পর্দা, ধর্ষণ ও চলমান সমস্যার উত্তরণ
তানভীর সিরাজ
অভ্যাসের বিপরীত হলে, অভ্যাসের বিপরীত কিছু বললে বা ঘটলে ‘আনানিয়াতের সুরতে’ (আমিত্বের ঢঙে) আমরা তাকে খণ্ডন করার চেষ্টা করি, আবার কখনো নিজেদের পক্ষে দলীল-প্রমাণ পেশ করে হককে গায়েল করে না, হকের কাতারে দাঁড়িয়ে আমিই হক-এর প্রমাণে গভীর জলে নেমে পড়ি। গবেষক এক আলিম বলেন, ‘আমাদের বদ অভ্যাস হল, আমরা হককে মানতে চাই না।’ বেপর্দা ও ধর্ষণের খবর কাগজে অহরহ, তবে যা প্রকাশ পাচ্ছে, তা তো নামমাত্র। প্রকাশ না হওয়া সংঘটিত ঘটনাও অনেক, যার হদিস মিলবে লক্ষকোটি জনগণের সামনে মহাপ্রলয়ে; যেই ভিডিও ফুটিজের সঞ্চালক ও নিয়ন্ত্রক থাকবেন ফেরেশতা মারফত স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। সেদিন আমাদের হাত-পা দরবারে ইলাহিতে আপনভোলার পক্ষে-বিপক্ষে সাক্ষী হবে। কুরআনে এসেছে,
اَلْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلٰۤى اَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَاۤ اَيْدِيْهِمْ وَتَشْهَدُ اَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ۰۰۶۵
‘সেই দিন আমি তাদের মুখের ওপর মোহর মেরে দেব, তখন তাদের হাত আমার (আল্লাহর) সাথে কথা বলবে, আর তাদের পা সাক্ষ্য দেবে যা তারা অর্জন করত সে-সম্পর্কে।’[1]
প্রত্যেকের জন্মসূত্র যেহেতু ভিন্ন ভিন্ন সেহেতু একে অন্যের প্রতি টান থাকা অস্বভাবিক নয়, তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকমণ্ডলিকে খুব সচেতন হতে হবে, থাকতে হবে সতেজ দৃষ্টির খবরদার। অন্যতাই যা হবার তাই হবে। কারণ সুশিক্ষা দিয়েও কুপ্রবৃত্তির সম্ভাবনা নেই, তা কিন্তু মিথ্যা নয়। আল্লাহ তাআলা ফিতনাকে হত্যাযজ্ঞ থেকেও ক্ষতিকর বলেছেন। যা একজন শিক্ষক আর ছাত্রীকে চিরশাস্তির পথ দেখাতে পারে খুব সহজে। কারণ তাদের কণ্ঠ যদি হয় আবার সুমিষ্ঠ! বলতে পারেন, তারা দু’জন শিক্ষক ছাত্রী! আমিও বলছি, তারা দু’জন মহান শিক্ষক আর ছাত্রী।
তবে মনে রাখা দরকার মানবতার মুক্তিরদূত (সা.)-এর মৃত্যুর পর মেয়েদের ফিতনাই সবচেয়ে বড় ফিতনা হবে বলে তিনি সাবধান করে গেছেন। সে ছাত্রী হোক আর শিক্ষক অথবা শিক্ষিকা হোক। যে কারো মাধ্যমে হতে পারে এ ফিতনার সংঘটন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার পরে পুরুষের জন্যে মহিলাদের চেয়ে অধিক ক্ষতিকারক কোন ফিতনা আমি রেখে যাইনি।’ (সহীহ আল-বুখারী ও মুসলিম)
হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাযি.)-এর সূত্রে রাসুল (সা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই দুনিয়া সুমিষ্ট সবুজ (আকর্ষণীয় ও চাকচিক্যময়) আল্লাহ তাআলা সেখানে তোমাদের খলীফা হিসেবে পাঠিয়েছেন। তিনি দেখতে চান যে, তোমরা কেমন আমল করো? তোমরা দুনিয়া ও নারী থেকে সতর্ক থাকো। কেননা বনী ইসরাইলদের মধ্যে যে প্রথম ফিতনা দেখা দিয়েছিল তা ছিল নারীকে কেন্দ্র করেই।’ (সহীহ মুসলিম: ২৭৪২)
উক্ত হাদীসে কাউকে নির্দিষ্ট করে বলা হয় নি, বরং বলা হয়েছে মহিলাদের ফিতনা। শিক্ষক যদি আবার অবিবাহিত হন তাহলে তো ভয় থাকবেই, যেহেতু তাঁরা এখনো অজানা মানুষটির খুঁজে হারদম সচেষ্ট। এই জন্য ছোট-বড় সব ছাত্রীর সাথেই হেজাবের ব্যবস্থা করা ভালো। জানা আছে আপনাদের, ইমাম আযম আবু হানিফা (রহ.) ইমাম মুহাম্মদ (রহ.)-কে ক্লাসে তাঁর সামনে বসাতেন না, বসাতেন পিছনে, কারণ সে দাড়িবিহীন আমরদ ছেলে। একদা সূর্যের কিরণে দেখলেন তার মুখে দাড়ি, তখন থেকে সামনে বসাতেন। এটি তাঁর দূর দৃষ্টি ও সচেতনতার কারণে।
ঘটনাটি এতো প্রসিদ্ধ যে, তার প্রমাণ খোঁজা সময় ক্ষেপণ ছাড়া কিছুই নই। যেখানে ইমাম আযম (রহ.) নিজেকে গোনাহ থেকে বাঁচাবার জন্যে এতই সতর্কতা অবলম্বন করেছেন, সেখানে দীনদারি আর পরহেজগারির ক্ষেত্রে আমরা (স্কুল, কলেজ, মাদরাসা আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা) তো তাঁর যুগের ক-খ-গ পড়ুয়াদের চেয়েও কম সচেতন ও কম দীনদার। আশা করি খুব একটা বাড়িয়ে বলি নি। সত্তরের দশকে চলে যাওয়া মুফতী আযম আল্লামা মুফতী ফয়জুলল্লাহ (রহ.)-এর এক মুরিদ ছিলেন। তার বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানার অন্তর্গত শোয়াবিল ইউনিয়নে। তিনি প্রতিদিন তাহাজ্জুদের পাশাপাশি ‘সালাতুত তাসবীহের নামায’ পড়তেন। আমার শায়খ আল্লামা মুফতী গোলাম কাদের (সাতকানিয়া হুযুর) বলতেন, ‘তার এ আমল আমৃত্যু বহাল ছিলো।’ কোথায় ইমাম আযমের যুগ আর কোথায় শত বছর পরে মুফতী আযমের যুগ! তাহলে বুঝতে আর দেরি হয় না যে, কেন আমি ইমাম আযমের ক-খ-গ পড়ুয়াদের ‘চেয়েও কম দীনদার’ বলেছি। এবার মূল আলোচনায় ফিরে আসি এবার। ইমাম আযম (রহ.) আল্লাহর একজন কামেল ওলী হওয়া সত্ত্বেও তিনি আমরদ বা নাবালেগ ছেলেদের ব্যাপারে সর্তকতা অবলম্বন করতেন যেখানে, সেখানে আমরা কীভাবে বড়-ছোট মেয়ে ছাত্রীদের ক্ষেত্রে পর্দা নিয়ে শিথিলতা প্রদর্শন করবো আর নিজেদেরকেও পূর্ণ নিরাপদ মনে করবো?!! এটি শয়তানি ধোকা। সে আমাদের আজীবনের ছাত্র।
শায়খুল হাদীস আল্লামা হাফেয যাকারিয়া (রহ.) বলেছেন, ‘ছোট ছোট নাবালেগ ছাত্রদের ক্লাস নেওয়ার পর, শিক্ষক রুমে এসে ইস্তিগফার করবেন।’ কারণ হল, একই ঔরসে গাঁথা না হলে আর জন্মসূত্রে এক না হলে একে অন্যেও প্রতি আকৃষ্ট হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এমনকি ছাত্রী আর শিক্ষক হয়েও।
