সচ্ছল জীবনের সন্ধান: শরয়ী পথ ও পন্থা
জাহেদ ছফা
তিন. তাকওয়া রিয্ক লাভের চাবিকাঠি
তাকওয়ার শাব্দিক অর্থ ভয় করা, বিরত থাকা। পরিভাষায় আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর নির্দেশনাবলি মান্য করা ও তাঁদের নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকাকে তাকওয়া বলা হয়। হযরত আলী (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি চমৎকার ছন্দময় ভাষায় তাকওয়ার সংজ্ঞা দেন,
هو الخوف من الجليل، والعمل بالتنزيل، والقناعة بالقليل، والاستعداد ليوم الرحيل.
‘আল্লাহকে ভয় করা, কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করা, অল্পে তুষ্ট থাকা ও মৃত্যুর জন্য সদা প্রস্তুত থাকাই হল তাকওয়া।’
ইমাম জাফর আস-সাদিক (রহ.) তাকওয়ার ব্যাখ্যা দেন,
أن لا يفقدك الله حيث أمرك ولا يراك حيث نهاك.
‘আল্লাহর আদিষ্ট জায়গায় তোমার সদা উপস্থিতি এবং তাঁর নিষিদ্ধ জায়গায় তোমার অনুপস্থিতির নাম তাকওয়া।’
তাকওয়ার সাথে রিয্ক লাভের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। প্রজ্ঞাময় আল্লাহ কুরআন শরীফের অসংখ্য আয়াতে তাকওয়ার সাথে রিয্কের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন- আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَمَنْ يَّتَّقِ اللّٰهَ يَجْعَلْ لَّهٗ مَخْرَجًاۙ۰۰۲ وَّيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُؕ ۰۰۳
‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে তিঁনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিয্ক দান করেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না।’[1]
আল্লামা কুরতুবী (রহ.) এ আয়াতের শানে নুযুলে হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.) সূত্রে আওফ ইবনে মালিক আল-আশজায়ী (রাযি.)-এর একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। হযরত আওফ ইবনে মালিক (রাযি.)-এর সন্তান হযরত সালিম (রাযি.) মুশরিকদের হাতে বন্দি হন। তখন হযরত আওফ (রাযি.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে এসে অভিযোগ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, শত্রুর হাতে আমার সন্তান বন্দি হয়েছে, ফলে তার মা অস্থির হয়ে পড়েছে। আমি কী করতে পারি?” রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন,
«اتَّقِ اللهَ وَاصْبِرْ وَآمُرُكَ وَإِيَّاهَا أَنْ تَسْتَكْثِرَا مِنْ قَوْلِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ».
‘আল্লাহকে ভয় কর, র্ধৈয ধারণ কর এবং উভয়ে لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ বেশি পরমিাণে পাঠ কর।’
তারা তাই করলেন। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, হযরত সালিম (রাযি.) শত্রুর উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে মুক্ত ফিরে আসছেন, আর তার সাথে চার হাজার ভেড়া। হযরত আওফ ইবনে মালিক (রাযি.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গিয়ে ঘটনা বর্ণনা করলেন এবং ভেড়ার বিধান জিজ্ঞেস করলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তা তোমার জন্য বৈধ। তখন উক্ত আয়াত নাযিল হয়।[2]
হযরত আবু যর আল-গিফারী (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন,
«إِنِّيْ لَأَعْلَمُ آيَةً لَوْ أَخَذَ بِهَا النَّاسُ لَكَفَتْهُم».
‘আমার এমন একটি আয়াত জানা আছে, যদি মানুষ তা গ্রহণ করত তাহলে তা তাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যেত। অতঃপর এই আয়াতটি তেলায়াত করলেন।[3]
অনুরূপ একটি বর্ণনা মু’জামে তাবরানীতে হযরত মু‘আয ইবনে জাবাল (রাযি.) থেকে বর্ণিত হয়েছে,
«يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّخِذُوْا تَقْوَى اللهِ تِجَارَةً يَأْتِكُمُ الرِّزْقُ بِلَا بُضَاعَةٍ وَلَا تِجَارَةٍ»، ثُمَّ قَرَأَ: [وَمَنْ يَّتَّقِ اللّٰهَ يَجْعَلْ لَّهٗ مَخْرَجًاۙ۰۰۲ وَّيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُؕ ۰۰۳] {الطلاق: 3}.
