জামেয়া ওয়েবসাইট

শনিবার-৩০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমস্যা ও সমাধান-ফতওয়া বিভাগ-আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

সমস্যা ও সমাধান ফতওয়া বিভাগ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

সমস্যা সমাধান

ফতওয়া বিভাগ

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

মোবাইল: ০১৮৫৬-৬১৮৩৬৭

ইমেইল: daruliftapatiya@gmail. com

পেইজলিংক: Facebook. com/Darul-ifta-Jamia-Patiya

 

 

সালাত-নামায

সমস্যা: ফিকহের অনেক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, ইকামতের সময় মুয়াযযিন যখন حي على الصلاة বলবে মুক্বতাদীগণ তখন দাঁড়াবে। অথচ আমরা সাধারণত মুয়ায্যিন ইকামত শুরু করার আগেই দাঁড়িয়ে যাই। জানার বিষয় হলো, এক্ষেত্রে কোনটা উত্তম?

তকি উদ্দীন

 ফরিরদপুর, চাঁদপুর

সমাধান: ফিকহ ও ফতওয়ার কিতাবাদি থেকে বোঝা যায়, যদি পূর্ব থেকেই কাতার সোজা করা থাকে, তাহলে حي على الصلاة ও حي على الفلاح বললেই দাঁড়ানো উত্তম। নতুবা তাকবীরে উলায় (প্রথম তাকবীর) শরীক, تسوية الصفوف (কাতার সোজা করা) ও সহীহ হাদীসের অনুসরণার্থে ইকামত শুরুর সাথে সাথেই দাঁড়িয়ে যাওয়া উত্তম। মুসলি শরীফ: ১/১৮২, মুওয়াত্তা মালেক: ৫৪, ফাতাওয়ায়ে শামী: ১/৭১, বাহরুর রায়িক: ২১২৫৭

সমস্যা: বর্তমানে দেখা যায় ফ্যাশন করতে গিয়ে এতো পাতলা সাদা লুঙ্গি পরা হয় যার ফলে অনেক সময় নামায আদায় করলে পিছন থেকে সতরের আকৃতি দেখা যায়। এমনকি অনেক সময় শরীরের রং বোঝা যায়। জানার বিষয় হলো, এ ধরনের পাতলা লুঙ্গি পরে নামায আদায় করলে তা শুদ্ধ হবে কি?

মুইনুল ইসলাম

হাটহাজারী

সমাধান: ফিকহ ও ফতওয়ার কিতাবাদি থেকে বোঝা যায়, যদি এ ধরনের পাতলা লুঙ্গির ওপর সতর ঢাকা যায় পরিমাণ মোটা অন্য কোন জামা ইত্যাদি না পরে শুধু সেই লুঙ্গিটি পরে অথবা তার ওপর এতো পাতলা পোশাক পরেছে যে উভয়টি মিলেও সতর ঢাকা যায় পরিমাণ মোটা না হয় তাহলে এধরণের পাতলা কাপড়ে নামায তো শুদ্ধ হবেই না বরং সতর ঢাকার ফরয তরক করার কারণে গুনাহগার হবে। তাই নামায পুনরায় পড়তে হবে। সুরা আল-আ’রাফ: ৩১, সুনানে আবু দাউদ: ১/৯৪, রদ্দুল মুহতার: ২/৮৪, আল-ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবাআ: ১/১৫২, আল-ফিকহুল হানফী: ১/১৬১

সমস্যা: আমরা জানি, চার রাকাআত বিশিষ্ট নামাযের শেষ দু’রাকাআতে কিরাআত পড়া ফরয নয়। কিন্তু সুন্নত কিংবা নফলের শেষ দু’রাকাআতেও কিরাআত পড়া ফরয। জানার বিষয় হলো, সুন্নত কিংবা নফলের শেষ রাকাআতে অন্য একটা সুরা মিলানোর হুকুম কী? কেউ যদি ভুলে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবেই সুরা না মিলায়, তাহলে তার নামায শুদ্ধ হবে কি?

