হাকীমুল ইসলাম আল্লামা মুফতি আবদুল হালীম বোখারী
[বিগত ২১ জুন ২০২১ তারিখে কক্সবাজার জেলার ঐতিহ্যবাহি দীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খলিলিয়া সিদ্দিকিয়া ফয়জুল উলুম (ধাওনখালী মাদরাসা)-এর বার্ষিক শুরা বৈঠকের পর সেখানকার শিক্ষক-কর্মচারীর উদ্দেশ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন হাকীমুল ইসলাম আল্লামা মুফতি আব্দুল হালীম বোখারী (হাফিযাহুল্লাহ)। বক্তব্যটি শব্দবিন্যাস ও লেখার রূপ দিয়েছেন জামিয়ার শিক্ষক মাওলানা সোহাইল বিন রশীদ কাসেমী। প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন এবং জরুরি সম্পাদনা করে মাসিক আত-তাওহীদ পাঠকের সমীপে পেশ করা হলো—সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী]
نحمده ونصلي علىٰ رسوله الكريم، أما بعد، فأعوذ بالله من الشيطان الرجيم، بسم الله الرحمٰن الرحيم. [وَ ذَرُوْا ظَاهِرَ الْاِثْمِ وَ بَاطِنَهٗ١ؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْسِبُوْنَ الْاِثْمَ سَيُجْزَوْنَ بِمَا كَانُوْا يَقْتَرِفُوْنَ۰۰۱۲۰ {سورة الانعام:120}. صدق الله العظيم .
শরীয়ত ও তরীকত: মর্ম ও সম্পর্ক
সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলী! আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘তোমরা জাহেরি গোনাহও ছেড়ে দাও বাতেনি গোনাহও ছেড়ে দাও। জাহেরি গোনাহ তথা প্রকাশ্য গোনাহ হলো অঙ্গ-প্রতঙ্গের গোনাহ, অর্থাৎ হাতের গোনাহ, পায়ের গোনাহ, চোখের গোনাহ, যেগুলো প্রকাশ্যে দেখা যায়। আর বাতেনি গোনাহ হলো কলবের গোনাহ তথা অন্তরের গোনাহ। মানুষের অন্তরে হিংসা-হাসাদ-হিংসা, বুগয-শক্রতা, রিয়া-লৌকিকতা, কুফর ও শিরক রয়েছে এগুলো সব অন্তরের গোনাহ। আর প্রকাশ্য গোনাহ সম্পর্কীয় ইলমের নাম হলো ‘ইলমে শরীয়ত’ আর বাতেনি গোনাহ সম্পর্কীয় ইলমের নাম হলো ‘ইলমে তরীকত’। হযরত আল্লামা মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহ.) উভয় ইলমকে একত্রিত করে একটি কিতাব রচনা করেছেন এবং এর নামকরণ করেছেন ‘শরীয়ত ও তরীকত’। এটি সকলরের অধ্যায়ন করা উচিত। কারণ আমাদের শরীয়তও লাগবে, তরীকতও লাগবে। হযরত ইমাম মালেক (রহ.) বলেন,
مَنْ تَفَقَّهَ وَلَـمْ يَتَصَوَّفْ فَقَدْ تَفَسَّقَ، وَمَنْ تَصَوَّفَ وَلَـمْ يَتَفَقَّهْ فَقَدْ تَزَنْدَقَ، وَمَنْ جَمَعَ بَيْنَهُمَا فَقَدْ تَحَقَّقَ. (حاشية العلامة علي العدوي على شرح الإِمام الزرقاني على متن العزية في الفقه المالكي: 3 /195، وشرح عين العلم وزين الحلم للإِمام ملا علي القاري: 1 /33).
