হাকীমুল ইসলাম আল্লামা মুফতি আবদুল হালীম বোখারী
মুহতামিম, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
করোনা ভাইরাস তথা কোভিড-১৯ গোটা বিশ্বে একটি আতঙ্কের নাম। পৃথিবীর ছোট-বড়, উন্নত-স্বল্পোন্নত এমন কোন দেশ নেই যেখানে এ সূক্ষ্ম জীবানু হানা দেয়নি। পৃথিবীর দুই শতাধিক দেশে প্রায় অর্ধকোটি মানুষ আক্রান্ত। সংক্রমণ বাড়ছে প্রতি নিয়ত। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। কথিত উন্নত বিশ্বের প্রযুক্তি, জ্ঞান-বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা ও মানুষের অসহায়ত্বের কথা আরো পরিস্কার হয়ে উঠলো। বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের গবেষণা ও পরামর্শ কোন ভাবেই কাজে আসছে না। Covid-19 এর ভ্যাকসিন তৈরির জন্য দৌড়-ঝাঁপ চোখে পড়ার মতো। প্রশ্ন হলো, করোনার ভ্যাকসিন তৈরি হলেও নতুন অন্য কোন ভাইরাস হানা দেবে না তার নিশ্চয়তা কী? তাই, আসুন, বিশ্বজাহানের প্রতিপালক মহান রব্বুল আলামীনের একমাত্র মনোনীত জীবন বিধান ইসলাম থেকেই মুক্তির উপায় খুঁজে বের করি। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, আল্লাহর দেয়া বিধান ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রদর্শিত পথেই বান্দার স্বস্তি ও শান্তি নিহিত।
কুরআন-হাদীসের আয়নায় বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হলে আমরা সহজেই উপলব্ধি করতে পারবো যে, পৃথিবীর যে কোন বিপর্যয়ের জন্য মানুষের অপর্কম দায়ী। আল্লাহ তাআলা বলেন,
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ اَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيْقَهُمْ بَعْضَ الَّذِيْ عَمِلُوْا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ۰۰۴۱
‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে; যার ফলে তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান। যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সূরা আর-রূম: ৩০)
হোক সে অপরাধ ব্যক্তিগত বা সামাজিক। পবিত্র কুরআন বিভিন্ন জাতির ওপর নেমে আসা শাস্তির চিত্র তুলে ধরে বলে, كُلًّا اَخَذْنَا بِذَنْۢبِهٖۚ ۰۰۴۰ (আমি প্রত্যেককে তার কৃত অপরাধের কারণে পাকড়াও করেছি)।
আল্লাহ পাক অসীম প্রজ্ঞায় ভিন্ন ভিন্ন শাস্তি ও শাস্তির মাত্রা অবলম্বন করেন। তবে এমন কিছু গোনাহ ও সামষ্টিক অপরাধ আছে, যার দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তি পূর্ব ঘোষিত। প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
«لَـمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِيْ قَوْمٍ قَطُّ، حَتَّىٰ يُعْلِنُوا بِهَا، إِلَّا فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُوْنُ، وَالْأَوْجَاعُ الَّتِيْ لَـمْ تَكُنْ مَضَتْ فِيْ أَسْلَافِهِمُ الَّذِيْنَ مَضَوْا، وَلَـمْ يَنْقُصُوا الْـمِكْيَالَ وَالْـمِيْزَانَ، إِلَّا أُخِذُوْا بِالسِّنِينَ، وَشِدَّةِ الْـمَئُوْنَةِ، وَجَوْرِ السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ، وَلَـمْ يَمْنَعُوْا زَكَاةَ أَمْوَالِـهِمْ، إِلَّا مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ، وَلَوْلَا الْبَهَائِمُ لَـمْ يُمْطَرُوْا، وَلَـمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللهِ، وَعَهْدَ رَسُولِهِ، إِلَّا سَلَّطَ اللهُ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِّنْ غَيْرِهِمْ، فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ، وَمَا لَـمْ تَحْكُمْ أَئِمَّتُهُمْ بِكِتَابِ اللهِ، وَيَتَخَيَّرُوا مِمَّا أَنْزَلَ اللهُ، إِلَّا جَعَلَ اللهُ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ».
