সালাত-নামায
সমস্যা: পবিত্র জুমার নামাযের খুতবা বাংলা ভাষায় প্রদাণ করা বৈধ হবে কি?
মুহাম্মদ মতিন
সোনাতলী, বগুড়া
সমাধান: আরবি ভাষা ব্যতীত বাংলা ভাষা বা অন্য যেকোনো আঞ্চলিক ভাষায় জুমার খুতবা প্রদান করলে খুতবা এবং জুমার নামায কোনটাই সহীহ হবে না। (যেমন নাকি নামাযের সুরা কেরাত আরবি ভাষা ব্যতিত অন্য কোন আঞ্চলিক ভাষায় পড়লে নামায শুদ্ধ হয় না।) কেননা নবী করীম (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামদের যুগে অনারব অনেক অঞ্চল বিজিত হয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে এসেছিল। কিন্তু সে সময়ও জুমার খুতবা আঞ্চলিক ভাষায় পড়ার কোন প্রমাণ নেই। অথচ সে সময় ইসলামের দাওয়াত ও তাবলীগের জন্য আঞ্চলিক ভাষায় জুমার খুতবা দেওয়ার খুবই প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা এমনটি করেননি। আদ-দুররুল মুখতার: ১/৪৮৪, ফাতাওয়ায়ে শামী: ৭/৭৫৭, আল-বাহরুর রায়িক: ১/৩০৬
সমস্যা: ফরয নামাযে পাগড়ির শেমলা (মাথা) কতটুকু হতে হবে? পাগড়ির শেমলা যদি লম্বা হয় তাহলে কি নামায ভেঙে যাবে?
আসাদ উল্লাহ
চৌধরী পাড়া, সাতকানিয়া
সমাধান: শরীয়তে পাগড়ির শেমলা এক বিঘত বা এক হাত পর্যন্ত লম্বা হওয়া মুস্তাহাব। তবে তার থেকে বেশি হলেও বিশেষ কোন অসুবিধা নাই। আর লম্বা হলে নামায ভেঙে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসেনা। উল্লেখ্য যদি শেমলা এমন লম্বা হয় যে, যা রক্ষা করা মুসল্লির জন্য কঠিন হয়, তাহলে তা মাকরুহ হবে। আদ-দুররুল মুখতার: ৫/৪৮১, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী: ৪/২০৮, খুলাসাতুল ফাতাওয়া: ৪/৩৬৯
সমস্যা: যদি ঈদের নামাযে প্রথম রাকআতে তিন তাকবির এবং দ্বিতীয় রাকআতে দুই তাকবির বলা হয়। তখন দ্বিতীয় রাকআতে এক তাকবির ছেড়ে দেয়া সত্ত্বেও নামায শুদ্ধ হবে কি? যদি না হয়, তাহলে পুনরায় আদায় করতে হবে কি?
হাজী আবদুল আজীম
চকরিয়া, বদরখালী
সমাধান: ঈদের নামাযের উভয় রাকআতে অতিরিক্ত যে তাকবিরগুলো আছে হানাফী মাযহাব মতে সেগুলো ওয়াজিব। আর নামাযে ভুলবশত ওয়াজিব ছুটে গেলে সাহু সিজদা দিতে হয়। তবে ঈদের নামাযে যেহেতু সাহু সিজদা দিলে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা রয়েছে, তাই সাহু সিজদাও দিতে হবেনা। সাহু সিজদা ছাড়াই নামায সহীহ হিসেবে গণ্য হবে। পরে কাজাও করেতে হবে না। ফাতাওয়ায়ে শামী: ১/৭০৫, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী: ১/১২৮, আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/১১৬
সমস্যা: আমাদের এলাকায় একবার একজন লোক মারা গেলে আমি সেই জানাযায় শরিক হই এবং দাফনও করি। দাফন শেষে কিছুলোক কবরের নিকটে দাঁড়িয়ে দুআ করতে থাকে। আর কিছু লোক একথা বলে চলে যায় যে, ‘জানাজার নামাযই তো দুআ, এটাতো কিছুক্ষণ আগে শেষ করলাম। আবার কি পৃথক দুআ করতে হবে?’ এখন আমার জানার বিষয় হলো, মূর্দা দাফনের পর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দুআ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে কেমন?
আবদুস সামাদ
মোমেনশাহী, ঢাকা
সমাধান: মুর্দা দাফনের পর যিয়ারত হিসেবে কবরের মাথার দিকে দাঁড়িয়ে সূরায়ে বাকারার প্রথম অংশ এবং পায়ের দিকে দাঁড়িয়ে শেষ অংশ তেলাওয়াত করা এবং সে সময় যারা সেখানে উপস্থিত থাকবে তারা মাইয়েতের ইসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে কোরআন শরীফের কিছু সুরা-আয়াত ইত্যাদি পাঠ করে মুনাজাত করা মুস্তাহাব। সুতরাং দাফনের পর কবর যিয়ারত হিসেবে দুআ-মুনাজাত করতে কোন অসুবিধা নেই। বরং তা মুস্তাহাব। মুসলিম শরীফ: ১/৩১২, মা’রিফুল হাদীস: ৩/৪৮৫, আদ-দুররুল মুখতার: ২/২৩৮
সমস্যা: বর্তমানে অনেক ছাত্রদেরকে দেখা যায় যে, তারা একদিকে অনেক টাইটফিট পায়জামা পরিধান করে অপরদিকে পাঞ্জাবি এত পাতলা ও খাট পরিধান করে যে রুকু এবং সিজদা অবস্থায় সতরের গোপনীয় অঙ্গগুলোর আকৃতি বোঝা যায়। এ ধরনের পোষাক পরিধাণ করে নামায আদায় করলে নামায শুদ্ধ হবে কি?