অর্থাৎ যে ব্যক্তি শরীয়তের ইলম অর্জন করলো, কিন্তু তরীকতের ইলম অর্জন করলো না, সে ফাসেক হলো। আর যে তরীকতের ইলম অর্জন করলো, কিন্তু শরিতের ইলম অর্জন করলো না, সে নাস্তিক হলো। আর যে ব্যক্তি উভয় ইলমকে একত্রে অর্জন করলো, সেই বাস্তব ইলম অর্জন করলো এবং সেই পরিপূর্ণ হলো।
ভারত উপমহাদেশে আকবর ইলাহবাদী (রহ.) নামক একজন বড় মাপের কবি ছিলেন । তিনি হযরতুল আল্লামা মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.)-এর সান্নিধ্য পেয়েছেন।
তিনি বলেন,
سنو! دوہی لفظوں میں مجھ سے یہ راز
شریعت و ضو ہے طریقت نماز
অর্থ: দুই শব্দে রহস্যময় কথাটি আমার কাছ থেকে শুনে নাও, শরীয়ত হলো অজু আর তরীকত হলো নামায। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, পুরো দিন অজু করে যদি নামায পড়া না হয়, তাহলে সে অজুর কোন মূল্য নেই।
شریعت میں ہے قیل و قال حبیب
طریقت میں ہے حسن و جمال حبیب
তিনি বলেন, শরীয়ত হলো রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কথামালা, আর তরীকত হলো রাসুল (সা.)-এর কর্মের সৌন্দর্যতা এবং কাজের নান্দিকতার নাম।
شریعت میں ہے صورت فتح بدر
طریقت میں ہے معنی شق صدر
তিনি বলেন, শরীয়তের উদাহারণ হলো বদর যুদ্ধের বিজয়, অর্থাৎ বদর যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ের পর কাফেররা যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করছে। কিন্তু ইসলাম গ্রহন করেনি। ময়দান পরিষ্কার হয়েছিলো, কিন্তু অন্তর পরিষ্কার হয়নি। তাই তারা মুসলমান হয়নি এবং তরীকত হলো (شق صدر) অন্তর পরিষ্কার করার নাম। আর অন্তর পরিষ্কারের মাধ্যমে কাফেরকে মুসলমান বানানো যায়। তাই বুঝতে হবে, তরীকতও দীনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
نبوت کے اندر ہیں دونوں ہی رنگ
عبث ہے یہ صوفی و ملا کی جنگ
তিনি বলেন, নুবুওয়াতের মধ্যে শরীয়ত ও তরীকত; উভয়ের রং রয়েছে। তাই সুফি সাহেব ও মাওলানা সাহেবের পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদ অনর্থক হবে। মাওলানা সাহেব বলেন যে, শরীয়তের জ্ঞানই অর্জন করতে হবে। সুফি সাহেব বলেন যে, তরীকতের জ্ঞানই অর্জন করতে হবে। এভাবে ঝগড়া-বিবাদ করা অনর্থক কাজ। উভয়ের প্রয়োজন রয়েছে। কোন একটিকে নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ করা যাবে না।
আমি ও আমিত্বকে বির্সজন দেওয়া
আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিকতার মূল বাণী হলো নিজেকে মিটিয়ে দেওয়া। আমিত্বকে বির্সজন দেওয়া। হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.)-এর কাছে জিজ্ঞাসা করা হলো,
تصوف کیا ہے؟ حضرتؒ نے فرمایا، تصوف اپنے کو مٹانے کا نام ہے۔
তাসাউফ বা আধ্যাত্মিকতা কী? তখন তিনি বললেন, নিজেকে মিটিয়ে দেওয়ার নামই হলো তাসাউফ বা আধ্যাত্মিকতা।
مٹا دے اپنی ہستی کو اگر کچھ مرتبہ چاہے
کہ دانہ خاک میں ملکر گل و گلزار ہوتا ہے
অর্থ: যদি আল্লাহর কাছে কোন মর্যাদা চাও ও মানুষের ভালোবাসা পেতে চাও, তাহলে নিজেকে মিটিয়ে দাও। আমি কিছু না, আমি কিছু না; এই অনুভুতি নিজের মধ্যে সৃষ্টি করো। (اَنَا خَيْرٌ ۚ ۰۰۱۲) আমি ভালো, আমি উত্তম; এমনটি মনে করাই বড় মসিবত। এটাকে ‘আনানিয়য়ত’ বা আমিত্ব বলা হয়। জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা হযরত মুফতি আযীযুল হক সাহেব হুযুর (রহ.) একবার পটিয়া মাদরাসার বার্ষিক সভায় ওয়াজ করছিলেন। ওয়াজের মধ্যে বলেন, (اَنَا خَيْرٌ ۚ ۰۰۱۲) আমি ভালো, আমি উত্তম; এটি অনেক বড় রোগ। চৌধুরী সাহেব বলেন আমি ভালো, সিকদার সাহেব বলেন আমি ভালো, মুহাদ্দিস সাহেব বলেন, আমি ভালো, মুফতি সাহেব বলেন, আমি ভালো। সবাই মিলে শয়তানের ভাষাটা কেমনে নিলে?! (বেগ্গুনে মিলি শয়তানর ভাষাওয়া কে নে পালি?) শয়তান বলে যে আমি ভালো।