‘যখন কোনো সম্প্রদায়ের মাঝে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়বে এমনকি তারা সেগুলো প্রচার করতে থাকবে, তখন তাদের মধ্যে তাউন (প্লেগ) মহামারি আকারে দেখা দেবে এবং এমন সব ব্যাধি ও কষ্ট ছড়িয়ে পড়বে, যা আগের মানুষদের মাঝে দেখা যায়নি। যখন কোনো সম্প্রদায় ওজন ও মাপে কম দেবে তখন তাদের ওপর নেমে আসবে দুর্ভিক্ষ, কঠিন অবস্থা এবং শাসকের যুলুম-অত্যাচার। যখন কোনো কওম তাদের সম্পদের যাকাত আদায় করবে না তখন তাদের প্রতি আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। যদি জন্তু-জানোয়ার না থাকত তাহলে আর বৃষ্টিপাত হতো না। আর যখন কোনো জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে তখন আল্লাহ তাদের ওপর কোনো বহিঃশত্রু চাপিয়ে দেবেন… যখন কোনো সম্প্রদায়ের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ফায়সালা করবে না আর আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানসমূহের কিছু গ্রহণ করবে আর কিছু ত্যাগ করবে তখন আল্লাহ তাদেরকে পরস্পর যুদ্ধ বিগ্রহ ও বিবাদে জড়িয়ে দেবেন।’ (ইবনে মাজাহ: ৪০১৯)
করোনা একটি মারত্মক ব্যাধি। এ রোগের সাথে মানুষ আগে পরিচিত ছিল না। যেমন পরিচিত ছিল না সার্স, সুয়াইন ফ্লু, ম্যাড কাউ ইত্যাদির সাথে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের সুবাদে অশ্লীলতা মুহূর্তে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। পৃথিবীর বহু দেশে আবার আইনগত বৈধতা পাচ্ছে। সমাজ চোখ বুঝে সবই লুফে নিচ্ছে। প্রতিবাদী ও হিতাকাঙ্ক্ষী কণ্ঠকে উল্টো বাঁকা চোখে দেখা হচ্ছে। তাই অশ্লীলতার সয়লাব ঠেকাতে হবে। আচার-আচরণ, গান-বাজনা, সিনেমা-নাটক, উপন্যাস ও সব ধরনের প্রচার মাধ্যমে অশ্লীলতা রোধ করতে না পারলে নতুন নতুন রোগ হানা দেবে এ সত্য যত দ্রুত উপলদ্ধি করতে পারবো ততই আমাদের মঙ্গল। এ ধরনের মহামারি থেকে মুক্তি পেতে হলে নিম্নে কাজের প্রতি আমাদেরকে গুরুত্ব দিতে হবে।
এক. তাওবা-ইস্তিগফার করা
সাধারণত গোনাহের কারণে আপদ-বিপদ আসে। গোনাহমুক্ত জীবনই সুখী ও শান্তিময় জীবন। পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন জীবন। আল্লাহ তাআলা মাঝে মধ্যে হালকা ও লঘু শাস্তি দিয়ে বান্দাকে ঝাঁকুনি দেন। যেন তাঁর কাছে ফিরে আসে। তাওবার মর্ম ও তাই। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
وَلَنُذِيْقَنَّهُمْ مِّنَ الْعَذَابِ الْاَدْنٰى دُوْنَ الْعَذَابِ الْاَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ۰۰۲۱
‘জাহান্নামের বড়ো আযাবের আগে আমি অবশ্যই তাদের দুনিয়ার ছোট-খাটো আযাব আস্বাদন করাব। হয়ত বা এতে করে তারা আমাদের দিকে ফিরে আসবে।’ (সূরা সিজদা: ২১)
অন্যত্রে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
وَمَا كَانَ اللّٰهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ۠۰۰۳۳
‘আল্লাহ তাআলা এমন নন যে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা অবস্থায় তাদেরকে (কোন জাতিকে) আযাব দেবেন।’ (সূরা আল-আনফাল: ১৮০)
প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ইস্তিগফার তথা আল্লাহর কাছে সদা ক্ষমা চায়, তাকে প্রত্যেক বিপদ ও প্রতিকুল অবস্থা উত্তরণের উপায় বের করে দেন। প্রত্যেক বিষন্নতা থেকে মুক্তি দেন এবং কল্পনাতীত জায়গা থেকে রিযিক দান করেন।’ (আবু দাউদ)
অতএব সাধারণ ব্যক্তি হোক কিংবা সামাজিক দায়িত্বশীল, অথবা সরকারী কর্মকর্তা আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাওবা করে আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে।
দুই. বেশি বেশি দুআ করা
দুআ মুমিনের হাতিয়ার। কার্যকর হাতিয়ার। শুধু উপস্থিত ও বিরাজমান বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পেতে নয়, বরং আনাগত বিপদ থেকে রক্ষা পেতেও কার্যকর। আল্লাহর নবী (সা.) ইরশাদ করেন, নিশ্চই দুআ পতিত হওয়া বিপদ সরাতে সাহায্য করে এবং অনাগত বিপদকে রূখে দিতে ও সাহায্য করে। আল্লাহর বান্দা, দুআকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো, তিরমিযী শরীফ। সকাল-বিকাল নিম্নোক্ত দুআগুলো বেশি বেশি পড়বেন।
ক. সকাল-সন্ধ্যা তিনবার পড়বেন
بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ، وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ.