মোহাম্মদ জুবাইর
ইদগাহ, কক্সবাজার
সমাধান: এমন পাতলা কাপড় পরিধান করে নামায আদায় করলে যা দ্বারা শরীরের রং দেখা যায়, নামায শুদ্ধ হবে না। আর যদি রং দেখা না যায়, বরং টাইট ফিট কাপড় পরিধারন করার কারণে শরীরের গোপনীয় অঙ্গগুলোর আকৃতি বোঝা যায়, তাহলে তা পরিধার করে নামায আদায় করলে নামায হয়ে যাবে। তবে এধরণের পোষাক পরে নামাযাদায় অনুচিত। আল-বাহরুর রায়িক: ১/২৬৮, আল-বিনায়া: ২/১৩১, রদ্দুল মুহতার: ৩/৮৪, বাদায়িউস সানায়ি’: ১/৫৮৭
হজ-ওমরা
সমস্যা: আমার বাবার নগদ টাকা-পয়সা, ব্যাংক-ব্যালেন্স, স্বর্ণালংকার বলতে কিছুই নেই। তবে নিজের চাষের প্রয়োজন হয় না এমন প্রায় পনের-বিশ গন্ডা ফসলী জমি আছে। জানার বিষয় হচ্ছে, এ অবস্থায় আমার বাবার ওপর হজ ফরজ হবে কি?
মাও. কাউছার আহমদ
আইনপুর, কচুয়া, চাঁদপুর
সমাধান: ফিকহ-ফতওয়ার কিতাবাদিতে এ বিষয়ে লেখা হয়েছে যে, যদি কারো এপরিমাণ জমি থাকে যার একাংশ বিক্রি করলে হজের যাবতীয় খরচ তথা হাজি নিজের থাকা-খাওয়া ও যাতায়াত খরচ এবং ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারের ভরণ-পোষণের খরচ বহন করে অবশিষ্ট জমির ফসলের মাধ্যমে তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়, তাহলে তার ওপর হজ ফরজ। এ থেকে বুঝা যায়, আপনার বাবার ওপর হজ ফরজ। ফাতাওয়ায়ে তারখানিয়া: ৩/৪৭২, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২১৮, ফাতাওয়ায়ে কাযীখাঁন: ১/২৮০, আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/৫৪২
সমস্যা: জনৈক ব্যক্তির কাছে এক সময় হজ ফরজ হয় পরিমাণ টাকা ছিলো। কিন্তু কারণবশত বাড়ি স্থানান্তরের প্রয়োজন দেখা দেওয়ায় সেখানে সমুদয় টাকা খরচ হয়ে যায়। জানার বিষয় হলো, তার ওপর হজ ফরজ হয়েছে কি?
আবদুল্লাহ
বাঁশখালী
সমাধান: হজ ফরজ হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে, হজের সময়গুলোতে (শাওয়াল থেকে জিলহজ মাসের ১৪ তারিখের ভেতরে।) বায়তুল্লাহ শরিফে যাওয়া-আসা ও পরিবারের ভরণ-পোষণের খরচাদি মিটাতে পারে এ পরিমাণ অর্থের মালিক হওয়া। সুতরাং সে যদি হজের সময়গুলোতে সে পরিমাণ টাকাগুলোর মালিক হয়ে থাকে তাহলে তার ওপর হজ ফরজ। আর যদি সে সময় আসার আগেই ঘর নির্মাণ কাজে তা খরচ করে ফেলে, তাহলে তার ওপর হজ ফরজ হবে না। ফাতাওয়ায়ে শামী: ২/৫০৩, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২১৯, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৫/৩৫৫
সমস্যা: হজ ফরজ হওয়া সত্ত্বেও নিজে হজ আদায় করেনি এবং মৃত্যুকালে ওয়ারিশদেরও অসিয়ত করে যায়নি। সাতকানিয়ার এমন একজন ধনী ব্যক্তি কিছুদিন পূর্বে মারা যায়। জানার বিষয় হলো, তার পক্ষ হতে হজ করা ওয়ারিসদের ওপর ফরজ কি না? যদি ফরজ না হয় এবং ওয়ারিসগণ স্বেচ্ছায় তার পক্ষ থেকে আদায় করে দেয়, তাহলে তা মাইয়িতের পক্ষ হতে অনাদায়ী হজের আদায় বলে গণ্য হবে কি?
মাও. শিহাব উদ্দিন
ছমদর পাড়া, সাতকানিয়া
সমাধান: যেহেতু মায়্যিত অসিয়ত করে যায়নি তাই তার পক্ষ হতে বদলি হজ করা ওয়ারিশদের ওপর ওয়াজিব না। তবে হ্যাঁ, ওয়ারিসদের মধ্যে যদি কেউ নাবালেগ না থাকে এবং সকলে স্বেচ্ছায় (তরকা সম্পদ থেকে) পিতার পক্ষ থেকে বদলি হজের অনুমতি দেয় অথবা ওয়ারিশদের কেউ ব্যক্তিগতভাবে নিজ সম্পত্তি থেকে বদলি হজ করাতে চায়, তাহলে পিতার পক্ষ হতে বদলি হজ করাতে পারবে। আল্লাহ‘র রহমতের ওপর ভরসা করে এটা তার পিতার পক্ষ থেকে (অনাদায়কৃত ফরজ হজের) আদায় বলে গণ্য হওয়ার আশা করা যায়। তিরমিযী শরিফ: ১/১৪৬, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ৩/৬৬৮, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২৫৯, ফাতাওয়ায়ে হক্কানিয়া: ৪/২৫৪
সমস্যা: কেউ যদি ওমরা করে তাহলে (এর ফলে )তার ওপর হজ ফরজ হয়ে যাবে কি? কোন কোন আলেম বলে থাকেন তার ওপর হজ ফরজ হবে। তারা কুরআনের এ আয়াত وَلِلّٰهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَيْهِ سَبِيْلًاؕ ۰۰۹۷ দ্বারা দলিল পেশ করে বলেন, যে ব্যক্তি ওমরা করবে, তার ওপর হজ করাও ফরজ হয়ে যাবে। জানার বিষয় হচ্ছে, আসলেই কি ওমরা করার দ্বারা হজ ফরজ হয়ে যায়? হলে, তার দলিল কী; না হলেও বা তার দলিল কী?