মাসউদ

উত্তরা, ঢাকা

সমাধান: চার রাকাআত বিশিষ্ট সুন্নাত কিংবা নফল নামাযের শেষ দুই রাকাআতে সুরা ফাতেহার সাথে অন্য একটা সুরা মিলানো ওয়াজিব। কেউ যদি ভুলে তা ছেড়ে দেয়, তাহলে সাহু সেজদা করে নিলেই নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে যদি ইচ্ছাকৃত ছাড়ে তাহলে নামাযটি পুনরায় পড়া তার যিম্মায় ওয়াজিব। মুসলিম শরীফ: ১/১৬৯, ’লাউস সুনান: ৭/১৮৭, হিদায়া: ১/১২৪

সমস্যা: কয়েকজন আলেম-ওলামার সাথে একদিন সফররত অবস্থায় রাস্তার পাশে একটি মসজিদে আসরের নামাযাদায়ের জন্য অবতরণ করে দেখি জামায়াত শেষ হয়ে গেছে। (আমরা সকলেই ছিলাম মুসাফির) তাই চেয়েছিলাম সকলে একসাথে জামায়াতে আসরের সালাত আদায় করবো। কিন্তু সাথীদের কেউ কেউ ভিন্নমত পোষণ করে বললো একাকী পড়াই উত্তম হবে। তাই শেষ পর্যন্ত জামায়াতে পড়া হলো না। জানার বিষয় হলো, উল্লিখিত অবস্থায় আমাদের জন্য দ্বিতীয়বার জামায়াতে নামায আদায় জায়েয হতো কি?

মুহসিনুদ্দীন

ফকির হাট, চট্টগ্রাম

সমাধান: ফিকহ ও ফতওয়ার কিতাবাদি থেকে বোঝা যায় এ বিষয়ে উসুলি বা মূল কথা হলো গাইরে মহল্লার মসজিদে অর্থাৎ যেসব মসজিদে ইমাম, মুয়াযযিন ও মুসল্লী নির্ধারিত নেই এবং জামায়াতেরও কোন ব্যবস্থাপনা নেই, সে সকল মসজিদে তাকরারে জামায়াত শুধু জায়েযই নয়, বরং উত্তমও বটে। আর মহল্লার মসজিদে অর্থাৎ যেসব মসজিদের ইমাম, মুয়াযযিন ও মুসল্লী নির্ধারিত আছে এবং জামায়াতের সর্বপ্রকার ব্যবস্থাপনাও আছে, সে সকল মসজিদে তাকরারে জামায়াত জাহিরী বর্ণনামতে ইমামত্রয়ের নিকট মাকরুহ (শক্তিশালী বর্ণনামতে তাহরীমী)। অতএব উল্লিখিত মসজিদটি যদি গাইরে মহল্লী হয়ে থাকে, তাহলে আপনাদের জন্য তাতে দ্বিতীয়বার জামায়াতেই নামাযাদায় উত্তম ছিল। আর যদি সেটি মসজিদে মহল্লী হয়ে থাকে, তাহলে আপনাদের জন্য সেখানে দ্বিতীয়বার জামায়াতে নামাযাদায় মাকরুহ হতো। তাই এ অবস্থায় আপনাদের জন্য একাকি নামায আদায় উচিত হয়েছে। তবে যেহেতু আপনারা মুসাফির, তাই জামায়াতে পড়লে ও পড়তে পারতেন। তিরমিযী শরীফ: ১/৫৩, ’লাউস সুনান: ৪/২৭১, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতিহি: ১/১৬৩, রদ্দুল মুহতার: ২/২৮৮

সমস্যা: কোন ব্যক্তি যদি ইমাম সাহেবকে রুকু অবস্থায় পায় এবং সাথে সথে তাকবীর বলে নামাযে শরীক হয়ে যায়, কিন্তু সে রুকুতে পৌঁছার আগে আগে ইমাম সাহেব রুকু থেকে উঠে যায় (অর্থাৎ সে রুকুর দিকে যাচ্ছে আর ইমাম সাহেব রুকু থেকে উঠছে) এ অবস্থায় সে সেই রাকাআত পেয়েছে বলে গণ্য করা যাবে কি?