আজ যারা সুশিক্ষা নিতে এসেছে, আমরা কি তাদের সুশিক্ষা দিচ্ছি, তাদের সাথে কি আমরা পূর্ণপর্দার আচরণ করছি? সুশিক্ষা শিখার স্থানে শিক্ষকের আসনে সমাসীন হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে নারী ঘটিত বিষয় থেকে নিরাপদ রাখতে? আসা-যাওয়ায়, ক্লাস নেওয়ার সময়। ছাত্রীদের দিয়ে প্রতিষ্ঠানের কাজ করাতে গিয়ে সাধারণত পর্দা রক্ষা হয় কম যদি পুরুষ শিক্ষক দিয়ে স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয় আর মাদরাসায় ছাত্রীদের ক্লাস নেওয়া হয়, কিংবা আলাদা ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকে। যে ‘স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয় আর মাদরাসা’ মহিলা বিভাগ মহিলা শিক্ষিকা দ্বারা পরিচালিত হয় এবং পুরুষ বিভাগ পুরুষ শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত হয় তাহলে নারী ঘটিত অপরাধের সুযোগ তেমন একটা না।
বাস্তবতা পর্দা-খেলাফের খেলাফ নয়। অন্তত একটা কাজ করলে কিছুটা হলেও রক্ষা হবে ‘বেচারা শরীয়তী পর্দা’। যদি অপারগতাবশত মহিলা বিভাগের দায়িত্বে পুরুষ পরিচালক থাকতেই হয় তাহলে প্রিন্সিপাল অথবা মুহতামিম সাহেব প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ তত্ত্বাবধানে থাকবেন আর সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকবেন তিনি মাদরাসার অফিসে। প্রধান শিক্ষিকার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অথবা মাদরাসার ভেতরে প্রয়োজন মিটাবেন। প্রধান শিক্ষিকা হবেন পরিচালকের স্ত্রী বা মাহরাম (যার সাথে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যায় না) এমন কেউ।
মাদরাসার ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষিকা অবশ্য আলেমা হতে হবে, অন্যথায় তিনি আলেমদের আর আলেমাদের অবস্থান পুরাপুরি বুঝতে সক্ষম হবেন না। যেমনটা দেখছি তাবলিগের চলমান সংকটে। জি, তারা দুইজন প্রতিদিন পরামর্শ করে করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবেন। যার সাথে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যায় এমন শিক্ষিকার তো প্রশ্নই আসে না। এটি সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হোক বা মাদরাসা হোক। যদি পরিচালকের স্ত্রী (প্রধান শিক্ষিকা বা মাহরামা কেউ) না হন, তা হলে প্রচলিত ধর্ষণের ঘটনা ঘটতে থাকবে, কারণ পরিচালক আর সহযোগী পরিচালিকার মাঝেও যে, বেপর্দার সম্পর্ক। অন্ধ অন্ধকে পথ দেখাবে কী করে!