মাও. জমির উদ্দিন
চকরিয়া, কক্সবাজার
সমাধান: সাধারণত ওমরা করার দ্বারা (ওমরাকারীর ওপর) হজ ফরজ হয়ে যায় না। কেননা শুধু বায়তুল্লাহ শরীফ দেখলেই হজ ফরয হয়ে যাওয়ার কথা কোন কিতাবে উল্লেখ নেই। তাই কেউ হজের সময়ের আগে-পরে ওমরার উদ্দেশ্যে সেখানে গেলে তার ওপর হজ ফরজ হয়ে যাবে না। তবে হ্যাঁ, হজের সময়ে (শাওয়াল থেকে জিলহজ মাসের ১৪ তারিখের ভেতরে।) কেউ মক্কা শরিফ বা মসজিদে হারামে উপস্থিত হলে/থাকলে তার ওপর হজ ফরজ হয়ে যাবে বলে অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরাম মত পেশ করেছেন। ফাতাওয়ায়ে শামী: ৩/৪৫৫, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২১৬, বাদায়িউস সানায়ি’: ৩/৫১, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া:১৫/৩৬০
কুরবানি
সমস্যা: একই পরিবারের পিতা-পুত্র, মাতা-কন্যা (সবাই নেসাবের মালিক হোক বা না হোক) সবাই মিলে টাকা দিয়ে একাংশে শরিক হয়ে যেকোন একজনের নামে কুরবানি করলে তা শুদ্ধ হবে কি? রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নামে কুরবানি না দিলে-নাকি কুরবানি হয় না, শুধু গোস্ত খাওয়া হয়? এ ব্যাপারে শরীয়ত কি বলে?
এলাকাবাসীর পক্ষে
মাও. আবু ইউসুফ
পেশ ইমাম, পাঠান পাড়া জামে মসজিদ
সমাধান: একাধিক ব্যক্তি মিলে কুরবানির পশুর একাংশে শরিক হয়ে কুরবানি দিলে কুরবানি সহীহ হয় না। তবে হ্যাঁ, একজনকে মালিক বানিয়ে তার নামে কুরবানি করলে তার পক্ষ থেকে কুরবানি সহীহ হবে এবং তার অনুমতিক্রমে অন্যরাও গোস্ত খেতে পারবে। সুতরাং প্রশ্নে বর্ণিত সেই টাকা দিয়ে কোন একজনের নামে কুরবানি করার অর্থ যদি হয়, তাকে সেই টাকাগুলোর মালিক বানিয়ে তার পক্ষ থেকে কুরবানি করা তাহলে তা সহীহ হবে। আর যদি তাকে মালিক বানানো ছাড়া শুধু তার নাম ব্যবহার করে কুরবানি করা হয়, তাহলে তা সহীহ হবে না। তাদের সবাই অথবা কয়েকজন যদি নেসাবের মালিক হয়, তাহলে প্রত্যেককে পৃথক পৃথকভাবে কুরবানি করতে হবে। সবার পক্ষ থেকে এক ভাগ কুরবানি করলে কারোই কুরবানি আদায় হবে না। আর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নামে কুরবানি করা অবশ্যই সোয়াবের কাজ। তবে রাসুলের নামে কুরবানি না করলে কুরবানি হয় না এটা সম্পূর্ণ অমূলক ও ভিত্তিহীন কথা। এর সাথে কুরবানির শুদ্ধতার কোনো সম্পর্ক নেই।। আল-হিদায়া: ৪/৪২৮, আলবাহরুর রায়িক: ৮/১৭৩, বাদায়িউস সানায়ি’: ৪/২০৭, আহসানুল ফাতাওয়া: ৭/৪৮৬, ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া: ৬/১৬৪
সমস্যা: কুরবানির এক জন্তুতে একই ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি ও আকিকা উভয়ের নিয়ত সহীহ হবে কি? সহীহ হলে তো ভালো। সহীহ না হলে, তা-কি আকিকা? না-কি কুরবানি? না উভয়টাই? কেননা আহসানুল ফতওয়াতে আছে যে, এক জন্তুতে একই ব্যক্তির পক্ষ থেকে উভয়ের নিয়ত করা সহীহ হবে না। কারণ হিসেবে উল্লেখ্য করা হয়েছে যে, এক জন্তুতে একই ব্যক্তির পক্ষ থেকে একাধিক ইবাদতের নিয়ত সহীহ নেই। এ বিষয়ে সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন!
আবদুল্লাহ
কক্সবাজার
সমাধান: আমাদের গবেষণা মতে যেমনিভাবে এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে এক জন্তুতে একাধিক কুরবানির নিয়ত জায়েয, তেমনিভাবে (একই জন্তুতে একই ব্যক্তির পক্ষ থেকে) কুরবানি ও আকিকার অংশ নেওয়াও জায়েয। কেননা উভয়ই তো ইবাদত। প্রায় সকল ফতওয়ার কিতাবাদিতে একথাটি উল্লেখ্য আছে যে, যদি ইবাদতের জিনস এক হয় তাহলে কুরবানি সহীহ হয়ে যায়। যদিও ইবাদতের ধরণ ভিন্ন হোক না কেন। এজন্যই তো কুরবানির একই জন্তুতে কুরবানি, আকিকা ও অলিমা সবগুলোর নিয়ত করা সহীহ হয়। কেননা এসবগুলো ইবাদতের জিনস এক ও অভিন্ন, যদিও ধরণ ভিন্ন। আর আহসানুল ফতওয়াতে যা আছে এটা তিনার একক রায়। তিনি নিজ দাবির পক্ষে গ্রহণযোগ্য কোন আরবি ফতওয়ার রেফারেন্সও পেশ করেননি। (তাই আমরা তা গ্রহণ করতে পারিনি।) তাছাড়া আমাদের জানা মতে তিনি (তার উক্ত কিতাবের পরিশিষ্টতে) তার সেই রায় থেকে রুজু করার কথা ব্যক্ত করেছেন। ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩০৪, ফাতাওয়ায়ে শামী: ৯/৪৭২, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ১৭/৪৫২
সমস্যা: একটি গরুর পায়ে অসুস্থতার কারণে ভালো করে হাঁটতে পারে না। তবে কুরবানগাহে হেঁটে যেতে পারে এপরিমাণ চালিকা শক্তি আছে। ভালো করে হাঁটতে না পারায় বাজারে উঠালে কাস্টমারদের ক্রয়ের সম্ভাবনা খুবই ক্ষিণ। এ অবস্থায় একে যদি ইনজেকশন পুশ করা হয়, তাহলে আশা করা যায় একদম পরিপূর্ণ সুস্থ না হলেও মোটা-মোটি ভালোভাবে হেঁটে বাজারে যেতে পারবে। জানার বিষয় হচ্ছে, এভাবে ইনজেকশন পুশ করে মোটা-মোটি সুস্থ করে একে বাজারে উঠানো জায়েয হবে কি? তা মানুষকে ধোঁকা দেয়া হবে না-তো? উক্ত পশুটি দিয়ে কুরবানি করা যাবে কি?
এনায়েতুল্লাহ
ফতেহাবাদ, হাটহাজারী
সমাধান: উল্লিখিত অচল গরুটিকে ইনজেকশনের মাধ্যমে সচল করার চেষ্টা করা জায়েয ও বৈধ হবে না। বরং তা ধোঁকাবাজির শামিল হবে। খেয়ারে আইবের বিত্তিতে তা ফেরৎ যোগ্য বিবেচ্য হবে। মালিকের কর্তব্য হচ্ছে তাকে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করার চেষ্টা করা। অলসতা ও অবহেলাবশত চিকিৎসা না করালে মালিক গুনাহগার হবে। তবে কুরবানির মাসআলাতে যেহেতু কুরবানি শুদ্ধ হওয়ার জন্য কুরবানগাহে হেঁটে যেতে পারা শর্ত, চাই তা ওষুধ সেবনের মাধ্যমে হোক বা ইনজেক্শনের মাধ্যমে বা অন্য যে কোন উপায়ে হোক, নিজ পায়ে যবাহগাহে হেঁটে যেতে পারলেই হলো; তা দ্বারা কুরবানি শুদ্ধ হবে। সহীহ মুসলিম শরীফ: ৩/৫, সুনানে আবু দাউদ: ৩/৫৪, আল-হিদায়া: ৪/৭৩ ও ৩/৩৫
সমস্যা: আমাদের মসজিদ ও মসজিদভিত্তিক ফুরকানিয়া মাদরাসার এন্তেজামের জন্য একটি ফান্ড আছে। কুরবানির মৌসুমে ফুরকানিয়া মাদরাসার কথা বলে জনগণ থেকে সল্পমূল্যে কুরবানির চামড়া ক্রয় করে ব্যবসা করে এ ফান্ডটি ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে এই ফান্ড থেকেই মসজিদের ইমাম ও ফুরকানিয়া মাদরাসার শিক্ষকদের বেতন দেয়া সহ মসজিদ-মাদরাসার অন্যান্য কাজে খরচ করা হয়। জানার বিষয় হলো, উক্ত পদ্ধতিটি শরীয়তসম্মত কি-না? না হলে, উক্ত প্রয়োজন মেটানোর শরীয়ত সম্মত পদ্ধতি কী?
মু. মাহবুবুর রহমান
মহেষখালী
সমাধান: শরীয়তে কুরবানির পশুর চামড়া ও গোস্তের হুকুম এক ও অভিন্ন। এতে কোন পার্থক্য নেই। অর্থাৎ নিজেও খেতে পারবে এবং যাকে ইচ্ছা তাকেও দিতে পারবে। তবে বিক্রি করলে তার সম্পূর্ণ টাকা ফকির-মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। উল্লিখিত বর্ণনা মতে মসজিদ-মাদরাসার কল্যাণে সল্পদামে কুরবানির চামড়া বিক্রি করার দ্বারা গরিব-মিসকিনদের হক কমে যাচ্ছে, তাই তা কোনক্রমেই জায়েয ও বৈধ হবে না। কেননা মসজিদ-মাদরাসার ইমাম ও উস্তাদদের বেতনের অর্থ সংগ্রহের বিকল্প আরো অনেক ব্যবস্থ্া আছে। তাই গরিবদের হক নষ্ট করে মসজিদের ইমাম ও মাদরাসার উস্তাদগণের বেতন ব্যবস্থার কোনো প্রয়োজন নেই। ফাতাওয়ায়ে শামী: ৯/৪৭৪, আল-বাহরুর রায়িক: ৮/১৭৮, আহসানুল ফাতাওয়া: ৭/৫৩০, ইমদাদুল ফাতাওয়া: ৩/৫৩৩, কিফায়াতুল মুফতী: ৮/২২৭
সমস্যা: আজ দু’বছর যাবৎ চারজন মুসলমান একটি কুরবানির জন্তুতে সমভাবে চার অংশে কুরবানি দিয়ে আসছে। কিছুদিন আগে তারা লোক মুখে একটি ফতওয়া শুনতে পেয়ে নিজেরা মতানৈক্যে জড়িয়ে পড়ে। সেখানে তারা গাভী ইত্যাদির ব্যাপারে ফতওয়া দিয়েছে যে, এ জাতীয় পশুতে কুরবানির ক্ষেত্রে জরুরি হচ্ছে গোস্ত এবং কুরবানিদাতা হিসেবে সাত অংশ হওয়া। এখন জানার বিষয় হচ্ছে, আহনাফের মতে কুরবানির এক জন্তুতে গোস্ত এবং মূল্যের দিক থেকে সমভাবে চার অংশে চার শরীকে কুরবানি করলে তা জায়েয হবে কি?
