সমস্যা ও সমাধান
ফতওয়া বিভাগ
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
মোবাইল: ০১৮৫৬-৬১৮৩৬৭
ইমেইল: daruliftapatiya@gmail. com
পেইজলিংক: Facebook. com/Darul-ifta-Jamia-Patiya
আয়াতে সিজদা
সমস্যা: কোন নাবালেগ শিশু যদি কুরআন তিলাওয়াতের সময় আয়াতে সিজদা পাঠ করে তখন বালেগ শ্রোতার ওপর সিজদা দেওয়া ওয়াজিব হবে কি?
আশফাক হামিদ
চকবাজার, চট্টগ্রাম
সমাধান: এ ক্ষেত্রে মূলনীতি হচ্ছে, আয়াতে সিজদা তিলাওয়াত কিংবা শোনার দ্বারা বালেগ ব্যক্তির ওপর সেজদা ওয়াজিব হয়। চাই বালেগ থেকে শুনুক কিংবা নাবালেগ থেকে। তাই নাবালেগ শিশু যদি আয়াতে সিজদা তিলাওয়াত করে এবং বালেগ পুরুষ বা মহিলা তা শ্রবণ করে তাহলে তাদের ওপর সিজদা দেওয়া ওয়াজিব হবে। কিন্তু নাবালেগ শিশুর ওপর কোন অবস্থায় সিজদা ওয়াজিব হবে না। হিদায়া: ১/৪৬৫, তাতারখানিয়া: ২/৪৬৬, ফাতহুল কাদীর : ১/৪৬৮
সমস্যা: কোন ব্যক্তি যদি নামাযের বাইরে থাকা অবস্থায় ইমাম সাহেব থেকে কোন সিজদার আয়াত শুনে তার ওপর সিজদা দেওয়া ওয়াজিব হবে কি না?
মু. নকিবুল্লাহ
শামলাপুর, টেকনাফ
সমাধান: উল্লিখিত প্রশ্নে যদি উক্ত ব্যক্তি নামাযের বাইরে থাকা অবস্থায় সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করতে শুনে এবং পরবর্তীতে ইমাম সাহেব যে রাকআতে সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করেছে উক্ত রাকআতে ইমামের সিজদা আদায়ের পর ইমামের সাথে নামাযে শরীক হয়ে যায় তাহলে তাকে আর সিজদা দিতে হবে না। তবে যদি উক্ত রাকআতে শরীক না হয়ে পরবর্তী রাকআতে শরীক হয় কিংবা আদৌ নামাযে শরীক-ই না হয় তাহলে তার ওপর পরবর্তীতে সিজদা আদায় করে দেওয়া ওয়াজিব। হিন্দিয়া: ১/৩৩, বাদায়িউস সানায়ি’: ১/৫৮০, শামী: ২/৫৮৫
সমস্যা: পবিত্র কুরআনে সর্বমোট আয়াতে সিজদা কয়টি এবং কী কী? এর মধ্যে কোন কোন আয়াতের ব্যাপারে ইমামদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
সাইফুল ইসলাম
কক্সবাজার
সমাধান: আমাদের হানাফী মাযহাব মতে পবিত্র কুরআনে আয়াতে সিজদা সর্বমোট ১৪টি। সেগুলো যথাক্রমে সূরা আল-আরাফ ২০৬, সূরা আর-রাআদ: ১৫, সূরা আন-নাহল: ৪৯-৫০, সূরা আল-ইসরা : ১০৯, সূরা মারইয়াম: ৫৮, সূরা আল-হজ: ১৮, সূরা আল-ফুরকান: ৬০, সূরা আন-নামল: ২৫. সূরা আস-সাজদা: ১৫, সূরা সাদ: ২৪, সূরা ফুসসিলাত : ৩৮, সূরা আন-নাজম: ৬২, সূরা আল-ইনশিকাক: ২০-২১ ও সূরা আল-আলাক: ১৯।
ইমাম শাফিয়ী (রহ.)-এর প্রসিদ্ধ মতানুসারে সর্বমোট আয়াতে সিজদা ১৪টি। তবে তাঁর মতে সূরা সাদের আয়াতে সিজদার পরিবর্তে সূরা আল-হজের ৭৭ আয়াতে সিজদা ওয়াজিব হবে।
ইমাম মালেক (রহ.)-এর মতে পবিত্র কুরআনে সর্বমোট আয়াতে সিজদা ১১টি। অর্থাৎ তার মতে মুফাস্সালাত সূরাসমূহের আয়াতে (অর্থাৎ উপরোল্লিখিত ক্রমের সর্বশেষ তিনটি সূরায়) সিজদা ওয়াজিব হবে না। (বুখারী: ১/১৪৬, কুদূরী: ৯৫, বাদায়িউস সানায়ি’: ২/৫, বিনায়া: ২/৬৫৭, আল-মুহীতুল বুরহানী: ২/১০২)
সমস্যা: আয়াতে সিজদা তেলাওয়াতের পর সিজদা দেওয়া কি ওয়াজিব, নাকি ফরজ না সুন্নাত? বিশেষ করে হুকুমের দিক থেকে সমস্ত আয়াতে সিজদা বরাবর, নাকি পার্থক্য আছে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
ফারুক আহমদ
মুরাদনগর, কুমিল্লা
সমাধান: আয়াতে সিজদা তিলাওয়াতের পর সিজদা দেওয়া ওয়াজিব। এ হুকুমের ব্যাপারে সকল আয়াত সমান। তবে জাওহারা নামক কিতাবে রয়েছে যে, ১৪টি সিজদার মধ্যে ৭টি ফরজ, ৩টি ওয়াজিব আর বাকি ৪টি সুন্নাত। তবে এই মতটি গ্রহণযোগ্য নয়। তাই সব আয়াতে সিজদা দেয়া ওয়াজিব। অন্যথায় ওয়াজিব তরকের গোনাহ হবে। (সাফওয়াতুত তাফাসীর: ২/১৭৯, কুরতুবী; ১১/১০২, সিরাজিয়া: ১৪, মাযহারী: ১০/২০৪)
সমস্যা: আমরা যারা হেফজখানায় চাকরী করি আমাদের প্রতিদিন অনেক আয়াতে সিজদাহ শুনতে হয়। একটা আয়াত অনেকবারও শুনতে হয়; আমার জানার বিষয় হলো, একটি আয়াতে সিজদাহ যতবার শুনি ততবার কি সিজদাহ দেওয়া ওয়াজিব হবে?