ক্লাস বা দরস নেওয়ার সময় কোনো ছাত্রীর নাম না ধরা। যদি নাম না ধরে ক্লাস করা হয়, তাহলে কীভাবে ক্লাস নিবে? জি, বলছি, হাটহাজারী, পটিয়া মাদ্রাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় রোল কল করবেন শিক্ষকগণ। কারণ মেয়েদের নাম মনার্কষক। তিক্ত হলেও সত্য যে, একজন ভালো ছাত্রী, যে প্রতিদিন ভালো পড়ালেখা করে এবং পারেও বটে। সে যেহেতু সবসময় পড়া পারে, অদিকে বিবাহিত, অবিবাহিত পুরুষ শিক্ষক প্রতিদিন ছাত্রীদের পড়া নিতে গিয়ে বারংবার উক্ত মেধাবী ছাত্রীর নাম বাধ্য হয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিতে হয়। যার কারণে একটি নাম প্রত্যেকদিন নেওয়ার দ্বারা অন্তরে নামটির দাগ বসা স্বাভাবিক। শিক্ষক যদি যুবক হন, অবিবাহিত হন আর দীনদার না হন তাহলে বেশ বিপজ্জনক। যা আজ সংঘটিত হচ্ছে। অন্যদিকে দুর্বল ছাত্রীর নাম ধরা হয় কম তাই নামটির প্রতি দাগ বসাও অস্বাভাবিক। তবে পক্ষপাতদুষ্টতা শিক্ষক-শিক্ষিকার বৈশিষ্ট্য বিরোধী কাজ। শিক্ষকের কাজ হল সবাইকে সমানভাবে মেধাবী বানানোর চেষ্টায় যথেষ্ট সচেষ্ট হওয়া এবং বিরক্ত না হওয়া।
ছাত্রছাত্রী আর শিক্ষক-শিক্ষিকা যেই হোক, বসার আদব হল, এমন অভিনব কায়দায় ক্লাসে বসা, যার দ্বারা একে অপরের প্রতি কোনো প্রকার বিরূপ মন্তব্যের সুযোগ না পায়। বসার কিছু চারিত্রিক পদ্ধতি ধরে দেওয়া যাক এবার। উভয় হাটু উঠিয়ে বসা/ এক হাটু উঠিয়ে বসা/ উভয় হাটু বিছিয়ে নামাযের মতো বসা। এসবের মধ্যে সর্বোত্তম বসার সিসটেম হল ‘নামাযে তাশাহহুদের’ মতো করে বসা। এই পন্থায় উভয় পক্ষের জন্য নিরাপত্তার বিধান রয়েছে। এটি হলো যারা গৃহতলে বসে বসে পড়ালেখা করেন ও করান তাদের জন্য।
মাদরাসার শিক্ষক বা শিক্ষিকা যদি অপারগতার কারণে চেয়ারে বসে ক্লাস নেন তাহলে অবশ্যই তাকে এমনভাবে বসতে হবে, যেন নিজের শারীরিক অবস্থা ভেসে না উঠে, কিংবা বোঝা না যায়। সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রেও এইক কথা।
যারা চেয়ার-টেবিলে বসে পড়ালেখা করেন ও করান তারা চেয়ারে বসা অবস্থায় উভয় পা নামাযে দাঁড়ালে যেমন উভয় পা মিলিয়ে রাখে মেয়েরা তেমনি উভয় পা মিলিয়ে রাখবে। ছাত্র-ছাত্রী আর শিক্ষক-শিক্ষিকা একে অপরের পা নাড়াচাড়া করা, খেলাধুলাও করা শিষ্টাচার বিবর্জিত কাজ। এর কারণে উভয় উভয়ের সামনে হালকা হয়ে উঠে এবং এখান থেকেও ধর্ষণের সূত্রপাত হতে পারে।
ক্লাস চলাকালীন নাক-কান- গলা আর পা ধরে খেলা না করা। প্রয়োজন হলে ধরা যায় তবে তার আদব রক্ষা করেই ধরতে হবে। বিশেষভাবে কুরআন শরিফ, কিতাব, কিংবা আরবি বই অথবা ইসলামি পুস্তকাদি পড়ার সময় নাক-কান- গলা আর পা ধরে খেলা করা চরিত্র বিবর্জিত কাজ। ধরলেও বেশ সতর্কতার সহিত ধরা। এর কারণেও একেঅন্যের সামনে হালকা হয়ে উঠতে পারে। মনে পড়ে গেলো মুফতী আযম (রহ.)-এর কথা। ‘ক্লাস চলাকালীন কোনো ছাত্র পা ধরলে তাকে হাত ধুয়ে আসতে বলতেন।’