মু. আজম
টেকনাফ, কক্সবাজার
সমাধান: যেহেতু উল্লিখিত সুরুতে একই গরুর কুরবানিতে চার শরিকের প্রত্যেকেরই ভাগে পূর্ণ একাংশ করে পাওয়া যাচ্ছে, তাই অবশিষ্ট তিনাংশে খন্ডাংশ পাওয়া যাওয়ায় কুরবানির বিশুদ্ধতায় (হানাফী মাযহাব মতে) কোন সমস্যা হবে না। কেননা অবশিষ্ট তিনাংশে ইবাদতহীনতার নিয়ত না পাওয়া যাওয়ায় পূর্ণাংশের অনুগামি হিসেবে এগুলোর কুরবানিকেও সহীহ বলে গণ্য করা হবে। যেমনটি হানাফি মাযহাবের বহু গ্রহণযোগ্য আরবি ফতওয়ার কিতাবে লেখা আছে। ফাতাওয়ায়ে হিন্দয়া: ৫/৩০৪ ও ৬/২০৫, আল-বাহরুর রায়িক: ৮/৩১৯, বাদায়িউস সানায়ি’: ৪/২০৭
সমস্যা: জনৈক ব্যক্তি জোরালোভাবে একথা প্রচার করছে যে, যেহেতু কুরবানী সহীহ হওয়ার জন্য কুরবানির পশু এুটি মুক্ত হওয়া শর্ত, তাই খাসি ও বলদের (আবালের) মধ্যে ত্রুটি থাকায় তা দ্বারা কুরবানি শুদ্ধ হবে না। জানার বিষয় হচ্ছে, উক্ত ব্যক্তির এসব কথা কতটুকু সঠিক? গরু-ছাগলের মধ্যে কুরবানির জন্য উত্তম পশু কোনটি। বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন!
মু. সাঈদুল হক
চন্দনাইশ, চট্রগ্রাম
সমাধান: একথা দ্রুবসত্য যে, খাসির গোস্ত পাঠার গোস্ত থেকে অনেক উত্তম ও সু-স্বাদু| অথচ পাঠার গোস্তে এক প্রকার গন্ধ থাকায় অনেকে তা পছন্দ করে না। তাছাড়া আমাদের দেশের হিন্দুরা বলির কাজে পাঠা ব্যবহার করায় তাদের সাথে সাদৃশ্যতা থেকে বাঁচার লক্ষে তা দ্বারা কুরবানি না করা উচিত। তেমনি গরুর মধ্যে ষাঁড়ের তুলনায় বলদের গোস্তই বেশি উত্তম ও সুস্বাদু| বরং ষাঁড়ের গোস্ত অনেকে খেতে চায় না। সুতরাং খাসি ও বলদ কুরবানির পশু হিসেবে অনেক উত্তম পশু। কুরবানির ক্ষেত্রে এগুলোতে দোষের কিছুই নেই। খাসি দিয়ে কুরবানি করা সহীহ সনদে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে প্রমাণিত। তাই খাসি ও বলদ দিয়ে কুরবানি করা জায়েয ও শরীয়ত স্বীকৃত| তাই বিভ্রান্তকারীদের এ জাতীয় বিভ্রান্তকর ভিত্তিহীন কথাবার্তা শুনা থেকে দূরে থাকা চাই। মুসনদে আহমদ: ২৩৮৬০, ফাতাওয়ায়ে শামী: ৯/৪৪৬, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/২৯৯
আকিকা
সমস্যা: আমরা জানি, কুরবানির বড় জন্তুতে সাত অংশ দেওয়া যায় এবং আকিকার অংশও নেয়া যায়। জানার বিষয় হচ্ছে, কুরবানি ছাড়া অন্য সময় বড় জন্তুতে একাধিক আকিকার অংশ নেওয়া যাবে কি?
মাও. রশিদ আহমদ
সাতকানিয়া
সমাধান: ভেড়া, বকরি ইত্যাদি দিয়েই আকিকা করা মুস্তাহাব। যদিও এক গরু দিয়ে একাধিক ছেলে-মেয়ের আকিকা করা জায়েয। কুরবানি ছাড়া অন্য সময়েও বড় জন্তুতে সাত অংশে আকিকা করা জায়েয ও বৈধ। মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক: ৭৯৬১, শামী: ৯/৪৭২, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ২৬/৪২৮
সমস্যা: কিছুদিন পূর্বে আমার বোন-দুলাভাই এক ভাগিনার আকিকা অনুষ্ঠানে আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করলে তারা হাদিয়া হিসেবে কাপড়-চোপড়, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার ইত্যাদি নিয়ে আসে। অনুষ্ঠান উপলক্ষে তারা কিছু টাকা ঋণী হয়ে যায়। জানার বিষয় হচ্ছে, উক্ত হাদিয়ার বস্তুগুলো বাচ্চাটি নিজে বা তার বাবা-মা ব্যবহার করতে পারবে কি? তা থেকে ঋণের টাকা পরিশোধ করা যাবে কি?
মু. যাইনুল আবেদিন
পিএম খালি, কক্সবাজার
সমাধান: আমাদের দেশে প্রচলিত আকিকা অনুষ্ঠানে হাদিয়া নামে কাপড়-চোপড়, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার যাবতীয় যেসব সরঞ্জামাদি দেয়া হয় বস্তুত তা হাদিয়া হয় না, বরং তা রেওয়াজ ও কর্জ হিসেবে গণ্য হয়। পরবর্তীতে দাতাদের এ জাতীয় অনুষ্ঠানে তা পরিশোধ করাকে জরুরি মনে করা হয়। তাই এগুলি নেয়া জায়েয হবে না। এগুলো থেকে বিরত থাকা একান্ত জরুরি। তবে এগুলো কর্জ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে এবং তা থেকে ঋণও পরিশোধ করতে পারবে। পরবর্র্তীতে তাদের এ জাতীয় অনুষ্ঠা হলে তা আবার পরিশোধ করে দিতে হবে। মিশকাত শরীফ: ১/২৫৫, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৭/৪০৬
নিকাহ-তালাক
সমস্যা: আমি মুসাম্মৎ … আক্তার দীর্ঘ ১৫ বছর পূর্বে …এর সাথে বিয়ে-বন্ধনে আবদ্ধ হই। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমার স্বামীর দাম্পত্য জীবনে অসুবিধার কারণে আমি কোনো সন্তানের মা হতে পারিনি। যার কারণে এলাকার লোকেরা আমাকে বন্ধ্যা মেয়ে বলে উপহাস করছে। এভাবে সে পুরুষত্বহীনতার কারণে আমার চাহিদা পূরণেও অক্ষম। তাকে এ ব্যাপারে চিকিৎসার কথা বলা হলে সে বলে, আমি যদি চিকিৎসায় দোষী নির্ণীত হই, তুই আমার কাছে থাকবি না। তা ছাড়া সে আমাকে বিভিন্নভাবে গালিগালাজ করতে থাকে এবং বিভিন্ন সময় শরীয়তবিরোধী কাজ করতে বাধ্য করে আর যথানিয়মে আমার খোরপোষও আদায় করে না। সুতরাং এসব কারণে আমাদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় তার সাথে আমার সংসার করা সম্ভব হবে না বলে অনুধাবন করছি। এ অবস্থায় কাবিননামার ১৮ নাম্বার ধারা মতে আমি নিজেকে তার বিয়ে-বন্ধন থেকে মুক্ত করি এরপর সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট-নোটারি পাবলিকের কার্যালয় থেকে তালাকনামা সংগ্রহ করে তার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। সে জোরপূর্বক তা গ্রহণ করেছে। এখন আমার জানার বিষয় হচ্ছে, আমি তালাকপ্রাপ্তা হয়েছি কিনা? যদি না হয় তাহলে আমাদের বিয়ে-বিচ্ছেদের পদ্ধতি কী? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
সমাধান: উল্লেখিত ঘটনায় স্বামী বিয়ের কাবিননামায় স্ত্রীকে যে শর্তসাপেক্ষে স্ত্রীর ওপর তাফয়ীযে তালাক ব্যবহার করার ক্ষমতা দিয়েছে সে শর্ত পাওয়া যাওয়ার কারণে স্ত্রী যদি নিজের ওপর তিন তালাক ব্যবহার করে বিয়ে-বিচ্ছেদ করে থাকে তাহলে সে তালাকপ্রাপ্তা হয়ে যাবে এবং তাদের বিয়ে-বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাবে। ফতওয়ায়ে আলমগীরী: ৬/২৬০, বাদায়িউস সানায়ি’: ৪/২৬৪, ফতওয়ায়ে কাসিমিয়া: ১৬/১৮৪
সমস্যা: এক ব্যক্তির স্ত্রীর দাবি হচ্ছে, স্বামী রাগের মাথায় স্ত্রীকে বলল, লা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলূল্লাহ তোমাকে এক তালাক, তার পর বলল, আমি তোমাকে আর দুই দিন বা তিন দিন পর দুই তালাক দেব এবং সঙ্গে সঙ্গে আবার বলল, এক তালাক দুই তালাক তিন তালাক। তারপর স্বামীর চাচাতো ভাই যখন বাড়ির মধ্যে আসল তখন স্ত্রী স্বামীর চাচাতো ভাইকে বলল, নুরানি মাদরাসার হুযরকে নিয়ে আস। তখন স্বামী বলল, তুমি যেয়ো না আমি শপথ করে বলছি, আমি এক তালাক দিয়েছি। আমি দুই তিন দিন পর দুই তালাক দেব বলেছি। ও আমার ভাত না খাওয়ার জন্য এসব বলছে। আর স্বামীর কথা হচ্ছে, স্ত্রী যখন স্বামীকে গালিগালাজ করছে সেই মুহূর্তে স্বামী রাগ করে বলল আমি তোমাকে এক তালাক দিয়েছি। এ রকম ব্যবহার খারাপ করলে আমি তোমাকে তিন তালাক দিয়ে দেব। অতএব মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হচ্ছে, উক্ত ঘটনায় কয় তালাক পতিত হবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মাওলানা খুরশেদ আলম
পেকুয়া
সমাধান: উল্লিখিত ঘটনায় স্বামীর জবানবন্দীতে স্বামী যখন পরিষ্কার ভাষায় একথা দাবি করছে যে, স্বামী কালিমা পড়ে স্ত্রীকে প্রথমে এক তালাক দিয়ে দেয় এবং স্ত্রীকে হুমকি দিয়েছে যে, তুমি যদি ব্যবহার খারাপ কর তখন অপর দুই তালাক দুই তিন দিন পর দিয়ে দেব, তাই স্বামীর জবানবন্দি অনুযায়ী স্বামী যদি আল্লাহর নামে শপথ করে একথা বলতে পারে তখন স্ত্রীর ওপর এক রজয়ী তালাক পতিত হয়ে গেছে। সুতরাং তালাকের সাধারণ ইদ্দত মাসিক তিন স্রাব অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে স্বামী যদি স্ত্রীকে মৌখিকভাবে একথা বলে আমি আমার স্ত্রীকে আমার আকদে নেকাহে ফিরিয়ে নিলাম বা স্ত্রীর সাথে সহবাস ইত্যাদি করে ফেলে তখন তাদের সাবেক নেকাহ বহাল হয়ে