শফিকুল মুস্তফা
আনোয়ারা, চট্টগ্রাম
সমাধান: এক মজলিসে যদি একাধিক আয়াতে সিজদাহ পড়া হয় তাহলে কতবার পড়া বা শুনা হয়েছে তা দেখার বিষয় না বরং ছাত্ররা মোট কয়টি আয়াতে সিজদা পাঠ করেছে তা দেখতে হবে। যতটি আয়াতে সিজদা পাঠ করবে ততবার সিজদা দিতে হবে। কিন্তু প্রত্যেকবার যদি বৈঠক ভিন্ন হয় এবং তিলাওয়াতকারীও ভিন্ন হয় তাহলে যতবার পড়া হবে ততবার সিজদা দিতে হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবু শায়বা: ৪২২৯, তাহতাভী: ৪৯৪, তাতারখানিয়া: ২/৩৭০, বাদায়িউস সানায়ি’: ১/১৮১)
মোবাইল-ইন্টারনেট
সমস্যা: ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল ক্রয়-বিক্রয় এবং ব্যবহার জায়েয আছে কি?
সমাধান: ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল দ্বারা যেহেতু বিভিন্ন জড়বস্তুর ছবি তোলা যায় তাই মুতলাকান এর ক্রয়-বিক্রয়কে নাজায়েয বলা যাবে না বরং তার হুকুম তার ব্যবহার হিসেবে হবে। এর মাধ্যমে প্রাণীর ছবি তোলা হলে বা সিনেমা, নাটক ও বিভিন্ন অশ্লীল ছবি দেখা উদ্দেশ্য হলে তার ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবহার নাজায়েয। আর প্রাণহীন জড় বস্তুর ছবি তোলা হলে তাতে কোন সমস্যা নেই। (কিতাবুন নাওয়াযেল: ১৭/৯৯, ইমদাদুল ফতওায়া: ৪/২৪৯)
সমস্যা: মোবাইলে ক্রিকেট খেলা দেখা জায়েয হবে কি?
সমাধান: মোবাইলে ক্রিকেট ম্যাচ দেখা মানে অযথা ও অনর্থ সময় নষ্ট করা। পাশাপাশি খেলার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন ধরনের অ্যাড ও কুরুচিপূর্ণ নাজায়েয ছবি দেখানো হয়। যার ফলে গোনাহের কাজে লিপ্ত হতে হয়। (তাই মোবাইলে ক্রিকেট খেলা দেখা গোনাহ থেকে খালি নয়।) তাই মোবাইলে কোন প্রকারের ছবি তোলা জায়েয হবে না। (তিরমিযী: ২২১৭, কিতাবুন নাওয়াযেল: ১৭/৮৯)
সমস্যা: মোবাইলে গেম ডাউনলোড করা জায়েয আছে কি?
সমাধান: মোবাইলে প্রাণী বা জড়বস্তুর গেম ডাউনলোড করে খেলাতে যেহেতু সময়, শ্রম ও অর্থ নষ্ট হয় তাই তা থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।
সমস্যা: মোবাইল, কম্পিউটারে গেম খেলা জায়েয আছে কি?
