আরবি ভাষা ও সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে আমাদের করণীয়
আরবি ভাষার গুরুত্ব
আরবি ভাষা কুরআন -সুন্নাহর ভাষা। মুসলমানদের অন্তরের প্রিয়তম ভাষা। মুসলমানদের জন-জীবনে এর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিটি মুসলমানকেই অন্তত তার ইবাদত পরিশুদ্ধ করতে আরবি ভাষা শিখতে হয়। আর আলেম, ফকীহ, মুহাদ্দিস ও মুজতাহিদ হতে হলে আরবি ভাষায় পণ্ডিত হতে হয়। দক্ষতা অর্জন করতে হয় ব্যাকরণে, সাহিত্যে।
ইসলামি জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা ভালোভাবে জানতে হলে আরবি ভাষার জ্ঞান অত্যাবশ্যকীয়। একজন মুসলিম পণ্ডিত; কুরআন-সুন্নাহ নিয়ে ইজতিহাদ-গবেষণা করতে চাইলে তাকে আরবিভাষার নাহু-সরফের জ্ঞান, শব্দভান্ডার, ব্যাকরণ, অলঙ্কারশাস্ত্র ইত্যাদি সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমানে জ্ঞান রাখতে হয়। কুরআন ও সুন্নাহ ইসলামি সভ্যতার মূল ভিত্তি। অতএব, ইসলাম নিয়ে যে কোনো গভীর অধ্যয়নের সাথে আরবি ভাষার অধ্যয়ন থাকা অত্যন্ত জরুরি।
এ জন্য আমাদের মাদরাসাসমূহে আরবি ভাষা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পাঠ-পঠনের ব্যবস্থা করা হয়। তবে, আমাদের কওমী মাদরাসাগুলোর আরবি পাঠ্যক্রমের চূড়ান্ত লক্ষ্য আরবি ভাষা ও সাহিত্যে পাণ্ডিত্য অর্জন নয়, বরং এর মূল লক্ষ্য মাওলানা মুহিউদ্দিন ফারুকীর ভাষায়:
- বিশুদ্ধভাবে আরবি ইবারত পাঠ করার দক্ষতা অর্জন।
- আরবি ভাষায় লিখিত গ্রন্থাদি পাঠ করে এর মর্ম উপলব্ধি করার দক্ষতা অর্জন।
- পবিত্র কুরআন ও হাদীসের অসাধারণ ভাষাগত নৈপুণ্যের সাথে পরিচিতি লাভ।
অবশ্যই অনেক অভিজ্ঞ আলিম বলেন, বর্তমানে মাদরাসার আরবি পাঠ্যক্রমেও এমন মৌলিক উপাদান রয়েছে যার মাধ্যমে একজন প্রতিভাধর শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত সাধনা ও অনুশীলনের মাধ্যমে আরবি ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জনে সক্ষম হতে পারে। বাস্তবেও এর প্রমাণ লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে যেসকল কওমী মাদরাসায় ‘মুআল্লিমুল ইনশা’ এবং ‘আত-তারীকু ইলাল আরাবিয়া’ (এসো আরবি শিখি) ‘আততামরীনুল কিতাবী’, ‘কাছাসুন নাবিয়্যীন’, ‘আল কিরাআতুর রাশেদাহ’ ও ‘মুখতারাত’ ইত্যাদি কিতাবগুলো নেসাবের অন্তর্ভুক্ত সেখানে বিষয়টি বেশি সহজ হয়। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ভাষা চর্চা ও সাহিত্য চর্চা একই বিষয় নয়। নিরেট সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে ব্যবহারিক জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় ভাষিক দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব নয়। কারণ, যে কোনো ভাষার প্রাচীন সাহিত্যধর্মী গদ্য ও পদ্যের ভাষা হচ্ছে দুর্বোধ্য, দৈনন্দিন জীবনে অব্যবহৃত এবং ব্যবহারিক জীবনের ভাষিক প্রয়োজন পূরণে অক্ষম। এই বাস্তবতা কেবল আরবি ভাষার ক্ষেত্রেই নয় পৃথিবীর জীবন্ত যে কোনো ভাষার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ও লক্ষ্যণীয়। তাই আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, আরবি সাহিত্যের প্রাচীন পদ্য ‘আস সাবউল মু‘আল্লাকাত’, ‘দিওয়ানুল হামাসা’, ‘দিওয়ানুল মুতানাববী’ এবং প্রাচীন গদ্য ‘মাকামাতে হারিরী’ ইত্যাদি প্রামাণ্য ও উচ্চাঙ্গের সাহিত্য গ্রন্থ। কুরআন-সুন্নাহ ও প্রাচীন ইসলামি সাহিত্যের কিতাবাদি বুঝতে এগুলোর অবদান অনস্বীকার্য| তবে বাস্তবতা হলো, এগুলো পাঠ করে দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহারিক ভাষা শিক্ষা করা আদৌ সম্ভবপর নয়। আর এ কারণেই ছাত্ররা এসব গ্রন্থাদি পাঠ করেও ভাষাগত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার জন্য নতুন করে ভাষাচর্চা করতে বাধ্য হয়। কারো তত্ত্বাবধানে অনুশীলন করতে হয়।
