জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছাত্রজীবনে সময়ের গুরুত্ব

ছাত্রজীবনে সময়ের গুরুত্ব

ছাত্রজীবনে সময়ের গুরুত্ব

তানভীর সিরাজ

 

রাস্তার পাশে দোকানটি বরফের। দোকানদার কখনো হাসেন, আবার কখনো কাঁদেন। দোকানের সামনে আসা-যাওয়া করা জিজ্ঞাসু ছাত্রটি বলেন, চাচা, আপনাকে মাঝেমাঝে হাসতে, আর মাঝেমধ্যে কাঁদতে দেখি, কান্নাহাসির কারণ বলবেন কি? বরফের দিকে তাকানোই আমার কান্নাহাসির কারণ। বরফ বিক্রি হলে হাসি পাই, না হলে কান্না পাই। তবে আসল বিষয়টি ভিন্ন। চাচা, আসল বিষয় আবার কি? চাচা, এই যে দেখছ আমার বৃদ্ধজীবন বা বয়সকালের সময়, তা হল আসল বিষয়। অবহেলায় কত সময় নষ্ট করেছি বরফের মত জীবনের গতি প্রায় সায়াহ্নে। জানি না কখন মাটির নিচে কবরে চলে যেতে হয়। তুমি এখনও ছাত্র। তোমার জীবন সবেমাত্র শুরু, সময়ের যত্ন নিলে, সময়কে মূল্যায়ন করলে এবং তার হেফাজতে আরও বেশি যত্নবান হলে অনেক বড় আলেম হতে পারবে। সময়কালের আলেমদের দিকে তাকিয়ে দেখো, যারা সময়ের প্রতি যত্নবান ছিলেন, তারা বাংলাদেশি হলেও বহিঃবিশ্ব তাদের নিয়ে ঈর্ষা করে, বাংলার মানুষ তাদের নিয়ে গর্ব করে। মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ (দা. বা.) আওয়ার ইসলাম ২৪.কমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘একথা প্রসিদ্ধ যে, ভারত-পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের তুলনায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা অনেক মেধাবী।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মেধাবী ছাত্ররা দেওবন্দ গেলেও ফাস্ট হয়, পাকিস্তান গেলেও ফার্স্ট হয়। আমি নিজেও পাকিস্তানে মিশকাত, দাওরা ও তাখাসসুসের ক্লাসে ফার্স্ট ছিলাম এবং পাকিস্তানের অল বেফাক বোর্ডে তিন নম্বর হয়েছি। এটি আমি অহংকার প্রকাশের জন্য বলিনি। যা’লিকা ফাযলুল্লাহ, শুধুমাত্র উদাহরণস্বরূপ।’

বাচা (তালিবুল ইলম) , আপনি পড়ুন বা না-ই পড়ুন, সময় আপনার জন্য অপেক্ষা করবে না, বিক্রি হলেও যেমন গলে যাবে, তেমনি বিক্রি না হলেও গলে যাবে, ক্রেতার জন্য অপেক্ষা যেমন করে না, তেমনি সময় আপনার জন্য অপেক্ষা না করেই আপন গতিতে বয়ে চলবে। দৈনন্দিন মুতালাআ, সবক আর তাকরার করলে যেমন সময় চলে যাবে, না করলেও সময় আপনার জন্য বসে থাকবে না, চলে যাবে।

চল তাহলে তোমাকে পূর্বসূরিদের কথা শোনাই, আমরা যাদের উত্তরসূরি। শোনো, জি! মুফতী মুহাম্মদ শফী (রহ.) বলেন, ‘মানুষের জীবন সম্পূর্ণই বরফের মতো। প্রতি নিঃশ্বাসে একটি করে মুহূর্ত বিয়োগ হচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে আমাদের জীবন ছোট হচ্ছে। মানুষ বলে বয়স বাড়ছে। মাশাআল্লাহ সত্তর বছর হয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তব কথা হচ্ছে, যার যতো বয়স বাড়ছে তার হায়াত ততো কমছে। আমরা ছোট বেলায় একটি কবিতা পড়েছি,

غافل تجھے گھڑیاں یہ دیتا ہے منادی
گردوں نے گھڑی عمرکی اک اور گھٹا دی

‘হে উদাসীন! ঘড়ির কাটা তোমাকে ডেকে ডেকে বলছে। ঘড়ির প্রতিটি সেকেন্ড তোমার জীবন থেকে একেকটি মুহূর্তকে কমিয়ে দিচ্ছে।

ঘড়িতে ঘণ্টা বেজেছে। এর অর্থ, তোমার জীবন থেকে আরও একটি ঘণ্টা কমে।’ (মাসিক আল-কাউসার, মুহাররম ১৪৩৬ হিজরী)

মুতাআলা, সবক আর তাকরারের ফলাফল সম্পর্কে হযরত আশরাফ আলী থানবী (রহ.) বলেন, ‘যেসব তালিবুল ইলম নিয়মিত মুতালাআ, সবক আর তাকরার করবে তারা অবশ্যই বড় আলেম হবে। যদি বড় আলেম না হয় তারা তাহলে কিয়ামতের দিন আমার পাঞ্জাবির আস্তিন ধরে রাখবে।’

সময়ের ব্যাপারে সাহাবা-তাবেয়ীগণ বেশ যত্নবান ছিলেন। যখনই তারা রাসুল (সা.) -এর কাছে কোনো হাদীস শুনতেন তাঁরা তা মুখস্ত করে নিতেন, আমল করতেন এবং অন্যের কাছে পৌঁছে দিতেন, যেন তাঁরাও নেকির অংশে শরিক হন।

সময়ের ব্যাপারে সাহাবা-তাবেয়ীদের উক্তি। নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেন,

ما من يوم ينشق فجره إلا وينادي: يا ابن آدم، أنا خلق جديد، وعلىٰ عملك شهيد، فتزود مني، فإني لا أعود إلىٰ يوم القيامة.

‘যখনই কোনোদিনের প্রভাত উদিত হয়, তখনই সে মানুষকে সম্বোধন করে বলে, হে আদম সন্তান, আমি এক নতুন সৃষ্টি এবং কর্মের সাক্ষী। সুতরাং তুমি আমার থেকে পাথেয় সংগ্রহ কর। কেননা কিয়ামত দিবস পর্যন্ত আমি আর ফিরে আসব না।[1]

হাফিয আবু আবদুল্লাহ আল-হুমায়দীর কয়েকটি কবিতা

لِقَاءُ النَّاسِ لَيْسَ يُفِيْدُ شَيْئًا
سِوَى الْـهَذَيَانِ مِنْ قِيلٍ وَقَالَ
فَأَقْلِلْ مِنْ لِقَاءِ النَّاسِ إلَّا
لِكَسْبِ مَعِيْشَةٍ وَصَلَاحِ حَالٍ

‘লোকের সাথে দেখা সাক্ষাতে,

আজে-বাজেগল্প-গুজব ছাড়া আর কোনো ফায়দা নেই।

কাজেই মানুষের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ কম করবে।

কিন্তু ইলম হাসিল আত্মশুদ্ধির জন্য দেখা-সাক্ষাৎ করবে।[2]

প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.) বলেন,

ما ندمت على شيء ندمي على يوم غربت شمسه، نقص فيه أجلي، ولم يزد فيه عملي.

‘আমার সবচেয়ে আফসোস পরিতাপ হয় এমন দিনের জন্য, যেদিনের সূর্য ডুবে গেল, আমার দুনিয়ার হায়াত কমে গেল, অথচ সেদিনে আমার নেকআমল বৃদ্ধি পেল না।[3]

ওমরে সানী হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয (রহ.) বলেন,

إِنَّ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ يَعْمَلَانِ فِيْكَ، فَاعْمَلْ فِيْهِمَا.

রাত দিন তোমার মাঝে কাজ করে চলছে, (তোমার চলা-ফেরা আচার-আচরণে কোনো না কোনো কাজ করে চলছে) তাই তুমি তাদের মাঝে কাজ কর চলবে, (কোননা কোনো ভালো কাজ, নেক আমল করে দিন-রাতকে অতিবাহিত করবে।)[4]

প্রখ্যাত তাবেয়ী হাসান আল-বাসারী (রহ.) বলেন,

يا ابن آدم، إنما أنت أيام، فإذا ذهب يوم ذهب بعضك.