সমাধান: সাধারণত খেলার মধ্যে নেশা থাকে, সময় নষ্ট হয়; গেম খেলাও তার ব্যতিক্রম নয়। সুতরাং গেম খেলায় মশগুল থাকার কারণে যদি ফরজ ছুটে যায় তাহলে তা নাজায়েয ও হারাম হবে। আর যদি ওয়াজিব ছুটে যায় তাহলে তা মাকরুহে তাহরীমী হবে। সুন্নত ছুটে গেলে মাকরুহে তানজিহী হবে। কোন কিছু না ছুটলেও যেহেতু গেম খেলাতে দিন, দুনিয়ার কোন উপকার দেখা যাচ্ছে না তাই তা নাজায়েয হওয়া চাই। বর্তমানে ও ভবিষ্যতে আবিষ্কৃত কোন গেমের মধ্যে যদি দিন-দুনিয়াবীর কোন উপকার থেকে থাকে তখন ওই ধরনের গেম খেলাতে কোন ধরনের হুকমে শরয়ী নষ্ট না হলে তা জায়েয হবে।
সমস্যা: বিনাপ্রয়োজনে প্রাণীর ছবি বিশিষ্ট এসএমএস পাঠানো জায়েয হবে কি?
সমাধান: প্রাণীর ছবিবিশিষ্ট এসএমএস পাঠানো নাজায়েয। (কিতাবুন নাওয়াযেল: ১৭/১০৭, শামী: ৯/৫৬)
সমস্যা: মোবাইলে শেয়ারিটের মাধ্যমে ছবি, ফিল্ম, গান ইত্যাদি শেয়ার করা জায়েয আছে কি?
সমাধান: এক মোবাইল থেকে অন্য মোবাইলে ছবি বিশিষ্ট প্রাণীর ম্যাসেজ, ফিল্ম, গান ইত্যাদি প্রেরণ করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও মারাত্মক গোনাহের কাজ। (সূরা লোকমান: ৬, মাজমাউল কবীর: ১১৪৭৮, শামী: ৯/৫০২)
সমস্যা: মোবাইলের স্ক্রিনে পিকচার সেট করা জায়েয আছে কি?
সমাধান: না, এমনকি মোবাইলে ব্যক্তির ছবিসহ bv¤^vi সেট করা যাতে করে সে যখন তাকে কল দেবে তখন তার ছবি ফোন দাতার স্কিনে ভেসে উঠবে। এমনটি করাও জায়েয নেই।
সমস্যা: আজনবী ছেলে-মেয়ের মোবাইলে বন্ধুত্ব স্থাপন করে পরস্পর কথাবার্তা ও বন্ধুসুলভ আচরণ জায়েয আছে কি?
সমাধান: অপরিচিত ছেলে-মেয়ে মোবাইলের মাধ্যমে বন্ধুত্ব স্থাপন এবং বন্ধুত্বপূর্ণ কথা-বার্তা ও আচার-আচরণ সম্পূর্ণ হারাম। যা মারাত্মক পর্যায়ের গোনাহ পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। (কিতাবুন নাওয়াযেল: ১৭/১০৫, হাশিয়ায়ে তাহতাবী: ২৪২)
সমস্যা: আজনবী ছেলে-মেয়ে মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে কথা বলা জায়েয হবে কি?
সমাধান: ম্যাসেজে কথা বলা সামনাসামনি কথা বলার হুকুমে। তাই যেমনিভাবে তাদের জন্য সরাসরি কথা বলা নাজায়েয তেমনিভাবে ম্যাসেজের মাধ্যমেও কথা বলা নাজায়েয। (কিতাবুন নাওয়াযেল: ১৭/১০৭, শামী: ৯/৫৩০)
সমস্যা: মোবাইল কাস্টমার কেয়ারে মহিলা কর্মকর্তা ফোন রিসিভ করলে তখন তাদের সাথে কথা বলা জায়েয হবে কি?
সমাধান: বিশেষ কোন প্রয়োজন ছাড়া আজনবী মহিলার সাথে কথা বলা জায়েয নেই। তবে বিশেষ প্রয়োজন ও জরুরতের কারণে প্রয়োজন অনুযায়ী কথা বলার সুযোগ আছে। তাই কাস্টমার কেয়ারে আজনবী মহিলার সাথে কথা বলার বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিলে প্রয়োজন অনুযায়ী কথা বলা যেতে পারে। (কিতাবুন নাওয়াযেল: ১৭/১১১, শামী: ২/৭০ ও ৭৭)
সমস্যা: অনেক সময় ফোনদাতা সম্পর্কে জানা যায়নি সে মাহরাম নাকি গাইরে মাহরাম। তখন মহিলাদের জন্য ফোন রিসিভ করে কথা বলা জায়েয আছে কি?
সমাধান: উত্তম হচ্ছে মহিলাগণ ফোন রিসিভ করে নিজে কিছু না বলে অপরপ্রান্তের ব্যক্তি কিছু জানতে চাইলে স্বাভাবিক কণ্ঠে শুধু তার কথার জবাব দেবে। যদি বুঝতে পারে যে, অপরপ্রান্তে তার মাহরাম কেউ বা অপর প্রান্তেও কোন মহিলা তাহলে তার জন্য সালাম-কালাম করতে ও কথা-বার্তা বলাতে কোন সমস্যা নেই। (কিতাবুন নাওয়াযেল: ১৭/১১৩, শামী: ৯/৫৩০)
সমস্যা: মসজিদে স্থানীয় লোকদের জন্য মসজিদের বিদ্যুৎ ব্যবহার করে নিজস্ব মোবাইল চার্জ দেওয়া জায়েয হবে কি?