আমাদের সময়ে জামিয়া পটিয়ায় আন-নাদী আস-সাকাফী ভাষা ও সাহিত্য চর্চার এক অন্যন্য সুযোগ ছিল। আমরা সেখানে আরবি ও বাংলা ভাষা চর্চার সুর্বণ সুযোগ পেতাম। এখনো ছাত্ররা সে ধারাটি চালু রাখতে পারেন। মেহনতী ও মেধাবী ছাত্ররা একত্রিত হয়ে সে চর্চা পুনর্জীবিত করা বড় প্রয়োজন। সেটি হোক আর না হোক অন্তত এইটুকু মেহনত দিয়ে আরম্ভ করুন। ভাষা ও সাহিত্যের রুচিসম্পন্ন কোনো উস্তাদের তত্ত্বাবধানে এবং তার নিদের্শনা মতো তামরীন চালিয়ে যান। যদি এই সুযোগও না হয়, তাহলে আদর্শবান, সৎ চরিত্রের অধিকারী পারদর্শী কোনো বড় ভাইয়ের অনুকূলশীতল ছায়াতলে মেহনত করলে অনেক উপকৃত হবেন। আরবি ভাষা ও সাহিত্যের পরিচয় ও করণীয় সম্পর্কীয় মাওলানা মুহিউদ্দীন ফারুকীর নাতিদীর্ঘ আর্টিকেলের নির্বাচিত অংশ আপনাদের সামনে পেশ করা হলো।
আরবি সাহিত্যের পরিচয়
আরবিতে ‘আদব’ শব্দের একাধিক সংজ্ঞা রয়েছে। এখানে আমরা কেবল তিনটি সংজ্ঞা তুলে ধরতে চাই। এর দুটো হল সাধারণ সংজ্ঞা, আর অপরটি হল ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি কেন্দ্রিক সংজ্ঞা। আদবের দুটো সাধারণ সংজ্ঞ নিম্নরূপ:
الأدب هو الكلام الإنشائي البليغ الذي يقصد به إلى التأثير في عواطف القراء والسامعين سواء كان شعرا أم نثرا. (د. شوقي ضيف: تاريخ الأدب العربي)
অর্থ: সাহিত্য হচ্ছে বিরচিত প্রাঞ্জল বক্তব্য সেটা কাব্য হোক অথবা গদ্য যার লক্ষ্য হচ্ছে পাঠক ও শ্রোতাবৃন্দের আবেগকে প্রভাবিত করা।
الأدب إنما هو ألفاظ مختارة وتراكيب متقنة وأساليب مجودة, معان مؤثرة. (د. عبد العزيز بن محمد الفيصل: الأدب العربي وتاريخه(
অর্থ: সুচয়িত শব্দাবলী, বলিষ্ঠ গঠনরীতি, সুষমামন্ডিত রচনাশৈলী এবং হৃদয়গ্রাহী অর্থমালাই হচ্ছে সাহিত্য।
ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি কেন্দ্রিক আদব বা সাহিত্যের সংজ্ঞা হচ্ছে নিমণরূপ:
كل شعر أو نثر يؤثر في النفس، ويهذب الخلق، ويدعو إلى الفضيلة، ويبعد عن الرذيلة بأسلوب جميل. (د. عبد العزيز بن محمد الفيصل: الأدب العربي وتاريخه(
অর্থ: সাহিত্য হচ্ছে এমন প্রতিটি কাব্য বা গদ্য যা নান্দনিক প্রকাশভঙ্গির মাধ্যমে হৃদয়ে প্রভাব সৃষ্টি করে, চরিত্রকে পরিশীলিত করে, শালীনতার প্রতি আহবান করে এবং অশালীনতা হতে দূরে রাখে।
উপরোক্ত সংজ্ঞা দ্বারা বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, সাহিত্য কেবল ব্যাকরণের কিছু নিয়ম কানুন ও হাজার খানেক শব্দ মুখস্থ করার নাম নয় এবং দুর্লভ বর্ণনাভঙ্গি ও কিছু দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার করে দু’একটা রচনা লেখাও সাহিত্য চর্চা নয়। সাথে সাথে এ বিষয়টিও সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, লেখক মাত্রই সাহিত্যিক নয়। বরং সাহিত্যিক হতে হলে আরও অনেক ভাষিক গুণ ও প্রতিভার অধিকারী হতে হয়। যে কোনো ভাষায় সাহিত্য চর্চার জন্য প্রাথমিকভাবে যে বিষয়গুলো অপরিহার্য তা হচ্ছে:
১. শব্দমালা (المفردات),
২. ব্যাকরণ (النحو والصرف),
৩. শব্দতত্ত্ব (علم المعاني),
৪. বর্ণনাবিদ্যা (علم البيان),
৫. শব্দালঙ্কার (علم البديع),
৬. ছন্দশাস্ত্র (علم العروض),
৭. কল্পনা (الخيال),
৮. আবেগ (العاطفة)|
মৌলিক ভাষিক যোগ্যতা বিশেষ করে পড়া ও বলার যোগ্যতা যথাযথ ও কাঙ্ক্ষিত মানে অর্জন করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে এবং সেগুলোর বাস্তব প্রয়োগে যত্নবান হতে হবে। বিষয়গুলো হচ্ছে:
- উচ্চারণের বিশুদ্ধতা (صحة النطق),
- শব্দ কাঠামোর বিশুদ্ধতা (صحة الضبط),
- ই’রাবের বিশুদ্ধতা (صحة الإعراب),