اَنَا خَيْرٌ مِّنْهُ١ۚ خَلَقْتَنِيْ مِنْ نَّارٍ وَّخَلَقْتَهٗ مِنْ طِيْنٍ۰۰۱۲
বুযুর্গরা বলেছেন, ‘আমি’ ‘আমি’ যে বলি, আমিটা কোথায় আছে? এটি কি জিনিস? এটি তো খোঁজে পাওয়া যায় না! গোটা শরীরে তো ‘আমি’ পাওয়া যায় না। ‘মাথা’ এটি তো আমি না, আমার। হাতগুলো তো আমি না, আমার। পাগুলো তো আমি না, আমার। তাহলে ‘আমি’টি কোথায়? আমির তো কোন অস্তিত্বও নেই। এ জন্য আমিত্বকে বির্সজন দিতে হবে। কবি বলেন,
پردۂ ہستی اگر سوزی بنار لا الٰہ
آں زماں بے پردہ بینی نور الا اللہ را
বলা হয় যে, আমিত্বের পর্দা আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছতে প্রতিবন্ধক হয়। তাই এই আমিত্বের পর্দাটা যদি “লা ইলাহা ইল্লালাহ” এর নুর দিয়ে জালিয়ে দিতে পারো, তাহলে কোন পর্দা ছাড়া ‘আল্লাহ’-এর নুর তোমার চোখে ভাসবে।
দারুল উলুম দেওবন্দের সকল শিক্ষক-কর্মচারী আধ্যাত্মিকতার মানদণ্ডে উর্ত্তীণ ছিলেন
নিঃসন্দেহে আমাদের এ কওমী মাদরাসাসমূহ হলো, শরীয়তেরও কেন্দ্র, তরীকতেরও কেন্দ্র। এটি আমাদের মুরব্বিদের যামানা থেকে চলে আসছে। শয়খুল হিন্দ আল্লামা মাহমুদুল হাসান (রহ.) দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম ছাত্র। তিনি বলছেন, দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম থেকে নিয়ে নিম্নস্তরের কর্মচারী (দরবান) পর্যন্ত সকলই ‘সাহেবে নিসবত’ আধ্যাত্মিকতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন, আল্লাহু আকবর। এমনই ছিলো ‘দারুল উলুম দেওবন্দ’। হযরত শয়খুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া সাহেব (রহ.)-এর নিকট একজন বড় আলেম আসলেন। তিনি প্রশ্ন করলেন তাসাউফ বা আধ্যাত্মিকতা কাকে বলে? এবং তাসাউফের কথা কি কোরআন-হাদীসে আছে? তখন তাকে শয়খুল হাদীস যাকারিয়া (রহ.) বলেন,
تصوف کی ابتدا «إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ» سے ہے اور تصوف کی انتہا «أَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ» ہے۔
তাসাউফ বা আধ্যাত্মিকতার সূচনা হয় নিয়তের বিশুদ্ধতার মাধ্যমে। যেমনটি হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, «إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ» আর তাসাউফ-আধ্যাত্মিকতার সমাপ্তি হয় «أَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ»-এর বৈশিষ্ট্য অর্জন করার মাধ্যেমে। অর্থাৎ আল্লাহ পাকের ইবাদত এভাবে করো, যেন তুমি আল্লাহকে দেখছো। যদি এইটুকু সম্ভব না হয়, তাহলে মনো করো, তিনি তোমাকে দেখছেন। মানুষ যখন প্রতিটি কাজ-কর্মে ‘আল্লাহ আমাকে দেখছেন’ কথাটি স্মরণ করবে, তাহলে তার কাজে নিষ্ঠা অর্জিত হবে, আল্লাহর মহব্বত ও ভালোবাসা অন্তরে জাগ্রত হবে এবং গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হবে। মূলত এটিই তাসাউফ চর্চার মূল উদ্দেশ্য।
আল্লাহর নিকট তাঁর মহব্বত-ভালোবাসা কামনা করুন
আমরা আল্লাহর কাছ থেকে অনেক কিছু প্রার্থনা করি। তবে আমাদের জন্য আল্লাহর কাছ থেকে কি প্রার্থনা করা উচিত? আল্লাহঅলাগণ বলেন, আল্লাহর কাছে দুনিয়া-পার্থিব উন্নয়ন চাইবো না, বরং আল্লাহর কাছে ‘আল্লাহকেই’ প্রার্থনা করবো। আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করবো, ওহে আল্লাহ, আমি আপনাকেই চাচ্ছি। আমাদের জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা হযরত মুফতি সাহেব হুযুর (রহ.) বলতেন,
تجھے دھونڈتا ہوں تجھے دھونڈتا ہوں
تیری راہ کدر ہے بتا دے خدایا