ছাত্রী আর শিক্ষক-শিক্ষিকার কাপড় কেমন হবে? এমন প্রশ্নের উত্তর এক কুরুচিপূর্ণ আলোচনা। এরপরেও সময়োপযোগী বলে কথা। উভয় পক্ষের পরিধেয় পোশাক হতে হবে নিখুঁত কাজের মোটা সুতি কাপড়ের। পাতলা ও অসুতি এবং বাটিক ও সিলিক হয়ে মোটা হলেও চরিত্র বিবর্জিত। যেহেতু শরীয়তের উদ্দেশ্যই হল পর্দার মধ্য দিয়ে মেয়েদেরকে দুনিয়ার জান্নাতে রাখা। আর এইসব কাপড় পরিধান করলে শরীয়ত যেমন রক্ষা হয় না তেমনি একজন অবিবাহিত শিক্ষক নিজেকে সম্ভ্রম রাখাও দুঃসাধ্য। আর যদি ভেসে উঠে শরীরের অবয়ব; তা হলে কী করে রক্ষা হবে দুনিয়ার জান্নাত? হবে না। মহিলাদের কাপড় ও বাস্তসতা আর মা-বাবর দায়িত্ব নিয়ে বিস্তারিত জানতে চান, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার মুখপত্র মাসিক আত-তাওহীদের মার্চ’১৯-এ দেখতে পারেন, ঈমানী পোশাকে বেঈমানী নীলনকশা প্রবন্ধটি। অন্তর্জালেও পাবেন।
বর্তমানে স্কুল, কলেজ আর ইউনিভারসিটির ছাত্রীরা আজ দৃষ্টিনন্দন নেকাব আর বোরকা পরিধান করে। চোখে পড়ার মতো। আমি তাদের সাধুবাদ জানাই। তবে বোরকা-নেকাব কেমন হবে? এমন একটি প্রশ্ন থেকেই যায়। বলছি, বোরকা-নেকাব এমন হতে হবে যার পরিধান ভিন্নচোখকে আকৃষ্ট করবে না। বিস্তারিত পূর্বে। আর জ্ঞানীরাই শিক্ষা গ্রহণ করে থাকেন।
বোরকা-নেকাব পরিধান করবে কারা? এ সম্পর্কে তিনটি বিষয় প্রথমে আমাদের জানবো।
এক. পর্দা কী? উত্তর: পর্দা মেয়েদের রক্ষাকবজ। পর্দা হল একজন মেয়ে বা মহিলাকে হায়েনাদের কুদৃষ্টির ঝাপটা থেকে বাঁচাবার একমাত্র হাতিয়ার। তবে পূর্ণ পর্দা হওয়া বাঞ্চনীয়। পর্দার প্রকারভেদ অনেক, তবে দুই প্রকারের কথা বলছি।
- চোখের পর্দা: যার দ্বারা প্রতিনিয়ত পাপ করেই চলছে প্রাপ্তবয়সে উপনীত উভয়সমাজ (নারী-পুরুষ)।
- শারীরিক পর্দা: এমন কাপড় পরিধান করতে হবে, যা পরার পর নারী-পুরুষের শরীরের কোনো অবস্থা আর অবস্থান যেন ফুটে না উঠে। শুধু বোরকা-নেকাব পরিধানের নাম পর্দা নই, বরং মেয়েদের শারীরিক উঁচানিচা না বোঝা যায় এমন পরিধানের নামই পর্দা বা হেজাব। পর্দা না কোনো বোরকার নাম, না কোনা নেকাবের নাম, না কোনো আবায়া আর হাফ-কোয়াটার বোরকার নাম! কী এক সময়ে এসে আমরা উপনীত হয়েছি, যেসময় মেয়েরা অর্ধেক জিন্স আর অর্ধেক স্লিপিং স্কিন-সোস বোরকা পরিধান করে হাটাচলা করে! তা কখনো চারিত্রিক বোরকা হতে পােও না, বরং এটি ‘বোরকা’ নামের আত্মপ্রতারণা এবং পতিতাপাড়ার পোশাক ছাড়া আর কিছুই নয়।
দুই. কাদের ওপর পর্দা ফরয? সাবালেগ ছেলেমেয়ের ওপর চোখেমুখে পূর্ণরূপে পর্দা আদায় করা ফরয।