শরীফ হুছাইন

কক্সবাজার

সমাধান: কোন ব্যক্তি যদি ইমাম সাহেবকে রুকু অবস্থায় পেয়ে সাথে সাথে দাঁড়ানো অবস্থায় তাকবীর বলে রুকুতে শরীক হয়ে যায়, তাকে সেই রাকাআত পেয়েছে বলে গণ্য করা যাবে। তবে ইমাম সাহেব রুকু থেকে উঠা অবস্থায় যদি মুকতাদী রুকুতে যায় অর্থাৎ প্রশ্ন উল্লিখিত অবস্থায় রুকু পেয়েছে কী পায়নি এব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরামের দুই ধরনের উক্তি পাওয়া যায় আহসানুল ফতওয়াসহ অনেক ফতওয়ার কিতাবে রুকু পাওয়ার মতকে প্রধান্য দিয়েছেন। বুখারী শরীফ: ১/৭১, ’লাউস সুনান: ৪/৩৩৪, ফাতাওয়ায়ে শামী: ২/৫১৬, আহসানুল ফতওয়া: ৩/২৮৮

সমস্যা: ইমাম সাহেব যদি সিজদা অবস্থায় থাকে, তখন কোন ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে জামায়াতে শরীক হতে চাইলে তার করণীয় কী? সে কি দাঁড়িয়ে ইমাম সাহেব উঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে? না তাহরিমা বলে সিজদায় চলে যাবে?

আবদুল্লাহ

টেকনাফ

সমাধান: কোন ব্যক্তি যদি জামায়াত চলাকালীন মসজিদে এসে উপস্থিত হয়, তাহলে ইমাম সাহেব যে অবস্থায় হোক না কেন তাকে তাকবীর বলে সাথে সাথে ইমাম সাহেবের সাথে শরীক হয়ে যেতে হবে; যদিওবা ইমাম সাহেব সিজদা কিংবা তাশহুদে থাকুক না কেন, ইমাম সাহেব উঠা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার কোনই প্রয়োজন নেই। সুতরাং মাসবূকের জন্য মসজিদে এসেই ইমাম সাহেবের সাথে নামাযে শরীক হয়ে যাওয়া চাই। তিরমিযী: ১/১৩০, ফাতাওয়ায়ে শামী: ২/৫১৭, বাহরুর রায়িক: ২/৭৭, ফাতওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ২/১৯৭

 

ক্রয়-বিক্রয়

সমস্য: যে সব পশুর গোস্ত আহার করা শরীয়তে হারাম যেমন- শুয়োর, বানর, বাঘ, হাতি, কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি। এগুলো বিক্রি করে টাকা পয়সা নেওয়া জায়েয হবে কি না?

 আবদুল কাদের

 ফাসিয়া খালী, চকরিয়া

সমাধান: মুসমানদের জন্য (শুয়োর ব্যতীত অন্যান্য) যেসকল পশুর গোস্ত আহার করা হারাম সেগুলোকে যদি (আহার করা ছাড়া অন্য) কোন কাজে যথা- ওষুধ বানানো, পরিবহন বা অন্য কোন উপায়ে কোন ফায়দা দায়ক কাজে ব্যবহারের মাধ্যমে উপকার হাসিল করা, লাভবান হওয়া যায় (ওই ধরণের পশু আহার করা হারাম হলেও) সেগুলোর বেচা-কেনা জায়েয ও বৈধ। শুয়োর তা যেমনিভাবে আহার করা হারাম তেমনি ভাবে তার শরীরের কোন অংশের ক্রয়-বিক্রয় এবং বিক্রিত টাকা পয়সাও হারাম। ফাতাওয়ায়ে শামী: ৭/৪৭৮, সিরাজিয়া: ৯৭, হিদায়া: ৩/৮৫