ওগো আল্লাহ, তোমাকে খুঁজছি, তোমার সন্ধান চাচ্ছি। (দুনিয়া চাই না, ঘর-বাড়ি চাই না।) তোমার রাস্তা কোনটি? সেটি দেখিয়ে দাও।
جسے چاہے تو دے دنیا کی دولت
مجھے مست محبت کر خدایا
ওহে আল্লাহ, যাকে ইচ্ছা দুনিয়ার ধন-সম্পদ দান করো, আমাকে তোমার আশেক ও প্রেমিক বানিয়ে নাও। তাই আমরাও আল্লাহ কাছ থেকে আল্লাহকে চাইবো। তাঁর প্রেম-ভালোবাসা ও মহব্বত কামনা করবো।
মালিককে পাওয়া মানে সব পাওয়া
সুলতান মাহমুদ গযনবী (রহ.) বাদশাহও ছিলেন, একজন বড় বুযুর্গও ছিলেন। তিনি একদিন তাঁর সকল মন্ত্রীদেরকে ডাকলেন। দিনার-দেরহাম, মনি-মুক্তা, হীরা-জওহার, সবগুলো তাদের সামনে ছড়িয়ে দিলেন। অতঃপর মন্ত্রীদেরকে বললেন, আজ এখান থেকে যার যা খুশি, নিয়ে নাও।
তাঁর একটা গোলাম ছিল আয়ায। গোলাম হওয়া সত্বেও বাদশাহ তাকে মন্ত্রীদের চেয়েও বেশি মহব্বত করতেন। মন্ত্রীদের অন্তরে হিংসা হলো। বাদশাহ সাহেব একটা গোলামকে কেন এত মহব্বত করেন! তাই মৌনভাবে বাদশা তাদের জবাব দেওয়ার জন্য এ আয়োজন করেছেন। বাদশাহ যখন মন্ত্রীদেরকে যা ইচ্ছা নিয়ে নেওয়ার জন্য ঘোষণা করেন, তখন কৃতদাস আয়ায বাদশার পিছনে দাঁড়িয়ে বাদশাহকে পাখা করছে।
মন্ত্রীরা দিনার-দেরহাম, মনি-মুক্তা, হীরা-জাওহার থেকে নিজেদের পছন্দনীয় বস্তুগুলো নিয়ে নিলেন। কিন্তু বাদশাহর কৃতদাস আয়ায সেখান থেকে কিছুই নিলো না! বাদশাহ আয়াযকে বলেন, সবাই যা ইচ্ছা নিয়ে নিলো। আর তুমি কিছুই নিলে না কেন? আয়ায বলল, তাঁরা তো একেকজন একেকটি জিনিস নিলো। কেউ স্বর্ণ নিলো। কেউ রূপা নিলো। কিন্তু যারা স্বর্ণ নিলো তারা রূপা হারালো। আর যারা রূপা নিলো, তারা স্বর্ণ হারালো। তারা তো যে কোন একটি বস্তু পেয়েছে। আর আমি আপনার পিছনে দাঁড়িয়ে আপনাকে নিয়ে নিছি। আপনি তো সবকিছুর মালিক। আপনাকে পাওয়া মানে সবকিছু পাওয়া। তারা তো একটা একটা পেয়েছে। আর আমি তো সব পেয়েছি। সুতরাং আল্লাহর কাছ থেকে যদি একটি ঘর চান, তাহলে একটি ঘর পাবেন। আর যদি আল্লাহ কাছ থেকে আল্লাহকে চান, তাহলে গোটা দুনিয়া-আখেরাত সবকিছু পেয়ে যাবেন।
فَاذْكُرُوْنِيْۤ۠ اَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوْا لِيْ وَلَا تَكْفُرُوْنِؒ۰۰۱۵۲
শিক্ষা ও দিক্ষা: উভয়ের প্রাণকেন্দ্র হলো মাদরাসা
জাহেরি গোনাহ থেকে বাঁচার কেন্দ্র হলো মাদরাসা। তেমনি বাতেনি গোনাহ থেকেও বাঁচার কেন্দ্র হলো মাদরাসা। অর্থাৎ এখানে শরীয়তও আছে, তরীকতও আছে। এজন্য বলা হয়, তা’লীম ও তরবিয়ত, শিক্ষা ও দিক্ষা; উভয় জিনিসের নাম হলো মাদরাসা। শরীয়তের তা’লীম দেওয়ার জন্য ষোল আনা মেহনত করতে হবে। ঠিক তেমনি ছাত্রদের তরবিয়তের জন্যও ষোল আনা মেহনত করতে হবে। তাহলে আমাদের এসব কওমী মাদরাসা থেকে এখনও সেই শয়খুল হিন্দ (রহ.)-এর মতো জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব বের হবেন। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.)-এর মতো যুগসংষ্কারক বের হবেন। শায়খুল ইসলাম সাইয়েদ হোসাইন আহমদ মাদানী (রহ.)-এর মতো মুজাহিদ বের হবেন। জামিয়া পটিয়ার মুফতি সাহেব (রহ.)-এর মতো আল্লাহঅলা মনীষী তৈরি হবেন। হাটহাজারীর বড়ো মুফতি সাহেব (রহ.)-এর মতো যুগশ্রেষ্ঠ মুফতি গড়ে উঠবেন। আর যদি অন্তর পরিষ্কার না থাকে, তাহলে মাদরাসায় থাকা হবে, কিন্তু আমাকে দিয়ে মাদরাসার কোন ফায়দা হবে না।
মাদরাসায় আত্মনিয়োগ করে ‘চাকরি’ নয়, ‘খেদমত’ করুন