‘হে আদম সন্তান! তুমি তো কয়দিনের সমষ্টি মাত্র। সুতরাং যখন একটি দিন অতিবাহিত হয়ে গেল তখন তোমার জীবনের একাংশ হারিয়ে গেল।[5]

তিনি আরও বলেন,

أدركت أقواما كانوا علىٰ أوقاتهم أشد منكم حرصا علىٰ دراهمكم ودنانيركم.

‘আমি এমন অনেক ব্যক্তির সাহচর্য পেয়েছি, সময় সংরক্ষণে যাদের আগ্রহ, তোমাদের ধন-সম্পদ সংরক্ষরণের আগ্রহের চেয়ে বেশি ছিল।[6]

কুরুনে সালাসার পরবর্তী যুগের মনীষীরাও মনীষী হয়েছেন ছাত্রজীবনে সময়কে যথাযতব্যাবহার করে, সময়ের প্রতি যত্নবান হয়ে।

তালেবানে ইলমে নুবুওয়াতের প্রতি কিছু প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মালেক (দা. বা.) বয়ানে উল্লেখ করেছেন। আমাদের পূর্বসূরিদের মাঝে এ মুহাসাবার বড়ই গুরুত্ব ছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই মুহাসাবার ক্ষেত্রে লেখনীর দ্বারা সহযোগিতা নিয়েছেন। শায়খ (রহ.) রিসালাতুল মুসতারশিদীনের টীকায় শায়খ ইবনে আরাবী (রহ.)-এর কথা উল্লেখ করেছেন,

‘আমাদের পূর্বসূরিরা তাদের কথা কাজের মুহাসাবা করতেন এবং সেগুলো খাতায় লিখতেন। ইশার পর নিজেদের মুহাসাবা নিতেন এবং খাতা উপস্থিত করতেন। সারাদিনের কথা কাজের প্রতি নজর বুলাতেন এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতেন। যদি ইস্তেগফার করার মতো কোনো কাজ হত তাহলে ইস্তেগফার করতেন, যদি তওবা করার মতো কোনো কাজ হত তাহলে তওবা করতেন; যদি শোকর আদায় করার মতো কোনো কাজ হত তাহলে শোকর করতেন। এরপর ঘুমোতেন। (রিসালাতুল মুসতারশিদীন, টীকা: ৮১, ফয়যুল কদীর ৫/৬৭, মাসিক আল-কাউসার, মুহাররম ১৪৩৬)

তালিবুল ইলমকে ইলম অন্বেষণে কিপরিমাণ সময় দিতে হবে? তার উত্তরে কওমি অঙ্গনের প্রসিদ্ধ কবিতাটি প্রদান করলাম। সাহেবে হিদায়ার শাগরিদ আল্লামা বুরহানুল ইসলাম আয-যারনুজী (রহ.) তালিমুল মুতাআল্লিমে লিখেছেন,

العلم لا يعطيك بعضه حتىٰ تعطيه كلك.

‘তুমি যতক্ষণ না ইলমের জন্য তোমার সর্বস্ব দেবে, ইলম ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাকে কিছুই দেবে না।

মুফতী মুহাম্মদ শফী (রহ.) বলেন,

‘তো ভাই! আল্লাহ তাআলা দীন এবং ইলমের মধ্যে যোগ্যতা রেখেছেন, যারা নিজেদেরকে ইলম চর্চায় মশগুল রাখবে, আল্লাহ তাদের জন্য রাস্তা খুলে দেবেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَالَّذِيْنَ جَاهَدُوْا فِيْنَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَاؕ ۰۰۶۹

‘যারা পরিশ্রম করে আমার পথে, আমি অবশ্যই তাদেরকে পথ প্রদর্শন করব।[7]

চাচা, আপনি করেন বরফ বিক্রি, তাহলে কিভাবে এতজ্ঞান আপনি অর্জন করলেন? কৌতুহলি হয়ে ছাত্রটি প্রশ্ন করল। আসলে আমি যে কেবল বরফ বিক্রি করি তা কিস্তু নয়, সময় পেলেই কাজের ফাঁকেফাঁকে আমি তা কাজে লাগাই নানা কিতাব বা ইসলামি বইপুস্তক মুতাআলা করে। যেমন করতেন বিশ্ববিখ্যাত কিংবদন্তী আলেমেদীন আল্লামা তাকী উসমানীর বড়ভাই মুহাম্মদ যাকী কাইফী (রহ.) । চলুন, এখন সেই কাহিনী শুনি তাঁর জবানিতে,