তালাক

সমস্যা: স্বামী তার স্ত্রীকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে নিষেধ করেছে। তারপরও সে সেখানে গিয়েছে। স্বামী তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে বললো, ‘আমি যাইনি’। এরকম চার বার শপথ দিয়ে জিজ্ঞাসা করার পরও সে বলল, ‘আমি যাইনি’। কিন্তু বাস্তবে মহিলা সেই জায়গায় গিয়েছিলো। তাই স্বামী তাকে বলল, ‘তোমাকে এক তালাক’। স্ত্রী বলল কী জন্য? স্বামী বললো, ‘দুই তালাক’। স্ত্রী বললো, ‘কী জন্য’? স্বামী বলল, ‘ওখানে যে গিয়েছ, তার জন্য’। এখন তাদের জন্য সংসার করা বৈধ কিনা?

মু. শাহীন আলম

চট্টগ্রাম

সমাধান: উল্লিখিত ঘটনায় স্বামী যখন স্ত্রীকে সম্বোধন করে কোন শর্ত বিহীন প্রকাশ্য ভাষায় এক এক করে তিন তালাক দিয়ে ফেলেছে, তার দ্বারা স্ত্রীর ওপর তিন তালাক পতিত হয়ে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে গেছে। তালাক দেওয়ার পর থেকে তাদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেলামেশা ও ঘর সংসার করা পষ্কিার হারাম ও না-জায়েয। আর তালাকের পর বিশুদ্ধভাবে তাদের পুনরায় বিয়ে-বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। উল্লেখ্য যে, স্ত্রীকে একসাথে তিন তালাক দিলে স্ত্রীর ওপর তিন তালাক পতিত হওয়ার ফতওয়ার ওপর আমাদের চার ইমামের ইজমা এবং ইমাম বুখারী (রাযি.)-এর ঐক্যমত রয়েছে। সুরা আল-বাকারা: ২৩০, বুখারী শরীফ: ২/২৯১, শরহে নববী: ১/২৭৯, ফতওয়ায়ে শামী: ৪/৪৩৪

সমস্যা: কোন ব্যক্তি যদি কোন বিষয়ের ওপর কুল্লামা তালাকের ওপর মিথ্যা শপথ করে তখন শরীয়ত মতে বিয়ে করার কোন পদ্ধতি আছে কিনা?

মু. হাসান

চকরিয়া

সমাধান: প্রশ্নপত্রে যেভাবে তালাকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সে হিসেবে সে কোন মহিলাকে সরাসরি বিয়ে করতে পারবে না। বরং নেকাহে ফুযুলীর পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। তখন উক্ত তালাক পতিত হবে না। উল্লেখ্য যে, ফুযুলীর পদ্ধতি কাগজ পত্রে লিখে দিলেও ফিকহ ফতওয়ায় অনভিজ্ঞ লোক তা বুঝে না। কেননা নেকাহে ফুযুলী খুব জটিল বিষয়। তাতে একটু এদিক-ওদিক হলে বিয়ে শুদ্ধ হবে না। তাই কোন অভিজ্ঞ মুফতীর দ্বারা তা সম্পন্ন করতে হবে। হিদায়া:২/৩৮৬, বাহরুর রায়িক: ৪/৭, ফতওয়ায়ে শামী: ৩/৩৪৫

সমস্যা: আমার স্ত্রী একটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। ১ ছেলে এবং ২ মেয়ে নিয়ে আমাদের সুখের সংসার। সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযসহ প্রায় সকল প্রকার ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে। গত কিছুদিন পূর্বে সে বাপের বাড়ি যায়। আমার ভাইগণ আমাকে ফোন করে জানান আমার স্ত্রী নাকি একে একে তাদের সবাইকে ফোনে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করেছে। শুনে আমি খুব মর্মাহত হয়ে তাকে ফোনে এত্থেকে বিরত থাকতে বলি। উত্তরে সে আমাকে বলে প্রয়োজনে তোকেও গালাগালি করব এবং মারবো, কোন ছাড় নেই। তখন আমি রাগান্বিত হয়ে ম্যাসেজে খুব গালিগালাজ করে বলি যে, আমাকে ভালো না লাগলে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে নোটিশ পাঠাও। এর দু’দিন পরে সে পুনরায় কল দিয়ে জানতে চেয়ে বলে তোর সিদ্ধান্ত কী? আমি বললাম যে, আমার কোন সিদ্ধান্ত নেই, সিদ্ধান্ত তোমার। সে আবার জিজ্ঞাসা করলে বলি, সিদ্ধান্ত তোমার হাতে। তখন সে বলে, ‘যা দিচ্ছি।’ সে গালি-গালাজ করে আর বলে, যা তুই আরেকটা বিয়ে করে ফেল, আমিও আরেকটা বিয়ে করে ফেলব। উল্লিখিত ঘটনায় শরীয়তের বিধান কী? কুরআন হাদীসের আলোকে জানাবেন।

