জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সড়ক নিরাপদ ও জীবন বাঁচান

সড়ক নিরাপদ জীবন বাঁচান

সড়ক মানেই কি জীবনের জন্য মৃত্যু? সড়ক মহাসড়ক মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। কর্মময় জীবনে মানুষকে সড়কের সহযোগিতা নিতেই হবে। পরিবহন ছাড়া মানুষ এ যুগে অচল। কিন্তু কখন এ পরিবহন ও সড়ক নিরাপদ হবে সে কথা কেউ বলতে পারছে না। সড়ক ও পরিবহন যেভাবে প্রতিনিয়ত মূল্যবান প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে তাতে মনে হয় এ সেক্টর এখন জ্যান্ত একটি মরণ ফাঁদ। পরিবহন, ড্রাইভার আর হেল্পারদের কোনোভাবেই শৃঙ্খলায় আনা যাচ্ছে না।

প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংবাদে লাখো কোটি হৃদয় ছটপট করে। একটি জীবন অর্থ একটি পরিবার। একটি জীবনের জীবন প্রদীপ থেমে যাওয়া অর্থ একটি পরিবারকে পথে বসিয়ে দেওয়া। সাথে অন্ধকার জীবন আর কান্না ছাড়া কিছুই করার থাকে না। বাংলাদেশের মতো এতো বেশি সড়কে জীবনহানি ও দুর্ঘটনা পৃথিবীর কোথাও আছে বলে তথ্য পাওয়া যায় না। জনসংখ্যায় আধিক্য এদেশে মানুষের কর্মচাঞ্চল্য জীবনের তাগাদায় রাস্তা ও পরিবহন ছাড়া জীবন সচল রাখা সম্ভব না। এর অর্থ এ নয় যে, সড়কে নামলেই মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হবে সে কথা কেউ মেনে নিতে পারছে না। পরিবহন মালিক শ্রমিক আর যাত্রী সকলেই এদেশের জনগণ। একে অপরের পরিপূরক। লাখো কোটি টাকার প্রজেক্টের মাধ্যমে বিশাল বিশাল সড়ক নির্মাণ ও তৈরি হচ্ছে। সড়কে শৃঙ্খলার জন্য সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় রয়েছে। হাজার হাজার শ্রমিক মালিকদের সংগঠন দেখা যায়। বিআরটিএ রয়েছে, বৈধ অবৈধ অনিয়ম আর ফিটনেস পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য এ সংস্থা সারা দেশে তাদের সুশৃঙ্খল কর্মি বাহিনী আছে।