- বাচনভঙ্গির বিশুদ্ধতা (صحة الأداء)|
নিঃসন্দেহে বিশুদ্ধ উচ্চারণ ও যথার্থ বাচনভঙ্গি পৃথিবীর যে কোনো ভাষায় বলা ও পড়ার যোগ্যতা অর্জনের জন্য অপরিহার্য বলে বিবেচিত। তবে সাধারণ লিখিত আরবি ভাষায় যেহেতু স্বরচিহ্ন বা ধ্বনিচিহ্ন (حركات) থাকে না, সাথে সাথে আরবি ভাষায় এমন অনেক শব্দ আছে যার একাধিক কাঠামো থাকলেও তা একক বানানে লেখা হয় তাই সেগুলো পড়ার সময় বাক্যের পূর্বাপর ও প্রসঙ্গ অনুযায়ী সঠিক কাঠামো নির্ণয় করে তা উচ্চারণ করতে হয়। এ জন্য আরবি শব্দের একাধিক কাঠামো ও কাঠামোভেদে অর্থের পার্থক্যটা বিশেষভাবে জানতে হয়। এর জন্য শিক্ষার্থীদেরকে পরিশ্রম করতে হয় এবং ব্যাপক অনুশীলন করতে হয়। তাই কোনো ছাত্র যদি স্বরচিহ্নবিহীন কোনো আরবি লেখা বিশুদ্ধ উচ্চারণ, বিশুদ্ধ এ‘রাব ও সঠিক শব্দ কাঠামো রক্ষা করে পড়তে পারে তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায় সে আরবি ভাষা শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অতিক্রম করেছে। কাজেই এ বিষয়ে শিক্ষক ও প্রশিক্ষকদেরকেও সজাগ থাকতে হবে এবং তাঁদের মাঝেও এ গুণ পরিপূর্ণরূপে না হলেও যথার্থ ও যুক্তিযুক্ত পর্যায়ের হতে হবে।
আরবি ভাষায় লিখন যোগ্যতা অর্জনে করণীয়
আরবি শিক্ষার্থীকে লিখন যোগ্যতা অর্জনের জন্য:
- অবশ্যই আরবি ভাষায় তার শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ করতে হবে।
- বানানের নিয়ম-কানূন শিখতে হবে।
- ব্যাকরণসম্মত ও অর্থপূর্ণ বাক্যগঠন পদ্ধতি জানতে হবে।
- ব্যাকরণ অনুযায়ী একক বিষয়ভিত্তিক পরস্পর যুক্ত ও সুবিন্যস্ত বাক্য গঠনের অনুশীলন করতে হবে।
- প্রাথমিক স্তরের ছাত্রদেরকে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন ও সরল বাক্য গঠনের অনুশীলন করতে হবে।
- পর্যায়ক্রমে তাদের মাঝে বিষয়ভিত্তিক ও বিভিন্ন আকার আকৃতির সরল, যৌগিক ও জটিল বাক্য গঠনের যোগ্যতা সৃষ্টি করতে হবে।
- একই বক্তব্য শব্দ পরিবর্তন এবং বাক্য কাঠামো ও বর্ণনাভঙ্গি পরিবর্তন করে ব্যক্ত করার অনুশীলনও করতে হবে। এ লক্ষ্যে ভাষা শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই বিভিন্ন বর্ণনাভঙ্গির (أساليب البيان) সাথে পরিচিত হতে হবে এবং কোনো বিষয় বা বক্তব্যের জন্য কোনো বর্ণনাভঙ্গি উপযোগী সেটাও ভালো জানতে হবে এবং সে অনুযায়ী বর্ণনাভঙ্গিতে পরিবর্তন ও বৈচিত্র আনতে হবে। তা না হলে তারা একই ধরনের বাক্য গঠনে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে এবং একই ধরনের বর্ণনাভঙ্গির মাঝে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে।
লক্ষ্যণীয় বিষয় যে, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক ছাত্র কেবল সাহিত্যধর্মী রচনা পড়ে এবং তা অনুকরণ করতে শিখে। তাদের সব বিষয়ের রচনায়ই এই সাহিত্যধর্মী বর্ণনাভঙ্গির সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ করা যায়। এমনকি নিরেট গবেষণাধর্মী ও সাধারণ বিষয়ের লেখাতেও তারা ঐ একই সাহিত্যধর্মী বর্ণনাভঙ্গি ব্যবহার করে থাকে, যা অত্যন্ত দোষণীয়। কারণ আরবি প্রবাদবাক্যে সুস্পষ্টরূপে বলা হয়েছে, لكل مقام مقال অর্থাৎ অবস্থা ভেদে বক্তব্য হতে হবে। যেমন বিষয় হবে বর্ণনাভঙ্গিও তেমনি হতে হবে। অন্যথায় তা দোষণীয় বলে বিবেচিত হবে।
ব্যবহারিক আরবি বলার যোগ্যতা অর্জনে করণীয়