সমাধান: স্থানীয় লোকদের জন্য মসজিদের কারেন্ট ব্যবহার করে নিজস্ব মোবাইল চার্জ দেওয়া জায়েয নেই। তাই কেউ দিয়ে ফেললে তার বিনিময় (বিদ্যুৎ বিল হিসাবে কিছু টাকা) দিয়ে দেওয়া জরুরি। (কিতাবুন নাওয়াযেল: ১৭/১০৩, আলমগীরী ১/১১০, শামী: ৯/৫৬৪)
সমস্যা: মুসাফিরের জন্য মসজিদের বিদুতে মোবাইল চার্জ দেওয়া জায়েয হবে কি?
সমাধান: মুসাফিরের জন্যও মসজিদে মোবাইল র্চাজ দেয়া জায়েয নেই। তবে প্রয়োজনে মসজিদের কারেন্টে মোবাইল চার্জ দিলে মসজিদ ফান্ডে কিছু টাকা দিয়ে দিতে হবে। কেননা, এটি নামাযের অতিরিক্ত প্রয়োজন। তাই তার বিনিময় দিয়ে দেওয়া জরুরি। (কিতাবুন নাওয়াযেল: ১৭/১০১)
সমস্যা: বিভিন্ন জনপদ তথা এয়ারপোর্ট, রেলস্টেশন, যাত্রী ছাউনি ইত্যাদি জনপদে মুসাফির ও অন্যান্যদের জন্য মোবাইল চার্জ দেয়া জায়েয আছে কি?
সমাধান: এয়ারপোর্ট, রেলস্টেশন, যাত্রী ছাউনি ইত্যাদি জনপদে মুসাফির ও অন্যান্যদের জন্য সেখানের কারেন্টে মোবাইল চার্জের বিষয়টির হুকুম নির্ভর করে কর্তৃপক্ষের অনুমতি থাকা-না থাকার ওপর। অনুমতি থাকলে জায়েয, না থাকলে নাজায়েয। তবে এসকল স্থানে সাধারণত অনুমতি দেওয়া থাকে। (রুহুল মাআনী ১০/৩২৩, কিতাবুন নাওয়াযেল: ১৭/১০৩)
সমস্যা: ভুল ফ্লেক্সির মাধ্যমে কারো মোবাইলে টাকা এসে গেলে এ টাকা খরচ করা জায়েয হবে কি না? এ টাকার ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কী? (এর মালিক তো জানা নেই।) তাই এ ব্যাপারে করণীয় কী?
সমাধান: ভুলবশত ফ্লেক্সিলোড এসে গেলে তা ব্যবহার করা জায়েয হবে না। এ টাকা মূল মালিককে পৌঁছে দিতে চেষ্টা করতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যে নাম্বার থেকে ভুলে এসেছে সে নাম্বার থেকে কল করে থাকে। এমনটি হলে তো মূল মালিকের সন্ধান মিলেই গেল। কিন্তু প্রেরকের সন্ধান যদি না পাওয়া যায় তবে প্রাপক যে অপারেটরের মোবাইল ব্যবহার করে সেই অপারেটরের সাহায্যে মূল মালিকের নাম্বার সহজেই জানা যায়। তা এভাবে যে, ফ্লেক্সিলোড ম্যাসেজের শেষে প্রেরকের আইডি নাম্বার লিখা থাকে। মোবাইল অপারেটর থেকে ওই আইডি নাম্বারের ঠিকানা এবং মোবাইল সংগ্রহ করা যাবে। অবশ্য এ অনুসন্ধানের জন্য যা খরচ হবে তা বাদ দিয়ে বাকী টাকা পাঠালেই চলবে। (আলবাহরুর রায়িক: ৫/১৫২, তাতারখানিয়া: ৫/৫৮৫, বাদায়িউস সানায়ি’: ৫ / ২৯৮)
সমস্যা: যার নাম্বারে ভুলক্রমে ফ্লেক্সি চলে গেছে দোকানী তাকে কিছু ছাড় দিয়ে বাকীটা পাঠাতে বলে। জানতে চাই, এ ছাড় গ্রহণ করা। সেই ব্যক্তির জন্য জায়েয হবে কি না?
সমাধান: এ ছাড় যদি সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেয় তবে তা নেওয়া জায়েয। কিন্তু ছাড় না দিলে বাকিটাও পাঠাবে না এ আশংকা করে যদি কিছু ছাড় দিতে চায় তবে তা গ্রহণ করা যাবে না। তাই সন্তুষ্টচিত্তে দিচ্ছে কিনা তা যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন। (আল-বাহরুর রায়িক: ৩/১৫৪, আল- মাবসুত: ১১/১০, আর-ররুল মুখতার ৪/২৮০)
সমস্যা: কোনো কোনো সময় কোম্পানির কম্পিউটারের ভুলের কারণে মোবাইলে ভুল ব্যালেন্স দেখায়। টাকা কম থাকলে বেশি দেখায়, আবার ব্যালেন্স না থাকলেও ভুলে ব্যালেন্স উঠে থাকে। কখনো ব্যলেন্সে কোনো টাকা দেখা যায় না ঠিকই, কিন্তু অন্যের কাছে আউট গোয়িং কল হয়। এই সুযোগ পেয়ে অনেকে অনায়াসে ব্যবহার করে থাকে। এটা জায়েয হবে কি না? যদি জায়েয না হয় তবে এভাবে ব্যবহৃত বিল আদায়ের উপায় কি? এটাকা কি কোম্পানীকেই দিতে হবে? নাকি সাদকা করে দিলে চলবে?
সমাধান: উল্লিখিত ক্ষেত্রে নিজের জমা টাকার বেশি খরচ করা জায়েয হবে না। বরং এ ভুলের কথা কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে ফোন করে অবহিত করা জরুরি। আর এ ক্ষেত্রে নিজের ব্যালেন্সে জমা টাকার অতিরিক্ত খরচ করে থাকলে এটিও কাস্টমার কেয়ারে অবহিত করতে হবে। যেন তারা তত টাকা ব্যালেন্স থেকে কেটে নেয়। এ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত কলের সমপরিমাণ টাকা ব্যালেন্স থেকে কেটে নিলেই দায়মুক্ত হয়ে যাবে। যেহেতু কোম্পানিকে ব্যবহৃত কলের বিল পৌঁছানো সম্ভব তাই এ টাকা সাদকা করা যথেষ্ট নয়। (আল-বাহরুর রায়িক: ৮/১০৯, খুলাসাতুল ফাতাওয়া: ৪/২৭২, আদ-দুররুল মুখতার: ৬/১৭৯)
সমস্যা: মোবাইল কোম্পানি থেকে যে চার্জ ঘোষণা করা হয় কোনো কোনো সময় ঘোষিত নির্ধারিত বিল থেকে বেশি কেটে নেয়। বা পোষ্ট পেইডে বেশি বিল করে। এটা জায়েয কি না? এ ক্ষেত্রে করণীয় কী?
সমাধান: প্রতিশ্রুত বিলের বেশি নেওয়া-ও জায়েয হবে না। এমনটি হলে কাস্টমার কেয়ারে অভিযোগ করতে হবে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এ ভুল জানতে পারলে তা শোধরে নেয়।
সমস্যা: যাকাতের বছরের শেষদিন যদি প্রি-পেইড মোবাইলের ব্যালেন্সে টাকা থাকে তবে এ টাকার যাকাত দিতে হবে কি না?
সমাধান: প্রি-পেইড মোবাইলের ব্যালেন্সে যে টাকার অঙ্ক দেখা যায় এটা মূলত টাকা নয়। বরং ওই টাকার সমপরিমাণ আউটগোয়িং সেবা। আর ব্যালেন্সে অবস্থিত টাকা যেহেতু মূলত টাকা নয়, বরং ক্রয়কৃত একটি সেবা পণ্য। যা ব্যবহারের উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। তাই অন্যান্য ব্যবহৃত সম্পদের ন্যায় ব্যালেন্সে অবস্থিত সম্পদের যাকাত দিতে হবে না। (হিদায়া: ১/১৮৬, তাতারখানিয়া: ২/২৪৫, হিন্দিয়া: ১/১৭২)
সমস্যা: অনেকে বলে মসজিদে প্রবেশের আগেই নাকি মোবাইলের রিং বন্ধ করে দেওয়া জরুরি। আসলে কি তাই? যদি কেউ রিং বন্ধ করে দিয়ে শুধু ভাইব্রেশন দিয়ে রাখে তাতে কোনো ক্ষতি আছে কি না?
সমাধান: নামায অন্য সকল ইবাদত থেকে ভিন্ন ধরণের ইবাদত। এ ইবাদতটি হল সরাসরি আল্লাহ তাআলার দরবারে হাজিরা দিয়ে তাঁর মহান স্বত্ত্বার সামনে দন্ডায়মান হয়ে তাঁর সাথে কথোপকথনের এক অপূর্ব মুহূর্ত। এ কারণেই নামায অবস্থায় একাগ্রতা ও খুশুখুযুর প্রতি যেভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে অন্য কোনো ইবাদতের বেলায় তেমনটি করা হয়নি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘সেসব মুমিন সফলকাম, যারা নিজেদের নামাযে বিনয়নম্র।’ (সূরা মুমিনুন: ১-২) তাই মসজিদে প্রবেশের আগেই মোবাইল একেবারে বন্ধ না করলেও অন্তত রিংটোন বন্ধ করে দেওয়া আবশ্যক। কারণ, মসজিদে রিং বেজে উঠলে নামাযীদের খুশুখুযু নষ্ট হবে। আর নামাযের উদ্দেশ্যে প্রবেশকারীর জন্য মোবাইলে ভাইব্রেশন দিয়ে রাখা ঠিক নয়। কারণ, ভাইব্রেশন দিয়ে রাখলেও কল আসলে নামাযীর মনোনিবেশ নষ্ট করে। এতে অন্যের নামাযের ক্ষতি না হলেও নিজের নামাযের খুশুখুযু নষ্ট হয় বটে। তাছাড়া মোবাইলটি তখন পার্শ্ববর্তী মুসল্লীর শরীরে স্পর্শ করলে তারও নামাযের একাগ্রতা নষ্ট হবে। তাই ভাইব্রেশন দিয়ে রাখাও ঠিক নয়, বরং হয়ত সাইলেন্ট করে রাখবে, কিংবা একেবারে বন্ধ করে দেবে। সবচেয়ে উত্তম হলো মোবাইল সাথে না রাখা।
