প্রসঙ্গ: শরয়ী মানদণ্ডে আগাখানী ইসমাঈলী শিয়াদের ফিতনা
শেখ আহসান উদ্দিন
(এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সংখ্যা)
মহানবী (সা:) বলেন, ‘আমার উম্মাহ ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, এতে একটা দল জান্নাতী ও বাকি ৭২দল জাহান্নামী হবে।’ আগাখানী মতাবলম্বী তথা ইসমাঈলী সম্প্রদায় একটি কুফুরি শিরকি আকীদার অনুসারী সম্প্রদায়। খ্রিস্টানরা যেমন একটি অমুসলিম সম্প্রদায়। ইহুদিরা যেমন একটি অমুসলিম সম্প্রদায়। ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে এদের কোন সম্পর্ক নেই। আহমদিয়া মুসলিম নামধারী কাদিয়ানী ধর্ম যেমন একটি কাফেরদের ধর্ম। ঠিক তেমনি মুসলিম নামধারী আগাখানী ইসমাঈলী সম্প্রদায় একটি কুফুরী ধর্ম। ইসলামের সাথে এদের ন্যুনতম কোন সম্পর্ক নেই। নিচে তাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং আকিদা-বিশ্বাস উল্লেখ করা হল। আগাখানীদের উদ্ভব:ইসমাঈলী সম্প্রদায়ের মৌলিক ভিত্তি হল তাদের ইমামতের আকিদার ওপর। তাদের মতে জমানার নির্ধারিত ইমামই হল তাদের একমাত্র অনুসরণীয়। তার কথা সর্বোতভাবে কার্যকরী। তাই সর্ব প্রথম তাদের ইমাম তালিকা আমাদের জানা প্রয়োজন।
১ম ইমাম: হযরত আলী (রাদি:) (মৃ. ৪৯ হি.)
২য় ইমাম: হযরত হুসাইন ইবনে আলী (রাদি:) (মৃ. ৬১ হি.)
৩য় ইমাম: হযরত জায়নুল আবেদীন ইবনে আলী ইবনে হুসাইন (রাদি:) (মৃ. ৯৪ হি.)
৪র্থ ইমাম: হযরত মুহাম্মদ বাকের (মৃ. ১১৪ হি.)
৫ম ইমাম: হযরত জাফর সাদেক (মৃ. ১৪৮ হি.)
জাফর সাদেকের পর ইমামিয়া ফিরকার মাঝে মতভেদ হয়ে যায়। ইসনা আশারিয়া ফিরকার লোকেরা হযরত জাফর সাদেকের ছেলে মুসা কাজেমকে ইমাম মানতে থাকে। আর আর ইসমাঈলীরা জাফর সাদেকের বড় ছেলে ইসমাঈল ইবনে জাফর সাদেককে ইমাম মানতে থাকে। ডক্তর জাহেদ আলী সাহেব তারীখে ফাতিমিয়ীনে মিসর নামক গ্রন্থে এ ফিরকা সম্পর্কে যা কিছু লিখেছেন তার সারাংশ হল, ইমাম জাফর সাদেকের বয়সের সিরিয়াল অনুপাতে ৭জন ছেলে ছিল। যথা- ১. ইসমাঈল, ২. আবদুল্লাহ আফতাহ, ৩. মুসা কাজেম, ৪. মুহাম্মদ, যিনি দীবাজ নামে প্রসিদ্ধ, ৫. ইসহাক, ৬. আব্বাস ও ৭. আলী আরেজী।
প্রথমোক্ত চারজনই ইমাম হওয়ার দাবি করে বসেন। যার ফলে একাধিক ফিরকা জন্ম লাভ করে। তাদের মাঝে প্রসিদ্ধ এবং গুরুত্বপূর্ণ ফিরকা হল ফিরকায়ে ইসমাঈলিয়া এবং ফিরকায়ে মুসায়িয়া। ইসমাঈলীরা ইমাম জাফর সাদেকের পর ইমাম হওয়ার প্রবক্তা। আর ইসনা আশারিয়ারা বা মুসাওয়ায়ীরা হযরত মুসা কাজেমকে ইমাম মানে। ইসমাঈলীরা বলে থাকে যে, হযরত ইসমাঈল হযরত