আমাদের মুরব্বিগণ বলেন, মাদরাসায় আত্মনিয়োগ করা মানে দীনের খেদমতে নিয়োজিত থাকা। মাদরাসার শিক্ষাকতা করা মানে কোনো গতানুগতিক ‘চাকরি’ করা নয়। ‘খেদমত’ এবং ‘চাকরি’-এর মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে। চাকরি হয় শুধুমাত্র আয়-রোজগারের জন্য। তাই চাকরির ক্ষেত্রে মানুষ সময় ক্ষেপণ করাকে যথেষ্ট মনে করে। অর্থাৎ সকাল দশটায় অফিসে যাবে এবং বিকাল চারটায় বাড়ি ফিরবে। আর মাঝখানে বার বার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বিকাল ৪টা বাজার অপেক্ষা করবে। ৪টা বাজলেই তাড়িগড়ি করে চলে আসবে। আর মাসের শেষে ৩০ তারিখ বেতন গ্রহণ করবে। চাকরিতে নেই কোন লক্ষ্য, নেই কোন উদ্দেশ্য। কেবলমাত্র রোজী-রোজগারের ব্যবস্থা হলেই যথেষ্ট।
কিন্তু দীনী খেদমত হলো এর সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। যারা দীনের খেদমত করেন, তারা হলেন দীনের খাদেম। তারা তো দিন-রাতের চিন্তা করেন না। দিন নেই, রাত নেই; সদা কাজ চালিয়ে যান। দিনেও খেদমত করেন, রাতেও খেদমত করেন। কারণ সে জানে যে, তার প্রত্যেকটি কদমের মধ্যে সাওয়াব আছে। কোন টাকা-পয়সা পাওয়ার জন্য কাজ করে না; বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে। আমার চেষ্টা-মেহনতে যদি একটি ছাত্র আল্লাহঅলা হিসেবে গঠিত হয়, তাহলে এটি আমার জন্য সাদকায়ে জারিয়া হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত আলী (রাযি.)-কে লক্ষ করে বলেন,
«فَوَاللهِ لَأَنْ يَهْدِيَ اللهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا، خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُوْنَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ».
অর্থ: ‘হে আলী! আল্লাহ তাআলা তোমার মাধ্যমে কোন একজন ব্যক্তিকে যদি হেদায়েত দান করে, তাহলে এটি তোমার জন্য লাল লাল উটসমূহ সাদকা করার চেয়ে উত্তম।’ (বুখারী ও মুসলিম)
সে যুগে উট অনেক মূল্যবান সম্পদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিশেষত লাল উটের দাম বেশি হয়ে থাকে। তাই লাল উট সাদকা করা বড় নেকির কাজ। কিন্তু এর চেয়েও উত্তম আমল হলো, তোমার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা কোন ব্যক্তিকে হেদায়েত দান করা।
সুতরাং মাদরাসার খেদমতে নিয়োজিত সকলকে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, আমি অনেক বড় লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। আমার চেষ্টা-মেহনতে আল্লাহঅলা ব্যক্তিত্ব তৈরি হবে। এমন নিয়ত ও লক্ষ্য নিয়ে যদি আমরা মেহনত করতে পারি, তাহলে নিঃসন্দেহে আমাদের মাদরাসা থেকে বড় বড় আলেমে রব্বানী বের হবেন। দীনের খাদেম তৈরি হবেন। উম্মতের সঠিক রাহবর এবং পথপ্রদর্শক গড়ে উঠবেন।
যিক্র ও কুরআন তিলাওয়াতের পরিবেশ তৈরি করুন
আমাদের মাদরাসসমূহে যিক্র ও তিলাওয়াতের পরিবেশ গড়ে তুলা একান্ত প্রয়োজন। আমাদের জামিয়া পটিয়ার সাবেক মুহতামিম হযরত আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী সাহেব (রহ.) প্রায় সময় বলতেন, মাদরাসায় যেন ফজরের নামাযের পর অবশ্যই কুরআন শরীফের তিলাওয়াত হয়। আমিও বলছি, আপনারা মাদরাসায় কুরআন তিলাওয়াত ও যিকরের পরিবেশ তৈরি করুন। মনে রাখবেন, যিক্র-এর মাধ্যমে সমস্ত ফিতনা-ফাসাদ মিটিয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ। শায়খুল হাদীস যাকারিয়া (রহ.)-এর সাহেবযাদা মাওলানা তালহা সাহেব বলেন, ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’-এর যিকর যদি সবচেয়ে ভয়ানক ফিতনা ‘কেয়ামত সংঘটিত হওয়া’ থেকে বাঁচাতে পারে, তাহলে মাদরাসার ছোটকাটো ফিতনাগুলোকে তো নিমিষেই শেষ করে দিতে পারে।
عَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ: «لَا تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّىٰ لَا يُقَالَ فِي الْأَرْضِ: اللهُ اللهُ». رواه مسلم.
