মহানবী (সা:)-এর শিক্ষা প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক ও সদ্ব্যবহার
আমরা যে ঘর, বাড়িও ফ্ল্যাটে বাস করি তার নিকটবর্তী বা বহুতল ভবনের ওপরে নিচে যারা থাকেন তারা একে অপরের প্রতিবেশী বা পড়শি। নিজের ঘরের দরজার যিনি বা যারা অধিক নিকটবর্তী তিনি প্রথম স্তরের প্রতিবেশী। এর পরে যারা নিকটবর্তী তাঁরা পরের স্তরের প্রতিবেশী। সুখে-দুখে, বিয়ে-শাদি, আপদে বিপদে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রয়োজন দেখা দেয়। দুর্ঘটনা অথবা অনাকাঙ্ক্ষিত কোন পরিস্থিতিতে আত্মীয় স্বজনের চাইতে প্রতিবেশী কাজে লাগে বেশি। দূর দূরান্ত থেকে স্বজনরা আসতে বিলম্ব হতে পারে কিন্তু প্রতিবেশী পাশাপাশি থাকার কারণে তাৎক্ষণিক সহায়তা পাওয়া যায়। পরিবারের সদস্যদের অসুস্থতা, মৃত্যু ও বিয়ে-শাদিতে পাড়া-পড়শির ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক ও সদ্ব্যবহারে মহানবী (সা:) যে শিক্ষা ও আদর্শ রেখে গেছেন তা ইতিহাসে অনন্য নজির স্থাপন করেছে।
ইসলামে প্রতিবেশীকে তিন স্তরে বিন্যস্ত করা হয়। (ক) যারা অনাত্মীয় ও অমুসলিম। (খ) যারা অনাত্মীয় অথচ মুসলিম (গ) যারা আত্মীয় ও মুসলিম। আত্মীয়-অনাত্মীয় ও মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সব প্রতিবেশীর সাথে সদাচারণ করা ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশনা রয়েছে পবিত্র কুরআনে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কাছের প্রতিবেশী, দূরের প্রতিবেশী এবং আশপাশের সাথীদের সাথে সদ্ব্যবহার করো’ (সুরা আন-নিসা: ৩৬)।
সুসম্পর্ক ও সদাচরণ বলতে বোঝায় প্রতিবেশীকে সালাম বিনিময় করা, সৌজন্য রক্ষা করে কথোপকথন করা, খোঁজ খবর নেয়া, অসহায় হলে আর্থিক সাহায্য করা, বিশেষ দিনে রান্না করা খাবার প্রেরণ করা, অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া ও শুশ্রুষা করা, কোন কষ্ট পেলে ক্ষমা করে দেওয়া, দোষ-ত্রুটি প্রকাশ পেলে গোপন করে রাখা, মনোমালিন্য হলে তাড়াতাড়ি মিটমাট করে ফেলা, কর্জ চাইলে কর্জে হাসানা দেওয়া, দাওয়াত দিলে কবুল করা, হাদিয়া-তোহফা প্রেরণ করা, কোন সুসংবাদ জানা গেলে মুবারকবাদ দেওয়া, প্রতিবেশীর রাস্তা বন্ধ করে না দেওয়া, এমনভাবে ঘর নির্মাণ করা যাতে প্রতিবেশীর ঘরে বাতাস চলাচল বন্ধ না হয়, ভিটার পানি আটকে না দেওয়া, পানি সরবরাহে বিঘ্নতা সৃষ্টি না করা, মনে কষ্ট লাগে এ জাতীয় কথা থেকে বিরত থাকা, দরজা জানালার ফাঁক দিয়ে উঁকি না দেওয়া, মারা গেলে দাফনে কাফনে শরিক থাকা ইত্যাদি।
বিশ্বনবী + বলেন, ‘আল্লাহর কসম! ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, আল্লাহর কসম! ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, ‘আল্লাহর কসম! ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, ‘আল্লাহর কসম! ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, ‘আল্লাহর কসম! ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, ‘আল্লাহর কসম! ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কে ওই ব্যক্তি? উত্তরে তিনি বলেন, ‘যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে না। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে জ্বালাতন না করে’ (সহীহ বুখারী: ৬০১৬ ও ৬০১৮)।
হযরত আবু যর D-কে একদিন মহানবী + বলেন, ‘হে আবু যর! তুমি যদি ঘরে ঝোল (স্যুপ) পাকাও, কিছু পানি বাড়িয়ে দিয়ো, তোমার প্রতিবেশীর বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ো’। কারণ হাদিয়া-তুহফা বিনিময়ের কারণে পারস্পরিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়।
সৎ প্রতিবেশী পাওয়া অত্যন্ত ভাগ্যের ব্যাপার। এতে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও মুহাব্বত দৃঢ় হয়। মহানবী +-এর মতে সৌভাগ্যের লক্ষণ চারটি (১) নেক্কার সহধর্মিনী, (২) প্রশস্ত বাসগৃহ, (৩) সৎ প্রতিবেশী ও (৪) অনুগত বাহন। আল্লাহ রাসুল +-এর হুশিয়ারি রয়েছে এই ব্যাপারে। তিনি বলেন, ‘ওই ব্যক্তি মুমিন নয় যে তৃপ্তিসহকারে আহার করে রাত কাটায় অথচ তার নিকটতম প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে’ (আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, পৃ. ৪১৪)।
প্রতিবেশীর সাথে সদাচার ও ভালো ব্যবহার করার এবং উম্মতকে তা শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি বারেবারে আল্লাহর পক্ষ হতে আদিষ্ট হয়েছেন। মহানবী (সা:) বলেন, ‘এমনকি আমার এই ধারণা হচ্ছিল যে, অচিরেই তিনি প্রতিবেশীকে আমার ওয়ারিস বানিয়ে দেবেন’।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন