বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা! আজ আমরা মানবিক গুণাবলির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ নিয়ে আলোচনা করব। তা হল আদব বা নির্মল আচরণ। মানব জীবনে এটি একটি অন্যতম গুণ। সমাজ ও রাষ্ট্রে, শিক্ষাঙ্গণ ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে নিয়ম-শৃঙ্খলা, প্রেম-প্রীতি ও শ্রদ্ধা-সম্মানের এই মহৎ গুণে সুখ-শান্তি নেমে আসে। ইসলামে তাই মুরব্বি-বড়দের প্রতি ভালো আচরণ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সৎ স্বভাব ও সৎ আচরণের মাধ্যমেই আমরা জীবনের প্রতিটি কর্মক্ষেত্র সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারি। পরিবারের সদস্য হিসেবে আদব রক্ষা করা যেমন সবার উচিত, তেমনি আচরণের মাধ্যমেই বড়দের মর্যাদা ও সম্মান প্রদর্শন করা সবার কর্তব্য। মানুষের উত্তম স্বভাব এবং নিষ্ঠাচার পার্থিব বা পারলৌকিক জীবনকে করে সৌন্দর্যমণ্ডিত। পারস্পরিক সম্পর্ক ও নিষ্ঠতা নির্ভর করে মানুষের আচরণের ওপর। সৎ আচরণেই মানুষকে মহান ও মহীয়ান করে তোলে।
প্রিয় বন্ধুরা! আমরা আমাদের শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র-শিক্ষক সকলে মিলে একটি পরিবারের ন্যায়। আমরা ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে একত্রে বসবাস করি। আমাদের অঙ্গণে শিক্ষক-মুরব্বিরাই আমাদের নেতৃস্থানীয়। জীবন ও জগৎ সম্পর্কে তাদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। সে ক্ষেত্রে মুরব্বিদের আদেশ-নিষেধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া কিংবা তাদের নির্দেশ মোতাবেক চলার পথকে অনুসরণ করা সৎ আচরণের নামান্তর। বায়োজ্যেষ্ঠ মুরব্বিদের প্রতি আদব ও সম্মান প্রদর্শন করা ইসলামের বিধান রয়েছে। আমাদের বড়রা শিশুকাল থেকে বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমেই বড় হয়েছেন। বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও সম্মান প্রদর্শনের কারণেই সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং জীবনের সব ক্ষেত্র হয় কল্যাণময়। তাই শিক্ষক ও শিক্ষালয়ের আদব রক্ষার জন্য মুরব্বিদের প্রতি ভদ্রতা, নম্রতা, শিষ্ঠতা এবং নমনীয়তা দেখাতে হবে। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে,
وَقُوْلُوْا لِلنَّاسِ حُسْنًا ؕ ۰۰۸۳
‘মানুষের সঙ্গে ভদ্রোচিত আলাপ করো।’ (সূরা আল-বাকারা: ৮৩)
আমাদের প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন,
»مَنْ لَّـمْ يَرْحَمْ صَغِيْرَنَا، ويَعْرِفْ حَقَ كَبِيْرِنَا؛ فَليْسَ مِنَّا».
‘যারা বড়দের শ্রদ্ধা এবং ছোটদের স্নেহ করে না, সে আমার উম্মত নয়।’ (আল-আদাবুল মুফরদ: ৩৫৪ ও সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৪৩)
তিনি আরও বলেছেন,
«مَا أَكْرَمَ شَابٌّ شَيْخًا لِّسِنِّهِ إِلَّا قَيَّضَ اللهُ لَهُ مَنْ يُّكْرِمُهُ عِنْدَ سِنِّهِ».
‘যে যুবক কোনো বৃদ্ধের প্রতি তার বার্ধক্যের কারণে সম্মান প্রদর্শন করবেন আল্লাহ তাআলা সেই যুবকের শেষ বয়সে তার প্রতি সম্মানকারী লোক পয়দা করবেন।’ (সুনানে তিরমিযী: ২০২২)
সম্মানবোধ এবং আচরণের ক্ষেত্রে এই মহান বাণী আমরা সামনে রেখে বলা যায়, মুরব্বিদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া, বয়োবৃদ্ধকে পিতার মতো সম্মান দেখানো মানবিক মূল্যবোধেরই পরিচয় বহন করে।
প্রিয় বন্ধুরা! আমাদের মনে রাখতে হবে, বড়রা বড় হলেও তারাও মানুষ। তাঁদেরও স্খলন হয়ে যেতে পারে। কিন্তু সোস্যাল মিডিয়ায় তাঁদের ব্যাপারে তীর্যক মন্তব্য করা, বিরূপ কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস লেখা কখনো কোন আদর্শ ছাত্রের চরিত্র হতে পারে না। আমাদের আকাবিরের চরিত্র এমন ছিল না। হযরত শায়খুল হিন্দ (রহ.) সম্পর্কে দারুল উলুম দেওবন্দের প্রধান মুফতি মাওলানা হাবীবুর রহমান খায়রাবদী (হাফিযাহুল্লাহ)-এর নিকট একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা শুনেছিলাম। শিক্ষার্থীদের উপকারার্থে এখানে তা উল্লেখ করা হলো। অনুগ্রহ করে ইসলাহের নিয়তে ঘটনাটি পড়ুন এবং অনুধাবন করুন।
তিনি বলেন, ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের মহান স্থপতি, শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী (রহ.) (১৮৫১-১৯২০ খ্রি.) ছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম শিষ্য। যাঁর একনিষ্ঠ প্রচেষ্টায় ভারত উপমহাদেশ ইংরেজদের দখল মুক্ত হয়েছিল। ভারতবর্ষ ফিরে পেয়েছিল তাদের হারানো ঐতিহ্য ও লুণ্ঠিত স্বাধীনতা| পৃথিবীর মানচিত্রে আবারো একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করলো এ ভারতবর্ষ।
ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়ে শায়খুল হিন্দ (রহ.)-কে দেশান্তর হতে হয়েছিল। বন্দী রাখা হয়েছিল মাল্টার দ্বীপে। দীর্ঘ সময় বন্দী থাকার পর তিনি মাল্টার বন্দীশালা থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে এলেন।
শায়খুল হিন্দ (রহ.) দেশে ফেরার পর মুরাদাবাদ সফরে যান। ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি এলাকার নাম মুরাদাবাদ। সে মুরাদাবাদে শায়খুল হিন্দ (রহ.) উপস্থিত হলেন। একজন বড় ব্যক্তিত্বকে পেয়ে স্বভাবজাত কারণেই যেখানকার লোকেরা খুবই আনন্দিত হলেন। মুরাদাবাদের বাসিন্দারা হযরতের নিকট কিছু ওয়ায-নসীহত পেশ করার জন্য আবেদন করলেন। শায়খুল হিন্দ (রহ.) বলেন, আপনারা তো জানেন, আমি ওয়ায-নসীহত করতে জানিনা। তাই, আমি কোন ওয়ায-নসীহত করতে পারব না।
এলাকাবাসী নিজেদের দাবিতে অনড়। তারা শায়খুল হিন্দ (রহ.)-কে বারবার আবেদন করতে লাগলেন। উপরন্তু সেখানে হযরত শায়খুল হিন্দ (রহ.) এর সাথে সাক্ষাতের জন্য তাঁরই শিষ্য আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহ.) ও আল্লামা শাব্বীর আহমদ ওসমানী (রহ.)সহ আরও অনেক ওলামায়ে কেরাম উপস্থিত হলেন। এবার তারাও হযরতকে কিছু ওয়ায-নসীহত করার জন্য আবেদন করলেন। পরিশেষে বাধ্য হয়ে হযরত শায়খুল হিন্দ (রহ.) ইশার নামাযের পর আলোচনা আরম্ভ করলেন। তিনি একটি হাদীস শরীফ পাঠ করলেন,
«فَقِيْهٌ وَّاحِدٌ أَشَدُّ عَلَى الشَّيْطَانِ مِنْ أَلْفِ عَابِدٍ».
‘একজন ফকীহ শয়তানের রিরুদ্ধে একহাজার ইবাদতকারীর চেয়েও ভারি (কঠোর) হয়ে থাকেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২২২)
তিনি যখন أَشَدُّ–এর অনুবাদ ‘আসকাল’ তথা ‘ভারি’ বলেছেন, তখন উপস্থিত জনৈক আলেম শায়খুল হিন্দ (রহ.)-কে বারণ করলেন। বললেন, হযরত! এভাবে হাদীসের অনুবাদ করা ঠিক হয়নি। ‘আশদ’ অর্থ কঠোর, ভারি নয়। আপনি ‘আশদ’ এর অর্থ ভারি কিভাবে করলেন? তিনি শায়খুল হিন্দ (রহ.)-কে লক্ষ করে আরও কঠোরভাবে বললেন, যার কাছে হাদীসের অনুবাদ করার যোগ্যতা নেই, তার জন্য বয়ান করারও কোন অধিকার নেই।
অনেক বড় মজলিস ছিল। অনেক লোকের সমাগম হয়েছিল। সকলের সামনে তিনি শায়খুল হিন্দ (রহ.)-এর ওপর আপত্তি করলেন এবং তাঁকে ওয়াযের অযোগ্য ঘোষাণা করে ভরা মজলিসে লাঞ্চিত করলেন!
তবে আশ্চার্য, এ ক্ষেত্রে হযরত শায়খুল হিন্দ (রহ.)-এর বিনয় ছিলো খুবই লক্ষ্যনীয়। তাঁর বিদ্যাসাগর শিষ্যরা সেখানে উপস্থিত আছেন। ইলমের জাহাজ আল্লামা শাব্বির আহমদ ওসমানী (রহ.) ও ইলমের পাহাড় আল্লামা কাশ্মীরী (রহ.) সেখানে উপস্থিত আছেন। তাঁদের সামনে তাঁদের প্রিয় উস্তাদকে লাঞ্চিত করল! কিন্তু কেউ কোন জবাব দিলেন না! কারণ তখনকার শিষ্যরা উস্তাদগণের ইশারা-ঈঙ্গিত ছাড়া কোন কিছুই করতেন না। যেহেতু সেখানে উত্তর দেয়া উস্তাদের উদ্দেশ্য নয়, তাই তাঁরা উস্তাদের সম্মতিকে প্রধান্য দিয়েছেন। তাঁরাও কোন প্রতিবাদ করলেন না।
এবার শায়খুল হিন্দ (রহ.)-এর বিনয়ের প্রতি লক্ষ করুন, ওই আলেমের এমন লাঞ্চনাকর আপত্তি শুনে তিনি বললেন, ‘আমি তো শুরুতেই বলে ছিলাম যে, আমি ওয়ায-নসীহত করতে জানি না, আপনারাই তো পীড়াপীড়ি করেছেন।’
এ বলে পুনরায় ওয়াযের প্রতি মনোনিবেশ করলেন। ওয়ায সমাপ্ত করার পর যখন লোকজন নিজ নিজ ঘরে ফিরে গেলো। তখন শায়খুল হিন্দ (রহ.) বললেন, যিনি আমার ওয়াযে আপত্তি করেছিলেন, তিনি কে? আমাকে তার ঘরে নিয়ে চলো। হযরতের নির্দেশ পালনার্থে উপস্থিত লোকজন তাঁকে ওই আলেমের ঘরে নিয়ে গেলেন। তিনি সেখানে গিয়ে একজন শাগরিদের ন্যায় তার সামনে বসে পড়লেন। খুবই বিনয়ের সাথে তার সাথে আলোচনা শুরু করলেন। তার কাছে জানতে চাইলেন, হাদীসের অনুবাদে কি ভুল হয়েছিল? তখন ঐ আলেম বলেন, আপনি ‘আশদ’ এর অনুবাদ ‘আসকল’ দিয়ে করেছেন। অথচ ‘আশদ’ শব্দটি কঠোরের জন্য ব্যবহৃত হয় ‘আসকল’ বা ভারির জন্য নয়।
তখন শায়খুল হিন্দ (রহ.) বলেন, কোথাও এর অনুবাদ যদি ‘আসকল’ প্রমাণিত হয়, তাহলে কি মেনে নেবেন? তখন ওই আলেম বলেন, কোথা থেকে প্রমাণ করবেন?
শায়খুল হিন্দ (রহ.) বলেন, কোন ডিকশনারী ইত্যাদি থেকে প্রমাণিত হলে, মেনে নেবেন? তিনি বলেন, ঠিক আছে, মেনে নিব।
তখন শায়খুল হিন্দ (রহ.) কোন ডিকশনারি খুলেননি, বরং বুখারী শরীফের ওহী সংক্রান্ত প্রথম হাদীসটি পাঠ করে তাকে শোনালেন, যেখানে ওহীর প্রকার বর্ণনা করা হয়েছে,
«أَحْيَانًا يَأْتِينِي مِثْلَ صَلْصَلَةِ الْـجَرَسِ»
‘কখনো আমার নিকট ঘণ্টার আওয়াজের ন্যায় ওহী আসে।’ (সহীহ আল-বুখারী: ২) অতঃপর বলেন, «وَهُوَ أَشَدُّهُ عَلَيَّ» এ ধরণের ওহী অনেক ভারি মনে হয়। এখানে ‘আশদ’-এর অনুবাদ ‘আসকাল’ অর্থাৎ ভারি দ্বারা করা হয়েছে।
শায়খুল হিন্দ (রহ.) এ হাদীসটি পাঠ করে দেখিয়ে দিলেন, ‘আশাদ’-এর অনুবাদ ‘আসকাল’ হয়। কারণ এই প্রকার ওহী নাযীল হলে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর তা অনেক ভারি মনে হত। যদি উটে আরোহিত অবস্থায় নাযীল হতো তখন উট বসে যেত। একদা রাসূল (সা.) হযরত যায়েদ ইবনে আরকম (রাযি.)-এর রানে শুয়ে ছিলেন, তখন ওহী নাযীল হল। তিনি বলেন, আমার নিকট এমন ভারি মনে হলো যেন, আমার রান চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল।
তৎক্ষণাৎ ওই আলেম নিজের ভুল স্বীকার করে হযরত শায়খুল হিন্দ (রহ.)-এর পা ধরে কান্নাকাটি করতে থাকেন এবং বলেন, আপনি হাদীসের সঠিক অনুবাদ করেছেন, আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি আপনাকে বারণ করেছি, আমি আপনাকে জনসম্মুখে ভরা মজলিসে লাঞ্চিত করেছি, আল্লাহর দোহাই আমাকে ক্ষমা করে দিন। শায়খুল হিন্দ (রহ.) তাকে ক্ষমা করে দিলেন।
শায়খুল হিন্দ (রহ.) মাহফিলেও উত্তর দিতে পারতেন। তবে তিনি সেখানে কোন উত্তর দেননি। কারণ সেখানে উত্তর দিলে ওই আলেম লাঞ্চিত হতো। শায়খুল হিন্দ (রহ.)-এর কারণে কোন আলেমের মানহানি হোক এটা তিনি কখনো বরদাশত করতেন না। শায়খুল হিন্দ (রহ.) নিজের সম্মানহানিকে সহ্য করে নিলেন, তারপরেও অন্য আলেমকে লাঞ্চিত করেননি।
তিনি বলেছেন, যদি আমি ওই আলেমকে জনসম্মুখে উত্তর দিতাম, তাহলে তার ওপর থেকে মানুষের আস্থা উঠে যেতো। অথচ তিনি ওই এলাকায় দীনী বিষয়ে মুসলমানদেরকে পথ প্রদর্শন করে থাকেন। তার ওপর থেকে মানুষের আস্থা উঠে গেলে, তারা দীনী বিষয়ে তার কাছ থেকে আর উপকৃত হবে না। তাই, আমি নিজের অপমানকে প্রধান্য দিয়ে তার ইজ্জতকে রক্ষা করেছি।
বস্তুত শায়খুল হিন্দ (রহ.)-এর উপরোক্ত ঘটনা একদিকে যেমন আমাদেরকে নিজেদের জীবন পরিক্রমায় বিনয় ও ভদ্রতা অবলম্বন করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে, তেমনি আমাদেরকে স্মরণ করে দেয় যে, দীনের রাহবর ও ‘মুক্তাদায়ে কওম’ এবং উম্মতের পথপদর্শক ওলামায়ে কেরাম সম্পর্কে মন্তব্য করতে আরও অনেক সংযত হওয়ার কথাও। নিঃসন্দেহে উম্মতের নেতৃত্বস্থানীয় ওলামায়ে কেরামের মান-মর্যাদাকে রক্ষা করা সকলের নৈতিক ও দীনী দায়িত্ব। আল্লাহ আমাদেরকে নিঃস্বার্থভাবে বিষয়টি অনুধাবন করার তাওফীক দান করুন, আমীন।
সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী
শিক্ষাপরামর্শ
উত্তর দিচ্ছেন: সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী
সমস্যা: একজন তালিবে ইলমকে পারিবারিক সমস্যা তথা অভাব-অনটন ইত্যাদির কারণে পড়া-লেখা বন্ধ করার জন্য যদি পারিবারিকভাবে চাপ দেয়া হয়, তখন তার করণীয় কী? কোন কোন আলেম বলেন যে, যেহেতু উচ্চ দীনী শিক্ষা অর্জন করা ফরজে কেফায়া তাই বাবা-মা এর খেদমতে সাড়া দেয়া জরুরি, কেননা, তা ফরজে আইন। আর কোন কোন আলেম বলেন যে, আল্লাহ পাক বিভিন্ন স্থান ও গোত্র থেকে কিছুসংখ্যক লোককে তাঁর ইলমে দীনের জন্য বাচাই করেন। এতএব, যাদেরকে তিনি বাচাই করেন তাদের জন্য ইলমে দীন অর্জন করা ফরজে আইন হয়ে যায়। সুতরাং কোন কারণে তারা ইলমে দীন অর্জন করা থেকে পিছে হটা ঠিক হবে না। উল্লেখিত বিষয়ে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো।
মুহাম্মদ আবু শাকের বিন ইবরাহীম
শিক্ষার্থী, জামায়াতে পঞ্জুম, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: (ক) দীনী ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরয। বিশুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারা, কুরআনের মর্ম অনুধাবন করতে জানা এবং কুরআন-হাদীস অনুযায়ী নিজের জীবনকে পরিচালনা করার যথার্থ জ্ঞান অর্জন করা তথা ‘ইলমুল হাল’ অর্জন করা ফরযে আইন। তবে দীনী বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জন করা ফরযে কেফায়া। ফরযে আইন পরিমাণ ইলমে দীন অর্জন করার জন্য পারিবারিক হুকুম অমান্য করা শরীয়তের দৃষ্টিতে নাফরমানি বলা যায় না। সুতরাং আপনি যদি পারিবারিক চাপের প্রতি ভ্রক্ষেপ না করে ইলমে দীন অর্জন করতে থাকেন, তাহলে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন অসুবিধা হবে না। কিন্তু শুধু দীন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কিতাবসমূহ পড়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পারিবারিক কাজে জড়িয়ে পড়া উত্তম। তবে হ্যাঁ, যদি আপনার রোজগার ছাড়া পিতা-মাতার চলার কোন উপায় না থাকে, অথবা তারা বৃদ্ধ হওয়ার কারণে তাদের খেদমতের প্রয়োজন হয় এবং আপনি ব্যতীত তাদের দেখা-শুনা করার কেউ না থাকে, তাহলে পিতা-মাতার দেখমতকে প্রধান্য দিতে হবে।
ঘোষণা
(সমস্যা নিয়ে আর নয় অস্থিরতা, সমাধানই হোক আমাদের অগ্রযাত্রা)
শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আপনাদের সহযোগিতা ও দিক-নির্দেশনার লক্ষ্যে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার মুখপাত্র, ইসলামী গবেষণা ও সৃজনশীল সাহিত্য পত্রিকা মাসিক আত-তাওহীদে নিয়মিত বিভাগ ‘শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পমার্শ’ চালু করা হয়েছে। উক্ত বিভাগে একদিকে থাকবে আপনাদের জন্য নিয়মিত দিক-নির্দেশনামূলক প্রবন্ধ। অপরদিকে থাকবে আপনাদের সমস্যা-সমধান নিয়ে শিক্ষা পরামর্শ।
অতএব এখন থেকে সমস্যা নিয়ে আর নয় অস্থিরতা, সমাধানই হোক আমাদের অগ্রযাত্রা’ শ্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাবো উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে। সুতরাং শিক্ষা বিষয়ক যে কোন সমস্যা আমাদের নিকট লিখুন এবং টেনশানমুক্ত জীবন গড়ুন। আমরা আপনার সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট থাকবো এবং অতিদ্রুত সময়ে যথার্থ সমাধান পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ইনশা আল্লাহ। আল্লাহই তাওফীকদাতা।
যোগাযোগের ঠিকানা
বিভাগীয় সম্পাদক
শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পরামর্শ বিভাগ
মাসিক আত-তাওহীদ
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
ই-মেইল: hmsalimuddin22@gamil.com