সুতরাং মাদরাসাসমূহে যখন আধ্যাত্মিকতার চর্চা বেড়ে যাবে, যিক্র এবং তিলাওয়াতের পরিবেশ গড়ে উঠবে, তখন সব ধরণের ফিতনা-ফাসাদ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। অতএব, সকলের নিকট আবেদন থাকবে, যিক্র করুন, তিলাওয়াত করুন এবং আধ্যাতিকতার চর্চা করুন। জ্ঞান অর্জনের সাথে সাথে আত্মশুদ্ধিরও ব্যবস্থা করুন।
সকলেই নিজ নিজ দায়িত্বের প্রতি যত্মবান হোন
মাদরাসায় খেদমত করতে হলে মাদরাসার নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে। আমাদের ‘আনজুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ’-এর লিখিত একটি নীতিমালা আছে, একটি সংবিধান আছে। সকলে তা পড়বেন। সেখানে কার কি দায়িত্ব; সব বিস্তারিত উল্লেখ আছে। মুহতামিম সাহেবের দায়িত্ব কী? নায়েব সাহেবের দায়িত্ব কী? নাযেম সাহেবের দায়িত্ব কী? শিক্ষকদের দায়িত্ব কী? ছাত্রদের নিয়মনীতি কী? সবকিছুর আলোচনা আছে। এগুলো জানতেও হবে এবং সেগুলো অনুযায়ী আমলও করতে হবে। নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। গাফলাতি ও উদাসীনতায় কালক্ষেপণ করা যাবে না। কারণ, আল্লাহ পাক উদাসীনদের সম্পর্কে বলেন,
لَهُمْ قُلُوْبٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ بِهَا١ٞ وَلَهُمْ اَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُوْنَ بِهَا١ٞ وَلَهُمْ اٰذَانٌ لَّا يَسْمَعُوْنَ بِهَا١ؕ اُولٰٓىِٕكَ كَالْاَنْعَامِ بَلْ هُمْ اَضَلُّ١ؕ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْغٰفِلُوْنَ۰۰۱۷۹
গাফেল ও উদাসীনদেরকে আল্লাহ كَالْاَنْعَامِ (জন্তুর ন্যায়) বলেছেন। তাই হযরাতে আসাতেযায়ে কেরামের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যে, আপনারা যদি সত্যিকারের মানুষ তথা আহলুল্লাহ-আল্লাহঅলা ব্যক্তিত্ব গঠন করতে চান, তাহলে প্রত্যেক শিক্ষককে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ ও সক্রিয় থাকতে হবে। সদা লক্ষ্য রাখতে হবে যে, আমার দ্বারা কোন খিয়ানত-দুর্নীতি হচ্ছে কি না? যেমন- বৃহস্পতিবার যোহরের নামাযের পর বাড়ি চলে গেলাম, শনিবার যোহরের সময় আসলাম। তাহলে প্রত্যেক সপ্তাহে একটি দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দরসের ঘণ্টা পড়ার সাথে সাথে ঘণ্টায় গেলাম না, দশ মিনিট পরে গেলাম, আবার ঘণ্টা শেষ হবার দশ মিনিট পূর্বে চলে আসলাম; তাহলে দৈনিক দশ মিনিটের খেয়ানত করলাম! বিশেষত নীচের জামায়াতে যে সমস্ত কিতাব আছে, সেগুলো আধ ঘণ্টা পড়াতে হয়, আর আধ ঘণ্টা ছাত্রদের তামরীন-অনুশীলন করাতে হয়। সে সময় শিক্ষককের উপস্থিতি জরুরি। আমাদের কওমী মাদরাসায় কোন টিউশনির নিয়ম নেই। টিউশনির কাজটি ঘণ্টায় করে নিতে হয়। ছাত্রদের থেকে খাতা নিতে হয়। লেখা দেখতে হয়। হস্তাক্ষর ঠিক আছে কি না? বানান শুদ্ধ আছে কি