জাফর সাদেকের বড় ছেলে। জাফর সাদেক ইসমাঈলকে ইমাম বানানোর জন্য নির্ধারিত করেছেন। আর ইসমাঈল তার পিতার জীবদ্দশায় না কোন বিয়ে করেছেন, না কোন বাদি ক্রয় করেছেন। তাই তিনিই ইমাম। অপরদিকে ইসনা আশারিয়ারা বলে থাকে যে, ইসমাঈলকে ইমাম বানানোর কথা জাফর সাদেক অবশ্যই বলেছিলেন। কিন্তু ইসমাঈলের ইন্তেকাল পিতা থাকতেই হয়ে গিয়েছিল। এ কারণে আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হয়ে গেছে, আর ইমামতীর পদ মুসা কাজেমের দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়েছে। আল্লামা মাজলিসীর বর্ণনা মতে ইমাম জাফর সাদেক ইসমাঈলকে তার জানেশীন নির্ধারিত করেছিলেন। কিন্তু ইসমাঈল একদা মদ পান করলে তার পিতা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যান। তাই তাকে বরখাস্ত করে মুসা কাজেমকে ইমাম নিযুক্ত করেন। কিন্তু এ বক্তব্য ইসমাঈলী ফিরকাপন্থীরা মানে না। ইসমাঈল ইবনে জাফরের ব্যাপারে দুটি মত। একটি হল তার ইন্তেকাল পিতার জীবদ্দশায় হয়ে গিয়েছিল। আরেকটি মত হল, তার মৃত্যু হয়নি, কিন্তু তাকিয়া (ধোঁকা দিয়ে) হিসেবে তিনি আড়ালে চলে যান। সেই সাথে নিজের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে দেন। যাতে তিনি হত্যার হাত থেকে বাঁচতে পারেন। (তারীখে ফাতিমিয়ীনে মিসর: ১/৩-৪১)
যাই হোক, ইসমাঈলীরা জাফর সাদেকের পর ইসমাঈলকে তাদের ৬ষ্ঠ ইমাম বিশ্বাস করে থাকে। এখান থেকে ইসমাঈলীদের সময়কাল শুরু হয়। তাদের সময়কালের নিম্ন বর্ণিত ৫জন ইমাম ছিল। যথা-
৬ষ্ঠ ইমাম: হযরত ইসমাঈল ইবনে জাফর সাদেক (মৃ. ১৫৮ হি.)
৭ম ইমাম: হযরত মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল আল-মাকতুম (মৃ. ১৯৭ হি.)
৮ম ইমাম: আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ওসী আহমদ (মৃ. ২১২ হি.)
৯ম ইমাম: আহমদ ইবনে আবদুল্লাহ তাকী মুহাম্মদ (মৃ. ২২৫ হি.)
১০ম ইমাম: হুসাইন ইবনে আহমদ রাজী আবদুল্লাহ (মৃ. ২৬৮ হি.) হুসাইন ইবনে আহমদরে ছেলে আবদুল্লাহ ২৯৭ হিজরীতে আফ্রিকাতে নিজের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে ফেলে। আর ‘আল-মাহদী’ উপাধি ধারণ করে। সেখান থেকে তাদের ইমামদের সময়কাল শুরু হয়। আবদুল্লাহ মাহদীর প্রতিষ্ঠিত রাজত্ব ৪৩৬ হিজরী পর্যন্ত আফ্রিকাতে ছিল। ৩৮৫ হিজরী থেকে ৫৬৭ হিজরী পর্যন্ত মিসরে তার রাজত্ব ছিল। তার খলীফাদের খুলাফায়ে আবেদীন বা ফাতিমিয়ীন বলা হতো। তাদের তালিকা হল,
১১তম ইমাম: আবদুল্লাহ আল-মাহদী (মৃ. ২৯৭ হি.)
১২তম ইমাম: আবুল কাসেম মুহাম্মদ কায়েম বিআমরিল্লাহ (মৃ. ৩৩৪ হি.)
১৩তম ইমাম: আবু তাহের ইসমাঈল আল-মানসূর বিল্লাহ (মৃ. ৩৪১ হি.)
১৪তম ইমাম: আবু তামীম মিদাল মুয়িজ লিদীনিল্লাহ (মৃ. ৩৬৫ হি.)
১৫তম ইমাম: আবু মানসূর নাজ্জার আল-আজীজ বিল্লাহ (মৃ. ৩৮৬ হি.)
১৬তম ইমাম: আবু আলী আল-হুসাইন আল-হাকেম বিল্লাহ (মৃ. ৪১১ হি.)
১৭তম ইমাম: আবু মিয়াদ আলী আজ-জাহের লা গাজাজু দীনিল্লাহ (মৃ. ৪৭২ হি.)
১৮তম ইমাম: আবু তামীম মিয়াদাল মুস্তানসির বিল্লাহ (মৃ. ৪৮৭ হি.) মুস্তানসির বিল্লাহ ইসমাঈলীদের আঠারতম ইমাম ছিল। তার ইন্তেকালের পর তার জানেশীনদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি হয়। মুস্তানসিরের আমীর আবজুশ আফজাল মুস্তানসিরের ছোট ছেলে মুস্তালাকে জানেশীন বানায়। কিন্তু মুস্তানসিরের বড় ছেলে নাজ্জার তা মেনে নেয়নি। বরং সে নিজেই ইমাম হওয়ার দাবি করে বসে। হাসসান ইবনে সাব্বাহ যে সে সময়ের বড় ইসমাঈলী ছিল, সে নাজ্জারকে সহযোগিতা করে। সেখান থেকে ইসমাঈলীদের দুটি গ্রুপ হয়ে যায়। একদলকে বলা হয়, নাজ্জারীয়া, আর অপর দলকে বলা হতো মুস্তালিয়া। নাজ্জার মিসর থেকে চলে গিয়ে ইস্কান্দরিয়াতে নিজের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে। আর আল-মুস্তাফা লিদিনিল্লাহ’ উপাধি ধারণ করে। আমীর আবজুশ আফজার তার বিপক্ষে সৈন্য পাঠায়। সেবার নাজ্জার হেরে যায় এবং তাকে বন্দী করে কাহেরায় নিয়ে আসা হয়। মুস্তালী নাজ্জারকে দুই দেয়ালের মাঝে রেখে দেয়ালকে আটকে দেয়। আরেক বর্ণনা মতে তাকে গ্রহবন্দী করে রাখে, যার ফলে সে আর বাইরে যেতে পারতো না। অবশেষে ৪৯০ হিজরীতে সে ইন্তেকাল করে। যদিও নাজ্জার তার উদ্দেশ্য সফল করতে ব্যার্থ হয়, কিন্তু তার সহযোগিরা তার দাওয়াতকে জারী রাখে। যার ফলে হাসান ইবনে সাব্বাহ কালআতুল মাওতের মাঝে নাজ্জারী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করে ফেলে। বলা হয় যে, হাসান ইবনে সাব্বাহ নাজ্জারের ছেলে হায়ীকে মিসরে ডেকে এনে তার পিতার মসনদে বসিয়ে দেয়। আর এ রাজত্ব প্রায় দেড়শত সাল পর্যন্ত জারী ছিল। মুস্তানসিরের পর নাজ্জারীদের নিম্ন বর্ণিত ব্যক্তিরা ইমাম হয়। যথা-
১৯তম ইমাম: নাজ্জার ইবনে মুস্তানসির (মৃ. ৪৯০ হি.)
২০তম ইমাম: হাদীস ইবনে নাজ্জার (মৃ. ৫৩০ হি.)
২১তম ইমাম: মাহদী ইবনে হাদী (মৃ. ৫৫২ হি.)
২২তম ইমাম: কাহের ইবনে মাহদী (মৃ. ৫৫৭ হি.)
২৩তম ইমাম: হাসান আলী (মৃ. ৫৬১ হি.)
২৪তম ইমাম: আলী মুহাম্মদ (মৃ. ৬০৭ হি.)
২৫তম ইমাম: জালালুদ্দীন হাসান (মৃ. ৬১৮ হি.)
২৬তম ইমাম: আলাউদ্দীন মুহাম্মদ (মৃ. ৬৫৩ হি.)
২৭তম ইমাম: রুকনুদ্দীন খুরশাহ (মৃ. ৬৬৪ হি.) রুকনুদ্দীনের আমলে কালআতুল মাওতে তাতারীরা হামলা করে পদানত করে ফেলে। আর রুকনুদ্দীনকে হত্যা করে ফেলে। এর মাধ্যমে নাজ্জারীদের রাজত্বের পরিসমাপ্তি ঘটে। সেই সাথে নাজ্জারী ইমামদের মারকাজুল মাওত ইরানে স্থানান্তর করা হয়। বলা হয় যে, সে সময় তাদের নিম্ন বর্ণিত ইমাম ছিল। যথা-
২৮তম ইমাম: শামছুদ্দীন (মৃ. ৭১০ হি.)
২৯তম ইমাম: কাসেম শাহ (মৃ. ৭৭১ হি.)
৩০তম ইমাম: ইসলাম শাহ (মৃ. ৮২৭ হি.)
৩১তম ইমাম: মুহাম্মদ ইবনে ইসলাম শাহ (মৃ. ৮৬৮ হি.)
৩২তম ইমাম: দ্বিতীয় মুস্তানসির বিল্লাহ (মৃ. ৮৮০ হি.)
৩৩তম ইমাম: আবদুস সালাম (মৃ. ৮৯৯ হি.)
৩৪তম ইমাম: শাহ গরীব মির্যা (মৃ. ৯০২ হি.)
৩৫তম ইমাম: আবু জর আলী (মৃ. ৯১৫ হি.)
৩৬তম ইমাম: মুরাদ মির্যা (মৃ. ৯২০ হি.)
৩৭তম ইমাম: যুল ফিকার আলী (মৃ. ৯২২ হি.)
৩৮তম ইমাম: নূরুদ্দীন আলী (মৃ. ৯৫৭ হি.)
৩৯তম ইমাম: খলীলুল্লাহ আলী (মৃ. ৯৯৩ হি.)
৪০তম ইমাম: দ্বিতীয় নাজ্জার (মৃ. ১০৩৮ হি.)
৪১তম ইমাম: সাইয়েদ আলী (মৃ. ১০৭১ হি.)
৪২তম ইমাম: হাসান আলী (মৃ. ১১০৬ হি.)
৪৩তম ইমাম: কাসেম আলী শাহ (মৃ. ১১৪৩ হি.)
৪৪তম ইমাম: আবুল হাসান আলী (মৃ. ১১৯৪ হি.)
৪৫তম ইমাম: দ্বিতীয় খলীলুল্লাহ আলী (মৃ. ১২২৩ হি.)
আগাখান পদবি
খলীলুল্লাহ আলীকে এক বিদ্রোহে হত্যা করা হয়। ফলে ইসমাঈলীদের মাঝে বিদ্রোহ শুরু হয়ে যায়। তখন ইরানের তৎকালীন বাদশা ফাতেহ আলী ইসমাঈলীদের খুশি করার জন্য খলীলুল্লাহের দুই বছরের ছেলে হাসান আলীকে আগাখান উপাধি দেয়। সেই সাথে নিজের মেয়ের সাথে তার বিয়ে দেয়। কিন্তু ফাতেহ আলীর মৃত্যুর পর হাসান আলী আগাখান ব্রিটিশদের গুপ্তচরবৃত্তি এবং তাদের অতিরিক্ত গোলামী প্রদর্শনের কারণে ইরানীরা তাকে ইরান থেকে বিতাড়িত করে দেয়। তখন হাসান আলী ইরান থেকে বেরিয়ে ভারতে পালিয়ে আসে। মুম্বাইয়ে নিজের আবাসস্থল প্রতিষ্ঠা করে। সেখান থেকেই ইসমাঈলী ইমামদের নামের সাথে আগাখানী পদবি জোড়া শুরু হয়ে যায়।
৪৬তম ইমাম: প্রথম আগাখান হাসান আলী (মৃ. ১২৯৮ হি.)
৪৭তম ইমাম: দ্বিতীয় আগাখান আলী শাহ (মৃ. ১৩০২ হি.)
৪৮তম ইমাম: তৃতীয় আগাখান সুলতান মুহাম্মদ শাহ (মৃ. ১৩৭৬ হি.)
৪৯তম ইমাম: চতুর্থ আগাখান করীম শাহ (বর্তমান ইমাম, যে কয়েকবছর আগে বসুন্ধরায় তাদের ধর্মীয় ইবাদতখানা উদ্ভোধন করতে এসেছিল) এই হল বর্তমান আগাখান করীম শাহ পর্যন্ত আগাখানীদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও পরিচিতি। এবার আমরা দেখি এ নতুন মতবাদের রীতিনীতি সম্পর্কে।
আগাখানী ফিরকার কালিমা: আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসূলূল্লাহ ওয়া আশহাদু আন্না আমীরাল মুমিনীনা আলীআল্লাহ। অর্থাৎ আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, এবং আমি আরও স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ আল্লাহর রাসুল এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আমীরুল মুমিনীন হলেন আলী আল্লাহ, নাউযুবিল্লাহ। (ইসমাঈলী তালিমাতে কিতাব, ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত, ইসমাঈলিয়া এসোসিয়েশন পাকিস্তান করাচি)
আগাখানীরা কার ইবাদত করে?
আগাখানীরা আল্লাহ তাআলার পরিবর্তে তাদের বর্তমান ইমামের ইবাদত করে থাকে, নাউজুবিল্লাহ। (গীনানে বারহাম, পৃ. ২৯৭)
হযরত আলী D-এর স্ত্রী কে?
আগাখানীদের জঘন্য আকিদা বিশ্বাসী হয়ে বলে যে, রাসুল + হলেন হযরত আলী D-এর স্ত্রী! নাউজুবিল্লাহ। (গীনানে মুমিন চীতামনে, পৃ. ১৪৪)
আগাখানীদের সালাম
আগাখানীদের সালাম হল, ‘ইয়া আলী মদদ।’ আর সালামের জবাবেও বলে ‘ইয়া আলী মদদ।’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ৬)
বাতেনী শরীয়ত
তাদের সপ্তম ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল শরীয়তে মুহাম্মদীর জাহিরী (বাহ্যিক আমল)-কে বাতিল করে দিয়ে বাতেনী (লুকায়িত) শরীয়তের প্রচলন করেছেন। (হামারা ইসমাঈলী মাযহাব আওর উসকা নিজাম, পৃ. ৯২, ৬২০)
ইমামের সূরতে আল্লাহ তাআলার অবতরণ
আগাখানীদের বিশ্বাস মতে গরীব দুঃখীদের সাহায্যার্থে বর্তমান বিদ্যমান ইমামের রূপ ধরে আল্লাহ তাআলা আগমন করেন, নাউজুবিল্লাহ। (তাআরূফী, পৃ. ৬)
বিদ্যমান ইমাম সবই জানে!
আগাখানীদের মতে বর্তমান বিদ্যমান ইমামের জ্ঞান হল পরিপূর্ণ। তাই তিনি যা কিছু হয়েছে, যা কিছু হচ্ছে, এবং ভবিষ্যতে যা কিছু হবে সব কিছুই তিনি জানেন। অর্থাৎ সে আলিমুল গায়েব ওয়াশ শাহাদাহ। (মার্গ, ১/৮১)
আল্লাহ তাআলার সাথে কাউকে শরীক করা শিরক নয়?
আগাখানীদের মতে আল্লাহ তাআলার জাত ও সিফাতের সাথে কাউকে শরীক বিশ্বাস করলে শিরক হবে না, তবে তাদের ইমামের বদলে অন্য কাউকে ইমাম মানাটা শিরক! (হামারা ইসমাঈলী মাযহাব আওর উসকা নিজাম, পৃ. ৪৯, ২৯৯, ৩০০)
নবীদের চেয়ে ইমামরা শ্রেষ্ঠ?
আগাখানীদের আকিদা হল, নবীদের থেকে গোনাহ হতে পারে। তারা কেউ নিষ্পাপ ছিলেন না। আর তারা এমন সব মর্যাদা কামনা করেছেন, যার তার যোগ্য ছিলেন না। পক্ষান্তরে হযরত আলী D এবং তার বংশধরের মাঝে আগত ইমামগণ। তারা এমন মর্যাদা চেয়েছেন, যার তারা যোগ্য ছিলেন। আর তারা সবাই কর্মকান্ডের দিক থেকে ফেরেস্তার মত, নিষ্পাপ এবং নবী রাসুলদের চেয়ে চার স্তরের উপরের মর্যাদায় সমাসীন, নাউজুবিল্লাহ। (হামারা ইসমাঈলী নিজাম আওর উসকা নিজাম, পৃ. ৭০-৭১)
ইমামরা গোনাহ মাফ করতে পারে:
তাদের এক সময়কার ইমাম পীর শাহ গোনাহ মাফ করে দিতে পারতো, নাউজুবিল্লাহ। (প্রাগুক্ত, পৃ. ১২)
ইমামদের নাম আল্লাহর নাম:
ইসমাঈলী আগাখানীরা তাদের ইমামসমূহকে আল্লাহর নাম মনে করে, নাউজুবিল্লাহ।
কুরআনে করীম ৪০ পারা:
কুরআনে করীম ৪০ পারা। শেষ ১০ পারা হযরত আলী ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন। বর্তমানে বিদ্যমান কুরআন আল্লাহর কিতাব নয়। বরং হযরত উসমানের কিতাব, নাউজুবিল্লাহ। (কালামে ইমামে মুবীন, ১/৬৪; মাজমুআ মাকাদ্দাস গীনান, পৃ. ৯৫; হামারা ইসমাঈলী মাযহাব, ভূমিকা)
কুরআনে করীম আরবের জন্য। আর অন্যান্যদের জন্য হল ‘গীনান’ এ গীনানের ওপরই আমল করা উচিত। (কালামে ইমামে মুবীন, 1/81)
ইমামের ফরমান আল্লাহর কালামের সমমানের:
বর্তমান ইমামের ফরমানসমূহ আল্লাহর কালামের সমতুল্য। (কালামে ইলাহী আওর ফরমানে ইমাম, পৃ. ৬২)
বর্তমান ইমামকে সেজদা করতে হবে:
ইমামে হাজেরের মাঝে আল্লাহর নূর হুলুল হয়েছে তথা প্রবিষ্ট হয়েছে। তাই আগাখানী ফিরকাপন্থীরা তাকে সেজদা করে থাকে। (শিকশা মালা, পৃ. 4)
হযরত আলী আল্লাহর অবতার:
আগাখানীদের আকিদা হল, হযরত আলী (রাদি:) আল্লাহ তাআলার অবতার। (গীনানে মুমিন চিতামনী, মাজমুআ মুকাদ্দাস গীনান পৃ. ১০৬)
হযরত আলী খোদা! তাদের আকিদা হল, যে ব্যক্তি হযরত আলীকে মন থেকে আল্লাহ বিশ্বাস করবে, তার সন্তান-সন্ততিতে বরকত হবে। আর সফলতা তার পদচুম্বন করবে। আর নূরে আলী সকল জাহানের সৃষ্টিকর্তা, নাউজুবিল্লাহ।
আরকানে ইসলামকে অস্বীকার
আগাখানীরা নামায, রোযা, হজ, যাকাত, যা ইসলামের মূল রুকন তার জরুরতকে অস্বিকার করে থাকে। (হামারা ইসমাঈলী মাযহাব আওর উসকা নিজাম, পৃ. ১৩৬)
আগাখানীদের ইবাদত:
নামায পড়ার বদলে আগাখানীদের ওপর ফরজ হল, তিন বেলা তাদের ইবাদাতগাহ জামাআতখানায় গিয়ে দুআ করবে। (খাযীনায়ে জাওয়াহের, পৃ. ১৬)
আরও কিছু জঘন্য আকিদা
হাইয়্যু, আল-কাইয়্যুম মানে হল, তাদের বর্তমান ইমাম। (কালামে ইমামে মুবীন, ফরমানে ইমামে সওম, ১/৫)