মু. মাজেদুল ইসলাম

চট্টগ্রাম

সমাধান: প্রশ্নপত্রের বর্ণনা মতে স্বামী তার স্ত্রীকে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তালাকের ব্যাপারে স্ত্রীকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছে, যাকে ইসলামের পরিভাষায় তালাকে তাফওয়ীয বলা হয়। কিন্তু স্ত্রী নিজের ওপর তালাক ব্যবহার না করে স্বামীকে কিনায়া অর্থাৎ অস্পষ্ট শব্দে তালাক দিয়েছে। কিন্তু স্মরণ রাখতে হবে যে, শরীয়তে কোন অবস্থাতেই স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারে না এবং তালাক দিলেও তা স্ত্রীর ওপর পতিত হবে না। তা দ্বারা বিয়ে বিচ্ছেদও হয় না। কেননা শরীয়তে তালাকের একক মালিক স্বামী, স্ত্রী নয়। স্ত্রী হলো তালাকের পাত্রী। সুতরাং আমাদের তাহকীক মতে উক্ত কথার দ্বারা স্ত্রীর ওপর কোন তালাক পতিত হয়নি এবং আপনাদের বিয়ে বিচ্ছেদও হয়নি। বরং নিকাহ এখনো বহাল রয়েছে। উল্লেখ্যে যে, স্বামী মোবাইলের ম্যাসেজের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে যে নোটিশ পাঠাতে বলেছে তা যেহেতু তালাকের কোন সরীহ শব্দ ও কিনায়া শব্দের অন্তর্ভুক্ত নয়, তাই তা দ্বারাও স্ত্রীর ওপর কোন তালাক পতিত হয়নি। বায়হাকী শরীফ: ৭/৫৯১, মাবসতে সরাখসী: ৬/২৫১, রাদ্দুল মুহতার: ৪/৪৪৩১

সমস্যা: আমি আমার স্ত্রীর সাথে কথাকাটাটির এক পর্যায়ে প্রথমে এক তালাক দেই। তারপর বিভিন্ন ধরণের কথা কারণে আমি বিদেশ থেকে দুই তালাক মোবাইলের মাধ্যমে দিয়েছি। পরবর্তীতে আমি আমার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও মৌলভীর কাছে জানতে পারলাম যে, তিন তালাক হয়ে গেছে। একথা সঠিক কিনা? আমি তাদের কথা মতে তিন হায়েয অতিবাহিত হওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে দিয়েছি এবং উক্ত তালাকের ইদ্দতও অতিবাহিত হয়ে গেছে। এ অবস্থায় তাকে আমি পুনরায় বিয়ে করতে পারব কিনা?

হামিদুল্লাহ

সিলেট

সমাধান: প্রশ্নের বর্ণনামতে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তিন তালাক দেওয়ার পর সে যদি তালাকের সাধারণ ইদ্দত তিন মাসিক স্রাব অতিবাহিত করার পর অন্য স্বামীর সাথে শরীয়ত সম্মতভাবে কমপক্ষে দু’জন পুরুষ সাক্ষীর উপস্থিতিতে আকদে নিকাহ এবং দ্বিতীয় স্বামীর সাথে সহবাস ইত্যাদি হওয়ার পর সে তালাক দিয়ে থাকে এবং উক্ত তালাকের সাধারণ ইদ্দত তিন মাসিক স্রাব যদি অতিবাহিত হয়ে যায় তাহলে তাকে নতুনভাবে বিয়ে করে তার সাথে ঘর-সংসার করা শরীয়ত মতে জায়েয ও বৈধ। সুরা আল-বাকারা: ২৩০, বুখারী শরীফ: ২/৭৯১, রদ্দুল মুহতার: ৪/৪৩৪, হিদায়া: ২/৩৯৯