‘হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর ভয়কে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ কর, কোন পণ্য ও ব্যবসা ছাড়া রিয্ক লাভ করবে। অতঃপর উক্ত আয়াত তেলায়াত করলেন।’[4]
চার. নামায রিয্ক লাভের সদর দরজা
ইসলামে নামাযের গুরুত্ব অনস্বীকার্য| ঈমানের পর সবচে’ বড় ইবাদত নামায। নামাযের মাধ্যমে মানুষ নিজ প্রভুর সাথে একান্ত আলাপে মগ্ন হয়, নিজের দুঃখ-দুর্দশা ও প্রয়োজনের কথা তাঁর কাছে পেশ করে। এজন্যই নামাযকে মুমিনের মেরাজ বলা হয়। নামায রিয্ক লাভ ও প্রয়োজন পূরণের শ্রেষ্ঠতম উপায়। আল্লাহর প্রকৃত বান্দাগণ নামাযের মাধ্যমেই তাদের যাবতীয় প্রয়োজন ও সমস্যা সমাধান করেন। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَاسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَ الصَّلٰوةِؕ ۰۰۴۵
‘তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর।’[5]
তাই প্রিয় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বৈশিষ্ট্য ছিল, তিনি যখনই কোনো গুরুতর বিষয়ের সম্মুখীন হতেন নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন। অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَاْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلٰوةِ وَ اصْطَبِرْ عَلَيْهَا١ؕ لَا نَسْـَٔلُكَ رِزْقًا١ؕ نَحْنُ نَرْزُقُكَ١ؕ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوٰى ۰۰۱۳۲
‘তুমি নিজ পরিবারকে নামাযের আদেশ দাওএবং নিজে তার ওপর অটল থাক, আমি তোমার কাছে রিয্ক চাই না, বরং আমি তোমাকে রিয্ক দান করব। আর শুভপরিণাম তাকওয়ারই।’[6]
আল্লামা ইবনে কসীর (রহ.) হযরত সাবিত (রাযি.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন,
كَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا أَصَابَتْهُ خَصَاصَةٌ نَادَىٰ: «يَا أَهْلَاهُ صَلُّوْا صَلُّوْا».
‘রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন অভাবের সম্মুখীন হতেন, নিজ পরিবারকে ডেকে বলতেন, ‘হে আমার পরিবার, তোমরা নামায পড়, নামায পড়।’’[7]
সাহাবায়ে কেরামের অভ্যাসও ছিল তাই; তাঁরা যখনই অভাবে কিংবা অন্য কোনো সমস্যায় পড়তেন, নামাযকে প্রধান অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করতেন। যেমন হযরত আবু উমামা (রাযি.)-এর ঘটনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়:
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْـخُدْرِيِّ، قَالَ: دَخَلَ رَسُوْلُ ﷺ ذَاتَ يَوْمٍ الْـمَسْجِدَ، فَإِذَا هُوَ بِرَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ، يُقَالُ لَهُ: أَبُوْ أُمَامَةَ، فَقَالَ: «يَا أُمَامَةَ، مَا لِيْ أَرَاكَ جَالِسًا فِي الْـمَسْجِدِ فِي غَيْرِ وَقْتِ الصَّلَاةِ؟»، قَالَ: هُمُومٌ لَزِمَتْنِيْ، وَدُيُوْنٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ.
‘হযরত আবু সাইদ আল-খুদরী (রাযি.) বর্ণনা করছেন, একবার প্রিয় রাসূলুল্লাহ (সা.) মাসজিদে প্রবেশ করে আবু উমামা নামক আনসারী সাহাবীকে সেখানে দেখতে পেলেন। তখন তাকে বললেন, ‘হে আবু উমামা, কী ব্যাপার, এই অসময়ে তুমি মসজিদে কেন?’ তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! সীমাহীন দুশ্চিন্তা ও ঋণের বোঝার কারণে।’ অতঃপর রাসূল (সা.) তাকে সকাল-সন্ধ্যা পড়ার জন্য একটি দুআ শিক্ষা দিলেন।’[8]
সালাতুল হাজাত
রাসূলুল্লাহ (সা.) হাদীস শরিফে প্রয়োজন ও হাজত পূরণের জন্য বিষেশ একটি নামাযও শিক্ষা দিয়েছেন, যা সালাতুল হাজাত নামে পরিচিত। বিখ্যাত সাহাবি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন,
مَنْ كَانَتْ لَهُ إِلَى اللهِ حَاجَةٌ، أَوْ إِلَىٰ أَحَدٍ مِنْ بَنِيْ آدَمَ فَلْيَتَوَضَّأْ وَلْيُحْسِنِ الْوُضُوْءَ، ثُمَّ لِيُصَلِّ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ لِيُثْنِ عَلَى اللهِ، وَلْيُصَلِّ عَلَى النَّبِيِّ ﷺ، ثُمَّ لِيَقُلْ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ الْـحَلِيْمُ الْكَرِيْمُ، سُبْحَانَ اللهِ رَبِّ العَرْشِ الْعَظِيْمِ، الْـحَمْدُ للهِ رَبِّ العَالَـمِينَ، أَسْأَلُكَ مُوجِبَاتِ رَحْمَتِكَ، وَعَزَائِمَ مَغْفِرَتِكَ، وَالغَنِيمَةَ مِنْ كُلِّ بِرٍّ، وَالسَّلَامَةَ مِنْ كُلِّ إِثْمٍ، لَا تَدَعْ لِي ذَنْبًا إِلَّا غَفَرْتَهُ، وَلَا هَمًّا إِلَّا فَرَّجْتَهُ، وَلَا حَاجَةً هِيَ لَكَ رِضًا إِلَّا قَضَيْتَهَا يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ.
