জামেয়া ওয়েবসাইট

সোমবার-৯ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-১৪ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমস্যা ও সমাধান-ফতওয়া বিভাগ-আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

সমস্যা ও সমাধান ফতওয়া বিভাগ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

সমস্যা সমাধান

ফতওয়া বিভাগ

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

মোবাইল: ০১৮৫৬-৬১৮৩৬৭

ইমেইল: daruliftapatiya@gmail. com

পেইজলিংক: Facebook. com/Darul-ifta-Jamia-Patiya

তাহারাত-পবিত্রতা

সমস্যা: বিভিন্ন দুআর পুস্তিকায় অযুতে প্রতি অঙ্গ ধোয়ার সময় নির্দিষ্ট দুআ পাঠের কথা উল্লেখ রয়েছে। অনেকে বলে দুআসমূহ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। আমি জানতে চাই, উক্ত দুআসমূহ পাঠ করা উত্তম হবে নাকি পাঠ না করা উত্তম?

রায়হান মাহমুদ

কক্সবাজার

সমাধান: বিভিন্ন দুআর পুস্তিকায় প্রতি অঙ্গ ধোয়ার সময় যে দুআসমূহ পাঠের কথা উল্লেখ রয়েছে, মুহাদ্দিসীনের মতে তা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং বর্ণনাগুলো ভিত্তিহীন। তবে দুআসমূহ সুন্দর অর্থবহ ও সালাফদের আমল দ্বারা প্রমাণিত। সুন্নত মনে না করে সালফে সালেহীনের আমল হিসেবে দুআ গুলো পড়া যেতে পারে। তাই ফুক্বাহায়ে কেরাম তাকে ওযুর আদবে উল্লেখ করেছেন। দুআসমূহ না পড়লে ওযুর ফযীলতে কোনো ধরনের ক্ষতি হবে না। আল-মানারুল মুনীফ ইবনে কাইয়ুম জাওজী: ১২২, তালখীসুল হাবীর: ১/১৭৪, হাশিয়াতুত তাহতাবী: ৭৬, ফাতাওয়ায়ে শামী: ১/২৫২

সমস্যা: বর্তমান আমাদের দেশে ডাক্তারগন চোখের যে কোন অপারেশনের পর এক সপ্তাহ যাবত মুখে পানি ব্যবহার করতে নিষেধ করেন। এই ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে বলেন এবং তায়াম্মুম করে নামায পড়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আমি জানতে চাই, এমতাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শে তায়াম্মুম করে নামায আদায় করলে নামায শুদ্ধ হবে কি?

রাশেদ ফরহাদ

চট্টগ্রাম

সমাধান: রোগের কারণে যদি অভিজ্ঞ ডাক্তার পানি ব্যবহার করতে নিষেধ করেন তাহলে রোগীর জন্য অযু-গোসল না করে তায়াম্মুম করা বৈধ। তবে তার জন্য শর্ত হলো রোগ বা আঘাতের কারণে ওযুর ক্ষেত্রে মুখ, হাত ও পায়ের আর গোসলের ক্ষেত্রে পুরো শরীরের অধিকাংশ অঙ্গে পানি ব্যবহার করা অসম্ভব হতে হবে। উল্লিখিত মাসআলায় যেহেতু মুখে পানি ব্যবহার করতে না পারলেও হাত ও পায়ে পানি ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই; সুতরাং তায়াম্মুম করা বৈধ হবে না। বরং সে হাত ও পা ধৌত করবে এবং মুখ-মন্ডল মাসাহ করবে। যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে মুখ বাদ দিয়ে হাত-পা ধোয়ে নিলেই যথেষ্ট হবে। দুররুল মুখতার: ৪৫, ফাতাওয়ায়ে শামী: ১/৪৩০, আল আল-মুহিতুল বুরহানী: ১/২০৪, বাহারুল রায়িক: ১/১৬৩

সমস্যা: আমরা জানি জমজমের পানি খুবই সম্মানী ও বরকতময়। এখন কোন ব্যক্তি যদি ওই পানিগুলো ওযু ইস্তিঞ্জায় ব্যবহার করে তখন সে গোনাহগার হবে কি?