সমস্যা: কোনো কারণে যদি নামাযের আগে মোবাইলের রিং বন্ধ করা না হয় আর নামায পড়াবস্থায় রিং বেজে উঠে তখন করণীয় কী? নামাযে থেকে রিং বন্ধ করে দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা আছে কি না? নামায নষ্ট না করে রিং বন্ধ করার কোনো সুযোগ থাকলে বিস্তারিত জানতে চাই। এ ছাড়া কিভাবে বন্ধ করলে নামায ভাঙ্গে বা ভাঙ্গে না তাও জানাবেন।
সমাধান: যদি জামাত চলাকালীন কোনো মুসল্লীর মোবাইল বেজে ওঠে তাহলে সে ক্ষেত্রে করণীয় ও লক্ষণীয় বিষয়সমূহ হল নিম্নরূপ:
ক. দুই হাত ব্যবহার না করে নামাযের আপন অবস্থাতে থেকেই এক হাতের সাহায্যে মোবাইল পকেটে রেখেই কোনো বাটন চেপে রিং বন্ধ করে দেবে। আর পকেট থেকে বের করার প্রয়োজন হলেও এক হাত দ্বারা-ই করবে। মোবাইল বের করে পকেটের কাছে রেখেই না দেখে দ্রুত বন্ধ করে পকেটে রেখে দেবে।
জেনে রাখা প্রয়োজন যে, নামাযে প্রয়োজনে এক হাত কোনো কাজে ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। যেমন, টুপি ওঠানোর জন্য, জামার হাতা নামানোর জন্য, সিজদার স্থানের কংকর সরানোর জন্য, শরীরের কোন স্থান বিশেষ প্রয়োজনে চুলকানোর জন্য ইত্যাদি। (তাতারখানিয়া: ১/৫৬৪, শরহুল মুনিয়া: ৪৪৩, হিন্দিয়া: ১/১০৫, খুলাসাতুল ফাতাওয়া: ১/১২৯, রদ্দুল মুহতার: ১/৬২৪, শরহে নববী ১/২০৫)
খ. নামাযে মোবাইল বন্ধের জন্য একসাথে দুই হাত ব্যবহার করা যাবে না। যদি এক সাথে দুই হাত ব্যবহার করে তবে নামায নষ্ট হয়ে যাবে।
গ. এক হাত দ্বারা বন্ধ করতে গিয়ে মোবাইল পকেট থেকে বের করে দেখে দেখে বন্ধ করা যাবে না। কারণ, এমনটি করলে যদিও দুই হাত ব্যবহার হচ্ছে না, কিন্তু মোবাইল দেখে দেখে বন্ধ করা অবস্থায় এ ব্যক্তিকে কেউ দেখলে সে নামাযে আছে বলে মনে করবে না। আর নামায অবস্থায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে নামায ভেঙে যায়। তাই নামায অবস্থায় মোবাইল দেখে দেখে বন্ধ করার কোন সুযোগ নেই। (রদ্দুল মুহতার: ১/২৬৪-২৬৫, আলবাহরুর রায়িক: ২/১১-১২)
ঘ. সিজদাবস্থায় রিং বেজে উঠলে কেউ কেউ সিজদা থেকে প্রায় বসে গিয়ে মোবাইল বের করে বন্ধ করে থাকে। অথচ তখনো ইমাম-মুসল্লী সকলেই সিজদাতেই থাকে। নামাযের এ অবস্থা থেকে মোবাইল বন্ধের জন্য বসে যাওয়া অতঃপর মোবাইল বন্ধ করাতে তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় ব্যয় না হলেও নামায ভেঙে যাবে। কারণ, যেখানে দুই হাতের কাজ নামায ভঙ্গের কারণ বলা হয়েছে সেখানে পুরো শরীরকে নামাযের অবস্থা থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা নিঃসন্দেহে নামায ভঙ্গের কারণ হবে। এ ছাড়া এ অবস্থায় কোনো আগন্তুক তাকে দেখলে সে নামাযে নেই বলেই মনে করবে। এটিও আমলে কাসীরের অন্তর্ভুক্ত। যা নামায নষ্টকারী।
ঙ. তিনবার বিশুদ্ধভাবে ‘সুবহানা রাবিবয়াল আযীম’ বা ‘সুবহানা রাবিবয়াল আ’লা’ বলা যায় এ পরিমাণ সময়ের ভিতর উপরন্তু দুইবার পর্যন্ত এক হাতের সাহায্যে উপরোক্ত ‘ক’ তে উল্লেখিত নিয়মে রিং বন্ধ করা যাবে। এ সময়ের ভিতর দুইবারের বেশি বন্ধ করা যাবে না। যদি করে তবে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। হ্যাঁ, একবার বা দুই বার বন্ধ করার পর তিন তাসবীহ পরিমাণ বিলম্বে আবার রিং বেজে উঠলে তখন বন্ধ করা যাবে। মোটকথা তিন তাসবীহ বলা যায় এ সময়ের ভিতর তিনবার রিং বন্ধের জন্য এক হাতও ব্যবহার করা যাবে না। এতে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। (খুলাসাতুল ফাতাওয়া: ১/১২৯, রদ্দুল মুহতার: ১/৬২৫, আহসানুল ফাতাওয়া: ৩/৪১৮-৪১৯)