না? এগুলো দেখে দেখে ঠিক করে দিতে হয়। শুধুমাত্র খাতার মধ্যে একটি দস্তখত করে দিলে হয় না। এতে ছাত্রদের কোন ফায়দা হয় না। ছাত্রদেরকে বলতে হবে, তুমি যেভাবে অক্ষরটি লিখেছ, এটি শুদ্ধ নয়। এটি এভাবে লিখতে হবে। শব্দটির বানান ঠিক হয়নি। সহীহ হলো এটি। এভাবে ধরে ধরে ঠিক করে দিতে হবে। ছাত্রকে দেখিয়ে দিতে হবে। যেন দ্বিতীয় বার এ রকম ভুল আর না হয়। আর উপরের জামায়াত থেকে নীচের জামায়াত পর্যন্ত প্রত্যেকটি কিতাব গভীর অধ্যয়ন করে পড়াতে হবে। মুতায়াআলা করে পড়ানো আর মুতায়াআলা না করে পড়ানোর মধ্যে পার্থক্য আছে। প্রত্যেকটি কিতাব মুতায়াআলা করে পড়াতে হবে।
পারস্পরিক মিল-মহব্বত সৃষ্টি করুন
শিক্ষকমণ্ডলীর পারস্পরিক মিল-মহব্বত থাকতে হবে। শিক্ষকদের পারস্পরিক ভালোবাসার বড় প্রভাব রয়েছে আদর্শ ছাত্র গঠনের ক্ষেত্রে। তাই সকলেই ইত্তেফাক-ইত্তেহাদের প্রতি খুবই মনোনিবেশ করবেন। ঐক্য ও ভালোবাসা সৃষ্টি হবে তাওযাযু ও বিনয়ের মাধ্যমে। অহংকার ও হিংসা-বিদ্বেষ থাকলে একতা ও ভালোবাসা সৃষ্টি হতে পারে না। শেখ সাদী (রহ.) লিখেছেন,
ده درويش در گليمی بخسبند و دو پادشاه در اقليمی نگنجند۔
দশজন দরবেশ একটি চাদরের মধ্যে ঘুমাতে পারে, বিনয় থাকার কারণে। কিন্তু দুইজন বাদশা একটি দেশে বসবাস করতে পারে না। কতো বড়ো বিশাল দেশ। দুইজন বাদশা হলে উভয়ের মাঝে কতো মারামারি, ঝগড়া-ফাসাদ সৃষ্টি হয়। কারণ উভয়জন বড়ো হওয়ার দাবিদার। বড়ত্ব ও হিংসার কারণে তারা একসাথে বসবাস করতে পারে না। তাই যদি আমাদের মাঝে বিনয় থাকে, তাহলে সকলের মধ্যে ইত্তেফাক-ইত্তেহাদ সৃষ্টি হবে। ভালোবাসা ও মিল তৈরি হবে। আর যদি হিংসা-বিদ্বেষ থাকে, তাহলে আমিও নষ্ট হবো, ছাত্ররাও নষ্ট হবে। যেমন- একজন ছাত্র ‘শরহে জামি’ নিয়ে আসছে। উস্তাদ জিজ্ঞাসা করলো, কোত্থেকে আসছো? ছাত্র বলল, অমুক হুযুরের কাছ থেকে আসছি। উস্তাদ জিজ্ঞাসা করলো, তিনি কী পড়ান তোমাকে? ছাত্র বললো, ‘শরহে জামি’। তখন ওই হুযুর বললো, সেই হুযুর কি ‘শরহে জামি’র ‘শীন’ বুঝেন?! ঠিক তেমনি যখন এই উস্তাদের নিকট ওই ছাত্র আসে। তখন তাকে বলা হয়, অমুক হুযুরের নিকট কী পড়ো? ছাত্র বলে, ‘সুল্লাম’ পড়ি। তখন এই উস্তাদ বলেন, তিনি কি ‘সুল্লামে’র ‘সীন’ বুঝেন?! একজন বলছে, তিনি কি ‘শীন’ বুঝেন? আর অপরজন বলছেন, তিনি কি ‘সীন’ বুঝেন? এভাবে এক উস্তাদ অপর উস্তাদকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলে ছাত্রদের আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে। এ ধরনের কথার কারণে ছাত্ররা নষ্ট হয়ে যায়। তেমনি যখন এই কথাটি সেই উস্তাদের নিকট পৌঁছবে, তখন নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি হবে। তাই আমাদেরকে تواضع বিনয় অবলম্বন করতে হবে। তাহলে মিল-মহব্বত পয়দা হবে। আমাদের পটিয়ার মুফতি সাহেব হুযুর (রহ.) বলতেন, সুলুকের নৌকা পাহাড়েও চলে। পাহাড়ে কি পানি আছে? কিন্তু আট-দশজন ধাক্কা দিলে শুকনার মধ্যেও নৌকা চলে। সে জন্য আমরা যখন ইত্তিফাক, ইত্তেহাদের সাথে যদি কাজ করি, তাহলে ছাত্র অবশ্যই তৈরি হবে। তাই প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝে কাজ আঞ্জাম দিতে হবে। মুহতামিম সাহেব গতকাল আমাকে বললেন, আমি প্রত্যেক জামায়াতের জন্য নেগরান নির্ধারণ করে দিয়েছি। তারা নেগরানি করছেন। এতে ফায়দাও হচ্ছে। কিন্তু আমার ইচ্ছে করছে যে, জামায়াতে সুয়াম বন্ধ করে দেই। আমি বললাম কেন? কী কারণে বন্ধ করবেন? তিনি বলেন, জামায়াতে সুয়ামের নেগরানি সঠিক ভাবে হচ্ছে না। আমি বললাম, সুয়ামের নেগরান যারা আছেন, তারা হলেন উপরের শিক্ষক। জামায়াতে সুয়াম হলো উপরের জামায়াত। সে হিসেবে সুয়ামের নেগরানি আরো ভালো হওয়ার কথা। জামায়াতে সুয়াম বন্ধ করবেন কেন? তখন তিনি এ বিষয়ে অনেক অভিযোগ ও দুঃখের কথা বললেন।
যা হোক, আমি অনুরোধ করছি, ভবিষ্যতে আপনারা আল্লাহর ওয়াস্তে, সাদকায়ে জারিয়ার নিয়তে জামায়াতে সুয়ামের নেগরানিও অন্যান্য জামায়াতের মতো পালন করবেন। মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট জাযায়ে খাইর পাবেন, ইশাআল্লাহ। মাদরাসার উন্নতি হবে। আর একটি জামায়াত চালু হলেই তো মাদরাসা জামায়াতে উলা পর্যন্ত হয়ে যাবে। এরকম একটি জায়গার মধ্যে মাদরাসা গড়া অনেক দুষ্কর বিষয়। আপনাদের কাজ-কর্মে মুহতামিম সাহেবের সাহস বাড়বে। সময় কম, আমাকে যেতে হবে অন্য জায়গায় শুরার বৈঠক আছে। আমি আপনাদেরকে আবারো অনুরোধ করছি, আপনারা সকলেই ইত্তিহাদের সংবিধানটি পড়বেন। প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথ পালন করবেন। ছাত্রদেরকে গঠন করার জন্য চেষ্টা করবেন। পরস্পর মিলেমিশে ইত্তেফাক, ইত্তেহাদ-এর সাথে কাজ করবেন । আর একজন মুরুব্বির অধিনে থাকবেন। যারা এখনো পর্যন্ত কোন মুরুব্বির সাথে সম্পর্ক করেন নি, এখনো অনেক মুরুব্বি আছেন। কিয়ামত পর্যন্ত ‘সাদেকীন’ তথা আল্লাহঅলাগণ থাকবেন। যেমন আল্লাহ বলেন,
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصّٰدِقِيْنَ۰۰۱۱۹
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং আল্লাহর ভয় অর্জন করতে ‘আহলুল্লা’র সাথে সম্পর্ক স্থাপন করো। আর যদি কোন আহলুল্লার সাথে সম্পর্ক না থাকে, তাহলে এক্ষুনি ইস্তেখারা করে প্রত্যেকেই কোন না কোন ‘আহলুল্লার সাথে সম্পর্ক করে নেবেন। এটা করলে নিজের অবস্তার উন্নতি হবে। পরস্পরের মধ্যে বিনয় ও শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি হবে। তখন মাদরাসারও ফায়দা হবে, নিজেদেরও ফায়দা হবে। আল্লাহ পাক সকলকে আমল করার তওফীক দান করুন, আমীন।
সংকলন
মুহাম্মদ সুহাইল বিন রশীদ কাসেমী
সম্পাদনা: সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী