বিজ্ঞানের মধ্যাকর্ষণ-তত্ত্ব, ভূ-রাজনীতি ও বায়তুল্লাহর ভূমিকা
আবিদুর রহমান তালুকদার
বিশ্বজগতের স্থিতি ও সঠিক দিক নির্ণয়ের লক্ষ্যে পৃথিবীর বুকে সর্বপ্রথম স্থাপিত গৃহ মক্কা নগরীর বায়তুল্লাহ। যেখানে দৈনন্দিন রহমতের অজস্র ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়। মহাবিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা এ গৃহের সমীহ, মর্যাদা ও স্থায়িত্বের ওপর নির্ভরশীল। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জানা যায়, চন্দ্রের নিজস্ব কোনো আলো নেই। সূর্য থেকে আলো গ্রহণ করে সে জ্যোস্না ছড়ায়। ব্জ্িঞান আরও প্রমাণ করে, মহাবিশ্বের প্রতিটি গ্রহ-নক্ষত্র পারস্পরিক আকর্ষণ শক্তির মাধ্যমে নিজেদের অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখে। চন্দ্র-সূর্যের আলো বিকিরণের নেপথ্য রহস্য এবং বিশ্বজগতের অস্থিত্ব রক্ষার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের যথার্থতার পাশাপাশি এর পেছনে মূল ভূমিকা পালন করে বায়তুল্লাহ। মহাবিশ্বের এ আকর্ষণ-তত্ত্ব বায়তুল্লাহকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। এ গৃহ থেকে নির্দেশনা লাভ করে বিশ্বজগতের গতি-প্রকৃতি পরিচালিত। আল্লাহ তাআলা বলেন,
اِنَّ اَوَّلَ بَيْتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِيْ بِبَكَّةَ مُبٰرَكًا وَّهُدًى لِّلْعٰلَمِيْنَۚ۰۰۹۶
‘ভূখণ্ডের সর্বপ্রথম নির্মিত স্থাপনা হল মক্কা নগরীতে। এতে রয়েছে বিশ্বজগতের সার্বিক দিক-নির্দেশনা।’[1]
বিষয়টির যথার্থতা দীর্র্ঘদিন যাবৎ মানুষের অগোচরে থাকলেও প্রযুক্তির কল্যাণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রকাশ পেয়ে গেছে এ অমোঘ সত্যটি। কয়েক বছর আগে ভারতের ডেইলি মাতৃভূমি বিশ্ব নারীদিবস উপলক্ষ্যে দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় ব্যক্তি নির্বাচনে ইন্টারনেটে একটি জরিপ পরিচালনা করে। এতে তৃতীয় স্থান অধিকারের গৌরব অর্জন করে সুনিতা উইলিয়াম। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসায় কর্মরত, ভারতীয় বংশোদ্ভূত এ নারী চার জন সঙ্গীসহকারে ১৯৭ দিন স্যটেলাইট স্পেস স্টেশনে অবস্থানকালে যে অলৌকিক সত্যটি বেরিয়ে আসে, তা রীতিমতো ইসলামের বৈরী শক্তির পিলে চমকে দেয়। পৃিথবী থেকে ইসলামের নাম নিশানা মুছে ফেলার জন্য যারা আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছে, সে আমেরিকার অর্থায়নে আল্লাহ তাআলা সত্যটি প্রকাশ করে দিয়েছেন বিশ্ববাসীর সামনে। তারা মহাকাশ থেকে শক্তিশালী দূরবীন যন্ত্রের সাহায্যে পৃথিবীর ছবি তুলতে গিয়ে শুধুমাত্র মক্কা মদিনাই স্পষ্ট দেখতে পান। আর পৃথিবীর পুরো অংশজুড়ে ছিল শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। এ অনাকাঙ্ক্ষী ঘটনা সুনিতা ও তার সঙ্গীদের মাঝে ইসলামের যথার্থতা, আল্লাহর একত্ববাদ ও তাঁর রসুলের আদর্শের মৌলিকতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করে। অভিনব ও বিস্ময়কর এ ঘটনার চাক্ষুষ দর্শনে তারা প্রত্যেকে ইসলাম গ্রহণ করে। আমেরিকার সরকার দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও ইন্টারনেটের কল্যাণে প্রকাশ পেয়ে যায়।
যার ওপর ভর করে পুরো পৃথিবীর নিরাপত্তা ও স্থিতি, সে নগরীর বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণভার স্বয়ং এ গৃহের অধিপতির হাতে। বায়তুল্লাহর পবিত্র হারামে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষের নিরাপত্তা যেখানে আবহমান কাল থেকে স্বীকৃত, সেখানে মক্কা নগরীর তত্ত্বাবধায়ক ও তার অধিবাসীদের নিরাপত্তার বিষয়টি সংগতকারণে কুদরতিভাবে নির্ধারিত। নাসায়ি শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী হারিস বিন উসমান মক্কার কাফির-মুশরিকদের ঈমান কবুল না করার পেছনে নবীজির নিকট এ অজুহাত খাড়া করে যে, ইসলামের এ শিক্ষা গ্রহণ করলে পুরো পৃথিবীর মানুষ আমাদের শত্রুতে পরিণত হবে। আমাদের নিরাপত্তা হবে বিঘ্নিত। পরিণামে আমরা দেশ থেকে উৎখাত হয়ে যাবো। কাফিরদের এ অভিযোগের জবাবে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَقَالُوْۤا اِنْ نَّتَّبِعِ الْهُدٰى مَعَكَ نُتَخَطَّفْ مِنْ اَرْضِنَا١ؕ اَوَ لَمْ نُمَكِّنْ لَّهُمْ حَرَمًا اٰمِنًا يُّجْبٰۤى اِلَيْهِ ثَمَرٰتُ كُلِّ شَيْءٍ رِّزْقًا مِّنْ لَّدُنَّا وَ لٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ۰۰۵۷
‘তারা বললো, যদি আমরা সুপথে ফিরে আসি, তবে আমরা দেশ থেকে উৎখাত হয়ে যাব। আমি কি তাদের জন্য একটি নিরাপদ হারাম প্রতিষ্ঠা করিনি? এতে আমার দেওয়া সর্বপ্রকার রিযিক আমদানি হয়। কিন্তু তাদের অধিকাংশ জানে না।’[2]
পবিত্র কুরআনের ভাষ্যানুযায়ী কাবা হল বিশ্বব্যবস্থার টেকসই স্থায়িত্ব, শান্তি ও নিরাপত্তার ভিত্তিস্থান। কুরআনে আরও বর্ণিত আছে,
جَعَلَ اللّٰهُ الْكَعْبَةَ الْبَيْتَ الْحَرَامَ قِيٰمًا لِّلنَّاسِ وَالشَّهْرَ الْحَرَامَ وَالْهَدْيَ وَالْقَلَآىِٕدَؕ ۰۰۹۷
‘আল্লাহ তাআলা সম্মানিত গৃহ কাবাকে মানুষের (নাস) স্থিতিশীলতার (কিয়াম) মহান লক্ষ্যে স্থাপন করেছেন। নিষিদ্ধ মাসসমূহ, কুরবানির জন্তু ও কুরবানি-নির্দেশক জন্তুর হার বিশ্বমানবতার শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।’[3]
‘কিয়াম’ অর্থ যার ওপর কোনো বসু্তর স্থায়িত্ব নির্ভরশীল। কাবা ও তৎসমপৃক্ত নিদর্শনসমূহ মানুষের অস্থিত্ব ও স্থায়িত্বের কারণ। ‘নাস’ শব্দের অর্থ সাধারণ মানুষ। এখানে মানুষ বলে শুধুমাত্র মক্কার লোকজন কিংবা আরববাসীদের বোঝানোর ও সুযোগ রয়েছে। এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তাফসীরে মাআরিফুল কুরআনে বর্ণিত আছে, যতোদিন পর্যন্ত পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ কাবা অভিমুখী হয়ে নামায আদায় করবে, হজ পালন করবে ততোদিন পর্যন্ত বিশ্বের অস্থিত্ব ও শৃঙ্খলা বজায় থাকবে। অন্যথায় পুরো পৃথিবীতে মুহূর্তের মধ্যে নেমে আসবে ধ্বংসের অমানিশা। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন,
«اسْتَمْتِعُوْا مِنْ هَذَا الْبَيْتِ؛ فَإِنَّهُ قَدْ هُدِمَ مَرَّتَيْنِ وَيُرْفَعُ فِي الثَّالِثِ».
‘এ গৃহ দ্বারা তোমাদের উপকার ভোগ করে নাও। এটি দু’বার ধ্বংস হবে। তৃতীয়বার এটি উঠিয়ে নেওয়া হবে।’[4]
মূলত যতোদিন পর্যন্ত দুনিয়াতে আল্লাহর নাম উচ্চারিত হবে এবং তার বিধি-বিধান কার্যকর থাকবে ততোদিন বিশ্বজগৎ টিকে থাকবে। অন্যথায় তা ধ্বংস হয়ে যাবে।
কোনো জনপদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরম সৌভাগ্যের। বিশেষত তা যদি হয় অলৌকিক পন্থায় ও কুদরতিভাবে। মক্কা নগরীর জন্য আল্লাহর এ ঘোষণা হারামের তত্ত্বাবধানকারী সউদি সরকারের জন্য এক বিশেষ নেয়ামত। আবার হারামে অবস্থানকারী ব্যক্তি কিংবা হারামাইনের তত্ত্বাবধানকারীর যেকোনো প্রকার অপকর্ম ও পাপাচারের ইচ্ছা অমার্জনীয় অপরাধ। অভূতপূর্ব এ সম্মান অর্জন করার পর হারামে অবস্থানকারীর যেকোনো অন্যায়ের শাস্তি অত্যন্ত কঠোর ও নির্মম। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَنْ يُّرِدْ فِيْهِ بِاِلْحَادٍۭ بِظُلْمٍ نُّذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍؒ۰۰۲۵
‘যে ব্যক্তি হারামে কোনো প্রকার জুলুম বা পাপাচারের ইচ্ছা পোষণ করবে, তাকে আমি কঠিন শাস্তি প্রদান করব।’[5]
মুসলিম বিশ্বের যেকোনো অতি সাধারণ নাগরিকের নিকটও যদি প্রশ্ন করা হয়, পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রনায়ক সবচেয়ে বেশি সম্মানিত ও নন্দিত। সমন্বয়ে, একযোগে ও অকুণ্ঠচিত্তে উত্তর আসবে, সউদি আরবের বাদশাহ। মক্কা মদিনার মতো পূণ্যময় দু’হারামের তত্ত্বাবধানকারী সকল রাষ্ট্রনায়ক দীনের নিসবতে সকল মুমিনের অন্তরে অতীব সম্মানের পাত্র। বিষয়টির ভাবগাম্ভীর্যের প্রতি লক্ষ রেখে অতীতের সকল রাজা বাদশাহ এ সম্মান রক্ষায় যথেষ্ট সচেতনতার পরিচয় দিয়েছে। বৈশ্বিক রীতি-নীতির সাম্প্রতিক পরিবর্তন, পঙ্কিল ভূ-রাজনীতি ও কুটিল কূটনীতির ধোঁয়াশায় বর্তমান সউদি সরকারের অনুসৃত কিছু কর্মযজ্ঞ অতীত রাজা-বাদশাহদের ঐতিহ্যের সাথে সাংঘর্ষিক ঠেকেছে। এতে মুসলিম বিশ্বের দীনি চেতনা আহত হয়েছে মারাত্মকভাবে। রক্তক্ষরণ ঘটেছে ধর্মীয় মানসে। স্বদেশ ও মুসলিম উম্মার স্বার্থ পরিপন্থি তাদের বিবিধ কার্যকলাপ প্রচণ্ড আঘাত হানে মুসলিম উম্মার হৃদপিণ্ডে। নব্বইয়ের দশকে ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন কর্তৃক কুয়েত দখলের পর নিরাপত্তা রক্ষার অজুহাতে তৎকালীন সউদি বাদশাহ ফাহদ মার্কিন বাহিনীকে মক্কা মদিনার পবিত্র ভূমিতে আমন্ত্রণ জানায়। সউদি বাদশাহদের প্রতি মুসলমানদের ঘৃণাবোধের সূচনা তখন থেকেই। সম্প্রতিককালে আরব বসন্তের জোয়ারে মধ্যপাচ্যের রাজতন্ত্রের ভিত্তিমূলে সৃষ্টি হয়েছে প্রলয়ংকরী সুনামি। যার ফলে তিন দশকের ক্ষমতাভোগী কয়েকজন লৌহমানব ও শীষাঢালা