সমস্যা: মোবাইল প্যান্টের পকেটে থাকলে তা বের করে বন্ধ করার জন্য দুই হাত ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। তদ্রূপ ফোল্ডিং সেট হলেও রিং বা ফোন বন্ধ করতে কখনো কখনো দুই হাত ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। অথচ দুই হাত ব্যবহার করলে নামায ভেঙে যায়। তাই এক্ষেত্রে কি নিজের নামায নষ্ট করে হলেও রিং বন্ধ করবে? না কি মুসল্লীদের নামাযে বিঘ্ন হলেও নিজের নামায নষ্ট করা বা ছেড়ে দেওয়া যাবে না? সঠিক সমাধান কী? কেউ কেউ এক্ষেত্রে মুসল্লীর নামায ছেড়ে দেওয়া বা নামায নষ্ট করার অনুমতি দেয় না। বরং এ পরিস্থিতিতেও নামায নষ্ট করা অবৈধ বলে।
সমাধান: নামাযে খুশুখুযুর গুরুত্ব অনেক বেশি। কোন নামাযীর মল-মূত্রের বেগ হওয়ার দরুণ খুশুখুযু বিঘ্নিত হলে তার জন্য নামায ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফিকহের কিতাবাদিতে এ ক্ষেত্রে নামায ছেড়ে দেওয়াকে উত্তম বলা হয়েছে। কেউ কেউ ওয়াজিবও বলেছেন। তাহলে নামায অবস্থায় মোবাইল বেজে উঠলে যার মোবাইল শুধু তার নামাযেরই বিঘ্ন ঘটায় না বরং আশপাশের মুসল্লীদেরও খুশুখুযু বিঘ্নিত হয়। সুতরাং এক্ষেত্রে নামায নষ্ট না করে বন্ধ করা সম্ভব না হলে নামায ছেড়ে দিয়ে হলেও মোবাইল বন্ধ করা জায়েয তো বটেই বরং এমনটি করাই কর্তব্য। আর রিংটোন যদি গান বা মিউজিকের হয় তবে এর খারাবিতো আরো অধিক। সুতরাং এক্ষেত্রে নামায ছেড়ে দেওয়া না জায়েয হওয়া সম্পর্কিত প্রশ্নোক্ত কথাটি ঠিক নয়। সুতরাং এ ধরণের পরিস্থিতিতে নামাযে থেকে উপরোক্ত (পূর্বে উল্লিখিত প্রশ্নোত্তরের ‘ক’-এ উল্লেখিত) নিয়ম অনুযায়ী একহাত দিয়ে বন্ধ করা সম্ভব হলে তাই করবে। কিন্তু তা সম্ভব না হলে নিজের নামায ছেড়ে দিয়ে হলেও রিং বন্ধ করে দেবে। অতঃপর মাসবুকের ন্যায় আবার নতুন করে জামাতে শরীক হবে। (তাহতাবী আলাল মারাকী-১৯৮, হিন্দিয়া: ১/১০৭, আল-বাহরুল রায়িক: ১/২৮৭, রদ্দুল মুহতার: ১/৬৫৪-৬৫৫)
সমস্যা: ইন্টারনেট ব্যবহার করা জায়েয আছে কি?
সমাধান: ইন্টারনেট বর্তমান সমগ্র দুনিয়াকে গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্বগ্রামে পরিণত করেছে। এর মাধ্যমে যেমনিভাবে মানুষ দুনিয়ার এক প্রান্তে বসে সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে ইসলামের দাওয়াত তথা তাওহীদ, রিসালাত, আখেরাতের কথা তুলে ধরে তা প্রচার করতে পারে তেমনিভাবে মানুষকে ডাকতে পারে কুফর, শিরক, গোমরাহী ও গোনাহের দিকে। তাই তার হুকুম ফুকাহায়ে কেরামের স্বীকৃত কায়দা কর্ম উদ্দেশ্যের তাবে হয় হিসাবে হবে। কেউ যদি তাকে ভালো উদ্দেশ্যে ভালো কাজে ব্যবহার করে তাহলে তা জায়েয। আর যদি খারাপ উদ্দেশ্যে বা মন্দ কাজে ব্যবহার করে তাহলে তা ব্যবহার করা হারাম ও গোনাহের কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে।
সমস্যা: আমার একটি ইন্টারনেট ক্যাফে সেন্টার আছে। যেখানে গ্রাহকদেরকে টাকার বিনিময় কম্পিউটার ও নেট ব্যবহারের সুযোগ দেই। গ্রাহক নিজের ভালো-খারাপ সর্বপ্রকার কাজে-ই তা ব্যবহার করতে পারে। আমার জানার বিষয় হচ্ছে, ইন্টারনেট ক্যাফে সেন্টার চালানো এবং তা থেকে উপার্জিত অর্থ আমার জন্য হালাল হবে কি?