ইয়াসিন আরফাত

রাঙ্গুনিয়া

সমাধান: যেহেতু জমজমের পানি শরীয়তে এক বরকতময় সম্মানী পানি তাই সেগুলোকে ইস্তিঞ্জা, ফরয গোসল বা অন্য কোনো নাপাক স্থানে ব্যবহার করা মাকরুহ। তবে পাক-পবিত্র ব্যক্তি যদি বরকতের জন্য অযু বা গোসল করে তাহলে তা জায়েয। সহীহ আল-বুখারী শরীফ: ১/৫০৪, তাতারখানিয়া: ৩/৫৪২, ফাতওয়ায়ে শামী: ২/৬২৫, আল-মাওসূয়া: ১৪/১৬

সমস্যা: পান খেয়ে কুলি না করে নামাযে দাঁড়ানোর পর পানের অবশিষ্ট অংশ পেটে গেলে তাও যদি অল্প অল্প করে কয়েকবার পেটে যায়, তখন নামায ভঙ্গ হবে কি? এক্ষেত্রে যদি অল্প অল্প করে দাঁত দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে খায়, তখন নামাযের হুকুম কি হবে?

মাসরুরুল হাকিম

চকরিয়া, কক্সবাজার

সমাধান: আমাদের হানাফী মাযহাবের কিতাবাদি থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, উলিখিত ব্যক্তির অল্প অল্প করে যা পেটে গিয়েছে তা যদি এক ছোলার কম হয়, তাহলে নামায মকরুহ হবে। আর যদি এক ছোলা বা তার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী নামায ভেঙে যাবে। বিশেষ করে সে যদি দাঁত দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে খায় তাহলেও কয়েকবার চিবানোর কারণে নামায ভেঙে যাবে। এমনকি পানের পিক যদি পেটে যায়, তাহলেও নামায ভেঙে যাবে। তাই সতর্কতা হলো যেকোন খাবারের পর কুলি করে নামাযে দাঁড়ানো। হাশিয়াতুত তাহতাবী: ৩৩৪, আল-মহীতুল বুরহানী: ১/৪৫৩, হিদায়া: ১/১৪১, তাতার খানিয়া: ২/২৩৬

সালাত- নামায

সমস্যা: অনেকে বলে থাকেন রাসূলুল্লাহ (সা.) নামাযের যতো বিধান বর্ণনা করেছেন। কোথাও নারী-পুরুষের মাঝে পার্থক্য করেননি। আমি জানতে চাই, নামাযের কোন কোন বিধানে নারী-পুরুষের মাঝে পার্থক্য রয়েছে? এবং তা কি দলীল দ্বারা প্রমাণিত?

