জামিয়ার আর্ন্তজাতিক ইসলামি মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত
গত ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি’২০ (বৃহস্পতি ও জুমুআবার) জামিয়ার ময়দানে ২দিন ব্যাপী আর্ন্তজাতিক ইসলামি মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। হাজারো অলেম-ওলামার জ্ঞানের মাতৃক্রোড় ও আধ্যাত্মিকতার বাতিঘর জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার আর্ন্তজাতিক ইসলামি মহাসম্মেলনে আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ অংশ গ্রহণ করেন। এ সময় পুরো পটিয়া শহর, মাদরাসার মাঠ ও ভবনগুলোর প্রত্যেকটি তলা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। ২দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানে দীনের বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নসীহত পেশ করেন দারুল উলুম দেওবন্দের সহকারী মুহতামিম আল্লামা আবদুল খালেক সাম্বলী (দা. বা.), দেওবন্দের প্রধান মুফতি আল্লামা হাবিবুর রহমান খাইরাবাদী (দা. বা.), সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা সালমান বিজনুরী (দা. বা.), ইন্ডিয়া ফিকহ বোর্ডের সেক্রেটারি জেনারেল আল্লামা ওবাইদুল্লাহ সাদী (দা. বা.), ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য আল্লামা আবু তালেব রহমানী (দা. বা.), আমেরিকার বিখ্যাত আলেমে দীন আল্লামা ইয়াসির নদীম (দা. বা.), জামিয়ার প্রধান মুফতি ও মুহাদ্দিস আল্লমা হাফেজ আহমদুল্লাহ (দা. বা.), সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা ওবায়দুল্লাহ হামযা (দা. বা.), আল্লামা জাকারিয়া আল-আযহারী (দা. বা.), সিনিয়র শিক্ষক আল্লামা জাহেদুল্লাহ ইবনে হাজী ইউনুস (দা. বা.)।
আরও নসীহত পেশ করেন খ্যাতিমান ওয়ায়েয আল্লামা আবদুল বাসেত খান সিরাজী, মাওলানা হাফিজুর রহমান কুয়াকাটা, আল্লামা সৈয়দুল আলম আরমানী ও ড. আ ফ ম খালেদ হোসেন প্রমুখ। সমাপনি অধিবেশনে জামিয়া প্রধান আল্লামা মুফতি আবদুল হালীম বুখারী (দা. বা.) সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠান শেষ করতে পেরে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে আগত মেহমানবৃন্দের যথাযথ সেবা করতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন। সর্বাবস্থায় জামিয়ার পাশে থাকার জন্যে সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। পরিশেষে দেশের স্থায়ী শান্তি ও মজলুম মানবতার সার্বিক মুক্তির দুআ কামনার মাধ্যমে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
জামিয়ায় প্রচলিত খতমে বুখারী অনুষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০ (মঙ্গলবার) বাদে ফজর জামিয়ার জামে মসজিদে শিক্ষকমণ্ডলী ও কর্মচারীবৃন্দের একটি সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জামিয়া প্রধান আল্লামা মুফতি আবদুল হালীম বুখারী (দা. বা.)। উক্ত সভায় সমাপনী বর্ষের ছাত্রদের উদ্যোগে প্রচলিত খতমে বুখারী অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা হয়। গত বছর জামিয়ার খতমে বুখারী অনষ্ঠানে তাশরিফ আনেন দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম আল্লামা আবুল কাসেম নোমানী (দা. বা.)। তিনি তখন বলেছিলেন বর্তমান ব্ংলাদেশের বিভিন্ন মাদরাসায় খতমে বেখারীর নামে যে মাত্রাতিরিক্ত প্রথা চালু হয়েছে তা বিদআতের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। জামিয়া পটিয়া এ দেশের শীর্ষস্থানীয় মারকায। তাই এ মারকায থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত মাদরাসাসমূহের দায়িত্বশীলদের প্রতি এ প্রথা থেকে বিরত থাকার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। হুযুর আরো বলেছিলেন, দেওবন্দ মাদরাসায় বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান করে বুখারী শরীফ খতম করা হয় না। এমনকি ছাত্র-শিক্ষকরাও জানে না বুখারী শরীফের শেষ ছবক কখন হবে। সুতরাং এসব বিষয়ে সকলের সতর্ক থাকা উচিৎ। এসব রুসুমাত বন্ধ হওয়া উচিৎ। পরে জামিয়া প্রধান দেওবন্দের মুহতামিম সাহেবের উপরোক্ত কথাগুলো স্মরণ করিয়ে বলেন, এ বছর আমি দেওবন্দ যাওয়ার পর মুহতামিম সাহেব আমার থেকে খতমে বুখারী অনূষ্ঠান প্রথা বন্ধ করার শপথ নিয়েছেন। তাই এ বছর থেকে আর খতমে বুখারী অনুষ্ঠান না করলে ভালো হয়। তখন উপস্থিত শিক্ষকমণ্ডলী ও কর্মচারীবৃন্দ এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেন। অতপর সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব গৃহীত হয় যে এ বছর থেকে আর খতমে বুখারী অনুষ্ঠান আর হবে না। পরিশেষে জামিয়া প্রধান সংশ্লিষ্ট মাদরাসাসমূহের দায়িত্বশীলবৃন্দকে এ প্রথা বন্ধ করার উদাত্ত আহ্বান জানান।
জামিয়ার পরবর্তী আর্ন্তজাতিক ইসলামি মহাসম্মেলন ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১
আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার পরবর্তী আর্ন্তজাতিক ইসলামি মহাসম্মেলন আগামী ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে ইন শা আল্লাহ। উক্ত তারিখে কোনো দীনী মাহফিল সভা সম্মেলনের দিন ধার্য না করার জন্য জামিয় প্রধান আল্লামা মুফতি আবদুল হালীম বুখারী (দা. বা.) আহ্বান জানান।
তথ্যসূত্র: আবদুর রহমান বিন ইউনুছ
জামিয়া প্রতিবেদক, মাসিক আত-তাওহীদ