জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আল্লাহ তাআলার অবাধ্যতা ও নাফরমানিই ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণ

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জাগতিক উৎপত্তি ও বিস্তৃতির বৈজ্ঞানিক কারণ যাই থাকুক এটা নিঃসন্দেহে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এ প্রকৃতির নিয়ন্ত্রকশক্তি কিন্তু আল্লাহ তাআলা। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে যুগে যুগে নানা জাতিগোষ্ঠীর ওপর বিপর্যয়, মহামারি, দুর্যোগ-দুর্বিপাক নেমে এসেছে। সাইক্লোন, প্লাবন, টর্ণেডো, ভূকম্পন, ভূমিধস, সুনামি, খরা, জলোচ্ছ্বাস, শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, সার্স, মার্স, এইডস, দাবানল প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিচিত্র রূপ। অনৈতিক যৌনকর্ম, পাপাচার, ধর্মীয় মূল্যবোধের বিরোধিতা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা ও আল্লাহ তাআলার বিধিনিষেধের অবাধ্যতার কারণে পৃথিবীতে বিপর্যয় নেমে আসে। অতীতে সীমালঙ্ঘন, নাফরমানি, নবী-রাসূলগণের প্রতি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে অসন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহ তাআলা বহু জাতিগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাঁর অনুমতি ব্যতীত কোন বিপদ আপতিত হয় না (তাগাবুন: ৪০)। আল্লাহ তাআলা প্রতিটি মানুষের প্রতিটি ক্রিয়া-কর্ম ও গতিবিধির ওপর নজর রাখেন এবং প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের জন্য প্রতিদান ও শাস্তি প্রদান করেন। তাওবা, ক্ষমা প্রার্থনা ও সৎ জীবন যাপনের মাধ্যমে এ জাতীয় বিপর্যয় থেকে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ আছে।

মনে রাখতে হবে আল্লাহ তাআলা কোন জাতি ও সমপ্রদায়ের অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ স্বয়ং তারাই নিজেদের অবস্থা, কাজ কর্ম, অনৈতিকতা ও অবাধ্যতায় পরিবর্তিত করে না দেয়। যখন আল্লাহ তাআলা কোন ব্যক্তি বা সমষ্টিকে আযাব দিতে চান, তখন কেউ তা রদ করতে পারে না; আল্লাহর নির্দেশের বিপরীতে তার সাহায্যার্থে কেউ এগিয়ে আসতে পারে না (সূরা আর-রা’দ; মাআরিফুল কুরআন, মদীনা, পৃ. ৭০২)।

আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে হযরত লুত (আ.)-এর উম্মতকে সমকামিতা ও পুংমৈথুনের মতো গর্হিতকর্মের জন্য ৫লাখ অধ্যুষিত জনপদকে আসমানে তুলে আছাড় দিয়েছেন। এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে এক নদী, যা ইতিহাসে ‘মৃতসাগর’ নামে পরিচিতি লাভ করে। এ সাগরের দৈর্ঘ ৬৭ কি. মি., প্রস্থ ১৮ কি. মি. এবং গভীরতা ১.২৪০ ফুট। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ৪২২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এ সাগরের পশ্চিমে রয়েছে ইসরাঈল ও পূর্বে জর্দান। এখান থেকে জেরুজালেম নগরীর দূরত্ব মাত্র ১৫ মাইল। পৃথিবীর অন্যান্য মহাসাগরের তুলনায় লবনাক্ততা বেশি হওয়ায় এতে কোন মাছ জন্ম নেয় না।

হজরত নুহ (আ.)-এর অধস্তন পুরুষ প্রাচীন আদ জাতির হিদায়তের জন্য আল্লাহ তাআলা হযরত হুদ (আ.)-কে নবী হিসেবে প্রেরণ করেন। জর্দান থেকে হাযরামাউত ও ইয়ামেন পর্যন্ত ছিল তাদের অধিবাস। গৃহনির্মাণ ও স্থাপত্যশৈলীতে তাদের দক্ষতা ছিল ঈর্ষণীয়। তারা আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অমান্য করে মূর্তিপূজা শুরু করে। শাদ্দাদস স্বর্ণখচিত একটি কৃত্রিম বেহেশত বানিয়ে ঔদ্ধত্যের পরাকাষ্ঠা দেখায়। আদ জাতির অমার্জনীয় পাপের ফলে গজবস্বরূপ তিন বছর বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকে। ক্ষেত খামার, বাগান ও গাছপালা পানির অভাবে শুকিয়ে যায়। প্রচণ্ড খাদ্যাভাব দেখা দেয়। তারপরও তারা পাপাচার ত্যাগ করেনি। অবশেষে চূড়ান্ত শাস্তি নেমে আসে। সাত রাত আট দিনব্যাপী অনবরত ঘূর্ণিঝড় ও বজ্রপাতে বিধ্বস্ত হয়ে যায় জনপদ ও লোকালয়। মানুষ ও জীবজন্তু শুন্যে উত্থিত হয়ে সজোরে জমিনে পতিত হয়। উৎপাটিত খর্জুর বৃক্ষের কাণ্ডের ন্যায় তাদের নিক্ষেপ করা হয় (সূরা আল-কামার: ১৮-২১)।

মাদায়েনের ছামুদ জাতিকে আল্লাহ তাআলা বিধ্বস্ত করে দেন অগ্নিবৃষ্টি দিয়ে। তারা ওজনে কম দিত। দুর্নীতি, ডাকাতি, ধর্ষণ, ছিনতাই ও খাদ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করতো। আল্লাহ তাআলা তাদের সতর্ক করার জন্য প্রেরণ করেন হজরত সালেহ (আ.)-কে। তারা নবীর কথা তো শুনেনি উপরন্তু আল্লাহর নিদর্শন উষ্ট্রীকে হত্যা করতে দ্বিধা করেনি (সূরা আশ-শামস: ১২-১৫)। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলার ঘোষণা স্পষ্ট। মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে তাদেরকে কোন কোন কর্মের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে (সূরা আর-রুম: ৪১)।

পৃথিবীর দেশে দেশে অনাচার, পাপাচার, দুর্বৃত্তপনা ও খোদাদ্রোহিতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির পরিবর্তে অসন্তুষ্টির মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং ইতিহাসের পথ ধরে বিপর্যয় ও গজব নামতে বাধ্য। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যানুযায়ী, মানুষ মানুষকে মারার জন্য যে পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ও মজুদ করেছে তাতে এ পৃথিবীকে ৩৮ বার ধ্বংস করা যাবে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা পাপাচার, অমানবিক কর্মকাণ্ড ও আল্লাহর নাফরমানির বিস্তারের ফলে কতিপয় জাতিগোষ্ঠী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এমনকি সমগ্র মানবজাতিও বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। আসলে বিপর্যয় ও ধ্বংস মানুষের কৃতকর্মের ফসল। আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা, ক্ষমা প্রার্থনা, মানবিকতার উজ্জীবন, কল্যাণকর জীবন যাপনের অঙ্গিকার ভবিষ্যতের সম্ভাব্য বিপর্যয় ও গজবের হাত থেকে মানবগোষ্ঠী রক্ষা পেতে পারে।

ড. খালিদ হোসেন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