সমসাময়িক বিষয় ও ব্যবহারিক জীবনের উপযোগী আরবি ভাষা শিখতে হলে অবশ্যই আরবি পত্র-পত্রিকা পড়তে হবে এবং সেখান থেকে শব্দ শিখতে হবে। কারণ পত্রিকা হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম যা জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় শব্দ ও পরিভাষা উপস্থাপন করে থাকে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র সম্পর্কিত বিভিন্ন সংবাদ ও প্রবন্ধাদি প্রকাশ করার মাধ্যমে। যে কোনো জীবন্ত ও বহুল ব্যবহৃত ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রের বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা ভাষাবিজ্ঞানীগণ স্বীকার করেন এবং ব্যবহারিক জীবনের উপযোগী যে কোনো ভাষা শিক্ষার জন্য ঐ ভাষার পত্র-পত্রিকা পড়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই আধুনিক ও ব্যবহারিক আরবি ভাষা শিখতেও এই একই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। একটা কথা আমাদের ভালো করেই মনে রাখতে হবে যে, ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের যেসব আরবি গ্রন্থ সমসাময়িক যুগের লেখকগণ রচনা করেছেন সেগুলো পড়ে বুঝার জন্যও আমাদেরকে এই আধুনিক ও ব্যবহারিক আরবি ভাষা শিখতে হবে। কাজেই আমাদেরকে আরবি সংবাদপত্র পঠন ও অনুধাবনের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করতে হবে এবং এর জন্য যোগ্য ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের স্মরণাপন্ন হতে হবে।
পরিশেষে যে বিষয়টির প্রতি আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক ও প্রশিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই তা হল, ভাষিক যোগ্যতা অর্জনের জন্য আমাদের ভাষা চর্চাটা হতে হবে সামগ্রিক এবং তা অবশ্যই ব্যবহারিক, তাত্ত্বিক ও জ্ঞান-বিজ্ঞান ভিত্তিক এবং প্রয়োজন পূরণে হতে হবে কার্যকর ও ফলপ্রসূ। আর এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ভাষা চর্চার পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়েও নিয়মতান্ত্রিক ও বাস্তবভিত্তিক সাধনা ও অনুশীলন। অন্যথায় আমাদের পক্ষে কাঙ্ক্ষিত মানের আরবি ভাষা শিক্ষাও সম্ভব হবে না এবং আরবি সাহিত্য চর্চাও সম্ভব হবে না।
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা! আশা করি আরবি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে যারা এগিয়ে যেতে চান তাদের জন্য উপরোক্ত দিকনির্দেশনাগুলো দীপ্তিময় উজ্জ্বল প্রদীপের কাজ দেবে, ইন শা আল্লাহ।
সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী
শিক্ষা পরামর্শ
উত্তর দিচ্ছেন: সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী
প্রশ্ন: বর্তমানে আমাদের কওমী অঙ্গনে কিছু কিছু ছাত্ররা ইসলামি রাজনৈতিক সংগঠনে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। আবার অনেকে তা প্রত্যাখান করে। তেমনি অনেক ছাত্র বাড়ি-ঘরে গিয়ে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন কিংবা সদস্য হয়ে থাকেন।
অতএব জানার বিষয় হলো ছাত্র জীবনে রাজনৈতিক সংগঠনে সম্পৃক্ত হওয়া কিংবা সামাজিক সংগঠনের সদস্য হওয়া ছাত্রদের জন্য উচিত কি না? ছাত্র রাজনীতির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন, আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন।
মুহাম্মদ ইমরান টেকনাফী
শিক্ষার্থী, জামায়াতে পঞ্জুম, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
উত্তর: ছাত্রদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ সম্পর্কে হাকিমুল উম্মাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.) বলেন, আমার দৃষ্টিতে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রদের অংশগ্রহণ উচিত নয়। কেননা, তাতে তাদের ভবিষ্যত মারাত্মক ঝুঁকিতে পতিত হবে, যা হয়ত এখন অনুভূত হচ্ছে না। আমার প্রশ্ন হলো পাঠ-পঠনে যদি একদল লোক নিয়োজিত না থাকে তাহলে কাজ করার মতো যোগ্যতা সম্পন্ন জামায়াত কোথায় থেকে সৃষ্টি হবে? যারা হবেন উম্মতের রাহবর, যাদের কাছ থেকে উম্মত দিকনির্দেশনা গ্রহণ করবে!
অতঃপর হযরত থানভী (রহ.) কিছু কিছু ওলামায়ে কেরাম যাঁরা ছাত্র রাজনীতির পক্ষে তাঁদেরকে সম্বোধন করে বলেন, আপনারই রাজনীতি করুন। ছাত্রদেরকে আপন কাজে ব্যস্ত থাকতে দিন। যেন তারা জাতিকে ভবিষ্যতের দিশা দিতে পারে। উম্মতের মধ্যে যোগ্যতা সম্পন্ন জামায়াতের ধারা অব্যহত রাখতে হবে। আপনি কি মনে করেন যে, ভবিষ্যতে দীনের জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য যোগ্য লোকের প্রয়োজন হবে না? যেমনটি বলা হচ্ছে যে, ‘এখন কাজ করার সময় মাসআলা জানার সময় নয়।’ কেউ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুক, আজ যারা নেতৃত্বে এসেছে তারা তো পড়া-লেখার বদৌলতেই এসেছে। হায় আফসোস! আজ তারাই পড়া-লেখার শিকড় নির্মূল করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন!
অতএব ছাত্রদেরকে সব ধরনের কমিটি, সংস্থা, রাজনীতি ও সভা-সমিতি থেকে বিরত রাখতে হবে। কেননা, এগুলো ছাত্রদের জন্য মারত্মক ক্ষতির কারণ। আচ্ছা বলুন তো, এই কাজের জন্য আমাদের সমাজে ছাত্ররা ব্যতীত অন্য কেউ নেই? সমাজে সাধারণ মুসলমানদের সংখ্যা কি কম? (কখনো নয়) সুতরাং তাদের মাধ্যমেই এই কাজটি আঞ্জাম দেয়া উচিত। ছাত্রদেরকে এখানে জড়ানো মোটেও উচিত হবে না। (আল-ইযাফাত, ১/৯৯, তুহফাতুল ওলামা, ১/২৩০)
অন্যত্রে থানভী (রহ.) বলেন, ইউরোপ-আমেরিকায় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। সুবহানাল্লাহ! যেখান থেকে এখানকার লোকেরা রাজনীতি শিখেছেন সেখানকার লোকেরা ছাত্রদেরকে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করেন। কেননা, তারা বুদ্ধিমান লোক। তারা জানেন যে, ছাত্ররা যদি জ্ঞান অর্জনের সময়ে রাজনীতিতে অংশ নেয় তাহলে তারা জ্ঞান শূণ্য হয়ে যাবে। নিজেদের মূল্যবান সময়কে অনর্থক কাজে নষ্ট করে দেবে। অতএব, তাদের হৃদয়-মন এবং সময়কে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করা অতিআবশ্যক। যেন তারা সফলতার পদচুম্বন করতে সক্ষম হন।
সুতরাং দেশীয় রাজনীতি; যার ভিত্তি হলো ধোঁকা-প্রবঞ্চনা, মিথ্যা ও প্রতারণার ওপর, তা থেকে ছাত্রদের অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। কেননা, ছাত্র রাজনীতির কারণে ছাত্রদের একাগ্রতা ও স্থিরতা, প্রশান্তি ও স্থায়িত্ব নষ্ট হয়ে যায়। যা ইলম অর্জেন জন্য খুবই মারাত্মক ক্ষতিকারক। (তুহফাতুত তোলাবা ওয়াল ওলামা, পৃ. ৩৮১)
অতএব যতোদিন আমরা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী হয়ে থাকবো ততদিন সবধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করবো, আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন।
প্রশ্ন: শিক্ষার্থীরা বিরতির দিনগুলো কীভাবে কাটাবে? জানালে উপকৃত হবো।
মুহাম্মদ রাশেদ
ছাত্র, ৩য় বর্ষ, শর্টকোর্ট বিভাগ, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
উত্তর: বিরতিহীন জীবন দীর্ঘ সময় পর্যন্ত চলমান রাখা যায় না। তাই যে কোনো কাজের ফাকে ফাকে একটু বিরতি নিতেই হয়। তাই, যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিরতির জন্য কিছু সময় নির্ধারিত থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশনা, সালাফে সালেহীনের জীবনচরিত এবং সাধারণ বিবেকের দাবিতেও একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত এর প্রয়োজনীয়তা প্রমাণিত হয়। কিন্তু এই বিরতি যাকে আমরা ছুটি বলে থাকি তার উদ্দেশ্য কী, এবং এ সময়টা বিশেষত আমাদের সামনের সুদীর্ঘ বিরতির দিনগুলো কীভাবে কাটানো উচিত? এ সম্পর্কে আপনার এই প্রশ্নটি অত্যন্ত যৌক্তিক ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং এই প্রশ্নের উত্তরে মাসিক আল-কাউসারের তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা আবদুল মালেক (হাফিজাহুল্লাহ) এর চমৎকার একটি নিবন্ধের সারনির্যাস পেশ করা হলো। আশা করি প্রবন্ধটি পড়লে যথার্থ উত্তর পেয়ে যাবেন।
মূলত ইসলামে যে আভিধানিক অর্থে ছুটির কোনো ধারণা নেই এ কথাতো খুবই স্পষ্ট। এজন্যই নির্ধারিত সময়ে করণীয় ফরয ইবাদতসমূহে এক ওয়াক্তেরও ছুটি নেই। অনুরূপ সীমিত পর্যায়ের যে ছুটি তার সময়গুলোও। অনর্থক কাজকর্মে নষ্ট করার অনুমতি ইসলাম দেয় না। ছুটির মর্ম হল কাজের ধরন ও নিয়ম পরিবর্তন করা। মাদরাসা খোলা অবস্থায় নিয়মিত কাজের চাপে যে কাজগুলো করার সুযোগ হয়ে ওঠে না ছুটির মধ্যে তা যেন কিছু কিছু করা যায় এবং ছুটির পর যেন নতুন উদ্যমে নির্ধারিত কাজে মনোনিবেশ করা যায়। এজন্য আমাদের বড়দের অভ্যাস ছিল, তারা ছুটির দিনগুলোর জন্য আলাদা নেজামুল আওকাত’ রাখতেন এবং তাদের বিশেষ ছাত্রদেরকেও এই নির্দেশনা দিতেন যে, তারা যেন নিজ নিজ তালীমী মুরব্বীর পরামর্শক্রমে ছুটির দিনগুলোর একটি নেযাম’ সামনে রাখে, যাতে ছুটির উদ্দেশ্য হাসিল হয়।
বিরতিতে যে কাজগুলো করণীয়
বিরতির দিনগুলোতে অন্য সময়ের চেয়ে বিশ্রাম ও তাফরীহর জন্য কিছুটা বেশি সময় বরাদ্দ রাখতে অসুবিধা নেই। কেননা এটাও ছুটির একটা বিশেষ উদ্দেশ্য। এছাড়া অন্য দিনগুলোতে যেহেতু আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা ও তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া সম্ভব হয় না তাই এটিও এ সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হওয়া উচিত। কিন্তু এই দেখা-সাক্ষাতের পর্ব সারতেই যদি গোটা বিরতি শেষ হয়ে যায় আর যাদের হক সবচেয়ে বেশি সেই পিতা-মাতার খেদমত এবং অন্যান্য জরুরি কাজকর্ম করা সম্ভব না হয় তাহলে তা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। যদি বুঝেশুনে সময় খরচ করা হয় তাহলে অতি অল্প সময়ের মধ্যেও আত্মীয়-স্বজনের মুলাকাত থেকে অবসর হওয়া যায়। এই দীর্ঘ বিরতিতে আরো যে জরুরি কাজগুলো করা সম্ভব তা হচ্ছে,
এক. করআন মজীদের
সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা
কুরআন মজীদের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে বেশি বেশি তেলাওয়াত করা, মুখস্ত অংশটুকুর ‘দাওর করা এবং কুরআনের অর্থ ও মর্ম মন-মানসে অঙ্কিত করার জন্য চিন্তা-ভাবনার সাথে কুরআন তেলাওয়াত করা। প্রয়োজন হলে কোনো নির্ভরযাযোগ্য সংক্ষিপ্ত তাফসীর সামনে রাখা। চিন্তা-ভাবনার সময় দুটি বিষয়ের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে।
(ক) কুরআনের নির্দেশনা ও দাবি। অর্থাৎ কুরআন আমাদের নিকট কী চায় এবং কুরআনের কোনো কোনো আয়াতে কী কী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এ ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া।
(খ) আয়াতের মর্ম শুদ্ধ ও সাবলীল ভাষায় প্রকাশ করার যোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা।
কুরআন মাজীদই একজন আলেম ও তালেবে ইলমের আসল পুঁজি। এর সঙ্গে সম্পর্ক যত মজবুত হবে ততই কল্যাণ ও সৌভাগ্য লাভ হবে। কুরআনের সঙ্গে শুধু দরসি সম্পর্ক (যা সাধারণত শুধু তরজমা পড়া এবং নামমাত্র সামান্য তাফসীর পড়ে নেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে) একজন তালেবে ইলমের পক্ষে শোভনীয় নয়; যেখানে আল্লাহ তাআলা তাকে কুরআন থেকে এবং উলুমুল কুরআনের কিতাবাদি থেকে সরাসরি উপকৃত হওয়ার তাওফীক দিয়েছেন। কুরআনের অর্থ ও মর্ম নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার সময় ‘বায়ানুল কুরআন’ ‘মা’রিফুল কুরআন’ এবং তাফসীরে ওসমানী এর কোনো একটা সামনে থাকা উচিত, যাতে প্রয়োজনের মুহূর্তে তার সাহায্য নেওয়া যায়। কুরআনের হেদায়াত ও নির্দেশনা গ্রহণ করার জন্য শায়েখ আবু বকর জাবের আল-জাযায়েরীর ‘আইসারুত তাফাসীর’ এবং হযরত মাওলানা মনযূর নুমানী (রহ.)-এর ‘কুরআন আপ সে কিয়া কাহতা হে’ এই কিতাব দুটির উসলূব ও ধারা থেকে সাহায্য নিতে পারেন।
দুই. দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে সময় দেওয়া
এটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। বিতির মধ্যে যদি চিন্তা বা ২০ দিনের জন্য বের হওয়া সম্ভব হয়। তাহলে খুবই ভাল। চিল্লার সময়টুক ভালভাবে কাজে লাগানোর জন্য নিজের তা’লীমী মুরীর সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। এরপর রওয়ানা হওয়ার সময়। মারকায থেকে যে হেদায়াত দেওয়া হয় তা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করা উচিত। তাবলীগী সফরের দিনগুলোতে কুরআন তেলাওয়াত, যিক্র ও মুতালাআ ছেড়ে দেওয়া উচিত নয় এবং একজন তালেবে ইলমের অধ্যয়ন শুধু ফাযায়েলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকাটাও সমীচীন নয়। ‘হায়াতুস সাহাবা’, মাওলানা মনযূর নুমানী (রহ.)-এর ‘দীন ও শরীয়ত’ মাওলানা আবুল হাসান আলী নাদভী (রহ.)-এর ‘তারিখে দাওয়াত ও আযীমত’ ইত্যাদি কিতাব কিছু কিছু করে মুতালাআ করা উচিত। পাশাপাশি হযরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)-এর মালফুযাত ও মাকাতুবাত’, মাওলানা আবুল হাসান আলী নাদাভী (রহ.)-এর ‘মাওলানা ইলিয়াছ অওর উনকি দীনি দাওয়াত’ কিতাবটি পড়ে এই কাজের হাকীকত ও আদব সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন করার চেষ্টা করাও কর্তব্য। চিল্লায় বের হওয়া সম্ভব না হলে নিজের এলাকায় কিছু সময় দাওয়াতী। কাজের জন্য বরাদ্দ রাখা উচিত। যেমন কোনো তাবলীগ জামাআত আসলে তাদের নুসরত করা, নামাযের পরে মসজিদে এবং দিন-রাতের কোনো এক সময় নিজের ঘরে আযান, ইকামত, নামায ও সুন্নতসমূহের মশক করানো, কুরআন তেলাওয়াত বিশুদ্ধ করানো ইত্যাদি।
তালেবে ইলমের সূরত-সীরাতে সুন্নতের ইহতেমাম, জামাআতের সাথে নামায আদায় ইত্যাদি বিষয় বিরতির দিনগুলোতেও তেমন থাকা চাই যেমন মাদরাসার চার দেয়ালের ভেতরে থাকে, বরং তার চেয়েও উন্নত রাখার চেষ্টা করা উচিত। এসব বিষয়ে তালেবে ইলমের কোনো ছুটি নেই। বাহ্যিক বেশভূষা, আচার-ব্যবহার এবং চাল-চলনের দিক থেকেও তালেবে ইলমকে দাঈ এবং অন্যের জন্য আদর্শ হতে হবে।
তিন. কোনো ইলমী’ বা ‘আমলী’ প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া
তা’লীমী মুরব্বির পরামর্শ অনুযায়ী এটাও বিরতির দিনগুলোর একটি বিশেষ কাজ হতে পারে। কিন্তু এ ধরনের কাজে কাক্ষিত লক্ষ্য তখনই অর্জিত হবে যদি সময়ের ব্যাপারে। সতর্ক থাকা যায় এবং কাজের নীতি- মালার ব্যাপারে যত্নবান থেকে ইখলাসের সাথে যথাযথ পরিশ্রম করা সম্ভব হয়।
চার. মুতালাআ ও পড়াশোনা
