জামেয়া ওয়েবসাইট

সোমবার-৯ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-১৪ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দাওয়াতী কাজে মুসলিম নারী একটি ভুলে যাওয়া ভূমিকা

দাওয়াতী কাজে মুসলিম নারী একটি ভুলে যাওয়া ভূমিকা

রাবেয়া রওশন

 

ভূমিকা

ইসলামের ইতিহাসের একদম সূচনালগ্ন থেকেই থেকেই দীনের মৌলিক সত্য প্রচারে নারীদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুমাইয়া (রাযি.)-এর আত্মত্যাগ থেকে শুরু করে হযরত আয়িশা (রাযি.)-এর হাদীস সংগ্রহ পর্যন্ত দীনের প্রচারে ও প্রসারে মেয়েরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে এসেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বর্তমান সময়ে ইসলামি জাগরণে উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের প্রচণ্ড অভাব অনুভূত হচ্ছে যা দীন প্রচারকে কিছু অভিজাত শ্রেণির মাঝে সীমাবদ্ধ রেখেছে। এর ফলে মেয়েদের মাঝে দাওয়াতী কাজের ব্যাপ্তি খুব সীমিত হয়ে পড়েছে।

মেয়েদের মাঝে দাওয়াতী কাজ আসলে আরও অনেক বেশি মনোযোগের দাবিদার কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দাওয়াতী কাজ থেকে মেয়েদের দূরে রাখা হয়েছে। আমরা যদি বাস্তবতার দিকে তাকিয়ে দাওয়াতী কাজের অবস্থা ও বর্তমানে এই ক্ষেত্রে মেয়েদের অবস্থানের প্রতি নজর দেই তাহলে সহজেই আমাদের নিম্নোক্ত সমস্যাগুলো চোখে পড়বে,

  1. মেয়েদের মাঝে ও মেয়েদের দ্বারা দাওয়াতী কাজ করার সক্ষমতার অভাব।
  2. ব্যবহারযোগ্য যে সীমিত সম্পদ রয়েছে তার অপব্যবহার ও সেই সাথে মেয়েদের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগের অভাব।
  3. দাওয়াতী কাজের পরিকল্পনায় মেয়েদের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে অবহেলা করা বা বাদ দেওয়া।
  4. মেয়ে দায়ীদের মাঝে ভালো প্রশিক্ষণ ও দীনের মৌলিক জ্ঞানের অভাব। শুধু কিছু পুরুষ দায়ীদের স্ত্রী ও মেয়েদের মাঝে উপযুক্ত ইসলামি জ্ঞান বিদ্যমান রয়েছে।
  5. বেশিরভাগ মেয়েরা উপলব্ধি করে না যে তাদের স্বামীদের জন্য দাওয়াতী কাজে অংশ নেওয়া বাধ্যতামূলক। যার ফলে তারা ঘরের বাইরে বিভিন্ন প্রজেক্টে স্বামীদের সময় দেওয়ার গুরুত্বকে অনুধাবন করে না। আর এ কারণে ঘরের মাঝে অস্থিরতা বিরাজ করে।
  6. বেশিরভাগ মেয়েদের মাঝে দীনের সাধারণ জ্ঞানের অভাব রয়েছে।
  7. মেয়েদের দাওয়াতী কর্মসূচি ও সেই সাথে সামগ্রিক দাওয়াতী কর্মসূচি ও প্রতিষ্ঠান বিরল। যেগুলো আছে সেগুলোও সুসংগঠিত না।

সমস্যার মূল যেখানে

বিভিন্ন রকম প্রতিবন্ধকতা মেয়েদের মাঝে দাওয়াতী কাজের দুর্বলতা ও অবহেলার পিছনে মূল কারণ। এইসব বাঁধাকে চিহ্নিত করতে পারলে তার সমাধান খুঁজে বের করে সেগুলো বাস্তবে প্রয়োগ করা সম্ভব।

