেনে পড়ে মৃত্যুর সংবাদ পত্রিকায় পড়লাম। বাংলাদেশে কোনো না কোনো জেলাতে এভাবে অসংখ্য জীবন ড্রেনে পড়ে মৃত্যু হচ্ছে। কাউকে পাওয়া যাচ্ছে আবার কাউকে পাওয়াই যাচ্ছে না। এটা মর্মান্তিক মৃত্যু। এসব মৃত্যু অস্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে মনে করলেও কিন্তু কেউ মেনে নিতে পারছি না। ড্রেনতো সেটা পানি নিস্কাশনের জন্য সেটার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটা কর্তৃপক্ষ আছে। তাহলে কেনো ড্রেনে পড়ে মানুষের মৃত্যু হবে? ড্রেন এসব পানি নিস্কাশনের চলাচলের যে নিয়মনীতি রয়েছে তার কী যথাযথভাবে কর্তৃপক্ষ দেখছে? বাংলাদেশে অসংখ্য ড্রেন রয়েছে যা মানুষের মঙ্গলের জন্য। শহর বাড়ি নগর রক্ষার জন্য। এগুলো পরিবেশ সমাজ নগরকে সুরক্ষা করবে। কিন্তু এসব সুরক্ষা সামগ্রীর কাছে মানুষ কেনো মৃত্যুবরণ করবে? নালা ড্রেন এগুলোতো সমাজের প্রয়োজন। কিন্তু এসব নালা ড্রেনে মানুষ কেনো ময়লা আবর্জনা ফেলে নালা চলাচলকে বাধাগ্রস্থ করছে। নালা ড্রেন দখল করে একশ্রেণির মানুষ দোকান ঘর মার্কেট তৈরি করছে। সেটাও দূষণীয় বিষয়। আবার নালাতে আবর্জনা ফেলে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্থ করা সেটাও দূষণীয় অন্যায় এবং অপরাধ। এসব করছে মানুষ জনগণ নাগরিকরা। তাহলে আমি আমার পরিবেশকে নষ্ট করছি। সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ যারাই এসব কার্যক্রমের দেখভালো করবেন তাদেরতো দায়িত্ব আছেই। তাদের উচিত ড্রেন নালা রক্ষণাবেক্ষণ তদারকী করা। নালার ড্রেনের ময়লা আবর্জনা যথাসময়ে পরিচ্ছন্ন রাখা। প্রতিবন্ধকতা দূর করা। জনগণের চলাচলের জন্য ড্রেনকে সঠিকভাবে তৈরি করা রক্ষা করা এসব সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাহলে এসব সেবাপ্রতিষ্ঠান কেনো তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেনা। দূর্ঘটনার মাধ্যমে কেউ যদি ড্রেনে পড়ে মৃত্যুবরণ করে তখন প্রতিষ্ঠানগুলো নড়ে চড়ে বসে। সেটা হবে কেনো। যেসব মানুষগুলো প্রতিদিন এসবের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তাদের জন্য একটু দুঃখ প্রকাশ করাই কি এর সমাধান। মোটেও না, সভ্য সমাজে এসব মানায় না। হাজার হাজার ড্রেন রয়েছে এবং এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কর্তৃপক্ষের হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আছে। তাহলে ওসব ড্রেনে মানুষ মারা যাবে কেনো। এর জবাব মনে হয় কর্তৃপক্ষ দিতে পারবে না। কয়জনের মৃত্যু সংবাদ সংবাদমাধ্যমে পাচ্ছি। অহরহ মৃত্যু এবং অঙ্গহানি চিরদিনের জন্য পঙ্গু হওয়ার মতো দুর্ঘটনা এসব ড্রেন এবং নালার কারণে হচ্ছে। সেটাকে কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। আমার কথা হচ্ছে ড্রেনের রক্ষণাবেক্ষণ যেমনিভাবে দরকার। একইভাবে চলাচলে নাগরিক সচেতনতা আরও বেশি দরকার। কারণ নাগরিকরাই নালা এবং ড্রেন ব্যবার করছে। আবার সেই নাগরিকরাই নালা নর্দমা ড্রেনকে হজবরল করে রাখছে। ময়লা আবর্জনা উচ্ছিষ্ট ফেলে নালার নব্যতা নষ্ট করছে। তাহলে কাকে দায়ী করবো এসব মৃত্যুর জন্য। আমরা সচেতন জনগণ এ ধরনের অপমৃত্যু চাই না। উন্নত দেশে ড্রেনে পড়ে মৃত্যুর সংবাদ শোনা যায় না। বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাযজ্ঞে এগিয়ে চলছে। উন্নয়ন শহর গ্রাম নগরে একই নিয়মে হচ্ছে। উন্নয়নের প্রকল্প যেনো মৃত্যুর কারণ না হয়। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে যথাসময়ে শেষ না করার কারণে অনেক জায়গায় জনভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। সেটাও উন্নয়ন পরিপন্থী। প্রকল্প পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সঠিক সময়ের মধ্যেই শেষ করা চাই। প্রকল্পের বাস্তবায়নের দীর্ঘ অহেতুক বিলম্ব সময় পার করে জনভোগান্তি মেনে নেওয়া যায় না। সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, ওয়াসা সবগুলো সেবাসংস্থাকে সমন্বিত ভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যথাসময়ে শেষ করা চাই। সচেতন মহল ড্রেনে পড়ে অযাচিত মৃত্যু কামনা করে না। এভাবে যারা সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যুবরণ করেছে তাদের প্রতি গভীরভাবে সমবেদনা জ্ঞাপন করছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাদের ক্ষতিপূরণের দাবির আহ্বান জানাচ্ছি।