অনেক রাজতন্ত্রের ভিত্তিমূল উপড়ে গেছে। তিউনিসিয়া, লিবিয়া ও মিসরের তখত-মসনদ মুষড়ে যাওয়ার পর আরব আমিরাত পেরিয়ে সউদি উপকূলে নিশ্চিত আঘাত হানবে এ আশঙ্কা সচেতন বোদ্ধামহলের। বর্তমান সউদি সরকার এমন কিছু বিতর্কিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা মুসলিম বিশ্বকে নতুনভাবে ক্ষুব্ধ করে তোলেছে। দীনের তাগিদে তাদের প্রতি তাওহিদি জনতার ঈমানি সমর্থন ঠেকে গেছে সর্বনিম্ন তলানিতে। অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে প্রচণ্ড ঘৃণা ও ধিক্কার কুড়িয়েছে বর্তমান সালমান সরকার। তার পুত্র যুবরাজ মুহাম্মদের উচ্চাভিলাষী কর্মকাণ্ড অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ইসরাইলের সঙ্গে গোপন সমঝোতা, দারিদ্র্য-পীড়িত ইয়েমেনে হামলা, সিনেমা হল নির্মাণ, হালাল নাইটক্লাব সংস্কৃতি পূণ্যভূমিতে খোদায়ি গযব ড়েকে আনবে। চির-বৈরি শিয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক জিহাদে মগ্ন থাকলেও শিয়া মতাদর্শের ‘মোতা’ বিয়ের আলোকে হালাল বেশ্যালয় খোলার ঘোষণা দিয়ে নিজেদের ধ্বংসই তরান্বিত করছে।
ইতোমধ্যে আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বৈরতন্ত্র হটিয়ে গঠিত হয়েছে জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার। মক্কা-মদিনার মুসলিম গনগোষ্ঠীর সরকার মানে ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী পাক্কা তাওহিদি জনতার সরকার। এ দুটি পূণ্যভূমির সঙ্গে রয়েছে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ের স্পন্দন। দীনের আবেগঘন এ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের জাল বুনেছে পশ্চিমা জগত। তারা রাজতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের খোলসে তাদের একান্ত বিশ্বস্ত কিছু বরকন্দাজকে ক্ষমতার মসনদে টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর। আবার অবাধ গণতন্ত্রের নামে এমন কিছু বশংবদকেও ক্ষমতার মসনদে বসাতে চায়, যারা হবে সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠায় একান্ত নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত সেবাদাস। এ লক্ষে তারা কোথাও নির্বাচিত সরকারকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে, আবার কোথাও স্বার্থের ব্যঘাত হলে পরোক্ষভাবে মদদ দিচ্ছে সেনাশাসনকে। তাদের নির্লজ্জ পরিকল্পনার মুখোশ খসে পড়েছে মিসরের নীল নদের তীরে। গণ আন্দোলনে স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের পতনের পর প্রথমবারের মতো অবাধ নির্বাচন অনুষ্টিত হয়। পার্লামেন্ট ও প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের উত্তরাধিকারী হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ট ভোটে নির্বচিত হয় ষাট দশক ধরে নির্যাতিত, মড়ারেট ও উদারপন্থি ইসলামি দল ইখওয়ানুল মুসলিমিন। ড. মুরসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর পশ্চিমা বিশ্বের মনোরঞ্জনে যথাসাধ্য চেষ্টা করার পরও তাদের মন গলাতে ব্যর্থ হন। মাত্র বছর খানেকের মুরসি’র ক্ষমতাচর্চা ছিল মারাত্মক বিপদসঙ্কুল ও কণ্টকাকীর্ণ। পশ্চিমা বিশ্বের মদদপুষ্ট ও নির্বাচনে প্রত্যাখ্যাত সেক্যুলারদের গোপন ষড়যন্ত্রে তিনি হন প্রচণ্ডভাবে ধরাশায়ী। হোসনি মোবারকের প্রেতাত্মা জেনারেল সি সি আমেরিকার প্রত্যক্ষ ও সউদি আরবের পরোক্ষ ইঙ্গিতে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতার বাগডোর নিজ হাতে গ্রহণ করে। এতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আরব বিশ্বে আমেরিকার বিশ্বস্ত সেবাদাস আরব আমিরাত। যার দীন-দুনিয়া উভয় জাহানের মুরুব্বি হলো সউদি সরকার। তারা স্বগোত্রীয় মুসলিমদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সেক্যুলারপন্থি সামরিক সরকারকে সমর্থন জানায়। আরব আমিরাতের কথা বাদ দিলেও সউদি সরকারের এহেন ঘৃণ্য পদক্ষেপ পৃথিবীর কোনো মুসলমান সহজে মানতে পারেনি। যার কারণে সমগ্র পৃথিবী থেকে ধেয়ে আসে নিন্দার ঝড়। মিসরের রাজনীতিতে অত্যন্ত সম্ভাবনাময়ী সউদি ভিত্তিক ইসলামি দল সালাফি আন-নুর পার্টিও সউদি আরবের তাকলিদ (অনুকরণ) ছাড়তে পারেনি। সউদি আরবের অন্ধ অনুসরণের (তাকলীদ) কারণে সারা পৃথিবীতে হানাফি মযহাবের অনুসারী মুত্তাকি পরহেযগার মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেও স্বগোত্রীয় মুসলিম ভাইদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ো আলিঙ্গনাবদ্ধ হয় সাম্রাজ্যবাদ ও সেক্যুলারপন্থিদের সঙ্গে। ইসলামি রাজনীতিতে কট্টরপন্থি হিসেবে পরিচিত সালাফিরা নীল নদের তীরে ধরা খেয়ে যায় সাম্রাজ্যবাদের দোসর হিসেবে। ফলে, বিশ্বব্যাপী সালাফি রাজনীতির সলিল সমাধী হতে চলেছে ফিরআউন ও তার অনুসারীদের মতোই।
লেখক: পিএইচডি গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
[1] আল-কুরআন, সুরা আলে ইমরান, ৩:৯৬
[2] আল-কুরআন, সুরা আল-কাসাস, ২৮:৫৭
[3] আল-কুরআন, সুরা আল-মায়িদা, ৫:৯৭
[4] (ক) আল-বায্যার, আল-মুসনদ = আল-বাহরুয যাখ্খার, মকতবাতুল উলুম ওয়াল হাকাম, মদীনা মুনাওয়ারা, সউদী আরব, খ. ১২, পৃ. ৩০৮, হাদীস: ৬১৫৭; (খ) ইবনে খুযায়মা, আস-সহীহ, আল-মাকতাবুল ইসলামী, বয়রুত, লেবনান (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৪২২ হি. = ২০০৩ খ্রি.), খ. ৪, পৃ. ১২৮, হাদীস: ২৫০৬
[5] আল-কুরআন, সুরা আল-হজ, ২২:২৫