একটা প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, বহু পুরুষ দাওয়াতী ক্ষেত্রে মেয়েদের ভূমিকা ও দায়িত্বের গুরুত্ব উপলব্ধি করে না। প্রায় সময়ই আমরা দেখি পুরুষরা দাওয়াতী ক্ষেত্রে মেয়েদের অংশগ্রহণের বিরোধিতা করে থাকে। এভাবে অন্য মুসলিমদের প্রতি ও বৃহত্তর সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে প্রতিটা মুসলিমের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ড. আয়িশা হামদান, মিনেসোটার মিনিয়াপলিসে অবস্থিত ইসলামিক অ্যাডুকেশন ফাউন্ডেশনের পরিচালক বলেন, ‘স্বামীদের পক্ষ থেকে স্ত্রীদের দাওয়াতী কাজে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে পিএইচডি করেছেন, যেখানে তাঁর স্পেশালাইজেশন ছিল শিশু ওপরিবার বিষয়ে। টুইন সিটিতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষকতা করেন। বছর দুয়েক আগে প্রতিষ্ঠিত হওয়া তাঁর এ প্রতিষ্ঠানটির একটা লক্ষ্য হচ্ছে মুসলিম নারী-পুরুষদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা ও দাওয়াতী ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া। তিনি আরও বলেন, ‘স্বামীদের উচিৎ তাদের স্ত্রীদের দীনের বার্তা প্রচারে উৎসাহিত করা। তারা যখন দাওয়াতী কাজে বাইরে যায় তখন স্ত্রীদের সাথে নিতে পারে। সঠিকভাবে ইসলামকে উপস্থাপন করতে শেখাতে পারে।’

আরও নির্দিষ্ট একটি প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করার ব্যাপারে দায়ীদের মাঝে অনিশ্চয়তা কাজ করে। তাদের অনেকেই উম্মাহর বর্তমান পরিস্থিতিতে আবেগাপ্লুত ও বিভ্রান্ত। এমনকি এই কারণে তারা নিজের পরিবারের প্রতি সঠিক মনোযোগ দিতেও অবহেলা করে। তাদের সমস্ত শক্তি বাড়ির বাইরে কাজ করেই নিঃশেষ হয়ে যায়। এই অসমতা শুধু পরিবারকেই ক্ষতিগ্রস্থ করে না বরং পুরো সমাজকেই ক্ষতিগ্রস্থ করে।

মেয়েদের শিক্ষার স্তর, তাদের অবস্থান এবং দায়িত্বের প্রতি সচেতনতা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষা ও সচেতনতা কমে গেলে তাদের দেওয়ার মনোভাব কমে যায়, ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা কমে যায়। ড. হামদান বলছিলেন, ‘দুঃখজনকভাবে, খুব বেশি মুসলিম মেয়ে মনে করে না যে তারা ইসলাম সম্পর্কে যথেষ্ট জানে ও তা অন্যদের জানাতে পারে। তাদের বুঝতে হবে যে এই জ্ঞান অর্জন করে তা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া তাদের দায়িত্ব। অনেক মেয়ে বিভিন্ন কারণে মানুষের সামনে কথা বলতে অস্বস্তিবোধ করে। এ কারণে কিভাবে দাওয়াতী কাজ করতে হয় তার ওপর আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। মেয়েরা যেন প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে আত্মবিশ্বাসের সাথে মুসলিম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রায়শই অবহেলিত এই দায়িত্ব পালন করতে পারে, তার জন্য আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’

ভোগ-বিলাসিতা মেয়েদের বাধ্য করে সেসবের পেছনে বেশি সময় দিয়ে দাওয়াতী কাজের পেছনে কম সময় দিতে, যদিও বা সেটা হালাল বিলাসিতাও হয়। যখন তারা অধিকার ও কর্তব্যের মাঝে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে না তখনও এমনটা হয়। কখনো আবার মেয়েরা কক্ষচ্যুত হয়ে যায়, ভুলে যায় যে ঘরের কাজই হচ্ছে তাদের প্রধান কাজ। এই ভূমিকাকে অবহেলা করার ফলে বা অগ্রাধিকার নির্ধারণকরতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে কিংবা এমন কোন কাজ যা তাদের মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে নেয়, তাতে জড়িয়ে পড়ার কারণে তারা ঘরে ও বাইরে দাওয়াতী কাজে নিজেদের ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়। ড. হামদান আরও বলেন, ‘অনেক মেয়ের জন্যই ঘরের ভেতর স্ত্রী, মা, রাঁধুনী ও শিক্ষিকার কাজগুলো এত বেশি সময় সাপেক্ষ যে প্রায় সময়ই দাওয়াতী কাজে অংশগ্রহণের প্রধান বাধা হচ্ছে সময়ের অভাব। এই কারণে ঘরে ও বাইরে স্ত্রীদের দায়িত্ব পালনে স্বামীদের সহযোগিতা করা এতটা গুরুত্বপূর্ণ।’