সমাধান: যদি তার অবৈধ, খারাপ, নোংরা ও গোনাহমূলক ব্যবহার রোধ করে ইন্টারনেট ক্যাফে সেন্টার চালানো হয় তাহলে তা চালানো জায়েয হবে এবং তা থেকে উপার্জিত ইনকামও হালাল হবে। অন্যথায় খারাপ ও গোনাহের কাজে ব্যবহার করা হলে গোনাহের কাজে সহযোগিতার কারণে তা উচিত হবে না। (সূরা আল-মায়িদা: ২, জাওয়াহিরুল ফিকহ: ২/৪৪৭, কিতাবুন নাওয়াযেল: ১৭/১০৬)
সমস্যা: ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ ইত্যাদি ব্যবহার করা জায়েয আছে কি?
সমাধান: সাধারণত ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপকে খবরা-খবর ছড়ানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে। তাই যদি তার ব্যবহার ভালো উদ্দেশ্যে ও ভালো কাজে হয়ে থাকে তাহলে তা ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই। আর যদি খারাপ উদ্দেশ্যে ও খারাপ কাজে কুরুচিপূর্ণ ছবি ও কুরুচিপূর্ণ কথা ইত্যাদি ছড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হয় তাহলে তা নাজায়েয। (কিতাবুন নাওয়াযেল: ১৭/১১৮)
সমস্যা: ইয়াহু, ম্যাসেঞ্জার, রেডিবুল ইত্যাদি অ্যাপসগুলো ব্যবহার জায়েয আছে কি?
সমাধান: উল্লিখিত প্রোগ্রামগুলো সাধারণত ই-মেইল এবং চেটিং করার জন্য ব্যবহার হয়। কিন্তু বর্তমানে এগুলোতে আজনবী ছেলে-মেয়ে ফ্রেন্ডশিপের মাধ্যমে বন্ধুত্ব স্থাপন করে ভালোবাসা আর প্রেমে জড়িয়ে পরস্পর অশ্লীল বাক্যালাপ এবং উলঙ্গ ও কুরুচিপূর্ণ ছবি আদান-প্রদান করে যা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম। এজাতীয় কাজে এসব প্রোগ্রাম ব্যবহার করলে এগুলোর ব্যবহার নাজায়েয ও হারাম হবে। অন্যথায় ফি-নাফসী এগুলোর ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই। (শামী: ৯/৫১৯ ও ৩০, মুহাক্কিক মুদাল্লিল জাদিদ মাসায়েল: ৪৮০)
সমস্যা: সাধারণত মেডিকেলের পুস্তকাদি অনেক দামি হয়ে থাকে। আমাদের মেডিকেলের একজন গরীব ছাত্র সে স্বত্ত্বাধিকার সংরক্ষিত (বিনা অনুমতিতে পড়া নিষিদ্ধ এমন) ডাক্তারি বই প্রকাশনা কোম্পানির পাসওয়ার্ড চুরি করে নেটে ডাউনলোড করে নিজে পড়ে এবং অন্যদের পড়ার জন্য আম (ভাইরাল) করে দেয়। আমার জানার বিষয় হচ্ছে, তার জন্য এভাবে কোম্পানির পাসওয়ার্ড চুরি করে ডাউনলোড করা জায়েয হচ্ছে কি? ভাইরালের পর অন্যরা ডাউনলোড করে পড়তে পারবে কি?
সমাধান: কোম্পানির স্বত্ত্বাধিকার সংরক্ষিত পুস্তিকাদি কোম্পানির বিনা অনুমতিতে পাসওয়ার্ড চুরি করে ডাউনলোড করে নিজে পড়া এবং অন্যদের পড়ার সুবিধার্থে ভাইরাল করে দেয়া জায়েয নয়। তবে ভাইরালের পর অন্যদের জন্য ডাউনলোড করে পড়াতে কোন সমস্যা নেই (যেহেতু তখন আর হক তলফী হচ্ছে না)। হক তলফীর যত গোনাহ সবগুলো ভাইরালকারীর ওপরই বর্তাবে। (শরহুল মাজাল্লা: ১/৬০-৬১, কাসেমিয়া: ২৪/৭০০)
সমস্যা: কোন কম্পিউটার বা ইন্টারনেটের (কোডওয়াড বা পাসওয়ার্ড দ্বারা) সংরক্ষিত কোন ব্যক্তি, সংস্থা, কোম্পানি প্রতিষ্ঠা ও সরকারের গোপন বিষয়ে গোয়েন্দাগিরি করা জায়েয আছে কি?
সমাধান: না, (সাধারণত) এসব জায়েয নেই, সম্পূর্ণ হারাম; এ জাতীয় কাজ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।