তিন. কারা পর্দা করবে? কেন পর্দা করবে? আমি মনে করি পর্দা করার ক্ষেত্রে মেয়েরা কোরবানি আর আকিকার ছাগলের ন্যায় অর্থ্যৎ ছয়মাসি ছাগলের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যদি তা দেখতে এক বছরি ছাগল মনে হয় তাহলে তা দিয়ে কুরবানি শুদ্ধ হবে; তেমনিভাবে নাবালেগ মেয়েদের দেখতে যদি সাবালেগা মনে হয়, কিংবা এতো বড় হল যে, মানুষের চোখে আসে অথবা ভিন্ন ব্যক্তির অভিন্ন চোখে ভিন্ন ভিন্ন উঁকিঝুঁকি দিতে বাধ্য করে, তাহলে নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, সেই নাবালেগ মেয়ে অবশ্যম্ভাবি বালেগ মেয়ের হুকুমে চলে আসবে এবং পূর্ণ পর্দার আওতাভুক্ত হবে। অন্যতাই তার অভিভাবকগণ জাহান্নামের ইন্ধন হবে। আমরা কি দৈনিকে দৈনন্দিন দেখছি না মাত্র ৩-৫ বছরি মেয়েরাও আজ ধর্ষণের শিকার! আল্লাহ তাআলা বলেন,
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قُوْۤا اَنْفُسَكُمْ وَ اَهْلِيْكُمْ نَارًا وَّ قُوْدُهَا النَّاسُ وَ الْحِجَارَةُ ۰۰۶
‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও। এবং যার ইন্ধন হবে মানুষ আর পাথর।’[2]
আমি তার (ছাত্রীর) বাবা নই। সে আমার মেয়ে নয়। এ জন্য শিক্ষকসমপ্রদায়কে সবিনয়ে m‡¤^vab করে বলছি, আমরা নিজেদেরকে চোখের গোনাহ থেকে বাঁচাবার চেষ্টা করি। সহজ ভাষায়, চোখের গোনাহ থেকে বাঁচি। অন্যতাই চলমান ধর্ষণীয় সমস্যার উত্তরণে জোয়ার আসতে থাকবে। সে (ছাত্রী) জন্মসূত্রে আমার নয়। আমার হলে তো আমারই মেয়ে হিসেবে পড়াতাম আর ভিন্ন চোখে তাকাতাম না। যেহেতু আমার মেয়ে নয় সেহেতু তার দিকে ভিন্নচোখে দেখার চলমান ধর্ষণীয় সমস্যা-সমাপ্তির ইতি টানতে চাইছে শয়তান। আর সে প্রকাশ্য শত্রু হয়ে হারদম অজান্তে কাজ করেই যাচ্ছে। আর আমিও অস্থায়ী স্বাদ আস্বাদন করছি! আর শিকার করছি আমার মেয়ের বয়সী অন্যের মেয়েকে!!! আমার মেয়েকে যদি অন্য কেউ …?!
যারা বিবাহিত তারাই হবেন একমাত্র ছাত্রীদের শিক্ষক। বিবাহিত শিক্ষক পাওয়া না গেলে অন্ততপক্ষে সুন্দর চরিত্রের কাউকে দেখতে হবে। তবে বাহ্যিক দীনদার অবস্থা দেখেই আপনাকে ব্যক্তি নির্বাচন করতে হবে। কী আর করার! এটি অপারগতা। তবে চেষ্টায় থাকতে হবে পরিচালকদের।
ছাত্রীদের কেন পড়াবো? ‘মাতৃকোল একটি শিশুর পিওর প্রথম বিদ্যালয়’- গবেষকগণ মন্তব্য করেছেন। তাঁরা আরও বলেছেন যে, ‘শুরুর জ্ঞান সুন্দর আর পবিত্র হয় যার, বাকি জীবন অসুন্দর আর অপবিত্র হয় না তার।’ আর আমি নিজেও প্রসিদ্ধ উক্তি বাস্তবায়ন করার প্রতি বেশ হুঁশিয়ার।
উক্তি: আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি দেব।-নেপোলিয়ন।
একটি প্রশ্নোত্তর: কোন শিক্ষায় শিক্ষিত মা চেয়েছিলেন নেপোলিয়ন?
ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত মা যদি না চান, তাহলে চাওয়াটিও ভুলে ভরা তাঁর। কারণ যেই মায়ের কাছে ইসলামি জ্ঞান নেই সেই মা, মা হতে পারেন বটে, তবে, পূর্ণ শিক্ষিত মা হতে পারবেন কী করে। কারণ সভ্যতার ধর্ম ইসলাম মানুষকে কেবল সভ্যতাই শিখিয়ে থাকে। ইসলামি শিক্ষা ব্যতীত অন্য শিক্ষা যতই থাকুক তাদের, তারা (সেই মায়েরা) সমপন্ন সুশিক্ষিত মা হবেন না যতক্ষণ ইসলামি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হবেন না। তারা ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত না হলে ছেলেমেয়েদের কী শিখাবেন! যার প্রমাণ মিলছে মহান মহান পশ্চিমাদেশগুলোতে। উন্নত রাষ্ট্রে আজ গণধর্ষণের যে ভয়াবহতা বিরাজ করছে, তার জন্য একমাত্র দায়ী তার দেশ; আর সেকারণে বেয়াড়া সন্তানদের বেলাই প্রথমে অশিক্ষিত মা-বাবার ঘাড়ে দোষ চাপান বিজ্ঞজনেরা। ছোট বয়সে তাকে শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ ছিল, আর তখন সে ছিল এক গলিত মোম। যাকে স্বর্ণে রূপায়নের সুবর্ণসুযোগ ছিল। সেই সময়ে বাচ্চাকে যাই শিখানো হয় তাই সে ‘টিয়া পাখির মতো’ শিখতে পারে। তাই বলি, অন্যান্য জ্ঞানে জ্ঞানী করার সুযোগ আছে। আগে আসল জ্ঞানের সন্ধান দিন। আর না হয় তার পরিসমাপ্তির জন্য দায়ি থাকবেন অভিভাবকগণ। এমন বেয়াড়াদের সংশোধন করতে আজ শিক্ষকসমপ্রদায় স্কুল, কলেজ, ইউনিভারসিটি আর মহিলা মাদরাসায় শিক্ষকতা করে থাকেন। তবে শিক্ষকসমপ্রদায় যেন অবশ্যই সুশিক্ষিত হন, আর না হয় চলমান সমস্যার উত্তরণের পরিবর্তে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। হাদীসে আছে ‘তোমাদের প্রত্যেকজন দায়িত্বশীল আর তোমাদের প্রত্যেককেই নিজ দায়িত্ব সমপর্কে জিজ্ঞেসা করা হবে।’ (সহীহ আল-বুখারী ও মুসলিম)
যারা স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি আর মহিলা মাদরাসার সম্মানিত প্রিন্সিপাল এবং শিক্ষক মহোদয়গণ আছেন চলমান সমস্যার উত্তরণ নিয়ে ভাবা আমাদের কাজ; আমরা আমাদের কাজে অন্যদের দখলদারি না দিয়ে নিজেরাই চিন্তা করি পর্দা, ধর্ষণ ও চলমান সমস্যার উত্তরণ কীভাবে সম্ভব। আর ভাবি আপনি আর আপনার প্রতিষ্ঠান কতটুকু নিরাপদ এই নগণ্য ব্যক্তির কিছু দিকনির্দেশনার চলমান সমস্যার উত্তরণের বিষয়ে। তা একমাত্র আপনি বা আপনারা জানেন। আলোচ্য বিষয়ে নজর রাখলে আশা রাখি ৬, ৯, আর ১২ বয়সী কাউকে বিচ্ছিন্নবাদীদের অমানবিক আচরণের শিকার হতে হবে না, পরে দুষ্টুরাও মিষ্টের কাতারে চলে আসবে। তওফীক দানের মালিক একমাত্র বিধাতা। তিনিই সবকিছুর তাওফিক দাতা। আমীন।
লেখক: সমাজকর্মি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
[1] আল-কুরআন, সুরা ইয়াসীন, ৩৬:৬৫
[2] আল-কুরআন, সুরা আত-তাহরীম, ৬৬:৬