‘আমরা তাকে ভাইজান বলে ডাকতাম। তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত দরসে নিযামীর শিক্ষা লাভ করেছিলেন। অতঃপর এমন কিছু পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখা দেয়, যা দ্বারা তাঁর শিক্ষা সমাপন করা সম্ভব হয়নি। তিনি ওয়ালিদ সাহেব (রহ.)-এর প্রতিষ্ঠিত কুতুবখানা দারুল ইশাআতের দেখাশোনা করতেন। তবে তার গভীর পাঠ্যাভ্যাস ছিলো। নিজে নিজে প্রচুর পড়াশোনা করেছেন। বিশেষত ইতিহাস, সীরাত, তাসাওউফ এবং আকাবিরে ওলামায়ে দেওবন্দের জীবনীগ্রন্থ, তাঁদের ঘটনাবলি, তাঁদের মালফূযাত, মাওয়া‘ইজ ইত্যাদি বিষয়ক রচনাবলি। এসব বিষয়ে তাঁর জানাশোনা এত বেশি ছিল যে, বড় বড় বিজ্ঞ ওলামার পর্যন্ত অতটা দখল ছিল না। (মুফতি তাকী উসমানী, আমার জীবনকথা, পৃ. ৫৭)

বাচা, সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। তোমার তাকরারের সময়ও কাছে। তাই কথা আর না বাড়িয়ে এখানেই ইতি টানছি সাইয়েদ আলী মিয়া নদভী (রহ.) আর আল্লামা ইকবাল (রহ.)-এর কথা দিয়ে,

‘যত তিক্তই হোক স্পষ্ট সত্য এই যে, আমাদের দীনী মাদরাসাগুলো যদি অস্তিত্ব রক্ষা করতে চায় এবং যিন্দেগির কাফেলায় মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে চায় এবং সময় সমাজের কাছে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে নিজের উপকারিতা এবং যোগ্যতা উপযোগিতা প্রমাণ করতে হবে।

আল্লামা ইকবাল (রহ.) যেমন বলেছেন,

‘জীবন হল নিরন্তর সংগ্রামের নাম, যোগ্যতা প্রতিযোগিতার মাধ্যেমে অধিকার প্রতিষ্ঠার নাম।

চাচা, আপনার কান্না-হাসিতে সত্যি অনেক কিছু শিখতে পেরেছি, আল-হামদু লিল্লাহ।

বাচা, পড়, মন দিল্‌ লাগিয়ে পড়, অসেক বড় আলেম হবে, ইন শা আল্লাহ।

বাচা, দুআ চাই। আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

চাচা, তুমি খুব ভালো ছেলে। কথা কান লাগিয়ে শোন। দুআ চাইতে হয় না কি।

ওয়ালাইকুমুস সালামু ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করেন। আমীন।

 

[1] আবদুল ফাতাহ আবু গুদ্দা, কীমাতুয যামান ইনদাল উলামা, মাকতাবুল মাতবুআত আল-ইসলামিযা, হলব, সিরিয়া ও দারুল বাশায়ির আল-ইসলামিয়া, বয়রুত, লেবনান (দশম সংস্করণ: ১৪২২ হি. = ২০০২ খ্রি.), পৃ. ১২৩

[2] শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলবী, বুস্তানুল মুহাদ্দিসীন, দারুল গারব আল-ইসলামি, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২৩ হি. = ২০০২ খ্রি.), পৃ. ১৪১

[3] আবদুল ফাতাহ আবু গুদ্দা, কীমাতুয যামান ইনদাল উলামা, পৃ. ২৭

[4] আবদুল ফাতাহ আবু গুদ্দা, কীমাতুয যামান ইনদাল উলামা, পৃ. ২৭

[5] আবদুল ফাতাহ আবু গুদ্দা, কীমাতুয যামান ইনদাল উলামা, পৃ. ২৭

[6] আবদুল ফাতাহ আবু গুদ্দা, কীমাতুয যামান ইনদাল উলামা, পৃ. ২৭

[7] আল-কুরআন, সুরা আল-আনকাবুত, ২৯:৬৯

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