সমস্যা: আমার বোনকে প্রায় পাঁচ বছর পূর্বে নোয়খালীর এক ছেলের সাথে বিয়ে দেই। আমার মা-বাবা একটু গরম মেজাজের হওয়ায় বোনের জামাতা আমাদের বাড়ি তেমন বেশি আসতে পারে না। আমার বোন বিয়ের পর আমাদের বাড়ি থাকাকালীন আমার মামা সম্পর্কীয় এক ছেলে তার সাথে গোপন সম্পর্ক করে তাকে রাঙ্গামাটি নিয়ে যায় এবং কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে তারা বিয়ে করে। এমনকি দেড় লক্ষ টাকা কাবিন ঠিক করে। প্রায় দেড় মাস পরে ওখান থেকে আমার বোনকে বাড়িতে নিয়ে আসে এখন আমার বোনের আগের স্বামী আমার বোনকে আবারও তার বিয়ের মধ্যে রাখতে চায় এবং সে আমার বোনকে তালাকও দেয়নি। আমার বোনও প্রথম স্বামীর সাথে থাকতে চায়। কিন্তু যে ব্যক্তি কোর্ট ম্যারেজ করে বিয়ে করেছে সে বলছে তাকে আমার বোন না দিলে সে গলায় ফাঁস দেবে। এখন হযরতের কাছে আমার জানার বিষয় হল, আমার বোনের প্রথম স্বামীর বিয়ে বহাল আছে কি না? এবং দ্বিতীয় বিয়ে শুদ্ধ হয়েছে কিনা? আর সে আগের স্বামীর কাছে ফিরে যেতে চাইলে নতুনভাবে বিবাহের প্রয়োজন আছে কি না?

শাহেদ

আনোয়ারা

সমাধান: উল্লিখিত ঘটনায় উক্ত প্রথম স্বামী যখন কোন তালাক দেয়নি এবং স্ত্রীও কাবিননামার ধারা মতে নিজের ওপর তাফওয়ীযে তালাক ব্যবহার না করে যে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করেছে তা শরীয়ত মতে সহীহ ও শুদ্ধ হয়নি। বরং দ্বিতীয় স্বামীর সাথে যে মেলামেশা ও ঘর সংসার করেছে তা নাজায়েয ও হারাম হয়েছে। তার জন্য আল্লাহর কাছে লজ্জিত হয়ে খাঁটি তাওবা করে পৃথক হয়ে যাওয়া একান্ত জরুরি। কেননা উক্ত মহিলা এখনও প্রধম স্বামীর বৈধ স্ত্রী হিসেবে বহাল রয়েছে। সুতরাং প্রথম স্বামীর কাছে থাকতে চাইলে কোন নতুন আকদের প্রয়োজন নেই। ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২৮০, ফতওয়ায়ে শামী: ৪/২৭৪, বাদায়ে সানায়ে: ২/৫৪৮

বিবিধ

সমস্যা: এক লোক মৃত্যুবরণ করলে তাকে তার বাড়ির আঙিনায় দাফন করা হয়। তারপর সেই লোকের পরিবার বাড়িসহ জায়গা অন্য এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে চলে যায়। যে ব্যক্তি জায়গা ক্রয় করেছিল তার জন্য পুরনো বাড়িটা যথেষ্ট হচ্ছে না। তাই সে নতুন করে বাড়ি বানাতে চাচ্ছে। আর তার কাছে জায়গা এত সংকীর্ণ যে, ওই দাফনকৃত জায়গা ছাড়া অন্য কোথাও জায়গা নেই। এখন সে কি ওই দাফনকৃত কবরের ওপর বাড়ি বানাতে পারবে? আর যদি ওই কবরকে সরাতে হয় তহলে কিভাবে সরাবে? পদ্ধতিটা উল্লেখ করবেন। অথবা বাড়ি বিক্রি করেছে কিন্তু কবর বিক্রি করেনি। মৃত ব্যক্তির কোন ওয়ারিশও বেঁচে নেই। সেই অবস্থায় কররের ওপর বাড়ি বানাতে পারবে নাকি পারবে না। আমাদেরকে জানালে উপকৃত হব।