‘আল্লাহ তাআলার নামে, যাঁর নাম সঙ্গে থাকলে জমিন ও আসমানের কোনো বস্তু ক্ষতিসাধন করতে পারে না। আর তিনি সবকিছু শোনেন এবং জানেন।’ (তিরমিযী: ৩৩৮৮)
খ. সকাল-সন্ধ্যা তিনবার পড়ুন
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ.
‘আমি আল্লাহ পূর্ণ কালিমাসমূহের সাহায্যে তাঁর সকল সৃষ্টির অকল্যাণ-অনিষ্ট থেকে পানাহ গ্রহণ করছি।’ (মুসলিম: ২৭০৮)
গ. সকাল-সন্ধ্যা সাতবার পড়ুন
حَسْبِيَ اللهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ، عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ.
‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তাঁর ওপরই আমি ভরসা করছি। তিনি মহান আরশের রব।’ (আবু দাউদ: ৫০৮১)
ঘ. যেকোনো সময় যতবার সম্ভব পড়ুন
لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ لَا مَلْجَأَ وَلَا مَنْجَأَ مِنَ اللهِ إلَّا إِلَيْهِ.
‘আল্লাহর তাওফীক ছাড়া পাপ পরিহার করা এবং নেক কাজ করার শক্তি নেই। তাঁর আশ্রয় ব্যতীত তাঁর পাকড়াও থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই।’ (মুসনাদে বাযযার: ৯৬৩৫)
ঙ. সকাল-সন্ধ্যায় পড়ুন
يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ، أَصْلِحْ لِيْ شَأْنِيْ كُلَّهُ، وَلَا تَكِلْنِيْ إِلَىٰ نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ.
‘হে চিরঞ্জীব, হে সৃষ্টিকুলের নিয়ন্ত্রক, আপনার রহমতের দোহাই দিয়ে আপনার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি, আপনি আমার সকল বিষয় শুদ্ধ করে দিন, এক মুহূর্তের জন্যও আপনি আমাকে আমার ওপর ছেড়ে দেবেন না।’ (নাসায়ী: ১০৩৩০)
চ. মহামারি থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত এ দুআটি পাঠ করুন
اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ، وَالْـجُنُوْنِ، وَالْـجُذَامِ، وَمِنْ سَيِّئِ الْأَسْقَامِ.