‘যে ব্যক্তির আল্লাহর কাছে অথবা কোনো মানুষের কাছে কোনো প্রয়োজন দেখা দেবে, তার উচিত ভালভাবে অযু করে দু’রাকআত নামায পড়া। অতঃপর আল্লাহর প্রসংশা ও রাসূলের প্রতি দরূদ পাঠ করে এ দুআ পড়া:
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ الْـحَلِيْمُ الْكَرِيْمُ، سُبْحَانَ اللهِ رَبِّ العَرْشِ الْعَظِيْمِ، الْـحَمْدُ للهِ رَبِّ العَالَـمِينَ، أَسْأَلُكَ مُوجِبَاتِ رَحْمَتِكَ، وَعَزَائِمَ مَغْفِرَتِكَ، وَالغَنِيمَةَ مِنْ كُلِّ بِرٍّ، وَالسَّلَامَةَ مِنْ كُلِّ إِثْمٍ، لَا تَدَعْ لِي ذَنْبًا إِلَّا غَفَرْتَهُ، وَلَا هَمًّا إِلَّا فَرَّجْتَهُ، وَلَا حَاجَةً هِيَ لَكَ رِضًا إِلَّا قَضَيْتَهَا يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ.
‘সেই আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই যিনি সহনশীন ও দয়াময়। মহান আল্লাহ অতি পবিত্র যিনি বিশাল আরশের অধিপতি। সমস্ত প্রসংশা বিশ্ব জগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে এমন আমল চাই যা আপনার রহমতের মাধ্যম ও মাগফিরাতের কারণ হবে। আমি আপনার কাছে সমস্ত ভালো কাজে অংশ ও সব ধরণের গোনাহ থেকে মুক্তি চাই। আমার সকল গোনাহ আপনি ক্ষমা করে দিন, সকল দুশ্চিন্তা দূর করে দিন এবং আমার যাবতীয় প্রয়োজন-যার প্রতি আপনি সন্তুষ্ট-পূরণ করে দিন। হে পরম দয়াময়।’’[9]
অন্য হাদীসে হযরত আবুদ দারদা (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি,
«مَنْ تَوَضَّأَ، فَأَسْبَغَ الْوُضُوْءَ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ يُتِمُّهُمَا، أَعْطَاهُ اللهُ مَا سَأَلَ مُعَجِّلًا، أَوْ مُؤَخِّرًا».
‘যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ অযু করবে। অতঃপর ভালোভাবে দু’রাকআত নামায আদায় করে আল্লাহর কাছে চাইবে, সে যা চায় আল্লাহ তাকে তা-ই দান করবেন, সাথে সাথে বা বিলম্বে।’[10]
পাঁচ. দরুদ পাঠে প্রাচুর্য আসে
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর দরূদ পাঠ করা একটি বরকতময় গুরুত্বপূর্ণ আমল। যুগে-যুগে রাসূলপ্রেমিকগণ বিভিন্ন সমস্যায় এ আমলকে উত্তরণের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে প্রভূত কল্যাণ লাভ করেছেন। পার্থিব প্রয়োজন পূরণ, চিন্তা-পেরেশানি দূর হওয়া এবং রিয্কে প্রশস্ততা আসার সাথে এ আমলের বিশেষ একটা সম্পর্ক রয়েছে। যেমনটি বিভিন্ন হাদীস থেকে অনুমান করা যায়। হযরত আনাস (রাযি.) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন,
«إِنَّ أَقْرَبَكُمْ مِنِّيْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيْ كُلِّ مَوْطِنٍ أَكْثَرُكُمْ عَلَيَّ صَلَاةً فِي الدُّنْيَا مَنْ صَلَّىٰ عَلَيَّ فِي يَوْمِ الْـجُمُعَةِ وَلَيْلَةِ الْـجُمُعَةِ، قَضَى اللهُ لَهُ مِائَةَ حَاجَةٍ، سَبْعِيْنَ مِنْ حَوَائِجِ الْآخِرَةِ، وَثَلَاثِيْنَ مِنْ حَوَائِجِ الدُّنْيَا».
‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে আমার প্রতি বেশি দরূদ পাঠ করবে কিয়ামতের দিন সর্ব স্থানে সে আমার সর্বাধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত হবে, যে ব্যক্তি জুমুআর দিন রাতে অথবা দিনে আমার ওপর দরুদ পড়বে আল্লাহ তাআলা তার একশটি প্রয়োজন পূর্ণ করবেন; সত্তরটি পরকালীন, ত্রিশটি ইহকালীন।’[11]
অন্য হাদীসে হযরত তুফাইল ইবনে উবাই ইবনে কা’ব (রাযি.) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন,
يَا رَسُولَ اللهِ إِنِّيْ أُكْثِرُ الصَّلَاةَ عَلَيْكَ فَكَمْ أَجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلَاتِيْ؟ فَقَالَ: «مَا شِئْتَ». قَالَ: قُلْتُ: الرُّبُعَ، قَالَ: «مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ»، قُلْتُ: النِّصْفَ، قَالَ: «مَا شِئْتَ، فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ»، قَالَ: قُلْتُ: فَالثُّلُثَيْنِ، قَالَ: «مَا شِئْتَ، فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ»، قُلْتُ: أَجْعَلُ لَكَ صَلَاتِيْ كُلَّهَا قَالَ: «إِذًا تُكْفَى هَمَّكَ، وَيُغْفَرُ لَكَ ذَنْبُكَ»
‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার প্রতি অধিকহারে দরুদ পড়তে চাই, অতএব আমার দুআর মধ্যে আপনার দরুদের জন্য কতটুকু অংশ রাখব? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তুমি যতটুকু চাও।’ হযরত কা’ব বলেন, আমি বললাম, চতুর্থাংশ? তিনি বললেন, ‘তুমি যা চাও। তবে বেশি পড়লে তোমার জন্য উত্তম হবে।’ কা’ব বলেন, তখন আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, ‘তুমি যতটুকু চাও। তবে বেশি পড়লে তোমার জন্য ভালো হবে।’ কা’ব বলেন, এরপর আমি বললাম, তাহলে দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, ‘তুমি যতটুকু চাও। তবে বেশি পড়লে তোমার জন্য কল্যাণকর হবে।’ কা’ব বলেন, আমি বললাম, আমার পুরো দুআজুড়ে আপনার দরুদ রাখব? তিনি বললেন, ‘তাহলে তোমার যাবতীয় চিন্তার জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গোনাহ ক্ষমা করা হবে।’’[12]
[1] আল-কুরআন, সুরা আত-তালাক, ৬৫:২
[2] আল-কুরতুবী, আল-জামি লি-আহকামিল কুরআন, দারুল কুতুব আল-মিসরিয়া, কায়রো, মিসর (১৩৮৪ হি. = ১৯৬৪ খ্রি.), খ. ১৮, পৃ. ১৬০
[3] আল-কুরতুবী, আল-জামি লি-আহকামিল কুরআন, দারুল কুতুব আল-মিসরিয়া, কায়রো, মিসর (১৩৮৪ হি. = ১৯৬৪ খ্রি.), খ. ১৮, পৃ. ১৬০
[4] আত-তাবারানী, মুসনাদুশ শামিয়িয়ীন, মুআস্সিসাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবনান (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৪০৫ হি. = ১৯৮৪), খ. ১, পৃ. ২২৩, হাদীস: ৪১৫
[5] আল-কুরআন, সুরা আল-বাকারা, ২:৪৫
[6] আল-কুরআন, সুরা তাহা, ২০:১৩২
[7] আল-বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, মাকতাবাতুর রাশাদ, রিয়াদ, সউদী আরব (প্রথম সংস্করণ: ১৪২৩ হি. = ২০০৩ খ্রি.), খ. ৪, পৃ. ৫১৮, হাদীস: ২৯১৫
[8] আবু দাউদ, আস-সুনান, আল-মাকতাবাতুল আসরিয়া, বয়রুত, লেবনান, খ. ২, পৃ. ৯৩, হাদীস: ১৫৫৫
[9] আত-তিরমিযী, আল-জামি‘উল কবীর = আস-সুনান, মুস্তফা আলবাবী অ্যান্ড সন্স পাবলিশিং অ্যান্ড প্রিন্টিং গ্রুপ, কায়রো, মিসর, খ. ২, পৃ. ৩৪৪, হাদীস: ৪৭৯
[10] আহমদ ইবনে হাম্বল, আল-মুসনদ, মুআস্সিসাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২১ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. ৪৫, পৃ. ৪৮৯, হাদীস: ২৭৪৯৭
[11] আল-বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, খ. ৪, পৃ. ৪৩৫, হাদীস: ২৭৭৩
[12] আত-তিরমিযী, আল-জামি‘উল কবীর = আস-সুনান, খ. ৪, পৃ. ৬৩৬, হাদীস: ২৪৫৭