মু. রাকিবুল ইসলাম

বান্দরবান

সমাধান: উল্লিখিত ঘটনায় যদি কবরস্থান সহ বিক্রি করে থাকে তাহলে ক্রেতা তার খরিদা জায়গার ওপর যে কোন ধরণের হস্তক্ষেপ ও কাজ করতে পারবে। যদি কবর পুরাতন হয়, কবর খনন করা ছাড়াই তার ওপর ঘর ইত্যাদি বানানো উত্তম। আর যদি খনন করে ফেলে, তাহলে তার হাড্ডি এবং মাথার খুলি ইত্যাদি কোন কবরস্থানে গর্ত করে দাফন করে ফেলবে। আর যদি কবর ব্যতীত শুধুই জায়গা বিক্রি করে, তাহলে সেই কবর রেখে দিতে হবে। তার ওপর ক্রেতা কর্তৃক কোন হস্তক্ষেপ ও কাজ করা জাযেয হবে না। মুসলিম শরীফ: ২০৫০, বাহরুর রায়িক: ১/২৪৬, আদ-দুররুল মুখতার: ৩/ ১৪৫

সমস্যা: আমাদের এলাকায় ওয়াকফের ৪০ শতাংশ জমি ছিল। জমিগুলো চাষাবাদের অযোগ্য ছিল বলে ইজারা দেওয়া যাচ্ছিল না। ফলে মৌখিকভাবে মসজিদ কমিটির সম্মতিক্রমে অন্য একটি উর্বর জমির মাধ্যমে অদল-বদল করা হয়। এভাবে চল্লিশ বছর চলে যায়। কিন্তু বর্তমান মসজিদ কমিটি পাল্টানো জমির বদলে অন্য আরেকটি রাস্তার পার্শ্ববর্তী জমিন যা দোকানের জন্য যোগ্য। ওটা দিয়ে পাল্টাতে চায়। এখন আমার জানার বিষয় হলো, আগের মৌখিকভাবে পাল্টা-পাল্টি সহীহ হয়েছে কি? আর বর্তমানে আবার পাল্টাতে চাইলে জমির মালিকের ওপর পুনরায় পাল্টানো ওয়াজিব কিনা? শরীয়ার আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।

মাও. ছাবের

সাতকানিয়া

সমাধান: উল্লিখিত ঘটনায় ওয়াকফিয়া জমিন অকেজো হওয়ায় এবং তার দ্বারা মসজিদের কোন ফায়দা না হওয়ায় মসজিদ কমিটির সম্মতি ক্রমে যখন সে সময় ওয়কফিয়া জমি থেকে আরও উত্তম জমি দ্বারা এ এওয়াজ বদল করা হয়েছে তা শরীয়তের মধ্যে লিখিতভাবে এওয়াজ বদল জরুরি নয়। অবশ্য বর্তমান মসজিদ কমিটি মসজিদের উপকারিতার জন্য যা চাচ্ছে এওয়াজ-বদলকৃত জমির মালিক যদি তাতে সম্মত হয় তাহলে তা জায়েয হবে। অন্যথায় নয়। বর্তমানে আমাদের দেশে শরয়ী কাজী না থাকার কারণে মসজিদ কমিটি বা মসজিদের মুতাওয়াল্লী শরয়ী কাজী হিসেবে গণ্য হবে। বাহরুর রায়িক: ৫/২০৩, ফতওয়ায়ে শামী: ৬/৫৮৩, ’লাউস সুনান: ১৩/১১২

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