আরও একটি দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, বেশিরভাগ দাওয়াতী সংগঠনগুলো মেয়েদের প্রাণশক্তিকে আত্তস্থ ও সদব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই সাথে তারা নিজেদের দাওয়াতী কর্মসূচির মাঝেও এমনভাবে সামঞ্জস্যতা আনতে পারেনি যাতে করে মেয়েরা তাদের মৌলিক সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

মিডিয়া ও এই বিশৃঙ্খল সমাজের আরও অনেক উপাদানই মুসলিম মেয়েদের মনে বিশাল বড় প্রভাব ফেলে থাকে। এই মানসিক বৈকল্য অনেক মেয়েকেই তাদের দায়িত্ব থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে ও তাদের মনে ইসলামের ভাবমূর্তিকে বিকৃত করেছে।

মুসলিম মেয়েদের

যেমন হওয়া উচি

দায়ী: এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা: সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী আমেরিকায় অন্য যে কোন শ্রেণির তুলনায় মেয়েদের ইসলাম গ্রহণের সংখ্যা বেশি। কানাডা, ইংল্যান্ড ও আরও অনেক জায়গার ক্ষেত্রে এই কথা বলা যায়। ডমিনিকান রিপাবলিকে আল-জুমুআ ম্যাগাজিন কর্তৃক পরিচালিত এক সার্ভেতে দেখা গেছে যে স্থানীয়দের মাঝে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে তাদের ৭৫%ই হচ্ছে মেয়ে। এই কারণে দাওয়াতী কাজে মেয়েদের অংশগ্রহণ ভীষণ জরুরি। ‘শাহাদাহ উচ্চারণের মাধ্যমেই দীনের দাওয়াত দেওয়া শেষ হয়ে যায় না।’ ড. হামদান বলেন। ‘অন্য ধর্মের মেয়েদের ইসলাম গ্রহণে সাহায্য করার জন্য মেয়েদের দরকার, ইসলামে আসার পর তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য তাদের দরকার।’ আসলে বহু কারণেই মেয়েদের দাওয়াতী কাজে অংশগ্রহণ করা জরুরি:

  1. মেয়েরা সহজেই অন্য মেয়েদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে, যা ছেলেরা পারে না। মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে অন্য মেয়েদের কথা, কাজ ও আচরণের দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। মেয়েদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের খুঁটিনাটি ও সমস্যা চিহ্নিত করতে মেয়েরাই বেশি উপযুক্ত।
  2. মেয়েরা বেশি ভালো বুঝতে পারে কোন দিকে মেয়েদের দাওয়াতী কাজের প্রয়োজনীয়তা বেশি। তারাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দাওয়াতী কাজ পরিচালনা করতে সক্ষম কারণ তারা এ ক্ষেত্র সম্পর্কে তুলনামূলক বেশি পরিচিত।
  3. ব্যক্তিগত দাওয়াতী কাজ হোক বা মেয়েদের ফোরাম অথবা মিটিং হোক, ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা মেয়েদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
  4. বহু মুসলিম মেয়ের দিক-নির্দেশনা ও শিক্ষার প্রয়োজন কিন্তু তাদের এ সেবা দিতে পারে এমন পুরুষের অভাব রয়েছে। তাই যোগ্যতা সম্পন্ন মেয়েদের এই কাজটা করা উচিৎ।
  5. ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন বেশি। তারা গর্ভধারণ করে, সন্তান জন্ম দেয় ও প্রতিপালন করে। বাবার চেয়ে মায়ের সাথে সন্তানদের বন্ধন বেশি দৃঢ় হয়। মেয়েরা সন্তানদের সাথে ঘরে থাকে আর তাই তারা যেভাবে চায় সন্তানরা সেভাবেই বড় হয়। যদি তাদের মাঝে দাওয়াতী কাজ পরিচালনা করা না হয় তাহলে অনেক কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না।
  6. মেয়েরা তাদের স্বামীদের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে। যদি তাদের ঈমান ও চরিত্র দৃঢ় হয় তাহলে তারা তাদের স্বামীদের দৃঢ়তা অর্জনে খুব ভালো সাহায্য করতে পারে।
  7. মেয়েদের অনেক রকম বৈশিষ্ট আছে। দাওয়াতী কাজে সেগুলোর গুরুত্ব দিতে হবে। যখন কোন দাওয়াতী কাজের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয় তখন এসব গুণের কথা মাথায় রাখতে হবে, যেমন-
  • মেয়েরা অন্তরে যা বিশ্বাস করে তা দৃঢ়ভাবে প্রকাশের সহজাত ক্ষমতা রাখে। ড. হামদান বলেন, ‘মেয়েরা সাধারণত কথা ও আবেগের ক্ষেত্রেও বেশি শক্তিশালী হয়।’
  • মেয়েরা মাঝে মাঝে ইচ্ছাশক্তি ও দিকনির্দেশনার অভাব বোধ করে। তাই তাদের শক্তি ও প্রেরণা অর্জনে অন্য মেয়েদের সাহায্য প্রয়োজন।

স্ত্রী সুহৃদ: কিছু নির্দিষ্ট ভূমিকা

দাওয়াতী ক্ষেত্রে মুসলিম মেয়েদের কাজ পুরুষদের কাজকে আরও শক্তিশালী করে। যেখানে ছেলেরা পৌঁছাতে পারেনা সেখান পর্যন্ত তাদের কাজের বিস্তৃতি। দুঃখজনকভাবে মেয়েদের এই ভূমিকাকে স্থুলভাবে উপেক্ষা ও অবমাননা করা হয়। দাওয়াতী ক্ষেত্রে মেয়েরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে কারণ প্রকৃতিগতভাবে তারা পুরুষের আত্মিক ও মানসিক সান্ত্বনাদানকারী। একজন পুরুষ যদি শুধুই তার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে তাহলে সে নিজের সমস্যার সাথেই কুলিয়ে উঠতে হিমশিম খায়, দাওয়াতী কাজ করা তখন তার জন্য সুদূর পরাহত হয়ে যায়। এই কারণে এই পথে অনেকেই ব্যর্থ হয়েছে। রাসুল (সা.)-এর প্রতি খাদিজা (রাযি.)-এর সহানুভূতি ও সাহায্য এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। রাসুল (সা.)-এর যেসব সাহাবীরা হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়েছিলেন মানুষের কাছে এই নতুন দীনকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তারাও তাদের স্ত্রীদের সহযোগিতা পেয়েছিলেন।

আজকের দিনের অনেক মেয়েই তাদের এই ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন না, জীবনে ধারণ করা তো পরের কথা। মেয়েরা মনে করতে পারে যে বিয়ের পর ঘর হচ্ছে তার জন্য আরামের জায়গা। মেয়েদের এখনো বুঝতে বাকি আছে যে বিয়ে হচ্ছে সংগ্রাম, ত্যাগ ও দায়িত্বের সূচনা।

মেয়েদের ভূমিকা দরজার কাছে এসেই শেষ হয়ে যায় না। অন্যদের কাছে প্রকৃষ্ট উদাহরণ হওয়ার মাধ্যমে, সহৃদয়, নম্র ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ দ্বারা সে অন্যদের মনে বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে। সে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে। আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করতে পারে। সে মানুষের পরিস্থিতি বুঝে দীনের প্রতি তাদের আহ্বান জানানোর সম্ভাব্য সমস্ত সুযোগ কাজে লাগাতে পারে।