আবদুল্লাহ

ঢাকা

সমাধান: নামাযের বিভিন্ন বিধানে নারী-পুরুষের মাঝে পার্থক্য হওয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মারফু হাদীস এবং সাহাবায়ে কেরামের আছর দ্বারা মজবুতভাবে প্রমাণিত। হাদীসের জ্ঞান সম্পন্ন কোন ব্যক্তি তা অস্বীকার করতে পারে না। তাই নারী-পুরুষের নামাযের বিভিন্ন বিধানে পার্থক্য হওয়া চারো মাযহাবের স্বতঃসিদ্ধ বিষয়। মহিলাদের নামাযের বর্ণিত হাদীসগুলোর প্রতি গভীর দৃষ্টি দিলে বুঝা যায় তাদের নামাযের ভিন্নতার মূল কারণ হলো, মহিলাদের সতরের যথাযথ খেয়াল রাখা যেমন- বায়হাকীর বর্ণনায় মহিলারা সিজদা এবং বসার ক্ষেত্রে পুরুষদের থেকে ভিন্ন হওয়ার বিবরণ দিয়ে রাসূল (সা.) বলেন, كأستر ما يكون لها যা মহিলার সতরের ক্ষেত্রে অধিক উপযোগী হবে। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবায় বর্ণিত, হযরত ইবনে আব্বাস (রা.)কে মহিলাদের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, تجتمع وتحتفر খুব জড়সড়তার সাথে (মিলিয়ে) নামায আদায় করবে। ফুকাহায়ে কেরাম সতরের মূলনীতিকে সামনে রেখে নারী-পুরুষের নামাযের মাঝে অনেক পার্থক্যের কথা বলেছেন। আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (রহ.) প্রায় ছাব্বিশটি পার্থক্য বর্ণনা করেছেন। ১. মহিলা উভয় হাত কাধ বরাবর উঠাবে। ২. আস্তিন থেকে উভয় হাত বের করবেনা। ৩. সিনার ওপর হাতের ওপর হাত বাঁধবে। ৪. রুকুতে কম ঝুঁকবে। ৫. রুকুতে হাঁটু গিঁঠ দিয়ে ধরবে না। ৬. রুকুতে আঙুলসমূহ ফাঁক করবে না বরং মিলিয়ে রাখবে। ৭. উভয় হাত হাঁটুর ওপর রাখবে। ৮. উভয় হাঁটু ভাঁজ করবে। ৯. ১০. রুকু এবং সিজদায় জড়সড় হয়ে থাকবে। ১১. সিজদায় উভয় বাহুকে বিছিয়ে দেবে। ১২. তাশাহ্‌হুদের বৈঠকে নিতম্ব দ্বারা জমিনে ভর দিয়ে বসবে। ১৩. বৈঠকের সময় হাতের আঙুল মিলিয়ে রাখবে। ১৪. নামাযে লোকমা দিতে হলে তাসবীহ নয়, বরং তাসফিক তথা হাতের ওপর হাতে চড় দিয়ে শব্দ করবে। ১৫. তারা পুরুষের ইমামতি করবে না। ১৬. মহিলারা এককভাবে জামায়াতে নামায পড়া মাকরুহ। ১৭. জামায়াত করলেও ইমাম মাঝখানে দাঁড়াবে। ১৮. মহিলা পুরুষের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া মাকরুহ। ১৯. পুরুষের সাথে নামায পড়লে তারা পেছনে দাঁড়াবে। ২০. ২১. ২২. ২৩. তাদের জুমা, উভয় ঈদের নামায এবং তাকবিরে তাশরিক ওয়াজিব নয়। ২৪. তাদের জন্য ফজরের নামায ‘এসফার’ আকাশ আলোকিত হওয়ার পর পড়া মুস্তাহাব নয়। ২৫. জেহেরি নামাযে তারা কেরাত বড় আওয়াজে পড়বে না। মুসান্নাফে ইবনে আবু শায়বা ১/৩০২-৩০৪, ফাতাওয়ায়ে শামী: ২/২১১, কবীরী: ৩০০

মুয়ামালা-লেনদেন

সমস্যা: আমাদের দেশে ডেসটিনি, ইলিংশসহ বিভিন্ন নামের মাল্টি লেভেল কোম্পানি রয়েছে। আমার জানার বিষয় হচ্ছে, উক্ত কোম্পানিগুলোর নিজস্ব প্রোডাক্ট ক্রয় করে মেম্বারশিপ লাভ করে তাদের প্রোডাক্ট সেল করে কোম্পানির ঘোষিত সেল ও মেচিং বোনাস ভোগ করা জায়েয ও হালাল হবে কি?