বিরতির দিনগুলোতে অল্প হলেও কিছু সময় বরাদ্দ রাখা উচিত। এই মুতালাআ কয়েক ধরনের হতে পারে। বিগত শিক্ষাবর্ষের কোনো জরুরি বিষয় কাঁচা থেকে গেলে তা পুনরায় পড়ে নেওয়া। আগামী শিক্ষাবর্ষে পঠিতব্য বিষয় ও কিতাবাদির ব্যাপারে প্রাথমিক অধ্যয়ন। তবে মনে রাখতে হবে যে, এই মুতালাআ নির্ভরযোগ্য কিতাব ও উৎস থেকে হওয়া চাই। যেমন, যারা এ বছর ‘কানযুদ কায়িক’ পড়েছেন এবং আগামী বছর ‘শরহুল বিকায়া’ পড়বেন তারা ‘উমদাতুর রিআয়া’ এর ‘মুকাদ্দিমা’ পড়ে নিবেন। যারা ‘হিদায়া’ পড়বেন তারা আল্লামা আবদুল হাই লাখনোভী (রহ.)-এর যে ভূমিকাসমূহ আছে তা পড়ে নিবেন। যারা ‘হিদায়া’ আখেরাইন পড়বেন তারা ড. আল্লামা খালেদ মাহমূদের ‘আসারুত তাশরী’ মুতালাআ করে নিবেন। অনুরূপ যারা ‘জালালাইন’ পড়বেন তারা মাওলানা মুহাম্মদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুমের ‘উলূমুল কুরআন’ এবং ড. আবু শাহবার ‘আল-ইসরাঈলিয়াত ওয়াল মাউজুআত’ বা এর আলোকে প্রস্তুতকৃত মাওলানা আসীর আদরাবীর উর্দু কিতাবটি মুতালাআ করবেন। যারা মেশকাত পড়ার ইচ্ছা রাখেন তারা ড. আবদুল হালীম চিশতীর ‘আল-বুজাআতুল মাযাজাত’ (এটি মুলতান ও দেওবন্দ থেকে প্রকাশিত ‘মেরকাত’ এর শুরুতে সংযুক্ত আছে) এবং ড. খালেদ মাহমূদের ‘আসারুল হাদীস’ মুতালাআ করে নিতে পারেন। আর যারা আগামী শিক্ষাবর্ষে দাওরায়ে হাদীসে ভর্তি হবেন তারা ‘ইবনে মাজাহ অওর ইলমে হাদীস’ এবং মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রশীদ নুমানী (রহ.) এর; ‘মা তামাসসু ইলাইহিল হাজাহ’ (মুকাদ্দামায়ে ইবনে মাজাহ আরবি) ইত্যাদি অধ্যয়নে রাখতে পারেন। এভাবে প্রতি জামাআতের তালেবে ইলমগণ আসাতেযায়ে কেরাম বিশেষত নিজের তালীমী মুরব্বীর নির্দেশনাক্রমে মুতালাআযোগ্য কিতাব নির্বাচন করে নিবেন।
পাঁচ. দীনী প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্রসমূহ এবং বড় বড় কুতুবখান পরিদর্শন করা
তালেবে ইলমের ছুটির দিনগুলোতে দীনী প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্রসমূহ এবং বড় বড় কুতুবখান পরিদর্শন করা যেতে পারে। এতে ইলমী ও আমলী ময়দানে অভিজ্ঞতা বাড়ে এবং গুরুত্বপূর্ণ রাসায়েল ও গ্রন্থাদির ব্যাপারে জ্ঞান-ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। কিন্তু শেষ কথা হল, যা কিছুই করবেন আপনার তালীমী মুরব্বীর পরামর্শ ও নির্দেশনাক্রমেই করবেন এবং একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য …। (তালিবানে ইলম: পথ ও পাথেয়, পৃ. ৫০)
ঘোষণা
(সমস্যা নিয়ে আর নয় অস্থিরতা, সমাধানই হোক আমাদের অগ্রযাত্রা)
শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আপনাদের সহযোগিতা ও দিক-নির্দেশনার লক্ষ্যে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার মুখপাত্র, ইসলামী গবেষণা ও সৃজনশীল সাহিত্য পত্রিকা মাসিকআত-তাওহীদে নিয়মিত বিভাগ ‘শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পমার্শ’ চালু করা হয়েছে। উক্ত বিভাগে একদিকে থাকবে আপনাদের জন্য নিয়মিত দিক-নির্দেশনা মূলক প্রবন্ধ। অপরদিকে থাকবে আপনাদের সমস্যা-সমধান নিয়ে শিক্ষা পরামর্শ।
অতএব এখন থেকে সমস্যা নিয়ে আর নয় অস্থিরতা, সমাধানই হোক আমাদের অগ্রযাত্রা’ শ্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাবো উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে। সুতরাং শিক্ষা বিষয়ক যে কোন সমস্যা আমাদের নিকট লিখুন এবং টেনশানমুক্ত জীবন গড়ুন। আমরা আপনার সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট থাকবো এবং অতিদ্রুত সময়ে যথার্থ সমাধান পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ইনশা আল্লাহ। আল্লাহই তাওফীকদাতা।
যোগাযোগের ঠিকানা
বিভাগীয় সম্পাদক
শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পরামর্শ বিভাগ
মাসিক আত-তাওহীদ
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
ই-মেইল: hmsalimuddin22@gamil.com