খাজা আবু তালেব রাসুল ঊ-এর নবুওত ও রিসালাত সোপর্দ করেছে। (হামারা ইসমাঈলী মাযহাব আওর উসকা নেজাম, পৃ. ৬৩-৬৪)
এরকম জঘন্য সব আকিদায় ভরপুর এ ইসমাঈলী সম্প্রদায় তথা আগাখানী ধর্মমতে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার প্যারিদাস রোড, পল্টন, বসুন্ধরাসহ সারাদেশের অনেক জায়গায় তাদের জামায়াতখানা দেখা যায়। তাই বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামদের মতে ওরা কাফের। মুসলমান নয়। তাই সাধারণ মুসলমানগণ তাদের ইসলাম নামের ব্যবহার দেখে যেন বিভ্রান্ত না হন।
যে সকল বিজ্ঞ আলেমগণ আগাখানীদের কাফের ঘোষণা দিয়েছেন। যথা-
১. মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ লুধিয়ানবী (রহ:), ২. মুফতীয়ে আজম পাকিস্তান মুফতী ওলী হাসান (রহ:), ৩. মুফতী রশীদ আহমদ লুধিয়ানবী (রহ:), ৪. দারুল উলুম করাচির ওলামায়ে কেরাম, ৫. মাওলানা সলীমুল্লাহ খান (রহ:), ৬. ওলামায়ে সিন্ধ, পাকিস্তান, ৭. পাকিস্তানের পাঞ্জাবের ওলামায়ে কেরাম, ৮. আযাদ কাশ্মিরের ওলামায়ে কেরাম, ৯. পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের ওলামায়ে কেরাম, ১০. দারুল উলুম দেওবন্দের ওলামায়ে কেরাম, ১১. মাযাহিরুল উলুম সাহারুনপুরের মুফতীগণ, ১২. মিসরের আল-আজহারের মুফতীগণ, ১৩. শায়েখ আবদুল্লাহ ইবনে বায (রহ:), ১৪. শায়েখ ইহসান ইলাহী যহির এবং ১৫. এমনকি ইরাকের আয়াতুল্লাহ সিস্তানীসহ মূলধারার শিয়া (১২ ইমামী শিয়া) আলেমরা। বিস্তারিত জানতে পড়ুন:
১. আগাখানিয়াত ওলামায়ে উম্মতকি নজর মে (সাওয়াদে আজম আহলে সুন্নত চাতরাল পাকিস্তান)
২. আগাখানিয়ূকি সিয়াসী আযায়িম আহলে ওয়াতান কে লিয়ে কে লমহা ফিকরিয়া। (যাকারিয়া রাজী)
৩. ইসমাঈলিয়া (সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদবী (রহি:)
৪. আল-ইসমাঈলিয়া (ইহসান এলাহী যহির)
যেমন কাদিয়ানীরা কাফের হওয়া সত্ত্বেও ইসলামের নাম ব্যবহার করে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করে যাচ্ছে, ঠিক তেমনি আগাখানী ইসমাঈলী সম্প্রদায় ধর্মাবলম্বীরা ইসলামের নাম ব্যবহার করে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করে যাচ্ছে। হিন্দু বৌধ্য, খ্রিস্টানদের মত তারা যদি নিজেদের আগাখানী ধর্মের অনুসারী বলে, কিংবা ইসমাঈলী ধর্মের অনুসারী বলে, তাহলে তাদের ব্যাপারে আমাদের কোন ক্ষোভ নেই। কিন্তু কাফের হয়ে ইসলামের নাম ব্যবহার করবে কেন? অমুসলিম হয়ে মুসলিম পরিচয় বহন করবে কেন? এ কেমন ধৃষ্টতা? আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব কাফেরদের ষড়যন্ত্র থেকে সাধারণ মুসলমানদের হিফাযত করুন।