সমাধান: মাল্টি লেভেল কোম্পানির প্রোডাক্ট ক্রয় করাতে কোন সমস্যা নেই। তেমনিভাবে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেল করে তার বিনিময় হিসেবে সেল বোনাস গ্রহণ করাতেও কোন সমস্যা নেই। কিন্তু পরবর্তীতে নেটওয়ার্ক সিস্টেমের কারণে যে ম্যাচিং বোনাস প্রদানের শর্ত রয়েছে তা শর্তে ফাসেদ হওয়ায় (কেননা সেগুলোর ক্ষেত্রে উক্ত মেম্বারের কর্মের কোন দখল না থাকায় সে কোন ধরনের বোনাসের উপযুক্ত নয়। তাই তার জন্য) ওই ধরনের ম্যাচিং বোনাস গ্রহণ করা জায়েয হবে না। এই কারনে মাল্টি লেভেল কোম্পানিতে নিজে জয়েন করা এবং অন্যকে জয়েন করানো কারো জন্য জায়েয ও হালাল হবে না। বিস্তারিত জানতে: মাসিক আলকাউসার জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি-মার্চ ২০১২ আবুল হাসান মুহাম্মদ আবদুল্লাহ রচিত প্রবন্ধ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় তৃতীয় পর্ব ফতোয়ায়ে কাসিমিয়া ১১/১১২-১৫ ১০০ ১৩৪-১৩৯ দ্রষ্টব্য

সমস্যা: আমাদের দেশে ও বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন নামে প্রসিদ্ধ ‘সফট ড্রিঙ্ক বা কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংক বা শক্তিবর্ধক পানীয়গুলো ক্রয়-বিক্রয় ও পান করার শরয়ী হুকুম কী?

সমাধান: যেহেতু এগুলো পান করার দ্বারা পানকারী নেশাগ্রস্ত হয় না, বিবেক বুদ্ধিতেও কোন ধরনের প্রভাব  ড়ে না এবং তাদের উপাদান তালিকায়ও সরাসরি হারাম বা নাপাক (যদিও এনার্জি ড্রিংকে এমন ভিটামিনের মিশ্রণ করা হয় যা বিয়ার-এলকোহল থেকে তৈরি। কিন্তু তার প্রকৃতি রূপান্তর হয়ে যাওয়াতে হারামের কারণ বিদ্যমান থাকে না) কোন বস্তু পাওয়া যায় না, তাই এগুলোর ক্রয়-বিক্রয় ও পান করা হালাল। তবে কেউ এগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও শারীরিক ক্ষয়ক্ষতির কারণে সর্তকতাস্বরূপ দূরে থাকা উচিত।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: সফট ড্রিঙ্ক বা কোমল পানীয় যা বিশ্বব্যাপী কোকোলা, পেপসি, চেরি, লেমন লাইম, রুট বিয়ার, অরেঞ্জ, গ্রেপ, ভ্যানিলা, জিনজার এলে, ফরুট পাঞ্চ, স্টারলিং লেমোনেড আর বাংলাদেশে সেভেন আপ, আরসি কোলা, স্প্রাইট ইত্যাদি নামে পরিচিত।

সমস্যা: আমাদের দেশে প্রসিদ্ধ মদ্যপানীয় হুইস্কি, বিয়ার, ফেনসিডিল, ওয়াইন, ভদকা, বাংলা মদ, অ্যালকোহল ও স্প্রিট এগুলো ক্রয়-বিক্রয় ও পানের শরয়ী হুকুম কী?

সমাধান: যেহেতু উল্লিখিত মদ্যপানিয়গুলো পানের কারণে মাতলামি চলে আসে, তাই এগুলোর ক্রয়-বিক্রয় ও পান করা সম্পূর্ণ হারাম। কিতাবুল ফাতাওয়া: ৬/১৯৩

সমস্যা: আমাদের দেশে প্রসিদ্ধ মাদকদ্রব্য ‘ইয়াবা’ কোকেইন, গাজা, হিরোইন’ এগুলোর ক্রয়-বিক্রয় ও সেবনের শরয়ী বিধান কী?

