ইতিহাস মুছে ফেললেও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সর্বোচ্চ অবদান ছিলো মুসলমানদের!
রণবীর ভট্টাচার্য
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নাকি মুসলিমদের কোনো অবদান নেই। সেদেশের যেকোনো শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক পড়লে এটাই বোঝা যায়। আর এ মিথ্যাচারমূলক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বহু উগ্রপন্থী হিন্দুই প্রশ্ন তোলে যে মুসলমানদের এ দেশে থাকা উচিৎ নয়, কারণ তারা স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেনি। মূলত এ বিষয়কে সামনে রেখেই আমার আজকের এ লেখা সত্য ইতিহাস বলছে মুসলিমদের তাজা রক্তে এ ভারত মুক্তি পেয়েছে। জেলখাটা ১ কোটি মুসলমানের আত্মবলিদান এবং ফাঁসি হওয়া ৫ লক্ষ মুসলমানের প্রাণের বিনিময়ে আজ ভারত স্বাধীন| সেই চেপে যাওয়া ইতিহাসের মুছে যাওয়া কিছু নাম আমি শেয়ার করলাম। মাওলানা কাসিম সাহেব, উত্তর প্রদেশর দেওবন্দ মাদরাসাকে ব্রিটিশ বিরোধী এক শক্তিশালী কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন।
সেই দেওবন্দ মাদরাসায় আজও কুরয়ানের তালিম দেওয়া হয়। ভারতের ইতিহাসের পাতা উল্টালে যাদের নাম অবশ্যই পাওয়া যায় তারা হলেন গান্ধী, সুভাষ চন্দ্র, অরবিন্দ, জোহরলাল, মতিলাল, প্রমুখ। কিন্তু এদের চেয়েও বেশি বা সমতুল্য নেতা আতাউল্লাহ বুখারী, মাওলানা হুসাইন আহমদ, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা গোলাম হোসেন প্রমুখ (তাঁরা বহুবার দীর্ঘমেয়াদি জেল খেটেছেন) তাদের নাম ভারতের ইতিহাসে নেই। ইংরেজবিরোধী কর্যকলাপের জন্য যার নামে সর্বদা ওয়ারেন্ট থাকতো। সেই তাবারক হোসেনের নামও ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না। তৎকালীন সময়ে সারা হিন্দুস্থানের কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। যার সংস্পর্শে আসলে হিন্দু-মুসলিম নব প্রাণ খুজে পেতেন, সেই হাকিম আজমল খানকে লেখক বোধ হয় ভুলে গিয়েছেন।
মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল যার সাহায্য ছাড়া চলতে পারতেন ই না। যিনি না থাকলে গান্ধী উপাধিটুকু পেতেন না। সেই মাওলানা আজাদকে পর্যন্ত ইতিহাসের পাতা থেকে বাদ দেওয়া হল। মাওলানা মুহম্মদ আলী ও শওকত আলী। ৫ বার দীর্ঘমেয়াদি জেল খেটেছেন। কমরেড ও হামদর্দ নামক দুটি ইংরেজবিরোধী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তাদের নাম ভারতের ইতিহাসের ছেড়া পাতায় জায়গা পায় না। খাজা আবদুল মজীদ ইংল্যান্ড থেকে ব্যারিস্টার হন। জহরলালের সমসাময়িক কংগ্রেসের কর্মি ছিলেন। প্রচণ্ড সংগ্রাম করার ফলে তার এবং তার স্ত্রী উভয়ের জেল হয়। ১৯৬২ সালে তার মৃত্যু হয়। ইতিহাসের পাতায়ও তাঁদের নামের মৃত্যু ঘটেছে। ডবল A.M এবং P.H.D ডিগ্রিধারী প্রভাবশালী জেল খাটা সংগ্রামী সাইফুদ্দিন কিচলু।
বিপ্লবী মীর কাশেম, টিপু সুলতান, মজনু শাহ, ইউসুফ তাঁরাও ব্রিটিশদের বুলেটের আঘাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও ইতিহাসের পাতা থেকে নিশ্চিহ্ন হলো কিভাবে? সর্বভারতীয় নেতা আহমদুল্লাহ। তৎকালীন সময়ে ৫০ হাজার রুপি যার মাথার ধার্য করেছিল ব্রিটিশরা। জমিদার জগন্নাথ বাবু প্রতারণা করে, বিষমাখানো পান খাওয়ালেন নিজের ঘরে বসিয়ে। আর পূর্ব ঘোষিত ৫০ হাজার রুপি পুরস্কার জিতে নিলেন। মাওলানা রশিদ আহমদ। যাকে নির্মম ভাবে ফাঁসি দিয়ে পৃথিবী থেকে মুছে দিলো ইংরেজরা। ইতিহাসলেখক কেন তার নাম মুছে দিলেন ইতিহাস থেকে। জেল খাটা নেতা ইউসুফ, নাসিম খান, গাজি বাবা ইয়াসিন ওমর খান তাদের নাম আজ ইতিহাসে নেই কেনো? ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পরে, কুদরতুল্লাহ খানে মৃত্যু হল কারাগারে।