প্রয়োজন প্রকৃষ্ট উদাহরণ

যেসব মেয়েরা নিজেদের ভূমিকা বুঝেছিল তারা নিজেদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে শুরু করেছিল। শিক্ষা ও তারবিয়াতের অধিকার অর্জন করতে শুরু করেছিল। হযরত আবু সাইদ (রাযি.) থেকে বর্ণিত হাদীসটি দেখুন। একজন মহিলা রাসুল (সা.)-কে বলেছিল, ‘লোকেরা আপনাকে ব্যস্ত রাখে আর আমরা আপনাকে যথেষ্ট সময় পাই না। আপনি কি আমাদের জন্য একটা দিন নির্দিষ্ট করবেন? তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন একদিন তাদের সাথে দেখা করে তাদের বিভিন্ন বিষয়ে শিখাবেন।’ (সহীহ আল-বুখারী)

রাসুল (সা.)-এর মহিলা সাহাবীদের এই সচেতনতা ও তাদের প্রতি তাঁর মনোযোগ এক উজ্জল দৃষ্টান্ত এবং মুসলিম মেয়েদের জন্য গর্বের প্রতীক।

এমন আরও কিছু উদাহরণ আছে যা আমাদের ভাবতে শেখায়:

হযরত উম্মে সুলাইম (রাযি.) তাঁর ছেলে হযরত আনাস ইবন মালিক (রাযি.)-কে ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষা দিতেন, যদিও তাঁর স্বামী ইসলাম গ্রহণ করেননি। যখন অমুসলিম অবস্থায় আবু তালহা তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন তখন তিনি বলেছিলেন যে, ইসলাম হবে তাঁর মোহরানা। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং তারপর হযরত উম্ম সালামা (রাযি.) তাঁকে বিয়ে করেন। তিনি তাঁর ছেলে হযরত আনাস (রাযি.)-কে রাসুল (সা.)-এর দাস করেছিলেন। হযরত উম্মে হাকীম (রাযি.)-এর স্বামী তাঁর কারণে ইসলাম গ্রহণ করেন ও আদি ইবন হাতেমের খালা তাঁকে ইসলামের পথে নিয়ে আসেন। হাবিব আল-আযামীর স্ত্রী তাঁকে রাতে ডেকে তুলতেন সালাত আদায় করার জন্য। হযরত আবু বকর (রাযি.)-এর মেয়ে হযরত আসমা (রাযি.) তাঁর ছেলে হযরত আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাযি.)-কে বারণ করেছিলেন মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্য কোন হীন উপায় অবলম্বন করতে, যদিও তাঁর তখন অনেক বয়স হয়েছিল ও তাঁর ছেলের সাহচর্যের প্রয়োজন ছিল।

আমরা যদি আরও বড় পরিসরের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো যে আল্লাহর দীনের জন্য মুসলিম মেয়েরা কত বড় বড় ত্যাগ স্বীকার করেছে। হযরত সুমাইয়া (রাযি.) মুসলিম হওয়ার কারণে আবু জাহেলের হাতে জীবন দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ইসলামের জন্য প্রথম শহীদ এবং প্রথম নারী। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রথম স্ত্রী হযরত খদিজা (রাযি.) অনেক ধনী ছিলেন। তিনি তাঁর অর্থ উদারহস্তে ব্যয় করেছিলেন দীনের দাওয়াতের কাজে। হযরত উম্মে সালামা (রাযি.) হিজরত করার সময় তার স্বামীকে ছেড়ে এসেছিলেন ও তার সন্তানকে নির্যাতিত হতে দেখেছিলেন। উহুদের যুদ্ধে হযরত উম্মে আম্মারা (রাযি.) রাসুল (সা.)-কে রক্ষায় যুদ্ধ করেছিলেন। আর যুদ্ধক্ষেত্রে আহতদের সেবা করার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তো মুসলিম মেয়েরা ঐতিহাসিকভাবেই পালন করে এসেছে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