সমাধান: এগুলো সেবনে যেহেতু মদের মতো নেশা ও মাতলামির সৃষ্টি হয়, তাই (চাই মুকসির হোক বা মুফতির) এগুলোর ক্রয়-বিক্রয় এবং সেবন সম্পূর্ণ হারাম। সূরা আন-নিসা: ৪৩, মাআরিফুল কুরআন, পৃ. ১১২, আবু দাউদ হাদীস: ৩৬৭৬

সমস্যা: বর্তমান বিশ্বে এলকোহল মিশ্রিত অনেক বস্তুর প্রচলন রয়েছে। আমার জানার বিষয় হচ্ছে, উক্ত এলকোহল মিশ্রিত বস্তুগুলো ক্রয়- বিক্রয় ও ব্যবহারের শরয়ী হুকুম কী?

সমাধান: বিভিন্ন বস্তুতে অ্যালকোহলের ব্যবহার (সরাসরি ও রূপান্তর করে এ) দু’ধরনের হয়ে থাকে। আঙুর ও খেজুর থেকে তৈরি অ্যালকোহল কোন বস্তুতে সরাসরি মেশানো হলে, উক্ত বস্তুটির ক্রয় বিক্রয় ও ব্যবহার হারাম বলে গণ্য হবে। (তবে অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাজেশন অনুযায়ী অপারগ অবস্থায় চিকিৎসার প্রয়োজনে রুগীর ঔষধে ব্যবহার জায়েয আছে) আর অন্যান্য বস্তু থেকে তৈরি অ্যালকোহল সরাসরি (কোনো বস্তুতে) মেশানো হলে তা নেশা উদ্রেক ও ফুর্তির উদ্দেশ্যে না হলে প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে। আর রূপান্তর করার পর ব্যবহার করা হলে, এলকোহল মিশ্রিত বস্তুটি ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: সাধারণত আলু, গম, ভুট্টা, আঙুর, খেজুর, মধু পেট্রোল ইত্যাদি থেকে এলকোহল তৈরি হয়। তাকমীলায়ে ফাতহুল মুলহিম ৩/৫০৬, জাদিদ ফিকহী তাহকীকাত: ৩১/১৫৯৮

সমস্যা: ওষুধের দোকানে পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, কনডম, প্লাস্টিক কয়েল, ইঞ্জেকশন ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয হবে কি?

সমাধান: শরীয়তে যে সমস্ত জিনিস ব্যবহারের জায়েয সুরত রয়েছে সেগুলোর বেচা-কেনা শরীয়তে জায়েয রাখা হয়েছে। তাই তা শুধুমাত্র বিবাহিতদের কাছেই বিক্রি করা জায়েয। আর দুশ্চরিত্র যিনাকারী অবিবাহিতদের কাছে বিক্রি করা নাজায়েয। তাই ব্যবসায়ীকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে জাস্টিফাই করে বৈধভাবে ব্যবহারকারী নিশ্চিত হয়ে পণ্যগুলো বিক্রি করতে হবে।তাহলে তার ক্রয়বিক্রয় জায়েয। অন্যথায় নাজায়েয।

সমস্যা: পানিতে বসবাসকারী ব্যাঙ, কাঁকড়া ও অন্যান্য প্রাণী বিক্রি করা জায়েয হবে কি?

সমাধান: হানাফী মাযহাব মতে মাছ ভিন্ন অন্যান্য জলজ প্রাণী খাওয়া জায়েয নেই। তাই খাওয়া ছাড়া অন্য কোন পন্থায় যদি হালাল ভাবে উপকৃত হওয়ার কোন পদ্ধতি ও সুযোগ থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য ক্রয়-বিক্রয় জায়েয। অন্যথায় নাজায়েয।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: ব্যাঙ ও কাঁকড়ার মাধ্যমে জায়েয পদ্ধতিতে উপকৃত হওয়ার কোনো পন্থা জানা নাই। তাই এগুলোর ক্রয়-বিক্রয় করা নাজায়েয। ফতোয়ায়ে আলমগীরী: ৩/১১৪

বিয়ে-তালাক

সমস্যা: বিবাহের জন্য প্রস্তাবিত ও মনোনীত মেয়ের ছবি মোবাইলে দেখা জায়েয হবে কি?