যাবে। তখন তাদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেলা-মেশা ও ঘরসংসার করতে শরীয়তের মধ্যে কোন বাধা নেই আর স্বামী যে তালাক দেওয়ার দুই তিন দিন পর হুমকিস্বরূপ দুই তালাক দেবে বলেছে তার দ্বারা স্ত্রীর ওপর কোন তালাক পতিত হয় নি। উল্লেখ্য যে, স্বামী এক তালাক দেওয়ার পর সে মজলিশে আরো তিন তালাক দেওয়ার যে দাবি স্ত্রী করছে তার পক্ষে শরীয়ত সম্মত কোন সাক্ষী না থাকায় তার দাবি গ্রহণযোগ্য হবে না। অবশ্য স্ত্রী যদি নিশ্চিতভাবে তিন তালাক দেওয়ার কথা বলে বা তার নিজ কানে শুনে থাকে তখন তার জন্য উক্ত স্বামীর নিকট থাকা এবং স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ঘর সংসার করা জায়েয ও বৈধ হবে না। সুরা আল-বাকারা: ২৮২, ফাতাওয়ায়ে শামী: ৪/৪৬৩, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৩৫৪, বাদায়িউস সানায়ি’: ৬/২২৫
সমস্যা: আমি ও আমার স্ত্রী যৌথভাবে দেশে-বিদেশে টুকটাক ব্যবসা করে থাকি। কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর আমার স্ত্রী ব্যবসা বড় করার জন্য বিভিন্ন সমিতি হতে বড় অঙ্কের টাকা মুনাফায় নিয়ে ব্যবসায় লাগায় এবং টাকা অপচয় করতে থাকে। যার ফলে ব্যবসায় ঘাটতি দেখা দেয় এবং পাওনাদারগণ টাকার জন্য আমার বাসায় আসা-যাওয়া শুরু করে। একপর্যায়ে আমার স্ত্রী বাপের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র ও স্বর্ণালংকার নিয়ে পিত্রালয়ে চলে যায় এবং ব্যাংকে আমার একাউন্ট হতেও প্রায় বিশ লক্ষাধিক টাকা তুলে নেয়। আমি বারংবার আমার স্ত্রীকে বাপের বাড়ি হতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সে আমাকে অশ্লীল ব্যবহার করে। পরে আমি আদালতের মাধ্যমে সাক্ষীগণের সম্মুখে সেচ্ছায় সুস্থ মস্তিষ্কে প্রথমে এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক দেই। কিছুদিন পরে আমরা আমাদের উভয়ের ভুল বুঝাবুঝির ইতি টেনে পুণরায় স্বামী-স্ত্রী হিসেবে নতুনভাবে ঘর-সংসার করতে একমত হই। এখন আমার জানার বিষয় হচ্ছে, তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে দ্বিতীয় দফায় বিয়ে করতে চাইলে করণীয় কী? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মু. আজমাল হোসেন
চট্টগ্রাম
সমাধান: আপনি যখন স্বেচ্ছায় আপনার স্ত্রীকে তিন তালাক প্রদান করেছেন উক্ত তিন তালাক আপনার স্ত্রীর ওপর পতিত হয়ে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণভাবে ছিন্ন হয়ে গেছে। তালাকের সাধারণ ইদ্দত মহিলাদের তিন হায়েয তথা তিন মাসিক স্রাবের সময় অতিবাহিত হওয়ার পর অন্য পুরুষের মাধ্যমে শরয়ী হালালা ব্যতীত আপনাদের পুণরায় বিয়ে-বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। উক্ত তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর সাধারণ ইদ্দত তথা তিন হায়েয অতিবাহিত হওয়ার পর কিংবা স্ত্রী গর্ভবতী হলে প্রসব হওয়া পর্যন্ত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর অথবা স্ত্রী মাসিক বন্ধ্যা নারী হলে তিন সাস অতিবাহিত হওয়ার পর উক্ত স্ত্রীকে অন্য কোন পুরুষের সাথে কমপক্ষে দুই জন পুরুষ সাক্ষীর উপস্থিতিতে এবং কমপক্ষে মহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ আড়াই হাজার টাকা মহর নির্ধারণ করে শরীয়ত সম্মতভাবে আকদে নিকাহ সম্পন্ন করতে হবে। অতপর দ্বিতীয় স্বামীর সাথে সহবাস ইত্যাদির পর সে যদি তাকে বায়েন তালাক দেয় এবং উপরোক্ত নিয়মে সেই তালাকের ইদ্দত পালন করার পর প্রথম স্বামীর সাথে যদি বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায়, তখন পুনরায় কমপক্ষে দুই পুরুষ সাক্ষীর উপস্থিতিতে এবং কমপক্ষে আড়াই হাজার টাকা মহর নির্ধারণ করে শরীয়ত সম্মতভাবে আকদে নিকাহ করতে পারবে। অন্যথায় কোন পথ নেই। সূরা আল-বাকারা: ২৩০, সহীহ আল-বুখারী শরীফ: ২/৭৯১, আল-হিদায়া: ২/৩৯৯
সমস্যা: আবদুল মালেক নামের এক ব্যাক্তি তার স্ত্রী সাবেরা খাতুনের সাথে পারিবারিক বিষয়ে ঝগড়া করতে গিয়ে একে অপরকে শক্ত গালি-গালাজ করে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে স্ত্রী তার স্বামী আবদুল মালেক কে এমন এক শক্ত কথা বলে ফেলে যার ফলে আবদুল মালেকের মাথা গরম হয়ে এক ধরণের বেহুশের মত হযে যায় এবং এই সময় তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে দেয়। এর আধা ঘন্টা পরে স্বাভাবিকতা ফিরে আসলে নিজ কৃতকর্মের ওপর অসম্ভব লজ্জিত হয়। এখন হযরত মুফতী সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হল উক্ত তালাক পতিত হয়েছে কিনা? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