‘আয় আল্লাহ! আমি আপনার নিকট শেতরোগ, পাগল হওয়া, কুষ্ঠ রোগ এবং সকল প্রকার জটিল রোগ থেকে আশ্রয় গ্রহণ করছি।’ (আবু দাউদ: ১৫৫৪)
তিন. দান-সাদাকা করা
বিপদ সরানোর ক্ষেত্রে আল্লাহর পথে দান-সাদাকা বহু পরীক্ষিত আমল। দান-সাদাকা অনেক বড় নেক আমল। বিশেষত সংকট-সংকীর্ণতার মুহূর্তে দান-সাদাকার ফযীলত অনেক বেশি। এতে সওয়াবও বেশি হয় এবং আল্লাহ তাআলারা নৈকট্য লাভ হয়। সাথে সাথে দান-সাদাকার মাধ্যমে আল্লাহর অসন্তুষ্টি-ক্রোধ নির্বাপিত হয়। বালা-মুসিবত দূর হয়। সুতরাং প্রত্যেকেই নিজের আশপাশে বা অন্য যে কোনো এলাকায় অভাবগ্রস্থদেরকে নগদ অর্থ কিংবা প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে দান-সাদাকা করা। তাতে একদিকে অভাবগ্রস্থদের অভাব দূর হবে অপরদিকে এই মহামারি বিদূরিত হওয়ার ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
«إِنَّ الصَّدَقَةَ لَتُطْفِئُ غَضَبَ الرَّبِّ وَتَدْفَعُ مِيْتَةَ السُّوْءِ».
‘নিশ্চয় দান-সাদাকা আল্লাহর গযব-ক্রোধকে নির্বাপিত করে এবং খারাপ মৃত্যু থেকে রক্ষা করে।’ (তিরমিযী: ৬৬৪)
চার. ধৈর্য ধারণ করা
ধৈর্য একটি মহৎগুণ। মুমিন আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকে। বুঝে আসুক তার কারণ বা বুঝে না আসুক। আল্লাহর প্রতিটি ফয়সালা প্রজ্ঞাপূর্ণ। বিপদাপদ ও বালা-মুসিবত মানুষের জীবনে আসতেই থাকে। মুসলিম-অমুসলিম সবার জীবনেই আসে। কিন্তু বিপদাপদে মুমিনের শানই আলাদা। হাদীস শরীফে রাসূলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন,
عَجَبًا لِّأَمْرِ الْـمُؤْمِنِ، إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ، وَلَيْسَ ذَاكَ لِأَحَدٍ إِلَّا لِلْمُؤْمِنِ، إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ، فَكَانَ خَيْرًا لَّهُ، وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ، صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَّهُ.
‘মুমিনের অবস্থা বড়ই বিস্ময়কর! তার সবকিছুই কল্যাণকর। আর এটি শুধু মুমিনেরই বৈশিষ্ট্য, অন্য কারো নয়। সুখ-সচ্ছলতায় মুমিন শোকর আদায় করে ফলে তার কল্যাণ হয়। আবার দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদের সম্মুখীন হলে ধৈর্য্য ধারণ করে। ফলে এটিও তার জন্য কল্যাণকর হয়।’ (মুসলিম: ২৯৯৯)
মুমিন মালিকের হুকুম মেনে নেয় সন্তুষ্টচিত্তে ও বিনীত শিয়রে। ধৈর্যের ফলে আসে আল্লাহর সাহায্য। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’ (সূরা আল-বাকারা: ১৫৩)
পাঁচ. নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করা
মুমিন সব সময় নামযের ব্যাপারে সচেতন থাকে। বিপদ-আপদের সময় ফরয ও সুন্নাত নামাযের প্রতি বিশেষ যত্ম তো থাকবেই, অধিকন্তু নফল নামাযের প্রতি বিশেষ যত্ন ও নজর বাড়াতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে দৌড়ে নামাযে দাঁড়াতেন।
«كَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا حَزَبَهُ أَمْرٌ، صَلَّىٰ».
‘আল্লাহর রাসূল (সা.) যেকোনো প্রতিকুল অবস্থায় নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন।’ (আবু দাউদ: ১৩১৯)
যেমন সূর্যগ্রহণের পর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
«فَإِذَا رَأَيْتُمُوْهُمَا فَافْزَعُوْا إِلَى الصَّلَاةِ». {صحيح البخاري: 1046}
সালাত মুমিনের জন্য শিশুর ক্ষেত্রে মায়ের আচলের ন্যায়, বরং তার চেয়েও বেশি নিরাপদ আশ্রয়। সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য লাভের নির্দেশ স্বয়ং রাব্বুল আলামীন দিয়েছেন,
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلٰوةِ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ مَعَ الصّٰبِرِيْنَ۰۰۱۵۳ {البقرة: 153}
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে উল্লিখিত আমলগুলোর প্রতি মনোনিবেশ করার তাওফীক দান করুন, আমীন।