সমাধান: যেহেতু প্রস্তাবিত আজনবীয়াকে বিয়ের জন্য চূড়ান্ত মনোনয়নের লক্ষ্যে দেখে নেওয়া মুস্তাহাব তাই হবু বরের জন্য মোবাইলে হবু বউয়ের ছবি (প্রিন্ট আউট ব্যতিত) দেখে সাথে সাথে ডিলিট করে দেয়ার শর্তে দেখা জায়েয হবে। তবে তা না করা উচিত। প্রয়োজনে সরাসরি দেখবে। আবু দাউদ: ২০৮২

সমস্যা: প্রস্তাবিত নারীকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেখা জায়েয হবে কি?

সমাধান: পূর্বোক্ত একই কারণে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেও হবু বর ও অন্য যে কোন মহিলার জন্য হবু বউকে দেখা জায়েয হবে।

সমস্যা: বিয়ের জন্য প্রস্তাবিত নারীর সাথে বিয়ের পূর্বে অপ্রয়োজনীয় রসালাপ করা ছেলের জন্য জায়েয আছে কি?

সমাধান: বিয়ের পূর্বে বিয়ের জন্য প্রস্তাবিত ও মনোনীত নারীর সাথে বিনা প্রয়োজনে মন খুলে কথা বলা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম কাজ।

সমস্যা: মোবাইল-টেলিফোন ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিয়ে শুদ্ধ হবে কিনা?

সমাধান: যেহেতু টেলিফোন, মোবাইল ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অভিন্ন মজলিশের শর্ত অনুপস্থিত তাই এগুলোর মাধ্যমে সংগঠিত বিয়ে শুদ্ধ হবে না। ফতওয়ায়ে শামী ৪/৭৬, ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/২৯৭, মুহাক্কিক মুদাল্লিল জদীদ মাসায়েল ৪৮৪

সমস্যা: মোবাইলে বিয়ের বিশুদ্ধ পদ্ধতি কী?

সমাধান: মোবাইলে বিয়ের সবচেয়ে উত্তম ও সহজ পদ্ধতি হলো কনে বরকে মোবাইলে তার পক্ষ থেকে বিয়ের উকিল বানিয়ে দেবে। আর বর কমপক্ষে দু’জন সাক্ষীর সামনে তাকে কবুল করে নেবে। অন্যথায় বর কোনো তৃতীয় ব্যক্তিকে তার পক্ষ থেকে বিয়ের উকিল বানিয়ে দেবে। আর সে উক্ত বরের পক্ষ থেকে কবুল করে নেবে। ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া, ১০/৬৮০, জাদীদ ফিকহী মাসায়েল, ১৪৮

সমস্যা: আমার এক বন্ধু এক মেয়েকে ফোনে বিয়ে করে। সে মেয়েটিকে ফোনে বলে, আমি তোমাকে এত টাকার মহরে বিয়ে করলাম, তুমি রাজী থাকলে কবুল বল। মেয়েটি তখন কবুল বলে। ফোনে লাউডস্পিকারের মাধ্যমে ছেলের দুজন বন্ধুও মেয়ের কবুল বলা শুনেছিল। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের অভিভাবক তাদেরকে ভিন্ন জায়গায় বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের উভয়ে বলে, আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে। আমরা পরস্পর স্বামী-স্ত্রী| তাই অন্য কোথাও আমরা বিয়ে করব না। আমার জানার বিষয় হচ্ছে, তাদের বিয়ে শুদ্ধ হয়েছে কি? এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কী?