আবদুল মালেক
চট্টগ্রাম
সমাধান: শরীয়তের মধ্যে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার সময় স্বামীর সাধারণ চরমরাগ স্ত্রীর ওপর তালাক পতিত হওয়ার মধ্যে বাধা হয় না। কেননা, আমাদের দেশে প্রায় তালাক স্বামীর সাধারণ চরম রাগের সময় দেওয়া হয়। নতুবা বাংলাদেশে কোন তালাক পতিত হবেনা। অবশ্য তালাক দেওয়ার সময় স্বামীর এমন চরম রাগ যার কারণে স্বামী মদহুশ তথা পাগলের মত আবুল-তাবুল কথা বলে এবং তার কার্যকলাপে স্বাভাবিক অবস্থার ব্যতিক্রম দেখা দেয়, রাগের সেই চরম অবস্থায় তাকে মদহুশ তথা পাগলের সাথে তুলনা করে সেই অবস্থায় তার দেয়া তালাক পতিত না হওয়ার কথা আমাদের কিছু ফাতওয়ার কিতাবাদিতে লিখা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্নপত্রে তালাক দেওযার সময রাগের এরকম অবস্থার কথা উল্লেখ নেই। তাই আমাদের তাহকীক মতে উল্লিখিত ঘটনায় স্বামীর এরকম চরম রাগের সময় দেয়া তিন তালাক স্ত্রীর ওপর পতিত হয়ে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে গেছে। তালাক দেওয়ার পর থেকে তাদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেলামেশা ও ঘর সংসার করা সুস্পষ্ট হারাম ও নাজায়েয। তালাকের ইদ্দত শেষ হওয়ার পর অন্য পুরুষের মাধ্যমে বিশুদ্ধভাবে শরয়ী হলালা ব্যতিত তাদের পুণরায় বিয়ে-বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। সহীহ আল-বুখারী শরীফ ২/২৯১, সুনানে দারা কুতনী: ৪/১৩, ফাতাওয়ায়ে শামী: ৪/২৫২, ফাতহুল বারী: ৯/৩০১
সমস্যা: আমি চট্টগ্রাম কলেজে ইতিহাস বিভাগে অধ্যয়ন করি। বাড়ি থেকে কলেজ দূরে হওয়ায় শহরে একটি আবাসিক ছাত্রীনিবাসে অবস্থান করি। সেখানে অবস্থানকালেই আমার বোন ও ভগ্নিপতির সাথে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যাই। সেখানেই এক ছেলের সাথে ফেসবুকে আমার সাথে পরিচয় হয় ও তার সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে। একপর্যায়ে সে আমার মা-বাবার আজান্তে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। আমরা ২,০০০০০ টাকা দেন-মোহর ধার্যক্রমে একটি চুক্তিপত্রের মাধ্যমে বিয়ে-বন্ধনে আবদ্ধ হই। আমার বয়স ১৮ বছর না হওয়ায় আমাদের কাবিননামা হয়নি। অতঃপর তার সাথে ঢাকায় একমাসের মতো অবস্থান করি। এরই মাঝে তার ভেতরের মানুষটিকে সে বের করে আনে। ক্রমাগত নিষ্টুর আচরণ এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে আমাকে অতিষ্ঠ করে তুলে। এমনকি আমাকে সম্পূর্ণ গৃহবন্দী করে আমার পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজন কারোরই সাথে কোন যোগাযোগ করতে দেয় না। এমনকি সে আমার মুঠোফোনটাও নিয়ে নেয়। অতপর অনেক কষ্টে পাশের বাসার মেয়ের মাধ্যমে আমি পরিবারের সাথে যোগাযোগ করি এবং আমার পরিবার ওখান থেকে আমাকে উদ্ধার করে তার সাথে আমার দাম্পত্য জীবনে সুখের কোন আশা নেই বিধায় তার নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য বর্তমানে পিতার ঘরে অবস্থান করছি এবং তালাকের মাধ্যমে নিজেকে মুক্ত করতে চাচ্ছি। অতএব কুরআন সুন্নাহর-আলোকে এর বিধি বিধান জানতে ফতওয়া বিভাগের নিকট আবেদন রইল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
সমাধান: প্রশ্নের বর্ণনা মতে তোমাদের আকেদে নেকাহ সরকারি কাবীননামা মূলে না হওয়ায় এবং স্বামী কর্তৃক মৌখিকভাবেও অর্পিত তালাকের ক্ষমতা অর্জন না করার কারণে তুমি নিজের ওপর তাফয়ীযে তালাক ব্যবহার করে বিয়ে-বিচ্ছেদ করার কোন সুযোগ নেই। তোমার বিয়ে-বিচ্ছেদ করতে হলে যেকোনভাবে স্বামী কর্তৃক তালাক নিতে হবে। না হলে তোমার মহরানা ক্ষমা করে স্বামীর কাছ থেকে খুলা তালাক নিতে হবে। নতুবা আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে মুকাদ্দামা দায়ের করে কোর্টকর্তৃক তোমার বিয়ে-বিচ্ছেদের ব্যবস্থা করতে হবে। সুরা আল-বাকারা: ২২৯, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী: ১/৪৮৮, ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া: ৮/৩৭৭, আল-হিদাযা: ২/৪০৪
বিভাগীয় নোটিশ
দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো সমস্যার শরয়ী সমাধান জানতে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার ফতওয়া বিভাগে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। এজন্য সরাসরি যোগাযোগ বা বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট ফোনে যোগাযোগ করুন। প্রশ্ন পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল বা ফেসবুক ফ্যান-পেইজেও।