ইতিহাসের পাতায় নেই তার মৃত্যু ঘটলো কিভাবে? সুভাষ চন্দ্র বসুর ডান হাত আর বাম হাত যারা ছিলেন। ইতিহাসে তাদের নাম খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা হলেন আবিদ হাসান শাহনাওয়াজ খান, আজিজ আহমদ, ডিএম খান, আবদুল করীম গনি, লেফট্যানেন্ট কর্নেল, জেট কিলানি, কর্নেল জিলানী প্রমুখ। তাঁদের অবদান লেখক কি করে ভুলে গেলেন? বিদ্রোহী গোলাম রব্বানী, সরদার ও হয়দার, মাওলানা আকরম খান, সৈয়দ গিয়াসুদ্দিন আনসারী। তাঁদের খুন আর নির্মম মৃত্যু কি ভারতের স্বাধীনতায় কাজে লাগেনি? বিখ্যাত নেতা জহুরুল হাসানকে হত্যা করলে মোটা অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করে ইংরেজ সরকার। মাওলানা হসরত মুহানী এমন এক নেতা, তিনি তোলেন সর্ব প্রথম ব্রিটিশ বিহীন চাই স্বাধীনতা|
জেলে মরে পচে গেলেন মাওলানা ওবায়দুল্লাহ, তাঁর নাম কি ইতিহাসে ওঠার মতো নয়? হাফেয নিশার আলি যিনি তিতুমীর নামে খ্যাত ব্রিটিশরা তার বাঁশেরকেল্লাসহ তাকে ধ্বংস করে দেয়। তার সেনাপতি গোলাম মাসুমকে কেল্লার সামনে ফাঁসি দেওয়া হয়। কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে ব্যর্থ ক্ষুদিরামের নাম আমরা সবাই জানি, কিংসফোর্ড হত্যাকরী সফল শের আলী বিপ্লবীকে আমরা কেউ জানিনা। কলকাতার হিংস্র বিচারপতি জর্জ নরম্যান হত্যাকরী আবদুল্লাহর নামও শের আলীর মতো বিলীন হয়ে আছে। বিখ্যাত নেতা আসফাকুল্লাহ। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বীর আবদুস সুকুর ও আবদুল্লাহ মীর, তাঁদের অবদান কি ঐতিহাসিকরা ভুলে গেছেন? এই পরিক্লপিত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমি ধিক্কার জানাই হাত-পা নেই, তবুও মুখ দিয়ে কুরআনের পাতা উল্টিয়ে হাফেয হলেন তারিক ৩৫ বছর বয়সী তারিক আল-ওদায়ীকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি।
অদম্য স্পৃহায় ৪ বছরে কুরআনে হাফেয হয়েছেন তিনি। হাত-পা নেই এর পরও মুখ দিয়ে আল-কোরআনের পাতা উল্টিয়ে নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করেন তারিক। সউদি আরবের আসির প্রদেশের সিরাহ ওবাইদা শহরের ৩৫ বছর বয়সী এই তারিক আল-ওদায়ীর বাসায় গিয়ে তার শিক্ষক পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত ও হেফজ প্রশিক্ষণ দিতেন। হাত ও পা বিহীন এই তারিক পেটে ভর করে পথ চলেন। তিনি পেশী ক্ষয়িষ্ণুতায় ভুগছেন। কঠিন রোগের ভোগেও তিনি ৩০ পারা কুরআন মুখস্থ করতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়াও তারিক টেলিফোন এবং কম্পিউটার চালানো শিখেছেন ও সামাজিক নেটওয়ার্কেও তিনি সক্রিয় রয়েছেন। বিভিন্ন আলেমদের সাথে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখেন বলে জানা গেছে। সউদি আরবের আসির প্রদেশের কুরআন হিফয সেন্টারের সহযোগিতায় নিয়মিত ক্লাসে অংশগ্রহণ করে তিনি ৪ বছরে সম্পূর্ণ কুরআন হিফয করতে সক্ষম হয়েছেন।