সমাধান: উপর্যুক্ত কথিত বিয়ে শুদ্ধ হয়নি। কারণ, বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য দু’জন সাক্ষীর সামনে পাত্র-পাত্রী কিংবা তাদের প্রতিনিধি উপস্থিত হয়ে ইজাব-কবুল (বিয়েকার্য সম্পাদন) করা জরুরি। আর প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু ইজাব-কবুল (প্রস্তাব ও গ্রহণ) দুটি পৃথক জায়গা থেকে হয়েছে আর সাক্ষীদ্বয় শুধু এক স্থানে উপস্থিত ছিল তাই তাদের উক্ত বিয়ে শুদ্ধ হয়নি এবং তারা শরীয়তের দৃষ্টিতে পরস্পর স্বামী-স্ত্রী নয়; সুতরাং উক্ত মেয়ের অন্যত্র বিবাহের জন্য তালাক নেওয়ারও প্রয়োজন নেই। মেয়েটির অভিভাবক চাইলে তার অনুমতি নিয়ে এখনি অন্য কারো সাথে তার বিয়ে দিতে পারবে। আর যদি ওই ছেলে ও মেয়ে একত্রে ঘর-সংসার করতে চায় তবে তাদেরকে যথাযথ পন্থায় নতুন করে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। বাদায়িউস সানায়ি: ২/৫২৭; মুখতারাতুন নাওয়াযিল: ২/১৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৩৬; মুঈনুল মুফতী: পৃ. ১৮০; আল-বাহরুর রায়িক: ৩/৮৮; দুরারুল হুক্কাম: ১/৩২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২৬৮

সমস্যা: মেয়ে-ছেলেকে এসএমএসের মাধ্যমে বিয়ের উকিল বানালে তা শুদ্ধ হবে কি?

সমাধান: মেয়ে-ছেলেকে এসএমএসের মাধ্যমে বিয়ের উকিল বানালে ছেলে যদি দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে ইজাব-কবুল করে নেয় তাহলে সে বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে। কেননা বিয়েতে একই ব্যক্তি নিজের পক্ষ থেকে আসিল আর অন্যের পক্ষ থেকে উকিল হতে পারে। হিদায়া, পৃ. ২৩ ৪৬

সমস্যা: আমার বড় ভাগ্নির বিয়ের সময় ভগ্নিপতি বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মেয়ের কাছ থেকে ইযিন নিয়ে যান। তখন সেখানে শুধু আমার বোন ছিলেন। আকদের পূর্বে ছেলে পক্ষের কয়েকজন মুরব্বী বলে উঠলেন, বিয়ে সংঘটিত হওয়ার জন্য ইযিন নেওয়ার সময়ও সাক্ষীদের উপস্থিত থাকা জরুরি। আমি জানতে চাচ্ছি, বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য ‘ইযিন’ নেওয়ার সময় সাক্ষীদের উপস্থিতি জরুরি কি না?

সমাধান: বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য আকদের মজলিসে ইজাব কবুলের সময় সাক্ষীদের উপস্থিতি জরুরি। তবে কনে থেকে সম্মতি নেওয়ার সময় কোনো সাক্ষী রাখা আবশ্যক নয়। বাদায়িউস সানায়ি: ২/৫২৯; ফাতহুল কাদীর: ৩/২০১; আল-বাহরুর রায়িক ৩/৮৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২৬৯

সমস্যা: কেউ মোবাইল ফোনে স্ত্রীকে তালাক প্রদান করলে তা পতিত হবে কি?

সমাধান: যেহেতু তালাক পতিত হওয়ার জন্য স্ত্রীর সামনে থাকা শর্ত নয় তাই টেলিফোন ও মোবাইলে তালাক দিলে তা পতিত হয়ে যাবে। মোবাইলে বিয়ে তালাক, পৃ. ১৬৯

সমস্যা: টেক্সট মেসেজ, ই-মেইল, টেলিগ্রাম, ফেক্স ইত্যাদির মাধ্যমে তালাক লিখে পাঠালে তালাক পতিত হবে কি?