কিন্তু এতোগুলো সরকারি-বেসরকারি সংস্থা সংগঠন থাকার পরও কোনোভাবেই সড়কের দুর্ঘটনা থামানো যাচ্ছে না। নিয়মের কথা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আর তাদের অধিনস্থ দপ্তরে থাকলেও সে নিয়ম বাস্তবে এ সেক্টরে অনুসরণ হয় বলে মনে হয় না। আইন তার বালামে লিখিত আছে, বাস্তবে আইনের প্রয়োগ মাঠে মিলছে না। ফলে দুর্ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলছে। চলতি মাসের এক সপ্তাহের দৈনিক হিসেবে ঈদযাত্রায় কর্র্মস্থলে ফেরত আসা মানুষের মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের বেশি। আহত হয়েছে শত শত। এটা যেনো এদেশের সড়ক পরিবহনে একটি নিয়মিত স্বভাব ও কালচার। দুর্ঘটনার ঘটনায় দেখা যায় ওভারটেক ও অদক্ষ চালক দ্বারা গাড়ি চালাতে গিয়ে বেশিরভাগ যাত্রীর মৃত্যু হচ্ছে। সড়ক মহাসড়কের জন্য যে পরিমাণ গণপরিবহন প্রয়োজন তার চেয়ে আরও অধিক যাত্রী পরিবহন সড়কে থাকলেও এগুলোর মধ্যে শৃঙ্খলায় বড় সমস্যা। পরিবহন স্বল্পতা সমস্যা হিসেবে দেখা যায় না। ড্রাইভারদের মধ্যে শৃঙ্খলা প্রতিষ্টা করতে পারলেই সড়ক অনেকাংশে নিরাপদ হিসেবে পাওয়া যাবে। কিন্তু সে দায়িত্ব কার হাতে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, বিআরটিসি, বিআরটিএ আর মালিক পক্ষ কেউ যদি তাদের দক্ষ চালক হেল্পার তৈরি করার পেছনে কাজ না করে তাহলে এর দায় দায়িত্ব কে নেবে? রাস্তায় শুধু পরিবহন নামিয়ে দিলেই সমস্যার শেষ নয়। বড় বড় সড়ক মহাসড়ক নির্মাণ হলেই নিরাপদ সড়ক হবে তাও না। সড়কের শৃঙ্খলার জন্যে দক্ষ সুশৃঙ্খল ড্রাইভার হেল্পার আবশ্যক। এ বিষয়টি সড়কের সাথে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে মেনে নিতে হবে। সে জায়গায় চিকিৎসা অথবা প্রতিকার না করে সড়ক নিরাপদ ও মূল্যবান জীবন রক্ষা করা কখনো সম্ভব হবে না।

আইন দিয়ে অথবা কঠিন শাস্তির বিধান করে সড়কের শৃঙ্খলা আসবে না। যত দ্রুত সম্ভব গণ পরিবহন এবং সমস্ত পরিবহনকে বৈধ লাইসেন্স ও ফিটনেসের আওতায় আনতে হবে। দুই নম্বর পথে ড্রাইভার ও পরিবহন সেক্টরের ডকুমেন্ট আদান প্রদান কঠোর হাতে বন্ধ করতে হবে। অযোগ্য অদক্ষ ড্রাইভারদের কোনো পরিবহন সোপর্র্দ করার কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। শিশু শ্রমিকদের পরিবহন থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সময় অসময়ে দুয়েকটি বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে সড়কের শৃঙ্খলার কথা বলতে দেখা যায়। এটা কথা দিয়ে শৃঙ্খলায় আনার বিষয় না। বাস্তবে মাঠে ময়দানে কাজ করতে হবে। প্রশাসন ও পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্ট সব গ্রুপকে সমন্বয় করে সড়কে শৃঙ্খলা আনতে হবে। আইন থাকুক সেটা বড় কিছু না। কিন্তু এদেশে আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় অনিয়ম ঠিকই থেকে যায়। ফলে দুর্ঘটনা করেও পরিবহন সেক্টর পার পেয়ে যায়।

ব্যয়বহুল এ সেক্টরের সাথে দেশের মন্ত্রী থেকে বড় মাপের শিল্পপতিরা জড়িত। সাধারণ মানুষ যেহেতু যাত্রী, তাদের পক্ষে যৌক্তিক কথা বলার যথেষ্ট অভাব। কতিপয় সামাজিক সংগঠন যাত্রী সাধারণের পক্ষে থাকলেও প্রভাবশালী শক্তির বিপক্ষে এসব সংগঠন পেরে ওঠে না। যার জন্য সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো ঠিকমতো আইনি সহযোগিতা পায় না। এসব কারণে দিন দিন বেপরোয়া পরিবহন সেক্টর। সড়ক যেনো মৃত্যুর ফাঁদ। এটা যেকোনো মূল্যে রোধ করা চায়। মানুষের দৈনন্দিন জীবন আর পারিবারিক জীবিকার তাগাদায় সড়ককে নিরাপদে আনতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কঠোর হওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ আছে বলে মনে হয় না। আসুন মূল্যবান জীবন বাঁচাতে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সড়কের নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনি।

মাহমুদুল হক আনসারী

চট্টগ্রাম

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