সমাধান: টেক্সট মেসেজ, ই-মেইল, টেলিগ্রাম, ফেক্স ইত্যাদির মাধ্যমে তালাক লিখে পাঠানোও তা কাগজে লিখার ন্যায় তাই এভাবে তালাক দিলেও তা পতিত হয়ে যাবে। মুসান্নাফে ইবনে আবু শায়বা: ৯/৫৬২; ফতওয়ায়ে শামী: ৪/৪৫৫ও ৪৫৬

সমস্যা: মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্ত্রীকে প্রত্যাবর্তন করলে তা শুদ্ধ হবে কি?

সমাধান: মোবাইল ফোনে ও এসএমএসের মাধ্যমে রুজয়াত করলেও তা শুদ্ধ হয়ে যাবে। আর যেহেতু লেখকের লেখা তার স্থলাভিষিক্ত হয়, তাই এসএমএসের মাধ্যমে রুজয়াত করলেও তা সহীহ হয়ে যাবে। ফতাওয়ায়ে আলমগীরী ১/৫০২; মুগনী: ৮/২৮৩

সমস্যা: মোবাইল ভিডিও কনফারেন্স এসএমএসের মাধ্যমে তালাক তানা গ্রহণের ইচ্ছেধিকার দেওয়া শুদ্ধ হবে কি?

সমাধান: মোবাইল ফোন, ভিডিও কনফারেন্স ও এসএমএসের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীকে তালাকের ইচ্ছেধিকার দিলে তা সহীহ বিয়েও হবে।

সমস্যা: মোবাইল ফোন ও ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে খোলা করলে তা শুদ্ধ হবে কি?

সমাধান: মোবাইল ফোন, ভিডিও কনফারেন্স, ভয়েস চ্যাটিং এর মাধ্যমে খোলা করলে তা সহীহ হবে। সহীহ আল-বুখারী শরীফ: ৫২৭৫, ফতওয়ায়ে শামী: ৫/৮৮০

বিবিধ প্রসঙ্গ

সমস্যা: হুক্কা, বিড়ি-সিগারেট ইত্যাদি ধূমপানীয় বস্তুর পান জায়েয আছে কি?

সমাধান: এগুলোতে যদি নেশাদ্রেক কোন বস্তু নাও থাকে তবুও (যেহেতু তা শারীরিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক তাই) তা পান করা মাকরুহ হবে।আর নেশা উদ্রেক কোন বস্তুর মিশ্রন পাওয়া গেলে তা পান করা হারাম হবে। ফতাওয়ায়ে রহীমিয়া: ২/২৪২

সমস্যা: গুল ব্যবহার করা ও পানের সাথে জর্দা খাওয়া জায়েয কিনা?

সমাধান: গুল ব্যবহার করা ও পানের সাথে জর্দা খাওয়া জায়েয। তবে যথা সম্ভব সেসব জিনিসের অভ্যাস না করাই উত্তম। কারণ এগুলোর অভ্যাস হয়ে গেলে পরে কোন এক সময় না পেলে পেরেশানির শিকার হতে হয়। আর নিজের পক্ষ থেকে পেরেশানির কোন কারণ সৃষ্টি করা অনুচিত কাজ। তবে দাঁত বা মুখের কোনো সমস্যার কারণে কেউ যদি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করতে বাধ্য হয় তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। ফতাওয়ায়ে রহীমিয়া: ২/২৪১; ফতাওয়ায়ে রশীদিয়া: ৪৬২

সমস্যা: ডিস কানেকশন এবং ইন্টারনেট কানেকশনিংয়ের কাজ করা জায়েয হবে কি?

সমাধান: ডিস কানেকশন গুনাহের কাজে সহযোগিতা হওয়ায় মাকরূহ তাহরীমী। যেহেতু ইন্টারনেট ভালো-খারাপ সব ধরনের কাজে ব্যবহার করা যায়। তাই ইন্টারনেট ক্যাবলের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। অপব্যবহারের গোনাহ ব্যবহারকারীর ওপর হবে সার্ভিসদাতার ওপর বর্তাবে না। কিতান নাওয়াযেল: ১২/৪৮৬-৮৭

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